ক্লাস শেষ হলো বিকেল পাঁচটায়। সৌধর হাবভাব ভালো ঠেকেনি নিধির৷ একদম স্যারের পিছু পিছু বেরিয়েছে সে৷ কিন্তু বিপদ ঘটল অর্পণ স্যারকে দেখে। আটাশ বছর বয়সী যুবক অর্পণ। তাকে এই মেডিকেল কলেজের হার্টথ্রবও বলা হয়। যার প্রতি অন্যান্যদের মতো নিধিও দারুণ মোহিত। বর্তমানে স্টুডেন্ট’সদের মধ্যেও একজন হার্টথ্রব রয়েছে। যার নাম সৌধ চৌধুরী।
নিজের ভেজা দুটো টিশার্ট ছাদে টাঙানো রশিতে মেলে দিল সুহাস। ভেজা চুলে হাত নেড়ে পানি ঝেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে। সদ্য গোসল করা সুহাসকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। তার লোমহীন ধবধবে ফরসা বুকটাও আকর্ষণীয়। পাশের বাড়ির ছাদে চৌদ্দ, পনেরো বছর বয়সী এক কিশোরী। কাপড় নাড়ার পাশাপাশি লক্ষ্য করছিল সুহাসকে৷
বিকেল পাঁচটা বেজে ঊনত্রিশ মিনিট৷ ফোনের রিংটোনে সহসা ঘুম ছুটে গেল সৌধর। স্ক্রিনে ‘ নিধি ‘ নামটুকু দেখেই বুক ধক করে ওঠল। সেদিন অল্প কথা-কাটাকাটি হওয়াতে নিধি তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। ওর রাগ ভাঙানোর সুযোগ হয়নি আর। রাগ না ভাঙাতেই মেয়েটা কল করেছে! বিশ্বাস করতে পারছিল না।
রান্না শেষে ঘেমে-নেয়ে একাকার নামী। এমতাবস্থায় খেতে বসা সম্ভব না। তাই সকলকে বলল, খেয়ে নিতে। সে গোসল সেরে খাবে। সৌধ বাঁধ সেধে বলল, ‘ এতক্ষণ যাবৎ পরিশ্রম করলে। আর তোমায় ছাড়া আমরা খেয়ে নিব? এ তো হয় না বোন। ‘ সৌধর মুখে বোন শব্দটি শুনে আপ্লুত হলো নামী।
প্রতি খুবই অবাক হলো সুহাস৷ সে তো এটা বলতে চায়নি। খেলার শর্ত মেনে নামীকে আই লাভ ইউ’ই বলতে চাচ্ছিল৷ তাহলে কী করে আই হেইট ইউ বলে ফেলল! ভালোবাসি বলতে গিয়ে ঘৃণা করি বলে ফেলল কেন? এসব ভাবনার ভীড়ে নামীর ঝাপসা চোখ, গাল বেয়ে পড়া অশ্রু নজর এড়াল না।
সুহাস নামীকে একঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিল নিধি৷ এরপর প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে সৌধ, আইয়াজ আর ফারাহর সঙ্গে খুঁড়িয়ে নিচে চলে এলো। তাকে সাহায্য করল সৌধ। সুহাস, নামীর মধ্য স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। বদ্ধঘরে এবার দু’জন মা’রামারি করুক, কা’টাকা’টি করুক। বা প্রেম, ভালোবাসায় হাবুডুবু খাক। এটা সম্পূর্ণ ওদের ব্যাপার।
সুহাস, নামী এক সঙ্গে এক রাত বদ্ধ ঘরে থাকা মানে ভয়াবহ সুনামি ঘটবেই ঘটবে। এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল বন্ধুরা। কিন্তু সেই সুনামির পরিণাম যে সুহাসকে এভাবে বদলাতে শুরু করবে ভাবতে পারেনি ওরা। ভাবতে পারেনি স্বয়ং নামীও। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে সেদিনের পর সুহাস আর নামীর পেছনে লাগেনি৷
লিভিং রুম থেকে গিটারের শব্দ ভেসে আসছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসা সিমরান সে শব্দ শুনেই লাফিয়ে ওঠে বলল, ‘ ও মাই গড! সৌধ ভাই গিটার বাজাচ্ছে! ‘ নামী ওর চুল আঁচড়ে দিচ্ছিল। আকস্মিক লাফিয়ে ওঠায় ভয় পেয়ে গেল সে। শুনেছিল সুহাস, সৌধ দুজনই দারুণ গিটার বাজাতে পারে। গানের গলাও অসাধারণ।
ঠোঁটের কোণা বেয়ে পড়া রক্ত টুকু তর্জনীতে মুছে নিল নামী৷ মুছে নিল গাল বেয়ে পড়া অশ্রুটুকুও৷ এরপর নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করে নিয়ে দৃঢ় গলায় বলল, ‘ মিসেস উদয়িনী, অনেক বলেছেন আপনি। এবার আপনার শোনার পালা। ‘ চমকে গেল উদয়িনী। হতভম্ব মুখে তাকিয়ে রইল নামীর বিধ্বস্ত মুখপানে।
সৌধর গাড়ি এসে থামল সদর হাসপাতালের সামনে। সুহাস ত্বরিত গাড়ি থেকে নেমে দৌড় লাগাল৷ সৌধ মুখে মাস্ক পরে অপেক্ষা করতে লাগল ওদের ফিরে আসার৷ সে নিজে আর নামল না৷ দেখা গেল কেউ চিনে ফেললে বাবা, ভাইকে জানিয়ে দেবে। আর তারা রাগারাগি করবে একা একা বের হওয়ায়।