নিধি চমৎকার একটি মেয়ে৷ প্রবল আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একজন নারী৷ ওর সম্পর্কে বিয়ের আগে এমনই ধারণা ছিল অর্পণের৷ বিয়ের পর সেই ধারণায় চিড় ধরতে শুরু করলেও ধারণাটি পুরোপুরি
মিথ্যে প্রমাণিত হয়নি৷ কিছু ভুল, মানসিক দ্বন্দ্ব মেয়েটাকে গুলিয়ে ফেলেছিল৷ আঘাত এনেছিল ব্যক্তিত্বে৷ যা নিয়ে সংশয়ে ছিল অর্পণ। আজ সে সংশয় পুরোপুরি কেটে গেছে৷ বিয়ের পর তারা দু’জন সুখী দম্পতি হতে পারেনি৷ কিন্তু আজ তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে ছেলে এবং ছেলের মাকে নিয়ে সুখের একটি পরিবার গড়ে তুলতে পারবে৷
সকালবেলা নিধির আবদারে ওকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিল অর্পণ। রাত হয়ে যাওয়াতে আর বাসায় ফেরেনি৷ কাছাকাছি একটি রিসোর্টে ওঠেছে৷ রাতের খাবার খেয়ে ওরা এখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।অনেকক্ষণ ধরে কান্না করছে অনিরূপ৷ বুকে আগলে ঘরজুড়ে পায়চারি করেও ছেলের কান্না থামাতে পারছে না নিধি। অর্পণ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে। মোবাইলের স্ক্রিনে গভীর মনোযোগ রেখেছে সে। আধঘন্টা আগে সৌধ চৌধুরীর আইডি থেকে গট ম্যারেড স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। সাইয়্যারা সিমরান আইডিতে ট্যাগ করার ফলশ্রুতিতে স্ট্যাটাসটি তার নিউজফিডেও ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ সিমরান তার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে রয়েছে। বুকভরে স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ছাড়ল অর্পণ। ঠিক কতদিন পর এমন একটি নিঃশ্বাস বেরুলো তার বুক চিড়ে? জানা নেই। সে শুধু জানে, অনেকটা রিলিফ ফিল করছে আজ৷ ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এসে ফোন রেখে নিধির দিকে তাকাল সে। নিধি বাচ্চার কান্না থামাতে মহাব্যস্ত৷ যেন জগতের অন্য কিছুতে এখন ধ্যান নেই তার। যা অর্পণের অনুভূতিকে দ্বিগুণ আনন্দিত করল। আজ সৌধ বিয়ে করে নিজেকে সম্পূর্ণ লিখে দিয়েছে অন্য কারো নামে৷ সেই অন্য কারো সাথেই হয়তো এখন বাসরে বিভোর রয়েছে। তার জীবনে নিধির কোনো অস্তিত্ব নেই। পরোক্ষণেই শুধরালো। যদিও থাকে তা শুধুই বন্ধুত্ব৷ বন্ধুত্বের বাইরে আর কিছু থাকতে পারে না৷ সৌধ যে ধরনের ছেলে তাতে করে বউ ব্যতীত অন্য কোনো, স্পেশালি পরের বউ নিয়ে সে এর বাইরে কিছু মনে রাখার কথা নয়৷ আর নিধি? স্বামী, সন্তান নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেরিয়ে রাতে সন্তান নিয়ে ব্যস্ততায় কাটাচ্ছে। ওর মনে কি সৌধর চিন্তা একবারো এসেছে? যদিও বা আসে এ মুহুর্তে সেটা কি ধোঁয়াশা নয়? বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল অর্পণ। এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
‘ আমি দেখছি। ‘
নিধি যেন একটু স্বস্তি পেল। বাবার কোলে দীর্ঘক্ষণ থাকার পর ঘুমিয়ে গেল অনিরূপ৷ নিধি ছেলে ঘুমানোর বিছানা করে দিয়ে বলল,
‘ ঘুমিয়ে গেছে। নিয়ে আসুন। ‘
ছেলেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বুকে আলতো চাপড় দিতে লাগল অর্পণ। এরপর অপলকে ছেলের নিষ্পাপ মুখে তাকিয়ে কপালে ছোট্ট করে চুমু এঁকে দিল। বাবা, ছেলের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিল নিধি৷ খেয়াল করে স্মিত হাসল অর্পণ। বলল,
‘ ও কার মতো দেখতে হয়েছে বলো তো? ‘
ভ্রু কুঁচকে ফেলল নিধি। ছেলের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত কণ্ঠে বলল,
‘ পেটে রেখেছি আমি৷ কিন্তু হয়েছে আপনার মতো। ‘
বিস্তৃত এক হাসি দিল অর্পণ। বলল,
‘ ডেফিনেটলি, আমারি তো ছেলে। এছাড়া ও আরো একজনের মতো দেখতে জানো সে কে? ‘
জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল নিধি। অর্পণ পূর্বের হাসি অব্যাহত রেখে বলল,
‘ আমার বাবার মতো। খুব ছোটোবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। অনিকে পেয়ে আমার সেই শূন্যতা পূরণ হয়ে গেছে৷ স্পেশাল থ্যাংকস টু ইউ নিধি। ‘
কথাটা বলেই ছেলের বাম পাশে শুয়ে পড়ল৷ নিধি শুয়েছে ডান পাশে৷ হঠাৎ তার মনে হলো, আজকের জন্য অর্পণকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি৷ এত সুন্দর দিন উপহার দেয়ার জন্য একটা ধন্যবাদ উনার প্রাপ্য। ভেবেই সহজ, স্বাভাবিক স্বরে বলল,
‘ ধন্যবাদ আজকের সুন্দর দিনটার জন্য। ‘
সহসা তাকাল অর্পণ। পুলকিত হৃদয়ে বলল,
‘ থ্যাংকসের প্রয়োজন নেই। অনির মা হ্যাপি থাকলেই আমি হ্যাপি। ‘
চকিতে তাকাল নিধি। ঠোঁটে আঁকল মৃদুময় হাসি৷ যে তাকানো আর হাসিতে বিমুগ্ধ হয়ে অর্পণ ইশারা করল, কাছে আসতে৷ নিধি অবাক হয়ে মুখ এগুতেই সন্তর্পণে ওর ললাটে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো অর্পণ। শীতল গলায় বলল,
‘ আজ থেকে আমাদের নতুনভাবে পথচলা শুরু। ‘
দৃষ্টি সরিয়ে নিল নিধি৷ চোখ বুজে অনুভব করার চেষ্টা করল অর্পণকে। পারল না বোধহয়। টলমল দৃষ্টিতে চোখ খুলল ফের। অর্পণ সে দৃষ্টি দেখে যা বোঝার বুঝে শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি নিধি। আর আমি জানি একটু দেরি হলেও তুমি সে ভালোবাসা অনুভব করতে পারবে৷ আমাদের বন্ধন ঠুনকো নয়। আমরা সৃষ্টিকর্তার ইশারাতে এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। একটু সবুর করো। ধৈর্য্যহারা হইয়ো না৷ নিজেকে তো ঘৃণা করোই না৷ তুমি ঠিক আছো প্রপারলি ঠিক আছো। আমরা সবাই মানুষ। আমাদের মন নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যায়৷ খুবই স্বাভাবিক। আই রেসপেক্ট ইউ এণ্ড ইউর ফিলিংস। ‘
জড়সড় হয়ে শুয়ে রইল নিধি৷ অর্পণ ওকে মানসিক সাপোর্ট দিতে কাছে টেনে নিল৷ সন্তান এবং স্ত্রীকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে রাখল। নিধি অনুভব করল, অর্পণের একটি হাত নিগূঢ় ভরসার সাথে ওর মাথায় বুলিয়ে চলেছে। নিমেষে তার বিবেক বলে ওঠল, যে পুরুষ বুকে টেনে আশ্রয় দিচ্ছে, মাথায় হাত বুলিয়ে প্রবোদদান করছে সে পুরুষকে অনুভব না করা অন্যায়। ভালো না বাসা পাপ৷ দু-চোখ বেয়ে নোনাপানির ধারা নামল নিধির৷ যা বুঝতে দিল না অর্পণকে। দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে অর্পণ অনুভব করল, নিধি হাত বাড়িয়ে আঁকড়ে ধরেছে তাকে। যা তার সমস্ত সত্তায় শিহরণ জাগিয়ে তুলল।
.
.
দু’দিনের আনুষ্ঠানিকতায় এত বেশি চাপ গেছে যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ফারাহ৷ অথচ আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি ঘটেনি৷ সমাপ্তি ঘটবে আগামীকাল। তারা ফিরে যাবে পরশুদিন। স্বামী, স্ত্রী হিসেবে আইয়াজ, ফারাহ একদম নিখুঁত। পৃথিবীতে এমন দম্পতি বিরল৷ দু’জন ভীষণ মেধাবী আর এস্টাব্লিশড
হলেও খুবই সহজ ব্যক্তিত্ব পোষণ করে। ওদের দু’জনের মানসিকতা এত বেশি ইতিবাচক যে দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকা সহজ হয়ে গেছে। যদিও ফারাহ অনেক বেশি অভিমানি৷ তবে সে অভিমান আইয়াজের গভীর প্রণয়ে গলে যেতে বাধ্য। কোনো বিষয় নিয়ে সাময়িক অভিমান করলেও খুব সহজে মেনে যায় ফারাহ। আর আইয়াজ তাকে মাঝেসাঝে রাগতে দেখা গেলেও কঠিন রাগ দেখেনি ফারাহ। যা দেখেছে টুকটাক। সবচেয়ে বেশি দেখেছে মাথাভর্তি জ্ঞানবুদ্ধি আর বুকভর্তি আকাশের মতো বিশাল ভালোবাসা। আর চশমার আড়ালে থাকা চোখদুটোতে নিজের প্রতি ভয়াবহ আসক্তি। ভীষণ ভালোবাসাময় আর যত্নশীল স্বামী পেয়ে নিজেকে ক্ষণে ক্ষণে সৌভাগ্যবতী অনুভব করে ফারাহ৷ আর সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা জানায়, তার এই সুখে, এই প্রেমে, ভালোবাসায় কারো নজর না লাগুক।
পা দু’টোতে ভীষণ ব্যথা করছিল ফারাহ৷ যা নিয়ে একটু আগে কেঁদেছেও৷ তার কান্না সহ্য করার মতো শক্তি আইয়াজের নেই৷ তাই তো চোখ দু’টো লাল করে, মুখ ভার নিয়ে পায়ে মলম লাগিয়ে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে আরাম পেল ফারাহ৷ গোমরা হয়ে থাকা বরটার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ শুনছ ব্যথা কমে গেছে৷ কাছে এসো এখন। ‘
আইয়াজের মাঝে কোনো ভাবান্তর হলো না৷ সে তার কাজেই মগ্ন এমন সময় ফারাহ জোরপূর্বক পা দু’টো সরিয়ে নিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলল,
‘ কেমন স্বামী তুমি? শুধু পা ব্যথাই সারাচ্ছ। এদিকে যে বুকে ব্যথা মনে যন্ত্রণা সেগুলোর কী হবে? ‘
হতভম্ব হয়ে গেল আইয়াজ। কাছে এসে বলল,
‘ এত দুষ্টুমি কে শেখালো তোমাকে? ‘
চট করে আইয়াজের গলা জড়িয়ে ধরে ফারাহ বলল,
‘ যাদের বর অনেক বেশি ইনোসেন্ট তাদের একটু দুষ্টু হতেই হয়। ‘
ঠোঁট কামড়ে হাসল আইয়াজ৷ ফারাহ যত্ন সহকারে ওর চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিল। আইয়াজ ততক্ষণে গভীরভাবে জড়িয়ে নিয়েছে বউকে। ভালোবাসার গভীর ছোঁয়াতে টালমাটাল হতে শুরু করেছে ফারাহ। একটি উষ্ণ রাত। দেহশ্রীতে অজস্র উন্মত্ত স্পর্শ। দু’টি হৃদয়ে প্রবল প্রেম তরঙ্গ সৃষ্টিতে বিভোর।
.
.
সৌধর কণ্ঠে গান শুনতে ভালোবাসে সিমরান। আজ তাদের বিশেষ রাতে বিশেষ মুহুর্ত উপহার দিল সৌধ। যা সিমরান তার গভীর ভালোবাসা আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দ্বারা অর্জন করে নিয়েছে। গান শেষে যথাস্থানে গিটার রেখে ফিরে এলো সৌধ। সিমরান মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে তার স্বপ্ন পুরুষকে। যে সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে জীবনে৷ যার সাথে আজ তার প্রথমবার এক ঘরে, এক বিছানায় রাত্রি যাপন৷ বুকের ভেতর সুক্ষ্ম এক বেদনা অনুভব করল। এই বেদনায় কষ্ট নয় মিশে আছে অজস্র সুখ। পলক তাকিয়ে থাকা সিমরানের চোখে তাকাল সৌধ। মৃদু কেশে ভারিক্কি গলায় বলল,
‘ রাত বাড়ছে। বাকি দু’টো চাওয়া ঝটপট বলে ফেল।’
চমকে দৃষ্টি ঘোর কাটাল সিমরান৷ ত্বরিত আরক্ত মুখশ্রী ঘুরিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ল। সৌধ ভড়কে গেল ওর লজ্জা দেখে। এত অল্পতে লজ্জা পাওয়া রমণী দেখে অভ্যস্ত নয় সে। দেখবেই বা কাকে? তেমন কোনো নারীর সংস্পর্শে যাওয়াই তো হয়নি। বন্ধু, বান্ধব ছাড়া জুনিয়র কারো সঙ্গে স্পেশালি জুনিয়র মেয়েদের সঙ্গে তার কোনোকালেই সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। এসবে পটু ছিল সুহাস৷ সে নয়৷ বান্ধবীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ছিল ওই প্রাচী, নিধিই। যারা এত অল্পতে লজ্জা পেতো না। নিধি সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ছুঁয়ে দিলেই ওর লাজুক মুখ দেখেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সৌধ। কিঞ্চিৎ মেজাজ খারাপ হলো। সে এখন বউয়ের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাচ্ছে। আজকের রাত, এই সময় এবং সে এখন পুরোপুরিই সিনুর৷ নাহ ভুল হলো শুধু আজকের রাত, আজকের সময় নয়। আজকের পর থেকে তার জীবনের প্রতিটি সময়ই সিনুর জন্য বরাদ্দ। নেভি ব্লু রঙের শাড়ি পরিহিত সিমরানের পানে এবার সে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ওর এই লজ্জাশীলতা তার কাছে নতুন। সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর আরক্ত মুখ, তীব্র লজ্জায় ভারিক্কি নিঃশ্বাস সবকিছুতেই নতুনত্বের স্বাদ৷ যা তার পৌরুষেয় অনুভূতিতে শিহরণ জাগালো। টের পেল, সিমরানের প্রতি সে অন্যরকম টান অনুভব করছে৷ প্রকৃতপক্ষে এই টান স্বাভাবিক। কিন্তু সে মানতে নারাজ। কারণ তার ভেতরের শক্তিশালী এক সত্তা জানে এই টানে ভালোবাসা নেই। আছে সুপ্ত থাকা সেই পৌরুষ চাহিদা। সহসা মৃদু কেঁপে ওঠল সৌধ। নিজেকে কঠিন খোলসে আবৃত করে নিল ত্বরিত। ভাবল চুম্বকের ধর্মই আকর্ষণ করা। সিনু তার বউ হয়ে চুম্বকের ধর্ম পালন করছে। সে কোনো সাধারণ লোহা নয় যে এত সহজেই বিকর্ষণ করবে। সে সেই লোহা যে শুধু দৈহিক নয় হৃদয়গত ভাবে টান অনুভব না করা পর্যন্ত বউয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবে না। অর্থাৎ সিমরান নামক চুম্বকে সে নামক লোহা ততক্ষণ আটকাবে না যতক্ষণ না মনের গহিন বন থেকে প্রগাঢ় ভালোবাসা অনুভব করছে। যা তার প্রথম ভালোবাসাকে পরাস্ত করতে সক্ষম হবে। সিমরানের পানে দৃষ্টি অটল রেখেই একপেশে হাসল সৌধ। বিরবির করে বলল,
‘ পরাস্ত তো হয়েই গেছে। মেয়েটা আমাকে জয় করে নিয়েছে। সৃষ্টিকর্তার লিখিত নিয়মের ঊর্ধ্বে যেতে পারিনি আমি। কঠিন বন্ধনে, ভয়াবহ মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেছি। ‘
ঘার ফেরালো সিমরান। এখন অনেকটায় শান্ত। স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। যেন বিরবির করে বলা কথাগুলো শুনতে পেয়েছে। সত্যি শুনেছে কিনা নিশ্চিত হতে পারল না সৌধ। ঘড়ির কাঁটায় সময় একটা ছুঁই ছুঁই। বেশ রাত হয়ে গেছে। তারা উভয়ই যথেষ্ট ক্লান্ত। তবু প্রথম রাত বলে ঘুমানোর জোর দিতে পারছে না৷ তাদের কথা তো শেষ হয়নি। ঢোক গিলল সৌধ। বলল,
‘ বাকি দু’টো চাওয়া কী? ‘
স্পষ্ট কণ্ঠের সে বাক্যে হুঁশ ফিরল সিমরানের। নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে নিয়ে বলল,
‘ শুয়ে শুয়ে বলি? আর বসে থাকতে পারছি না৷ মেরুদণ্ড দিয়ে ব্যথা করছে। ‘
ভ্রু কুঁচকে গেল সৌধর। সারাদিন কম ধকল যায়নি৷ আগে থেকেই ঠিকভাবে খাওয়া, দাওয়া করে না সিমরান৷ গত দু’দিনে যে আরো বেশি অনিয়ম হয়েছে ঢের বুঝতে পারল। সে খুবই নিয়ম মেনে জীবনযাপন করে। প্রচণ্ড স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। তার বউকেও এসব মেইনটেইন করে চলতে হবে। কোনোকিছুতে অবহেলা করা যাবে না। মনে মনে ভাবল, সিমরান খুব একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে থেকে বড়ো হয়নি৷ ওর সবকিছুতে অনিয়মের ছাপ রয়েছে। এই যেমন বাইশ বছর বয়সেও ওকে দেখতে ষোল বছরের কিশোরীর মতো। একেবারে ছিপছিপে গড়ন। ওজন কত হবে? আন্দাজ করা যায়, বিয়াল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশের ওপরে যাবে না৷ তার বউকে তো এমন থাকলে চলবে না৷ কঠিন নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। রাত জাগা, বেলা করে ঘুমোনোর অভ্যাস, এলোমেলো ঘুরাঘুরি। সব বাদ দিতে হবে৷ মন দিয়ে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে৷ নিজের আলাদা একটা পরিচয় গড়ে তুলতে হবে৷ একটানা কথাগুলো ভেবেই রুদ্ধশ্বাস ত্যাগ করল সে। তার আদর্শ গুলোকে আচমকা আয়ত্ত করতে পারবে না সিনু৷ তাই এসবে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করতে হবে৷
‘ কী হলো শুবো না? ‘
চমকাল সৌধ। সম্বিৎ ফিরে পেল এমনভাবে বলল,
‘ হ্যাঁ সিয়র। ‘
ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ল সিমরান৷ শাড়ি পরে শুঁতে ভীষণ সমস্যা হলো। পায়ের দিক থেকে শাড়ি, পেটিকোট উপরে চলে আসতে চাইলে ত্বরিত সে নিচে নামিয়ে সচেতন ভাবে শুয়ে রইল। আঁচল যেন ঠিক থাকে সেজন্য আগেই সেফটিপিনের সাহায্য নিয়েছে। সৌধর নিজের শরীরটারও বিশ্রাম প্রয়োজন তাই সিমরান শুয়ে পড়লে সেও বেশ ব্যবধান রেখে পাশেই গা এলিয়ে দিল। নিমেষে বুকের ভেতর ধুকপুক করে ওঠল সিমরানের। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় সর্বাঙ্গ শিহরিত হলো। বুকের ভেতর তরঙ্গ বইলো ছলাৎছলাৎ। ফরসা গাল দু’টোয় গোলাপি আভায় ভরে ওঠল। সৌধ ওর দিকে ঘুরে শুয়েছে৷ তাই সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পেয়ে বলল,
‘ আর কত লজ্জা পাবি? এবার দু’টো চাওয়া বল৷ ঘুমাব আমি। ‘
অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে গিয়েও সহসা ফিরে এলো সিমরান৷ টালমাটাল হৃদয়টুকুতে স্থিরতা দিয়ে বলল,
‘ আমি জানি না তুমি আমার দ্বিতীয় চাওয়াটুকু সমর্থন করবে কিনা৷ কিন্তু আম্মু চলে যাওয়ার পর আমি সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে কাটিয়েছি আমার এই দ্বিতীয় চাওয়া কখনো পূর্ণ হবে কিনা তাই নিয়ে। কারণ আমার যে পরিবার সে পরিবারে এসব ভাবা মূর্খতা। আর আব্বু আমাকে যার সাথে বিয়ে দিচ্ছিল তার পরিবারে গিয়েও এই চাওয়াটুকু প্রাধান্য পেতো না৷ কারণ তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড এত বেশি হাই ছিল যে আমার চাওয়াটুকু সেখানে গ্রহণযোগ্য হতো না। ‘
থামল সিমরান। সৌধ চুপচাপ কথাগুলো শুনছিল। সে থামতেই কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
‘ সরাসরি কথা বলা পছন্দ করি আমি। ‘
বুক কেঁপে ওঠল সিমরানের। সৌধর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বিছানার সাদা চাদরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে থমথমে গলায় বলল,
‘ আমি কখনো চাকরিবাকরি করতে চাই না সৌধ ভাই। পড়াশোনা শেষ করে শুধু তুমি আর এই সংসারে পূর্ণ মনোযোগ দিতে চাই৷ আমি আমার অবিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারিনি৷ বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে চাই পরিপূর্ণ ভাবে।
আমি একজন বঞ্চিত সন্তান। যে ঠিকঠাক পরিবার পাইনি। বাবা, মাকে সেভাবে কাছে পাইনি। তাই শশুর, শাশুড়ি আর স্বামীর সংস্পর্শে থেকে বাকি জীবন কাটাতে চাই৷ স্বামী, সন্তান ঘিরে পূর্ণ সুখ চাই। আমি জানি না কখনো আমার সন্তান হবে কিনা৷ সেই সৌভাগ্য কখনো তুমি দান করতে পারবে কিনা। ‘
সৌধর স্বাভাবিক চোখ, মুখ নিমেষে রুক্ষতায় রূপ নিল৷ আকস্মিক তোপের মুখে পড়ল সিমরান।
‘ ওয়েট আ মিনিট, সন্তান হবে কিনা মানে? আমাকে নিয়ে তোর সংশয় আছে! ‘
চমকে ওঠল সিমরান৷ কাঁপা স্বরে আমতা আমতা করে বলল,
‘ আমি ওটা বলতে চাইনি। আসলে আমাদের মাঝে যদি.. না মানে তুমি যদি কোনোদিন আমাকে মন থেকে আপন করে নিতে না পারো তাহলে বেবি আসবে কী করে? এটা ভেবে বলেছি৷ এছাড়া তোমাকে নিয়ে কোনো প্রকার সংশয় নেই ট্রাস্ট মি। ‘
মুখটা চুপসে গেছে সিমরানের। বুক ধড়ফড় করছে খুব৷ ওর কথা শুনে একটু যেন শান্ত হলো সৌধ। বারকয়েক নিঃশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ বাকি কথা শেষ কর। ‘
ভয়ে জমে গিয়েছিল প্রায় সিমরান৷ এবার স্বস্তি মিলল। আল্লাহ! একটি সামান্য কথা কী ভয়ংকর দিকে মোড় নিচ্ছিল। সৌধ ভাই কি ভেবেছিল, সে তার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ করেছে? ছিঃ ছিঃ এমন কিছু সে কল্পনাই করতে পারে না৷ এই ভয়ানক ভাবনাটা কেন এলো সৌধর ভাইয়ের মাথায়? আর কিছু ভাবতে পারল না সিমরান৷ সৌধ ভাই অপেক্ষায় আছে তার পুরো কথা শোনার জন্য৷ তাই ত্বরিত বলল,
‘ আমি জানি আজকাল মেয়েরা এস্টাব্লিশড হওয়ার জন্য অনেক স্ট্রাগল করছে। কত মেয়ে সুযোগের অভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না হিসেব নেই। আমার কাছে সুযোগ আছে। আমার নিজের পরিবার, শশুর বাড়ির প্রতিটি লোকের সাপোর্টও পাবো। তবু আমি এস্টাব্লিশড হতে চাই না। আমি জাস্ট পড়াশোনা শেষ করে সংসারে মন দিতে চাই৷ নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পরিবার, সন্তানকে সেক্রিফাইস করতে চাই না আমি যেটা আম্মু করেছিল। শেষ পর্যায়ে পুরো জীবন ক্যারিয়ারের পিছনে খাঁটিয়ে অল্প কিছু সময় পরিবারের জন্য, স্বামী সন্তানের জন্য না রেখে বিদায় নিতে চাই না আমি। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি সৌধ ভাই। আমি তোমার সাথেই আমার প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহুর্ত কাটাতে চাই। তোমার বউ গৃহিণী হলে কি খুব অসুবিধা হবে? সম্মানে আঘাত লাগবে? আমি যদি ঘর, সংসার সামলাই তুমি কি বউ হিসেবে আমাকে মেনে নিতে পারবে না? প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে কী? ‘
কিয়ৎকাল চারপাশে থমথমে নীরবতা বিরাজ করল। সিমরান অসহায় মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইল সৌধর পানে। সৌধ স্তব্ধ মুখে শুয়ে আছে। সত্যি বলতে তার জীবনবোধ আলাদা। সে কখনো ভাবেনি তার ওয়াইফ একজন সাধারণ গৃহিণী থাকবে। পরোক্ষণেই নিজের আম্মার কথা মনে পড়ল। কেঁপে ওঠল নিমেষে। তবে কী সৃষ্টিকর্তা তার মায়ের মতো ব্যক্তিত্বধারী একজনকেই তার জীবনসঙ্গী হিসেবে পাঠালো? আচমকাই ভেতর থেকে আলহামদুলিল্লাহ বেরিয়ে এলো তার। সিমরান চাতকিনীর মতো তাকিয়ে। চোখে কী অসহায়বোধ। কিন্তু তার মায়ের চোখে তো এমন অসহায়ত্ব কখনো দেখতে পায়নি৷ সে একজন দৃঢ় চিত্তের অধিকারী। চোয়াল দুটো শক্ত সৌধর। চোখ দু’টো স্থির সিমরানের মুখে৷ হঠাৎ কণ্ঠে দৃঢ়তা ফুটিয়ে বলল,
‘ তোর কেন মনে হচ্ছে হাউস ওয়াইফ হওয়া অতি সাধারণ ব্যাপার? গৃহিণী হওয়ার স্বপ্ন দেখিস অথচ আর দশজনের মতোই গৃহিণী শব্দটাকে হেয় করে উচ্চারণ করিস। যেখানে এ শব্দটাকে সম্মানই করতে পারছিস না সেখানে এটা হওয়ার আবদার করিস কীভাবে? শুধুমাত্র আবেগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত? ‘
হতভম্ব হয়ে গেল সিমরান। সৌধ কিছুক্ষণ থেমে একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করে পুনরায় বলল,
‘ তুই কি আমার আম্মাকে দেখিস না? সাধারণের মাঝে এক অসাধারণ মানুষ আমার আম্মা। যে শিক্ষিত হলেও সার্টিফিকেটের পাওয়ার নিয়ে কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়নি৷ অথচ এ পরিবারের প্রত্যেকটা উচ্চশিক্ষিত সদস্য সার্টিফিকেট অর্জন করে সম্মানিত পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা তার হাতের মুঠোয় রয়েছে। উদাহরণ , আব্বা, আমি ভাইয়া, স্মৃতি আপা এণ্ড সুলল কাকুও। সো, তুই এভাবে অনুনয় না করে, মুখে অসহায়ত্ব না ফুটিয়ে প্রপারলি হাউজওয়াইফ হওয়ার এপ্লিকেশনটা রেসপেক্ট এণ্ড প্রাইডের সাথে দিতে পারতি৷ ‘
আকস্মিক ঘামতে শুরু করল সিমরান৷ তার সব কথাতেই ভুল! যা বলছে সবেতেই একটা করে ভুল ধরছে সৌধ ভাই। কান্না পেয়ে গেল এবার৷ কিন্তু কাঁদা যাবে না৷ ধমক খাওয়ার আশঙ্কা আছে। সৌধ ভাই সম্পর্কে ছোটো থেকে কম জানাশোনা হয়নি। সতর্ক হয় সিমরান। সৌধ একবার থেমে সিমরানকে দৃষ্টিপাত করে। এরপর দম্ভের সঙ্গে বলে,
‘ গ্রো আপ সিনু। ভীষণ ইমম্যাচিওর তুই। আগে তোকে ম্যাচিওর হতে হবে৷ আবেগের বশে এতবড়ো সিদ্ধান্ত নিতে নেই৷ পরে পস্তাতে হয়। ‘
‘ আমি বুঝেই নিয়েছি সিদ্ধান্ত। তুমি চাও তোমার বউ চাকরি করুক। এস্টাব্লিশড থাকুক। এজন্য মানছ না জানি আমি। ‘
‘ জানাটা বেশি হয়ে গেছে। এস্টাব্লিশড বলতে কী বুঝিস তুই? হাউসওয়াইফ মানে কি এস্টাব্লিশড নয়?’
চোখ দুটো চকচক করে ওঠল সিমরানের। আগ্রহ নিয়ে বলল,
‘ একটু বুঝিয়ে বলো না? ‘
দমে গেল সৌধ৷ কণ্ঠ নির্মল করে বলল,
‘ আমার বউ চাকরি করবে কি না করবে এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বউ দিয়ে চাকরি করিয়ে তার টাকাপয়সা হাতানোর কোনো শখ নেই আমার। তোর সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি৷ একজন শিক্ষিত, আত্মসম্মান সম্পন্ন, সৎ চরিত্রবান মানুষকেই আমার স্ত্রী হিসেবে চাই৷ সে ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করল কি না করল এটা কখনোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে না৷ আমার আম্মা বাইরে চাকরি করতে বেরোয় না। সে গৃহিণী জীবন যাপন করে তার মানে কি সে প্রতিষ্ঠিত নয়? এই উত্তর আমি দিব না। বুদ্ধি খাঁটিয়ে নিজেই উত্তর বের কর। আর রইল তোর গৃহিণী হয়ে থাকার বিষয়। এটা আমার সৌভাগ্য যে একজন সুন্দরী, শিক্ষিত, স্মার্ট গর্জিয়াস রমণী শুধুমাত্র আমাকে ভালোবেসে আমার সংসার সামলেই তার বাকি জীবন কাটাতে চায়। নিঃসন্দেহে আমার হৃদয় এটা শুনে পুলকিত হয়েছে। ‘
নিজেকে নিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলা সৌধর প্রতিটি কথা হৃদয়ে গিয়ে বিঁধল সিমরানের। ভয়াবহ লজ্জায় আক্রান্ত হলো সে। চোখ তুলে তাকাতে অব্দি পারল না। সে সুন্দরী, স্মার্ট, গর্জিয়াস, শিক্ষিত তাকে পেয়ে সৌভাগ্যবান সৌধ ভাই! কথাগুলো শুধু কর্ণে নয় বক্ষগহ্বরেও প্রতিধ্বনি হতে শুরু করল। শিউরে ওঠল শরীরের প্রতিটি লোমকূপও। কিছু সময় পর শুনতে পেল সৌধর সুস্পষ্ট ভাষায় বলা দু’টো শব্দ,
‘ তৃতীয় চাওয়াটা কি? ‘
কোনোকিছু না ভেবেই সিমরান বলে দিল,
‘ আমাদের মাঝে কখনো কোনোকিছু নিয়ে গোপনীয়তা থাকবে না৷ সবকিছু জেনে শুনেই আমি তোমার বউ হয়েছি। ভালোবাসি তোমাকে। তাই পরবর্তীতে অজানা কিছু তৈরি না হোক। ‘
বাঁকা হাসল সৌধ। এতক্ষণ সিমরানের দিকে ঘুরে শুয়েছিল৷ এবার চিত হলো। দৃষ্টি উপরে রেখে মৃদুস্বরে বলল,
‘ একজন পুরুষের জীবনে স্ত্রী কী জানিস? তার অর্ধেক অঙ্গ। আমার অর্ধেক অঙ্গ হয়ে জীবনে এসেছিস তুই৷ এখন থেকে আমার জীবনে কিছু ঘটা মানে তোর জীবনেও ঘটা। তোর জীবনে কিছু ঘটেছে মানে সেটা আমার জীবনেও ঘটেছে। আমি অবুঝ নই আর না অমানুষ। আমার জীবনে এখন তোর চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু নেই। তুই ছাড়া বড়ো কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীও নেই। সেম টু ইউরস। আশা করি বোঝাতে পেরেছি৷ ‘
কয়েক পল চুপ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ফের বলল,
‘ঘুমো এবার। ঘুম পেয়েছে আমার। ‘
কথাটা বলেই পাশ ফিরল সৌধ৷ পরোক্ষণেই হঠাৎ মনে পড়েছে এভাবে ঘুরে শুয়ে সিমরানের বিস্মিত দৃষ্টিতে নিজের শান্ত দৃষ্টির মিলন ঘটাল। হাত বাড়িয়ে আলতো স্পর্শ করল ওর নরম গালে। বিনয়ের সুরে বলল,
‘ গুরুত্বপূর্ণ টপিকটাই মিস করে গেছি! তোর মোহরানার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দু’তিনের মধ্যেই একাউন্টে পৌঁছে যাবে৷ সুহাসের থেকে তোর একাউন্ট নাম্বার নিয়েছিলাম গতকাল। ‘