কর্মজীবি নওশাদ,পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছে নিজের সাম্রাজ্য। যেখানে রানীর মতো থাকবে পরী। রাজকন্যাকে তো রানী হিসেবেই মানায়। তাই পরীর স্থান কোন উঁচু পরিবারে হওয়া উচিত। নওশাদ সেই উঁচু পরিবারের ছেলে। এসব অনেক কথাই বলছে কবির। হাতে পানির গ্লাস নিয়ে নাঈম তা নিরবে শুনে যাচ্ছে। নিজের প্রিয় বন্ধুর অনন্ত শয্যাতে মনক্ষুণ্য তার। এখন আবার পরীর বিয়ে!!এসব মেনে নিতে খারাপ লাগছে নাঈমের। ও চলে যেতেই নিচ্ছিল কিন্ত কুসুম পরীর কথা বলাতে রয়ে গেল। কেন জানি পরীর কথাটা ফেলতে মন চাইলো না নাঈমের। কিন্ত এখন ভাতের সাথে এসব কথাও যে তার হজম করতে হবে তা ভাবেনি। ওদিকে শায়েরের কোন হেলদোল নেই। প্রগ্রাসে গিলছে সে। জমিদারের পারিবারিক সিদ্ধান্তে শায়ের কখনও কথা বলেনি। আজও তাই চুপ করে আছে।
কবিরের কথা শেষ হতে না হতেই আখির বলে উঠল, ‘দেখো এখন এসব নিয়ে আমাদের ভাবার সময় নেই।বন্যায় তো সব তলিয়ে গেছে। তার উপর আমাদের বাড়িতে আসা একজন ডাক্তার মারা গেছে। এজন্য আমাদের কারো মন ভালো নেই। আর নওশাদ তো আমাদেরই ছেলে। ধীরে সুস্থে সব করলেই ভাল হয়।’

আফতাব তাতে সায় দিয়ে বলে,’আর তাছাড়া বন্যার জন্য আমার কাজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা আগে সব ঠিকঠাক করি তারপর নাহয় আগানো যাবে।’
-‘আপনাদের যত সময় যত লাগুক সমস্যা নেই। কিন্ত কথা দিন পরীকে আপনারা নওশাদের হাতে তুলে দেবেন?’

কবিরের কথায় আখির নিজেই কথা দিলো যে সে পরীর বিয়ে নওশাদের সাথেই দিবে। নাঈম আর বসে থাকতে পারল না। খাবার আর তার গলা দিয়ে নামবে না। সে উঠে চলে গেল কলপাড়ের দিকে। হাত ধুয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। সে ভাবতে লাগল সত্যিই তো পরীর স্থান কোন উঁচু পরিবারে হওয়া উচিত। কোন অংশে কম না পরী। বড় ঘরের মেয়ে সে আর আছে জ্যোৎস্নার মতো কোমল রুপ। নওশাদের মতো বড়লোক ছেলেকেই পরীর পাশে মানায়। নাঈম কলপাড় থেকে বের হয়ে নৌকাঘাটে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখা হলো রুপালির সাথে। হাটতে হাটতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে সে। নাঈমকে দেখেই রুপালি বলে উঠল,’আপনি নিশ্চয়ই নাঈম।’

নাঈম অবাক হয়ে দেখছিল রুপালিকে। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা। দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। নাঈম ও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। রুপালির প্রশ্নের জবাবে নাঈম বলে উঠল,’জ্বী।’
-‘আপনাদের কথাই শুনছিলাম পরীর কাছে। আপনাদের সাথে আসা একজন মারা গেছে শুনে খুব খারাপ লেগছে। তবে সবার কথাই পরী আমাকে বলেছে।’
মুচকি হাসলো রুপালি। নাঈম এখনও অদ্ভুত চোখে দেখছে রুপালিকে। তবে পরী ওর কথা বলেছে শুনে ভাল লাগল নাঈমের।
-‘ওহ আমি তো পরিচয় দেইনি। আমি রুপালি পরীর মেজো বোন। আজকে সকালেই এসেছি।’
এখন নাঈম চিন্তামুক্ত হলো। পরীর বোন রুপালি এজন্যই এতো সুন্দর। পরী নিশ্চয়ই রুপালির মতোই সুন্দর। নাঈম বলল,’ওহ,আমি আপনাকে তো দেখিনি তাই চিনতে পারিনি। কিন্ত আপনি অন্দর থেকে বাইরে এসেছেন কেন?’
-‘বুঝলাম না আপনার কথা!!’

-‘আমি যতদূর জানি অন্দর থেকে মেয়েরা খুব কম বের হয়। আর আপনার বোন পরী তো বেরই হয় না।আপনি বের হয়েছেন তাই বললাম আরকি।’

-‘আপনি তো ঘরের খবর সব জেনে গেছেন দেখছি।অন্দর থেকে মহিলাদের বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ না। জমিদার বাড়ির আশেপাশে যেতে পারবে কিন্ত পরীর কথা আলাদা। ওর তো কোন পুরুষ কে মুখ দেখানো বারণ। এটা আম্মার কথা,আব্বা এসবে নেই।’
মাথা নেড়ে নাঈম বলে,’ওহ।’
-‘আপনি নাকি আজই চলে যাবেন?থেকে গেলে ভাল হত।’
-‘নাহ,আসলে পালকের বাবা মা অনেক দূর্বল হয়ে গেছে। মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায়। আমরা সেখানেই আছি। এখন সেখানেই যেতে হবে। যদি কখনও সময় হয় তো এসে দেখা করে যাব।’
মালা জেসমিন কে বলে নাঈম আর অপেক্ষা করলো না। নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।

বিকেলের দিকে রুপালি পরীকে ডেকে এনে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। পরী চুপ করে উদাসীন হয়ে বসে আছে। কেন জানি মনটা ভালো নেই তার। কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না। সে একমনে তাকিয়ে আছে বৈঠক ঘরের দরজার দিকে। ইচ্ছে করছে এক ছুটে বের হয়ে যেতে। কিন্ত মা যে ওর পা দুটো আটকে দিয়েছে। এরকম বন্দি জীবন ওর ভাল লাগে না। মুক্ত পাখিদের মতো উড়তে চায় পরী। তা বোধহয় কখনোই সম্ভব নয়।

-‘তোর কি মন খারাপ?’
-‘হুম।’
-‘কি হয়েছে?’
-‘জানি না। বোধহয় মনের অসুখ করেছে।’
-‘এই অসুখ ভাল না। ডাক্তার দেখাইতে হইবে।’
কুসুম আসতে আসতে বলে উঠল,’খুবই সুন্দর ডাক্তার গো আপা। আমি দেখছি,পরী আপার লগে মানাইবো অনেক।’
পরী বুঝলো না কুসুমের কথা। তাই সে বলে,’কি বলস এসব তুই?’
-‘আল্লাহ আপনে জানেন না?মেজো আপার দেওরের লগে আপনার বিয়া ঠিক। আহা কি সুন্দর পোলাডা। আপনের লগে অনেক মানাইবো।’
পরী চট করে দাঁড়িয়ে গেল। রুপালির দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলল,’আরে নওশাদ। ছেলেটা খুব ভালো। তোর দুলাভাই,,,,,’
পরীর হুংকারে থেমে গেল রুপালি।
-‘দুলাভাই কে বলো আর না আগাতে। নাহলে আমাকে তো চেনোই। বয়স দেখে আমি কারো সাথে না কথা বলি না গায়ে হাত তুলি সেটা ভাল করে জানো।’
-‘পরীইই তোর সাহস তো কম না। নিজের দুলাভাই কে নিয়ে এসব বলে কেউ?’ধমকে উঠল রুপালি।

-‘বাহ স্বামীর জন্য এতো ভালোবাসা এতো দরদ। তাহলে ওই স্বামী কেন তোমাকে রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল?ভালোবাসা কি তার নেই?’

-‘পিছনের কথা বাদ দে। তুই কি তোর দুলাভাই কে মানতে পারছিস না?’

-‘তুমি পেরেছো মানতে?সিরাজ ভাইকে ছেড়ে,,’

-‘পরী চুপ কর।’ রুপালি মুখ চেপে ধরলো পরীর। আশেপাশে ভয়ার্ত নজর বুলিয়ে দেখে নিল আর কেউ আছে কি না। নাহ কেউ নেই। পরী নিজের মুখ থেকে বোনের হাত সরিয়ে বলে,’একই রক্তের গন্ধ ও এক হয়। তোমার দেওরের ও তাই। আমাকে রাগাবে না। যে রক্তকে ঘৃণা করি সে রক্তকে নিজের করে নিতে পারব না।’
পরী দোতলায় দৌড়ে গেল। রুপালি বারবার পরীকে ডাকতে লাগল। বলতে লাগল নওশাদ ওরকম নয় সে ভালো ছেলে। কিন্ত পরী সেকথা কানেও নিল না। কুসুম ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পরীর কথাগুলো ওকে শোকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রুপালি আস্তে আস্তে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকালো। সাথে সাথেই ওর কপোলদ্বয় ভিজে গেল বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণায়।
সিরাজ কে ভালোবেসেছিল রুপালি। পাগলের মতো ভালোবেসেছে। কিন্ত তার সাথে মিলন হলো না রুপালির। সদ্য ফোঁটা ফুলটা অকালেই ঝড়ে গেছে। কিন্ত রেখে গেছে তার সুবাস। যা কখনোই ভুলতে পারবে না রুপালি। ও পারে না ভেতরের ক্ষতটা কাউকে দেখাতে। কিন্ত পরী তা ঠিকই দেখতে পায়। তবে কখনোই বলেনি আজ রাগের মাথায় বলে দিয়েছে পরী। এতে অনেক আঘাত পেয়েছে রুপালির মন। পালঙ্কের উপর বসে কাঁদছে সে। আর ফেলে আসা স্মৃতিচারণ করছে।
আফতাবের কর্মচারী ছিল সিরাজ। সেই সুবাদে জমিদার বাড়িতে আসা যাওয়া চলতো সিরাজের। রুপালির সাথে প্রতিদিন দেখা হতো ওর। কথা হতো, আবার রুপালি এটা ওটা এগিয়ে দিতো। এভাবে কখন যে ওদের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল তা দুজন টেরই পায়নি। কিন্ত এই প্রকৃতি মেনে নিলো না ওদের ভালোবাসা। ঝড় তুলে আলাদা করে দিলো দুজনকে। রুপালির বিয়ের পর আর দেখেনি সিরাজ কে। এক বুক কষ্ট নিয়ে সে পাড়ি দিয়েছে দূর অজানায়। আর রেখে গেছে মন ভাঙা কিশোরীর এক সমুদ্র অশ্রুসিক্ত নয়ন। কত যে কেঁদেছে রুপালি। কাঁদতে কাঁদতে যখন চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে তখন আর কাঁদতো না।
কিন্ত আজ আবার অশ্রুরা হানা দিয়েছে। ভাঙা মনটা আবার নতুন করে ভাঙছে।

নিজের ঘরে বসে রাগে ফুঁসছে পরী। নওশাদ কে সে কিছুতেই বিয়ে করবে না। কবিরের রক্তই তো নওশাদ। এদের সবার স্বভাব ও এক। রুপালির বাচ্চা হচ্ছিল না দেখে কবির দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিল। পাত্রী ও দেখেছিল,সেদিন মালাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল রুপালি। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবই দেখেছে পরী। তারপর থেকেই কবিরকে ঘৃণা করে পরী। ওর ধারণা পুরুষরা কেবল নারীদের ব্যবহার করতেই জানে ভালোবাসতে জানে না।
পরী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে নওশাদ কে কিছুতেই বিয়ে করবে না। এতে আফতাবের সাথে যুদ্ধ করবে সে। বাকি দুবোনের মতো সে নরম না। তার সাহস ও বুদ্ধি দুটোই অনেক।

নওশাদ চৌকি পেতে বসে আছে। জুম্মান ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে অন্দরে যাচ্ছিল। নওশাদ দেখে জুম্মান কে ডাকলো। নওশাদ হেসে বলল,’কোথায় গিয়েছিলে?’

-‘শাপলা বিলে। পরী আপা আমার উপর রাগ করছে। শাপলা গুলা দিলে আপা খুশি হইব।’
-‘শাপলা তোমার আপার পছন্দ?’
-‘হু,তবে পদ্মফুল অনেক বেশি পছন্দ করে আপা। কিন্ত আমি তো পদ্মফুল পাইলাম না। গেরামের সব পোলাপান লইয়া গেছে। আর এই বিকালে কি ফুল ফোটে?আমি কলি আনছি এখন হাত দিয়া ফুল ফুটামু তারপর আপারে দিমু।’

হাসলো নওশাদ। জুম্মানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,’আচ্ছা যাও। সন্ধ্যার পর আমার সাথে দেখা করো কথা আছে।’
জুম্মান মাথা নেড়ে অন্দরে ঢুকল। নওশাদ চেয়ে রইল জুম্মানের যাওয়ার পানে। এই ছেলেটা খুব শীঘ্রই ওর একমাত্র শালাবাবু হতে চলেছে। ভাবতেও ভালো লাগছে ওর। খাওয়ার সময় ভদ্র ছেলের মত চুপ করেছিল সে। ভাবটা এমন ছিল যেন লজ্জা পাচ্ছে। অবশ্য একটু লজ্জা লাগছিল ওর কিন্ত অভিনয় করেছে বেশি। এটুকু না করলে কি চলে? নাহলে সে যে অতি ভদ্র তা প্রমাণ করবে কিভাবে?সবাই তো তাকে ভালো বলছে কিন্ত পরী!!সে কি বলে?পরীর মনের কথা তো জানা দরকার। নওশাদের ভাবনার মাঝে কবির এসে বলল,’কি রে এখানে বসে আছিস যে?আসার পর তো দুদণ্ড বিশ্রাম করলি না।’
নওশাদ হেসে বলে,’তোমার শালিকে বউ করে এনে দাও তারপর দেখবে দিনরাত শুধু বিশ্রাম করছি।’
কবির নওশাদের পিঠ চাপড়ে বসতে বসতে বলল, ‘ভালো কথা বলছিস দেখছি।’

-‘আচ্ছা ভাই তুমি কখনোই পরীকে দেখোনি?’
-‘পরী তো ওর কাকার সামনেই আসে না। আমার সামনে আসবে কেমনে?তোর কপাল ভাল রে নওশাদ। এই পরীকে পাওয়ার জন্য কত পুরুষ বুকে পাথর বাঁধে আর তুই সেই পরীরে ঘরে তুলবি।’

-‘ভাগ্য ভাল কি না জানি না। তবে পরীর জন্য যা করতে হয় এই নওশাদ তা করবে। আমি পরীরে না দেখেই পছন্দ করি। তুমি জানো আমি এই বাড়িতে শুধু পরীর জন্য আসতাম। কিন্ত পরীর দর্শন পেতাম না। আমার খুব খারাপ লাগে পরী কেন সামনে আসে না?কিন্ত স্বপ্নে আমি দেখি পরীরে। চোখ নাক মুখ স্বপ্নেই আঁকি। ভাই পরীরে কিন্ত আমার চাই।’

-‘চিন্তা করিস না পরী তোর হবে। তোর ভালোবাসা সফল হবে নওশাদ।’
সৌজন্য মূলক হাসি দিল নওশাদ। পরীর জন্য যে তার আর তর সইছে না। মন চাইছে এখনই ছুটে অন্দরে যেতে। আর পরীর সুন্দর বদন খানার মুখোমুখি হতে। কিন্ত এটা করলে বেয়াদবি করা হবে তাই মনের অদম্য ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে বসে রইল।

জুম্মান শাপলার কলিগুলোর সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে তাদের ফুলে রুপান্তরিত করলো। তারপর গুটি গুটি পায়ে পরীর ঘরে গেল। নীল রঙের ফিতা দিয়ে চুল বাধছে পরী। জুম্মান আস্তে করে পরীর পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই পরী বলে উঠল,’এখানে এসেছিস কেন?’
-‘আপা দেখো তোমার লাইগা শাপলা আনছি। আমি বিলে যাইয়া নিজেই তুইলা আনছি। নেওনা আপা?’

পরী ঘুরে জুম্মানের মুখের দিকে তাকালো। কাঁদো কাঁদো মুখ করে শাপলা বাড়িয়ে দিয়েছে জুম্মান। পরী আর না করলো না। হাত বাড়িয়ে শাপলা গুলো নিলো। সাথে সাথে জুম্মানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে বলল,’তোমার রাগ কমছে আপা?আমি তো ভাবলাম আপার হইলো কি?কথাও কেমনে জানি কও!!’
-‘কেন ভাল লাগে না?শোন তুই জমিদারের ছেলে জুম্মান। তুই এই গ্রামের সবচেয়ে ধনী ছেলে। তোর সবকিছুই তো সবার থেকে আলাদা হতে হবে। তাই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি। মনে থাকবে?’

জুম্মান মাথা নেড়ে বলল,’আমি তো তোমার মতো কথা কইতে পারি না!!’
-‘আমি শেখাব তোকে।’
পরী ভেবে নিয়েছে যে জুম্মান কে ও নিজের মতো করে তৈরি করবে। তাই জুম্মান কে এটা ওটা শেখাতে লাগল। সাথে কিছু গভীর পরামর্শ করতে লাগল।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই অঘটন ঘটিয়ে ফেলল নওশাদ। নাহ সে ঘটায়নি। অঘটন নিজেই তাকে ঘটিয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে ঘর থেকে বের হতেই ধপাস করে পড়লো গিয়ে গোবর গাদায়। পুরো শরীর মাখামাখি হয়ে গেল গোবরে। বিশ্রি গন্ধ আসছে পুরো শরীর থেকে। নওশাদের নিজেরই বমি পেয়ে গেল তা দেখে। এরকম করে কে গোবর ফেলে রেখে গেল?উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পড়লো সে। বিরক্ত হয়ে হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল নওশাদ।
শায়ের সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। নওশাদের অবস্থা দেখে হাসি পেলেও চেপে গেল সে। বলে উঠল,’কি ব্যাপার হবু জামাই?বিয়ে হতে এখনও ঢের দেরি আর আপনি এখনই গোবর খেলা শুরু করে দিয়েছেন?’

শায়েরের কটাক্ষ করে বলা কথাগুলো ভাল না লাগলেও তা হজম করে নিলো নওশাদ বলল,’আর বলবেন না কে যেন এখানে গোবর রেখে গেছে। আসতেই পড়ে গেলাম।’

নওশাদ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। হঠাৎই শায়েরের চোখ গেল অন্দরের দরজার দিকে। কয়েক জোড়া পা দেখা যাচ্ছে। সন্দেহ মনে সে কুসুম কে ডাকতেই পা গুলো সরে গেল। কুসুম এলো হাতে পানি ভর্তি বালতি আর ঝাড়ু নিয়ে। কুসুম নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,’ইশশ রে কি অবস্থা!!কেমনে হইলো?’
জবাব টা শায়ের এগিয়ে এসে দিলো,’এখানে গোবর রেখেছে কে?’
-‘আমি রাখছি। উঠান লেপতে কইছে বড় মায়। কিন্ত হেয় না দেইখা হাটলে আমি কি করমু?’
কুসুম পানির বালতি সমেত নওশাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,’আহারে কি গন্ধ আসতাছে। খারান এহনই গতর ধুইয়া দিতাছি।’
কুসুম বালতির সব পানি ঢেলে দিলো নওশাদের মাথায়। প্রচন্ড রেগে গেল নওশাদ। কুসুমকে ধমক দিয়ে চলে গেল কলপাড়ের দিকে। কুসুমের কাজ দেখে শায়ের হেসে ফেলল। কুসুম অন্দরে চলে গেল। শায়ের খেয়াল করলো কুসুমের পা জোড়া আরেক জোড়া পায়ের সাথে মিলিত হয়েছে। শায়ের চিন্তা করলো এটা কি অনাকাঙ্খিত ঘটনা নাকি কেউ কঙ্খিত ভাবে ঘটনাটা ঘটিয়েছে?

কুসুম দৌড়ে পরীর কাছে গেল। এতক্ষণ পরী আর জুম্মান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল আর হাসছিল। পরিকল্পনাটা পুরোটাই পরীর। সে চায় নওশাদ যেন এখান থেকে চলে যায় তাই আজ থেকে সে নওশাদ কে নাকানি চুবানি খাওয়াবে। সেজন্য কুসুম আর জুম্মান কে হাত করেছে সে। কুসুমের সাথে কথা বলে পরী নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

-‘পরী আপা।’ কুসুমের ডাকে ফিরে তাকায় পরী।

-‘আপনের পায়ের আরেকখান নূপুর কই??’

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।