এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৩৩

বিহান ভাই আমাকে কে কি আছাড় দিবেন?সরি আর এমন হবে না।আমি কখনো আর আপনার ফোন স্পর্শ করবো না।প্লিজ আমায় ফেলবেব না।আমি আপনার কোনো কিছুই আর স্পর্শ করবো না,কোনদিন না।আমাকে নিচে নামান প্লিজ এক্ষুনি মামিকে ডাকবো কিন্তু,চোখ অফ করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে শেষ করলাম।কথাগুলো বলতে বলতে উনার গলা শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে উনার বুকে মাথা গুজে রইলাম।উনি আমাকে কোলে তোলার জন্য নিঃশ্বাস অতি দ্রুত বইতে শুরু করলো আমার।উনি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রক্তজবার ন্যায় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন পলকবিহীন ভাবে।

–উনি রুড কন্ঠে বললেন,দিয়ারে তোকে আজ এমন শিক্ষা দিবো যে এই জীবনে আমাকে বিরক্ত করার কল্পনাও করতে পারবি না।তোকে আজ বেলকনি থেকে ফেলে দিবো,দিবো মানে দিবোই,আজ তোর রেহাই নেই।তোর জন্য আমাকে এমন ডিজগাস্টিং কথা শুনতে হয়েছে।এমন ভাবে ফেলবো ট্যাপা মাছের মতো ঠাসস করে উঠবি।

–উনি কি আমায় এনিয়ে বিনিয়ে ট্যাপা মাছ বললেন।এই মুহুর্তে তো কিছুই বলতে পারছি না এই রাঘব বোয়াল কে।আগে এর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নেই তারপর দেখা যাবে।আরো খানিক টা জোরে ধরলাম উনাকে।

–উনি জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললেন,যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিস,তোকে ফেলতে গেলে তো নিজেই পড়ে যাবো।অকালে নিজের প্রাণ দিতে চাই না।আমার ব্রাইট ফিউচার পড়ে আছে সামনে।ফেলতে যখন চেয়েছি কোথাও তো ফেলতেই হবে তাইনা?তাই বরং বিছানায় ফেলি।

–চট জলদি বললাম,হ্যাঁ হ্যাঁ বিছানায় ফেলুন আমি তাহলে আপনার গলা ছেড়ে দিচ্ছি।

–ছেড়ে দিলে বেলকনি থেকেই ফেলবো।বাঁচতে চাইলে ভাল ভাবে জড়িয়ে ধরে থাক।

–উনি কথাটা বলতেই আমি পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি দরজায় দুলাভাই এসে দাঁড়ালেন সাথে বিভোর ভাই ও আছে।বিভোর ভাই আমাদের এইভাবে দেখেই পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে দুলাভাই এর হাত ধরে টানছেন।দুলাভাই কে নেওয়ার জন্য হাত ধরে টানাটানি করেই চলেছেন।বিভোর ভাই এক টানে দরজা থেকে সরিয়ে নিলেন দুলাভাইকে।

–বিহান ভাই আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে পড়লেন।একদম আমার দিকে ঝুঁকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।চোখে মুখে গম্ভীর ভাব এখনো রয়েছে।ভ্রু উচিয়ে বললেন,এত ভয় নিয়ে আমার সাথে ফাইজলামি করিস।এত ভয়! আসলেই কি ভয় নাকি ভয় পাওয়ার ভান।আমি চোখ ছোট ছোট করে দরজায় সোজা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।উনি আমাকে বললেন,লুক ওট মি ওদিকে কি দেখছিস আমার দিকে দেখ।আমি এখানে আর মন চোখ অন্যদিকে কেনো?লিপিস্টিক চাই আমাকে বলা যেতো না।আমাকে বলতে কি সমস্যা।সেদিন যে লিপিস্টিক কিনে দিলাম তার একটাও ইউজ করতে দেখলাম না।ওগুলো কি আমি সাজিয়ে রাখতে দিয়েছি,কয়েক দিন ইউজ করে ফেলে দিয়ে বলা যায় না লিপিস্টিক শেষ আবার লাগবে।পুচকে একটা মানুষ সারাক্ষণ সেজেগুজে ঘুরঘুর না করে ওয়ান টুর বাচ্চার মতো বিহ্যাভ।তোকে বলেই বা কি হবে মেয়ে মানুষের সমস্যায় এটা টিপ ফুরালে তার খালি পাতা টাও রেখে দেয়।আমার ঘরে যেনো আনইউজ কিছু না দেখি।যেগুলা ইউজ করিস না সেগুলা ফেলে দিবি।

–অরেঞ্জ কালার টা ভাল লাগছিলো তাই?

–দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আমাকে বলতে কি খুব অসুবিধা হচ্ছিলো ষ্টুপিড একটা।সন্ধ্যার পরে রেডি হয়ে বাইরে যাবি আজ আমার সাথে।

দরজা থেকে দুলাভাই খ্যাক করে গলা পরিষ্কার করার শব্দ করতেই বিহান ভাই কেঁপে উঠে আকস্মিক ভাবে উঠে গেলেন ।আমিও দ্রুত উঠে জামা ঠিক করতে করতে এগিয়ে গেলাম।বিহান ভাই গেঞ্জি টেনে ঠিক করে নিয়ে লজ্জায় নিচের ঠোঁট কামড়ে চুলের মধ্য হাত চালিয়ে দিলেন।উনি যে কি ভীষণ লজ্জা পেয়েছেন সেটা উনার চোখে মুখে স্পষ্ট আর ক্লিয়ার।লজ্জা সামলাতে চুলের মধ্য হাত চালিয়ে নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

–কি ভুলভাল সময়ে আমার আগমন হলো আমার শালাবউ।শালাবাবু তো মনে মনে ভাবছে দুলাভাই এসেছে যখন চলে গেলো না কেনো।না হলে বাকিটুকু..এটুকু বলেই দুলাভাই চুপ হয়ে গেলেন।

–ভাজ্ঞিস দুলাভাই আপনি এসেছিলেন।না হলে আজ যে উনি কি করতেন আমাকে।

–বিহান ভাই তৎক্ষনাত আমার দিকে চোখ বড় বড় করে ভীষণ রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন।যার মানে আমাকে চুপ করতে বললেন।

–দুলাভাই শুকনো কাশি দিয়ে বললেন,আচ্ছা শালাবউ তাহলে এই কাহিনী।

–হ্যাঁ দুলাভাই উনি আমায় শাস্তি দিচ্ছিলেন।আপনি এসেই তো বাঁচালেন।আপনার ওই শালাবাবু যে লোক উনার হাত থেকে বাঁচা সহজ নয়।

–শালাবাবু আমি তাহলে গেলাম,শাস্তি দিতে থাকো।

–দুলাভাই না প্লিজ।

–বিহান ভাই মাথা থেকে হাত নামিয়ে বললেন,দুলাভাই আপনি যেটা ভাবছেন সেটা নয়।আপনার এই শালাবউ যা করেছে ভাবতেও পারবেন না।

–আমি কিছুই ভাবছি না শালাবাবু,চালিয়ে যাও।এখনি তো সময়।
এতদিন পরে বাড়িতে এসোছো দীর্ঘদিনের উপোস বউ ছাড়া।

–দুলাভাই সিরিয়াসলি ওসব কিছুই না।

–আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,মিথ্যা বলছেন কেনো? আপনি তো ওসব ও করছিলেন।

–উনি চোখ রাগিয়ে বললেন,তুই কি চুপ করবি।

–দুলাভাই হেসে বললেন,কি করছিলে সেটা গেঞ্জিতে মুখে স্পষ্ট লেগে আছে।

–গেঞ্জিতে আর উনার মুখে আমার ঠোঁটের লিপিস্টিক এর দাগ স্পষ্ট ক্লিয়ার।বিহান ভাই এটা দেখেই রণচন্ডী মুডে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।দুলাভাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন।

–বিহান ভাই আমাকে বললেন,এই সাজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই লিপিস্টিক লাগানোর কি প্র‍য়োজন ছিলো।উফফ গড দুলাভাই কি ভাবলেন।আজ দিনটায় এত বাজে হলো কেনো সেটাই বুঝছিনা।

–আমি কি জানতাম আপনি এখনি আমায় কোলে তুলবেন।

–সস্তা লিপিস্টিক না লাগালে তো সেটা আমার গালে লেগে যেতো না। কিপ্টার বংশের কিপটা।

–বাজে কথা বলবেন না আমি অনেক দামাদামি করে ৭০ টাকার লিপিস্টিক ৬৫ টাকা দিয়ে কিনেছি।

–মাই গড অনেক টাকা সেফ করেছিস।

–টিস্যু নিয়ে আয় লিপিস্টিক এর দাগ মুছে দে।

–আমি টিস্যু বক্স থেকে দুইটা টিস্যু নিয়ে উনার সামনে এসে দাঁড়ালাম।বুকের কাছে লেগে থাকা দাগ টিস্যু দিয়ে তুলতে পারলেও মুখ ভাল একটা নাগাল পাচ্ছিনা।পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উনার গালের লিপিস্টিক মুছে দিলাম।

–উনি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,এভাবে দাঁড়ালে কচি আঙুল ভেঙে যাবে আমার পায়ের উপর দাঁড়া।

–ব্যাথা পাবেন তো,তার থেকে বরং আপনি চেয়ারে বা খাটে বসুন।

–উহু এভাবেই থাকবো আর তুই আমার পায়ের উপর উঠবি।আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি নিজেই আমার কোমর ধরে উঁচু করে বললেন,এবার মুছে দে।একদম বাচ্চাদের মতো গাল এগিয়ে দিলেন।এটা যেনো তার ভীষণ বায়না ছিলো আমাকেই তার গালের লিপিস্টিক মুছে দিতে হবে।আমার বুঝতে অসুবিধা হলোনা যে উনি আমাকে আসলেই ফেলে দিতো না সব ই ধমকের সুরে আমাকে কোলে তোলার বাহানা।এই পৃথিবীর বেষ্ট ইউনিক আইডিয়ার মানুষ টা আমার উনি।কি সুন্দর ভাবে নিজের সুন্দর চাওয়া গুলো,নিজের ইচ্ছা গুলো নিজেই আদায় করে নেন সেটা আমাকেও বুঝতে দেন না।পর মুহুর্তে ভেবেই অবাক হই উনি কিভাবে ভাল লাগার মুহূর্তে তৈরি করে যান প্রতিনিয়ত।

–উনি এক দৃষ্টিতে শীতল নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দেখা।এ দেখা যেনো কত জন্মের দেখা,উনার চোখে ভীষণ তৃষ্ণা,আমাকে দেখার ভীষণ আকুতি উনার চোখের দৃষ্টিতে গভীর ভাবে ফুটে রয়েছে।বেশ অনেক সময় মৌনতায় কেটে গেলো দুজনের।আমি আস্তে করে বললাম হয়ে গিয়েছে এবার নামিয়ে দিন,নাহলে কেউ চলে আসবে আবার।তখন আবার আমাকেই বকা দিবেন।উনি আস্তে করে নামিয়ে দিলেন আমাকে।ড্রয়ার খুলে আরেক টা গেঞ্জি করে পরনের টা খুলে পরলাম।

–আমি বেশ সন্দিহান ভাবে বললাম,আরেক টা যখন পরবেন তাহলে আমাকে দিয়ে ওইটা মোছানোর কি প্রয়োজন ছিলো।

উনি আমার মুখের কাছে এসে বললেন,

“আমি চাই সে ছুয়ে দিক আমায়,সে কাছে আসুক আমার।
সে আলিঙ্গন করুক আমায়,
তার তপ্ত নিঃশ্বাস উপচে পড়ুক আমার শরীরে।
কারনে অকারণে তাকে ছোয়ার বাহানায় পাগল থাকে মন।

সে কি একটুও অনুভব করে নি সে ছুয়ে দিলে আমার অদ্ভুত এক ফিলিংস হচ্ছিলো।ভেতরে তাকে নিয়ে অনুভূতি গুলো জাগ্রত হচ্ছিলো ভীষণ ভাবে।”

কথা গুলো বলেই বেরিয়ে গেলেন বাইরে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।