চোখের পলকেই অতিক্রান্ত হলো বিবাহিত ব্যাচেলর জীবনের কয়েকটা মাস। এই কয়েকমাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। নামী, সুহাসের সম্পর্ক মোড় নিয়েছে বন্ধুত্বে। প্রত্যহ কাজের পাশাপাশি নিয়ম করে তিনবেলা খুনশুটিও চলে তাদের। ওদের এই বন্ধুত্ব, খুনশুটির আড়ালে রয়েছে প্রগাঢ় ভালোবাসা। যা ওরা টের না পেলেও টের পায় আশপাশে থাকা প্রত্যেকে।
প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে আজ কলেজে গেলাম মুখে হাসি নেই মনের মাঝে গুমট কালো মেঘ জমেছে।ভাইয়াকে ভীষন মিস করছি ছোট বেলা থেকেই ভাইয়া ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকিনি।আজ তিনটা মাস ভাইয়া ছাড়া আছি।এই শহরের অলি গলিতে ভাইয়াকে খুজে চলেছি কিন্তু কোথাও ভাইয়ার দেখা পাই নি আমি।আর কোনদিন কি দেখা হবে না আমাদের।
রাস্তা দিয়ে দৌড়ে আসছে পরী। গায়ের চাদরটা বৈঠকে পড়ে গেছে আসার সময়। গাঢ় কুয়াশার ভেতর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু শিশির কণা জমেছে।
হাঁটতে হাঁটতে আরহামের হঠাৎ চোখ পড়লো পুকুরের দিকটায়।কাউকে দেখে আদওয়ার হাত খপ করে ধরলেন তিনি।'কাম ফাস্ট' বলে ওকে টেনে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে চাইলেন।আদওয়া আহাম্মক বনে গেলো।জিজ্ঞেস করতে লাগলো বারবার,'কি হয়েছে?এমন তাড়াহুড়ো করছেন কেন?'
সন্ধ্যার পর সাদাফ বাড়ি ফিরলে শ্রাবণ তাকে খেতে দিলো। সব মাছের তরকারি দেখে বললো, “আজ এতো মাছ কেন?” “ওদের ফ্রিজে রেখেছিলাম কিছু। সব নিয়ে এসেছি। এরপর থেকে অল্প পরিমাণে ছোট ছোট মাছ আনবেন। অন্যের ফ্রিজে রেখে খাওয়া যায় না।” “কে বলেছিলো অন্যের ফ্রিজে রাখতে?”
ফ্লোরে টুল নিয়ে বসে ডিমের খোসা ছড়াচ্ছি উনি গিয়েছেন বাইরে,বিভোর ভাই গান গাইছেন আর খুন্তি চালাচ্ছেন।আমি পড়েছি মহা বিপদে বিভোর ভাই এর সাথে গল্প করতে করতে ডিমের সাদা অংশ সব খোসার সাথে উঠে গিয়েছে শুধু কুসুম অবশিষ্ট আছে।কি হবে এখন আমার।
"এটা কি ছিলো পিচ্চি?হোয়াট ইজ দিস পিচ্চি।এই বয়সে প্রেম করছিস।তোর বয়স কত দিয়া?এখনো হামাগুড়ির বয়স ই তো শেষ হয় নি তোর।আর এই বয়সে তুই কিনা প্রেম করছিস।ফুপ্পি কে বলতেই হচ্ছে ব্যাপার টা।হাউ স্ট্রেইঞ্জ।"
রক্তশূন্য মুখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে রইল। সিয়ার 'মা' ডাক শুনতে পেয়ে ক্রিসক্রিংগল উরসুলাকে রেখে দৌড়ে এসে সিয়ার পাশে দাঁড়ালেন। মুহূর্তেই যেন তার সমগ্র দুনিয়া দুলে উঠল। বুকের ভেতরে প্রগাঢ় শূন্যতা অনুভব করলেন।
মিসেস উদয়িনী ইজ নো মোড়! ডক্টর উদয়িনী আর নেই৷ দু’টো সন্তান আজ মাতৃহারা। সোহান খন্দকার বিপত্নীক হলেন৷ দুনিয়াতে নতুন প্রাণের আগমনে চারপাশ ঝলমলে হয়ে ওঠে৷ আপনজনেরা ছড়িয়ে দেয় উল্লাস। আনন্দে উদ্ভাসিত হয় সকলের মুখ। আর পুরোনো প্রাণ বিদায় নিলে চারপাশ মলিনতায় ছেয়ে যায়। আপনজনেরা হয় শোকাবহে স্তব্ধ। মুখাবয়বে ফুটে ওঠে বিষণ্ণতা।
ট্রেনের বগিতে হেঁটে সামনে এগোচ্ছে আমির। তার এক হাতে লাগেজ অন্য হাতে পদ্মজার হাত। শক্ত করে ধরে রেখেছে,যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। পদ্মজার মুখ নিকাবের আড়ালে ঢেকে রাখা। সে এদিকওদিক তাকিয়ে আমিরকে প্রশ্ন করল,’খালি সিট রেখে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ ‘কেবিনে।’…
বরপক্ষ কে স্টেজের সামনে রাখা চেয়ারে বসতে দেওয়া হলো। রুমাইশা, আফসানা আর বাচ্চারা গিয়ে প্রথমে এক জায়গাতে বসলো। আর ওদের পাশে এসে বসলো আন্টি মহল। শাফিনের কাজিন গুলা সব কনের সাথে ফট্যোশ্যুট করতে চলে গেছে।
আরহামের ভেতরটা যেনো চুরমার হয়ে গেলো।অসহ্য রকম যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন ভেতর ভেতর।এত বড় সত্যির জন্য যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।'লাং ক্যান্সার' শব্দটা কর্ণে দ্রীম দ্রীম আওয়াজ তুলতে থাকলো।বক্ষে কেউ পাথর চাপা দিয়েছে এমন যন্ত্রণা হলো।বাক্যগুলো হারিয়ে গেলো যেনো কন্ঠনালী থেকে।অপ্রস্ততের মতো এলোমেলো বাক্যে বলতে লাগলেন
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রেগে জোরেই বলে উঠলাম,”কাল রাতে আপনি আমার সাথে কি করেছেন?” উনি থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। আমি আরো বললাম, “আপনি সত্যিই অনেক খারাপ৷ আপনি অসভ্য আর অমানুষ।” একটু থেমে বললাম,”কি হলো এখন চুপ করে আছেন কেন?”
ঘুমের মাঝে মুখের উপর অনবরত গরম নিঃশ্বাস আ’ছড়ে পড়ায় ভীষণ অ’সস্তি হচ্ছে হুরের। তার মনে হচ্ছে কেউ একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চেয়েও চোখ খুলতে পারছেনা হুর। ঘুমটা যে গভীর তার।
'আজ যেনো এসে মাইমুনার কাছ থেকে কোনো অভিযোগ না শুনি ঠিক আছে?'
হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।লজ্জায় নয় অপমানে।
'আসি টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফিজ।'
অতপর সালাম বিনিময় শেষে তিনি চলে গেলেন।
রাফসানের এত গুলো মিসডকল দেখে আয়েশা ভড়কালেন, ছেলেটার কোনো বিপদ আপদ হলো কিনা ভেবে দ্রুত কল ব্যাক দিলেন আয়েশা। প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো, আবার কল দিলেন। দুঃশ্চিন্তায় ওনার বুকের ভেতর দুরু দুরু করে কাপতে লাগলো!
বাবা, মা হারিয়ে যে তীব্র ধাক্কা খেয়েছে। সে ধাক্কা সহ্য করতে পারছে না সিমরান। তাই এমন একটি সিদ্ধান্ত। অবুঝ আর অতি-আবেগি সিদ্ধান্ত। এ পৃথিবীতে তাকে বাবা, মা’ই নিয়ে এসেছে। অথচ তাদের দু’জনের কেউই আজ বেঁচে নেই। তাদের ভাই, বোনকে ছেড়ে চলে গেছে চিরতরে। আর কখনো ফিরে আসবে না।
জ্ঞান ফিরতে নিজেকে ফাইয়াজের রুমের বেডে আবিষ্কার করলো হুর। ধ’র’ফ’ড়ি’য়ে উঠে বসতে চাইলে মাথা ব্য’থা টা চা’রা দিয়ে উঠলো। হুর মাথা টা চে’পে ধরে ধীরে সুস্থে উঠে বসলো। মাথায় হাত ছোঁয়াতেই বুঝতে পারলো ব্যা’ন্ডে’জ করা হয়েছে। এমন সময় শুনতে পেলো, — এতো তাড়াহুড়ো কিসের!
বারান্দার সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রেখেছে আশমিন। নূরের কোন কথাই তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে নি। সেসব নিয়ে মাথা ও ঘামাচ্ছে না সে।তার বর্তমান মাথা ব্যথার নাম লারা।এই মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক দিনেই মাথা খেয়ে দিল।
পুষ্পর সরু নাক লালিত। একটু পরপর ফুলছে কান্নায়। ঠোঁটদ্বয় চেপে রেখেছে। মলিন চেহারা আর ভেজা দুটো চোখ চেয়ে আছে গেইটের দিকে। যেখান থেকে এইমাত্র গত হলো সৈকতদের গাড়ি। পুষ্পর চোখ ভরে ওঠে ফের।