লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ১

মেঘলা তার পরিচয় খুঁজে পাওয়ায় সবার খুশি যেন আর ধরে না। তার মধ্যে মেঘলা আর নাবিল একটু বেশিই খুশি।

মেঘলাঃ আচ্ছা আকাশ ভাইয়া,আমি আজ ওই বাসায় চলে যাব তাই না?

মেঘলা কথাটা বলতেই আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

আকাশ রেগে গিয়ে বলল এখুনি যাবি?চল আমি গিয়ে দিয়ে আসি, দিয়ে আসব?

মেঘলাঃ আজব…কোথায় বলবে না তুই এখানেই থাক তা না বিদায় করে দিচ্ছে (মনে মনে)

আকাশঃ আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য একদম ছটফট করছিস তাই না?কেন ওই বাসায় যেতে হবে কেন আমার কাছে থাকা যায় না…?(মনে মনে)

মেঘলাঃ আরে না আপনার কষ্ট করতে হবে না নাবিল ভাইয়া তো আছেই তারপর আব্বু আম্মুও আছে আমি ওদের সাথেই যাব।

এরমধ্যেই নাবিল আসল…

নাবিলঃ আসতে পারি…

আকাশঃ মানা করলে আসবি না মনে হচ্ছে..??

নাবিলঃ তোর কথা কে শুনে?তোর কথা অন্তত আমার কানে তো ঢুকে না।

আকাশঃ তাহলে আর জিজ্ঞাস করছিস কেন আমি বল্লেও তুই আসবি না বল্লেও আসবি জানি তো।

নাবিল ঘরে ঢুকে বলতে শুরু করল তারপর বল বিয়েটা কবে করছিস?

আকাশঃ ইরা জেল থেকে ফিরলে…

নাবিলঃ মানে কি?

আকাশঃ বউ জেলে থাকলে বিয়ে হবে কি করে?

নাবিল বুঝতে পারছে আকাশ মেঘলাকে চেঁতাচ্ছে কিন্তু মেঘলা এসব বুঝল না সে গাল ফুলিয়ে বাইরে চলে গেল।

নাবিলঃ কি হল ব্যাপারটা?

আকাশঃ কি জানি…??? ছাড় এসব একটু পর নিজে নিজেই ফিরে আসবে।

দরজার ওপাশ থেকে,ফিরব না জীবনেও ফিরব না চলে যাচ্ছি আমি।( মেঘলা)

আকাশঃ ওমা যাস নি এখনো…??আমি তো ভাবলাম চলে গেছিস।

মেঘলা পর্দার আড়াল থেকে খরগোশের মত মুখ বের করে তাকাল…

আকাশঃ আমি দেখতে সুন্দর জানি সেটা এভাবে দেখার কিছু নেই।

মেঘলা দৌড়ে ঘরে চলে গেল।

নাবিলঃ আহ আকাশ চেঁতাচ্ছিস কেন…??

আকাশঃ তোর বোন তোরই মত ফাযিল তাই..

নাবিলঃ আমার সাথেও ত্যাড়া কথা বলছিস?

আকাশঃ আমি তো ত্যাড়াই তাহলে আমার সাথে কথা বলিস কেন? যা নিজের বোনকে নিয়ে বিদায় হ…

নাবিলঃ বুঝলাম….কোন কারনে স্যারের মেজাজ বিগড়ে গেছে… আচ্ছা যাই তাহলে মোড ভাল হলে ফোন দিস।

আকাশঃ দিব না…কখনো ফোন দিব না তোদের সাথে আজ থেকে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

নাবিল একটু হেসে চলে গেল।

এদিকে মেঘলা প্যাকিং করতে করতে বারবার লক্ষ্য করছে আকাশ আসে কিনা?

আকাশও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে মেঘলা প্যাকিং করছে?

আকাশঃ আমাকে ছেড়ে যেতে ওর এত তাড়া সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।ওর কি একটুও খারাপ লাগছে না? বদমাইশ মেয়ে দেখিস জীবনেও কথা বলব না তোর সাথে।

আকাশ বাঁধা দিতে আসল না জন্যে রাগে
মেঘলা যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামছে আর ভাবছে আমি চলে যাচ্ছি তবুও আকাশ ভাইয়া একবার আসল না?আমাকে বিদায় করতে পাড়লেই খুশি তাই না? তাই তো একবার এসে বলল না মেঘলা যাস না থেকে যা আমার কাছে।আমাকে তো তার দরকার নেই দেখবেন আমিও এর শোধ তুলব।

মেঘলা নেমে যাচ্ছে তখনি মেঘলার হাত ধরে কেউ টানল।

আকাশ তাকে বাঁধা দিতে এসেছে দেখে মেঘলা তো মহাখুশি।কিন্তু মেঘলার সে আশায় জল ঢেলে দিয়ে আকাশ বলল ওই ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? এসব আমি তোকে কিনে দিয়েছি একটা কিছুও নিয়ে যাওয়ার পারমিশন নেই সব রেখে যাবি।

আকাশ তাকে বাঁধা দিতে আসেনি জিনিসপত্রের জন্য এসেছে দেখে মেঘলার আরো রাগ হল।

মেঘলাঃ নিকুচি করেছে আপনার জিনসপত্রের রাখুন সব ফাউল ছেলে একটা।

আকাশঃ একটাও বাজে কথা বললে না মেরে ফেলব।

নাবিল খুব মনোযোগ দিয়ে এদের জগড়ে দেখছিল।

মেঘলাঃ ভাইয়া চল… এখানে আর এক মুহুর্তও থাকব না।

নাবিলঃ হুম চল।

নাবিল,মেঘলা,নাবিলের বাবা মা সবাই চলে গেল।










এদিকে মেঘলাকে ছাড়া আকাশের ১ মিনিটকে মনে হচ্ছে এক একটা যুগ।মেঘলা যাওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যেই আকাশ একদম ঘরবন্দি হয়ে গেছে।

আকাশঃ না আর ভাল লাগছে না কিছুতেই ভাল লাগছে না…মেঘলা ছাড়া বাড়িটা একদম শুন্য শুন্য লাগছে।ওকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।কেন ও চলে গেল আমার কথা একবারো ভাবল না? ও নাহয় নাবিলের সাথে সময় কাটাবে মজা করবে কিন্তু আমি কিভাবে থাকব একটা বার ভাবল না?

এদিকে,
মেঘলাঃ আকাশ শুধু মুখেই বলে ভালবাসে ভালবাসে সত্তি সত্তি তো বাসে না।বাসলে কি আর আমাকে চলে আসতে দিত? আমার যে এখন কষ্ট হচ্ছে সেটা কি ও জানে? আমাকে একটুও বোঝল না…??নিশ্চুই বন্ধুদের সাথে মজা করছে।
কিন্তু আমি এখন কি করব? আমার তো এখানে ভাল লাগছে না।কারো সাথে একটু যে কথা বলব তারো উপায় নেই নাবিল ভাইয়াও বাইরে চলে গেছে।ধুর বাবা ভাল লাগে না।

কি করা যায়?ও পেয়েছি আমার পার্সে তো ডাক্তারের সেই ওষুধ টা আছে ওটা খেয়ে ঘুমিয়ে যাই ঘুমের মধ্যে তো আর কষ্ট হবে না।

যেই কথা সেই কাজ মেঘলা ওষধ/ ডার্গস নিয়ে নেশার দেশে পাড়ি দিল।

মেঘলা শান্তি পেলেও সময়ের সাথে আকাশের খারাপ লাগা বাড়ছে কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ পুরুপুরি অস্থির হয়ে উঠল। সে বারবার করে মেঘলাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু মেঘলা ফোন তুলছে না।
আকাশ মোট ১০৩ বার কল করে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে নাবিল কে ফোন দিল।

নাবিলঃ বলেছিলি ফোন দিবি না তাহলে দিলি যে…

এরপর আকাশ আর কি বলবে?কিছু বলতে পারল না।
না কিছু না ভুলে ফোন চলে গেছে রাখছি…

নাবিলঃ আরে শোন শোন…

আকাশ ফোন কেটে দিল।
এত জেদ তোর মেঘলা? আচ্ছা দেখব আমাকে ছাড়া কত ভাল থাকিস তুই।




নাবিল বাসায় এসে দেখল মেঘলার কোন সাড়াশব্দ নেই।

নাবিলঃ মা মেঘলা কোথায়?

নাবিলের মাঃ সন্ধ্যার দিকে ঘুমিয়েছিল এখনো উঠে নি।ডেকে দিব?

নাবিলঃ না থাক ডাকার দরকার নেই ঘুমাক।

মেঘলা রাতেও ঘুম থেকে উঠল না দেখে নাবিলের সন্দেহ হলো।

নাবিলঃ তারমানে মেঘলা ডার্গস নিয়েছে।মেঘলার এটা নেশা হয়ে গেছে…!! কিন্তু মা বাবাকে এটা বলা যাবে না যা করার আমাকেই করতে হবে।

রাতে খাবারের টেবিলে,
নাবিলের বাবাঃ কি ব্যাপারের নাবিলের মা মেঘলাকে ডাকলে না? ডাকো একসাথে খাই…

নাবিলঃ না বাবা থাক না ডাকার কি দরকার? মেঘলার মন টা একটু খারাপ তাই আসছে না ডাকার দরকার নেই আমি ওর ঘরে খাবার দিয়ে আসব।

নাবিলের মাঃ ঠিক আছে।
খাওয়া শেষে যে যার ঘরে গেল।

নাবিল মেঘলার জন্য খাবার নিয়ে ঘরে গেল। মেঘলাকে অনেক ডাকার পর সে রেসপন্স করল কিন্তু সে নেশায় ডুবে আছে তাই চোখ খুলতে পাড়ল না।

নাবিল ব্যাপারটা বোঝতে পাড়ল,এটা নিয়ে মেঘলার সাথে কথা বলতে হবে আর আকাশকেও বিষয়টা জানাতে হবে।আজ থাক নেশা কাটুক কাল ২ জনকে এক সাথে নিয়ে বলব।

নাবিল বেড সাইডে খাবার রেখে চলে গেল।

এদিকে রাত ১ টা বেজেছে কিন্তু আকাশের চোখে ঘুম নেই। সে মেঘলাকে মিস করছে। তাই আবারও মেঘলাকে ফোনের পর ফোন দিয়েই চলেছে।কিন্তু ফোন তুলছে না দেখে আকাশ এবার ক্ষেপে গেল।

আকাশঃ মেঘলা আমার সাথে এত জেদ দেখাস? পরিবার পেয়ে সাপের পিছ পা দেখেছিস তাই না।এতবার ধরে কল করছি তবুও ফোন টা তুলছিস না?দাঁড়া আমি আসছি এবার দেখি তোকে কে বাঁচায়।তোর কপালে তো আজ শনি আছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।