অফিডিয়ান | পর্ব – ১৯

সাফওয়ানের বলা কথাটা যেন রুমাইশার মস্তিষ্কে বার বার বাড়ি খেতে লাগলো।
বউ! বউ হবো আমি! সাফওয়ান এর!
নিজের কান কে যেন বিশ্বাস করতে পারলো না রুমাইশা। ঠিক শুনেছে তো ও! এমন অদ্ভুত প্রস্তাব যে সাফওয়ান দিতে পারে তা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবেনি ও৷
হতবাক হয়ে সাফওয়ানের দিকে চেয়ে রইলো রুমাইশার।

রুমাইশা কে এইভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফওয়ান বিছানা থেকে নামতে নামতে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
—দ্বিতীয়ত তোকে আমার চাই।
তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল,
—এখনই উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, সময় নিয়ে ভেবে চিনতে উত্তর দিস। তবে উত্তর দিতে যত সময়ই লাগুক উত্তর টা হ্যা হওয়া চাই৷ ইটস নট আ রিকোয়েস্ট, ইটস অ্যান অর্ডার। নাউ স্লিপ টাইট৷

এরপর যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই ঝড়ের গতিতে রুম ত্যাগ করলো সাফওয়ান৷ রুমাইশা কে দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না৷
রুমাইশা শুধু সাফওয়ানের যাওয়ার পানে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

২৪. সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পড়া গুলোতে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলো রুমাইশা। আজকে লাস্ট এক্সাম। এইটা শেষ হলেই বেচে যায় এই বছরের মতো। পড়া গুলো দেখে ঝটপট করে গুছিয়ে নিলো ও৷
বেরোনোর আগে আয়েশা ওকে খাইয়ে দিলো।

এক টায় পরিক্ষা, আজকে আবহাওয়া টা তেমন ভালো না, মেঘ মেঘ করছে। দুপুর বেলা হলেও মনে হচ্ছে বিকেল বেলা৷

এগারো টার একটু আগে আগে রুমাইশা এক্সাম দেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো। শামসুল রুমাইশা কে যশোর গামি সিএনজি তে উঠিয়ে দিলেন।

গত কাল রাতে কম ঘুম হওয়ার কারণে চোখ লেগে আসছে ওর৷ কেমন যেন ক্লান্তি লাগছে প্রচন্ড। চার ঘন্টার এক্সাম দিতে দিতে ঘুম চলে আসে কিনা সারা রাস্তা সেটা নিয়েই চিন্তা করতে করতে আসলো রুমাইশা।

এম এম কলেজ রেখে আর ও সামনে গিয়ে মহিলা কলেজ। ইংলিশ ডেপ্ট এর সিট বরাবর ওখানেই পড়ে৷ এক্সাম শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে এসে পৌছালো রুমাইশা। হলে ঢোকার আগে নিজের ফোন টা বান্ধবি সালিমার বাবার কাছে দিয়ে দিলো। তিনি মেয়েকে নিয়ে এসেছেন এক্সাম দিতে।

আজ সাফওয়ান কলেজে এসেছে। প্রিন্সিপাল মিটিং ডেকেছেন। উপস্থিত না থাকলেই নয়৷ মিটিং তিন টায়। দুইটা পয়তাল্লিশে সাফওয়ান রেডি হয়ে বের হলো। বরাবরের মতোই স্যুটেড বুটেড হয়ে, মুখে মাস্ক আর চোখে গগলস দিয়ে নিজের মার্সিডিজ বেঞ্জ নিয়ে রওনা দিলো কলেজের উদ্দ্যেশ্যে।

গাড়িটা কলেজের মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই চারদিকে গুঞ্জন শুরু হলো। এটা নতুন কিছু না। কলেজে জয়েন হওয়া থেকে যতবার ই কলেজে এসেছে ততবারই এরকম গুঞ্জন ই চার পাশ থেকে শোনা গেছে।
তার প্রথম কারণ সাফওয়ানের মার্সিডিজ বেঞ্জ, আর দ্বিতীয় কারণ তার এইভাবে চোখ মুখ ঢেকে চলা ফেরা৷

ডিপার্টমেন্ট হেডের সাথে দেখা করার জন্য নিজের ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করলো সাফওয়ান। কলেজে পরিক্ষা চলছে। কিন্তু কিছু কিছু স্টুডেন্ট রয়ে গেছে পরীক্ষার্থী ছাড়াও।
সাফওয়ান তার ডেপ্ট এর ক্লাস রুমের সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় চারপাশ কেমন জানি নিরব হয়ে গেলো, আর ফিসফিস গুঞ্জনে চারদিক ভরে উঠলো৷

অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সময় সাফওয়ানের ক্যামেরা অধিকাংশ দিন অফ থাকে৷ কখনো কখনো ক্যামেরার সামনে আসলেও মাস্ক গগলস পরেই আসে ও৷ তাই তাকে দেখার কৌতুহল মেটাতে পারে না স্টুডেন্ট রা।
সে কেন নিজের চেহারা পাবলিক করে না এটা নিয়েও প্রচুর পরিমাণ ডিসকাস হয় স্টুডেন্ট দের মাঝে।

ডিপার্টমেন্ট হেড আজমল হকের কক্ষে ঢোকার পর সাফওয়ান কে সাদরে গ্রহণ করলেন তিনি।
— সাফওয়ান আহমেদ যে! আসুন বসুন। আপনাকে তো বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া দেখতে পাওয়া যায় না, তাই আমরা সবাই এই বিশেষ বিশেষ দিন গুলোর জন্যই অপেক্ষা করি৷
কথাগুলো বলে হাসলেন আজমল হক।

সাফওয়ান ও ওনার সাথে তাল মিলিয়ে সৌজন্য মুলক হাসি দিলো। অন্যান্য টিচার রাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সবার সাথে টুক টাক কথা বললো সাফওয়ান৷
তিনটার মিটিং শুরু হতে হতে প্রায় চার টা বেজে গেলো।

সাফওয়ান যখন মিটিং শেষ করে বাইরে এলো তখন আকাশ পুরো কালো মেঘে ঢেকে গেছে৷ সাথে বাতাস বইছে৷ মেঘ গুলো উড়ে উড়ে একদিকে গিয়ে জমা হচ্ছে।

আকাশের অবস্থা দেখে সাফওয়ান ফোন দিলো রুনিয়া কে৷ রুনিয়া কল রিসিভ করতেই সাফওয়ান উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
— মা, রিমুর তো এক্সাম চলছে৷ শেষ হতে পাঁচ টা বাজবে। আকাশের অবস্থা তো খুব খারাপ৷ যেকোনো সময়ে বৃষ্টি আসতে পারে৷ আর চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে৷ তুমি মামি কে ফোন দিয়ে বলে দেখো আজকের রাত টা রিমু কে আমাদের বাড়িতে রাখা যায় কিনা৷ এই আবহাওয়া তে ও বাড়ি যেতে পারবে না একা একা৷

রুনিয়া আচ্ছা বলে ফোন কেটে দিয়ে আয়েশা কে ফোন দিলেন। সাফওয়ানের বলা কথা গুলো আয়েশা কে বলতেই তিনি বললেন,
—প্রয়োজন নেই আপা, এই মেঘে বৃষ্টি হবে না৷ মেঘ সব উড়ে যাচ্ছে। ও বাড়িতেই আসুক। আর একা একা আসা যাওয়াতে সমস্যা কি! এতকাল তো একা একাই আসা যাওয়া করেছে, কখনো তো কোনো সমস্যা হয়নি। আপনি চিন্তা করবেন না৷ ও ঠিক ভাবেই বাসায় পৌছাবে৷

রুনিয়া আর ও কয়েকবার অনুরোধ করলেন আয়েশা কে কিন্তু আয়েশা শুনলেন না৷ অগত্যা কল কেটে দিয়ে আবার সাফওয়ান কে ফোন দিলেন রুনিয়া।

সবকিছু শুনতেই মেজাজ টা গরম হয়ে গেলো সাফওয়ানের। আয়েশা কে মাথা মোটা মহিলা বলে গালি দিলো। তার পর আয়েশার মতামত কে তোয়াক্কা না করেই নিজের মার্সিডিজ হাকিয়ে মহিলা কলেজের দিকে এগোলো।

সাফওয়ান যখন সেখানে পৌছালো তখন এক্সাম শেষের ঘন্টা পড়েছে৷ রুমাইশা কে গাড়িতে তোলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো ও৷ মিনিট দশেক পার হওয়ার পর ও যখন রুমাইশা কে দেখলো না তখন রুমাইশার ফোনে কল লাগালো৷

এদিকে রুমাইশা হল থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগেই বেরিয়ে গেছে৷
রিকশা করে চাচড়া গিয়ে আপাদমস্তক বোরখা আবৃত রুমাইশা রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সিএনজির অপেক্ষায়। সাইলেন্ট করা ফোন টা ব্যাগের ভেতর বেজেই চলেছে।

কয়েকবার কল দেওয়ার পর ও যখন রুমাইশা কল ধরলো না তখন সাফওয়ান বুঝলো রুমাইশা আগেই বেরিয়ে গেছে। তখনি গাড়ি ঘুরিয়ে চাচড়ার দিকে গেলো সাফওয়ান। যেতে যেতেই আর ও কয়েকবার ফোন দিলো কিন্তু তুললনা রুমাইশা। নিজের মনে মনে নিজেই জপতে লাগলো সাফওয়ান, ‘ফোন টা তোল রিমু, প্লিজ!’

বাইরে এখন ঝড়ো হাওয়া বইছে৷ আকাশের মেঘ গুলো আর উড়ছে না৷ জমতে জমতে কালো মেঘ গুলো কাজল কালো হয়ে উঠলো৷
সাফওয়ান চাচড়ার রোডে উঠতেই দূর থেকে দেখলো সিএনজি ছেড়ে দিচ্ছে।

বৃষ্টি যেকোনো সময় আসতে পারে ভেবে সিএনজির চালক বেশ জোরেই এগোচ্ছেন৷ সাফওয়ান ও নিজের গাড়িতে সিএনজির পেছন পেছন আসতে থাকলো।

কিছুদুর আসতেই হঠাৎ করেই সাফওয়ানের গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলো৷ সেই সুযোগে সিএনজি অনেক খানি এগিয়ে সাফওয়ানের দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেলো। এরপর আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মেঘ ফেটে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো ধরায়।

সিএনজির পেছনের সিটে এক কোণায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে রুমাইশা। তার পাশে দুইজন মহিলা বসেছে। আর বিপরীত পাশে বসেছে দুজন পুরুষ। বাইরে বৃষ্টির বেগ বেড়েই চলেছে৷

কিছুদুর আসার পর মহিলা দুজন নেমে গেলো। এরপর আর ও কিছুদূর যাওয়ার পর সামনের সিটে বসা লোক গুলো ও নেমে গেলো৷
গাড়িতে শুধু ওরা তিনজন আর ড্রাইভার ছাড়া কেউ নেই। ড্রাইভার যতদ্রুত সম্ভব গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ বৃষ্টির অবস্থা ভালো না। মেঘ কমছেই না কোনো ভাবে।

গাড়ি সাড়াপোলের মাঠের ভেতরের রাস্তায় এসে দাড়িয়ে গেলো। গাড়ি দাড়ানোতে ভড়কে গেলো রুমাইশা। ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করতেই ড্রাইভার বলল,
—বৃষ্টির কারনে সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না আপা, মাঠের ভেতরে এসেছি বলে বৃষ্টির বেগ আর ও বেশি মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা ঘটে যাবে৷ বৃষ্টির বেগ একটু কমলে গাড়ি ছেড়ে দেবো।

চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। মাগরিবের আযান দিয়ে দেবে আর আধাঘন্টার মধ্যেই৷ রুমাইশার ভয় করতে লাগলো ভিষণ। বিপরীত পাশে বসা লোকদুটো কেমন কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। নিজের সিটে আর ও একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো রুমাইশা। নিজের ভেতরের ভয় টা ওদের কে বুঝতে দিলো না৷

কিছুক্ষণ পর সামনের দুই ব্যাক্তির একজন এসে বসে পড়লো রুমাইশার পাশে। চমকে তাকালো রুমাইশা। মতলব কি এর! আমার পাশে এসে বসেছে কেন? মনে মনে ভাবলো ও।

প্রথমে একটু দুরত্ব নিয়ে বসলেও আস্তে আস্তে রুমাইশার কাছে সরে আসতে লাগলো লোকটা।

রুমাইশার গলা শুকিয়ে আসলো। একবার ভাবলো সামনের সিটে গিয়ে বসবে৷ দোনোমনা করতে করতে পাশের লোক টা আর ও একটু সরে এসে রুমাইশার গা ঘেষে বসলো।

এবার আর রুমাইশা দেরি করলো না নিজের সিট থেকে উঠে দাড়ালো সামনের সিটে গিয়ে বসার জন্য, কিন্তু গাড়ি থেকে নামতে যাওয়ার সময়ই রুমাইশার হাত ধরে ফেললো লোকটি৷

—একি, আপনি আমার হাত ধরছেন কেন? ছাড়ুন বলছি। এক্ষুনি ছাড়ুন।
উচু গলায় বলল রুমাইশা৷ কিন্তু লোক টা হাত ছাড়লো না বিশ্রী রকমের একটা হাসি দিয়ে বলল,
—এত বৃষ্টির মাঝে গাড়ির বাইরে গেলে তো ভিজে যাবা জান, আর ঠাণ্ডা লেগে যাবে তোমার। এখানেই বসো তোমাকে গরম করে দিবো।

লোকটার কথা শুনে গা ঘিন ঘিন করে উঠলো রুমাইশার। এক ঝটাকায় হাত টা ছাড়িয়ে নিলো ও৷ কিন্তু তাতে পার পেলো না৷ হঠাৎ করেই রুমাইশাকে জাপটে ধরলো লোক টা৷ আর তার সাথে দ্বিতীয় লোকটাও যোগ দিলো।

ঘটনার আকস্মিকতায় প্রচণ্ড পরিমানে ভয় পেলো রুমাইশা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিলো। লোকদুটোর নোংরা হাত থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য যেভাবে পারলো হাত পা চালাতে থাকলো, কিন্তু তাদের সাথে পেরে উঠলো না।
ড্রাইভার নেমে এলো পেছনে কি হচ্ছে দেখার জন্য। এমন অবস্থা দেখে ড্রাইভার বাধা দিতে গেলেই দ্বিতীয় লোক টা এসে ড্রাইভারের নাক বরাবর একটা ঘুসি মেরে দিলো।
ঘুসির তোড়ে হ্যাংলা পাতলা ড্রাইভার টি পড়ে গেলো মাটিতে। তারপর রুমাইশার চিন্তা না করেই নিজের প্রাণ বাচানোর দ্বায়ে ছুটে পালালো।

সমানে চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছে রুমাইশা, আর নিজের সম্ভ্রম বাচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ কিন্তু ফাকা মাঠের ভেতরে এই ঝুম বৃষ্টির মাঝে অসহায় রুমাইশার সেই চিৎকার কারো কানে গেলো না।

প্রথম লোকটা ইতিমধ্যে রুমাইশার হিজাব খুলে ফেলেছে। বোরখার ভেতর দিয়ে কোমরের কাছে সালওয়ারের মুখে হাত বাড়াতে যাবে সেই মুহুর্তেই বুলেটের গতিতে একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ এসে প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা দিলো সিএনজির পেছনে৷

সিএনজির ভেতরে হুবড়ি খেয়ে সামনে পড়লো প্রথম লোক টা দ্বিতীয় লোকটা সিএনজির ভেতরে পেছনের দিকেই দাড়িয়ে ছিলো। গাড়ির ধাক্কার প্রায় এক তৃতীয়াংশ এসে লাগলো সেই লোকটির গায়ে। গুরুতর জখম হলো দ্বিতীয় লোক টা৷

প্রথম লোকটির থেকে ছাড়া পেয়েই হিজাব টা এক হাতে আর ব্যাগ টা এক হাতে নিয়ে কাদতে কাদতে গাড়ির ভেতর থেকে দৌড়ে নামলো রুমাইশা। নেমেই দেখলো সাফএয়ান ওর বিশালাকার শরীর নিয়ে ওর সামনে সাড়িয়ে আছে!

সাফওয়ান কে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেলো রুমাইশা। হাউমাউ করে জড়িয়ে ধরলো সাফওয়ান কে। কিন্তু সাফওয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ও চোয়াল শক্ত করে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর সামনে থাকা লোক দুইটার দিকে।

রুমাইশার দিকে তাকিয়ে ওর মুখ টা নিজের দিকে তুললো সাফওয়ান৷ হাপাচ্ছে রুমাইশা। হিচকি উঠে গেছে ওর। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ঝুম বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে ওকে।

গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা খুলে রুমাইশা কে বসিয়ে দিলো সাফওয়ান। তারপর শক্ত গলায় বলল,
— আমি আসছি। ভেজা বোরখা খুলে ফেল, নইলে আবার জ্বর আসবে। আর যাই হয়ে যাক না কেন বাইরে তাকাবিনা। বুঝেছিস?

রুমাইশা কাদতে কাদতেই উপর নিচে মাথা নাড়ালো। সাফওয়ান খুলে ফেললো নিজের মুখের মাস্ক আর গগলস। তারপর গেলো নিজের গাড়ির পেছনের দিকে৷

লোক দুটো ততক্ষণে সামনে ছুটেছে৷ সাফওয়ান তার জ্বলজ্বলে চোখ দুটো দিয়ে তাকিয়ে দেখলো সেদিকে। এই মুহুর্তে ওর মুখে একদমই অন্য রকম হাসি ফুটে উঠলো যে হাসি আগে কখনোই কেউ দেখেনি!

পনেরো মিনিট মতো পরে ফিরে আসলো সাফওয়ান। পুরোপুরি ভিজে গেছে ও। চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে ওর।

মাগরিবের আযান দিলো এমন সময়ে। সাফওয়ান এসে বসলো ড্রাইভিং সিটে। রুমাইশা কাদছে এখনো।

শামসুল ফোন দিলেন এমন সময়ে। জিজ্ঞেস করলেন রুমাইশা কোথায় আছে এখন।
কিন্তু রুমাইশা এদিকের কিছুই বুঝতে দিলো না, কান্না থামিয়ে গলা স্বাভাবিক করে বলল, সাড়াপোলে আছি বাবা, পৌছে যাবো আধাঘন্টার ভেতরে৷
শামসুল আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো

শামসুলের সাথে কথা শেষ হতেই আবার ও শব্দ করে কেদে উঠলো রুমাইশা।
পাশে বসা সাফওয়ান নিজের গায়ের ব্লু কোট খুলে পাশে রেখে দিলো তারপর শার্ট টা ও খুলে ফেললো, ভিজে জবজবে হয়ে গেছে সেগুলো৷

এরপর পাশের সিট থেকে রুমাইশাকে দুই হাত দিয়ে উঠিয়ে এনে বসালো নিজের কোলের ওপর৷ রুমাইশার মাথা টা নিজের উদাম বুকে ঠেকালো সাফওয়ান। তারপর রুমাইশার মাথা টা ধরে চুলের ওপর দিয়ে চুমু খেলো ওর মাথায়!

বিধ্বস্ত রুমাইশা এই সর্বোচ্চ নিরাপদ জায়গায় এই সামান্য আদর পেয়ে উচ্চস্বরে কেদে উঠলো, কাদতেই থাকলো!

গাড়ি ছেড়ে দিলো সাফওয়ান৷ এখনো চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে আছ ওর৷ কিছুদুর গিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে অস্ফুটস্বরে সেই অজ্ঞাত লোক দুটির উদ্দ্যেশ্যে বলে বলে উঠলো শু*** বা***।

রুমাইশা সাফওয়ানের বুক টাকে সম্বল করে উচ্চস্বরে কাদছে৷ রুমাইশার কান্না থামালো না সাফওয়ান৷ কাদতে দিলো ওকে৷ বাকি রাস্তা টুকু রুমাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সাফওয়ান।

বাড়ির কাছাকাছি আসতে আসতে কান্না থেমে গেলো রুমাইশার। হিচিকি উঠছে মাঝে মাঝে এখনো। বৃষ্টির বেগ এখন কমে গেছে৷ ঝিরিঝিরি করে বৃষ্টি পড়ছে বাইরে।
এই পর্যায়ে রুমাইশার চিবুক ধরে ওর মুখ টাকে উপরের দিকে উঠালো সাফওয়ান৷
গভীর দৃষ্টিতে রুমাইশার চোখের ভেতর খানিক্ষন কি যেন খুজলো ও, তারপর মৃদু গলায় বলল,

—আমি সবকিছুতে ছাড় দিতে পারবো, কিন্তু তোর ব্যাপারে কোনো ছাড় দিবো না কাউকে৷ কখনোই না।

এরপর রুমাইশার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো ও৷ রুমাইশা কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। কিছুক্ষণ আগে হওয়া ঘটনাটায় যেন পাথরের মতো হয়ে গেছে ও।

কিছু সময়ের ভেতরেই রুমাইশাদের বাড়ির মোড়ে এলো সাফওয়ান। শামসুল দাঁড়িয়ে আছেন রুমাইশা কে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া জন্য। কিন্তু রুমাইশা যে সাফওয়ানের সাথে আসবে সেটা সে কল্পনাতেও আনেনি৷

গাড়ির দরজা খুলে নেমে গেলো রুমাইশা। সাফওয়ান রুমাইশা কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েই গাড়ি ঘুরিয়ে আবার উলটো দিকে গেলো৷ শামসুলের সাথে কোনোরকমের কোনো কথা বলল না৷

শামসুল রুমাইশা কে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোলো। সাফওয়ানের সাথে আসার বিষয়ে রুমাইশা কে কোনো প্রশ্ন করলো না৷

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।