‘বউ’ দুই অক্ষরের শব্দটি সম্পূর্ণ নতুন পরী আর শায়েরের কাছে। পরী আজ কারো বউ। তাকে কেউ বউ বলে পরিচয় দিচ্ছে। শীতল স্রোত বইছে যেন শরীরে। পরী শায়েরের থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো। মহিলাটিকে দেখে মনে হচ্ছে অবাক হচ্ছে। মধ্যরাতে কেউ যদি এসে বলে আমি বিয়ে করেছি। তাহলে তো অবাক হওয়ার কথা। মহিলাটি দরজা ছেড়ে বের হয়ে এসে পরীর সামনে দাঁড়াল। হারিকেন মুখের ওপর ধরে দেখার চেষ্টা করলো। তারপর বলল,’বউ!!
হ্যারে সেহরান তুই মজা করস নাকি?’

-‘এতো রাতে কেউ মজা করে? আমার ঘরের চাবি দাও?’
-‘এতো রাইতে বউ পাইলি কই? কার বউ লইয়া আইছোস?’
-‘মাঝরাতে ঘুম ভাঙছে তো তাই উল্টাপাল্টা বকছো। চাবি দাও আমি আমার বউ নিয়া ঘরে যাই।’

শায়েরের মুখে বারবার বউ শুনতে লজ্জাবোধ করছে পরী। তবে এখন তার কিছু বলা বা করার নেই। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। ফুপু আবার বলে উঠল, ‘আরে থাম। বউ কি এমনেই ঘরে যাইবো নাকি? নিয়ম আছে না?’
-‘রাত দুপুরে আবার কিসের নিয়ম ফুপু? এখন সবাই ঘুমাচ্ছে। কাল সকালে যা করার করো।’

ফুপু শুনলো না। দৌড়ে উঠোনে চলে গেল। হাঁক ছেড়ে ডাকতে লাগল সবাইকে। পরী ভড়কে গেল মহিলার কান্ডে। সে চিৎকার করতে করতে বলল, ‘ওরে কেডা কোথায় আছোস রে হগ্গোলে বাইর হ। সেহরান বউ লইয়া আইছে। ওরে হেরোনা,আকবর, আবুল,বাবু রে,,,’

কানে হাত চেপে ধরে পরী। এই মহিলার গলার আওয়াজে কান দুটোই না নষ্ট হয়ে যায়। এ কোথায় এসে পড়লো ও? বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরী। ওদিকে ফুপু ডেকেই চলছে। ঝনাৎ ঝনাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ শোনা গেল। তিনজন দম্পতি বের হয়ে এলো আলো হাতে নিয়ে। হাই তুলতে তুলতে হেরোনা নামের মহিলাটি এসে বলে, ‘আরে খুসিনা আপা। এতো রাইতে চিল্লাও ক্যান?? ডাকাত পড়ছে নাকি?’

-‘হুদা কামে কি চিল্লাই? দ্যাখ সেহরান বউ লইয়া আইছে।’
হেরোনা চমকে ওঠে খুসিনার কথায়। শায়ের বিয়ে করেছে!! তবে তিনি এতে বেশ খুশি হলেন। ভাসুরের ছেলেকে এমনিতেই তিনি অপছন্দ করেন। বাবা মা মারা যাওয়ার পর সবাই শায়েরকে এড়িয়ে চলে। হেরোনা তো দেখতেই পারে না। তার উপর হেরোনার বড় মেয়ে চম্পা শায়ের বলতে পাগল। শায়ের এই বাড়িতে আসতোই না। বছরে দু’তিনবার আসে। তাও খুসিনা ফুপুর কাছে। হেরোনা চিন্তায় ছিলো কিভাবে শায়েরের থেকে মেয়েকে সরাবে। এখন দেখছে মেঘ না চাইতে জল। সে উঁকি দিতে দিতে এগিয়ে গেল পরীর দিকে। মুখ ভেংচে বলে,’কই দেখি দেখি? এতিম পোলারে মাইয়া দিলো কেডা?’

শায়ের চুপ করে রইল। এটা নতুন কিছু না। সহ্য হয়ে গেছে এসব। ছোট থেকেই শুনে আসছে সে। খুসিনা ধমক দিয়ে বলে,’চুপ থাক। আগে ওগোরে ঘরে নেওয়ার ব্যবস্থা কর। থালায় কইরা কাঁদামাটি লইয়া আয়। বউ ঘরে তুলতে হবে তো।’

হেরোনা মুখ ঘুরিয়ে মেজ জা রিনাকে বলে,’তুই যা। আমি চৌকি নিয়া আহি।’

পরী সব কথাই শুনছে। এদের ব্যবহার ওর ভালো লাগছে না। এভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলার কি আছে?রাগ হচ্ছে হেরোনার উপর। রিনা একটা থালাতে করে ভেজা কাদা নিয়ে এসে উঠোনে রাখে। হেরোনা দুটো চৌকি এনে রাখলো তার সামনে। খুসিনা শায়ের কে উদ্দেশ্য করে বলে,’এই ছ্যামড়া বউ লইয়া এইহানে খাড়া আয়।’
শায়ের বুঝতে পারলো এরা তাকে ছাড়বে না। তাই সে পরীর কাছে গিয়ে বলে,’চলুন,নাহলে এরা শান্ত হবে না।’
-‘কি বউর লগে গুজুর গুজুর করস? হাত ধইরা আন।’
শায়ের হাত ধরল পরীর। তারপর এসে দুজন দুই চৌকির উপর দাঁড়ালো। খুসিনা একটা বাটিতে করে খানিকটা খেজুরের গুড় এনে বলল,’ও নতুন বউ মুখ খোল দেহি? মিডা খাও,তাইলে মিডা মিডা কথা কইবা।’

পরী নেকাব খুলল না। সামনে তিনজন অচেনা পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। পরী শায়েরের দিকে তাকাতেই সে বলল,’আমি ছাড়া আমার বউয়ের মুখ কোন পুরুষের দেখা নিষিদ্ধ ফুপু।’
-‘অ্যাহ,মনে হয় আসমানের পরী ধইরা আনছে। যে অন্য কেউ দেখলে লইয়া যাইবো।’
কথাটা বলেই খিলখিল করে হাসতেই লাগল হেরোনা। সাথে রিনাও যুক্ত হলো। শায়ের মুচকি হেসে বলল, ‘আসমানের পরী কি না জানি না। তবে সে এখন আমার ঘরের পরী বুঝলেন?’
হাসি বন্ধ করলেন ওনারা। খুসিনা বললেন,’তোরা ঘরে যা আমি বউ নিয়া পরে যামু।’
হেরোনা চলে গেলেও রয়ে গেল রিনা। আকবর,আবুল, বাবু নিজ ঘরে চলে গেল। খুসিনা গুড় খাওয়ালো না। পরীকে বলে,’ও বউ এই কাদায় পা দেও দেখি।’

পরী তাই করলো কাদাতে পা ডুবিয়ে দিলো। রিনা পা ধুয়ে দিলো। তারপর শায়ের কে ওর ঘরের চাবি দিলো খুসিনা। পরীকে সাথে নিয়ে পাশের ঘরে গেল শায়ের। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে ওরা। খুসিনা এসে হারিকেন দিয়ে গেল। আলোতে পরী স্পষ্ট দেখতে পেলো ঘরের ভেতরটা। ঘরের এক পাশে একটা পালঙ্ক। তবে বেশি বড় নয়,দুটো জলচৌকি আর একটা ছোট আলমারি। ঘরের বেশির ভাগ জায়গা খালি। ঘরটা যে সম্পূর্ণ টিনের তাও বুজলো পরী। শায়ের একপাশে ব্যাগ রেখে বাইরে চলে গেলো।
পরী আবার পুরো ঘরে চোখ বুলায়। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হবেই বা না কেন? খুসিনা কয়েক দিন পর পর ঘর পরিষ্কার করে। অপরিষ্কার জায়গা শায়ের একদম পছন্দ করে না।
নেকাব টা এবার পরী খুলল। মাথার ওড়না খুলতেই পিঠ ছড়িয়ে গেল ঘন চুলগুলো। পরনের শাড়িটা ঠিক করতে করতে খেয়াল করলো সে বেলি ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে। তীব্র সে ঘ্রাণ অনুসরণ করে পরী জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালার পাশে একটা বেলি ফুল গাছ লাগানো তাতে অনেক ফুল ধরেছে। জানালার গ্রীল ধরে পরী সুবাস নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
কম্বল আর বালিশ নিয়ে ঘরে ঢুকলো শায়ের। পরীর দিকে প্রথমে চোখ গেলো তার। পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরী। শায়ের কথা না বলে পালঙ্কের উপর বালিশ আর কম্বল রাখলো।
-‘আল্লাহ!!!ওইহানে কি করো নতুন বউ?’

পরী চমকে পেছন ফিরে তাকালো খুসিনার দিকে। শায়ের নিজেও তার ফুপুর দিকে তাকালো। কিন্ত খুসিনার মুখ থেকে টু শব্দটিও আর বের হলো না। সে একধ্যানে পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। ফুপুর ভাবান্তর না দেখে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকালো পরীর দিকে। জোরে বলতে না পারলেও বিড়বিড় করে সে বলে উঠল,মাশাল্লাহ।’
খুসিনা ভাবলো সে বোধহয় স্বপ্ন দেখতেছে। তার শায়েরের জন্য এত সুন্দর মেয়ে আল্লাহ রেখেছেন এটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পরীর দিকে দৃষ্টি রেখে তিনি এগিয়ে গেলেন। থুতনিতে হাত রেখে বললেন,’আমার সেহরান এতো সুন্দর বউ আনছে!! চান্দের লাহান চেহারা। ও সেহরান তোর ভাগ্য যে ভালা তা এতো দিন বুঝি নাই রে। স্বামী নিয়া সুখি হও মা। আমার সেহরান বড় ভালা গো নতুন বউ।’

পরী শায়েরের দিকে তাকালো। সে এখনও চোখের পলক ফেলতে পারেনি। মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেলতে গেলে পরী উধাও হয়ে যাবে। শায়ের কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেন আড়ষ্ঠ হলো পরী। মাথা নিচু করে ফেললো তখনি। খুসিনা বলল, ‘হলদির ঘ্রাণ এহনো গায়ে আছে তো। এই রাইত বিরাইতে জানালার ধারে কি করো? তেনারা আশেপাশে আছে গো। রাইতের বেলা বুঝি বাইরে যাও!!’

খুসিনা বিদায় নিয়ে ঘরে চলে গেল। শায়ের জানালা বন্ধ করে দিলো। এখন ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। উসখুস লাখছে। নতুন বিয়ে করলে কি সবাই এরকম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে? আগে তো পরীর সাথে কথা বলতে এরকম হতো না। আজ বউ বলে কি এরকম হচ্ছে??কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ মেলল সে। পরী পালঙ্কের ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। শায়ের বলল,’আপনার বাবার মতো ঐশ্বর্য নেই আমার। জানি না আপনাকে ঠিক কতটা ভাল রাখতে পারবো!!তবে আপনাকে ভালো রাখার সব রকমের চেষ্টা আমি করব। এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।’

পালঙ্কের উপর উঠে বসে পরী। কম্বল টা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল সে। কিন্ত শায়ের জলচৌকিতে বসে রইল। পরী ভাবলো বাকি রাত টুকু কি শায়ের ওভাবে কাটাবে নাকি? শীত অনেক,কষ্ট হবে তো। কিন্ত একথা মুখ ফুটে পরী বলতে পারে না। আজ লজ্জায় মুখের কথা আটকে আসছে বারবার।

সকালে বেশ দেরি করেই ঘুম ভাঙে পরীর। আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই পাশে তাকালো। শায়ের নেই। জলচৌকি ফাঁকা। কখন ঘুম থেকে উঠলো সে? পালঙ্ক থেকে নেমে বাইরে আসতে যেয়েও থেমে গেল পরী। না জানি বাইরে কতজন পুরুষ আছে? পরীর আর যাওয়া হলো না। তাই চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর একদল মহিলা এলো ঘরের মধ্যে। পরীর চট করে দাঁড়াল ওনাদের দেখে। মহিলা গুলো পরীকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। একজন বললেন,’আমাগো সেহরানের কপাল গো!! মেলা সুন্দর বউ পাইছে। সেহরান রে ধইরা আন তো দেহি পাশে খাঁড়াইলে কেমন দেহায়?’
-‘হেয় তো কামে ব্যস্ত গো। বউ লুকাইতে বেড়া দিতাছে। কলপাড় বেড়া দিছে আর অখন নিজের ঘরের পাশে বেড়া দিতাছে। সুন্দরী বউ বইলা কথা।’

দুজন মহিলা হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল। একটু পর তারা শায়ের কে টেনে হিঁচড়ে ঘরে নিয়ে এলো। ধাক্কা দিয়ে পরীর দিকে পাঠিয়ে দিলো। শায়ের কোন রকমে পরীর গায়ে পড়া থেকে বেঁচে গেলো। নিজেকে সামলিয়ে সে পরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,’তোমরা এখন যাও তো!! অনেক হয়েছে এবার যাও।’
হাসির তোড় যেন বাড়লো সবার। একজন বললেন, ‘বুঝছি তো বউ লইয়া এহন একলা থাকতে চাও। তা ভালা কইরা কইলেই পারো।’
একজন ধাক্কা দিলো পরীকে। পরী গিয়ে পড়লো শায়েরের উপর। পরবর্তী ধাক্কা দেওয়ার আগেই শায়ের একহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে ঘুরিয়ে এনে বলে,’তোমরা যাবে?এতো রসিকতা আমার বউ পছন্দ করে না। যাও তো?’
হাসি তামাশা করতে করতে সবাই চলে গেল। শায়ের এখনও পরীকে আগের মতোই ধরে রেখেছে। খেয়াল হতেই শায়ের সরে দাঁড়িয়ে বলল,’ক্ষমা করবেন আপনাকে বাঁচাতে আপনাকে ছুঁতে হয়েছে। আর কখনোই তা হবে না। আসলে ওনারা মজা করছিলেন। কিছু মনে করবেন না।’

পরী ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। শায়ের পরীকে নিয়ে কলপাড়ের দিকে গেলো। পরী দিনের আলোতে চারিদিক চোখ বুলাতে লাগলো। শায়ের তার ছোট্ট ঘরের চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। এতকাজ সে করলো কখন? নিশ্চয়ই অনেক ভোরে উঠেছে ঘুম থেকে। তখনই ওর মনে পড়ল কাল তো শেষ প্রহরে ঘুমিয়েছে সে। তাহলে শায়ের নিশ্চয়ই জেগে ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে কলপাড়ে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিলো। বাইরে আসতেই সে দেখলো শায়ের গামছা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পরী আসতেই শায়ের গামছা এগিয়ে দিলো। পরীও নিয়ে মুখমন্ডল মুছে নিলো। তখনই দুটো মেয়ের আগমন ঘটে সেখানে।
চম্পা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে,’সেহরান ভাই আপনে নাকি বিয়া করছেন?’
-‘হুম করেছি।’
চম্পা আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তার চোখ গেল পরীর উপর। পরীও চম্পার চোখে চোখ রাখে। মেয়েটাকে বেশ শৌখিন মনে হলো পরীর। চুলগুলো বেণুণি করা,চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া আর ঠোঁটে লিপস্টিক। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটি সাজগোজ করা পছন্দ করে। কিন্ত হঠাৎই মেয়েটার চোখের দুটো ছলছল করে উঠল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছনের মেয়েটি এগিয়ে এসে বলে,’সেহরান ভাই, কত্ত সুন্দর নতুন ভাবি!! আসমানের চান্দের মতন। তা কেমন আছো ভাই? মেলা দিন পরে আইলা।’

-‘ভালো তুই কেমন আছিস?’
-‘খুব ভালা আছি আমি।’
চম্পা দৌড়ে চলে গেছে। তা দেখে চামেলি হেসে বলল,’আপায় কষ্ট পাইছে ভাই। তোমার লাইগা কতো রুমাল সেলাই করছে আর তুমি বিয়া কইরা আনলা?’

চামেলি হাসতে লাগল। পরী অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা কষ্টের কথা বলছে আবার হাসছে! আজব!
শায়ের চামেলি ঘরে যেতে বলে নিজেও পরীকে নিয়ে ঘরে এলো। পরীর সামনে কি সব বলছিল। পরী এখন কি ভাববে? বড্ড সহজ সরল চামেলি। সব কথাতেই হাসবে। সুখ দুঃখ সব কিছুতেই ওর হাসি থামে না।

সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। পরী এতক্ষণ ঘরের বাইরের ছোট্ট উঠোনে বসে ছিল। এমনি এমনি নয়। খুসিনা ফুপু একগাদা মহিলাদের সঙ্গে পরীকে সাক্ষাৎ করাচ্ছে। বিরক্ত হলেও চুপ থাকতে হচ্ছে পরীর। ইচ্ছা করছে ছুটে ঘরে চলে যেতে কিন্ত পারছে না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বিধায় খুসিনা পরীকে ঘরে যেতে বলল। ঘরে আসতেই পরী দেখলো শায়ের ঘুমাচ্ছে। কাল রাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি সে তাই সেই দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে এখনও ওঠার নামগন্ধ নেই। পরী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একটাই ঘর তাই অন্য কোথাও যেতে পারছে না। তাই জলচৌকির উপর বসে রইল।

রাতের খাবার খুসিনা ফুপু ওদের ঘরে এনে খাওয়ালো। তারপর তিনি চলে গেলেন। খাওয়ার পর পরীর শীত যেন তরতর করে বাড়লো। টিনের ঘরের ফাঁক দিয়ে নিশি এসে ঢুকছে। পরী তাড়াতাড়ি কম্বল গায়ে জড়াতেই চোখ পড়ল শায়েরের দিকে। সে কালকের মতোই বসে আছে। পরী ভাবলো আজকেও এভাবে বসে থাকবে নাকি? এই শীতে এভাবে বসে থাকাটা ঠিক বলে মনে হলো না পরীর। তাই সে বলে,’আজকেও কি এভাবে বসে থাকবেন নাকি?’
শায়ের বোধহয় অন্যকিছু ভাবছিল। তাই সে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,’হু,,,।’
-‘বলছি ঘুমাবেন না? সারারাত ওভাবে বসে থাকার চিন্তা করছেন নাকি?’
শায়ের বেখেয়ালি ভাবে বলে,’ঘুমাবো!!কোথায়? ‘

-‘আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে নাকি? আপনি না সাহসী পুরুষ। তাহলে বউয়ের পাশে ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন কেন?’
-‘আমি ভয় পাবো কেন? ঘুমাতে কি কেউ ভয় পায়?’

-‘দেখতেই তো পাচ্ছি ভয়ে কাঁপছেন।’
-‘ভয়ে না শীতে কাঁপছি।’
বলতে বলতে শায়ের ওপর পাশ দিয়ে পালঙ্কে উঠে বসে। পরী মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।

রাত গভীর। ঘুমে মগ্ন পরী। শীতের মধ্যে কম্বলের উষ্ণতা বেশ লাগে পরীর। কিন্ত হঠাৎই ওর ঘুম যেন হাল্কা হয়ে এলো। পরী অনুভব করছে কেউ ওর গায়ে হাত বিচরণ করছে। কিন্ত ও ঘুরতে পারছে না। শরীর এতো ভারী হয়ে গেছে যে সে নড়তেই পারছে না। হাতটা যেন পরীর শাড়ির আঁচল টেনে ধরছে। আঁচলটা জোরে টান দিতেই পরী যেন শক্তি ফিরে পেলো। উঠে বসলো শয্যা ছেড়ে। এই শীতের মধ্য দিয়েও পরী ঘামতে লাগল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।