প্রেমাতাল | পর্ব – ১৯

মুগ্ধ তিতিরকে না পেয়ে নিজের বাসায় ফিরে এল। ভাল লাগছে না কিছু! সারারাত বাসের ঝাঁকুনি আর তিতিরকে নির্ভয়ে অপলক দেখার লোভ! এই দুটো কারনে ঘুমাতে পারেনি ও। ভেবেছিল বাসায় এসে ঘুমাবে। কিন্তু কিসের ঘুম কিসের খাওয়া। তিতিরকে কিভাবে পাবে সেই চিন্তায় ও অস্থির! যদিও বাসা চেনে কিন্তু কয় তলায় থাকে তা তো জানেনা। আর জানলেও বাসায় গেলে তিতিরের প্রব্লেম হতে পারে। কি করবে কি করবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো সাফিকে কল করলে নিশ্চই তিতিরের নাম্বার পাওয়া যাবে। অবশ্যই পাওয়া যাবে সব গ্রুপ মেম্বারের ডিটেইল ওর কাছে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সাথে সাথে কল করলো সাফিকে। সাফি ফোন ধরছে না। উফ এত বিরক্তিকর কেন ছেলেটা। সাফিকে অনেকবার ট্রাই করার পর দোলাকে ফোন করলো। দোলা তো আরো এক ধাপ এগিয়ে, ফোনই বন্ধ। নিজের গালে নিজে দুইটা চড় মারতে মন চাইছে। ও নিজেকে বুদ্ধিমান বলেই জানতো। কখনো এমন কিছু করেনি যার জন্য পরে আফসোস করতে হয়েছে। সবসময় প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য রেডি থাকে। সব ব্যাপারে আগাম কনসার্ন থাকে। আর এখন তিতিরের ফোন নাম্বারটা আনতেই ভুলে গেল! এতটা বোকামি ও কিভাবে করলো! হ্যা চলে আসার সময় প্রচন্ড মন খারাপ হয়েছিল তাই তেমন কিছুই বলতে পারেনি। কিন্তু ফোন নাম্বারটা তো আগে নিয়ে রাখা উচিৎ ছিল। ওর জন্য নিলগিরি থেকে পেনহোল্ডার, রেমাক্রি বাজার থেকে ডুমুর আর পাকা পেঁপে কিনেছিল তাও দেয়া হয়নি। এত গাধা মুগ্ধ কবে হলো!
এবার সাফির মাকে কল করলো মুগ্ধ,
-“হ্যালো চাচী?”
-“হ্যা হ্যা মুগ্ধ বল বাবু।”
-“এই চাচী শোনোনা, সাফি কি ঘুমাচ্ছে? ওকে এতবার কল দিলাম ধরছেই না।”
-“মানে? ও তো তোর সাথেই ট্রিপে গেল। এখনো তো আসেইনি। তুই ওকে বাসায় খুঁজছিস! আমি তো কিছুই বুঝতে পারচ্ছিনা।”
মুগ্ধ বুঝতেই পারছে চাচী এখন চিন্তায় পড়ে যাবে তাই চাচীকে নিশ্চিন্ত করার জন্য বলল,
-“ওহ হো। আচ্ছা আচ্ছা আসলে আমি তো ওকে বান্দরবানে হারিয়ে ফেলেছিলাম বুঝলে? আমি এসে পড়েছি তাই ভেবেছি সাফিও বুঝি এসে পড়েছে। তুমি চিন্তা করোনা তো। ও এসে পড়বে।”
-“তুই যে বললি ফোন ধরছে না।”
-“তো কি হয়েছে? ফোনে তো কত প্রব্লেমই হতে পারে।”
-“ওহ, তাও ঠিক।”
-“আচ্ছা চাচী রাখি, তুমি অত চিন্তা করোনা।”
ফোন রেখেই মুগ্ধ আবার কল দিল সাফিকে। এবার ওর ফোন বিজি পাওয়া গেল। যাক পাওয়া যাবে তাহলে। কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করলো। কিন্তু বার বার ফোন বিজি আসছেন আজব তো ছেলেটার কি ওয়েটিং সার্ভিসও একটিভ করা নেই? না মনে পড়েছে। ওয়েটিং সার্ভিস তো চালুই আছে। কতই তো ওকে ওয়েটিং এ পেয়েছে। তাহলে? উফ আর কিছু ভাল লাগছিল না মুগ্ধর।
মুগ্ধ সাফির ফোন বিজি পাবেনা কেন? এদিকে তিতিরও তো সাফিকে অনবরত ফোন করছিল মুগ্ধর নাম্বারের জন্য। সাফি তো ফোনই ধরছে না। হঠাৎ তিতিরের মনে পড়লো বাবাকে না মুগ্ধর ফোন দিয়ে ফোন করেছিল? ইয়েস! এত সহজে নাম্বারটা পাবে ভাবেনি ও। দৌড়ে বাবার ঘরে চলে গেল। বাবা রেডি হচ্ছিল বাইরে যাওয়ার জন্য। তিতির বলল,
-“বাবা একটু ফোনটা নেই? জরুরী কল করার ছিল। আমার ফোনে না ব্যালেন্স নেই।”
-“হ্যা হ্যা, নিয়ে নে।”
তিতির ফোন নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। তারপর ভাবতে লাগলো কবে কখন ফোন করেছিল। হ্যা মনে পড়েছে সকালে ফোন করেছিল। গতকাল সকালে ছিল রাস্তায়, গত পরশু সকালে ছিল নাফাখুম। তার মানে পরশুর আগের দিন কল করেছিল। কললিস্ট চেক করতে গিয়ে মহাবিপদে পড়লো তিতির। কারন অনেক আননোন নাম্বার ছিল। এটা কোনো কথা! বাবা এত কথা কার সাথে বলে? যাই হোক বাবাকে ফোন ফেরত দিতে হবে তাই ফটাফট সেদিন সকাল থেকে ১২ টা পর্যন্ত যত কল এসেছে সব তুলে নিল একটা ডায়েরীতে। তারপর এক দৌড়ে গিয়ে ফোনটা বাবাকে ফেরত দিয়ে আরেক দৌড়ে ফিরে আসলো ঘরে। সব মিলিয়ে ৮ টা নাম্বার পাওয়া গেছে তার মধ্যে ৩ টা এয়ারটেল! হায় খোদা এগুলো কেন তুললো ও। ওর এয়ারটেলে নেটওয়ার্ক ছিলনা বলেই তো মুগ্ধর নাম্বার থেকে কল করেছিল। ওগুলো বাদ দিলে থাকে ৫ টা নাম্বার। প্রথমটাতে কল দিল,
-“হ্যালো..”
ওপাশ থেকে কর্কশ মহিলা কন্ঠে,
-“হ্যালো কেডা? কেডা আপনে?”
তিতির ফট করে লাইনটা কেটে দিল। এটাও বাদ। পরের নাম্বারটাতে কল দিল। ওপাশ থেকে বলল,
-“হ্যালো তিতির আফা?”
তিতির অবাক,
-“আপনি কে ভাই?”
-“আফা আমি শরীফ।”
শরীফ ওদের দারোয়ান। কি বলবে! বলল,
-“ও আচ্ছা। শরীফ ভাই, আমি না একজনকে ফোন করতে গিয়ে ভুলে আপনাকে কল দিয়ে ফেলেছি। আচ্ছা রাখি।”
-“আচ্ছা আফা।”
দুটো গেল। ৩য় নাম্বারটা টাইপ করতেই দেখলো এটা দেখলো এটা অলরেডি ওর ফোনবুকে আছে। ভাইয়ার এক্সট্রা ফোনের নাম্বার, নতুন নিয়েছে। তিনটা গেল। ৪র্থ নাম্বারটাতে কল করতেই একটা কর্কশ আর রাগী লোকের ভয়েস পাওয়া গেল। ঝাড়ি দিয়ে বলল,
-“হ্যালো কে?”
উফ এই মানুষগুলোর কি আর কোনো কাজ নেই? অলওয়েজ রামগরুড়ের ছানার মত মুখ করে বসে থাকে আর কাউকে পেলেই ঝাড়ি মারে। বাবার সাথে এদের এমন কি কাজ! যাই হোক, কি বলবে ও? যদি বাবার কেউ হয় তাই ‘মুগ্ধ বলছেন?’ একথা তো জিজ্ঞেস করা যায়না। আর জিজ্ঞেস করবেই বা কেন? ওর মুগ্ধ কখনো এভাবে কথা বলে না। মুগ্ধর ভয়েসটাও এমন কর্কশ না, কি মিষ্টি ভয়েস! খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। অযথা এই ব্যাটার সাথে কথা বলবে কেন ও? এমন সময় ওপাশ থেকে আবার বলল,
-“অই মিয়াঁ কে আপনে? কথা কন না ক্যান? কথা কন, নাইলে ফোন রাখেন। আজাইরা ফোন দিয়া ফোনটারে বিজি কইরা রাখসে! যত্তসব। ফোন রাখেন।”
তিতির ফট করে লাইনটা কেটে দিল। উফ এই গুন্ডা টাইপ ব্যাটার সাথে বাবার কি সম্পর্ক কে জানে! পরের নাম্বারটায় ডায়াল করলো অথচ জানলোই না যে এটাই ছিল মুগ্ধ। ও তিতিরকে খোঁজার জন্য সাফিকে কল করছিল তাই মাঝখানে অন্য কলে ডিস্টার্ব ফিল করায় ওরকম বিহেভ করেছে।
৫ম নাম্বারটা বন্ধ পেয়ে তিতির আবার সাফিকে কল করলো কিন্তু সাফির নাম্বার এখন বিজি। অদ্ভুত তো! এতক্ষণ ওর কল ধরেনি আর এখন অন্য কারো সাথে কথা বলছে? নিশ্চই দোলা আপুর সাথে কথা বলছে কিন্তু ওর কলগুলো দেখে একবার কি কল ব্যাক করা যেত না? কিন্তু তখন সাফির ফোন বিজি ছিল কারন, মুগ্ধ তখন পাগলের মত ফোন করে যাচ্ছিল সাফিকে। কিন্তু তিতির তা জানতেও পারলো না। ওদিকে মুগ্ধও জানলো না তিতির কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে ওর জন্য।
সারাটা দিন এরকমই চলতে থাকলো। অবশেষে লাঞ্চের পর দুজনেই সাফিকে কল করে সাফির নাম্বার বন্ধ পেল। কারন, ওদের দুজনের কলের তাড়নায় সাফির ফোন চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। আর সাফি সকাল থেকেই দোলার বাসায় মরার মত ঘুমাচ্ছিল। তাই ও কারোরই কল ধরতে পারেনি।
মুগ্ধ কললিস্ট ঘেটে তিতিরের বাবার নাম্বার পেয়ে গেছিল। কিন্তু ওর বাবকে কল দিলে ওর যদি কোনো প্রব্লেম হয়? তাই দিলনা। মুগ্ধ ভাবলো সাফি বোধহয় ঘুমাচ্ছে তা নাহলে ফোন ধরতো। তাছড়া মুগ্ধ তো জানেই ট্যুর থেকে এসে সাফি সারাদিন ঘুমায়। আর হয়তো কথা বলার জন্য না চাচী ফোন করছিল বলে ওর ফোন বিজি ছিল। হ্যা তাই হবে কারন, চাচীকে ফোন দেয়ার আগে প্রত্যেকবার ফোন বেজে বেজে কেটে গেছে। চাচীকে ফোন দেয়ার পর থেকেই বিজি। চাচীও না এত টেনশন করতে পারে। সাফি বাসায় যায়নি আগে জানলে ও কখনোই চাচীকে কল দিত না। কোথায় গেল? দোলার বাসায় নয়তো! হতেও পারে। অপেক্ষা করতে লাগলো সাফি উঠে নিশ্চই কল করবে। তখন তিতিরের নাম্বারও পাওয়া যাবে। শুধু শুধু ওর বাবাকে কল দিয়ে ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। ও জানে সবুরের ফল মিষ্টি হয়।
তিতির অপেক্ষা করতে করতে একসময় ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিল। এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর তিতিরের বাইরে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ভার্সিটি কোচিং। আজ ক্লাস নেই তবু বিকাল ৩ টার দিকে ক্লাসের কথা বলে বের হলো তিতির। একটা বাসা পরেই মুগ্ধর বাসা। বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো,
-“আপা কাউকে খুজতেছেন?”
-“হ্যা, ভাই আসলে আমি একজনকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার কাছে ফোন নাম্বার নেই কিন্তু উনি এই বাসাতেই থকে।”
-“ও। নাম কি?”
-“ওনার নাম মুগ্ধ।”
-“এটা আবার কেমন নাম! যাই হোক, আপা এই বাসায় এই নামে তো লেউ থাকে না।”
-“একটু ভাল করে সিওর হয়ে বলেন না।”
লোকটা বলল,
-“আসলে আমার কাছে সব ভাড়াটিয়া এবং তাদের সব মেম্বারদের নামের লিস্ট আছে। আমি এ বাসায় ৫ বছর ধরে আছি। সত্যি বলছি আপা, এই নামে এখানে কেউ নাই।”
তিতির মন খারাপ করে চলে আসলো। মুগ্ধ ওকে মিথ্যে বলল! কিন্তু কেন মিথ্যে বলবে? প্রচন্ড মন খারাপ হলো। হেটে নিজের বাসা পর্যন্ত আসতে যেন পা ভেঙে আসছিল। বাসায় ঢুকলো না তিতির। ছাদে চলে গেল। কিছুই ভাল লাগছে না ওর।
বিকাল ৫ টার দিকে বাসা থেকে বের হলো মুগ্ধ। তিতিরের বাসার সামনে যাবে। কি করবে জানেনা কিন্তু যাবে। আর অপেক্ষা করতে পারছে না। গেট দিয়ে বের হয়ে আবার ফেরত আসলো দারোয়ানকে ডেকে বলল,
-“লিটন ভাই শোনো।”
-“জ্বী ভাই বলেন।”
-“আমাকে খুঁজতে একটা মেয়ে আসতে পারে। তুমি তাকে নাম জিজ্ঞেস করবে। যদি নাম বলে তিতির তাকে আমার ফোন নাম্বার টা দিয়ে দেবে।”
-“আচ্ছা।”
মুগ্ধ একথা বলে বের হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আবার ফিরে আসলো। বলল,
-“লিটন ভাই…।”
-“বলেন ভাই।”
-“নাম জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আসলে একজনই আসবে নাম্বারটা দিয়ে দিও।”
লিটন হেসে বলল,
-“আচ্ছা ভাই।”
মুগ্ধ বলল,
-“আরেকটা ইম্পরট্যান্ট কথা। ও কিন্তু মেহবুবকে খুঁজবে না, মুগ্ধকে খুঁজবে। আমার ফ্যামিলি নেম মুগ্ধ বুঝলা? এখানে ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের সাথে থাকি তো তাই এখানে সবাই ফরমাল নামটাই ডাকে।”
-“হায় হায় ভাই আগে বলবেন না?”
-“কেন আসছিল? আর তুমি বলে দিসো মুগ্ধ এখানে থাকে না?”
-“হ্যা ভাই ৩ টার দিকে আসছিল। খুব সুন্দরী একটা মেয়ে অল্পবয়সী। কিন্তু ভাই আপনের নাম যে মুগ্ধ তা তো আমি জানতাম না। সবাই তো দেখি আপনেরে মেহবুব বইলাই ডাকে।”
-“শিট! আমি যে কেন তোমাকে সকালে বললাম না। উফফফ!”
-“সরি ভাই।”
-“না না। ঠিক আছে। তুমি কেন সরি হবা? আমি তো তোমাকে আগে বলি নাই।”
মুগ্ধ সোজা চলে গেল তিতিরের বাসার সামনে। রাস্তার অপজিটে দাঁড়িয়ে বাসার সব বারান্দা আর জানালাগুলোতে চোখ বুলাতে লাগলো। এমনই একটা যায়গা একটা চায়ের দোকানও নেই, ধুর! শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকাটা খুবই অস্বস্তিকর। হঠাৎ দেখলো একটা চা ওয়ালা আসছে, যারা ফেরি করে চা বিক্রি করে। থামালো মুগ্ধ,
-“ওই মামা চা দাও তো।”
লোকটা রাস্তায় বসলো। বলল,
-“মামা কি চা দিমু?”
-“যা আছে সব দাও।”
চা ওয়ালা বোকা হয়ে গেল। বলল,
-“মানে?”
-“লেবু চা দাও।”
লোকটা একটা ওয়ান টাইম কাপে চা দিল। মানে এখন টাকা নিয়ে চলে যাবে। মুগ্ধ বলল,
-“মামা তুমি আমার সাথে এখানে বসে থাকবা এক ঘন্টা। কত টাকা নিবা?”
-“আমি এইখানে বইসা থাকমু কেন?”
-“আমি চা খাব তাই। আর ঘন্টায় কত টাকা নিবা বলো আমি দিব।”
-“এক ঘন্টা ৫০ টাকা।”
-“আমি তোমাকে এক ঘন্টায় ১০০ টাকা দিব। তুমি খুশি মনে বসে থাক আর আমাকে চা খাওয়াও।”
চা ওয়ালা এই অফার পেয়ে খুশি হলো।
এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। চা ওয়ালাকে আরো এক ঘন্টার জন্য কন্ট্যাক করা হয়েছে। মুগ্ধ এই এক ঘন্টায় কয় কাপ চা খেয়েছে তা ও নিজেই জানেনা। তাও ভাল এই রাস্তাগুলো অনেক বড় বড় আর ভিড়ও থাকে না তাই এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও তেমন কারো নজরে আসেনি। কোনো বারান্দা বা জানালায়ও তিতিরকে দেখতে পায়নি।
তিতির ছাদ থেকে নেমে এসেছে অনেকক্ষণ। ওর আর কিছুই ভাল লাগছে না। সাফিকে আবার কল দিল, নাম্বার বন্ধ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধুম করে বৃষ্টি নামলো। কি যে দিন আসলো। পাহাড়ে পুরো শীত আসলেও ঢাকায় অল্প অল্প পড়তে শুরু করেছে। এই দিনে বৃষ্টি! অবশ্য ভালই লাগছে। তিতির বৃষ্টি দেখতে বারান্দায় গেল। বারান্দায় গিয়ে রাস্তার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল অ্যাশ কালারের শার্ট পড়া ছেলেটার দিকে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ওদের বাসার দিকে তাকিয়ে আছে, দৃষ্টি বারবার এদিক ওদিক করছে। এই ভরা সন্ধ্যার অন্ধকারেও মানুষ্টিকে চিনতে কষ্ট হলোনা তিতিরের। বুকের ভেতর থেকে একটা কান্না উঠে আসতে চাইলো। এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভূত হলো। কিন্তু মুগ্ধ যে ওদের বারান্দার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। তিতির কয়েকবার হাত নাড়লো মুগ্ধ দেখতে পেলনা। তিতির ভেতরে আসলো। কি ছুঁড়ে মারবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কয়েকটা লিপস্টিক নিয়ে একটা রুমালে বাঁধলো। এই লিপস্টিক গুলোর আর দরকার নেই। এগুলোই নষ্ট হোক। তারপর তা নিয়ে বারান্দা থেকে ছুঁড়ে মারলো মুগ্ধর গায়ে। মুগ্ধর গায়ে না লাগলেও মুগ্ধর সামনে এসেই পড়লো। তা দেখতে পেয়ে উপড়ে তাকাতেই তিতিরকে দেখতে পেল। মুগ্ধ ইশারা করলো তিতিরকে নিচে নামতে। তিতির ইশারায় বোঝালো আসছে। কিন্তু বাসায় কি বলে বের হবে এই ভর সন্ধ্যায়? তাও বৃষ্টির মধ্যে! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ড্রইং রুমে কেউ নেই। কিছু না বলেই যাক তাহলে পরে যা হওয়ার হবে। তিতির চোরের মত দরজা খুলে বেড়িয়ে এল। এক দৌড়ে নিচে, সেসময় দারোয়ানও ছিলনা গেটে, বাহ! দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল। হেটে হেটে নয়। এক দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো মুগ্ধর সামনে। ততক্ষণে তিতিরও ভিজে সপসপে। আর এক সেকেন্ডের অপেক্ষাও না করে মুগ্ধ বলল,
-“আই লাভ ইউ তিতির।”
মুগ্ধর চুল, চোখের পাতা, ঠোঁট বেয়ে বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছিল। তিতির রিপ্লাই দিতে গিয়েও পারলো না। কথাটা যেন গলায় আটকে গেল। কেন এমন হলো! খুশিতে ও কথাই বলতে পারছে না। এক পা এগিয়ে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো তিতির। মুগ্ধ উত্তর পেয়ে গেল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।