ক্লাস শেষ হলো বিকেল পাঁচটায়। সৌধর হাবভাব ভালো ঠেকেনি নিধির৷ একদম স্যারের পিছু পিছু বেরিয়েছে সে৷ কিন্তু বিপদ ঘটল অর্পণ স্যারকে দেখে। আটাশ বছর বয়সী যুবক অর্পণ। তাকে এই মেডিকেল কলেজের হার্টথ্রবও বলা হয়। যার প্রতি অন্যান্যদের মতো নিধিও দারুণ মোহিত। বর্তমানে স্টুডেন্ট’সদের মধ্যেও একজন হার্টথ্রব রয়েছে। যার নাম সৌধ চৌধুরী। এমপি সুজা চৌধুরীর ছোটো ছেলে। কিন্তু নিধির চোখ সেখানে আটকায়নি। দমিত হয়নি হৃদয়। ধরা যায়, ছোঁয়া যায় এমন জিনিসে আমরা আকৃষ্ট কম হই৷ নিধির ক্ষেত্রে ঠিক এমনই ঘটেছে। তার নজরে অর্পণ স্যার গগন হলেও সৌধ কেবলই মৃত্তিকা। অর্পণ স্যারকে সব সময় কালো রঙের ফুল হাতা শার্ট আর নেভি ব্লু জিন্স প্যান্টে দেখা যায়৷ আজো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। লম্বাটে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ে ঐ কালো শার্টটাই যেন সবচেয়ে বেশি মানানসই। শার্টের ওপর সাদা অ্যাপ্রোন, চোখে চিকন সোনালি ফ্রেমের চশমা, গলায় ঝুলানো স্টেথোস্কোপ, বা’হাতের কব্জিতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। সবমিলিয়ে নজরকাড়া যুবকটিকে স্থির নয়নে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল নিধি। ক্লাসের সামনে বারান্দা ধরে এগুচ্ছিল সে। অর্পণ স্যার কাছাকাছি আসতেই সম্মুখে দাঁড়িয়ে দুরুদুরু বুকে সালাম দিল,
‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার। ‘
‘ নিধি? ওয়ালাইকুমুস সালাম। কী অবস্থা তোমার? ‘
প্রথম বর্ষের শেষের দিকে অর্পণ স্যার ক্লাস নিয়েছিল তাদের। পরিচয় হয়েছিল ক্লাসেই। স্যার তার নাম মনে রেখেছে! ভাবতেই উত্তেজনায় হাত, পা কাঁপতে শুরু করল৷ শ্বাসরোধ করে কোনোরকমে উত্তর দিল সে। অর্পণ স্যার মৃদু হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। নিধি শুনতে পেল সুহাসরা সালাম দিচ্ছে অর্পণ স্যারকে। এরপরই শুনতে পেল আইয়াজের মৃদুস্বর,
‘ দোস্ত সৌধ কিন্তু ব্যাপক রেগে আছে। তোকে নাকি কোন ছেলেরা টিজ করেছে! জানাসনি কেন? ‘
সহসা রেগে গেল নিধি৷ বলল,
‘ কেন ওকে কেন জানাতে হবে? বন্ধু বলে আমার সব বিষয় ওকে জানাব? আমার কোনো প্রাইভেসি নেই?’
হকচকিয়ে গেল আইয়াজ। নিধির কথা, শুনতে পেয়ে সুহাসও হতভম্ব হয়ে গেল। সৌধর কমে এলো পায়ের গতি। দূরত্ব কম হওয়াতে ঐ গতিতেই নিধির পাশে এসে দাঁড়াল। গমগমে সুরে বলল,
‘ প্রাইভেসি? ‘
সৌধর স্থির বাঁকা চাহনিতে ভড়কে গেল নিধি। আমতাআমতা করে বলল,
‘ দোস্ত আমি কোনো ঝামেলা চাই না। প্লিজ। ‘
গায়ে চাপানো অ্যাপ্রোন খুলে বা হাতের বাহুতে রাখল সৌধ। ডানহাতের আঙুল চালালো চুলে। পুরু ঠোঁটজোড়া জিভ দ্বারা ভিজিয়ে নিল দ্রুত। বলল,
‘ তুই আমার ফ্রেন্ড। শুধু ফ্রেন্ড না ভেরি গুড ফ্রেন্ড। তুই এ শহরের মেয়ে না, আলাদা শহরের। এখানে তুই আছিস, বলা যায় আপন বলতে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। তোর সুবিধা, অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমাদেরই। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার সুজা চৌধুরীর ছোটো ছেলের বান্ধবী তুই। এলাকার কয়েকটা বখাটে ছেলেপুলে তোকে উত্যক্ত করবে আর আমি জানব না? জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিব না? আর কী বললি প্রাইভেসি! এখানে তোর প্রাইভেসিটা ঠিক কী নিধি? ‘
ঢোক গিলল নিধি৷ অসহায় চোখে তাকাল সুহাস আর আইয়াজের দিকে। এরপর তাকাল সৌধর তীক্ষ্ণ চোখে। আমতাআমতা করতে লাগল সে। সৌধর শীতল অভিব্যক্তি বুকে কাঁপন ধরাল ক্রমাগত। হাসফাস চিত্তে বলল,
‘ চল যেতে যেতে কথা বলি। ‘
দু’কাঁধ উঁচু করে সৌধ ইশারায় বলল,
‘ চল। ‘
ক্যাম্পাসের পিছনে বিরাট বড়ো পুকুর। সে পুকুরের সিঁড়িতে এসে বসল নিধি। বসল সুহাস আর আইয়াজও। সৌধ অ্যাপ্রোনটা আইয়াজের হাতে দিয়ে নিধির থেকে দু-হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়াল। দু-হাত রাখল কোমরে। বুক টান টান করে দাঁড়িয়ে বড়ো বড়ো শ্বাস নিল। নিধি সুহাসের দিকে থমথমে মুখে তাকিয়ে। সুহাস ইশারায় শান্ত থাকতে বলল তাকে। আইয়াজ ফিসফিস করে বলল,
‘ ছেলে গুলো কী বলেছে সেটা বল। ‘
নিধিও ফিসফিস করে বলল,
‘ তার আগে বল তোরা এসব কী করে জানলি? ‘
‘ আমাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে এখনো তোর সন্দেহ আছে? ‘
‘ না ভাই, নেটওয়ার্কটা কী সেটা বল, কে বলেছে? ‘
‘ সৌধর দূর সম্পর্কের খালাত বোন ওখানেই ভাড়া থাকে। নার্সিংয়ে পড়ছে মেয়েটা। চিনবি মেবি। তোদের তিন বাসা পরেই থাকে। ‘
দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিধি৷ সৌধর দিকে তাকাল অসহায় ভঙ্গিতে। বলল,
‘ দোস্ত এখানে এসে বোস। ‘
সহসা তাকাল সৌধ। নিধি ঈষৎ হেসে বসতে ইশারা করল। সৌধ যেন ময়লা ঝারার ভঙ্গিতে কথাটা ঝেড়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল,
‘ ছেলেগুলো কী বলেছিল তোকে? ‘
‘ আর বলিস না তিনটাই জুনিয়র। ওদের মধ্যে হৃদয় নামে ছেলেটা প্রেমের প্রপোজাল দিয়েছে। আমি কীসে পড়ি আমার বয়স কত সেসব না জেনেই। জানিস ছেলেটা কীসে পড়ে? ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। ‘
বলতে বলতেই খিলখিল করে হেসে ওঠল নিধি৷ হাসল আইয়াজও৷ সুহাস ঠোঁট টিপে হেসে তাকাল সৌধর দিকে। বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ বেচারা জেলাসনেসে লাল হয়ে যাচ্ছে। ‘
নিধির হাসি থামল সৌধর কটমট চাহনি আর গম্ভীর কণ্ঠে,
‘ তুই কী বললি? ‘
‘ কী আবার বলব, বলে দিলাম আমার বয়স আর কীসে পড়ি। ব্যস হৃদয়ের সঙ্গে আসা ছেলে গুলো হো হো করে হেসে ওঠল। ক্ষেপাতে শুরু করল হৃদয়কে। আর আমি চলে গেলাম বাসায়। ‘
সৌধ কিঞ্চিৎ শান্ত হলো। খালাত বোন মুনিয়া কথোপকথন শুনেনি। শুধু দেখেছে নিধির কাছে এসে কয়েকটা ছেলেকে হাসাহাসি করতে। তাহলে আসল ঘটনা এটাই। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। এরপর নিধির কাছাকাছি এসে ঝুঁকে বলল,
‘ এরপর থেকে কেউ এমন কিছু বলতে এলে বলবি তুই সুজা চৌধুরীর আত্মীয়। আর হ্যাঁ অবশ্যই আমাদের জানাবি। ‘
নিধি মাথা দুলাল। সৌধ সরে গিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল করল পরিচিত এক ভাইকে। নিধি যে এলাকায় থাকে সে এলাকার নাম বলে ছেলেটার নাম জানালো। কিসে পড়ে তাও জানালো। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ বেশি না, দু’টো চটকানি দেবেন। ‘
নিধি চমকে ওঠল। চ্যাঁচিয়ে বলল,
‘ আরে সৌধ এসব করার কী দরকার, মেয়ে হয়ে জন্মেছি, দেখতে শুনতে ভালো প্রপোজাল তো আসবেই। আশ্চর্য লোক তুই ভাই! ‘
কথাটা বলেই সুহাস আর আইয়াজের দিকে তাকাল। সহসা বাহুতে শক্ত হাতের চাপ অনুভব করল সে। সঙ্গে বল পূর্বক টান। সৌধর শক্ত থাবায় ভড়কে গেল সে। চাপা আর্তনাদ করে বলল,
‘ আহ, কী করছিস কী! ব্যথা পাচ্ছি। ‘
‘ এরচেয়েও বেশি ব্যথা আমি পাচ্ছি… ‘
বসা নিধিকে একটানে দাঁড় করাল সৌধ। মুখোমুখি হয়ে চোখে চোখ রেখে দৃঢ় স্বরে কথাটা বলল সে। নিধি কাঁপা কণ্ঠে বলল,
‘ তুই এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছিস কেন কী হয়েছে তোর? ‘
‘ অর্পণ স্যারের দিকে ওভাবে তাকাস কেন? ‘
সৌধর ক্রোধ বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে আজ। নিধির দৃষ্টিতে অন্য পুরুষের প্রতি মুগ্ধতা ক্ষিপ্ত করে তুলেছে তাকে। কিন্তু নিধি এই ক্ষিপ্ততা অগ্রাহ্য করে ব্যথাহত স্বরে প্রশ্ন করল,
‘ কীভাবে তাকাই? ‘
সৌধর ভাবমূর্তিতে শুধু নিধি নয় সুহাস, আইয়াজও ভড়কে গেছে। আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা। সুহাস এসে চেপে ধরল সৌধর কাঁধ। আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,
‘ দোস্ত, নিধি ব্যথা পাচ্ছে। ‘
আইয়াজ উত্তেজিত হয়ে ধমকে ওঠল,
‘ সৌধ! ‘
আচমকা নিধির বাহু ছেড়ে দিল সৌধ। তার পেশিবহুল হাতের থাবা পেয়ে নিধির কোমল বাহুতে লাল দাগ বসে গেল। প্রায় কান্না করে দিল নিধি। ত্বরিত অ্যাপ্রোন খুলে বাহুতে বসা আঙুলের দাগ দেখে ক্রোধে ফেটে পড়ল সে৷ এক চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ এটা তুই কী করলি সৌধ। ‘
সৌধ অধর কামড়ে থমকানো চোখে তাকিয়ে। নিধি ওর থেকে উত্তর না পেয়ে আইয়াজের দিকে তাকাল। ক্রোধ মিশ্রিত চাহনি নিক্ষেপ করে পুনরায় চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ওর সমস্যা কী জিজ্ঞেস কর। বান্ধবীর সাথে বউয়ের মতো ট্রিট কেন করছে ও? ‘
আইয়াজ হতভম্ব মুখে তাকিয়ে। তার হতভম্বতা নিধির ক্রোধ তীক্ষ্ণ করে তুলল। এবার সুহাসের দিকে তাকাল সে। তৃতীয়বার চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ ওকে বলে দিস ফারদার যদি এই আচরণ দেখি তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের সমাপ্তি এখানেই। ‘
নিধির মুখে এমন কথা শুনে সৌধ হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল। হাত কেঁপে ওঠল কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিতে৷ কিন্তু অমন অঘটন ঘটার পূর্বেই সুহাস সৌধকে জাপ্টে ধরল। আইয়াজকে জোর গলায় বলল,
‘ আইয়াজ নিধিরে পৌঁছে দিয়ে আয়। আমরা এখানেই অপেক্ষা করছি। ‘
শরীরে বাঁধা পেয়ে মুখে কিছু বলতে উদ্যত হবে সৌধ, তৎক্ষনাৎ নিচু কণ্ঠে সুহাস বলল,
‘ কন্ট্রোল সৌধ কন্ট্রোল। অলরেডি নিধি সন্দেহ করে ফেলছে। তোর এবার থামা উচিত। এতটা কন্ট্রোল হারাবি বুঝতে পারলে আগেই সাবধান করতাম। ‘
***
এক মাসের জন্য ইন্ডিয়া গেছেন সোহান খন্দকার। চাচাত ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য ছেলেমেয়েদের রেখে যেতেই হলো। বাড়িতে সুহাস, সিমরান আর নামী ছাড়া কেউ নেই। শুক্রবার, ছুটির দিন৷ বাড়ির কাজের মহিলার নাম সেলিনা। সুহাস, সিমরান তাকে সেলিনা আপা বলে ডাকে। রাতে বৃষ্টি হয়েছে। শীতল আবহাওয়ায় সেলিনা আপার কাছে খিচুড়ির আবদার করল সিমরান। সকালের নাস্তা শেষ করেই আবদারটি করেছে সে। তাই সেলিনা আপা জানালো, দুপুরে খিচুড়ি আর গরু মাংস করবে।
কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে জানালা খুলেছে নামী। অমনি চোখ পড়েছে ওপাশের বেলকনিতে দাঁড়ানো সুহাসের দিকে। জানালা খোলার শব্দ পেয়ে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে সুহাস। নামী আপাদমস্তক সুহাসকে দেখে নিয়ে নিচু কণ্ঠে বলল,
‘ নির্লজ্জ কোথাকার! ‘
সুহাস স্পষ্ট ভাবে না শুনলেও বুঝে ফেলল নামী তাকে নির্লজ্জ বলেছে। আর কেন বলেছে টেরও পেল। তাই নিজের ধবধবে উদাম শরীরে তাকাল সে। পরনে শুধু থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। তাও উদরের কেন্দ্রস্থলের নিচে পরা। নিজেকে দেখে নিয়ে অধর কোণে বক্র হাসি ফুটিয়ে তুলল। নামীর পানে তাকাল দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে। এরপর ঠোঁট কুঞ্চিত করে শিষ বাজাতে শুরু করল। সুর তুলল একটি দুষ্টুমিভরা গানের। ‘ আমি নষ্ট মনে নষ্ট চোখে দেখি তোমাকে মন আমার কী চায় বুঝাই কেমনে ‘ সুহাস মনে মনে এ গানের সুর তুললেও নামী স্পষ্ট বুঝতে পারল না। তবে তার মন খুঁত খুঁত করতে লাগল। কেন যেন খুব পরিচিত মনে হলো সুরটা। সুহাস মুখো ভঙ্গি দেখে বুঝে ফেলল নামী গানটা বুঝেনি। না বুঝলে তো আসল মজাটাই হবে না। ভেবেই ত্বরিত পকেট থেকে ফোন বের করল সে। এরপর ইউটিউবে ঢুকে গানটা সার্চ করে বের করে প্লে করল। সুহাসের দুরন্ত চোখজোড়া স্থির রইল নামীতেই। মোবাইলে পান্থ কানাই আর মমতাজ গাওয়া সে গানটা বাজছে,
‘ আমি নষ্ট মনে নষ্ট চোখে দেখি তোমাকে মন আমার কী চায় বুঝাই কেমনে! ‘
গানটা শুনতেই নামী ধরে ফেলল সুহাসের সুর। সহসা কান দু’টো গরম হয়ে ওঠল তার। চোখের সামনে দাঁড়ানো সুহাসকে এখন মমতাজ মুভির হুমায়ূন ফরিদীর সেই চরিত্রকেই মনে পড়ল। কিন্তু মমতাজের চরিত্র কে? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই খেয়াল করল সুহাস তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। যে চাহনির ভাষা সুবিধার নয়। তার মন বলল, ও চোখ নষ্ট, ও মন নষ্ট, এই ছেলে পুরোটাই নষ্ট! গা শিউরে ওঠা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে ওঠল সে। সুহাসের দৃষ্টি অনুসরণ করে আচম্বিতে দৃষ্টি পড়ল নিজের দিকে। অমনি তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়ল। সুহাসের দৃষ্টি তার গলদেশ ও উদরের মধ্যবর্তী অংশে। বোঝা মাত্র এক চিৎকার দিয়ে বলে ওঠল,
‘ অসভ্য, নির্লজ্জ, লষ্ট মাইন্ডেড ছেলে কোথাকার! আই উইল কিল ইউ! ‘
আরো নানারকম বকাঝকা করে শব্দ করে জানালা
বন্ধ করে দিল। কাণ্ড দেখে হো হো করে হাসতে লাগল সুহাস। অনেকদিন পর মেয়েটাকে জব্দ করে মনটা চনমনে হয়ে ওঠল তার। কিয়ৎক্ষণ প্রাণভরে হেসে শান্ত হলো সে। এরপর আচমকাই গলা খাঁকারি দিয়ে টিপ্পনী কাটল ,
‘ ঢাকনা ছাড়া বিরিয়ানির পাতিল। অথচ গন্ধ ছড়াবে না, তাই কখনো হয়? ‘
দরজা লাগিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে নামী। তাই সুহাসের বলা কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল। একদিকে লজ্জা অন্যদিকে তীব্র ক্রোধ মিলেমিশে মুখটা থমথম হয়ে রইল তার৷ কিন্তু সুহাসকে কঠিন কিছু কথা না বলে শান্তি পেল না। চুপ থাকতেও পারল না৷ তাই গর্জন ছেড়ে বলল,
‘ আশপাশে যে হুলো বেড়াল ওঁত পেতে আছে বেমালুম ভুলে গেছিলাম। ‘
হুলো বেড়াল! নিজেকে হুলো বেড়াল মেনে নিতে কষ্ট হলো সুহাসের। বলার জন্য পাল্টা কিছু খুঁজে পেল না। মস্তিষ্ক কেমন নিশ্চল ঠেকল। আবার মনে ক্রোধও জাগল। রাগে গজগজ করতে করতে ঢুকল ম্যাসেণ্জারে। সৌধ লাইনে নেই, কিন্তু আইয়াজ আছে। তাই তাকে বলল,
‘ কী করি বল তো, এই নামী খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। বাড়িতে টেকা যাচ্ছে না। ‘
আইয়াজ বলল,
‘ কেন কী করল আবার? ‘
‘ এই তো মাত্রই আমাকে হুলো বেড়াল বলল। ‘
‘ কেন তুই কি ছুঁকছুঁক করছিস দোস্ত? ‘
প্রশ্নটা করেই কয়েকটা চোখ টিপ ইমুজি পাঠালো আইয়াজ। সুহাস ফোঁস ফোঁস করতে করতে রাগি ইমুজি দিল তাকে। আইয়াজ সঙ্গে সঙ্গে বলল,
‘ আরে ইয়ার রাগিস কেন? ও তোরে হুলো বলছে তুই ওরে মেনি বলে দে শুধবাদ। ‘
সুহাসের মাথায় যেন বুদ্ধি খুলল। সে গলা বাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ নামীকে বলল,
‘ নিজেকে যে বেড়ালী ভাবো জানতাম না তো! ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন বেড়ালী, তোমার মতো মেনির প্রতি আই হেভ নো ইন্টারেস্ট।‘