আকাশঃ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে আমার বাবা মা তোকে এত বড় করে তুলেছে। আমি তোকে এত ভালবেসেছি আজ সব কিছুই ভুলে গেছিস? প্রতিদিন কোন না কোন ছেলের সাথে ফস্টিনস্টি করিস কেন রে আমি কোনদিক দিয়ে খারাপ? আর যদি খারাপই হই তাহলে আগে ভালবেসেছিলি কেন? প্রেম করেছিলি কেন? আমাকে নিয়ে খেলা করতে তাই না? আজ সব খেলা শেষ করব আমি, বাসায় চল বোঝাব তোকে।
এদিকে এত জোরে হাত ধরায় মেঘলার ব্যাথা লাগছে কিন্তু আকাশের তা চোখে পরছে না।
মেঘলাঃ আহ আমার লাগছে স্যার ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি। প্লিজ ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি। একমনে আকুতি মিনতি করছে মেঘলা।
কিন্তু আকাশের কানে কিছুই ঢুকছে না সে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘলাকে…..
চলুন দেখে নিই মেঘলা আকাশের কেমিস্ট্রি টা কিমেঘলা যখন ছোট ছিল তখন তাকে কুঁড়িয়ে পেয়েছিল আকাশের বাবা। তারপর থেকে মেঘলা আকাশদের বাড়িতে থাকত।
আকাশরা দুই ভাই কোন বোন নেই তাই আকাশের বাবা মেঘলাকে খুব আদর করেতেন তিনি আদর করে আকাশের নামের সাথে মিলিয়ে মেঘলা নামটা দিয়েছিলেন কিন্তু আকাশের মা মেঘলাকে তেমন পছন্দ করেতেন না। মেঘলা যত বড় হতে লাগল আকাশের মার আপত্তি ততই বাড়তে থাকল তাই ১০ বছর বয়সে আকাশ এর বাবা মেঘলাকে আকাশ এর দাদির কাছে গ্রামে রেখে এসেছিলেন। কিন্তু মেঘলা এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে তাই আকাশের বাবা তাকে আবার শহরে নিয়ে এসে আকাশের কলেজে ভর্তি করে দিয়েছেন। আকাশ মেঘলার চেয়ে অনেক সিনিওর সে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।আর মেঘলা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে।
এখন থেকে মেঘলা আকাশ দের বাড়িতেই থাকবে। আকাশ মেঘলাকে ছোট থেকে চেনে তাদের ছোট বেলায় আকাশ আর মেঘলার মধ্যে খুব মিল ছিল। কিন্তু মেঘলা এখান থেকে চলে যাওয়ায় আর দেখা হয় নি ওদের।আকাশের বাবা(আজাদ সাহেব): রাবেয়া কোথায় গেল দেখে যাও কে এসেছে।
রাবেয়া (আকাশের মা) কে এসেছে?
মিসেস রাবেয়া আসতেই মেঘলা গিয়ে সালাম করলো
রাবেয়া বেগম বেশ বিরক্ত হয়ে বল্লেন
ও মেঘলা? কিন্তু ও এখানে কি করছে?
আজাদ সাহেবঃ আসলে মেঘলা খুব ভাল রেজাল্ট করে পাস করেছে তাই ভাবছি এখানেই ভাল কোন কলেজে ভর্তি করে দিব।
রাবেয়াঃ মানে কি ও কি এখানে থাকবে নাকি?
আজাদ সাহেবঃ হ্যা থাকবে।
রাবেয়া বেগমঃ অসম্ভব…. তুমি তো জানো আমার এসব প্যারা ভাল লাগে না, কখন কিভাবে ফাসিয়ে দিবে বলা যায় না এসব মেয়েদের কোন বিশ্বাস নেই।
আজাদ সাহেবঃ চুপ করো রাবেয়া কিসব যাতা বলছো। আজাদ সাহেব বোঝলেন মেঘলার মন খারাপ হয়েছে তাই বল্লেন এখন তো বাসায় আরিফ আর আরিফ এর বউ নেই আসলে পরিচয় করিয়ে দিব এখন যা মা আকাশের সাথে দেখা করে আয়। ছোট বেলায় কত খেলেছিস। অনেক দিন হয় দেখা হয়নি তোদের। যা দেখা করে আয় আর কারো কথা কানে নিবি না আমি যখন বলছি তুই থাকবি তখন তুই এখানেই থাকবি বলে আজাদ সাহেব মেঘলা কে উপড়ে পাঠিয়ে দিলেন।
মেঘলার কিছুটা মন খারাপ নিয়ে আকাশের ঘরে গেল। কিন্তু এতদিন পর পুরুনো বন্ধুর সাথে দেখা হবে তাই কিছুটা খুশি নিয়ে ঘরে ঢুকল
কিন্তু ঘরে কাউকে না দেখে বেরিয়ে যেতে চাইল মেঘলা তখনি পিছন থেকে একজন বলে উঠল কে আপনি? আমার ঘরে কি করছেন?
মেঘলা পিছন ফিড়ে চমকে উঠল ধবধবে ফর্সা ,হাইট পারফেক্ট,ছোট ছোট চুল,খোচাখোচা দাড়ি স্টাইল করে সাইজ করা, এককানে দুল পড়া একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। মেঘলা তার দিক থেকে চোখ ফিরাতে পাড়ছে না। মনে মনে ভাবছে এত সুন্দর ছেলেও হয়? একেই বোধয় বলে ক্রাস খাওয়া।
আকাশ মেঘলার ধ্যান ভাংগিয়ে বলল কিছু জিজ্ঞাসা করছি আপনাকে?
মেঘলাঃ আপনি আকাশ ভাইয়া তাইনা?
আকাশঃ প্রথম টুকু ঠিক ছিল পড়ের টা বলতে পাড়ছি না কে আগে পরিচয় দিন
মেঘলাঃ আমি মেঘলা ভাইয়া মনে নেই কত খেলতাম ছোট বেলায়।
আকাশ সাথে সাথে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল আমি তোর ভাই কবে হলাম আর তুই পারমিশন ছাড়া আমার ঘরে ঢুকেছিস কেন?
মেঘলা পুরোই অবাক হয়ে গেল এতদিন পর দেখা হল আর উনি আমায় মারলেন।
মেঘলা গালে হাত দিয়ে বলল সরি ভাইয়া আর আসব না বলে যেই বাইরে যেতে লাগল তখনি আকাশ মেঘলার হাত ধরে ফেলল।
মেঘলা বোকার মত তাকিয়ে আছে
আকাশঃ আবার ভাই বল্লি কেন মারব নাকি আবার একটা থাপ্পড়?
মেঘলাঃ কি ডাকব….???
আকাশ ডাকবি।
মেঘলাঃ আপনি তো আমার চেয়ে বড়।
আকাশ রেগে গিয়ে বলল তাহলে স্যার বলে ডাকবি।
মেঘলাঃ আচ্ছা।
আকাশঃ তুই এখানে হটাৎ কি মনে করে?
মেঘলাঃ কলেজে ভর্তি হতে এসেছি।
আকাশঃ বাহ ভাল। আচ্ছা যা এবার আর শোন হুটহাট আমার ঘরে আসবি না কেমন? আসার আগে আমার কাছে জিজ্ঞাস করবি ঠিক আছে।
মেঘলা মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক উত্তর দিয়ে বলল আপনি অনেক বদলে গেছেন।
আকাশ রাগি চোখে তাকাতেই মেঘলা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
আকাশঃ বাহ বেশ সুন্দরী হয়েছে তো দেখতে। কিন্তু ওর এই বাসায় আসাটা উচিত হয় নি।(মনে মনে)
এভাবেই এই বাসায় দিন কাটছে মেঘলার। আকাশদের বাড়িতে একমাত্র আকাশের বাবাই মেঘলাকে আদর করে।
আকাশের মা,আকাশের ভাবি,আকাশের ভাই কেউ এই তেমন পছন্দ করে না তাকে কিন্তু বিনে পয়সায় যেহেতু কাজের মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে তাই বাসায় রেখেছে।
আর আকাশ তো মেঘলাকে প্রথম দিনেই থাপ্পড় মেরেছিল শুধু ওকে ভাইয়া বলে ডেকেছিল বলে। আকাশ স্পষ্ট বলে দিয়েছে তাকে স্যার ডাকতে হবে। আকাশ এমনেতেও কিছুটা রগচটা স্বভাবের কারো সাথেই তেমন কথাবার্তা বলে না। আকাশ দেখতে অসম্ভব স্মার্ট কলেজের অনেকের স্বপ্নের নায়ক সে তাই একটু ভাব নিয়ে থাকে।
মেঘলার সাথে কেউ ঠিকমত কথা পর্যন্ত বলে না তারপরেও মেঘলা সবাইকে খুশি করার আপ্রান চেষ্টা করে। কিন্তু কোন লাভ নেই আরিফ আর আরিফের বউ তো মেঘলাকে সারাদিন কাজ করায় আর আকাশ সেদিনের পর মেঘলার সাথে কোন কথা বলে নি।
তবুও আকাশ কে মেঘলার ভাল লাগে। সে যখন সেজেগুজে বাইরে যায় মেঘলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।
আকাশ আর আগের মত নেই সেটা মানতে নারাজ মেঘলা তার মনে হয় আকাশ আগের মতই আছে যে কিনা মেঘলাকে সবসময় আগলে রাখত।
আজ মেঘলার কলেজের প্রথম দিন তাই আকাশের বাবা আকাশ কে বল্লেন,
তুমি যেহেতু একই কলেজে পড়ো তাই আমি চাই তুমি মেঘলাকে কলেজে নিয়ে যাও আর কলেজটা ভাল করে চিনিয়ে দাও।
আকাশ রেগে গিয়ে বলল কি বলছো এসব আমি কোন মেয়েকে নিয়ে কলেজে যাব? তাও এমন গাইয়া একটা মেয়েকে? কিভাবে সম্ভব? আমি পারব না বাবা। আর শহরে কি কলেজের অভাব পড়ছিল যে ওকে আমার কলেজেই ভর্তি করতে হল। ওকে আমি চিনি এটা কেউ জানলে আমার মানসম্মান থাকবে না বাবা।
আকাশের বাবাঃ চুপ করো মানুষকে সম্মান করতে শিখো। ভুলে যেও না ও একজন ব্রিলিয়ান্ট সুডেন্ট।
আমি যা বল্লাম তাই করবা।
এবার তিনি মেঘলাকে বলল যা মা তুই রেডি হয়ে আয়।
মেঘলার ইচ্ছা করছে বলতে, সে আকাশের সাথে যাবে না কিন্ত সে শহরের কিছুই চিনে না তাই একা যেতে পাড়বে না আর আজাদ সাহেবের মুখের উপড় কথাও বলতে পাড়বে না তাই সে রেডি হতে গেল।
মেঘলা নীল জামা পড়েছে সাথে একহাতে কয়েকটা নীল চুড়ি এক হাতে ঘরি,কানে ম্যাচিং ঝুমকা ঘন চুল গুলি খোলে দিয়েছে, চোখে গাঢ় কাজল টেনে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক পড়েছে। মেঘলাকে দেখতে নীলপড়ি নীলাঞ্জনার মত লাগছে যার মাঝে অনায়াসে ডুব দেওয়া যায়।
আকাশের সেদিকে তাকানোর সময় নেই ফোন টিপতে টিপতে বলল চল।
মেঘলাও পিছু পিছু গেল বাইকের পিছনে বসেছে মেঘলা। সে আকাশ এর চেয়ে বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছে। হটাৎ আকাশ বাইক থামিয়ে বলল নাম।
মেঘলা অবাক হয়ে বলল এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছি?
আকাশঃ না কিছু কাজ আছে তাই নামতে বলছি। মেঘলা কথা না বাড়িয়ে নেমে দাঁড়াল।
আকাশ রাস্তার পাশের ট্যাপ কল দেখিয়ে বলল যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
মেঘলাঃ মানে….
আকাশঃ মানে হল এমন সং সেজে থাকলে আমি তোকে নিয়ে যাব না। এবার তোর ইচ্ছা এসব মুছবি নাকি আমি চলে যাব?
মেঘলা বোঝল কথা বল্লে এখানে রেখেই চলে যাবে
তাই মুখ ধুয়ে কাজল আর লিপস্টিক মুছে নিল।
তারপ্র আকাশ আবার বলল চুল বাঁধ,চুড়ি খোল সাথে কানের দুলটাও
মেঘলা অবাক হয়ে বলল কেন?
আকাশঃ কলেজে যাচ্ছিস সিনেমা করতে নয় তাই।
মেঘলা সব খুলে ফেলল সাথে কোন ব্যাগ না থাকায় রাস্তাতেই এগুলো ফেলে দিতে বাধ্য হল তারপর যখন বাইকে উটতে গেল।
আকাশ কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল ওই যে দেখছিস স্টপেজ একটু পড়েই বাস আসবে কন্ট্রাক্টর কে বলবি কলেজের সামনে নামিয়ে দিতে তাহলেই নামিয়ে দিবে।
মেঘলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টাকা গুলি হাতে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চোখের পলকেই চলে গেল আকাশ।
মেঘলা শহরে একেবারে নতুন। কিছুই চিনে না আর একা একা বাসেও উঠে নি কখনো তাই তার ভয় করছে কিন্তু অসহায় এর মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া আপাতত তার আর কিছুই করার নেই।