আরো একটি নির্ঘুম রাত৷ এ কী বীভৎসতা? এ কোন দহনে পুড়াচ্ছে নামীদামি? সুহাস কী সইতে পারে তার সুহাসিনীর পাষণ্ডতা? পারে না তো… তাই তো তীব্র যন্ত্রণা বুকে পুষে দু’রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিল। গোটা একটা রাত কেটে গেল প্রিয়জন হারানোর শোকে।
একটি একটি করে দিন গড়াচ্ছে। পূর্বের চেয়েও অধিক অস্থির হয়ে ওঠছে সুহাস। প্রতিনিয়ত তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে নামীর সাথে কাটানো এক একটা মুহুর্ত। রাত গভীর হলে যখনি দু’চোখের পাতা এক হয় দুঃস্বপ্নেরা ছিন্নভিন্ন করে দেয় হৃদয়। নির্ঘুম বা দুঃস্বপ্ন দু’টোর একটিকে নিয়েই প্রতিটি রাত পার করছে সে। যেন এক রাতজাগা পাখি৷
কেউ নতুন প্রণয়ানুভূতিতে সিক্ত৷ কেউ বিরহে নিবৃত্ত। সব ভুল চুকিয়ে কেউ ব্যস্ত সঠিক পথে চলতে। আবার কেউ পেশাগত ও সাংসারিক জটিলতার সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত৷ এমনই ভাবে কেটে গেল কয়েকটি মাস। আইয়াজ, ফারাহর জীবনে বহুমুখী সমস্যা এসেছে। আবার একটু সময় লাগলেও সক্ষম হয়েছে সমস্যা গুলোর সমাধান দিতে।
উত্তরে হাওয়া নিয়ে আসছে শীতকাল৷ প্রকৃতি জুড়ে হিমহিম ঠান্ডা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। সেই শিহরণ আজ দ্বিগুণ হলো, প্রণয় পুরুষটির প্রগাঢ় আর উষ্ণ আলিঙ্গনে। যে আলিঙ্গনে অন্তঃকরণ শত সহস্রবার প্রার্থনা করে, সময়টা থেমে যাক। এই নিরাপদ বুকটায় কেটে যাক যুগের পর যুগ। শেষতক এই বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বিদায় নিক পৃথিবী ছেড়ে।
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর৷ অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে পরিপাটি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সৌধ। ড্রাইভিং সিটে বসেছে সে। পাশে সিমরান৷ সৌধর চোখে স্টাইলিশ সানগ্লাস। পরনে ধূসর বর্ণের শার্ট, কালো প্যান্ট এবং শার্টের ওপর কালো রঙের কোটি ব্লেজার। সেই কিশোরী বয়স থেকে সৌধর স্মার্টনেস, গেটআপ আর ব্যক্তিত্বে ভীষণ দুর্বল সিমরান৷
” বাহির বলে দূরে থাকুক, ভিতর বলে আসুক না। ভিতর বলে দূরে থাকুক , বাহিরে বলে আসুক না। ঢেউ জানা এক নদীর কাছে, গভীর কিছু শেখার আছে। সেই নদীতে নৌকো ভাসাই, ভাসাই করে ভাসাই না। না ডুবাই না ভাসাই, না ভাসাই না ডুবাই জল ডাকে, আগুনও টানে আমি পড়ি মধ্যিখানে।
ধবধবে সাদা রঙে ঘেরা একটি আলিশান বাড়ি। চারপাশের ভূমি গাঢ় সবুজ, কৃত্রিম ঘাসে সজ্জিত। গাড়ির ভেতর থেকে এ পর্যন্ত দেখে ধীরেসুস্থে নেমে দাঁড়াল সৌধ। সুহাসকে ইশারা করল চটজলদি বেরুতে। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটাচ্ছে সুহাসের। উত্তেজনায় তলপেট মুচড়ে, মুচড়ে ওঠছে। চোখ, মুখের অবস্থা নাজেহাল। কণ্ঠনালি ক্ষণে ক্ষণে নীরস হচ্ছে।
মুখোমুখি সৌধ, নামী৷ বদ্ধ রুমে তারা দু’জন ব্যতীত আর কেউ নেই। নামীর মুখশ্রীতে নোনাপানি শুকিয়ে চামড়া টানটান হয়ে আছে৷ সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে সৌধ বুঝে ফেলল মেয়েটা কেঁদেছে। নামীর মতো মেয়েরা গোপনেই কাঁদে। লোক সম্মুখে কেঁদে, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করার মতো মেয়ে নামীরা হয় না।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসকে বলা হয় প্রেমের শহর। এ শহরে ল্যালা নামক এক প্রণয়ীর বাস। বয়স বত্রিশ। সুন্দরী, বোকা, স্মার্ট শ্বেতাঙ্গ রমণী সে। বাবা, মা কেউ বেঁচে নেই৷ দু’বার বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়েছিল। দূর্ভাগ্যবশত সম্পর্কগুলো টেকেনি। বর্তমানে সিঙ্গেল জীবনযাপন করছে৷ বাবা, মায়ের বিজনেস বড়ো ভাই আর বোন দেখে। সে তার ছন্নছাড়া জীবনটুকু নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত৷
ডিসেম্বরের সূচনা৷ হিমশীতল পরিবেশ। ধরণিতলে সূর্যরশ্মি পড়েনি আজ৷ মনকেমন করা একটা সকাল। অলস দুপুর আর ম্রিয়মাণ বিকেল। রাতটা পিপাসিত। পিপাসিতা রমণীটি বসে আছে আয়নার সামনে। নিজের রূপ, ঐশ্বর্য দৃষ্টিপাত করে ভেঙচি কাটছে বারংবার। কারণ খুবই হৃদয়স্পর্শী। সুন্দরী তরুণিমার তরুণকুমার ধরাছোঁয়ার বাইরে। চঞ্চলা মন, উষ্ণ, নরম দেহ হাপিত্যেশ করে।