ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৬২

‘ বর এসেছে, বর এসেছে। ‘
চারিদিকে এহেন বাক্যে উচ্চরোল ভেসে এলো। ধক করে ওঠল তীব্র কষ্টে জর্জরিত কনের বুকখানি। তাকে ঘিরে রয়েছে সকলে। প্রাচী, ফারাহ আর কাজিনরা গেছে বরের গেট ধরতে৷ এমপি পুত্র, তার ওপর পেশায় একজন ডক্টর। কনে পক্ষের দাবি দেড় লাখ টাকা। তর্কবিতর্ক শেষে ছাড় দিতে পারে৷ তবে এক লাখের নিচে নামবে না। বর এসেছে ধ্বনি বাজতেই কনেকে ঘিরে থাকা সদস্যদের ভীড় কমতে শুরু করল। সিমরানও যেন বুক ভরে শ্বাস নিতে পারল এবার। ভীড় কমাতে স্বস্তি পেল ভীষণ। আশপাশে শুধু ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের পেল। খুঁজছিল সে লুনাকে। পেল না। সে দুলাভাই আর বেয়াইদের সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সৌধ লুনাকে পছন্দ করে না৷ কিঞ্চিৎ চিন্তিত হয় সিমরান। কাল থেকে লুনাকে অনেক বুঝিয়েছে। সৌধ ভাই যেমন তার ভালোবাসার মানুষ। লুনাও প্রিয় বান্ধবী। বাজে স্বভাব আছে মেয়েটার৷ সেসবের পেছনেও রয়েছে তিক্ত অতীত। সবই জানে সে। তাই তো মেয়েটাকে ভালোবাসে। শত খারাপ অভ্যাস দেখেও দূরত্ব তৈরি করতে পারে না৷ সৌধর আদেশ অমান্য করা যেমন তার পক্ষে সম্ভব না। তেমনি লুনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাও অসম্ভব। তাই দু’দিক ঠিক রাখতে লুনাকে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। লুনা কথা দিয়েছে মেনে চলবে। শেষ পর্যন্ত হয়তো পারবে না। তবে আগে যা জন সম্মুখে দ্বিধাহীন করে বেড়াতো। এখন তা করবে না৷ বন্ধুত্বের শক্তিতে দৃঢ় বিশ্বাস সিমরানের।
বধূ সাজে তরুণী। বুক ধুকপুক করছে। নিঃশ্বাসে বাড়ছে ক্রমশ অস্থিরতা। ধীরেধীরে চোখ দু’টো যেন তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠল। লোভাতুর হলো মন৷ একরাশ লজ্জায় আরক্ত মুখে হঠাৎ ওঠে দাঁড়াল সে। লেহেঙ্গার দু’পাশ কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে ধরে মৃদু পায়ে চলে গেল বেলকনিতে। যেখান থেকে স্পষ্ট দৃশ্যমান বাড়ির প্রধান গেট। যেটা চমৎকার ডেকোরেশন করে বরের গেট বানানো হয়েছে। মধ্যস্থে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রশি। যে রশির ওপারে দাঁড়িয়ে আছে বরপক্ষ। এপারে কনে পক্ষ। বের বেশে সৌধ ভাইকে প্রথম দেখাতেই হৃৎপিণ্ড লাফিয়ে ওঠল। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখতে লাগল সেই সুপুরুষকে। সগর্বে আজ যার নামে নিজেকে লিখে দেবে সে। ভেবেই সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠল এক চিলতে হাসি। অনুভব করল, বুকের ভেতরটা মৃদু মৃদু কাঁপছে। এই কম্পন ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনায় দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হলো। অন্তঃকোণে প্রশ্ন জাগল, ‘ বিয়েতে কি প্রতিটা মেয়েই এমন নার্ভাস ফিল করে? নিজের মানুষটাকে আপন করে পাওয়ার তীব্র অনুভূতিতে তারই মতো ব্যাকুল হয়? ‘
.
.
সুজা এমপিকে আলাদাভাবে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হলো। তার সঙ্গে দু’জন দেহরক্ষী আর ছোটো ভাই সুললও আগেভাগে প্রবেশ করলেন। দু’জন পুলিশকে সর্বক্ষণ বাড়ির আশপাশে নজরদারির জন্য রাখা হয়েছে। যতক্ষণ না এমপি সাহেবের ছোটো পুত্র বিয়ে সম্পন্ন করে বউ নিয়ে স্মৃতিসৌধ নামে বাড়িতে পৌঁছায়৷ ততক্ষণ তারা তাদের দায়িত্ব থেকে এক চুলও নড়বে না। বর পক্ষের সঙ্গে কনে পক্ষের বাকবিতণ্ডা চলছে। আইয়াজ তালে আছে তার সুন্দরী বউকে নিজের দলে নিয়ে নেয়ার। কিন্তু ফারাহ যেন আটঘাট বেঁধেই হাজির হয়েছে। ওর মুখের ভাব, কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সে আইয়াজকে চেনেই না৷ আজই নতুন দেখা। সুন্দর করে সাজুগুজু করার ফলে ফারাহকে দেখতে অত্যাশ্চর্য সুন্দরী লাগছে। আইয়াজের চোখে এমনিতেই সে বিশ্ব সুন্দরী। আজ তার ব্রাইডাল লুক আইয়াজের মাথাই ঘুরিয়ে দিল। তার বউ বোকাসোকা হলেও মারাত্মক রূপবতী জানত সে। কিন্তু আজকে কেন এত চালাক হয়ে গেল? কেন তার চোখের ইশারায় কাবু হচ্ছে না? ফারাহর পাশে থাকা প্রাচী আইয়াজের মনোভাব বুঝতে পেরে ঠোঁট টিপে হাসল। আজিজকে বলল,
‘ এই আজিজ এখানে কি কেউ বউ নিয়ে গোলকধাঁধায় পড়েছে? ‘
ফারাহ লজ্জা পাচ্ছিল। তবু নিজের স্বামী আর তার বন্ধুদের নাস্তানাবুদ করতে পিছপা হলো না। প্রাচীর কথা শুনে এদিকে আজিজ চোখ বড়ো বড়ো করে, ঝগড়ার সুরে বলল,
‘ তোদের মেয়েলোকেদের এই গুণ হেভি। তোরা মুহুর্তেই গিরগিটির মতো পাল্টে যাস। ‘
এ পর্যন্ত বলেই আইয়াজের কাঁধ জড়িয়ে ধরল৷ কণ্ঠে মায়া মিশিয়ে বলল,
‘ আহারে আমার ইনোসেন্ট বন্ধুটার কত বড়ো সর্বনাশ হলো। বউও রঙ বদলালো। ‘
ফারাহর মুখ হা হয়ে গেল। আইয়াজ অসহায় চোখে তাকিয়ে। প্রাচী ত্বরিত ফারাহ কানে কানে বলল,
‘ এই এই একদম গলবে না। তোমাকে দুর্বল করতে এসব বলছে৷ আর তোমার বরটা কিন্তু কম সেয়ানা না বুঝছ? পাক্কা ধুরন্ধর। ইনোসেন্ট লুক দিচ্ছে তোমাকে কাবু করার জন্য। আমাদের দলের প্রত্যেককে শক্ত থাকতে হবে ফারাহ। বি কেয়ারফুল। তুমি আয়াজের দিকে তাকিয়োই না। ‘
প্রাচীর সতর্কবার্তা পেয়ে ফারাহ সত্যি সত্যি আর আইয়াজের দিকে তাকাল না। এরপর শুরু হলো তর্ক। সৌধ জানে বিয়ে বাড়িতে এসব খুবই সাধারণ ঘটনা৷ তবু কেন জানি বিরক্ত লাগছে। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ ঠেকছে। যেন ভেতরে গেলেই বাঁচে। তার পাশে স্মৃতি আপু, ভাবি দাঁড়িয়ে। তর্কবিতর্কে কান ধরে গেছে সবার৷ সৌধ অতিষ্ঠ হয়ে নিচু কণ্ঠে স্মৃতিকে বলল,
‘ আপা এদের থামা। ‘
স্মৃতি ভাইয়ের অবস্থা দেখে পার্স থেকে টিস্যু বের করল। কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে মুছতে বলল,
‘ ভাই মুখটা এত গম্ভীর করে রাখছিস কেন? একটু হাসি হাসি রাখ। ‘
ভ্রু কুঁচকে গেল সৌধর। আশপাশে তাকিয়ে সচেতন কণ্ঠে বলল,
‘ বরাবর যেমন থাকি তেমনি আছি আপা। ‘
‘ আরে ভাই বিয়ের দিনও এমন থাকতে হবে? ‘
সৌধ জবাব দিল না আর৷ স্মৃতি আপুও দমে গেল। তার হাজব্যান্ডকে বলল তর্ক থামিয়ে ভেতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। সৌধর দুলাভাই রায়ান আহম্মেদ মুক্ত এগিয়ে এলো। কনে পক্ষকে জিজ্ঞেস করল,
‘ আপনাদের ডিমান্ড বলুন। ‘
দাঁত ক্যালিয়ে হাসল লুনা। প্রাচী খোঁচা দিল তাকে। লুনা বলল,
‘ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। ‘
নিমেষে চটে গেল আজিজ। বলল,
‘ মামা বাড়ির আবদার? টাকা কি গাছে ধরে? ‘
লুনা বলল,
‘ আপনার বন্ধুর শালিকার আবদার। এখন টাকা গাছে ধরে নাকি মাটিতে গজায় তা আমার ডাক্তার দুলাভাই’ই বলতে পারবেন। ‘
হো হো করে হেসে ওঠল প্রাচী, ফারাহ, লুনা। বাকবিতণ্ডা চলল আরো কিছু সময়৷ এরপর সৌধর মুক্ত দুলাভাই চেক সাইন করে এগিয়ে দিলে কনে পক্ষ এবং পরিবেশ সবটাই ঠান্ডা হয়ে গেল৷ যদিও লুনাকে পছন্দ করে না সৌধ। তবু বউয়ের বান্ধবী হিসেবে তার হাতেই মিষ্টি মুখ করে ভেতরে প্রবেশ করতে হলো।
.
.
বর পক্ষদের আপ্যায়নে কোনো কমতি ছিল না। খানাপিনা শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল সকলে৷ উপরে কনের ফটোশুট চলছে। এছাড়া বিয়ের প্রায় প্রতিটি মুহুর্ত ভিডিয়ো করে রাখা হচ্ছে। এভাবে সময় গড়াল বেশ। এরপরই চলে এলো কাঙ্ক্ষিত মুহুর্তটি। সকলের অনুমতি নিয়ে সিমরানকে নিচে নিয়ে আসা হলো। আকাশি নীল রঙা লেহেঙ্গা পরিহিত, ব্রাইডাল সাজে সিমরান যখন সিঁড়ি পেরিয়ে নিচে নামছিল। দু’পাশে তার লেহেঙ্গা উঁচিয়ে ধরে সাপোর্ট দিচ্ছিল প্রাচী, ফারাহ৷ ক্যামেরা ম্যানও ছবি তুলতে তুলতে মুগ্ধ হয়ে গেল৷ উপস্থিত সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সিঁড়ির পানে। সৌধ বসে আছে তার জন্য বরাদ্দকৃত রাজকীয় সোফায়৷ যেখান থেকে অনায়াসে সিমরানকে দেখতে পাচ্ছে সে৷ বাকিদের মতো মুগ্ধতা নিয়ে সে প্রথমে না তাকালেও ধীরে ধীরে তার চোখ দু’টোয় মুগ্ধতা এসে ভীড় জমালো। বুকের ভেতর ছুঁইয়ে গেল শীতল স্পর্শ। সাধারণত বিয়েতে সবাই লাল টুকটুকে বউ সাজে। সিমরাম ডিফরেন্ট। সৌধর মনে হলো সারাজীবন নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে আলাদা ট্যাগ ধরে রাখাটা আজ সার্থক। কারণ তার বউ আর সবার মতো লাল টুকটুকে বউ হয়ে তার সামনে উপস্থিত হয়নি। তার বউ যেমন হৃদয়ে তার জন্য আকাশসম ভালোবাসা পুষে রেখেছে। তেমনি আজ সর্বাঙ্গে ধারণ করেছে গোটা আকাশকে। আকাশি নীল পোশাকটাকে সৌধর কাছে ঠিক আকাশের মতোই মনে হলো। লেহেঙ্গা ছাড়া সিমরানের দেহের যে অংশ গুলো দৃশ্যমান সেগুলোকে মনে হলো শুভ্র মেঘ৷ আকাশের বিশালতা, প্রশান্তি, স্নিগ্ধতা, মুগ্ধতা সর্বস্বই যেন আজ আপাদমস্তক সিমরানে আবদ্ধ। বুকের গহিনে তীক্ষ্ণ এক স্পর্শ পেল সৌধ। মুগ্ধ চোখ দু’টো সন্তর্পণে নিচে নামিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ল শব্দহীন। সিমরানকে ততক্ষণে তার মুখোমুখি এনে বসানো হয়েছে। দু’জনের মাঝখানে স্বল্প দূরত্ব রেখে সাদা রঙের একটি পাতলা পর্দা টানালো হলো চটপট। এরপর পরিবেশটা শান্ত আর সুস্থির হয়ে ওঠল। সুহাস স্তব্ধ মুখে এসে দাঁড়াল সৌধর পাশে। সৌধ বা’দিকে তাকিয়ে যখন সুহাসের অসহায়, রক্তিম চোখ দু’টো দেখল ভেতরটা নড়ে ওঠল ওর। মনে পড়ে গেল তার স্মৃতি আপার বিদায় মুহুর্ত। সুহাসের অনুভূতি তার চেয়েও গাঢ়। সবচেয়ে বড়ো কথা ছেলেটা একের পর এক ধাক্কা খেতে খেতে আজ আরো একটি ধাক্কার সম্মুখীন হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সৌধ। হাত বাড়িয়ে সুহাসের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। স্মিত হেসে বলল,
‘ স্টে স্ট্রং দোস্ত। ‘
সহসা মৃদু কেঁপে ওঠল সুহাস। অনেকদিন পর প্রিয় বন্ধুর ভরসা মাখা বাণী, স্পর্শে অশান্ত মনটা শান্ত হলো কিঞ্চিৎ। চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে ওঠল নিমেষে। ক্ষীণ গলায় বলল,
‘ কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছেরে। আমি জানি সিনুকে তুই অনেক সুখে রাখবি। তবু কোথাও একটা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার। ‘
আলতো হাসল সৌধ। তার মতো করেই ক্ষীণ গলায় বলল,
‘ স্বাভাবিক। নিজেকে শক্ত রাখ। আর ভাব, নিজের খুব মূল্যবান সম্পদ, অতি যত্নের মানুষটাকে যার তার হাতে নয় তোরই প্রিয় বন্ধুর হাতে তুলে দিচ্ছিস।’
সৌধর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে মাথা নাড়ল সুহাস৷ এমন সময় সুজা চৌধুরী এলেন। ছেলের পাশে বসলেন। এগিয়ে এলো সোহান খন্দকারও। কাজি তৈরি৷ সবকিছু প্রস্তুত। এবার বিয়ে পড়ানো হবে। প্রথমে কনের তরফ থেকে কনের মামা গলার স্বর উঁচু করলেন৷ যাতে উপস্থিত সবাই শুনতে পায়। বললেন,
‘ তেরো লক্ষ তেরো টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া…আপনি, এমপি সুজা চৌধুরীর ছোট পুত্র ড.সৌধ চৌধুরী সোহান খন্দকারের একমাত্র কন্যা সাইয়্যারা সিমরান খন্দকারকে বিবাহ করিতে রাজি থাকিলে বলুন, আলহামদুলিল্লাহ কবুল। ‘
চারপাশ নীরবতায় আচ্ছন্ন। উপস্থিত প্রত্যেকে কান দু’টো সজাগ রেখে, উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পর্দার এপাশে বসে সিমরান৷ এতক্ষণ শুধু তার বুক ধুকপুক করছিল৷ এবারে সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। চোখ দু’টো নিচে নামিয়ে কান দু’টো সজাগ রাখল প্রিয়তম পুরুষটির মুখে তাকে কবুল করে নেয়ার শব্দটি শুনতে। সৌধ ক্ষণকাল সময় নিল। অনুভব করল গলা শুঁকিয়ে ওঠেছে৷ হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ৷ সম্পূর্ণ নতুন অনুভূতিতে হৃদয় সিক্ত। সুজা চৌধুরী ছেলেকে মৃদু ধাক্কা দিলেন৷ চমকে ওঠে পাতলা পর্দার দেয়ালে তাকাল সৌধ। নত দৃষ্টিতে ভীত মুখে সিমরানকে এক পলক দেখে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে, সুস্পষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘ আলহামদুলিল্লাহ কবুল। ‘
নিমেষে দু’চোখ উপচে নোনাপানির ধারা নামল সিমরানের গাল বেয়ে। পরপর তিনবার কবুল পড়ল সৌধ৷ কান পেতে শুনে প্রতিবারই অঝোরে কাঁদল সিমরান৷ এই কান্নায় ব্যথা নেই, দুঃখ নেই আছে শুধু প্রাপ্তির সুখ। সিমরান যখন কান্নায় ডুবে তখন তার এক পাশে এসে দাঁড়াল সোহান। অপর পাশে সুহাস। আব্বু আর ভাইয়াকে দু’পাশে অনুভব করে কিছুক্ষণের জন্য কান্না থামে। এরপর যখন বরের পক্ষ থেকে একজন এসে বলতে শুরু করে,
‘ তেরো লক্ষ তেরো টাকা মোহরানা ধার্য করিয়া…আপনি, সোহান খন্দকারের একমাত্র কন্যা সাইয়্যারা সিমরান খন্দকার এমপি সুজা চৌধুরীর ছোট পুত্র ড.সৌধ চৌধুরীকে বিবাহ করিতে রাজি থাকিলে বলুন, আলহামদুলিল্লাহ কবুল। ‘
পর্দার ওপাশে বর বেশে বসা সৌধর সুক্ষ্ম দৃষ্টিজোড়া তাকিয়ে আছে স্থিরভাবে। কান দু’টো আশপাশের কোনো শব্দই নিচ্ছে না। কেবল অপেক্ষা করছে সিমরানের থেকে পাওয়া সম্মতিটুকুর। এরপরই তারা দু’জন বিয়ে, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে জড়িয়ে যাবে। একে একে প্রত্যেকেরই অপেক্ষা শুরু হলো। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠা সিমরানের দিকে। সোহান খন্দকার টের পেলেন মেয়ে কাঁদছে। তীব্র কষ্টে তার শ্বাস নিতে বেগ পেতে হলো। সুহাস যেন শরীর ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারাজীবন দেখেছে বিয়ে মানেই আনন্দ, ফূর্তি। কনে বিদায়ে কান্না দেখেছে। কিন্তু সেগুলো এভাবে এত নিগূঢ় ভাবে স্পর্শ করেনি। স্মরণ হলো নিজের বিয়ের কথাও। নামীকে কাঁদতে দেখেছে সে। কিন্তু বুঝতে পারেনি, অনুভব করেনি ওর ভেতরকার তীব্র কষ্টটুকু। আজ নিজের বোনের বেলায় যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা যেন প্রকৃতিরই এক চরম শিক্ষা। এত ভালোবাসার জিনিসটা অন্যকারো হাতে তুলে দিতে হবে? আজকের পর সিনুর ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকারবোধ কেবল সৌধরই। আহা, বুকের ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল যেন। তবু হজম করতে হলো সব যন্ত্রণা। হাসি মুখে এসে বোনের সামনে বসতে হলো। মাথায় হাত রেখে বলতে হলো,
‘ কিরে বোনু সৌধকে স্বামী হিসেবে কবুল করে নিবি না? ও অপেক্ষায় আছে… ‘
সহসা নড়ে ওঠল সিমরান। স্মৃতি আপু, প্রাচী, ফারাহ সকলেই তাকে বোঝাতে শুরু করল। এ এক শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি। সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে এলো। মাথা ঘরতে থাকল বিশ্রীভাবে। বুকের ভেতর কী যেন একটা দুমড়েমুচড়ে গেল। এরপর! এরপর! সকলের লাগাতার অনুরোধে দু-চোখ বুজে নোনাপানির ধারা ছেড়ে, নিঃশ্বাস আঁটকে, কাঁপা কণ্ঠে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিল ড. সৌধ চৌধুরীকে। অর্জন করে নিল তার কিশোরী বয়সের ভয়ংকর প্রণয়কে। সিমরানের কান্নামিশ্রিত মিহি সুরে উচ্চারিত,
‘ আলহামদুলিল্লাহ কবুল ‘ শব্দ দুটোয় কী ছিল কে জানে। যা একেবারে সৌধ চৌধুরীর বুক ভেদ করে হৃৎপিণ্ডে মিশে গেল।
.
.
বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই আজিজ আর শান বেরিয়ে পড়ল। উদ্দেশ্য চৌধুরী বাড়ি গিয়ে সৌধর জমকালো বাসর ঘরটা দখল করা। গুণে গুণে ষাট হাজার উশুল না করে ঘর ছাড়বে না৷

বিয়ের নিয়মকানুন আমি জানি না৷ ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যেহেতু গল্প বিয়ের নিয়মে ভুল হলো কিনা এটাতে খুব বেশি গুরুত্ব দিলাম না। তাড়াহুড়োয় লিখে পোস্ট করে দিলাম। সবাই অপেক্ষা করছেন তাই। রিচেকও করিনি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।