জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে প্রায় , এখন শীতের মাএা মারাত্মক বেশি। এখন ঘড়িতে ১২ টা’ বেজে ৫ মিনিট। সুদেষ্ণা হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে রাতের শহরের দিকে নজর দিলো, পুরো শহর কুয়াশায় ঢাকা। আজকে হিমাদ্র সুদেষ্ণাকে নিয়ে রাতের শহর দেখতে বেরিয়েছে । হিমাদ্র বাইক চালাচ্ছে আর সুদেষ্ণা পিছনে বসে চাতক পাখির ন্যায় এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে । হিমাদ্র লুকিং গ্লাসে দেখছে তার প্রিয় রমনীকে। তাদের খুব একটা ঠান্ডা লাগছে না , দুজনেই পুরো প্যাক করে নিয়েছে নিজেকে শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে।
হিমাদ্র ভেবে ছিলো সুদেষ্ণাকে পদ্ম বিলে নিয়ে যাবে । হিমাদ্র জানে সুদেষ্ণার পদ্মফুল ভীষন পছন্দ, আর সুদেষ্ণা হিমাদ্রর সাথে পদ্ম বিলে যেতে চায় এটাও জানে হিমাদ্র । চনন্দননগরের আশে-পাশে খোঁজ নিয়ে দেখেছে হিমাদ্র, কিন্তু কোথাও পদ্ম বিলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। হিমাদ্র সঠিক জানেও না কোন সময় এই ফুল গুলো চাষ করা হয় । তাই হিমাদ্র ভাবলো সুদেষ্ণার অন্য ইচ্ছা পুরো করা যাক, যাতে মেয়েটার মুখে একটু হাঁসি দেখা যায় । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর কাছে খুব একটা আবদার করে না, তবে যে আবদার গুলো করে সেগুলো গুলো মেয়েটার মতোই ভীষন আদুরে। সুদেষ্ণা যদি হিমাদ্রর জীবনে না আসতো , তাহলে হিমাদ্র জানতেই পারতো না,,,,,,,,, ভালোবাসা আসলে ভীষন সুন্দর। হিমাদ্র উপলব্ধি করতে পারতো না ,,,,,,,,,,প্রিয় মানুষটা জীবনে থাকলে, সব রঙিন লাগে ।
সুদেষ্ণার বেশ ভালোই লাগছে রাতের শহর । দিনের যান্ত্রিক কোলাহলপূর্ণ শহরের থেকে রাতের নির্জন শহরটা ভীষন সুন্দর। পুরো রাস্তা ফাঁকা আর আলোকিত, দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কিছু দেখা যাচ্ছে না । তবে পোস্ট লাইটের আলো কুয়াশা ভেদ করে অল্প-আধটু দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় বেশ কয়েকটা কুকুর ঘোড়াঘুড়ি করছে, আবার মাঝে মাঝে আওয়াজ ও করছে । নির্জন রাস্তা দিয়ে সাঁই’ সাঁই’ শব্দ করে মাঝে মধ্যে একটা-দুটো গাড়ি যাচ্ছে। সুদেষ্ণা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে সব । আজকের রাতটা ভীষন ভালো যাচ্ছে সুদেষ্ণার, সুদেষ্ণা ভাবতেই পারিনি হিমাদ্র তাকে নিয়ে বেরোবে ।
হিমাদ্র বাইক থামালো স্ট্যান্ড এর রাস্তার ওপরে । সুদেষ্ণা বাইক থেকে নেমে তাকিয়ে রইলো স্ট্যান্ডের সৌন্দর্যের দিকে । সুদেষ্ণা এই প্রথম রাতের আলোয় আলোকিত স্ট্যান্ড দেখলো । নাহলে এর আগে দেখার সৌভাগ্য হয়নি । পুরো স্ট্যান্ড ফাঁকা, কয়েকটা মানুষ আছে তারা স্ট্যান্ডেই তাবু খাটিয়ে থাকে । সুদেষ্ণা স্ট্যান্ডের ঘাটের দিকে তাকালো,,,,,,,,ওই দিকে সব কালো দেখাচ্ছে , এমনকি জলও । সুদেষ্ণা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত আর হিমাদ্র তার প্রিয় রমনীকে। যদিও তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না চোখগুলো বাদে ।
সুদেষ্ণা হিমাদ্রর হাত ধরে বেশ প্রফুল্ল গলায় বললো,,,,,
“চলুন না ঘাটের কাছে গিয়ে বসি । ইস , আমার ভীষন ভালো লাগছে সব । শুধু একটা জিনিসের কমতি আছে,,,,,,,, এই বলে মুখ ফোলালো সুদেষ্ণা।
হিমাদ্র এক ভ্রু উঁচিয়ে ইসারায় জিজ্ঞাসা করলো,,,,,,,
“কী?
সুদেষ্ণা বললো,,,,,,,“ এই ঠান্ডায় আর এই সুন্দর আবহাওয়ায় যদি একটু গরম চা পাওয়া যেতো। উফফফফ্,,,,,,, হেব্বি হতো । কিন্তু এখন তো সব দোকান বন্ধ ।
হিমাদ্র মুচকি হেঁসে বাইকের হ্যান্ডেল থেকে ফ্লাক্স এর ব্যাগটা নামালো । আর সুদেষ্ণার হাতে দিলো । সুদেষ্ণা তার দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো, আর বললো,,,,,,,,
“কখন করলেন?? আমি খেয়ালই করিনি।
“তুমি যখন রেডি হচ্ছিলে তখন । এবার আমাকে উপহার দাও , এই বলে হিমাদ্র নিজের ডান দিকের গাল এগিয়ে দিলো ।
সুদেষ্ণা কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে হিমাদ্রর বাহুতে এক চাঁটি দিলো , আর বললো,,,,,,,,,
“ধ্যাত্,,,,,,,, সব সময় খালি ফাজলামো করেন। আসুন, এই বলে হাত টানতে লাগলো । হিমাদ্রও বাদ্ধ্য ছেলের মতো সুদেষ্ণার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো ।
————————————————————————-
হিমাদ্র আর সুদেষ্ণা ঘাটের কাছে বসে আছে , দৃষ্টি তাদের আকাশের একফালি চাঁদের দিকে। হাতে তাদের ধোঁয়া ওঠা ওয়ান টাইম চায়ের কাপ । সুদেষ্ণা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,,,,,,,,
“জানেন আমার ভীষন ইচ্ছা ছিলো আপনার সাথে রাতে ঠিক এইভাবে ঘুরতে বেরোনোর। অবশেষে পুরো হলো ।
সুদেষ্ণার কথায় হিমাদ্র তাকালো তার দিকে, সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে জলের দিকে তাকিয়ে আছে যেখানে চাঁদের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে । হিমাদ্র একটু থেমে বললো,,,,,,,
“জানি ।
সুদেষ্ণা বেশ অবাক হলো হিমাদ্রর কথায় । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,,,
“কীভাবে ? আমিতো বলিনি কখনো,,,,,,।
“তুমি চিঠিতে এইরকম অনেক ইচ্ছার কথাই বলেছিলে , যেগুলো সব আমি জানি। আর তোমার দেওয়া চিঠি আর পাঞ্জাবি যত্ন করে রাখা আছে।
বেশ, এই কথা যথেষ্ট ছিলো সুদেষ্ণাকে লজ্জায় ফেলতে। সুদেষ্ণা তো ভুলেই গিয়েছিলো চিঠির কথা । তবে লোকটা কীভাবে জানলো ? এখন কি বলবে সুদেষ্ণা,,,,,,,।
“কী হলো ? কিছু বলছো না ।
“ আপনি কীভাবে জানলেন ?
“আমাদের বাড়ির বাইরে ক্যামেরা আছে । তোমার শ্বশুর কলেজের প্রিন্সিপাল, তো বুঝতেই পারছো ব্যাপার-স্যাপার। আগে অবশ্য ছিলো না , তারপর স্টুডেন্টরা এত দুষ্টুমি করতো যার জন্য এই ব্যবস্থা । তুমি যেই দিন প্রথম চিঠি দিয়েছিলে , বাবা রে সেই দিন বাড়িতে কি যে অবস্থা । তারপর সিসিটিভি ফুটেজে চেক করে তোমাকে দেখলাম ।
সুদেষ্ণা সব শুনে বেশ অসস্বস্তিতে পড়লো। তাই কথা পাল্টাতে বললো,,,,,,,,,আচ্ছা আপনি কী আমাকে আগে থেকে চিনতেন , মানে দিদিভাইকে তো চিনতেন তাই বললাম।
হিমাদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেঁসে বললো,,,,,,
“আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসি , শুধু তোমায় বলা হয়নি । তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম অশোকচক্র ক্লাবের অনুষ্ঠানে, তুমি নাচ করে ছিলে । তারপর তো সুতৃষ্ণাদির সাথে তোমাকে অনেক বার দেখেছিলাম। পরে আবার এত কিছু হলো ।
সুদেষ্ণা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো, কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো । যদি কখনো জানতে পারি যে, ভালোবাসার মানুষটা আগে থেকেই ভালোবাসে তো কেমন অনুভূতি হওয়া উচিৎ সুদেষ্ণা জানে না। সুদেষ্ণা হিমাদ্রর আর একটু গা ঘেঁষে বসলো , হিমাদ্রর একটা বাহু জরিয়ে কাঁধে মাথা রেখে বললো,,,,,,,,
“আপনি আমার ভাগ্যে ছিলেন , তাই আমরা আজ সাথে আছি । ভালোবাসি হিমাদ্র, অনেক ভালোবাসি ।
হিমাদ্র অধর ছোঁয়ালো সুদেষ্ণার চুলের ভাঁজে । সুদেষ্ণাকে আর একটু জরিয়ে নিলো নিজের সাথে আর বললো,,,,,,,,,“এই সুন্দর মূহুর্তে একটা গান ধরোতো দেখি ।
সুদেষ্ণা চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলো,,,,,
“তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব”,,,,,,,,,,,,,,,,
——————-🌼🌼🌼——————
(সুদেষ্ণা আর হিমাদ্র এর জুটি যাদের পছন্দ হয়েছে তাদের কাছে আমি ছোটো একটা রিভিউ আশা করছিলাম। কারন আমার গল্পের কথা অনেকেই হয়তো জানেন না, আপনাদের রিভিউর মাধ্যমে হয়তো জানতে পারবে । )