অফিডিয়ান | পর্ব – ১৬

২২. সকাল ছয়টার দিকে রুমাইশা কে নিয়ে ফিরলো সাফওয়ান। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি থামালো, তারপর শাফিন কে কল দিলো।

দু বার রিং হওয়ার পর ফোন ধরলো শাফিন৷ ফোন ধরেই শাফিন বলল, —এদিকে সব ক্লিয়ার ভাইয়া। মা একটু আগে রান্না ঘরে এলো। বাবা রুমে আছে। কাজের খালা এখনো আসেনি।”
সাফওয়ান প্রতিউত্তরে শুধু হুম বলে ফোন রেখে দিলো।

গাড়িটা ওখানেই রেখে রুমাইশা কে কোলে নিয়ে বাড়ির প্রাচীর ঘুরে পেছনে গেলো৷ রুমাইশার হাত পা আর কোমর বেধে নিলো নিজের সাথে। কারণ এখনো জ্ঞান ফেরেনি রুমাইশার, জ্ঞান হারানোর পর পর ই জ্বর চলে এসেছে গায়ে, আর সেটা ক্রমে বাড়তেই আছে৷
দেয়াল বেয়ে সড়সড় করে উপরে উঠে গেলো সাফওয়ান৷ রুমাইশার রুমের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দিলো ওকে, তারপর কাথা দিয়ে শরীর ঢেকে দিলো৷

এরপর নিজেও পাশে বসে রুমাইশার মুখের দিকে নেশাতুর চোখে তাকালো সাফওয়ান। মিষ্টি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। গায়ের উত্তাপ যেন সাফওয়ানের মুখে এসে লাগছে৷ আর ও কিছুক্ষন রুমাইশা কে নিষ্পলক চোখে দেখে বিছানা ছেড়ে উঠে আস্তে করে দরজা খুলে দিলো ভেতর থেকে। তারপর জানালা দিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেলো। এরপর গাড়ি নিয়ে মেইন গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো৷

নিজের রুমে গিয়ে শাফিনের ফোনে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিলো,
—”রিমুর গায়ে জ্বর এসেছে, মাকে যত দ্রুত সম্ভব নিউজ টা পৌছে দিস।”

কিন্তু সাফওয়ানের ফোন পাওয়ার পর আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়া শাফিন এই খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ টি দেখতে পেলো না। আর রুমাইশার জ্বর উত্তোরত্তর বেড়েই চলল।

“””

রুমাইশা রোজ ভোর বেলা উঠেই নামাজ পড়ে পড়তে বসে। খুব কম সময়ই তার ব্যাতিক্রম হয়৷ আজ রুমাইশার কোনো আওয়াজ না পেয়ে রুনিয়া তরকারিতে পানি দেওয়ার পর রুমাইশার খোজ নিতে আসলেন৷

—আজ চলে যাবে মেয়াটা, আর কবে আসবে তার ঠিক নেই,” ভাবলেন রুনিয়া৷

রুমাইশার জন্য পাটিসাপটা তৈরি করতে ময়দা গুলিয়ে রেখে এসেছেন কিচেনে। রুমাইশার রুমের সামনে এসে দরজায় নক দিলেন রুনিয়া৷ কিন্তু রুমাইশার কোনো সাড়া শব্দ পেলেন না৷

দ্বিতীয় বার দরজায় শব্দ করার জন্য হাত দিতেই দেখলেন দরজা লক করা নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমিয়ে যেতে পারে ভেবে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন রুনিয়া।

রুমাইশার বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে স্বাভাবতই হাত টা স্পর্শ করলেন রুমাইশার গায়ে৷
কিন্তু স্পর্শ করেই আঁতকে উঠলেন তিনি! জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে একদম!

কাল রাতের রুমাইশাকে যে পোশাকে দেখেছিলেন তার বদলে অন্য পোশাক দেখতে পেলেন রুনিয়া। চুল গুলোও খোলা, আবার ভেজা! মাঝ রাতে বৃষ্টি তে ভিজলো নাকি!

ততড়িঘড়ি করে রুমাইশা কে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করলেন রুনিয়া। কিন্তু এত ডাকাডাকির পর ও উঠলোনা রুমাইশা।
ভয়ে পেয়ে গেলেন রুনিয়া। চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার।
দ্রুত পায়ে হেটে নিচ তলায় গিয়ে ইশতিয়াক কে খবর টা দিলেন। খবর পাওয়া মাত্রই ইশতিয়াক তাদের ফ্যামিলি ডক্টর কে ডেকে পাঠালেন৷

বাইরের হুড়োহুড়ির শব্দে জেগে গেছে শাফিন, বিছানায় শোয়া অবস্থাতেই ফোন টা হাতে নিয়ে সুইচ টিপে দেখলো সাফওয়ানের মেসেজ।
ছয়টা পয়ত্রিশে মেসেজ দিয়েছে সাফওয়ান, এখন বাজে নয়টা। শাফিন আঁতকে উঠে তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নেমে বাইরে দৌড়ালো, ততক্ষণে ডাক্তার এসে গেছেন৷

রুমাইশার রুমের ভেতর রুনিয়া, ইশতিয়াক আর কাজের খালাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অন্তরআত্মা কেপে গেলো শাফিনের। রুনিয়া বসে আছেন রুমাইশার পায়ের কাছে। ইশতিয়াক আহমেদ থম থমে মুখে দাড়িয়ে আছেন, চোখে মুখে চিন্তার ছাপ৷

—রুমি আপুর কি হলো! ভাইয়া মেসেজ দিয়েছে আমাকে সেই কখন! এখন যদি জানতে পারে আমি দেখিনি, তাহলে তো আমাকে মেরে হরিণার বিলে ফেলে রেখে আসবে!” ভাবলো শাফিন৷ গুটি গুটি পায়ে রুমাইশার রুমে ঢুকে মায়ের পেছনে দাড়ালো৷

রুমাইশা জ্বরের ঘোরেই কেপে কেপে উঠছে। চোখ খোলা; কিন্তু কোনো সেন্স নেই৷ কারো কথা শুনতে পাচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে না। শুধু মাঝে মাঝে পিট পিট করে তাকিয়ে দেখছে৷ ডাক্তার পাশে বসে দেখছে ওকে৷

রুনিয়া রহমান শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছছেন মাঝে মাঝে৷ শাফিন এসে মায়ের কাধ স্পর্শ করে দাড়ালো , রুনিয়া পেছন ফিরে শাফিন কে দেখে কেদে ফেললেন,

— দেখ তোর রুমি আপু কোনো সাড়া শব্দ দিচ্ছে না রে শাফিন! ডাকলে শুনতেও পাচ্ছে না! জেগে থেকেও কারোরে দেখতে পাচ্ছে না ও! কি হলো আমার চাঁদের টুকরো মেয়েটার! কখন হলো এসব, কিছুই বুঝতে পারলাম না! কাল রাতেও তো ঠিক ছিলো তাহলে কি হলো এখন!
উচ্চস্বরে কেদে উঠলেন রুনিয়া।

ডাক্তার বললেন রুনিয়া কে বাইরে নিয়ে যেতে৷ শাফিন মা কে ধরে বাইরে নিয়ে এলো।
ডাক্তার কিছুক্ষন রুমাইশা কে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন।

রুমাইশার কোনো হুস নেই, চার পাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না ও৷ ও কোথায় আছে নিজেও জানে না৷ মাথা পুরো ফাকা ওর।

ডাক্তার ইশতিয়াক আহমেদ কে কাছে ডাকলেন,
— ও কি কোনোভাবে ফিজিক্যাল ভায়োলেন্স এর শিকার হয়েছে?

ইশতিয়াক কি বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না! রুমাইশা কিভাবে ভায়োলেন্স এর শিকার হবে! কেউ তো থাকে না এখানে শাফিন ছাড়া, আর শাফিন তো এই ধরনের কাজ কখনোই করবে না!

ইশতিয়াক উত্তর দিলেন,
—না ডাক্তার, এরকম কিছু হয়েছে বলে তো মনে হয় না! ওকে টর্চার করবে এরকম কেউ নেই আমার জানা মতে।

— তাহলে ওর গলার কাছে আঙুলের দাগ কিভাবে আসলো?

ইশতিয়াক আহমেদ হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। ‘রুমাইশার গলায় আঙুলের দাগ! কে করবে এমন? সাফওয়ান? কিন্তু ও তো কারো সামনেই আসে না! আর রুমাইশাকে তো ও যথেষ্ট ভালোবাসে! শাফিন ও তো তাই, তাহলে! ওর গলায় আঙুল বসালো কে!”

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলে উঠলেন
— ও যেভাবে কেপে কেপে উঠছে মনে হচ্ছে কোনো কারণে ভয় পেয়েছে, নয়তো শক খেয়েছে৷ আবার আপনার ওয়াইফ বললেন যে রাতে বৃষ্টি তে ভিজেছে হয়তো, যার কারণে জ্বর টা আর ও বেশি ট্রিগার্ড হয়েছে৷
আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে যাচ্ছি, সময় মতো দিবেন, আর কিছু টেস্ট দিচ্ছি কাল বা পরশুর ভেতর করে ফেলেবেন৷ আর সবসময় কেউ না কেউ ওর পাশে থাকবেন। একটা ইনফিউসান স্যালাইন লিখে দিয়েছি ওইটা এখনি নিয়ে আসুন। রোগীকে দিতে হবে৷ আর কারো দ্বারা ভায়োলেন্স এর শিকার হয়েছে কিনা খোজ খবর নিয়ে দেখুন!”

ইশতিয়াক আহমেদ ডাক্তারের কথায় সম্মতি জানিয়ে তখনি ডাক্তারের দেওয়া প্রেস্ক্রিপশন নিয়ে বাইরে চলে গেলেন মেডিসিন গুলো আনতে৷ বাইরে যাওয়ার আগে রুমাইশার গলার দাগের ব্যাপারে কাউকে কিছু না জানাতে বলে গেলেন৷

মিনিট দশেক পর শামসুল আর আয়েশা ঢুকলেন বাড়িতে। রুনিয়া সকাল বেলা ফোন দিয়ে জানালে তখনি রওনা হয়েছেন তারা।
তাড়াহুড়ো করে চোখের কোণে পানি নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠে রুমাইশার রুমে ঢুকলেন আয়েশা খানম। আয়েশার পিছু পিছু রুনিয়া কে নিয়ে শাফিন ও ঢুকলো।
দরজায় দাঁড়িয়ে রুমাইশার দিকে দেখলেন আয়েশা। আদরের মেয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে ঠিক থাকতে পারলেন না তিনি। সেখানেই স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

আঠারো বছর আগেকার সেই অভিশপ্ত দিনটির কথা মনে পড়লো আয়েশার, সেদিন ও তো রুমাইশা এইভাবে শুয়ে ছিলো বিছানায়’ কোনো হুস ছিলো না ; কিন্তু চোখ মেলে ছিলো, পিট পিট করে তাকিয়েছিলো শুধু!
মরমর অবস্থা থেকে ফিরে আসা মেয়ের আবার ও এমন মুমূর্ষু অবস্থা দেখে মস্তিষ্কের ভেতর শুধু ওই ঘটনা গুলোই ভেসে বেড়াতে লাগলো আয়েশার।

বিস্ফোরিত নয়নে ধীরে ধীরে এগোলেন আয়েশা রুমাইশার দিকে৷ চোখ থেকে তার অবিরত নোনা পানি গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না! বিছানায় রুমাইশার পাশে বসলেন আয়েশা!

হাত টা বাড়িয়ে রুমাইশার হাত টা নিজের মুঠিতে নিলেন। মেয়ের শরীরের উত্তাপে শিউরে উঠলেন আয়েশা! চোখ ফেটে দ্বিগুন বেগে লোনা পানি বেয়ে পড়তে লাগলো তার।
দু বার ডাক দিলেন রুমাইশা বলে, কিন্তু রুমাইশার কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না! শুধু মাঝে মাঝে পিট পিট করে তাকালো।

জ্বরের ঘোরে নিজের আশে পাশের জগৎ থেকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন রুমাইশা দেখতেই পেলো না তার কাছের মানুষ গুলোর এই দুর্বিষহ অবস্থা!

শামসুল কাদের বসে আছেন রুমাইশার রুমের চেয়ারে। একটা হাত মুখে ঠেকিয়ে চিন্তা করে চলেছেন! রুমাইশার এক্সাম এখনো শেষ হয়নি। একটাই বাকি আছে যদিও, কিন্তু এই অসুস্থতা নিয়ে ও পড়বে কি করে, আর সুস্থ যদিও বা হয়ে যায় তাহলে প্রস্তুতিই বা নিবে কখন আর পরীক্ষাই বা দিবে কি করে!

ইশতিয়াক আহমেদ মেডিসিন গুলো নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। ডাক্তার স্যালাইন টা নিয়ে রুমাইশার হাতের ভেইনে সুচ দিয়ে সেট করে দিলো৷

ডাক্তার নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে চলে যেতে নিলে শামসুল আলম জিজ্ঞেস করলেন, ওর সুস্থ হতে কতদিন সময় লাগবে ডাক্তার?

— সেটাতো বলা যাচ্ছে না! এই স্যালাইন টা শেষ হোক, স্যালাইন কাজ শুরু করে দিলে হয়তো আস্তে আস্তে হুশে ফিরবে৷ আর যে মেডিসিন গুলো দিয়েছি ওগুলো নিয়মিত খাওয়ান৷ আর স্যালাইন শেষ হওয়ার পরও যদি রেস্পন্স না করে তখন আমাকে আবার ইনফর্ম করবেন৷
কথা গুলো বলে ডাক্তার চলে গেলেন।

শামসুল ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বললেন, —কিভাবে যে এমন জ্বর বাধালো মেয়েটা! এখনো ওর পরীক্ষাই শেষ হয়নি! কে বলেছিলো ওকে মাতব্বরি করে বৃষ্টি তে ভিজতে! এখন এই এক্সাম টার কি হবে! এক্সাম টা কিছুদিন পরে হলেও না হয় হতো! কিন্তু সেটা তো পরশু দিন!

এমন সময়ে দরজার কাছ থেকে গমগমে একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো, —এক্সাম সামনের বছর আবার দেওয়া যাবে, একটায় রিটেক দিলে কারো জান চলে যাবে না। যেখানে রিমুর এমন অবস্থা, সেখানে আপনি পড়ে আছেন ওর এক্সাম নিয়ে!”

চকিতে সবাই দরজার দিকে তাকালো৷ সাফওয়ান যে এই মুহুর্তে সবার সামনে এইভাবে আসতে পারে সেটা কেউই আশা করেনি। ফুল স্লিভ টি শার্ট পরে মুখে মাস্ক দিয়ে চোখে ডার্ক গগলস পরে ডোর হেডার ছুই ছুই দীর্ঘদেহী সাফওয়ান পুরো দরজা টা জুড়েই যেন দাঁড়িয়ে আছে।

শাফিন একটু আগেই তাকে মেসেজে জানিয়েছে রুমাইশার অবস্থার কথা৷ আর তার পরেই নিজেকে ঢেকে ঢুকে, অন্যদের সামনে আসার উপযুক্ত হয়ে রুমাইশার রুমে চলে এসছে সাফওয়ান৷

বহু বছর পর ছোট্ট সাফওয়ান কে একজন পরিণত পুরুষ হিসেবে দেখে শামসুল আয়েশা দুজনেই অবাক হয়ে গেলেন। কিন্তু সাথে সাথেই নিজের মেয়ের সাথে হওয়া পাষবিক হিংস্রতার কথা মনে পড়তেই মুখ ফিরিয়ে নিলেন শামসুল।

আয়েশা এত বছর পর নিজের সন্তানতুল্যা সাফওয়ান কে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন, কিন্তু সেই সাথে সাফওয়ানের সেই হিংস্রতার কথা মনে পড়তেই হাউমাউ করে কেদে উঠলেন তিনি,

— আমার মেয়েকে এখানে পাঠানোই ভুল হয়েছে! কেন আমি ওকে এখানে পাঠিয়েছিলাম! কেন! শেষ বার আমার মেয়ে আধমরা হয়ে বাড়ি ফিরেছিলো! আর এইখানে এসে আবার ও সেই দিনের মতোই আধমরা হয়ে শুয়ে আছে!

অতঃপর রুনিয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে কেদে কেদে বললেন,
— আপনাকে ভরসা করে মেয়েকে পাঠিয়েছিলাম আমি! আর আপনি তার এই প্রতিদান দিলেন! খেয়াল করলেন না যে ও কি করছে কি না করছে! আমার মেয়েটা চোখ খুলে থাকা সত্বেও কাউকে দেখছে না! কাউকে শুনছে না! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো, এই অভিশপ্ত ছেলেটা যেখানে থাকবে সেখানে আমার মেয়ে কখনোই শান্তি তে থাকবে না!
শেষের কথা টা সাফওয়ান কে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন আয়েশা।

রুনিয়া প্রতিবাদ করলেন আয়েশার কথার,
— তুমি কি বলছো ভেবে বলছো আয়েশা? তুমি ওর জ্বরের কারণে আমার ছেলেকে কেন দোষারোপ করছো? ওর কি করার আছে এখানে? ও তো আর জ্বর এনে রুমির গায়ে দিয়ে যায়নি! হ্যা ও ভুল করেছে ছোটবেলায়, কিন্তু ও তো এখন বড়ো হয়েছে। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ ; কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক বুঝতে শিখেছে; নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা শিখেছে! তাহলে তুমি কোন মুখে আমার ছেলেকে দোষারোপ করছো!

সাফওয়ান রুনিয়ার পাশে এসে দাড়িয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,
— মা চুপ করো, মামি এখন নিজের মেয়ের অসুস্থতায় কষ্ট পাচ্ছেন অনেক, তাই এরকম বলছেন, ওনার কথা ধরে ঝামেলা বাধিও না৷

রুনিয়া মাথা নাড়িয়ে সাফওয়ানকে আস্বস্ত করলেন যে তিনি করবেন না৷ রুনিয়া কে বোঝানোর পর সাফওয়ান যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই আবার চলে গেলো।

সাফওয়ান চলে যেতেই শামসুল উঠে দাড়ালেন।
— আমার মেয়ের স্যালাইন শেষ হলেই আমি ওকে নিয়ে বাড়িতে চলে যাবো৷
বললেন তিনি। তারপর গটগট পায়ে হেটে বাইরে চলে গেলেন৷

রুনিয়া আর দ্বিতীয় কোনো কথা বললেন না৷ অকারণে ছেলেকে দোষারোপ করায় মন টা ওনার বিষিয়ে গেছে একেবারে! রুমাইশা কে তো তিনি নিজের সন্তানের চেয়ে কোনো অংশে কম দেখেন না! তারপর ও তারা এটা কিভাবে বলতে পারলো, যে তিনি খেয়াল রাখেননি। মনে মনে অনেক কষ্ট পেলেও প্রকাশ করলেন না রুনিয়া৷

রুমাইশার স্যালাইন শেষ হলে বাড়িতে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করলেন আয়েশা, রুমাইশার বইখাতা আর জামাকাপড় গুলো গুছিয়ে নিলেন। রুমাইশার সেন্স ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে, এখন কথা বলছে টুকটাক। তাই আর দেরি করেননি আয়েশা। শামসুল ও সাহায্য করছেন সাথে, রুনিয়া দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়। কিচ্ছু করার নেই ওনার৷
ইশতিয়াক আহমেদ আর শাফিন বসে আছে হলরুমের সোফায়।

দুপুরের খাবার সময় হলেও শামসুল আয়েশা কেউ খেলেন না। রুনিয়া অনেক বার জোরাজুরি করলেও কাজ হলো না। শুধু মাত্র রুমাইশার মেডিসিন আছে বলে ওকে খাওয়ালেন আয়েশা। তারপর গাড়ি ডেকে এনে রুমাইশার জিনিস পত্র সহ বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলেন৷

ছাদের ওপর থেকে এক জোড়া তৃষ্ণার্ত চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো শুধু রুমাইশা দের গাড়িটাকে, যতক্ষণ না গাড়িটা চোখের আড়াল হলো………

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।