বিয়ে বাড়ির আমেজ এক নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে গেল। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। কাছের অতিথিবৃন্দের মধ্যে অনেকেই উপস্থিত আছে। তাই সুজা চৌধুরীর ব্যক্তিগত মিটিং রুমে নেয়া হলো সৌধ, নিধিকে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সৌধর মা আর দাদুনিকে রাখা হয়েছে৷ বন্ধুদের মধ্যে রাখা হলো শুধু সুহাস, আইয়াজকে। ছোটোবেলা থেকেই সৌধ ভীষণ শান্ত প্রকৃতির হলেও জেদটা মারাত্মক।
ভালোবাসা ভালো কিন্তু ভালোবাসায় অন্ধত্ব বোকামি। সৌধর মতো শক্ত ব্যক্তিত্বের পুরুষটাও দিনশেষে হেরে গেল। সত্যিই কি হারল? খাঁটি প্রণয়ে কি হার শব্দটি জড়ায় কখনো? নাকি এই হারটাই একদিন বিস্ময়কর জয়ে পরিণত হবে? সৌধ কি সত্যি হেরে যাওয়ার মতো ছেলে? দিনশেষে আসলে হারল কে?
প্রিয় মানুষের মৃত্যু শোকও একসময় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব৷ কিন্তু চোখের সামনে তাকে অন্যকারো হয়ে যাওয়ার শোক কাটানো অসম্ভব। এই শোক এতটাই দৃঢ় যে আজন্মকাল থেকে যায়। প্রকৃতির নিয়মে মানুষ হারালে হৃদয় ব্যথিত হয় ঠিকি কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষ হারালে তা হয় দুর্বিষহ যন্ত্রণার। কেটে গেছে তিন রাত তিন দিন।
ঘুম পাগলী মেয়েটা হঠাৎ ঘুম বিমুখ হয়ে পড়েছে৷ রাত যত বাড়ে বুকের বা’পাশের চিনচিনে ব্যথাটুকু ততই তীব্র হয়৷ বক্ষঃস্থল জুড়ে আশ্চর্যজনক এক অশান্তি বইতে থাকে সর্বক্ষণ। যে অশান্তি তাকে না ঘুমোতে দেয় আর না প্রত্যাহিক জীবনের কোনো কাজে মন বসাতে দেয়। মন কেবল ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে ওঠে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটি আফসোসে।
ইতঃপূর্বে ফারাহর যত বিয়ে এসেছে সব ফিরিয়ে দিয়েছে নজরুল মিঞা। কিন্তু এবার সরাসরি ফিরিয়ে দিতে অক্ষম। কারণ এবার তার সামনে চৌধুরী বাড়ির দুই ছেলে উপস্থিত। যার মধ্যে একজন অর্থাৎ সুলল চৌধুরী তুখোড় রাজনীতিবিদ। তাই নানারকম জটিলতা দেখাতে শুরু করলেন।
সুগন্ধা পয়েন্টে তিনটে কাপল রুম ভাড়া করেছে সৌধ। যার দু’টিতে কাপল থাকলেও একটিতে সে একা থাকবে৷ বিষয়টা মজার নাকি আফসোসের? আফসোসের হওয়ার কথা থাকলেও মনের ওপর জোর প্রয়োগ করে মজার হিসেবেই নিল। বিলাসবহুল হোটেল রুমে বিরহ যন্ত্রণা বুকে পুষে কাটিয়ে দিল শেষরাত। সূর্যোদয়ের সময় গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল বিচের উদ্দেশ্যে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে ডিভান ফাঁকা দেখল আইয়াজ। নিমেষে ভ্রূদ্বয় কুঁচকে বিছানায় তাকাল। ফারাহর অবস্থা একই৷ মেয়েটা এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কুঁচকে যাওয়া ভ্রূদ্বয় ধীরেধীরে স্বাভাবিক করে নিল সে। নিশ্চয়ই কোনো জরুরি প্রয়োজনে সৌধ বেরিয়ে গেছে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেল পোশাক বের করতে।
মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে ফোন কেটে দিল সুহাস। তার রাগের মাত্রা দেখে নামীর বুকে ধুকপুক শুরু হলো। এতক্ষণ সুহাস কথা বলছিল আর সে পাশে বসে সমস্ত কথা শোনার এবং বোঝার চেষ্টা করছিল। যতটুকু বুঝল সিমরানকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল। এটা নিয়েই অশান্তি করেছে সিমরান। অশান্তির মাত্রা কতখানি টের পেল নামী।
গভীর নিস্তব্ধ রজনী। স্পষ্ট সমুদ্রের গর্জন শুনা যাচ্ছে। চারদিক থেকে শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে কয়েকটা মানব শরীর। পাতলা ফিনফিনে শাড়ি পরিহিত রমণী হিম বাতাসে থেকে থেকে শিউরে ওঠছে। শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে পড়ছে তার৷ পাশে দাঁড়িয়ে আছে রমণীটির অর্ধাঙ্গ। বউয়ের নাজুক অবস্থা দেখে লম্বাটে দেহখানা গা ঘেঁষে দাঁড়াল।
আজ সকালে সূর্যের দেখা মেলেনি। থেকে থেকে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে৷ প্রকৃতি অবসাদগ্রস্ত। সেই অবসাদ গ্রাস করে নিয়েছে সিমরানকেও। দু’পায়ে এখনো ব্যান্ডেজ মেয়েটার। কান্নাকাটি করে ফর্সা মুখ লালচে বর্ণে পরিণত হয়েছে। চোখ দু’টোও ফুলে আছে ভীষণ। সময় সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট৷ মেয়ের ঘুম ভেঙেছে, উদয়িনী টের পেয়েছে ব্লুটুথ স্পিকারে গান শুনে।