আরো কিছুক্ষণ হাসি-আলাপ করে আরহাম রুমে চলে গেলেন ফ্রেশ হতে।হাফসা উনার যাওয়ার পানে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলল, 'শুকরান লাক ইয়া মা'বুদ।'
অতঃপর বেলী আর গোলাপের সুবাসে নাক ডুবিয়ে মাতোয়ারা হয়ে গেলো।
উনি বুঝতে পারলেন উমায়ের কাঁদছে।তাই আরো গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে কপালে গাঢ় চুমু দিয়ে বললেন, 'ডোন্ট ক্রাই প্লিজ!ইট হার্টস মি হুয়েন ইউ ক্রাই।'
'ধরে নিন এটা আপনার শেষবারের মতো দূঃখ পাওয়া।আর একটুও দূঃখ দেব না।এই খারাপ বরটাকে ক্ষমা করে দিন শেষবারের মতো।'
ইফতার শেষে রুমে এসে নামাজ পড়ে আবার কিচেনে গেলো হাফসা।মাকে টুকটাক হেল্প করতে বেশ অনেকক্ষণ সময় চলে গেলো।মা অবশ্য মানা করেছিলেন কিছু করা লাগবে না।কিন্তু হাফসার বিবেকে বাঁধলো।সাহরির এতো রান্না মা একা করবেন।আব্বু আর উনি তো মায়ের হাতের রান্না ছাড়া খান না।আম্মুর বেশী কষ্ট হয়ে যায়।তাই সাহায্য করতে গিয়ে পড়লো ইশার আযান।
আরহাম ওপর থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন। আব্বুর মুখে শাস্তি শুনে আর বের হওয়ার সাহস পান নি।নাহলে উমায়ের এর সামনে কি নয় কি শাস্তি দিবেন আর মানসম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।
'কি করেছে কি আমার ছেলে?আমার ছেলেকে শাস্তি দিবেন?'
উমায়েরের বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে পুরো দেড় ঘন্টা ফুল স্পীডে গাড়ি রান করে এসেছেন।রাগ কমেনি এতক্ষণ পর্যন্ত।নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিতেই বুঝতে পারলেন রাগটা অহেতুক।রাগটা না করলে এই শেষনিশিতে উনার প্রাণস্পর্শীর কাছেই হয়তো ঠাঁই থাকতো!
হাফসার মনটা ভার হয়ে আছে বিকেলে রাদ' ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর থেকে।আরহাম বিকেলেও ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলেন।হাফসা অজুহাত দিয়ে চলে আসে।কথা বলে নি।কেন জানি অসহ্য লাগছে সবকিছু। একটা বিয়ে কিছু মানুষের জীবন কত অদ্ভুত ভাবে পাল্টে দিলো।যেমন আমি নিজে।তেমনি রাদ ভাই!
আরহাম নিচে নামতে নামতে কলিং বেল বাজলো।এত সকালে কে হতে পারে?নিউজপেপারের লোক হয়তো!সন্দেহ বশে দরজা খুলতেই আরহাম চমকে গেলেন।অল্পক্ষণের জন্য নিজের চোখ আর মস্তিষ্ক কে যেনো বিশ্বাস করতে পারলেন না।
'কি হয়েছে আরহাম?তুমি এর আগেও কেঁদেছো।হাফসাও কেঁদেছে দেখলাম।মেয়েটা কিছু বলে না।সবকিছু নিজের ভেতর চেপে রাখে।কি হয়েছে দূজনের?কোনো কিছু নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে?বলার মতো হলে বলো আমাকে।'
আরহাম কাঁদোকাঁদো হয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে বললেন, 'সি হার্টস মি আম্মু।'
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজলো।হাফসা কলিং বেলের শব্দে বারান্দায় বেরোলো।দোতলা থেকে দেখছে আশেপাশে কোনো ম্যাড নেই।কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। দরজা কেন কেউ খুলছে না।মায়ের শরীর ভালো না,তাই শুয়ে আছেন।ওষুধ খেয়ে ঘুমালে উনি লম্বা ঘুম দেন।কিন্তু আপু তো গিয়ে খুলতে পারেন।আর সার্ভেন্ট?সবাই গেল কোথায়?
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই হাফসা পাশে থাকা আরহামকে দেখে চমকে গেলো।মানুষটা একদম জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন।তখনই খেয়াল করলো ব্ল্যাঙ্কেট টা তো ওর গায়ে।কিন্ত রাতে তো ছিলো না।উনার কি ঠান্ডা লেগেছিল?উনি তো শেয়ার করতে পারতেন?করলেন না কেন?'