সকালবেলা নাস্তা করার সময় বমি হয়েছে মুনতাহার। দুপুরবেলাও কিছু খেতে পারলো না৷
সবটা খেয়াল করলো শবনম। তারপর তার স্ত্রীরজের সময়কাল জেনে বিস্মিত হলো! গালে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-' হেগো মুন এতো বেখেয়ালি কেন তুমি ? শুভসংবাদ বুঝি এলো এবার। সে কোথায়?'
শাওন নিজের রুম থেকে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলো। আজ সে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট এর সাথে কালো টাই আর কালো জুতা পরেছে। সাথে হাতে নেভি ব্লু কোট টা ভাজ করে রাখা।
আজ আনন্দরা দলবদ্ধ হয়ে যেনো ধরা দিয়েছে। কী সুন্দর অনুভূতি! পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর ঘটনা বুঝি এটিই?
নাহলে সুফিয়ানের চোখের কোণে জল জমবে কেনো?
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহের ভিতর ভর করলো সজীবতা।
“আমি কাছে আসলে এত কাপাকাপি শুরু করো কিসের জন্য! আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলব নাকি?” আমি ঢোক গিলে বললাম, এ.. এ… একটু দূ…দূরে সরে ক…থা বলেন। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে সরে গেল।তারপর দরজা খুলে চলে গেল।
দু বার রিং হওয়ার পর ফোন ধরলো শাফিন৷ ফোন ধরেই শাফিন বলল, —এদিকে সব ক্লিয়ার ভাইয়া। মা একটু আগে রান্না ঘরে এলো। বাবা রুমে আছে। কাজের খালা এখনো আসেনি।”
সাফওয়ান প্রতিউত্তরে শুধু হুম বলে ফোন রেখে দিলো।
চকিতে পেছন ফিরে তাকালো রুমাইশা। উদভ্রান্তের মতো দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সাফওয়ান। ঘামে গায়ের সাদা রঙের আন্ডার শার্ট টা ভিজে জব জবে হয়ে গেছে। গায়ের সাথে লেপ্টে আছে সেটা। হাপাচ্ছে ও। হাতে ওর এক গুচ্ছ ধবধবে সাদা রঙের অর্ধ প্রস্ফুটিত গোলাপ।
ঘাড় ঘুরিয়ে রুমির দিকে তাকালো পালক। রুমি ঠোঁট টিপে হাসছে। তারমানে রুমি কিছুটা বুঝেছে। শায়েরের দিকে তাকিয়েই পালক বলল,'ভালো লাগাটা ধর্ম দেখে হয় না,মানুষ দেখে হয়।'
'বুঝি না এই গ্রামে এসে সবার হলো কি?নাঈম, শেখর,আসিফ তুই!!তবে তোর কথাটা আলাদা। এটা সম্ভব না।'
পদ্মজা ঘরের চৌকাঠে পা দিল মাত্র। আমির রিদওয়ানকে টেনে হিঁচড়ে তুলে বলল, ‘তোকে না করেছিলাম। বার বার না করেছি। তবুও শুনলি না।’ রিদওয়ান শক্ত দুই হাতে আমিরকে ধাক্কা মেরে ছুঁড়ে ফেলে দূরে। আমির আলমারির সাথে ধাক্কা খেয়ে আরো হিংস্র হয়ে…
আমার দিনগুলো কাটে ছন্দহীন। ছেলেমেয়েদের সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা শেষ হলো রোজার আগেই। বিকেলে খানিকটা সময় পাওয়া গেল। ওরা কিছুদিন ছুটি নিলো। কলেজে যাওয়া হয়। সুবর্না একগাদা খাতা দিয়ে দেয়। লিখতে লিখতে হাপিয়ে যাই। মাঝেমধ্যে মনে হয় নিজেকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি। আমারও একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। নিজের সুবিধার জন্যই বাড়িতে কাজের লোক পাল্টালাম।
পরের দিন বিকালে মুখ পেচার মতো করে পায়চারী করে বেড়াচ্ছি।মাথায় খুব শয়তানি বুদ্ধি চেপেছে।বিহান ভাই কে একটু নাজেহাল করতে হবে।হবে মানে হবেই।নিজে নিজে হাজার টা বুদ্ধি বের করছি কোন বুদ্ধিটা প্রয়োগ করলে বেটার হবে সেটাই ভেবে চলেছি।বিহান ভাই কে দেখলাম কালো জিন্স,বাদামী গেঞ্জি লং হাতা, চোখে খয়েরী ফ্রেমের চশমা দিয়ে বেরিয়েছেন।
মানুষ মানুষকে এতটা অপমান কিভাবে করতে পারে তা ওই হৃদয়হীন মানুষ টাকে না দেখলে জানতাম না।আগে যদি জানতাম উনি বাড়িতে আসছেন তাহলে আমি কিছুতেই যেতাম না।উনি বাড়িতে নেই বলেই তো গেছিলাম।আমাকে বিরক্ত করতে না পারলে তো উনার পেটের ভাত ই হজম হয় না।
নির্জন,নিস্তব্ধ জায়গা কিন্তু কোনো এক মসজিদ ফযরের থেকে ধীরসুরে আযান শোনা যাচ্ছে।
হাফসা আযানের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ক্লিয়ারলি শোনা যাচ্ছে না।চোখ তুলে তাকাতেই সেই চোখে জমানো ঘৃণা রুদ্রের বুকে গিয়ে লাগলো।গালে হাত দিয়ে একনজরে দেখেই যাচ্ছিলো হাফসাকে।
অভি, “তুমি এত সুন্দর কেন, পরী?”
পরী, “সৌন্দর্য সবসময়ে যে দেখে তাঁর চোখে লুকিয়ে থাকে। সুন্দরী আমি নয়, তোমার দৃষ্টি, তোমার চাহনি আমাকে সুন্দরী করে তুলেছে, অভি।”
সারা রাস্তা পরী ওর একদম পাসেপাসে ছিল, একবারের জন্য ও যেন ওকে আলাদা করতে মন করছিল না অভির। নন্দনে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল। আকাশে কালো মেঘের খেলা শুরু হয়ে গেছে, বৃষ্টি যেকোনো সময়ে নামতে পারে।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “সিনেমাটা কি ধরনের?”
হলরুমে সোফায় বসে আছে সিনথিয়া, তার মা আর সাথে আর ও কিছু মহিলা। বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টিও সেখানেই আছেন৷ সিনথিয়ার মুখ খানা অন্ধকার। কারণ গতকাল সে সাদ্দাত হুসেইন নামের ব্যাক্তির সাথে বিয়ের কথা শুনে নিজের সব কাজিন মহল কে অতি আনন্দের সাথে জানিয়েছিলো, বিশেষ করে তার সেই খালাতো বোন কে, যে কিনা সাদ্দাত হুসেইনের ওপর ক্রাস খেয়ে বসে ছিলো।
একটা মানুষের মুখের প্রতিটা স্পিলিং এতটা ইমপ্রেসিং কিভাবে হতে পারে বুঝিনা।কথা বলার এটিটিউড ধরণ সব কিছুই আলাদা।নাকি আমার কাছেই উনার সব কিছু এমন স্পেশাল লাগে।
এতক্ষণ যে শায়ের চোখের পানি ফেলছিল তা শায়েরের চোখ দেখেই নাঈম বুঝতে পেরেছে। ভেজা ভেজা গলায় শায়ের বলল,'পরীজান!!!'
আকাশঃ কেন বাঁচাবি আমায় আমি তো একটা বেইমান....!!! আমি আর বাঁচতে চাই না কার জন্য বাঁচব? বুকের একপাশ তোর নামে অনেক আগেই লিখে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ তুই তা শুন্য করে দিলি। মেঘলা নাহয় বোকা কিন্তু তুই আমায় কি করে ভুল বুঝলি নাবিল? তুই না আমার না বলা কথা বুঝতি।
আধ ঘণ্টা হবে বাড়িতে ফিরেছে তুর্য আর পরী। বাড়িতে এসেই পরী বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। জ্বরটা এখনো কমেনি। রেহেনা বেগম বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসে মাথায় ঢেলে দিচ্ছেন। পরী চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে। রেহেনা বেগম…
সদর দরজার দিকে সবার দৃষ্টি গেলো। ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে রেয়ান। প্রানেশা উঠে দাড়িয়ে রেয়ানের কাছাকাছি যেতে নিলে সুফিয়ান হাত ধরে ফেললো৷ প্রানেশা দেখলো সুফিয়ানের মাঝে কোনো প্রকার অবাকের ছাপ নেই৷
আফতাবের আগেই পরী এগিয়ে এসে জবাব দিল,'আপনার ভাইকে জবান সামলে কথা বলতে বলুন আব্বা। না জেনে ওনাকে কেন দোষ দিচ্ছেন? দোষ তো আপনাদের। কথা দিয়ে কথা রাখেননি আপনারা যার জন্য আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছে। আর উনি না থাকলে আমাদের বেঁচে ফেরা সম্ভব হত না।'