ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৬৯

আরো একটি নির্ঘুম রাত৷ এ কী বীভৎসতা? এ কোন দহনে পুড়াচ্ছে নামীদামি? সুহাস কী সইতে পারে তার সুহাসিনীর পাষণ্ডতা? পারে না তো… তাই তো তীব্র যন্ত্রণা বুকে পুষে দু’রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিল। গোটা একটা রাত কেটে গেল প্রিয়জন হারানোর শোকে। দীর্ঘদিন এই শোকে ঝিমিয়ে পড়েছিল সে।
যা দৃঢ় হয়ে ওঠেছে সে বাবা হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে। নতুন অনুভূতি, প্রথম পরিচয় যা ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। বহুকষ্টে ভোরবেলা একটু চোখ বুজতে পারল৷ কিন্তু ঘুম হলো না ঠিকঠাক। মস্তিষ্ক জুড়ে কিলবিল শুরু করল, নামীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত। বেলা বাড়তে বাড়তে সেই মুহুর্ত গুলো পেরিয়ে পেরিয়ে চলে এলো, সেদিনের সেই ঝগড়ায়। এরপর বাস্তবের মতো স্বপ্নেও নামী হারিয়ে গেল৷ আর খুঁজে পেল না তাকে৷ বুকের ভেতর ছটফটিয়ে উঠলো। মস্তিষ্কে চাপ পড়ল ভীষণ। তীব্র যন্ত্রণায় স্বপ্নের ঘোরেই নড়তে শুরু করল সুহাস৷ আকস্মিক তখন আবার নামীর দেখা মিলে। গাঢ় গোলাপি রঙের একটি গোল জামা পরিহিত নামী। পেটের কাছটা অনেক উঁচু। দেখে মনে হচ্ছে সাত, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের বাড়িরই সিঁড়ি পেরিয়ে অসন্তুষ্ট মুখে নিচে নামছে৷ সুহাস সদর দরজায় দাঁড়িয়ে। হাসিমুখে তাকিয়ে আছে গর্ভবতী নামীর পানে। সহসা পা ফস্কে যায় নামীর। সিঁড়ি গড়িয়ে পড়ে নিচে। প্রতিটি সিঁড়ির ধাপে ধাপে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুহাসের বুকের ভেতর মুচড়ে ওঠে নিমেষে। চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়। ভয়ে শিউরে ওঠে দেহ। বাড়ি কাঁপিয়ে আর্তচিৎকার করে ওঠে তার পুরুষালি কণ্ঠস্বর। একছুটে চলে আসে রক্তে মাখামাখি হয়ে পেটে দু’হাত চেপে ধরে কাতরাতে থাকা নামীর কাছে। শুনতে পায় কাঁপা কাঁপা স্বরে নামী বলছে,
‘ আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না সুহাস৷ তোমার মতো অযোগ্য লোকের স্ত্রী কখনো মাতৃসুখ পায় না। আমিও পেলাম না৷ ঠিক এই অপরাধেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব! ‘
দিকবিদিকশুন্য হয়ে গগনবিদারী এক চিৎকার দেয় সুহাস। হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে৷ ঘুম ছুটে গেছে পুরোপুরি৷ হাঁপাচ্ছে ভীষণ। যেন সে ঘুমাচ্ছিল না, মাইলের পর মাইল দৌড়ে এসেছে। থরথর করে কাঁপছে ছেলেটা। এসি চলছে তবু শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। ভালোভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখল, আলো ফুটেছে। ঘড়ির কাঁটায় সময় ঠিক বেলা এগারোটা। অর্থাৎ, সে এতক্ষণ যাবৎ স্বপ্ন দেখছিল, দুঃস্বপ্ন! ফোঁস ফোঁস শব্দে নিঃশ্বাস ছাড়ল সুহাস৷ কাঁপা হাতে সাইট টেবিলে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ভরে এক শ্বাসে পানি খেল। এরপর শঙ্কিত চিত্তে সেলফোন খুঁজে ত্বরিত কল করল সৌধকে৷
.
ভারি বর্ষণ শেষে সবুজ, শ্যামল প্রকৃতিতে যেই সতেজতা বিরাজ করে। সিমরানের আপাদমস্তক আজ সেই সতেজতাতেই পরিপূর্ণ৷ তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না গত রাতে তার সঙ্গে একটি বিকৃত ঘটনা ঘটেছিল৷ সৌধ নামক ম্যাজিসিয়ান স্বামী যার আছে তার জীবনে কোনো বিকৃত ঘটনার চিহ্ন থাকতে পারে না৷ সদ্য বিবাহিতা সিমরানকে ঘিরে আছে যেন আশ্চর্য এক সুখ। জ্বলজ্বল করা এই সুখ হিংসে করার মতোন। সকাল থেকে চৌধুরী বাড়ি জুড়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে এক সুখী, সুশ্রী তরুণী৷ এ যেন চোখের শান্তি। সুজা চৌধুরী থেকে শুরু করে বাড়ির প্রতিটি সদস্যই খেয়াল করেছে। সুন্দরী, প্রাণ চঞ্চল এক মেয়ে কী অমায়িক ভাবে মিশে আছে তাদের পরিবারের সঙ্গে। বয়সের তুলনায় মানসিক পরিপক্বতা আসেনি হয়তো। কাজেকর্মেও পটু নয়।
তবু তার মিষ্টি আচরণ, শিষ্টতাতেই মুগ্ধ সকলে। এ বাড়িতে সৌধ, তানজিম চৌধুরীর পর সিমরানের সবচেয়ে কাছের মানুষ তাহানী৷ তার সঙ্গে এখন সে এ বাড়ির বিরাট লাইব্রেরিতে ঢুকেছে৷ ওদিকে সৌধ খুঁজে বেড়াচ্ছে সিমরানকে৷ দুপুর হয়ে আসছে৷ এখনো জানানো হয়নি আজ সে নিধির সঙ্গে দেখা করতে যাবে। কাজের মেয়ে তুরিন জানালো সে তাহানীর সঙ্গে গ্রন্থাগারে গেছে৷ শুনে খুশি হলো সৌধ। ভেবেছিল চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার আগে সে নিজেই একবার ওখানে নিয়ে যাবে সিনুকে। যাতে অবসর সময় গুলো বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে বই, পুস্তক পড়ে কাটাতে পারে। ওর যা বন্ধুমহল ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ নয় সৌধর। সবগুলোই চেনে সে। তারা কোন পরিবারের, তাদের চলাফেরা কী সব ব্যাপারে অবগত। এতকাল তাদের সঙ্গে মেশা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও আলাদা কোনো জোর ছিল না৷ এবার আছে। অন্তত কোনো পুরুষই চাইবে না তার বউয়ের সমাজে বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারী বন্ধু-বান্ধব থাকুক৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সৌধ। আকাঙ্ক্ষা জন্মায়, বইয়ের সঙ্গে সিনুর একটা নিবিড় সম্পর্ক হোক।
বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে বাগানের ডানপাশে চলে গেল সৌধ৷ ছোট্ট একটি দোতলা বিল্ডিং। নিচতলার প্রবেশদ্বারের সামনে নেম প্লেটে লিখা, ” বুক ফ্রেন্ড লাইব্রেরি ” মূলত লাইব্রেরিটা ছিল সুলল চৌধুরীর। এ বাড়িতে বইপ্রেমী মানুষ বলতে সুজা চৌধুরী, তানজিম চৌধুরী আর সুলল চৌধুরীই ছিল। সৌধ বড়ো হতে হতে কাকুর উৎসাহ, উদ্দীপনায় ধীরে ধীরে তুখোড় বইপ্রেমী হয়ে ওঠল৷ এরপর চাচা, ভাতিজা মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তারা বড়ো করে একটা লাইব্রেরি ঘর দেবে৷ সুলল কাকুর ব্যক্তিগত লাইব্রেরিটাই বড়ো করা হলো। দোতলার ছোট্ট ঘর বদলে নিচে এখানটায় রাজকীয় ভাবে স্থাপন করা হলো ” বুক ফ্রেন্ড লাইব্রেরি ” নিচতলায় ঢুকে সিমরানের দেখা পেল না সৌধ৷ উপর তলা থেকে শুনতে পেল দুটো মেয়ের খিলখিল করে হাসির শব্দ। যা পুরো বিল্ডিংয়ে ঝংকার তুলার পাশাপাশি সৌধর বুকেও তুলল। গতরাতে কাঁদতে কাঁদতে যার বেহাল দশা হয়েছিল আজ সে তাহানীর সঙ্গে খিলখিল করে হাসছে। অদ্ভুত ভালোলাগায় শিহরণ হলো সৌধ। উদ্ভাসিত চিত্তে পা বাড়াল দোতলার দিকে৷ এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে থেমে যায় সে। সুহাসের কল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সুহাস হড়বড় করে বলতে থাকে,
‘ দোস্ত আমি নামীকে স্বপ্নে দেখেছি!…’
এক নিঃশ্বাসে বিস্তারিত বলে থামে সুহাস৷ হাঁপাচ্ছে সে৷ প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে ত্বরিত সামলে নেয় সৌধ। বুঝতে পারে নামী আর আগত বাচ্চাকে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফল এই দুঃস্বপ্ন। তাই শান্ত গলায় বলে,
‘ অতিরিক্ত চিন্তা করতে নিষেধ করেছিলাম তোকে। ‘
‘ সৌধ নামী ভালো নেই। ওর নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে! ‘
‘ নামী ভালো নেই এটা জানা কথা৷ কিন্তু বিপদ ঘটেছে কিনা এটা অজানা৷ মনগড়া ভাবনা থেকে বের হো। অতিরিক্ত চিন্তা করেছিস বলে দুঃস্বপ্ন দেখেছিস ব্যস আর কিছুই না। ‘
‘ না সৌধ। আমাকে তুই বিশ্বাস কর। ‘
অসহায় স্বর সুহাসের। সৌধ চোখ বুঁজে ভাবল কিছু। এরপর বলল,
‘ তোকে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু তোর এই অনুভূতিকে না। জাস্ট একটা দুঃস্বপ্ন এটা। কই এতদিন তো এমন কোনো স্বপ্ন দেখিসনি৷ তাহলে আজ কেন? কারণ তুই এখন ডেস্পারেট হয়ে দুঃশ্চিন্তা করছিস। ‘
উদ্বিগ্নতা কমে এলো সুহাসের। হতাশ কণ্ঠে বলল,
‘ বাবা এখনো আখতার আংকেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি সৌধ। ‘
‘ সো হোয়াট? চিন্তার কিছু নেই৷ অ্যামরিকায় আখতার আংকেল কোথায় থাকে এটা তো জানে সোহান আংকেল। ব্যস এতেই হবে৷ কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পারলে তুই চলে যাবি ওখানে৷ ‘
নিশ্চুপ সুহাস৷ সৌধ স্মিত হেসে বলল,
‘ রাতে ফোন করব। এখন রাখছি। ‘
ফোন কেটে ভেতরে ঢুকল সৌধ। আকস্মিক সিমরানের মুখোমুখিও হলো। সৌধ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ দেখা শেষ? ‘
‘ না সবেই তো এলাম৷ এই দেখো দেবদাস। তুমি কি এটার কথাই বলেছিলে? ‘
সৌধ দেখল সিমরানের হাতে একটি চমৎকার প্রচ্ছদের দেবদাস বইটা৷ যেখানে দেবদাস, পার্বতীর বিচ্ছেদ চিহ্নও দৃশ্যমান। অমায়িক ভঙ্গিতে হাসল সৌধ৷ একহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে দিয়ে আরেক হাতে ডান ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে এগিয়ে গেল ভেতরে৷ সিমরান একটু সরে গেল৷ এরপর সৌধর পিছু পিছু হাঁটতে লাগল৷ তাহানী এসে বলল,
‘ ছোটো ভাইয়া সিনুপাই এই বইঘরটা খুব লাইক করেছে। ‘
তাহানীর মাথায় হাত বুলিয়ে শেল্ফের সামনে দাঁড়াল সৌধ। দেখে দেখে সমরেশ মজুমদার আর শরৎচন্দ্রের কয়েকটি কালজয়ী উপন্যাস বের করে সিমরানের হাতে দিয়ে তাহানীকে বলল,
‘ কিউটি, একটু ওপাশে ঘুরে আসো তো। তোমার ভাবিপার সঙ্গে কিছু প্রাইভেট কথা বলব। ‘
ছয় বছর বয়সী তাহানী কী বুঝল কে জানে? মুখে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেল। সিমরান তো তাজ্জব বনে গেল এ দৃশ্য দেখে। সৌধ মুচকি হেসে বলল,
‘ ভেরি ভেরি স্মার্ট। কার কন্যা দেখতে হবে না? ‘
সিমরান নাজুক হয়ে মনে মনে বলল,
‘ কার সিস্টার তাও তো দেখতে হবে। ‘
সৌধ হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে হাতে থাকা বইগুলো সিমরানের হাতে তুলে দিয়ে অকপটে বলল,
‘ সন্ধ্যার পর নিধির সঙ্গে মিট করতে যাচ্ছি। আমার প্রয়োজনে নয়। সুহাসের প্রয়োজনে। ‘
সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় মুখশ্রীতে আচমকা এক টুকরো আঁধার নামল বোধহয়। বুকের ভেতরটায় তীক্ষ্ণ এক যন্ত্রণা অনুভব করল সিমরান। সৌধ ভাইয়ের কাছে তার এই অনুভূতি ধরা পড়ার ভয়ে জোর পূর্বক ঠোঁটে হাসি টেনে মিহি স্বরে বলল,
‘ ঠিক আছে৷ ‘
একপেশে হাসল সৌধ। হাতে থাকা বইগুলোর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে বলল,
‘ পরিণীতা বইটা আমি পড়িনি বুঝলি৷ যতক্ষন বাইরে থাকব এ সময়ে এই বইটা শেষ করা যাবে৷ তুই পড়ে আমাকে কাহিনীটা বলিস তো। বুঝিসই তো কাজের চাপে আমার এখন এসব বই পড়ার সময় হয় না৷ তুই পড়ে গল্প শোনালে সময় কম লাগবে।
আমারো জানা হবে প্রিয় লেখকের আরেকটি বই সম্পর্কে। ‘
যে মিথ্যায় সুখ পাওয়া যায়, শান্তি আসে, দুঃখ দূর হয়ে কষ্ট মলিন হয় সেই মিথ্যাকে সম্মান করে সৌধ। শরৎচন্দ্রের প্রতিটা উপন্যাসই তার ঠোঁটের আগায়৷ পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে গেছে বলায় যায়। পরিণীতা পড়েছিল, সেই ক্লাস নাইনে পড়াকালীন। তবু মিথ্যা বলল। কারণ আজ সন্ধ্যার পর সে বেরিয়ে গেলে সিমরান খুব অশান্তি নিয়ে কাটাবে৷ তাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে৷ সংগোপনে নিধির প্রতি ইর্ষাও জন্মাতে পারে। তাই বুদ্ধি করে বই পড়ার কাজ দিল। এতে করে সন্ধ্যার পর সিমরান ব্যস্ততায় কাটাবে। তার অবর্তমানে বই বন্ধুর সঙ্গ পাবে৷ যদি কর্মহীন বসে থাকে তাহলে আলস্যতা চেপে ধরবে৷ আর অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। শুধু আজ নয় তার অবর্তমানে সিমরান যেন কোনো মুহুর্তেই নিঃসঙ্গতায় না ভুগে সে জন্য অনেক নির্দেশনাও দিল। সবটাই ছিল কোনো না কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা৷ ভার্সিটিতে যাওয়া, পড়াশোনা করা। বাড়িতে আম্মার সাথে রান্না শেখা, গল্প করা। তাহানীর সঙ্গে সময় কাটানো, বই পড়া। আরো কত কী বলল সৌধ। সবটা মন দিয়ে শুনে হঠাৎ সিমরান বলল,
‘ চট্টগ্রাম গিয়ে তুমি কি একটুও ফ্রি থাকবে না? একটা ফোনকল বা ম্যাসেজ করার? ‘
সহসা স্তব্ধ হয়ে যায় সৌধ। নিষ্পলক চেয়ে রয় সিমরানের সুশ্রী, ম্লান মুখটায়। এরপর হেসে ফেলে কিঞ্চিৎ। মুগ্ধ করা এক বাঁকা হাসি। পুরুষ মানুষের বাঁকা হাসি এমন মারাত্মক সুন্দর হয়? নাকি শুধু সৌধর বাঁকা হাসিটাই হৃদয় কাড়া সুন্দর? উত্তরের অপেক্ষায় সিমরান। সৌধ স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে শীতল কণ্ঠে উত্তর দিল,
‘ আরে বোকা, আমিত কল করবই। বিয়ে করেছি না? বাড়িতে বউ রেখে যাব আর তার খোঁজ, খবর নিব না? আমাকে ইররেস্পন্সিবল মনে হয় তোর? ‘
শেষ শব্দটায় একটু শাসনি সুর ছিল। যা টের পেয়ে আকস্মিক মাথা নেড়ে সিমরান জবাব দেয়,
‘ উহুম একটুও না৷ শুধু লাভলেস মনে হয়৷ অপ্রেমিক।’
ঘোরের মুখে কথাটা বলেই জিভ কাটে সিমরান। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে সরে পড়ে সৌধর সম্মুখ থেকে। সৌধ কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রয় ঠাঁই। অস্ফুটে বিরবিরায় ‘ আমি অপ্রেমিক! ‘
.
.
শহরের ছোট্ট একটি কফিশপ। সৌধর পরিচিত এক বড়ো ভাই এক বছর হলো এটি উদ্ভোদন করেছে৷ যা অল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে৷ স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই বেশি আসে৷ তাও আবার যুগল হয়ে। আজ এক ঘন্টার জন্য কফিশপ বন্ধ। কারণ সৌধ চৌধুরী একঘন্টার জন্য তার এক বান্ধবীকে নিয়ে বসবে এখানে৷ ব্যক্তিগত ভাবে এখানে কর্মরত প্রতিটি সদস্য সৌধকে চেনে৷ তাই বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবল না। বরং গুরুত্বপূর্ণ কাজে বলেই বিবেচনা করল এবং সচেতন থাকল যাতে তাদের কোনো আচরণে ভুল না পায় সৌধ। সন্ধ্যার পর আবছা আলো আবছা আঁধারে প্রকৃতি। সৌধ এলো বাইকে করে। সঙ্গে ওর কাজিন সাদি ছিল। যাকে কফিশপের বাইরে রেখে ভেতরে প্রবেশ করল সে। কফিশপে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন এসে সালাম দিল তাকে। বসার জন্য জায়গা দেখিয়ে দিল। সৌধ মৃদু হেসে গিয়ে বসল। ফোন বের করে কল করল নিধিকে৷ নিধি জানালো সে কফিশপের সামনে। সৌধও জানিয়ে দিল, সে ভেতরে আছে।
পুরো কফিশপ ফাঁকা। অবাক হলো না নিধি। সৌধকে চেনে সে। তাই ধারণা ছিল এমন কিছুই হবে৷ স্পেশালিটি থাকবেই থাকবে। চারপাশে ভালো করে নজর বুলিয়ে সৌধকে দেখতেই চোখে, মুখে দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ল। যা এগিয়ে যেতে যেতে মিলিয়ে গেল আচমকা। শুভ্র রাঙা টিশার্ট পরনে সৌধর। চোখে পিউর ব্লাক সানগ্লাস। সদ্য সিগারেট ধরিয়েছে! নিধি সামনে এসে দাঁড়াল। কোনো প্রকার উদ্দীপনা দেখা গেল না সৌধর মাঝে। সে নির্লিপ্ত ভাবে একবার তাকাল। ঈষৎ হেসে দৃঢ় গলায় বলল,
‘ বোস। ‘
এরপর ঠোঁটে সিগারেট চেপে ধরল। ধোঁয়া ছাড়ল পিছন দিকে যেন নিধির দিকে না যায়৷ তবু সিগারেটের ঘ্রাণ নাকে এলো নিধির। খুব একটা কড়া না। তবু নাকমুখ কুঁচকে বসল সে। অস্বস্তি হলো ভীষণ। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সৌধ সিগারেট খাচ্ছে। তবু তার সামনে৷ পরোক্ষণেই স্মরণ হলো, আইয়াজ তাকে জানিয়েছিল সেদিনের পর সৌধ শুধু সিগারেট না নানারকম নেশাদ্রব্য পান করেছে। বারে পর্যন্ত গেছে! এসব আবার ত্যাগও করেছে শুনেছিল। তবে কী আইয়াজ ভুল জানে? কখনো সিগারেট না ছোঁয়া ছেলেটা এই তো দিব্যি সিগারেট খাচ্ছে। ঢোক গিলল নিধি৷ থমথমে গলায় প্রশ্ন করল,
‘ কেমন আছিস? ‘
‘ আলহামদুলিল্লাহ। ‘
নিঃসংকোচ উত্তর সৌধর। ওয়েটার এসে দু’টো কোল্ড কফি দিয়ে গেল৷ নিধির প্রিয় কোল্ড কফি। এজন্য সৌধ এটাই দিতে বলেছে। যা দেখে একটু শান্তি পেল নিধি৷ যাক তার পছন্দ মনে আছে। কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ বসে থেকে সৌধর থেকে কোনো প্রশ্ন বা শব্দ না পেয়ে নিজেকে সুস্থির করল সে।এরপর পুনরায় প্রশ্ন করল,
‘ নিয়মিত সিগারেট খাস? ‘
‘ যখন ইচ্ছে হয় তখন খাই৷ ‘
ওড়না দিয়ে নাক ঢাকল নিধি৷ কিঞ্চিৎ রাগ হয়ে বলল,
‘ সিনুর সামনে বসেও খাস? ও কিছু বলে না? ওর বাপ, ভাই কেউ তো সিগারেটখোর না৷ মানিয়ে নিতে পারে? ‘
‘ হার্মফুল জিনিস ওর সামনে খাব কেন? এটা যে খায় এবং যে ঘ্রাণ পায় দু’জনের পক্ষেই ক্ষতিকর। ‘
ভ্রু বাঁকিয়ে ফেলে নিধি৷ চোখ দু’টো ছোটো ছোটো করে বলে,
‘ বাহ ডক্টর সাহেব আপনি যাতে মাতাল তালে ঠিক। তা এই হার্মফুল জিনিসটা খেতে কে পায়ে ধরে তোর? ‘
‘ বললাম না আমার ইচ্ছে? ‘
‘ বিশ্রী ইচ্ছে। ‘
শব্দ দুটো বলে হঠাৎ চ্যাঁচিয়ে ওঠে,
‘ ওই তুই নিজের ক্ষতি করার পাশাপাশি আমারো ক্ষতি করছিস৷ সিনুর ক্ষতি হবে বলে ওর সামনে যেমন খাস না আমার ক্ষতি চিন্তা করেও এখন তোর এটা খাওয়া উচিত না৷ যা ফেলে আয়। ‘
হাসল সৌধ। এতক্ষণ নিধির দিকে না তাকালেও এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অদ্ভুত সুরে বলল,
‘ আমার বউ আর বান্ধুবী তো এক নয়। বন্ধুর জন্য এটুকু সেক্রিফাইস তুই করতেই পারিস৷ আর আমি তোর অল্প ক্ষতি করতেই পারি। শুনেছি বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধু প্রাণও দিতে পারে৷ ‘
আকস্মিক সমস্ত উদ্দীপনা মিশে গেল নিধির। বউ আর বান্ধবী এক নয়। সৌধ সিনুর সামনে সিগারেট খায় না৷ কারণ এতে সিনুর ক্ষতি হবে। অথচ তার সামনে খাচ্ছে। অর্থাৎ তার ক্ষতি হলে সৌধর এখন আর যায় আসে না! মুখটা ছোটো হয়ে গেল নিধির৷ পুরোনো দিনের অনেক কথা, অনেক স্মৃতি এসে মন পুড়াতে লাগল। সবচেয়ে বিস্ময়কর লাগল, সৌধ কি অনায়াসে আমার বউ শব্দটা বলল। একদিকে অবশ্য খুশিই হলো সৌধ নিজেকে সামলে সবটা মেনে নিতে পেরেছে বলে। কিন্তু ওই যে কিছু স্মৃতি, কিছু অভ্যেস ঠিক তীক্ষ্ণ ভাবে জ্বালাতে শুরু করল। একটা সিগারেট অর্ধেকটা শেষ করে ফেলে দিল সৌধ। নিধি কফি খাচ্ছে আর গভীর কিছু ভাবছে৷ সৌধ তাকাল ওর দিকে৷ খেয়াল করল আগের চেয়ে মুটিয়ে গেছে মেয়েটা। তক্ষুনি মনে পড়ল, নিধি এখন একটা ফুটফুটে বাচ্চার মা৷ সহসা মনে পড়েছে এমন করেই জিজ্ঞেস করল,
‘ রূপ কেমন আছে? ‘
থমথমে কণ্ঠেই উত্তর দিল নিধি,
‘ ভালো আছে। টুকটাক কথা বলতে শিখেছে। সারাক্ষণ বাবাকে ডেকে বেড়ায়৷ দু একবার অবশ্য আমাকেও ডাকে। ‘
আচমকা মুখ ফস্কে কথাটা বলেই সচেতন চোখে সৌধর দিকে তাকাল। সৌধ নির্লিপ্ত। তবু কেন যেন মনে হলো ওর ভিতরে নির্লিপ্ততা নেই। আছে অন্যকিছু। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়ে নিধি। ভাবে সৌধ যদি তার বউ, তার বউ অবলীলায় বলতে পারে সে কেন তার বাচ্চার বাবার গল্প করতে পারবে না? তাই অর্পণ স্যারকে নিয়েও কিছু গল্প শুরু করল৷ সৌধ গোপনে হাসল তাচ্ছিল্য ভরে৷ ধরে ফেলল নিধির মনোভাব। অথচ নিধি ধরতে পারল না সৌধ ইচ্ছে করেই তার সামনে সিগারেট খাচ্ছে। যা বলছে যা করছে সবটার পেছনে কারণ একটাই তাদের দু’জনের জীবনের পথ সুন্দর, স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে যাওয়া শ্রেয়। যেসব তিক্ত ঘটনা ঘটে গেছে সেসব থেকে বেরিয়ে এসে অন্তত বন্ধুত্বটুকু বাঁচিয়ে রাখা৷ যদি তারা একে অপরের কাছে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গুলো সহজ ভাবে তুলে ধরতে না পারে তবে উভয়ের মনেই অতীত নিয়ে পিছুটান থাকবে। সেই পিছুটান যেন না থাকে এজন্যই এই প্রয়াস৷ অন্তত আজ থেকে বিশ বছর পর হঠাৎ দেখা হলে হাসি মুখে দুটো বাক্য বিনিময় করতে চায় সৌধ। এটা যদি না পারে তাহলে তারা দ্বিতীয় মানুষটাকে নিয়ে সুখী হতে পারবে না। সৌধ এখন মনে প্রাণে চায় নিধি অর্পণকে নিয়ে সুখী হোক। সে নিধির সুখ চায় বলেই যে অর্পণ স্যারকে নিয়ে এত এত ভালো ভালো কথা হজম করতে পারবে তা না৷ তাই তো ক্রোধটুকু সুপ্ত রেখে বাঁধা প্রদান করে শুধাল,
‘ আমার সঙ্গে দেখা করতে এলি তোর বর জানে? ‘
‘ না। বলেছি বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাই। কোন বন্ধু জিজ্ঞেস করেনি। আমিও বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। ‘
স্মিত হাসে সৌধ। বলে,
‘ আমার বউ সন্ধ্যার পর একা বেরুতে পারবে না৷ এটা আমার বাড়ি এবং আমার রুলস। ‘
নিধি দম্ভ দেখিয়ে বলল,
‘ আশ্চর্য। ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার মতো ছেলে তো তুই নোস। ‘
এ বিষয়ে আর কথা বাড়াল না সৌধ। নিধি একশটা যুক্তি দেবে৷ কথা বাড়বে। তাই শুধু বলল,
‘ আমি কিন্তু সিনুকে জানিয়েই দেখা করতে এসেছি। ‘
অবাক হলো নিধি। বিস্ময় ভরে বলল,
‘ সিরিয়াসলি? ‘
মাথা নাড়ে সৌধ। নিধি ভাবুক হয় একটু। সৌধ অফ টপিক বদলে এবার আসল টপিকে চলে আসে৷ সহসা প্রশ্ন করে,
‘ নামীর বিষয়টা কেন গোপন করলি?’
হকচকিয়ে যায় নিধি৷ নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে বলে,
‘ ও বোন হিসেবে আমার সহায়তা নিয়েছিল সৌধ। সুহাস আর ওর তুমুল ঝগড়া হয়েছিল। সুহাস নামীর গায়ে হাত তুলেছে এটা শুনে আমারো রাগ হয়েছিল ভীষণ। বউ পেটানো পুরুষ আমার বন্ধু! জাস্ট মেনে নিতে পারছিলাম না৷ বাবা, মা হীন মেয়ে নামী। বড়ো বোন হিসেবে একটু আশ্রয় চেয়েছিল। দিয়েছি। ‘
‘ সুহাসকে ছেড়ে অ্যামরিকায় চলে গেল। তোর উচিত ছিল না সুহাসকে এ ব্যাপারে জানানো? ‘
‘ বিশ্বাস কর আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু নামী আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাও ধরেছিল৷ ভাব ওর মতো মেয়ে কতটা অসহায় হয়ে এই কাজ করেছে। ও অনেক বিধ্বস্ত ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এমন একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ও যে সুহাসের কাছে গেলে সেই ট্রমা থেকে ও আর বেরুতে পারবে না৷ প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ছিল সুহাসের প্রতি৷ আর এরজন্য দায়ী সুহাস নিজেই৷ একজন শিক্ষিত, ভদ্র পরিবারের ছেলে, পেশায় ডাক্তার। সে কী করে বউয়ের গায়ে হাত তোলে৷ ‘
‘ তুই সুহাসকে চিনিস। ‘
‘ তাই বলে বউকে মারবে? সরি, বন্ধু বলে আমি এক্ষেত্রে ওকে সাপোর্ট করতে পারব না। ‘
‘ বলিনি সাপোর্ট করতে। নামী যে প্র্যাগনেন্ট জানিস? ‘
চমকে ওঠে নিধি। ঢোক গিলে বলে,
‘ দেশে থাকাকালীন জানতাম না৷ চলে যাবার পর একদিন যোগাযোগ হয় আর তখন জানায়৷ আগে জানলে যেতেই দিতাম না৷ কারণ আমি তো জানি এই জার্নিটা। আসলে আমি এটা জানার পরই বুঝতে পারি নামী কেন মানসিক অসুস্থতার মধ্যে যাচ্ছিল। প্র্যাগ্নেসির সময় মেয়েদের মুড সুইং হয়। কিন্তু নামীর ওই সময়টা শুরু ছিল। হিউম্যান সাইকোলজি বলে, মেয়েদের হৃদয় গর্ভাবস্থা চলাকালীন শিশুসুলভ হয়ে যায়৷ ওরা অল্প আদরে যেমন অনেক বেশি খুশি হয়, তেমনি অল্প আঘাতে ভয়ংকর ভাবে ভেঙে পড়ে৷ আমার এক বান্ধবী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ওর
কাছে এক প্যাশেন্ট এসেছিল৷ এটা তার মুখের গল্প। ভদ্রমহিলা যখন গর্ভবতী ছিল তার হাজব্যন্ড খুবই সামান্য একটি বিষয় নিয়ে বকাঝকা করে৷ ফলশ্রুতিতে ডেলিভারি হওয়ার আগ পর্যন্ত চক্ষুশূল হয়ে ছিল বর৷ অথচ বিয়ের পর থেকে শাশুড়ীর সঙ্গে উনার বনিবনা ছিল না৷ গর্ভবতী হওয়ার পর সে শাশুড়ি একদিন খিচুড়ি রেঁধে খাইয়েছিল বলে খুশিতে সেদিন শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছে। এরপর শাশুড়ি যতই রেগে কথা বলুক সে হাসিমুখেই সেগুলো এড়িয়ে চলে৷ ‘
একটু থামল নিধি। এরপর সৌধর দিকে সিরিয়াস হয়ে তাকিয়ে বলল,
‘ আসলে কী বলত আমাদের এই জার্নি কোনো ছেলের পক্ষে বোঝা সম্ভব না। মানসিক, শারীরিক সবদিক দিয়ে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি৷ একদম বাচ্চাদের মতো। আমার ছেলের সামনে মোম জালিয়ে ধরিস৷ ও একবার হাত দিয়ে ছ্যাঁকা খেলে আর দ্বিতীয়বার সেটা ধরবে না। প্র্যাগ্নেসির সময় আমাদের মাইন্ডটা ঠিক ওরকমই থাকে। সুহাস স্টুপিডটা এত্ত কেয়ারলেস কী আর বলব। ‘
.
.
সৌধ, নিধির কথোপকথন শেষ৷ নামীর সঙ্গে প্রথম দিকে যোগাযোগ থাকলেও এখন আর যোগাযোগ নেই নিধির৷ টেক্সট করে না পেয়ে মেইল করে রেখেছে নিধি৷ সব শুনে সৌধ বলল,
‘ যখনি ওর সঙ্গে যোগাযোগ হবে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবি৷ ‘
নামীর মেইল ঠিকানা নিয়ে রাখল সৌধ। নিধিও সুহাসের বর্তমান অবস্থা জেনে দুঃখ প্রকাশ করল। সৌধকে অনুরোধ করল, সুহাস যেন না জানে নামী চলে যাবার সময় তার কাছে ছিল। সে সাপোর্ট করেছে নামীকে। সৌধ এমনিতেও সুহাসকে কিছু বলবে না। বড়োজোর এটা বলতে পারে নামী ওদেশ থেকে নিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল একদিন৷ এর বেশি কিছু নয়৷ কারণ সে চায় না নিধির সাথে কারো সম্পর্ক খারাপ হোক৷ কথা শেষে ওরা যখন ওঠবে তখন হঠাৎ নিধি প্রশ্ন করল,
‘ নতুন জীবন কেমন লাগছে বললি না তো? ‘
অমায়িক ভঙ্গিতে হাসল সৌধ। গর্ব করে বলল,
‘ দারুণ। ‘
‘ সিনু অনেক ভালো মেয়ে অনেক ভালো রাখবে তোকে। ‘
‘ আই নো। ‘
ওঠে দাঁড়াল নিধি৷ সাথে সাথে সৌধও ওঠল। কফিশপ থেকে বেরিয়ে রিকশা ডেকে তুলে দিল নিধিকে। রিকশায় বসে হঠাৎ নিধি মাথা এগুলো। সৌধ বলল,
‘ কী হলো কিছু রেখে গেছিস? ‘
আকস্মিক নেমে দাঁড়ায় নিধি। চারপাশে রাতের আঁধারে সজ্জিত। গাড়ির হর্ণ, রিকশার টুংটাং, মানুষের কোলাহল কর্ণে বাজছে। একটা রিকশা অপেক্ষা করছে নিধির জন্য৷ অথচ নিধি তার প্রিয় বন্ধু সৌধর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্ষীণ গলায় বলে,
‘ ভালোবাসা বিষয়টায় আমি অনেক আনাড়িরে সৌধ। এক বাচ্চার মা হয়েও ঠিকঠাক বুঝে ওঠতে পারছি না এই অনুভূতিটাকে৷ একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি? ‘
স্তম্ভিত মুখে সৌধ বলল,
‘ হু, প্রশ্নটা? ‘
‘ দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসা যায়? ‘
কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও সহসা দ্বিধাহীন, তীব্র বিশ্বাস নিয়ে, স্পষ্ট ভাষায় সৌধ উত্তর দিল,
‘ কেন নয়? তুই যদি আমার হৃদয় কোণে ভালোবাসার আবছা অক্ষর হোস, সিনু আমার হৃদয় কোণে ভালোবাসার শেষ স্বাক্ষর। ‘

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।