আদিয়াত সবার সামনে আমার হাত ধরে বলতে শুরু করলো,,,,,,,
আদিয়াত:আমি এখন যা বলবো সব আমার মনের কথা।আমি জানিনা তুমি আমার কথাগুলো আদৌ বিশ্বাস করবে কিনা তবে এই কথাগুলো সবই সত্যি।
আমি আজ থেকে তিন মাস আগে এই “গ্রিন ক্যাফে” তেই প্রথম দেখি তোমাকে।সেদিন তোমার ঐ মায়াবী চোখ আর ঠোঁটের কোণের মিষ্টি হাসিটাই আমাকে মুহূর্তের মধ্যে ঘায়েল করে নিয়েছিলো।আমি সেদিন এখান থেকে যাওয়ার পর থেকেই শুধু তোমার ভাবনাতেই বিভোর ছিলাম।এরপর থেকে আমি প্রায়ই আসতাম এইখানে শুধুমাত্র তোমাকে যদি দেখতে পাই এই আশায়।আর আমার ইচ্ছা পূরণও হয়েছিলো।কিন্তু তুমি সবসময় মুখে হয় মাস্ক নয়তো হিজাব বেধে থাকতে।তাই তোমাকে আমি পুরোপুরি কখনোই দেখিনি।এরপর একদিন হঠাৎই আমি যখন আমার আইডি স্ক্রোল করছিলাম তখন তোমার আইডি পাই।তোমার আইডি চিনতে আমার সমস্যা হয়নি।কারণ,,,তোমার প্রোফাইল পিকচার এ তোমার চোখের পিক দেওয়া ছিলো।এরপর থেকেই শুরু হয় তোমার সাথে আমার কথা বলা।বাকি টুকু তো তুমি সম্পূর্ণটাই যানো।
আর আমার এই বিষন্ন মনের একমাত্র কারণ আমার বিয়ে।হ্যা,,,আমার বিয়ে আমার ফ্যামিলি আমার চাচাতো বোন জেসির সাথে ঠিক করে রেখেছে।আর আগামী মাসের ২৪ তারিখ ওর সাথে আমার এনগেজমেন্ট।কিন্তু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আয়রা।প্লিজ তুমি শুধু একবার হ্যা বলো।তারপর আমার ফ্যামিলিকে যে করেই হোক মানানোর দায়িত্ব আমার।কিন্তু তোমাকে ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আর যদিও আমি জেসিকে বিয়ে করেও নিই,,,আমি ওকে ভালোবাসতে পারবো না।আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধুই তোমার জন্য।এখন তুমিই বলো,,,কি করবে তুমি???
আমি আদিয়াতের কথা শুনে অবাক হয়নি।বরং চিন্তায় পরে গেলাম।কারণ,,,আমি জানতাম যে আদিয়াত আমার প্রতি উইক।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে ওও আমাকে এমন একটা প্রপোজাল দিবে তা ভাবিনি আমি।এখন আমি কি করবো???
এই ভেবেই আমি ওদের সবার দিকে তাকালাম।ওরা সবাই চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে রাখবে এইটা আমি ভাবলেও ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওরা আমাকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বললো।আমি সেইটা বুঝতে পেরে আদিয়াতকে বললাম যে আমার আজকের রাতটুকু সময় চাই।তো আদিয়াত নিজেও আমাকে বলে তোমার সময় লাগবে তো লাগুক।কিন্তু আমার উত্তর যেন হ্যা হয়।এই আশাতেই রইলাম।এই বলেই আদিয়াত চলে গেলো।
ঐশি:কিরে আয়রু,,,,আমি যেইটা বলেছিলাম সেইটায় হলো তো,,,এইবার বল আমাকে কি ট্রিট দিবি?
আমি:আরে হারামি,,,রাখ তোর ট্রিট।আমি এখন কি করবো সেইটায় তো বুঝতে পারছি নাহ।কি করবো আমি বলে দে তোরা।
আরিয়ান:কি আর করবি,,,রিজেক্ট করবি।(চোখগুলো লাল হয়ে আছে)
আমরা সবাই আরিয়ানের কথা শুনে হা করে ওর দিকে তাকালাম।কারণ,আরিয়ান বেশ শান্ত স্বভাবের আর মিশুক একটা ছেলে।ওকে আমরা অনেক কিছু বলেও রাগাতে পারি না।সেখানে আজ ওর কি হলো যে ওও এতোটা রেগে আছে যাতে ওর চোখগুলো পর্যন্ত লাল হয়ে আছে।
আমি:এই আরশোলা,,কি হয়ছে তোর?তুই এতো রেগে আছিস কেন?
আরিয়ান আর কোনো কিছু না বলেই হনহন করে চলে গেলো।
সাদাফ:কিরে,,,এর আবার কি হলো।যে ছেলেটা এতো শান্ত হয়ে থাকে সেই ছেলেটায় আজ টর্নেডোর মতো করে চলে গেলো।ব্যাপার কি?
ঝিনুক:আমিও তো সেইটায় ভাবছি।(গালে হাত দিয়ে)
আয়মান:বাই এনি চান্স আরিয়ান আয়রাকে পছন্দ করে না তো?(আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে)
আমরা সবাই ওর এই কথাতে চিল্লিয়ে উঠলাম,,,,ওয়াটটটটটটটটটটট
আমি:এই তোর মাথা কি গেছে?ওও আমার খুব ভালো বন্ধু।আর ওও যদি আমাকে পছন্দ করতো তাহলে আমি নিশ্চয় সেইটা বুঝতে পারতাম,,তাইনা?
ইভা:হুম,,সেটায় তো।
আমি:আচ্ছা ওর ব্যাপারে পরে ভাববো।তার আগে তোরা আমাকে এইটা বল যে আমি আদিয়াতকে কি বলবো?
ঐশি:আগে এইটা বল যে তুই কি আদিয়াত ব্রো কে পছন্দ করিস?
আমি:আমি এইটা তো বলতে পারবো না যে ওকে আমি ভালোবাসি কিনা।তবে হ্যা,ওকে আমার ভালো লাগে।এই প্রথম কোনো ছেলের কথায় আমি মুগ্ধ হয়েছি।ওও এতো সুন্দর করে কথা বলে যে ওকে আমার বেশ ভালো লাগে।
সাদাফ:ওরে বাব্বাহ,তুই তো দেখি ডুবে ডুবে অনেকখানি পানি গিলে ফেলেছিস(টিটকারি করে)
আমি একটা চামচ নিয়ে ওর মাথায় বারি দিয়ে বললাম,,,
আমি:শালা শয়তান,একদম ফালতু কথা বলবি নাহ।নয়তো তোকে খুন করে ফেলুম,,,হুহহহহহহ
ঝিনুক:এই না না,,ওর কিছু হলে আমি কি করে থাকবো?
ঝিনুকের কথা শুনে আমরা সবাই ওর দিকে সরু চোখে তাকালাম।আর বেচারা সাদাফ তো বিষম খেয়ে গেছে।
ঝিনুক:এই রেহ,,মুখ ফসকে কি বলে ফেললাম(মনে মনে)
ঝিনুক:না মানে আমাদেররর,মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে ওর কিছু হলে আমরা তো একটা অনেক ভালো ফ্রেন্ড হারিয়ে ফেলবো তাইনা।সে,,সেটায় বলছিলাম আরকি(মেকি হাসি ঝুলিয়ে)
আমরা এখনো ওর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছি।তখনই আমি বলে উঠলাম,,,
আমি:শুধু কি তাই?(ভ্রু নাচিয়ে)
ঝিনুক:হ্যা মানে এছাড়া আর কি হবে?(থতমত খেয়ে)
ইভা:আচ্ছা আমি একটা কথা বলি,,বাকি সব কথা পরে হবে।আগে আমরা আয়রা আর আদিয়াত ভাইয়ার ব্যাপারটা সলভ্ করি।
আয়মান:হ্যা সেইটায় ভালো হবে।
আমি:কি করবো এখন?ফ্যামিলিরও ওও তো একটা ব্যাপার আছে।
সাদাফ:আমি বলি কি তুই যদি ওকে পছন্দ করেই থাকিস তো আমি বলবো হ্যা বলে দে।করণ ভালোবাসা কিন্তু একেবারে নয় বরং ভালোলাগা থেকেই শুরু হয়।আর আদিয়াত ভাইয়াকে বলবি যেন সে তার ফ্যামিলিকে মানিয়ে তোর ফ্যামিলিতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।
ঐশি:আমি সাদাফের সাথে একমত।
ঝিনুক:আমিও একমত।
আয়মান,ইভা:আমিও(একসাথে)
আমি:তার মানে তোরা সবাই সাদাফের সাথে একমত,তাই তো?
সবাই:হুম
আমি:ওকে,,আমারো মনে হয় সাদাফ ঠিকই বলছে।তাই কালকে ওকে আমি হ্যা বলে দিবো।
আয়মান:তাহলে আমাদের “হিটলার কুইন” এর বিয়ে হচ্ছে এইবার(হেসে)
আমি:ধুররর,,,আগে দেখ তো যে আমাদের দুইজনের ফ্যামিলি মেম্বাররা রাজি হবে কিনা(চিন্তিত স্বরে)
ঐশি:আরে চিল ইয়ারররর,,,কিছুই হবে না।সবাই রাজি হবে দেখে নিস।
ঝিনুক:দরকার হলে আমরা সবাইকে রাজি করাবো।
ইভা:আমরা আছি কি করতে,,,সো চিলললল কর তুই
আমি:হুম,সব যেন ভালোই ভালোই মিটে যায়।
সাদাফ:এখন চল আমরা বাসায় যায়।আজ তো আমরা কাউকে বলে আসিনি।আমাদের আম্মুরা টেনশন করবে বেশি দেরি হলে।
আমি:হুম,চল।
এই বলেই আমরা বের হয়ে আসলাম।তারপর যে যার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
কিন্তু আমার কেমন জানি ভয় লাগছে।মনে হচ্ছে সামনে আমার জন্য আরো বড় কোনো ধামাকা অপেক্ষা করছে।কিন্তু কি হতে পারে সেই ধামাকা???

চলবে???

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।