গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে ক্ষ্যান্ত হলো পরী। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শায়েরের দিকে তাকালো। একটু আগেই সে স্বপ্নে দেখেছে কয়েক জন কালো মুখোশধারী লোক তার কাছ থেকে শায়ের কে টেনে হিঁচড়ে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। তারপর ওর হাত পা বেঁধে রেখেছে। একজন হাতে করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে যেই না শায়েরের গলায় বসাতে যাবে ঠিক তখনই ঘুম ভাঙে পরীর। সে ঘামছে খুব,এমন বাজে স্বপ্ন সে কখনোই দেখেনি। শায়ের যাতে টের না পায় তাই সে আবার শুয়ে পড়ল। শক্ত করে শায়ের কে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলল,’আপনাকে কখনো হারাতে দেবো না। আমাকে বিলীন করে হলেও আপনার অস্তিত্ব আমি টিকিয়ে রাখবো।’

সে রাতখানা আর ঘুমাতে পারল না পরী। শায়ের কে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে রইল। ভোর বেলাতে ঘুমালো পরী। ততক্ষণে শায়ের উঠে পড়েছে। পরীকে ঘুমাতে দেখে সে আর ডাকলো না। ফুপুকেও ডাকতে মানা করে দিলো।
পরী ঘুম থেকে উঠে শায়ের কে পেলো না। সে বুঝলো তার স্বামী নিজ কাজে চলে গেছে। শায়ের জানে পরী প্রায় রাতই নির্ঘুমে কাটায়। তার কারণ পরীর বিষন্নতা। পরী আজও তার মাতৃত্ব নিয়ে মন খারাপ করে। রাতে ঘুম হয় না তার। এজন্য প্রায়শই দেরিতে ঘুম ভাঙে পরীর। তাই শায়ের ওকে বিরক্ত করে না।
রাতের স্বপ্ন টা পরীকে বেশ ভাবায়। কিন্ত পরমুহূর্তে যখন শায়েরের সান্নিধ্য পায় তখন সব ভুলে যায়। পরী শায়েরকে চিঠির কথা জিজ্ঞেস করতে সে বলে নূরনগরে ওর একজন বন্ধু আছে। ওর মা অসুস্থ তাই টাকা চেয়ে চিঠি লিখেছে। সেজন্য শায়ের কে টাকা নিয়ে নূরনগরে যেতে হবে। পরী বলে সেও যাবে কিন্ত শায়ের রাজি হয়না। তার আড়তে কাজ আছে। তাই সে একদিনের ছুটি নিয়ে সেখানে গিয়ে টাকা দিয়ে আবার চলে আসবে। এবং পরে বেশ কিছুদিন ছুটি নিয়ে পরীকে ওর গ্রামে বেড়াতে নিয়ে যাবে। পরী তাতেই রাজি হলো।

তারপর কেটে গেলে কয়েক মাস। শায়ের ছুটির জন্য চেষ্টা করেও ইলিয়াসের থেকে ছুটি পেলো না। পরী নিজেও অপেক্ষা করে ছুটির জন্য। ঈদ ছাড়া শায়ের বোধহয় আর ছুটি পাবেনা তাই পরীর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
এমনি একদিন দুপুর বেলা,শায়ের দুপুরের খাবার খেয়ে বেড়িয়ে গেছে। পরী উঠোনের কোণে বসেছিল। হঠাৎই সে থমকে গেল পরিচিত একটা মুখ দেখে। ‘জুম্মান’ বলে সে দৌড়ে গেলো তার কাছে। খুশি হয়ে বলে,’জুম্মান কেমন আছিস? আমি খুব খুশি হয়েছি তোকে দেখে।’

জুম্মানের হাবভাব দেখে পরীর ভালো লাগলো না। কেমন ফ্যাকাশে হয়ে আছে মুখটা। পরী জিজ্ঞেস করল,’কি হয়েছে জুম্মান? সব ঠিকঠাক আছে তো? বাড়ির সবাই ভাল আছে?’

থমথমে গলায় জুম্মান বলে,’বড় আম্মার অসুখ করছে আপা। ডাক্তার কইছে বাঁচবো না। তোমারে নিয়া যাইতে কইছে। তুমি যাইবা না?’

পরী মুহূর্তেই চুপ হয়ে গেলো। অবিশ্বাস্য লাগল জুম্মানের কথাগুলো। তবে পরমুহূর্তে মায়ের জন্য মনটা কেঁদে উঠল পরীর। চোখ থেকেও নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। সে বলল,’কি হয়েছে আম্মার? তুই এসব কি বলিস জুম্মান?’

-‘তোমারে দেখতে চাইছে আম্মা। আহো আমার লগে।’
-‘তুই একা এসেছিস?’
-‘নাহ আব্বা গাড়ি আর লোক পাঠাইছে। তুমি আহো তাড়াতাড়ি।’

-‘আমি যাবো জুম্মান। কিন্ত উনি আসুক একসাথে যাবো।’
-‘শায়ের ভাই পরে যাইবোনে। তুমি আগে আহো। বড় আম্মা মনে হয় আর বেশিক্ষণ বাঁচবো না। মরার আগে তোমারে দেখতে চায়।’

মায়ের মরার কথা শুনে পাগলপ্রায় পরী। তাছাড়া রাত ছাড়া শায়ের ফিরবে না। কাকে দিয়ে শায়ের কে খবর পাঠাবে তাও মাথায় আসছে না পরীর। তাই সে খুসিনা কে সবটা খুলে বলে। ফুপু পরীকে আশ্বস্ত করে। সে পরীকে জুম্মানের সাথে যেতে বলে। শায়ের আসলে সে নিজ দায়িত্বে শায়ের কে নূরনগর পাঠিয়ে দেবে। পরী কিছু না ভেবেই জুম্মানের সাথে নূরনগরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে গেলো পরী। বারবার আল্লাহর কাছে মায়ের জন্য সময় ভিক্ষা চাইতে লাগল। পরী যাওয়া অবধি যেন মালা বেঁচে থাকে। চোখের জলে বুক ভাসাতে ভাসাতে পরী পৌঁছালো জমিদার বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে সে দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল।

বৈঠক পেরিয়ে মহিলা অন্দরে ঢুকতেই কুসুমের মূখোমুখি হলো সে। পরীকে দেখা মাত্রই কুসুমের হাতের থালাবাসন ঝমঝম শব্দে মেঝেতে পড়ে গেল। চোখের কোণে জল দেখা দিলো তার। কুসুম দৌড়ে পরীর কাছে এসে বলল,’পরী আপা আপনে এইহানে ক্যান আইছেন?’

পরী জবাব না দিয়ে বিচলিত হয়ে মালার ঘরের দিকে এগোলো। কুসুম ওর হাত টেনে ধরে বলে,’আপনে চইলা যান আপা। বাড়িতে অহন কেউ নাই। আপনে পলাইয়া যান তাড়াতাড়ি।’
পরী অবাক হলো কুসুমের কথা শুনে বলল,’কি যা তা বলছিস কুসুম? আম্মা অসুস্থ আমি দেখতে আসছি। আম্মা কোথায়? আম্মা আম্মা,,,’

জোর গলায় পরী মালাকে ডাকতে লাগল। রুপালি ঘর থেকে ছুটে এলো। পরীকে দেখে সে পরীর হাত চেপে ধরে বলল,’পরী তুই এখানে এসেছিস কেন?’
-‘তোমরা এমন করছো কেন আপা? আমি এসেছি তো কি হয়েছে? আম্মা অসুস্থ আমি আম্মাকে দেখতে এসেছি।’
রুপালি ধমকে বলল,’কে তোকে বলেছে আম্মা অসুস্থ?’
-‘জুম্মান গিয়েই তো আমাকে বলল। তারপর আমি জুম্মানের সাথে চলে এলাম।’

রুপালি ভয় পেয়ে গেলো। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল ওর। সে বলল,’তারমানে শায়ের তোর সাথে আসেনি। একা কেন এসেছিস তুই? এখন কি হবে?’

রুপালি ভিত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ভয়ে রীতিমত কাঁপছে সে।
এমন সময় মালাকেও দেখা গেল। সে পরীর গলার আওয়াজ পেয়ে এসেছে। মালাকে দেখে পরী দ্রুত পদে তার কাছে গেলো। মালার দুই বাহু ধরে মালাকে দেখতে দেখতে বলল,’আম্মা আপনি ঠিক আছেন তো? আপনার কিছু হয়নি তো?’

রুপালির মতো মালাও কাঁদছে। সে পরীকে বলল, ‘তুই এখান থাইকা চইলা যা পরী। ওরা আহার আগে তাড়াতাড়ি যা।’
পরী আর পারছে না। সবাই কেন ওকে চলে যেতে
বলছে? মালাকে দেখে তো সুস্থ মনে হচ্ছে। তাহলে জুম্মান কেন ওকে মিথ্যা বলে আনলো? পরী চিৎকার করে বলল,’তোমরা সত্যিটা বলবে? কি হয়েছে? আম্মা যখন সুস্থ তাহলে জুম্মান মিথ্যা বলে আমাকে আনলো কেন? আর এখন আমাকে পালাতে বলছো কেন? এই বাড়িতে হচ্ছে কি?’
রুপালি পরীর হাত টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,’পরে শুনিস ওসব কথা। আগে নিজের জীবন বাঁচা। তুই এক কাজ কর ছাদে গিয়ে যেভাবে আগে বাড়ির বাইরে যেতিস সেভাবে চলে যা। বাইরে এখন অনেক কড়া পাহারা।’

রুপালি পরীর হাত টানতে লাগল। কিন্ত পরী এক পা ও নড়লো না। সে আজকে সব জেনেই ছাড়বে। সে বলে উঠল,’আমি যাবো না আপা। আগে তোমরা আমাকে সব বলো। নাহলে আমি কোথাও যাবো না।’

-‘বেশি কথা না বলে নিজের ঘরে যাও পরী।’

আফতাবের কন্ঠস্বর শুনে পিলে চমকে গেল সবার। শুধুমাত্র পরীই স্থির দাঁড়িয়ে রইল। কুসুম থালাবাসন উঠিয়ে চলে গেল। মালা আর রুপালি আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। পরী আফতাবের নিকটে গিয়ে বলে, ‘আমাকে বলুন কি হয়েছে? আম্মা তো সুস্থ আছে। তাহলে জুম্মান মিথ্যা বলল কেন? সব সত্যি আমি জানতে চাই?’

-‘তোমাকে সব বলা হবে। এবং আজ রাতেই সব জানতে পারবে তুমি। সব জানতে হলে এখন ঘরে যাও।’

পরী নিজ ঘরে গেলো না। আজ তার সব প্রশ্নের জবাব চাইই চাই। তাই সে কড়া গলায় বলল,’আমি কোথাও যাবো না। আমাকে বলুন কি হয়েছে?’

আফতাব এগিয়ে গেলো মালার দিকে। একহাতে গলা চেপে ধরে মালার বলে,’মেয়েকে থামা। শেষ সময়ে ওর এতো কথা সহ্য হচ্ছে না।

পরী বিষ্মিত নয়নে তাকালো নিজের জন্মদাতার দিকে! এ কোন রূপ দেখাচ্ছে আফতাব!!রুপালি দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে কাঁদতেছে। মালার শ্বাস আটকে আসছে। পরীর এতক্ষণে হুশ ফিরল। সে দৌড়ে গিয়ে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো আফতাব কে। ছিটকে দূরে সরে যায় আফতাব। মালাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,’আম্মা আপনি ঠিক আছেন তো?’

মালা ঘনঘন শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা নাড়লো। পরী আফতাবের দিকে তাকিয়ে বলে,’আপনার হয়েছে কি আব্বা? আম্মার গায়ে হাত তুলছেন কেন?’

আফতাব কথা বলে না। পরীর সাথে এখন তিনি পেরে উঠবেন না তাই তিনি অন্দর ত্যাগ করলেন। আফতাব যেতেই রুপালি মালার কাছে এসে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আর বলতে লাগল,’কোন অভিশাপ লাগলো আম্মা? আমাদের জীবনটা এমন কেন হলো? সত্যি গুলো চোখের আড়ালে থাকলে কিই বা হতো আম্মা?’

রুপালি কাঁদছে আর পরী দেখছে। সে প্রশ্ন করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে। তাই অবুঝ নয়নে মা আর বোনকে দেখছে সে। রুপালি হঠাৎ কান্নার বেগ কমিয়ে পরীকে বলে,’তুই না প্রশ্ন করেছিলি কি হয়েছে? সবচেয়ে সত্যি কথাটা আজ তোকে বলবো।’

পরীর চাহনিতে রুপালি চোখের পানি মুছলো তারপর বলল,’যে সুখান পাগল কে তুই চিনিস সে আর কেউ নয়,সে হচ্ছে রাখাল। পরী আমাদের সোনা আপার রাখাল।’
মালাকে আলতো করে ধরে বসেছিল পরী। রুপালির কথা শুনে শরীরের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল।
-‘সোনা আপা রাখালের সাথে পালাতে পারেনি পরী। আর না পেরেছে সংসার করতে। সোনা আপা তো রাস্তার ধারের কদম গাছের নিচে ঘুমিয়ে আছে পরী। আপার রাখাল ওকে এখনও পাহারা দিচ্ছে। আব্বা তার নিজের হাতে তার মেয়ের ভালোবাসা আর মেয়েকে কবর দিয়েছে।’

কথা বলার শক্তি পরী হারিয়ে ফেলেছে। ওর জানামতে সোনালী রাখালের সাথে দূর অজানায় চলে গেছে। কিন্ত সোনালীর গল্প টা যে এখনও নূরনগরের রয়ে গেছে তা আজ জানতে পারলো পরী। বারবার ওর চোখের সামনে সোনালীর হাসি মুখটা ভেসে উঠল। পরী সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছিল সোনালীকে। তাই ওর মৃত্যুর খবর টা আঘাত হানছে পরীর বুকে। সে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,’ওই কবরটা সোনা আপার!!আর সুখানই রাখাল!!’

রুপালি পরীর কথাটা শুনে মালাকে জড়িয়ে ধরে। মালাও একসাথে দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। তবে কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না। সন্ধ্যা নেমে এসেছে ততক্ষণে। তখনই অন্দরে ছয় সাত জনের মতো পুরুষ প্রবেশ করল। তাদের মধ্যে আফতাব ও আখির আছে। আফতাব কে দেখে মালা পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করে বলে,’দোহাই লাগে আপনের। আমার পরীরে ছাইড়া দেন? ও আপনের কোন ক্ষতি করবো না। ওরে আমি শায়েরের কাছে পাঠাইয়া দিমু। ও কোনদিন এই গ্রামে আসবো না।’

-‘হুম তোর মেয়েকে ছেড়ে দেই আর ও আমাদের কে শেষ করুক? আমি কি আর ভুল করি?’

আফতাব হুকুম করলো পরীকে দড়ি দিয়ে বাঁধতে। পরী শুধু হতবিহ্বল হয়ে সব দেখতে লাগল। ওর নিজেরই পিতা ওকে মারার জন্য লোক এনেছে! কিন্ত ওর অপরাধ টা কি?? মালা শক্ত করে পরীকে ধরে আফতাবের কাছে অনুরোধ করছে। রুপালি বাবার পা ধরে মাফ চাইছে বারবার। দুজন লোক এগিয়ে এসে মালার থেকে পরীকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর হাতদুটো দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধলো। বাধা দিলো না পরী। সে একবার মালাকে দেখছে আরেকবার রুপালিকে ও আফতাব কে। লোকটা টেনে তুলল পরীকে। পরী এবার বাধা দিলো বলল, ‘আমাকে টেনে নিয়ে যেতে হবে না। আমি নিজেই যাচ্ছি।’

পরী মালার সামনে গিয়ে বলে,’কাঁদবেন না আম্মা। জানিনা কোন কারণে আপনার স্বামী আমাকে মারতে চাইছে? আজ তো সব উত্তর আমি পেয়ে যাবো। আমি আসি।’
যাওয়ার আগে পরী রুপালিকে ওর নেকাব টা নামিয়ে দিতে বলে। রুপালি তাই করে এবং জড়িয়ে ধরে পরীকে। লোকগুলো সময় না দিয়ে পরীকে নিয়ে গাড়িতে তোলে।
গাড়ি থেকে নামার পর পরী বুঝতে পারে এটা ওদের বাগান বাড়ি। বড় বড় পাঁচিল দেওয়া চারপাশে। বাইরেও কড়া পাহারা। ভেতরে সাধারণ কারো ঢোকা নিষেধ। পরী এও বুঝতে পারল যে আজ এই বাড়ির ভেতর থেকে ওর জীবিত ফেরা অসম্ভব। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ভেতরে পা রাখে পরী।
একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো পরীকে। তারপর একটা চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হলো। পরী চারিদিকে চোখ বুলায়। ঘরটাতে একটা লম্বা টেবিল আর কয়েকটা চেয়ার ব্যতীত আর কিছুই নেই। নিশ্চুপ রইল পরী।
লাঠির ঠকঠক শব্দে চোখ তুলে সামনে তাকালো পরী। নওশাদ কে সামনে দেখে অবাক হলো না। সব চাইতে অবাক হওয়ার কথা হলো ওর বাবা ওকে মারতে চায়। সেখানে নওশাদ কি? নওশাদ চেয়ার টেনে পরীর মুখোমুখি বসলো। হাতের লাঠিটা মেঝেতে রাখলো। তার পর পরীর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,’বাহ এখনও দেখছি মুখটা ঢেকে রেখেছো। রূপটা কি শুধু শায়ের কে দেখাবে? আমিও তো অপেক্ষা করছি। আমাকে একটু দেখাবে না? নাহ থাক,একটু পর আমি এমনিতেই দেখতে পাবো। তোমার লাশটা তো আমাকেই কবর দিতে হবে!!’

পরীকে চুপ থাকতে দেখে নওশাদ মাথা চুলকে বলল, ‘সাহসী পরী!! আজকে চুপ কেন? খুন করবে না? শশীল কে তো এক নিমিষেই শেষ করে দিলে। সাহস আছে তোমার। কিন্ত তোমার বড় বোন সোনালীর খুনিকে শাস্তি দেবে না? শুধু সোনালীর খুনি কেন? পালক আর বিন্দুর খুনিকে শাস্তি দেবে না?’

পরী সোজা হয়ে বসে। বলে,’পালক!!ডাক্তার আপা পানিতে ডুবে মরেনি?’
ঘর কাঁপিয়ে হাসে নওশাদ বলে,’তুমি কি বোকা পরী। কিছুই দেখছি জানো না। ঠিক আছে আমি সব বলছি। অন্তত মরার আগে তোমার সব জানার অধিকার আছে। পালকের কথা পরে বলি। আগে আসি বিন্দুর কথায়। বিন্দুর মৃত্যুর রহস্য কিছুটা তো জানা তোমার।’

পরী বসা থেকেই গর্জে ওঠে বলে,’কারা মেরেছে বিন্দুকে?’

-‘কারা নয় বলো কে মেরেছে? কে মেরেছে জানো!!
সম্পান মাঝি।’
-‘মিথ্যা কথা,সম্পান মাঝি আমার বিন্দুকে ভালোবাসতো। সেজন্য সে আত্মহত্যা করেছে।’

এবার নওশাদ আরো হাসতে লাগল যেন কোন কৌতুক বলেছে পরী। হাসি থামিয়ে সে বলে,’ওহ আচ্ছা!!সম্পান আত্মহত্যা করেছে বুঝি??’

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।