অগোচরে তুমি | পর্ব – ১৪

– আন্টি আপনার ছেলের কি কোনোদিনও আক্কেল জ্ঞান হবে না?
দিহাদ করুন চোখে তাকিয়ে আছে আয়েশা বেগমের দিকে।কালকে বিকালে এনজিও থেকে অর্ক বেড়িয়ে আসার পর অর্কের ফোনের অনেকগুলো কল দিয়েছিল দিহাদ।কিন্তু রিসিভ করে নি ও।তারপর সন্ধ্যার দিকেও অনেক গুলো কল দেয় দিহাদ।অর্ক তখনও ওর কল রিসিভ করে নি।ইনফ্যাক্ট আজ সকালেও কল দিয়েছে!কিন্তু দিহাদ তখনও হতাশই হয়।কারণ অর্ক আজ সকালেও কলটা রিসিভ করে নি।এত বার ট্রাই করার পরেও যখন অর্ক ফোন তুলছে না তখন দিহাদের চিন্তা হতে থাকে অর্কের জন্য।যদি ওর কোনো বিপদ আপদ হয়ে থাকে।তাই সকাল সকাল বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছে।আয়েশা বেগম দিহাদের কথার মানে বুঝতে না পেরে স্মিত হেসে বললো,
– কেন কি করেছে ও ?
আয়েশা বেগম যেনো কাটা গায়ে নুন ছিটিয়ে দিলেন।এতক্ষণ কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দিহাদ।কিন্তু এখন আর ওর পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না।তাই পাশের সোফাটায় ধপ করে বসে পড়লো।ফোঁসফোঁস করে দম ছেড়ে গলার স্বর উঁচু করে বললো,
– কি করে নি সেটা বলুন আন্টি।কাল বিকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত মনে হয় এক হাজার কল দিয়েছি ওকে।কিন্তু একটা বারের জন্যও কলটা রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করলো না ও?কারো বিপদ আপদও তো হতে পারে।আচ্ছা তাও আমি এটা মানতে পারি যে,ও হয়তো তখন ফোনের কাছে ছিল না।কিন্তু পরে কি ও ওর ফোনটা হাতে নেয় নি?দেখে নি যে কেউ ওকে এতগুলো কল দিয়েছে?
– ফোন ওর সাথে থাকলে তো দেখবে।
আয়েশা বেগমের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায় দিহাদ।আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো,
– মানে?
– মানে হলো,কাল সকালে যখন এনজিওতে গিয়েছিল তখন ফোনটা বাসায়ই ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল।বিকালে ফোনের রিংটোনের শব্দ পেয়ে বুঝতে পারলাম অর্ক ওর ফোনটা বাসায়ই ফেলে রেখে গেছে।পরে সন্ধ্যায় আবার যখন কল আসে তখন গিয়ে দেখি ফোনের এই দশা।
আয়েশা বেগম অর্কের ফোনটা দিহাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে শেষের কথাটা বলেন।দিহাদ ফোনটা দেখতে পেয়েই ফিক করে হেসে দেয়।আয়েশা বেগম হতাশার সুর টেনে বললো,
– স্ক্রিনে কিছু দেখা যায় না কিভাবে বুঝবো তখন তুমি কল দিয়েছিলে?
আয়েশা বেগম পরমুহূর্তেই কপালে চিন্তার ছাপ ফেলে বললো,
– আচ্ছা দিহাদ ওর ফোনটা এমন বাজে ভাবে চূর্ণবিচূর্ণ হলো কি করে?
– কিরণ চৌধুরীর কেলানি খেয়ে আপনার ছেলের সাথে সাথে এই ফোনটারো হাড়গোড় ভেঙ্গেছিল ওইদিন।
দাঁতে দাঁত চেপে মিনমিনে স্বরে বললো দিহাদ।আয়েশা বেগম বুঝতে না পেরে বললো,
– কিছু বললে?
দিহাদ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ, ওইদিন অর্ক এক্সিডেন্ট করলো না।তখনই ফোনটা ভেঙে গিয়েছিল আন্টি।
দিহাদের কথায় আয়েশা বেগম রাগ দেখিয়ে বললো,
– দেখেছো কেমন বেখেয়ালি আচরণ এই ছেলের।তোর ফোনটা ভেঙে গেছে তো তুই আরেকটা নতুন ফোন নিবি না।কিন্তু না,উনি সেটা না করে এই ভাঙা ফোন দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।কেন?তোর কাছে টাকা না থাকলে আমাকে বলতি আমি দিতাম।এই ভাঙা ফোনে তোকে কেউ কল দিলে যেমন তুই দেখতে পাস না তেমনি তুইও তো কাউকে কল দিতে গেলে দেখতে পাস না।তুমি ঠিকই বলেছো দিহাদ,এই ছেলের আসলেই কোনো দিন আক্কেল জ্ঞান হবে না।আচ্ছা ওর কথা বাদ দাও তো।মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসো নি।তুমি টেবিলে বসো আমি খাবার দিচ্ছি।
দিহাদ আসলেই বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসে নি।তাই আয়েশা বেগমের কথা মতো চুপচাপ গিয়ে খেতে বসে গেলো।
___________________
– ভাবী আমার সিরিয়ালের কাগজটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
বাংলাদেশ আই ভিশন হসপিটালের করিডরে বসে আছে মেহেনূর আর রোশনি।সিরিয়াল নাম্বার ছাড়া তো ডক্টরের কেবিনে এলাউ করবে না।কানাডায় মেহেনূর যে ডাক্তারের কাছে ওর চোখের ট্রিটমেন্ট করতো সেই ডাক্তার মানে ডঃ স্নিগ্ধজিৎ ব্যানার্জি এখন বাংলাদেশে এসেছে।তাই এখানে উনার সাথে দেখা করতে এসেছে ও।কারণ রাওনাফ আর রোশনির বিয়ে শেষ হওয়া অব্দি অনেকটা সময় লেগে যাবে।আর ততদিন মেহেনূরের পক্ষে ওয়েট করা পসিবল না।তাই মেহেনূর ডঃ স্নিগ্ধজিৎ ব্যানার্জির সাথে কথা বলে জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশে ওর আই টেস্ট করাতে পারবে কিনা।মেহেনূরের গুড লাক,উনিই নাকি আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশে আসবেন আর আই ভিশন হসপিটালে তাকে পাওয়া যাবে।তাই মেহেনূর কালকে একটা সিরিয়াল কেটে রাখে আর আজ ও হসপিটালে আসে।কিন্তু হসপিটালের এসে দেখে ব্যাগে সিরিয়ালের কাগজটা নেই।
ইদানীং মেহেনূরের চোখে একটু বেশিই প্রবলেম হচ্ছে।চশমা পড়লেও চোখে ঘোলা দেখে।বই পড়তে গেলে অনেক প্রেশার দিতে হয় চোখের উপর।ফলে চোখে আর মাথায় প্রচন্ড রকমের ব্যাথা অনুভব হয়।তাই মেহেনূর ভেবেছিল আজকে ডাক্তারকে দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আজকে আর পসিবল হবে না।রোশনি মেহেনূরকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে বলে,
– ভালো করে খুঁজে দেখো পাবে।
মেহেনূরের এবার কান্না চলে আসছে।নিজের এমন ইরেসপন্সিবল কাজের জন্য নিজের উপর বিশাল রাগ হচ্ছে।রোশনির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
– আরে না ভাবী,ব্যাগে নেই।আমি ভালো করেই খুঁজে দেখেছি।
– তুমি ব্যাগটা আমার কাছে দাও তো দেখি আমি….
– যেটা খুঁজছেন সেটা তো আমার কাছে ব্যাগে পাবেন না।
রোশনি ওর পুরো কথা শেষ করার আগেই অর্কের কথা শুনে চমকে উঠে। মেহেনূর আর রোশনি দুজনেই চকিত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকায়।অর্কের কথার মানে বুঝতে না পেরে মেহেনূর আশ্চর্য হয়ে বলে,
– মানে?
অর্ক একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়।তারপর হাতে থাকা কাগজটা মেহেনূরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– এটা বাসাই ফেলে রেখে এসেছিলে।
কাগজটা দেখতে পেয়ে যেন আত্মায় পানি আসে মেহেনূরের।সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে অর্কের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বলে,
– থ্যাংকস।আপনি এটা কোথায় পেয়েছেন?
– ড্রয়িং রুমে পড়েছিল।
রোশনি আশ্চর্য হয়ে অর্কের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
– কিন্তু অর্ক তুমি কি করে জানলে আমরা এখানে আছি?
অর্ক রোশনির বোকামি কথায় মনে মনে হাসে।অর্ক নিজের হাসি নিজের মধ্যেই দমিয়ে রেখে বললো,
– ওইটাতে তারিখ আর সময়ের সাথে হসপিটালের নামটাও দেওয়া আছে।
– ও তাই তো,আমিও না।যাকগে,কিন্তু তুমি শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলে কেন রাওনাফকে বললেই তো হতো।
– ইটস ওকে,আসলে আমিও একটু শপিং মলের দিকে যাবো।তো ভাবলাম এইদিক দিয়েই যেহেতু যাবো আমিই না হয় দিয়ে যাই।শুধু শুধু ওকে দৌড় করানোর কি দরকার।
– ও আচ্ছা।
– হুম।আচ্ছা,আমি এখন আসি।
– ঠিক আছে।
অর্ক চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরেই মেহেনূর আর রোশনি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে।ডাক্তারকে মেহেনূর ওর আগের সব রিপোর্ট গুলো দেখায়।কিন্তু এখন আই টেস্ট না করে আগের রিপোর্ট দেখে কোনো কাজ হবে না।তাই প্রথমেই মেহেনূরকে আই টেস্ট দেওয়া হয়।তারপর ওই টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আবার ডাক্তারের সাথে দেখা করে।পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।ডাক্তার সাহেব খুব সিরিয়াস মুখ করে নতুন পুরাতন সব গুলো রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করছেন।ভয়ে মেহেনূরের গলা শুকিয়ে আসছে। না জানি রিপোর্টে কি রেজাল্ট এসেছে।রোশনির হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে মেহেনূর।রোশনি ওর হাতের উপর নিজের হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলে,
– ভয় পেয়ো না।রিপোর্ট ভালোই আসবে।
কিন্তু মুখের কথায় কি কাজ হয়।যতক্ষণ না পর্যন্ত জানতে পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত মেহেনূরের ওই অশান্ত মন শান্ত হবে না।রোশনির দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মেহেনূর।মিনিট দুয়েক পরেই ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট গুলো তুলনামূলক শব্দ করেই টেবিলের উপর রেখে দিয়ে মুখে একটা অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে বললো,
– ওয়েলকাম মিস মেহেনূর হোসেন।তোমার অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।যদিও অপারেশনের পরে ডাউট ছিল যে তুমি কি আদৌ চশমা ছাড়া দেখতে পাবে কিনা।কিন্তু এখন আর কোনো ডাউট নেই।এভ্রিথিং ইজ ওকে।তাও তোমার রিকভার হতে একটু সময় লেগেছে।তোমার চোখে অপারেশন হয়েছে প্রায় আরো দুই মাস আগে।তোমাকে বলেছিলাম চশমা ইউজ না করতে কিন্তু তুমি মনে হয় আমার কথাটা শুনো নি।বাংলাদেশে আসার পর থেকেই তুমি চশমা ইউজ করছো।ফলে মাঝে মাঝে তুমি চোখে ঝাপসা দেখো।তোমার চোখে লেন্স বসানো হয়েছে মেহেনূর।এখন তো আর এই চশমাটা ইউজ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।হ্যাঁ তবে, আমি তোমাকে বলেছিলাম যদি কখনো দেখতে অসুবিধে হয় তখন তুমি চশমাটা ইউজ করতে পারো।কিন্তু তুমি কি করলে চব্বিশ ঘণ্টাই চোখে চশমা লাগিয়ে বসে রইলে।
ডাক্তার সাহেবের কথায় মেহেনূর কিছুটা হকচকিয়ে যায়।স্মিত হেসে বলে,
– আসলে আমি সব সময় চশমাটা চোখে দেই নি।বিশেষ করে যখন বাহিরে রৌদ্রের মধ্যে যেতাম তখন দিতাম।বাসায় বাবা মা জানে না আমি চোখে অপারেশন করিয়েছি। তাদেরকে সারপ্রাইজ দেবো বলে বলি নি।কিন্তু আমি যদি চশমাটা না পড়ি তাহলে তাদের সন্দেহ হতো না?তাই আরকি!
– ওকে,বুঝতে পেরছি।যাইহোক, এখন আর এই চশমাটা ইউজ করার প্রয়োজন নেই।তুমি এখন খালি চোখেই দেখতে পাবে।আর শুনো কিছু দিন তোমাকে সেইফলি চলাফেরা করতে হবে।বাহিরে গেলে সানগ্লাস পড়ে যাবে।মেডিসিন গুলো আরো ছ’মাস কন্টিনিউ করতে হবে।মুখে সব সময় ঠান্ডা পানি ইউজ করবে ঠিক আছে।মেহেনূর তোমার চোখের রং টা কিন্তু রেয়ার,যত্নে রেখো সবসময়।কয়জনের এই নীল চোখ আছে বলে তো।অনেকে তো কৃত্রিম লেন্স লাগিয়ে নিজেদের মনের আশা পূরণ করে।আর সেই জায়গায় তুমি সৃষ্টিকর্তা কাছ থেকে এই অপরূপ চোখের অধিকারিণী হয়েই পৃথিবীতে এসেছো।
মেহেনূর খুব মনোযোগ দিয়ে ডাক্তারের কথাগুলো শুনছিল।ডাক্তারের বলা শেষের কথাটা শুনে বিনিময়ে শুধু স্মিত হাসে।পরমুহূর্তেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আচ্ছা ডক্টর, আমি কি মাইনাস পাওয়ারের কোনো নরমাল চশমা ইউজ করতে পারবো?
– সেটার তো কোনো প্রয়োজন নেই।ইউ আর অলরাইট নাউ।
মেহেনূর করুণ স্বরে বললো,
– দরকার আছে ডক্টর।প্লিজ বলুন না।
– করা যাবে।আমি তোমাকে একটা গ্লাস সাজেস্ট করছি,যদি কখনো চশমা ইউজ করো তাহলে এই পাওয়ারের গ্লাসটা ইউজ করবে ঠিক আছে।আর অবশ্যই তিন মাস পর পর নতুন গ্লাস ইউজ করবে।
ডাক্তার সাহেব একটা ফাইলের মধ্যে সব ডিটেইলস লিখে দিলেন কি করতে হবে না করতে হবে।ডাক্তারের কাছ থেকে সবকিছু বুঝে নিয়ে মেহেনূর আর রোশনি হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে।
______________
অর্ক শপিং করে সোজা এনজিওতে চলে যায়।বাচ্চাদের জন্য নিয়ে আসা সব জিনিসপত্র ওদের সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে নিজের ডেস্কে এসে বসে।টেবিলের উপর একটা সবুজ খামে চোখ পড়ে অর্কের।খামটা হাতে নিয়ে দুপাশে ঘুড়িয়ে দেখলো কোনো ঠিকানা দেওয়া আছে কিনা।ঠিকানা না পেয়ে খামটা খুলে অর্ক।খামটা খুলতেই চমকে উঠে অর্ক।খামটার ভিতরে বিশ লাখ টাকার একটা চেক।হাতের সাইনটা খুব পরিচিতি।অর্ক আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে চেকটার দিকে।দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে দিহাদ এসেছে।দিহাদ অর্কের হাতের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
– ও রকম হা করে তাকিয়ে থাকার মতো অবিশ্বাস্য কিছু হয় নি।ওটা কিরণ চৌধুরীরই হাতের সাইন।বাচ্চাদের জন্য ওই টাকা ডোনেশন দিয়েছে।অবশ্য এর প্রভাব কিছুটা তোর উপরেও পড়তে পারে।
দিহাদের কথার ধরণ অর্ক বুঝতে পারছে না।কপাল কুচকে তাকায় দিহাদের দিকে।ভারী গলায় বললো,
– মানে?
দিহাদ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
– সূর্যের কিরণের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তো ওই চেকটায়।
দিহাদের ওমন হেয়ালি করে কথা বলাটা অর্কের খুব বিরক্ত লাগছে।সোজা কথা সোজাসাপটা ভাবে কোনো দিনই বলবে না ও।সব সময় ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে কথা বলে।অর্ক চোখ রাঙিয়ে বললো,
– ভনিতা না করে ক্লিয়ারলি বল তো কি বলছে চাচ্ছিস তুই?
দিহাদ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অর্কের সামনের চেয়ারটায় বসে।তারপর অর্কের হাত থেকে খামটা নিয়ে নেয়।অর্ক হা করে দিহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দিহাদ চেকটা খামের ভেতর রাখতে রাখতে বললো,
– গত দুই রাত পর পর দু’দিন কিরণ চৌধুরীর কনসার্ট ছিল।পরশু দিনেরটা ছিল লেকের ধারে পুরাতন স্টেডিয়ামে আর গত রাতে ছিল নীল চত্ত্বরে।আর গত রাতের কনসার্টটাই কিরণ চৌধুরীর শেষ কনসার্ট ছিল।
অর্ক হতভম্ব হয়ে দিহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।মাথার চুল উল্টে ধরে টেবিলের উপর হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বসে থেকে ধীর কন্ঠে বললো,
– আমাকে বলিস নি কেন?
অর্কের কথা শুনে দিহাদের রাগ হলেও এই মুহূর্তে ওর রাগ প্রকাশ করা উচিত হবে না।কেননা,অর্ক অলরেডি এক ঝটকা ছ্যাকা খেয়ে ফেলেছে।কাটা গায়ে আর নুন ছিটিয়ে লাভ নেই।তাই দিহাদ নরম গলায় বললো,
– পরশু দিন যে কনসার্ট ছিল সেটা আমিও কাল জানতে পারি।আর কাল রাতেও যে কনসার্ট ছিল সেটা অবশ্য আগেই জানতে পেরেছিলাম।কাল তোকে বিকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি অনেক গুলো কল দিয়েছিলাম।কিন্তু তুই একবারও রিসিভ করিস নি।আজ সকালেও অনেকগুলো কল দিয়েছি কিন্তু তুই তখনও কল রিসিভ করিস নি।পরে অপারগ হয়ে তোর বাসায় গিয়ে আন্টির কাছ থেকে জানতে পারি তুই তোর ফোন সাথে করে নিয়ে বের হোস নি।এখন বল,এতে আমার কি করার থাকতে পারে?আমি তো চেষ্টার কোনো কমতি রাখি নি।
নিজের করা বেখেয়ালি আচরণের জন্য অর্কের নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে।কিন্তু এই মুহূর্তে রাগের মাথায় কোনো কাজ হবে না।তাই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে শক্ত গলায় বললো,
– কালকেই যে শেষ কনসার্ট করেছে এটা তোকে কে বললো?
– কিরণ চৌধুরী নিজেই কালকে বলেছে।কালকের কনসার্টটাই ছিল ওর এইখানের শেষ কনসার্ট।
– আর চেক? এটা এইখানে কি করে এলো?কে দিয়ে গেছে?
দিহাদ স্মিত হেসে বললো,
– তোকে আগেই বলেছি যে, এই মেয়ে ওর উপার্জনের অর্থের বিশাল অংকের একটা এমাউন্ট ডোনেশনের কাজে দিয়ে দেয়।আমাদের এনজিওর সামনে যে দোকানটা আছে ওই দোকানের রহিম চাচা বললো,তার দোকানে নাকি কালকে কিরণ চৌধুরীর পদধূলি পড়েছিল।চা খেতে খেতে এক পর্যায়ে আমাদের এই এনজিওর কথা জিজ্ঞাস করলে রহিম চাচা যা যা জানে সব বলে।আর সাথে অনাথ আশ্রমের কথাটাও বলে।তখন তার হাতে এই খামটা ধরিয়ে দিয়ে যায়।সকালে আমি যখন এনজিও তে আসি তখন রহিম চাচা এসে এই খামটা আমার হাতে দিয়ে গেছে।রহিম চাচাকেও নাকি দুই লাখ টাকা দিয়েছে।তবে তাকে আমাদের মতো চেক দেয় নি ক্যাশ দিয়েছে।ভাবতে পারছিস?আচ্ছা এই মেয়ের চলাফেরা কেমন জানি!আমার কাছে খুব রহস্যময় মনে হয়।
দিহাদ একটু থেমে অবাক স্বরে বললো,
– না ভাই,আ’ম ডেম শিউর এই মেয়ে কোনো সাধারণত মানুষ নয়।
এইমুহূর্তে অর্কের মাথার নিউরন গুলো কোনো কাজ করছে না।দিহাদের কথার প্রত্যুত্তরে কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে সেটাও ও বুঝতে পারছে না।ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ওর সাজাতে একটু সময় প্রয়োজন।তবে মুহূর্তে সেটা পসিবল না।অর্ক ওর হাতের ঘড়িটায় তাকিয়ে দেখে পৌনে পাঁচটা বাজে।দিহাদকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– আমাকে একটু বেরুতে হবে।আসছি আমি।

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।