ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৬৩

কন্যাকে পাত্রস্থ করার পর বিদায়বেলা।হৃদয়বিদারক এক মুহুর্ত। প্রতিটি নারীর জীবনে এ মুহুর্তটি অত্যন্ত মর্মভেদী৷ সোহান খন্দকার একহাতে সৌধর হাত ধরে আছে। অপর হাতে সিমরানের হাত৷ নিজের আবেগ, মায়া, ভালোবাসা, স্নেহ সমস্ত কিছু বুকের ভেতর চাপা দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল সে। তীব্র কষ্টে আব্বুর শোচনীয় অবস্থা, অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিজোড়া দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারল না সিমরান। গা কাঁপিয়ে ফুঁপাতে শুরু করল। মেয়ের কান্না দেখে সোহান খন্দকার নিজেকে যথাসম্ভব সামলানোর চেষ্টা করে৷ তার একপাশে তীব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সুহাস দাঁড়িয়ে। অন্য পাশে সুহাসের মামা। সিমরানের এক পাশে সৌধ অন্য পাশে ফারাহ। যে সিমরানকে থরথর করে কাঁপতে দেখে কাঁধ চেপে ধরেছে। সোহান খন্দকার সৌধের হাতে সিমরানের হাত তুলে দিল। আবেগমথিত হয়ে বলল,
‘ বাবা সৌধ, এই যে আজ সিনুকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। সিনু কে বলো তো? আমার মেয়ে? না বাবা ও শুধু আমার মেয়ে না, ও আমার কলিজার টুকরা। সারাজীবন মনে রেখো, আজ এক বাবার শরীর ভেদ করে কলিজার টুকরাকে বউ করে নিয়ে গেলে তুমি। ‘
আশ্বস্ত দৃষ্টিতে তাকাল সৌধ। কাঁপতে থাকা সিমরানের হাতটা যত্নসহকারে আগলে ধরল ৷ ধীরে ধীরে স্তম্ভিত হতে বাধ্য হলো সে। এক বাবার অসহায় মুখ তার হৃদয়ে বিরাট এক জায়গা দখল করে নিল৷
সোহান খন্দকার আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না৷ চোখের সামনে মেয়েকে শশুর ঘরে চলে যেতে দেখতে পারবে না৷ মেয়ের সামনে ভেঙে পড়তেও চায় না সে৷ তাই ত্বরিত সরে গেল। তার পেছন পেছন গেল সুহাসের মামা। বাবা সরে গেলে নত মাথা উঁচু করল সুহাস৷ সৌধ দেখল, তার ভঙ্গুর এক বন্ধুকে। যে আজ সর্বস্ব খুইয়ে স্তম্ভিত মুখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্ধশ্বাস একটি মুহুর্ত। তবু সৌধর মস্তিষ্ক ঠান্ডা। তাই তো সে মনে মনে পণ করল, একটু সময় লাগলেও প্রিয় বন্ধু সুহাসের জীবনে সবকিছু গুছিয়ে দেবে৷ ফিরিয়ে আনবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে। ঘুচিয়ে দেবে সকল দুঃখ, কষ্ট একাকীত্বের ভয়ংকর যন্ত্রণা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সুহাস এগিয়ে এসে ওর মুখোমুখি দাঁড়াল। সৌধ খেয়াল করল, সুহাসের চোয়াল কাঁপছে, নাকের ডগা লালচে। পানি টলমল করছে চোখ দু’টোতে। এই বুঝি কেঁদে ফেলবে। দুষ্টু প্রকৃতির ছেলেদের মন অনেক নরম হয়। কিছু মানুষ আছে না? যত গর্জে তত বর্ষে না। সুহাস হলো সেই ধারার মানুষ। এই ছেলেটাকে আর কেউ চিনুক বা না চিনুক সৌধ খুব ভালো করে চেনে। সহসা কম্পিত চোয়ালে শাসানোর সুরে সুহাস বলল,
‘ আমার বোনকে সবসময় হাসিখুশি রাখবি৷ একটুও দুঃখ দিতে পারবি না। মনে রাখবি অন্য কেউ নয় তোর বউ সুহাসের বোন। ‘
এত দুঃখের ভীড়েও সুহাসের বাচ্চামো দেখে হাসি পেল সৌধর৷ কিন্তু পাশের জনের হৃদয় নাড়ানো কান্না দেখে আর নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার অজুহাতে হাসতে পারল না। বন্ধুকে বলতেও পারল না,
‘ তুই কি ডাক্তারি পেশা ছেড়ে গুণ্ডামি পেশায় যোগ দিলি নাকি৷ দ্য গ্রেট গ্যাংস্টার সুহাসের বোন বিয়ে করে তাহলে মুসিবত হয়ে গেল আমার! ‘
মনের কথা মনেই রয়ে গেল। বোনের বিদায় শোকে সুহাস আরো অনেক শাসানো বাক্য আওড়াল।সেসব আমলে নিল না সৌধ। এরই মধ্যে তার ছোটো কাকু সুলল এসে তাড়া দিল। সন্ধ্যার আগেই নতুন বউ ঘরে তোলার নিয়ম তাদের। রাত হলেই সৌধর দাদুনি আর বাড়ির বউ বরণ করবেন না। সৌধকে শাসিয়ে বোনের মাথায় হাত রাখল সুহাস। অকস্মাৎ শব্দ করে কেঁদে ফেলল সিমরান। ভাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল৷ বোনকে সামলাতে পারল না সুহাস৷ সৌধ হতভম্ব হয়ে গেল দুই ভাই, বোনের কাণ্ড দেখে। সুহাসও কাঁদছে! এ প্রথম সুহাসকে এভাবে কাঁদতে দেখল সে। এমতাবস্থায় হঠাৎ আইয়াজকে নজরে পড়ল ওর। তৎক্ষনাৎ ইশারায় বলল,
‘ আয়াজ, এই বেআক্কলটাকে দ্রুত সরা। ‘
ফারাহ সিমরানকে সামলে নিচ্ছিল। আইয়াজ গিয়ে সুহাসকে ধরায় সুবিধা হলো। জোরপূর্বক টেনে সুহাসকে সরিয়ে নিল আইয়াজ। ক্রন্দনরত অবস্থায় সিমরান অনুভব করল, যে হাত সৌধ ধরে ছিল তাতে শক্ত টান পড়েছে। অশ্রু ভেজা চোখে চকিতে তাকাতেই দেখল সৌধ তার হাত টেনে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ির দিকে। ঠোঁট ভাঙিয়ে কেঁদে ফেলল ফের। হাতে টান পেয়ে আপনাআপনিই পা এগুলো। অনুভব করল বুকের ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস নিতে হচ্ছে তীব্র কষ্ট। এত কষ্ট হচ্ছে কেন তার? চারপাশের সবাইকে এত নিষ্ঠুরই বা মনে হচ্ছে কেন? যেন সবাই তাকে জোর করে শশুর ঘরে পাঠাচ্ছে। অথচ সে সৌধ ভাইকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তার বউ হয়ে নিজের বাড়ি, আপনজন ছেড়ে বিদায় নিচ্ছে।
গাড়িতে ওঠার পর হঠাৎ সুহাস ছুটে এলো। সৌধকে ডাকতে লাগল সমানতালে,
‘ সৌধ, সৌধ এই সৌধ? ‘
শেষ ডাক দিল উচ্চ গলায়। কপাল কুঁচকে জানালার কাঁচ নামালো সৌধ। মুখাবয়ব প্রচণ্ড গম্ভীর হয়ে আছে তার। সত্যি বলতে সুহাসকে এভাবে কাঁদিয়ে সিমরানকে নিয়ে যেতে তারও অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু এটাই তো জগতের নিয়ম৷ এ নিয়ম না মানলে বাড়াবাড়ি হবে। আজকের দিন থেকে গেলে দৃষ্টিকটুও লাগবে। লোকে আবার ঘরজামাই ট্যাগও দিয়ে দিতে পারে৷ তার মতো ছেলে আর যাইহোক এই ট্যাগ বয়ে বেড়াতে পারবে না৷ সুহাস এত বেশি অবুঝতা কেন করছে? মাথা ধরে গেল সৌধর। ভারিক্কি কণ্ঠে বলল,
‘ বল। ‘
‘ তুই কিন্তু রাগটা একটু কমাবি। সিনুর ওপর রাগ ঝাড়বি না কিছু নিয়ে। ‘
সুহাসের কণ্ঠে মিনতি। সৌধ পেছনে তাকিয়ে দেখল আইয়াজ, ফারাহ ওঠেছে কিনা। এরপর ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল। সুহাস এবার সিমরানের দিকে তাকাল। আদুরে গলায় বলল,
‘ কাঁদিস না বোন। আমি, বাবা সব সময় তোর পাশে আছি৷ ‘
বলেই হাত বাড়িয়ে বোনের গালের পানি মুছে দিল। সিমরান ভাঙা কণ্ঠে বলল,
‘ আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না৷ আব্বুর কাছে যাও এক্ষুনি। ‘
সিমরানের কণ্ঠে ভয়। মাকে হারিয়েছে আচমকা। মায়ের পাশে তারা কেউ ছিল না৷ না আব্বু আর না তারা দুই ভাইবোন। তাই এই কঠিন মুহুর্তে ভয় জেঁকে ধরল ওকে। বোনের কথায় সম্বিৎ ফিরে পেল সুহাস৷ সত্যিই তো! তাকে এখন বাবার পাশে থাকতে হবে। গাড়ি স্টার্ট দিলে হাত ফিরিয়ে নিল সুহাস। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল বোনের কথায়। সহসা শব্দ করে সামনে থেকে গাড়িটা সরে গেল। বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে ওঠল সুহাসের৷ ঘুরে দাঁড়িয়ে পায়ের গতি বাড়াল বাবার কাছে যাওয়ার জন্য। মনে মনে বলল,
‘ সিনুকে সামলাতে সৌধ আছে, বাবাকে সামলাতে আমি আছি, আর আমাকে সামলাতে? কে আছে? কেউ নেই!’
বুকচিরে তার হতাশাগ্রস্ত নিঃশ্বাস বেরুলো। যা মিশেমিশে একাকার হয়ে গেল প্রকৃতির সাথে।
.
.
স্মৃতিসৌধ। চৌধুরী বাড়ি। বরের গাড়ি ছাড়া সব গাড়ি এসে পড়েছে। গাড়ি ভর্তি মানুষজন তাড়াহুড়ো নিয়ে ঢুকছে বাড়িতে। নতুন বউ বরণ দেখবে তারা৷ স্মৃতি আর তার হাজব্যন্ড মুক্ত বাড়িতে প্রবেশ করতেই দাদুনির প্রশ্নের মুখোমুখি হলো,
‘ মেয়ের সাথে ক’জন এসেছে? ‘
ক্লান্ত গলায় স্মৃতি বলল,
‘ নানুমনি আর সিনুর এক বান্ধবী লুনা মাত্র দু’জন। ‘
চোখ ফিরিয়ে নিল দাদুনি। স্মৃতিও চলে গেল উপরে৷ নিজের ঘরে গিয়ে ভারি পোশাক ছেড়ে হালকা, পাতলা সেলোয়ার-কামিজ পরে নিল। তার স্বামী মুক্ত বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘ জান, আমার আর কাজ নেই তো। এবার তোমাদের মেয়েলি কাজটাজ শুধু৷ আমি ফ্রেস হয়ে রেস্ট করব। ডিনারের সময় ছাড়া ডাকাডাকি করো না। ‘
‘ ওকে ফাইন, যখন নিচে যেতে বলব এসে পড়ো। ‘
‘ ওকে। ‘
স্মৃতি আপু ঝটপট চুল গুলো পেছনে ঝুঁটি করে নিচে নেমে এলো। এমন সময় দাদুনি ফের তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন করল,
‘ তাহানী কোথায় স্মৃতি? তোমাকে বলেছিলাম, ওর খেয়াল রাখতে? ‘
ভ্রু কুঁচকে ফেলল স্মৃতি। তাহানীকে তো ঝুমায়না ভাবির সাথে বসিয়েছিল। কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলল,
‘ ভাবি আসেনি? ‘
‘ সে তো ছেলেকে ঘুম পাড়াতে মাত্রই নিজের ঘরে গেল। ‘
আঁতকে ওঠল স্মৃতি।
‘ তাহানীকে তো ভাবির সাথে বসিয়েছিলাম! ‘
দাদুনি কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হয়ে বলল,
‘ তোমাদের ওপর ভরসা করাই ভুল। কোন আক্কেলে ঝুমায়নার কাছে তাহানীকে রাখো। সে ছেলে সামলাতে গিয়ে হাপিত্যেশে মরে যায়। ‘
ঢোক গিলল স্মৃতি। আমতা আমতা করে বলল,
‘ দেখছি। আপনি টেনশন করবেন না। কারো না কারো সাথে আছেই। ‘
কথাগুলো বলে বাইরে যেতে উদ্যত হতেই দেখতে পেল, সিমরানের বান্ধবী লুনার হাত ধরে হাসিখুশি তাহানী সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল স্মৃতি। হাসিমুখে দাদুনির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এইতো আমার বনু এসে গেছে। ‘
.
.
সদর দরজার বাইরে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌধ। বাড়ির অর্ধেক সদস্য ভেতরে। বাকি অর্ধেক বাইরে সৌধ, সিমরানকে ঘিরে৷ সৌধর মা, দাদুনি, আপু আর ভাবি ঝুমায়না তাদের বরণ করার বন্দোবস্ত করে রেখেছে। একটি বিশাল আকৃতির নোড়া রাখা বর,বউয়ের সামনে৷ তানজিম চৌধুরী ছেলেকে নোড়া দেখিয়ে বললেন,
‘ বাবা ওঠো এখানে। ‘
এরপর সিমরানকে বলল,
‘ ছোটো আম্মা, তুমিও ওঠো। ছোটো আব্বার বাম পাশে দাঁড়াও। ‘
আম্মার আদেশ চির ধার্য। যদিও এসব নিয়মকানুন ইসলামে নেই৷ কিন্তু প্রাচীন যুগ থেকে তাদের পূর্ব পুরুষরা মেনে আসছে৷ বংশপরম্পরায় মুরুব্বিরা এভাবেই নিয়ম মেনে নতুন বউ ঘরে তুলে। নিয়ম গুলো না মানলে কিছুই হবে না৷ কিন্তু মানলে বাড়ির মুরুব্বিরা সন্তুষ্ট হবে৷ তাদের নতুন জীবনের শুরুতে কেউ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হোক চায় না সৌধ। সংস্কৃতির প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই৷ তবে হ্যাঁ যেসব সংস্কৃতি তার ব্যক্তিত্বে আঘাত করে বা যেসব সংস্কৃতি অসম্মান বয়ে আনে সেসবের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। নোড়ার ওপর তারা স্বামী, স্ত্রী ওঠে দাঁড়ালে স্মৃতি একগ্লাস হালকা গরম দুধ এগিয়ে দেয় মাকে। তানজিম চৌধুরী দুধের গ্লাস মুখে ধরেন সৌধর৷ সৌধ এক চুমুক খেয়ে ফিরিয়ে দিলে বাকি দুধ সিমরানের মুখে ধরে। মাথা ঘুরছে সিমরানের। শরীরটা দুর্বল লাগছে খুব৷ দুধের গ্লাস দেখে গা গুলিয়ে ওঠল৷ তানজিম চৌধুরী স্নেহময় গলায় বলল,
‘ একটু মুখে দেও। ‘
তানজিম আন্টি আজ থেকে তার শাশুড়ি মা৷ বুকের ভেতর ধক করে ওঠল৷ এক পলক তাকিয়ে দেখল, চৌধুরী গিন্নিকে। এরপর চোখ নামিয়ে দুধের গ্লাসে ঠোঁট ছুঁয়ালো। এক ঢোক খেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে তানজিম চৌধুরী মৃদু হাসলেন। সে সরে গেলে এগিয়ে এলেন দাদুনি। পাশে কাজের মেয়ে মিষ্টি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখান থেকে কাঁটাচামচে মিষ্টি তুলে প্রথমে নাতির মুখে ধরলেন৷ সৌধ মুখ বাড়িয়ে এক কামড় নিল। দাদুনি মৃদু হেসে একই মিষ্টি সিমরানের মুখে ধরলেন। শাশুড়ির বেলায় একবার দ্বিমত করলেও দাদুনির বেলায় ঝটপট মিষ্টি মুখে নিল সিমরান। এমনিতেই দাদুনি তাকে পছন্দ করেন না৷ মিষ্টি খেতে একদমই ভালো লাগবে না এখন৷ তবু দাদুনির তোপের মুখে পড়তে চায় না বলেই খেলো। এতক্ষণ এমন ভদ্র সুলভ থেকে তার বেলায় চটপট করার মানে কী? বোধগম্য হলো না দাদুনির৷ অসন্তোষ মুখে ঘাড় বাঁকিয়ে বড়ো নাত বউ ঝুমায়নার দিকে তাকালেন। ঝুমায়না পানির গ্লাস নিয়ে এগিয়ে এলে পানি খাইয়ে দিলেন দু’জনকে। এরপর বড়ো বউকে ডাকলেন। তানজিম চৌধুরী এসে ছেলে আর ছেলে বউয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দু’হাতে দু’জনের হাত ধরলেন৷ এরপর এগিয়ে নিয়ে গেলেন চৌধুরী বাড়ির অন্দরমহলে। দৃশ্যটি সৌধর কাজিনরা ক্যামেরা বন্দি করে ফেলল। ভিডিয়োশুট চলল দীর্ঘ সময় ধরে৷
বর, বউ ভেতরে প্রবেশ করতেই বাকি সবাই যে যার মতো ভেতরে ঢুকল। লুনা তাহানীর সঙ্গে খেলা করছিল আর উশখুশ চোখে তাকাচ্ছিল বাড়ির সদর দরজার দিকে। এতক্ষণ মনে হচ্ছিল সে তার বান্ধবীর অপেক্ষায় ছিল৷ কিন্তু বান্ধবী আসার পরও যখন উশখুশ করতে লাগল তখন সন্দেহ হলো, ফারাহর। সে আইয়াজকে আড়ালে ডেকে বলল,
‘ সিনুর বান্ধবীর মতিগতি ঠিক লাগছে না। ‘
চোখের চশমা ঠিক করতে করতে আইয়াজ বলল,
‘ কেন কিছু বলেছে তোমায়? ‘
‘ আমাকে কী বলবে আজব! ‘
‘ তাহলে বেঠিকের কী দেখলে? ‘
ঠোঁট ফুলালো ফারাহ৷ কারো সম্পর্কে পুরোপুরি না বুঝে আন্দাজে কিছু বলা ঠিক হবে না। কিন্তু সিনুদের বাড়িতে খাওয়ার সময় থেকে খেয়াল করছে, লুনা সুলল কাকুর দিকে কেমন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল৷ বিষয়টা দৃষ্টিকটু লেগেছে তার। সুলল চৌধুরী সৌধ ভাইয়ের কাকা। সে হিসেবে তাদেরও কাকা। সুলল কাকু নিঃসন্দেহে হ্যান্ডসাম। সৌধ ভাইয়ের ছোটো কাকা কোনো অংশে সৌধ ভাইয়ের থেকে কম কিছু নয়৷ লম্বা, চওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী সুলল কাকু। তার আকর্ষণীয় চেহেরা, ব্যক্তিত্ব যে কোনো মেয়েকেই ঘায়েল করতে যথেষ্ট। আফসোস অল্পবয়সে বিপত্নীক হয়েছে মানুষটা৷ লুনা খ্রিস্টান ধর্মের মেয়ে। তার সাথে সুলল কাকুর বয়সের ফারাকও অনেক। তিতকুটে অনুভূতি হলো ফারাহর৷
ভাবল, লুনা হয়তো বাচবিচার না করেই যে কারো প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। তাছাড়া ওর স্বভাব সম্পর্কে টুকটাক শুনেছিল। সৌধ ভাই বোধহয় মেয়েটাকে পছন্দ করে না৷ নিশ্চয়ই এসব দোষ জানে বলেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারাহ৷ লুনা তাহানীর সঙ্গেও ভাব জমিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা সত্যি গুড মাইন্ডের নয়৷ আগে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া দরকার লুনার ব্যাপারে। তারপর আইয়াজকে জানাবে। এবং বড়ো বোন হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে লুনাকে সাবধান করবে। এ পর্যন্ত ভেবে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল ফারাহ। চশমা ঠিক করতে করতে আইয়াজকে বলল,
‘ কিছু না। ‘
চেপে গেল তার মনে চলা কথাগুলো। লুনার হাবভাব পুরোপুরি না জেনে কিছু বলা উচিত হবে না৷ আইয়াজ বলল,
‘ রাগ করছ কেন? বলো না কী হয়েছে? ‘
‘ রাগ করছি না। কথাগুলো সঠিক সময়ে বলব। এবার চলো সিনুর কাছে যাই। ‘
কথাটা বলেই চলে আসতে উদ্যত হয় ফারাহ৷ সহসা আইয়াজ হাত টেনে ধরে ওর৷ একদম নিজের কাছে টেনে এনে বলে,
‘ এমন দূরে দূরে থাকো কেন? যেন আমি অচেনা কেউ। ‘
‘ ধূরর হাত ছাড়ো কত মানুষ! কেউ দেখে ফেলবে। ‘
বিরক্ত হলো আইয়াজ। যতটুকু কাছে টেনেছিল তার চেয়েও অধিক কাছে টেনে নিল। দূরত্ব কমিয়ে নিতে নিতে দুজনের মাঝে এক চুল ফাঁকও রাখল না৷ শাড়ি পরিহিত ফারাহ। একদম সাধারণ, হালকা সাজ। চুলগুলো পেছনে খোঁপা করা। ওর ফরসা গলায় রয়েছে পরপর তিনটে ভাঁজ। সেই ভাঁজে ঘাম জমেছে। আইয়াজ নেশাতুর দৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে বলল,
‘ ঘেমে গেছ। চলো ঠান্ডা কোথাও গিয়ে বসি। মানুষের ভীড়ে গরম বেশি লাগছে। ‘
ওরা যখন একে অপরের সন্নিকটে। ঠিক সে মুহুর্তে প্রচণ্ড তাড়াহুড়ো নিয়ে ঝুমায়না ভাবি ছুটে আসছিল রান্না ঘরের দিকে। আচমকা একপাশে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আইয়াজ, ফারাহকে দেখে একহাতে চোখ ঢেকে ‘ সরি, সরি ‘ ধ্বনি তুলে পিছিয়ে গেল। তীব্র লজ্জায় পড়ে গিয়ে লাফিয়ে ওঠল ওরা স্বামী, স্ত্রী। ফারাহ ঈষৎ ক্রোধে কটমট করে তাকাল আইয়াজের দিকে। বুকে দু’টো কিল বসিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
‘ বলেছিলাম আমি কেউ এসে পড়বে। ‘
আইয়াজ ওর হাত চেপে ধরে মার খাওয়া আঁটকে নরম স্বরে বোঝালো,
‘ ডোন্ট ওউরি জান। আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নই। এত ভয়, লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি। ‘
গা ঝাড়া দিয়ে ওঠল ফারাহ ‘ ধ্যাৎ! ‘ বলেই মুখ ফুলিয়ে চলে গেল আইয়াজের সামনে থেকে। সহসা লাজুক হাসল আইয়াজ নিজেও। মাথা চুলকে ভাবল, সেও কি কম লজ্জা পেয়েছে নাকি? ঝুমায়না ভাবির সামনে আর পড়া যাবে না।
.
.
বসার ঘরে নববধূকে ঘিরে রয়েছে প্রত্যেকে। চেনা মুখগুলোর সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করানো হচ্ছে। আছে অচেনা মুখও। যাদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব চলছে। সৌধ বসে ছিল সিমরানের পাশেই। এবার ওঠার প্রয়োজন বোধ করল। আশপাশে তাকিয়ে বন্ধুদের মধ্যে আইয়াজকেই পেল শুধু৷ আইয়াজ ঠোঁট টিপে হাসছে৷ যে হাসি কপালে ভাঁজ ফেলল ওর। ওঠতে উদ্যত হতেই আচমকা চোখ পড়ল পাশে। সিমরানের মুখশ্রীতে। যা উঠতে দিল না ওকে। থেমে গেল। আশপাশে এত মানুষ। কীভাবে প্রশ্নটা করবে ভাবতেই মনে মনে বিরবির করল, ‘ ধূরর কে কী ভাবল এটা ভেবে এ জীবনে যখন কিছু করেনি। আজ করবে কেন? ‘ তাই ছোট্ট করে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে শীতল গলায় প্রশ্ন করল,
‘ সমস্যা হচ্ছে? রেস্ট করবি উপরে গিয়ে? ‘
মৃদু চমকাল সিমরান। আড়চোখে তাকাল সৌধর ভারিক্কি চোয়ালে। সরাসরি তাকাতে লজ্জা লাগছিল। সামনে এত মানুষ তাই৷ মনে মনে অনুভূতির ফোয়ারা ছুটল। সত্যি বলতে তার শরীরটা ভীষণ দুর্বল লাগছে৷ মাথায় কিলবিল করছে এত মানুষ আর তাদের কথোপকথন। তীব্র অস্বস্তি, শারীরিক দুর্বলতা, মানিসক ভারাক্রান্ত সব মিলিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে৷ সৌধ ভাই কি খেয়াল করেছে এসব? আবেগান্বিত হয়ে পড়ল সিমরান। নিজের সমস্যা হলেও মুখ ফুটে বলতে পারল না। মাথা নেড়ে বোঝাল তার সমস্যা হচ্ছে না। সৌধ তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল৷ স্পষ্টই বুঝল, মিথ্যা বলল সিমরান। প্রথমদিনই মিথ্যা? দাঁতে দাঁত পিষে বাড়ির লোকজনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দেখতে পেল স্মৃতি আপু লুনার সাথে গল্পে মশগুল। তার মুখ দিয়ে রেডিওর মতো ছোটো কাকুর প্রশংসা বেরুচ্ছে। আর লুনা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেসব কথা গিলছে৷ বিরক্ত হলো সৌধ। মেয়েটাকে দেখলেই বিরক্ত লাগে ওর। শান্ত কণ্ঠ কিঞ্চিৎ উঁচু করল সৌধ৷ বলল,
‘ আপা, এদিকে শোন তো। ‘
গল্পে বাঁধা পেয়ে থেমে গেল স্মৃতি। লুনাকে বসিয়ে রেখে সে ছুটে এলো ভাইয়ের কাছে। শুধাল,
‘ কী হয়েছে? ‘
‘ আম্মাকে জিজ্ঞেস কর সব ফর্মালিটি শেষ হয়েছে কিনা। ‘
একটু ভেবে স্মৃতি আপু বলল,
‘ শেষ তো। কেন? ওঠবি তুই ওঠ না৷ সমস্যা কী? ‘
শীতল দৃষ্টিতে তাকাল সৌধ। স্মৃতি আপার চঞ্চলতা ফুঁস হয়ে গেল। নরম সুরে বলল,
‘ কী হয়েছে? ‘
এবারে সিমরানকে ইশারা করল সৌধ। বলল,
‘ ওর মেবি সমস্যা হচ্ছে। ভারি পোশাক ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বল। ‘
চমকে ওঠল স্মৃতি। সত্যিই তো এ ব্যাপারটা তো সে খেয়ালই করেনি। ইশ নিজের বিয়ের কথা স্মরণ হতেই সিমরানের জন্য মায়া হলো। আহারে বেচারি। নতুন বউদের যে কত জ্বালা! হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে জিভ কামড়ে ভাইকে বলল,
‘ ইশ ভাই, আমারি ভুল। আমার খেয়াল রাখা উচিত ছিল৷ আহারে সারাদিনের ধকলে সিনুটা মিইয়ে গেছে। ‘
বলেই মায়ের কাছে গিয়ে বলে এলো,
‘ আম্মা সিনুকে নিয়ে উপরে গেলাম। বিয়ের সাজ ছেড়ে ফ্রেস হয়ে নিক। ‘
তানজিম চৌধুরী বললেন,
‘ হ্যাঁ তাই কর। ‘
পরোক্ষণেই হঠাৎ মনে পড়েছে এভাবে বললেন,
‘ এই শোন, সৌধর রুম তো লক। পোলাপান দরজা আঁটকে বসে আছে৷ সৌধকে পাঠা আগে তারপর তোরা যা। ‘
মায়ের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্মৃতি। সৌধর কাছে এসে বলল,
‘ অ্যাঁই ভাইই। তোর ঘর তো আজিজ, শান ওদের দখলে। তুই গিয়ে ওদিকটা সামলা। তারপর আমরা আসছি। ‘
সৌধ আশ্চর্য হয়ে বলল,
‘ আমার ঘর ওদের দখলে মানে? ‘
স্মৃতি আপু বুঝিয়ে দিল বিষয়টা৷ সৌধর মেজাজ খারাপ করল ভীষণ। এরা শুরু করেছেটা কী? টাকা দিয়ে লোক লাগিয়ে ঘর সাজালো তার দুলাভাই। আর বন্ধু আর কাজিনরা সে টাকা উশুল করতে তাকে জব্দ করার পরিকল্পনা করল! চরম বিরক্তি নিয়ে উপরে ওঠল সৌধ। নিজের ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় দু’টো থাবা দিয়ে গমগমে কণ্ঠে বলল,
‘ আজিজ, শান, বিনা প্রশ্নে, বিনা তর্কে বেরিয়ে আয়। ঘর ফাঁকা করে দে। নয়তো লাভের পরিবর্তে লোকসান হবে। ‘
সৌধর এই এক বাক্যে কী এমন ছিল কে জানে? সুড়সুড় করে বেরিয়ে এলো, দু’জন। আজিজ মিনমিন করে বলল,
‘ দোস্ত এইটা কিন্তু ঠিক না। ডর দেখাইয়া লস কইরা দিলি৷ ‘
বাঁকা হাসল সৌধ। বলল,
‘ কথা যখন শুনেছিস৷ লস হবে না। আপাতত রিলাক্স হতে দে। ‘
বলতে বলতে ঘরে ঢুকল সে। বেশ তাড়া নিয়ে একটি টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ঢুকে পড়ল বাথরুমে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনু এসে যাবে রুমে। বাথরুম প্রয়োজন পড়বে তারও৷ তাই অল্প সময় নিয়ে আগে নিজে ফ্রেস হয়ে নিল৷ এই ঘর এখন আর তার একার দখলে থাকবে না৷ শুধু ঘর কেন? বাথরুম থেকে শুরু করে ঘরে থাকা প্রতিটি আসবাবে সে ছাড়া একজন রমণীর দখলে চলে যাবে। মনে মনে হাসল কিঞ্চিৎ। সময়ের স্রোতে মানুষের জীবনের গতিবিধি কী নিদারুণ ভাবেই না পরিবর্তন হয়ে যায়।
সদ্য স্নান করে বেরিয়েছে সৌধ। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে৷ এমন সময় সিমরানকে নিয়ে ঘরে এলো স্মৃতি আপু। তার পেছন পেছন এলো প্রাচী, ফারাহ, লুনা৷ ঘরে ঢুকেই প্রাচী প্রায় এক চিৎকার দিল,
‘ ওররে বাস এত্ত সুন্দর সাজিয়েছে! হাউ সুইট! তোরা যেমন কাপল ঠিক তেমনি বাসর সাজিয়েছে। তোদের জুটির সঙ্গে একেবারে মেইড ফর ইচ আদার। ‘
বাসরঘরে হৈ-হুল্লোড় লেগে গেল। সিমরানের মাঝে কোনো খেয়াল নেই। তার শারীরিক অবস্থা শোচনীয়। নিজের শরীরটা ধরে রাখাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্মৃতি আপু, ফারাহ দু’জনই বুঝতে পারল তার অবস্থা। যারা এসব ফেইস করে আসে তারাই কেবল বুঝে৷ বিয়ের দিন একটা মেয়ের ওপর দিয়ে কত ধকল যায়। শারীরিক, মানসিক দু’দিকেই চাপ পড়ে ভীষণ। প্রাচী আর লুনা গিয়ে বিছানায় বসে তাজা বেলি, গাঁধা আর গোলাপ ফুল গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে৷ বিছানার মাঝ বরাবর, তিন ফুলের পাপড়ির সমাহারে লেখা সৌধ লাভ সিনু৷ লুনা ছবি তুলছে সেটার৷ সৌধ এসে প্রাচীকে বলল,
‘ প্রাচী চল নিচে যাই। ‘
ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল প্রাচী। সৌধ ইশারায় কিছু বোঝাতে লুনাকে প্রায় জোর করে টেনে নিয়েই বেরিয়ে গেল সে। বলল,
‘ যত আড্ডা, গল্প নিচে হবে। উপরে এখন সৌধর বউ রেস্ট করবে রেস্ট৷ বাব্বাহ কী কেয়ারিং! জিউ সৌধ জিউ৷ ‘
প্রাচী বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই সৌধও বেরিয়ে এলো। সিমরান ভারি পোশাক ছেড়ে মেকআপ তুলে
লম্বা একটি শাওয়ার নিল। এরপর স্মৃতি আপু গাঢ় নীল রঙের একটি সুতি তাঁতের শাড়ি পরিয়ে দিল সুন্দর করে৷ হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুখিয়ে বিনুনি গেঁথেও দিল। এরপর জিজ্ঞেস করল,
‘ এখন আরাম লাগছে? ‘
‘ আগের চেয়ে হালকা লাগছে। ‘
মিষ্টি করে হাসল স্মৃতি। সিমরানের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আচ্ছা একটু শুয়ে থাক। একদম ডিনারের সময় ডাকতে আসব৷ রেস্ট কর কেমন? ‘
মাথা নাড়ল সিমরাম৷ সত্যি একটু আরাম করা উচিত। আর কুলাচ্ছে না। ফুলে সজ্জিত বিছানা৷ শুতে ইতস্তত করছিল সে৷ স্মৃতি আপু বলল,
‘ একপাশে শুয়ে পড়। ভাই না আসা পর্যন্ত এগুলো সরানো যাবে না। ‘
নিমেষে বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম করে ওঠল মেয়েটার৷ লজ্জায় আরক্ত হয়ে ওঠল মুখটা৷ অনুভূতিরা বুকের ভেতর ছুটোছুটি করতে লাগল। স্মৃতি আপু ওর গাল টিপে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ থাক, সুযোগ পেলে খাবার আগেই ভাইকে পাঠাব৷ ‘
আর দেরি না করে বেরিয়ে গেল সে। কিন্তু নিচে গিয়ে সৌধকে পেল না৷ জানতে পারল বন্ধুদের নিয়ে বাইরে গেছে সে। আজিজ নাকি বিয়ারের আবদার করেছে। এই নিয়ে গাল ফুলিয়েছে ফারাহ৷ মুখটা প্রায় কাঁদো কাঁদো। আইয়াজ কেন গেল ওদের সঙ্গে? সে জানে আইয়াজের সব বন্ধুরাই এসব খায়৷ সৌধ ভাইও বাদ যায়নি। তার ইনোসেন্ট জামাই এসব ভুলেও ছুঁয়ে দেখে না৷ আজ যে বন্ধুদের সঙ্গে গেল৷ যদি ঝোঁকের বশে ছুঁয়ে ফেলে? এক আতঙ্ক স্পর্শ করে রইল ফারাহর বুক।
সময় গড়াল ঘন্টাখানেক। ডিনারের সময় হয়ে এলে রেগেমেগে আইয়াজকে কল করল ফারাহ৷ আইয়াজ জানালো তারা বাড়ির সামনেই। এতগুলো বের হলো ফিরল কেবল দু’জন। আইয়াজ আর সৌধ। ডাইনিং টেবিলে দু’টো চেয়ারই ফাঁকা। একটা ফারাহর পাশে আরেকটা সিমরানের পাশে। নেভী ব্লু শাড়ি পরিহিত সিমরান। মাথায় অমায়িক ভঙ্গিতে ঘোমটা টানা। নব বধূ নব বধূ ছাপটা স্পষ্ট দৃশ্যমান। একটু থামল সৌধ। হকচকিয়ে গেল কিঞ্চিৎ। ধীরপায়ে এসে বসল সিমরানের পাশে। মৃদু হেসে বলল,
‘ কী ব্যাপার আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে নাকি সবাই? শুরু করো, শুরু করো। ‘
সবাই খাওয়া শুরু করল। সিমরান এক দুইবার খাবার মুখে তুলে আর খেতে পারল না৷ বার বার পানি খেতে লাগল। ফারাহ বলল,
‘ সিনু, তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না। ‘
স্মিত হাসল সিমরান৷ সৌধ খাওয়ার ফাঁকে একবার তাকাল ওর দিকে। দৃষ্টি খাবারে রেখে শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ পরিচিত ঘর, পরিচিত মানুষ। এত হেজিটেড ফিল কেন করছিস বুঝতে পারছি না। টেইক ইজি সিনু। ‘
.
.
রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। নিজের ঘরে এলো সৌধ। অন্যদিনের চেয়ে আজকে ঘরে ফেরার ব্যাপারটা আলাদা৷ এতদিন রাতবিরেতে ফিরলে শূন্য ঘরে ফিরত৷ কিন্তু আজ তার ঘরটা পূর্ণ। ঘরে ঢোকার পূর্বে মৃদু কেশে নিল সৌধ। হোক নিজের বউ৷ তাতে কী? তবু সরাসরি ঢুকতে দ্বিধা বোধ করল। চাইল না সিনু কোনোভাবে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ুক৷ তাদের মাঝে আবছা এক দেয়াল রয়েছে। সিমরান যতই তাকে ভালোবাসুক৷ কঠিন এক জড়তা আছে ওর মাঝে৷ জড়তা তার মাঝেও আছে। দু’দিক থেকেই যে জড়তা, যে দ্বিধা আছে। সব কাটিয়ে ওঠা না পর্যন্ত এভাবে বুঝে শুনে চলতে হবে। বিয়ে মানেই দুজন দু’জনের প্রতি সমস্ত অধিকার পেয়ে যাওয়া নয়। সৌধ মনে করে তারা কেউই এখনো তাদের প্রতি পূর্ণ অধিকার পেয়ে যায়নি৷ পরিপূর্ণ ভাবে অধিকার পেতে আগে পরিপূর্ণ ভাবে একে অপরের হতে হবে। দু’জন, যখন দু’জনার হয়ে যাবে তখনি আসবে একে অপরের প্রতি অধিকার, প্রেমত্ববোধ। আর ভালোবাসা, মায়া? ধীরে ধীরে সেসবও তৈরি হয়ে যাবে।
সৌধর কাশির আওয়াজ পেয়ে ধাতস্থ হয়ে ওঠে বসল সিমরান। শাড়ির অবস্থা করুণ৷ হাসফাস লাগছে ওর৷ শাড়ি পরে ঘুমাতে অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে গেলেই শরীর থেকে শাড়ি সরে যাবে। সৌধ ভাই এসে ওভাবে দেখে ভাববে,
‘ কী নির্লজ্জ সিনু। প্রথমদিনই কেমন অর্ধন গ্ন হয়ে শুয়ে আছে! ‘
এসব চিন্তায় আর ঘুমাতে পারছে না সে। এমন সময় সৌধ এলে ঝট করে ওঠে বসে। দরজা আঁটকে সৌধ ঘুরে তাকাতেই বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়। সৌধ দেখতে পায় সবই। কিন্তু বুঝতে না দিয়ে মৃদু পায়ে এগিয়ে এসে বেড সাইট টেবিলে ওয়ালেট, সেলফোন রাখে। সিমরান ইতস্তত করতে করতে বিছানার একপাশে সরে যায়৷ সৌধ তাকায়। ফুলে সজ্জিত বিছানায়৷ তার আর সিনুর নামে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
‘ ফুলগুলো সরানো দরকার। ‘
মাথা নাড়ে সিমরান৷ লজ্জা লাগছে তার৷ এত বেশি লজ্জা কেন লাগছে? এই প্রথম কোনো পুরুষের সাথে এক ঘরে, এক বিছানায় রাত্রি যাপন করবে বলে? পুরুষটি আর কেউ নয়, স্বয়ং সৌধ ভাই। তার কিশোরী বয়সের প্রণয় পুরুষ। চিরকালের সঙ্গী। তার স্বামী ডক্টর. সৌধ চৌধুরী। বুকে কাঁপন ধরে মেয়েটার। সৌধ হাত বাড়িয়ে ফুল গুলো সরাতে থাকে। বলে,
‘ বিছানার ঝাড়ুটা নিয়ে আয়। ‘
মৃদু চমকায় সিমরান। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়৷ সৌধ ‘ওহহো’ বলে। সিমরান জানবে কী করে তার বিছানা ঝাড়ু কোথায়? আনমনে হাসে সে। বলে দেয় ঝাড়ু কোথায় আছে। সিমরান নিঃশব্দে গিয়ে ঝাড়ু নিয়ে আসে। সৌধ হাত পাতলে দেয় না। মিহি গলায় বলে,
‘ আমি দিয়ে দিচ্ছি। ‘
আলতো হাসে সৌধ। বলে,
‘ ব্যাপার না। কাল থেকে তুই’ই ঝাড়বি। আজ আমি শিখিয়ে দিই। ‘
‘ আমি পারি। ‘
‘ জানি। তবু শিখাচ্ছি এনি প্রবলেম? ‘
ত্বরিত মাথা নাড়ে সিমরান।
‘ নো প্রবলেম। ‘
বিছানা ঝেড়ে ফুল গুলো ঘরের এক কোণে জমিয়ে রাখে। সিমরান বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে। সৌধর সুক্ষ্ম চোখে কোনো কিছুই এড়ায় না। তাই দেখতে পেল তার বউ মৃদু মৃদু কাঁপছে। অতিরিক্ত উত্তেজনার ফলে মেয়েদের কাঁপাকাঁপি হয়৷ সিমরানের মাঝে অতিরিক্ত লজ্জা, উত্তেজনা দু’টোই কাজ করছে৷ টের পায় সে। ধীরে সুস্থে এগিয়ে এসে দাঁড়ায় ওর পেছনে। একটুক্ষণ চোখ বুজে ভাবে, আজ তাদের বিয়ের প্রথম রাত৷ এটাকে শুধু প্রথম নয় বিশেষ রাতও বলে। ওর মনের অনুভূতি বুঝতে একটুও সময় নেয় না সৌধ। না চাইতেও তারও বুকের ভেতর মৃদু শিহরণ জাগে৷ এই শিহরণের নাম কী দেবে সে? ভালোবাসা নয় তবে কী? পৌরুষত্ব? নাহ নিজের ব্যক্তিত্ব এতটুকু নিচে সে নামাতে পারে না৷ এই শিহরণের নাম সে দেবে, ভালোলাগা, অপরিমেয় মুগ্ধতা। যা সময়ের স্রোতে একদিন ভয়ংকর ভালোবাসায় রূপ নেবে। রুদ্ধশ্বাস ছাড়ে সৌধ। দু’হাতে সিমরানের কাঁধ স্পর্শ করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়৷ নিমিষেই ঠোঁটজোড়া কেঁপে ওঠে সিমরানের৷ আঁতকে ওঠে তাকায় সৌধর মুখপানে৷ তৎক্ষনাৎ আবার চোখ সরিয়ে নেয়৷ সৌধ মৃদুস্বরে বলে,
‘ আজ আমাদের নতুন জীবন শুরু সিনু। আমাদের মাঝে অজানা কোনো বিষয় নেই। আমি চাইও না থাকুক। সিনু, তাকা আমার দিকে। ‘
সহসা তাকায় সিমরান৷ সৌধ ওর চোখ দু’টোতে নিজের শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ আমি মনের ওপর জোর দিয়ে কিছুই করতে পারি না। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো এক পা ও নড়ি না৷ তুই আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আমার কাছে তোর চাওয়া, পাওয়া থাকবে স্বাভাবিক। কিন্তু আমি নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে কিছুই দিতে পারব না৷ ‘
‘ এভাবে বলছ কেন? মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু দিতে বলেছি আমি? ‘
‘ সেটাই বলছি। আমার মনের তীব্র ইচ্ছে থেকে যেমন তোকে আমি বউ করেছি ঠিক তেমনি ভয়ংকর আকাঙ্ক্ষা থেকেই তোকে সম্পূর্ণরূপে আমার করে নেব। ‘
শিউরে ওঠল সিমরান। চোখ দু’টো সরিয়ে নিল আচমকা। কাঁধ থেকে এক হাত সরিয়ে এনে সিমরানের নরম গালে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে সৌধ পুনরায় বলল,
‘ তুই অনেক বুঝিস। এটা আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড়ো অর্জন। বিলিভ মি, আজ যদি তুই আমাকে না বুঝে নিজের চাওয়া, পাওয়া গুলো বুঝে নিতি। আমার কিছু করার থাকত না। আমার মন সায় না দিলেও পৌরুষ চাহিদা ঠিক সায় দিয়ে দিত৷ এই যে সাপোর্ট দিলি এরজন্য আমি বেঁচে গেলাম। ‘
তীব্র লজ্জায় অস্বস্তি লাগছে সিমরানের। সৌধ টের পেল। আসলে তার মাথা কাজ করছিল না৷ বিবেকের কাছে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল। তাই এলোমেলো ভাবে কথাগুলো বলে ফেলল। নিঃশ্বাস আঁটকে দাঁড়িয়ে সৌধ। তার অন্য হাতও এসে সিমরানের গাল ছুঁয়েছে। দু’হাতে অতিযত্নে শুভ্র, নরম গাল দুটো চেপে ধরে হঠাৎ সে বলল,
‘ আমার ভালোবাসার বীজ বপন আজ থেকেই হোক সিনু। ‘
কথাটা বলেই আকস্মিক তার পুরুষালি ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিল সিমরানের ছোট্ট ললাটে। নিমেষে চোখ দুটো বুজে শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলল সিমরান। সৌধ খেয়াল করল ওর চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। মৃদু হেসে দু’হাতের তর্জনী দিয়ে জল মুছে দিল সে। এরপর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বসাল বিছানায়। শীতল গলায় বলল,
‘ আজ এই বিশেষ রাতে তুই আমার কাছে কী চাস বল? ‘
চোখ মেলে তাকাল সিমরান। এতক্ষণ হওয়া সমস্ত খারাপ লাগা পালিয়ে গেছে সৌধর থেকে পাওয়া এই এক টুকরো পরশে। সৌধ ভাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই না৷ ভেতর থেকে টান না এলে কারো প্রতি এক বিন্দু মায়া, ভালোবাসাও দেখায় না। তাই যতটুকু পেয়েছে এটুকুর জন্যই নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে হলো। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল নিজের ভালোবাসার প্রতি। সৌধ ভাইয়ের যে ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছে, যে সৌধ ভাইকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে তার প্রতি। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল সিমরান। ইতস্ততা, লজ্জাবোধ দূরে ঠেলে মিহি স্বরে বলল,
‘ আমি তোমার কাছে তিনটে জিনিস চাই সৌধ ভাই।’
নিমেষে স্তম্ভিত হয়ে গেল সৌধ। সিমরান তাকে আগে থেকেই ভাই ডাকে৷ এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে বাসর রাতে এমন করে বলে ফেলবে বুঝতে পারেনি৷ কেন জানি অস্বস্তি ঠেকল। লজ্জাও পেল। কিন্তু পূর্বের সম্পর্কের কথা ভেবে কিছু বলতে পারল না। হতভম্ব মুখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ বল কী কী চাই। ‘
বিছানায় ওঠে বসল সিমরান। আশপাশে তাকিয়ে ত্বরিত কণ্ঠে বলল,
‘ তোমার গিটার কোথায়? আমি চাই আজ এই বিশেষ রাতে তুমি আমাকে উৎসর্গ করে একটি গান গাও। গান গাওয়ার আগে চোখ বন্ধ করে কেবল আমাকেই ভাবো। আমাকে ভেবে, শুধুমাত্র আমার জন্য তোমার মনের ভেতর যে গান আসবে সে গানটি শুনতে চাই আমি৷ ‘
বিস্ময়ান্বিত হয়ে গেল সৌধ। সে ভেবেছিল নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু, দামী কিছু চাইবে। পরোক্ষণেই ভাবল, মেয়েটা তো তাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া ছোটোখাটো বিষয়ই অনেক বিশেষ আর মূল্যবান হয়। সিমরানের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল সৌধর। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কয়েক পল। ভেতর থেকে কি একটু আফসোস হলো? এই গভীর ভালোবাসা আগে খুঁজে পায়নি কেন? নাহ, জীবনে কোনোকিছু নিয়ে আফসোস করতে নেই। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সঠিক সময়েই সঠিক জিনিস দেয়। কেবল আমরাই ভুল সময়ে, ভুলটা বাছাই করে কষ্ট পাই। লম্বা একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে হাত বাড়িয়ে সিমরানের দুটো হাত নিজের কাছে টেনে নিল সৌধ। শুভ্ররঙা, মেহেদি রাঙা নরম দু’হাতের উল্টো পিঠে গাঢ় করে দু’টো চুম্বন এঁকে দিল। সর্বাঙ্গে ঝংকার তুলে দিল যেন এই চুম্বন। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সিমরান। সৌধ সে দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে গিটার বের করে আনল। ফিরে এসে পাশে বসতে বসতে বলল,
‘ আর দু’টো চাওয়া কী? ‘
‘ আগে গান শুনাও পরে বলব। ‘
আর কিছু বলল না সৌধ৷ সিমরানের কথা মতো গিটারে আঙুল গুলো সেট করে চোখ বুজল। আচমকা স্মরণ হলো সেই ক্ষণ৷ যে ক্ষণে সিনুকে সে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যে ক্ষণে অশ্রুসিক্ত সিনু তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
‘ আমাকে ভালোবাসলে কি খুব ক্ষতি হতো সৌধ ভাই? ‘
যে ক্ষণে সিনু আবদার করেছিল,
‘ কিশোরী বয়স থেকে যে তোমাকে ভালোবাসে তার চোখে একবার তাকাবে? গভীরভাবে। ‘
অতঃপর সে তাকাল। তার ভগ্ন হৃদয় দেখা পেল সেই দু’টো চোখের যে চোখে তার জন্য সমুদ্রের অতল গভীরে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা জমে ছিল। যা খুঁজে পাওয়ার যন্ত্রণাই হোক বা আনন্দ। দীর্ঘকাল নির্বাক হয়ে ছিল সে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে সৌধ। আচমকা চোখ খুলে তাকায় সিমরানের দিকে। বুক ধক করে ওঠে সিমরানের। ভয় হয় কোনোভাবে নিধি আপুর কথা মনে পড়ে যায়নি তো? সে যখন সৌধর প্রথম ভালোবাসা নিয়ে ভয়ে জর্জরিত। সৌধ তখন নিজের শেষ ভালোবাসা আঁকড়ে ধরার সুখে বিমোহিত,
” আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই,
আমায় কতটা ভালোবাসো সে কথাটা জানতে চাই।
ভালোবাসার যতকথা, হৃদয়ে দিয়ে শুনতে চাই।
তুমি শুধু আমার হবে, পৃথিবীকে বলতে চাই।
এ হৃদয়ে জ্বলছে এক যাতন মোমবাতি,
তুমি আগুন হয়ে পুড়ছো আমায় সারা দিবা রাতি।(২)
এ হৃদয়ে ফুটছে ফুল প্রেমের বারমাস,
তুমি ফাগুন হয়ে রঙ ছোয়ালে মনেরো নীল আকাশ।
আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই,
আমায় কতটা ভালোবাসো সে কথাটা জানতে চাই।
এ প্রনয়ে অন্ধ হলাম, প্রানের আলো তুমি।
দঃখ এলে ভুলে যেওনা, বাঁচবোনাতো আমি।(২)
এ প্রনয়ে কথা দিলাম সূর্য চন্দ্র তারা,
সাক্ষী থেকো মরন যেনো হয়না তোমায় ছাড়া।
আমি তোমার মনের ভিতর একবার ঘরে আসতে চাই,
আমায় কতোটা ভালোবাসে সে কথাটা জানতে চাই।
ভালোবাসার যতোকথা, হৃদয়ে শুনতে চাই।
তুমি শুধু আমার হবে, পৃথিবীকে বলতে চাই।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।