ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৭৬

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৭৬|
মুখোমুখি সৌধ, নামী৷ বদ্ধ রুমে তারা দু’জন ব্যতীত আর কেউ নেই। নামীর মুখশ্রীতে নোনাপানি শুকিয়ে চামড়া টানটান হয়ে আছে৷ সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে সৌধ বুঝে ফেলল মেয়েটা কেঁদেছে। নামীর মতো মেয়েরা গোপনেই কাঁদে। লোক সম্মুখে কেঁদে, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করার মতো মেয়ে নামীরা হয় না। যদিও বা কখনো এমন ঘটনা ঘটে যায় সেটা খুবই বিরল। নামীর গোপনে করা কান্না টের পেয়ে গেছে। এটা নামীকে বুঝতে দিল না সৌধ। মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,
‘ ভালো আছো? ‘
ঈষৎ হেসে গায়ে জড়ানো চাদরটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিল নামী। শেষবার যে সৌধকে দেখেছিল। আর আজ যে সৌধকে দেখতে পেল দু’জন যেন আলাদা দু’টো মানুষ। আলাদা দু’টি মুখ। বিষাদ পূর্ণ সেই সৌধের চেয়ে সুখী সুখী চেহেরার এই সৌধকে দেখে ভীষণ ভালো লাগল। সৌধ ভাইয়া তবে সিমরানের সঙ্গে ভালোই আছে। তার ননদিনীও নিশ্চয়ই সুখে আছে? মনে মনে আনন্দিত হলো ভীষণ। সে কেমন আছে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলল,
‘ আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া? ‘
সৌধর হাসি চওড়া হলো এবার৷ যা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল সে ভালো আছে। ভীষণ ভালো আছে। মুখে সেটুকুর স্বীকারোক্তিও দিল। ক্ষীণ বাক্যে বলতে ভুলল না,
‘ আমার বন্ধুটা যে ভালো নেই নামী। ‘
সহসা কথাটি এড়িয়ে গিয়ে নামী প্রশ্ন করল,
‘ সিনু কেমন আছে? ‘
‘ ভালো মন্দ মিশিয়ে। তোমাকে ভীষণ মিস করে।মনে মনে অভিমান পুষে রেখেও কথা বলতে ভীষণ আগ্রহী হয়ে আছে। ‘
অকপটে জবাব সৌধর। যা শুনে হৃদয় জুড়ে শিরশিরে অনুভূতি হলো নামীর। সেও যে ভীষণ মিস করে সবাইকে। ঢোক গিলল মেয়েটা। চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে উঠছিল বার বার৷ নিজেকে শক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে ফের প্রশ্ন করল,
‘ আইয়াজ, ফারাহর কী খবর? ‘
একপেশে হাসল সৌধ। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল নামীর মুখশ্রীতে। শান্ত গলায় বলল,
‘ এত কঠোরতা ঠিক নয় বোন। এ যুগে এসে এভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা মানুষ নিঃসন্দেহে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী। অথচ হৃদয় হতে হয় নরম৷ একজনের ওপর অভিমান করে, একজনকে শাস্তি দিতে গিয়ে অসংখ্য প্রিয় মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছো। ওরা সবাই তোমাকে মিস করে নামী। ওরা সবাই তোমাকে ভালোবাসে। তোমার ফেরার অপেক্ষা করছে সবাই। ‘
চিত্ত বিগলিত হয় নামীর। চোখ দু’টো টলমল । যা দেখে আকস্মিক চুপ হয়ে গেল সৌধ। যত কঠিন হওয়ারই চেষ্টা করুক নামী। যতই শক্ত খোলসে নিজেকে আবৃত করে রাখুক। সত্যি কি সে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী? তাই যদি হতো এভাবে পালিয়ে আসত? নিজের ব্যর্থতা, দুর্বলতা প্রকাশ করবে না বলেই তো একরাশ অভিমান বুকে পুষে সবার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়ে সৌধ। মৃদু হেসে বলে,
‘ আইয়াজ, ফারাহও ভালো আছে। ফারাহ তোমাকে কতটা ভালোবাসে জানোই তো। ওরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুহাসের সঙ্গে তোমার কাছে, অ্যামেরিকায় যাবে। জানো নিশ্চয়ই? শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো না। ফারাহও প্রেগন্যান্ট হলো। কিছু কমপ্লিকেশনস রয়েছে। আইয়াজটা অনেক দুঃশ্চিন্তা করে। যতটা পারি মানসিক সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। ওহ হ্যাঁ আমরা আরো দুই রাজপুত্র পেতে চলেছি। আইয়াজ, ফারাহর টুইন বেবি হবে। ‘
বিস্মিত হলো নামী। খুশিতে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। চট করে সে জলটুকু মুছেও নিল সে। মনে মনে মাশাআল্লাহ বলে একটু মজার ছলেই বলল,
‘ বাহ, বন্ধুরা মিলে ফুটবল টিম তৈরি করে ফেলবেন দেখছি। ‘
হাসল সৌধ। হঠাৎ মনে পড়েছে এভাবে বলল,
‘ প্রাচীও প্রেগন্যান্ট। এখানে আসার আগে কথা হয়েছিল। এরপর আর হয়নি৷ খোঁজ নিতে হবে ওর। যাক সে কথা। এবার তোমার কথা বলো। লাইফ নিয়ে পরিকল্পনা কী তোমার? আমার বন্ধুটাকে সারাজীবন দেবদাস করে রাখার ছক কষোনি তো! ‘
এ প্রশ্নের উত্তর দিল না নামী। চুপচাপ বসে রইল। ভেতরটা ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার৷ এ মুহুর্তে একছুটে বাংলাদেশে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কথায় আছে না? কায়া দেখলে মায়া বাড়ে। নামীর যেন ঠিক তাই হলো। এমনিতেই সুহৃদের সঙ্গে সুহাসকে দেখে আবেগান্বিত হয়ে পড়েছিল। এরওপর সৌধকে দেখে সবার গল্প শুনে ব্যাকুলিত হলো মন। অতিরিক্ত আবেগ বিবেক নষ্ট করে দেয়। এতদিনে তা হারে হারে টের পেয়েছে নামী। তার এবং সুহাসের জীবনের অনেক গুলো মাস নষ্ট হয়েছে। এর জন্য সে যতটুকু দায়ী তার চেয়েও অধিক দায়ী সুহাস৷ আচমকা নিজেকে ধাতস্থ করে নিল নামী৷ তাকাল সৌধর ভারিক্কি মুখের দৃঢ় দৃষ্টি জোড়ায়। প্রশ্ন করল,
‘ সুহাস কি আমার জীবনের নষ্ট হয়ে যাওয়া সময় গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবে? পারবে আমার এত গুলো মাসের স্ট্রাগল গুলোতে একটা সুন্দর, সুস্থ অনুভূতি দিতে? ‘
‘ তুমি পারবে বাবা হওয়ার প্রথম অনুভূতি গুলো সুহাসকে ফিরিয়ে দিতে? ফিরে যেতে পারবে ওই সময় গুলোতে? সুহৃদকে সেই সদ্যজাত শিশুতে পরিণত করতে পারবে তুমি? পারবে না। যে সময় গুলো হারিয়ে যায় তা কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না৷ অনেক হয়েছে নামী৷ একটা মানুষ ভুল করেছে। সেই ভুলটাকে তুমি ভুল দিয়ে শাস্তি দিয়েছ। এবার থেমে যাও। এবার সত্যি থেমে যাওয়া উচিত। বন্ধু বলে আমি কখনো সুহাসের অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। বন্ধুর বউ, ছোটো বোন বলে তোমার ভুল গুলোকেও প্রশ্রয় দিব না৷ এটা আমার স্বভাবের সঙ্গে যায় না। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে৷ এবার একটা সহজ, সুন্দর সমাধানে আসো। কারণ, সুহাস তার ভুল বুঝতে পেরেছে। তুমি যদি তোমার ভুল গুলো না বুঝে সুহাসের অনুতপ্ততাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের জেদে অটল থাকো৷ ভবিষ্যতে সুহৃদের চোখে চোখ রাখতে পারবে না৷ দ্যাটস ট্রু। ‘
শান্ত, দৃঢ় স্বর সৌধর৷ নামী স্তব্ধ হয়ে গেল। বুকের গভীরে শুরু হলো তোলপাড়। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সৌধর পানে। সন্তানের চোখে ছোটো হতে চায় না সে। তাই বলে সন্তানের দোহাই দিয়েও সম্পর্ক টেকাতে চায় না৷ কারণ তাদের সম্পর্কে সুহৃদ পরে এসেছে। ভালোবাসা, রাগ, অভিমান এসেছে আগে।
নামী গম্ভীর হয়ে গেলে সৌধ ওর মনোভাব টের পেল। পুনরায় বলল,
‘ আমি সুহাস নই নামী। আমি যা বলব সব লজিক্যালি, ব্রেইন খাঁটিয়ে, দুপক্ষের হয়েই বলব।
সুহাস তোমার সঙ্গে কখনো ব্রেইন খাঁটিয়ে কথা বলে না, মিশে না। ইভেন ও ওর কোনো কাছের মানুষ, ভালোবাসার মানুষের সাথেই ব্রেইন খাঁটিয়ে চলতে পারে না৷ রাগ হয়েছে নিঃসংকোচে রাগ ঝেড়ে দেবে। কোনো কিছু অপছন্দ হয়েছে সরাসরি এসে বলে দেবে। কাছের মানুষদের সঙ্গে হিসেব, নিকেশ করে কথা বলতে পারে না ছেলেটা। আমি জানি সবক্ষেত্রে এটা ঠিক নয়। ওর এই স্বভাব সবাই মেনে নেবে না। আর এ স্বভাবের কারণে মারাত্মক, মারাত্মক ভুলও করে ফেলে। কিন্তু এটাই তো সুহাস৷ হি ইজ বিউটিফুল লাইক দ্যাট। তবু সময়ের স্রোতে, তোমার দূরত্বে শোকাহত হয়ে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর বেশি পরিবর্তন হয়ে গেলে ও নিজের স্বকীয়তা হারাবে। তুমিও হয়তো মেনে নিতে পারবে না সেই সুহাসকে! ‘
নামীর শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হলো এবার৷ ব্রেইন খাঁটিয়ে কথা বলে না৷ তীক্ষ্ণ আঘাত তো ঠিকই করতে পারে।
ভেতরের রাগটা উপচে এলো নিমেষে। নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। চোখ গলে অশ্রু ঝরে পড়ল। ক্রোধান্বিত কণ্ঠে আচমকা প্রশ্ন করল,
‘ মা মারা যাওয়ার পর থেকে সুহাস আমার সঙ্গে কী কী করেছে তা সবারি জানা ভাইয়া। আমি কিন্তু সবটা মেনে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সেদিন রাতে ও যা করেছিল তা কি মেনে নেয়ার মতো? কোন স্ত্রী সহ্য করবে গভীর রাতে স্বামী প্রাক্তনের সঙ্গে ফোনকলে আলাপে মজে থাকলে? ‘
‘ কোনো স্ত্রীই সহ্য করবে না নামী। আমি জানি সুহাসের ভুল গুলো বিস্তর ছিল। এটা অস্বীকার করার মুখ নেই। ‘
‘ আমি ওসব ভুলকে বড়ো করে দেখিনি ভাইয়া৷ সে সময় আমার শরীর খারাপ করছিল। আর আমার প্রতি ওর কোনো প্রকার কেয়ারনেসই ছিল না৷ নিজের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে সেদিন আমি একাই হসপিটালে গিয়েছিলাম। রাগ, অভিমান করেই কিছু বলে যাইনি ওকে। এরপর যখন সহৃদের আগমনী বার্তা পেলাম। ছুটে এসেছিলাম বাড়িতে৷ কিন্তু সুহাসের অবিশ্বাস্য দৃষ্টি, প্রশ্নের কবলে পড়ে আমার সবকিছু গুলিয়ে যায়। ও যেমন আচরণ করেছে তেমন আচরণ ফেরত দিই। হুটহাট রেগে যাওয়া মানুষ আমি না হলেও সেদিন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি৷ প্রেগ্ন্যাসিতে যেসব পরিবর্তন ঘটে সেসব আমার শুরু থেকেই ঘটছিল। ঘন ঘন মেজাজ হারাচ্ছিলাম। অল্পতে বেশি আঘাত পাচ্ছিলাম। ঠিক একটা বাচ্চা মেয়ে যেমন পায় তেমনি। আর ওই মুহুর্তে সুহাস ওর ঘৃণ্য কথাবার্তা, আচরণ দিয়ে আমার হৃদয়টা ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে যখন ও আমার শ্বাসনালি চেপে ধরল আমার শরীর, মন কোনোটাই সহ্য করতে পারেনি। সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক তো এটাই ছিল ওই মুহুর্তটার স্বাক্ষী ছিল আমাদের সন্তান। আচ্ছা ভাইয়া, আমি কেন আমার সন্তানকে নিয়ে একটা অসুস্থ পরিবেশে থাকব? মা হিসেবে ওই সময়ে আমার মাথায় শুধু একটা বিষয়ই খেলেছে। তা হলো আমার সন্তানকে সুস্থ ভাবে দুনিয়ায় আনতে হবে। কিছু লেইম পরিবারের বাচ্চাদের মতো বেড়ে ওঠবে না আমার বাচ্চা। সুহাস কেমন, সুহাস কী? সুহাস আমাকে কতটা ভালোবাসে আমি সুহাসকে কতটা ভালোবাসি। সেই মুহুর্ত আমার মস্তিষ্কে এই অনুভূতি গুলো ক্যাচ করেনি৷ ওই মুহুর্তে আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট ছিল আমার গর্ভে একটা ছোট্ট প্রাণ আছে৷ সুহাস আমার চরিত্রে আঘাত করেছে, শরীরে আঘাত করেছে ব্যস। আর কিছু আমি ভাবতে পারিনি। ‘
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হুহু করে কাঁদতে শুরু করল নামী। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলতে লাগল হৃদয়বিদারক কিছু কথা।
‘ আমার মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবনের সব প্রদীপ নিভে গেছে ভাইয়া৷ চারদিকে শূন্যতা আর ঘুটঘুটে অন্ধকার নিয়ে বেঁচে আছি। সুহাস কী, সুহাস কেমন আমি জানি৷ কিন্তু ওই সিচুয়েশনে আমি কতটুকু ধারণ করতে পারছিলাম, আমার ওপর দিয়ে কী গেছে ও জানে না। আপনারা কেউ জানেন না। ও আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একটা মেয়ে যাকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসলো। এ পৃথিবীতে যাকে তার সর্বশেষ নির্ভরতা মনে করল। সেই মানুষটাই যদি চরিত্রে আঙুল তুলে, শরীরে আঘাত করে অনুভূতির জায়গাটা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আমার সম্মান তো এতটা ঠুনকো নয়৷ আমি তো ওইসব মেয়েদের মতো নই। যারা আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে লাথি, ঝাটা খেয়ে স্বামীর পদতলে পড়ে থাকে! আমার বাচ্চার মা কোনো নির্লজ্জ, ব্যক্তিত্বহীন, চরিত্রহীন নারী নয়। আর আমি এটাও চাই না আমার বাচ্চার বাবা ব্যক্তিত্বহীন, কাপুরুষ হোক। বাচ্চারা তার বাবাকে কতটুকু সম্মান করবে এর পুরোটাই নির্ভর করে তাদের মায়ের ওপর। আমি যদি ওই সময় সুহাসের থেকে দূরে সরে না যেতাম। প্রতিনিয়ত ওকে আমি ঘৃণার চোখে দেখতাম৷ না স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারতাম আর না সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারতাম স্বামীকে, বাচ্চার বাবাকে। ভেতর থেকে ওর প্রতি আমার ক্ষোভ ছাড়া কিছুই আসত না৷ যা আমি তৃপ্তি নিয়ে গ্রহণ করতে পারব না৷ তা বর্জন করাই শ্রেয় মনে করেছি। ‘
‘ আমি তোমার সিদ্ধান্তকে রেসপেক্ট করছি নামী। রেসপেক্ট করছি সুহাসের অনুতপ্ততাকেও। যার যার অবস্থান সে সেই বুঝে। দূর থেকে আমরা ভুল ধরতে পারি। মতামত দিতে পারি। কারো জায়গায় দাঁড়াতে পারি না৷ তাদের সমস্যা গুলোও ফেস করতে পারি না। ‘
কথাটির সমাপ্তি দিয়ে সহসা হাত বাড়াল সৌধ। নামীর মাথায় স্নেহভরে হাত রেখে বলল,
‘ এতগুলো দিন যে মেয়ে একা লড়াই করেছে তাকে আজ কাঁদলে বেমানান লাগে নামী। ‘
‘ সবাই আমাকে ভুল বুঝল। কেউ আমার জায়গাটা বোঝার চেষ্টা করল না। যতদিন আমি সুহাসকে ভালোবাসিনি ততদিন মাথা উঁচু করে সবার সামনে দাঁড়াতে পেরেছি৷ কিন্তু ওকে ভালোবাসার পর আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি। কী করে ওর অপমান, অসম্মান মেনে নিয়ে বাবা, সিনু, আপনাদের সবার সামনে দাঁড়াতাম বলুন। যার সূত্রে আপনারা আমাকে আপন করে নিয়েছেন। সেই মানুষটাই তো আমাকে চরিত্রহীন খেতাব দিয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা গর্ভে থাকা একটি ছোট্ট প্রাণকে তার বাবার সঙ্গে আমার ভালোবাসাময় স্মৃতি নয় খুবই দগ্ধীভূত স্মৃতি হয়েছে। যা বাড়াতে চাইনি। ‘
সন্তর্পণে হাত সরিয়ে নিল সৌধ৷ চিন্তিত মুখে বসে রইল নিশ্চুপ। কাঁদতে দিল নামীকে। মেয়েটা যেন দীর্ঘদিন পর মন খুলে কাঁদছে। ভেতরে থাকা চাপা কষ্ট, অভিমান অশ্রু হয়ে ঝরছে৷ অনেকক্ষণ পর কান্না থামল নামীর। চোখের জল মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। সৌধ গভীর চিন্তায় বুঁদ হয়ে থেকে আচমকা প্রশ্ন করল,
‘ তোমার জানা উচিত আমরা কেউ তোমাকে ভুল বুঝিনি। হ্যাঁ সোহান আংকেল, সিনু অভিমান করেছে। যা তুমি সুহৃদকে নিয়ে একবার সামনে দাঁড়ালেই শেষ হয়ে যাবে। ‘
কিয়ৎক্ষণ পিনপতন নীরবতা। এরপর ফের সৌধই বলল,
‘ একটা বাচ্চা ষোল মাস বাবা ছাড়া বড়ো হলো। সবকিছু থেকেও কিছু নেই এভাবে বেড়ে ওঠল। বিষয়টা সুহাসের জন্য যেমন পীড়াদায়ক। তেমনি তোমার জন্যও। পাশাপাশি আমাদের সবারি আফসোস সুন্দর একটা ফ্যামিলি ক্ষয়ে পড়ছে বলে।’
থমকানো দৃষ্টিতে তাকাল নামী৷ সৌধ আলতো হেসে বলল,
‘ তুমি কি ভাবতে পারো ওই নিষ্পাপ বাচ্চাটা বাবা ছাড়া বড়ো হবে? যার বিশাল বাড়ি, গাড়ি রয়েছে। সে অন্যের বাড়িতে ভাড়াটিয়ার পরিচয়ে থাকবে? দাদা, চাচা, ফুপি কী নেই ওর? সব থেকে কিছু নেই এভাবে বেড়ে ওঠবে কেন? ‘
হতাশা ভরে নিঃশ্বাস ফেলল সৌধ। নামীর হৃদয় বিদীর্ণ করে দিল সৌধর এসব কথা। এতদিন যা ভেবে কষ্ট পেয়েছে সে। তা সৌধ স্মরণ করিয়ে দিলে কষ্টটুকু প্রগাঢ় হলো। আবারো ঝাপসা হয়ে ওঠল দৃষ্টি জোড়া। সৌধ অসরল দৃষ্টিতে তা দেখে নিয়ে আচমকা বলল,
‘ আমি তোমাকে জোর করব না নামী। তোমার বিবেক যদি বলে, এবার সুহাসকে ক্ষমা করা যায়। তবেই ক্ষমা করো। তোমার হৃদয় যদি বলে সব ভুলের ঊর্ধ্বে গিয়ে সুহৃদের বাবার সঙ্গে সংসার পাতা যায়। তবেই ফিরে এসো। তোমার মাতৃ সত্তা যদি অনুভব করে সুহৃদের বাবা, মা দু’জনকে একসঙ্গে প্রয়োজন তবে আর দ্বিধা করো না৷ ‘
‘ আমি যদি বলি সুহাস শুধু ওর বাচ্চার জন্যই সমঝোতা চায়। ও আসলে নিজের ভুল গুলো বুঝতেই পারেনি৷ বড্ড স্বার্থপর একটা ছেলে। ‘
ফিচেল হাসে সৌধ। বলে,
‘ তুমি হয়তো জানো না তোমার প্রেগ্ন্যাসির বিষয়টা সুহাস জেনেছে আমার আর সিনুর বিয়ের দ্বিতীয়দিন। এর আগে আমি, আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি ওর যন্ত্রণা গুলো। ও নিজেকে দমিয়ে রেখেছিল এটা ভেবে যে তুমি মানসিক শান্তির জন্য, নিজের ক্যারিয়ারের জন্য ওর থেকে পালিয়েছ। ছেলেটা ভেঙেচুরে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিল। সামলাচ্ছিল পরিবারকে। সোহান আংকেল হজে চলে যাবে। বোনের বিয়ে। মা নেই, বউ নেই। একদিকে নিজেকে অন্যদিকে পরিবারকে সামলে দিন কাটছিল। এরপর যখন রিপোর্ট গুলো পেল, বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল। তুমি মা হচ্ছো জানার আগে যতটা অনুতপ্ততায় ভুগছিল জানার পর সে অনুতপ্ততা আরো বৃদ্ধি পায়। প্রতিনিয়ত নিজেকে যন্ত্রণা দিয়েছে তোমার সঙ্গে করা আচরণ গুলোর কথা ভেবে। তুমি কীভাবে আছো? কীভাবে নিজেকে সামলাচ্ছো? ঠিক আছো তো? বাচ্চাটা ঠিক আছে? সব মিলিয়ে ওর অবস্থা কতটা শোচনীয় ছিল মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না। কী ভাবছ? আমরা শুধু ওর দিকটা দেখেছি তোমারটা না? সত্যিই তাই। তোমার স্ট্রাগল আমরা কেউ দেখিনি। ওরটা দেখেছি বলেই বিবৃতি করতে পারছি। তোমার প্রেগ্ন্যাসির খবর জানার আগেও তোমার প্রতি ওর প্রগাঢ় অনুভূতি দেখেছি বলেই বলছি, আমার বন্ধু তোমায় ভালোবাসে নামী, প্রচণ্ড ভালোবাসে। যে ভালোবাসা বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। আমরা মানুষ নামী। আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নেই। এই চিরন্তন সত্যিটা মেনে নিয়ে দিনশেষে যদি তোমার মন ওকে ক্ষমা করতে পারে, ভালোবাসতে পারে, ফিরে আসতে চায় ওর জীবনে তবে কিচ্ছু ভেবো না আর। জাস্ট ফিরে এসো। ‘
দৃষ্টি নত করে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে নামী৷ রাত বাড়ছে৷ ওদের ফিরতে হবে৷ সুহাস ফিরতে চাইবে কিনা জানে না৷ অন্যের বাড়িতে এক রাত থেকে যাওয়া শোভনীয় নয়৷ তাই কব্জিতে থাকা ঘড়িতে তাকিয়ে সময় দেখল সোধ৷ এরপর বলল,
‘ আমি আবারো বলছি, দায়িত্বের খাতিরে নয়৷ বাচ্চার দোহাই দিয়ে নয়। যদি মন বলে তবেই ফিরো৷ আমি জানি তুমি কারো কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে না। তুমি শুধু তোমাকে এবং তোমার সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দেবে। বিষয়টা সুন্দর। নিজের ইচ্ছে, অনুভূতিকেই প্রাধান্য দাও৷ আমার কথা এটাই, তুমি তোমার মনের বিরুদ্ধে কিছু করো না৷ সুহাসের প্রতি যদি প্রকৃত অর্থেই সম্মান, ভালোবাসা বিলীন হয়ে যায় তবে বিচ্ছেদটাই বেছে নাও। ভয় নেই আমার বন্ধু এতটা অমানুষ নয় যে তোমার থেকে সুহৃদকে কেড়ে নেবে। সুহৃদের প্রতি তোমার অধিকারই বেশি। শুধু অনুরোধ একটাই বাবা, ছেলের মাঝে আর দেয়াল তুলে দিও না৷ ‘
ওঠে দাঁড়াল সৌধ৷ নামী স্থির দেহে বসে। সৌধ ফিরে যেতে উদ্যত হয়েও আবার বসে পড়ে৷ আরো নরম হয়ে বলে,
‘ আমরা যতই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন হই না কেন যাকে ভালোবাসি তাকে কিন্তু সবটা বিলিয়ে দিয়েই ভালোবাসি। ভালোবাসায় ব্যক্তিত্বের চেয়েও নির্লজ্জতা বেশি সুন্দর। যার কাছে খোলা পাতা হিসেবে মেলে দিই৷ যাকে খোলা পাতা হিসেবে চাই। তার কাছে কিসের ব্যক্তিত্ব? এর মানে এই নয় লাথি, ঝাটা খেয়ে থাকতে হবে। এ যুগে কেউ লাঠি ঝাটা খায় না, দেয়ও না। আমি ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে নির্লজ্জের মতো একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইঙ্গিত দিচ্ছি। আশা করি বুঝবে। ‘
কথার সমাপ্তি টেনে সহসা ওঠে দাঁড়াল সৌধ। আর এক মুহুর্ত ব্যয় করল না। বেরিয়ে গেল। নামী স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সৌধর যাওয়ার পানে। বুকের গভীর তীক্ষ্ণ এক ব্যথা অনুভব করল।
.
.
ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁয়েছে৷ সৌধ, সুহাসের জন্য খাবার তৈরি। ডাইনিং রুমে অপেক্ষা করছে অ্যালেন। ছেলেকে ছেড়ে কিছুতেই খেতে আসবে না সুহাস। শুধু তাই নয়৷ নামী সামনে না এলে এ বাড়িতে খাবার গ্রহণ তো দূরে থাকুক। পানিও পান করবে না৷ সুহাসের এহেন সিদ্ধান্ত নামীকে জানানো হলো। তবু সে সামনে আসার নাম নিল না। সুহাস খাবে না বলে সৌধও খেল না। বরং একান্তে সুহাসের সঙ্গে দেখা করে বলল,
‘ দোস্ত জানি তোর মন মানবে না। তবু আজকের রাতটার জন্য ফিরে চল। জরুরি কথা আছে। নামীর সঙ্গে আমার দেখা, কথা দু’টোই হয়েছে। ‘
সৌধর কথা শুনে ছেলের ঘোর কাটে সুহাসের। তবু বিদায় বেলা আবারো তার চোখ দু’টো ঝাপসা হয়। সৌধ স্বান্তনা দেয়,
‘ আরে ইয়ার জাস্ট রাতটুকুরই ব্যাপার৷ সকালেই চলে আসবি। দরকার পড়লে সারাদিনের জন্য আমাদের রাজপুত্রকে নিয়ে যাবি হোটেলে। ঘুরে বেড়াবি পুরো জেনেভা শহর। আর তুই ভুলে গেছিস ওর জন্য কতকিছু নিয়ে এসেছিস। সেগুলোও তো দিতে হবে নাকি? ‘
মাথা নাড়ল সুহাস৷ ঘুমন্ত সুহৃদের কপালে চুমু খেল বারকয়েক। বিড়বিড় করে বলল,
‘ আমার রাজকুমার। ‘
এরপর সৌধর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ মহারানি দেখা দেবেই না? ‘
‘ বরফ গলতে শুরু করেছে ব্রো। চল, ফিরে গিয়ে সব বলব। ‘
.
.
বাংলাদেশ – সময় দশটা। সোহান খন্দকার মেয়ের সঙ্গে সকালের খাবার সেরে হসপিটালে গেলেন। পুরো বাড়িতে এখন সিমরান একা। তাই সঙ্গী হিসেবে সৌধর দেওয়া ডায়ারিটাই বেছে নিল। একাকী রুমে বসে ফিরে গেল পনেরো বছর বয়সে৷ প্রথম প্রেমে পড়ার মুহুর্ত টুকু ডায়ারিতে লিপিবদ্ধ করেছে সে। সেটাতেই চোখ বুলাতে গিয়ে সৌধর গাওয়া গানটি দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠল। ক্লাস নাইন৷ সে যে স্কুলে পড়ে। সে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সৌধ, সুহাস। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আসে দু’জন। ওই বয়স থেকেই দুই বন্ধু দারুণ গান গায় আর গিটার বাজায়৷ সেই সুবাদে সৌধ একটি গান গেয়েছিল৷ সুহাস বাজিয়েছিল গিটার।
” বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে,
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে অবশেষে ভাঙে মনকে, একটা হৃদয় বারবার নয়, একবারই প্রেমে পড়ে, সেই হৃদয়ের সুখ লুট হয় নিঠুর মৌনঝড়ে,
বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে অবশেষে ভাঙে মনকে একটা হৃদয় বারবার নয়, একবারই প্রেমে পড়ে,সেই হৃদয়ের সুখ লুট হয় নিঠুর মৌনঝড়ে
হও হুশিয়ার মনের দুয়ারে নজর রাখো খুব
চোখের ফাঁকিতে, ঠোঁটের হাসিতে হয়োনা উৎসুক
বালিকা, পুড়ে যাবে সব সুখ।
বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে অবশেষে ভাঙে মনকে —-
তোমাকে তুমি সামলে রেখো তোমার মতো করে
সস্তা প্রেমের ধোঁকায় নয়তো কাঁদবে বালিশ ধরে
বালিকা, পুড়ে যাবে সব সুখ
বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে অবশেষে ভাঙে মনকে।
একটা হৃদয় বারবার নয়, একবারই প্রেমে পড়ে
সেই হৃদয়ের সুখ লুট হয় নিঠুর মৌনঝড়ে
হও হুশিয়ার মনের দুয়ারে নজর রাখো খুব
চোখের ফাঁকিতে, ঠোঁটের হাসিতে হয়োনা উৎসুক
বালিকা, পুড়ে যাবে সব সুখ।। ”
যে গান, যে গানের প্রতিটা শব্দ, বাক্যতেই হৃদয় গভীরে প্রেমের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। বালিকার মন ডুকরে ওঠে, ‘ অন্য কোনো পাড়াতো ভাই কে নয়। এই বালিকার মন তোমার জন্যই বরাদ্দ করে দিলাম সৌধ ভাই৷ ‘
সেই যে কিশোরী হৃদয়ে গানে গানে প্রণয়ের বীজ বুনে দিল সৌধ। যা বেড়ে ওঠতে ওঠতে ডালপালা ছড়িয়ে তার গোটা রাজ্যই ঘিরে ফেলল। পরিণয়ে পরিপূর্ণ হয়ে সফল হয়েছে ক্লাস নাইনের সেই ছোট্ট বালিকাটি। মধুর, উষ্ণ স্মৃতিচারণ করে আকস্মিক হৃদয় তরঙ্গিত হলো। সৌধকে এক পলক দেখার জন্য আগ্রাসী হলো মন। চোখ দু’টো হলো তৃষ্ণার্ত হয়। এরপর কোনোকিছু না ভেবে হোয়াটসঅ্যাপে প্রিয়তমকে ভিডিয়ো কল করল। সুইজারল্যান্ডে সময় তখন ভোর পাঁচটা। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সৌধ। সহসা ফোন বেজে ওঠলে কপাল কুঁচকে চোখ খুলে। পাশে তাকিয়ে দেখে বিছানা ফাঁকা। সুহাস কোথায়? ভাবল বাথরুমে গিয়েছে। এরপর গায়ের কম্বলটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই বউয়ের মুখটা ভেসে ওঠল৷ সিমরান নিষ্পলক চেয়ে মিহি স্বরে বলল,
‘ গুডমর্নিং। ‘
‘ গুড মর্নিং ডিয়ার। মিস ইউ। ‘
এবারে লজ্জা পেল সিমরান। চোখ দু’টো সরিয়ে নিল ত্বরিত। যা দেখে নিঃশব্দে হাসল সৌধ। মৃদুস্বরে বলল,
‘ ডায়ারি লেখা হচ্ছিল? ‘
কোলের ওপর থেকে ডায়ারি সরিয়ে মাথা নাড়ল সিমরান৷ বলল,
‘ তোমার চোখ লাল লাগছে। আরেকটু ঘুমাবে? ‘
‘ বউ মিস করছে। তাকে রেখে একা একা ঘুমাই কী করে? ‘
গাল দু’টো রক্তিম হয়ে ওঠে এবার৷ লাজুক হেসে বলে,
‘ তুমি ঘুমাও। আমি তোমাকে দেখি। কথা বলতে হবে না। ‘
‘ ওরে পাকনামি! আমাকে দেখতে দেবে না? ‘
‘আমি ঘুমালে তুমি দেখবে। তাহলেই তো শোধবোধ হয়ে যাবে।’
শব্দ করে হেসে দিল সৌধ। সত্যি বলতে তার চোখ জোড়া জ্বলছে। ঘুমটা বিশেষ প্রয়োজন। তাই মেনে নিল বউয়ের কথা। সঙ্গে সুযোগ দিল তাকে মন ভরে দেখার জন্য। মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে চোখ বুজল সৌধ। পরোক্ষণেই আবার চোখ খুলে ঠোঁট জোড়া চৌকা করে গভীর একটি চুমু দিল বউপাখিকে। এরপর চট করে আবারো চোখ বুজে ফেলল। ঘটনা আকস্মিকতায় তীব্র লজ্জায় আঁতকে ওঠে সিমরান। ঠোঁটদ্বয় আপনাআপনি ফাঁক হয়ে যায় সৌধর দুষ্টুমি দেখে। মিটিমিটি হাসতে হাসতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সৌধ। আর সিমরান অতি লজ্জায় আরক্ত মুখে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে রয় স্বামীর পানে। এত দেখছে, এত দেখছে তবু যেন তৃষ্ণা মিটছে না।

®জান্নাতুল নাঈমা
প্রিয় পাঠক, যারা পড়ছেন সকলেই রেসপন্স করবেন। আর যারা গল্পসংক্রান্ত আপডেট জানতে চান। তারা আমার পাঠকমহলে যুক্ত হয়ে নেবেন। কমেন্টে ম্যানশন করা হবে।
বিঃদ্রঃ গানের অংশটুকু ইচ্ছে করে শর্টকাট করেছি। আপনারা চাইলে গানটি ইউটিউবে গিয়ে শুনে নিতে পারেন।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।