মাগরিবের পর বাসায় ফিরতে দেখলেন, তিন আহলিয়া ড্রয়িং রুমে হাস্যমুখে গল্পে ব্যস্ত।আরহামকে দেখে সালাম বিনিময় শেষে তারা পুনরায় হাসি তামাশা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আরহাম সন্তুষ্ট হলেন এমন দৃশ্যে।ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা টেনে রুমে ফিরে গেলেন।
খানিক পরই দরজায় করাঘাত হলো।আরহাম বেলকনি থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, অরেন্জের গ্লাস হাতে হাফসা দাঁড়িয়ে।সন্তুষ্টিতে আরহামের ঠোঁটে আরেক চিলতে হাসি বয়ে গেলো।পাশে বসিয়ে গ্লাসটা খালি করে শুকরিয়া জানালেন।
হাফসা আরহামের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, ‘আপনার কি মন খারাপ?’
আরহাম যেনো এক ধাক্কা খেলেন।এত হাসিখুশি থাকার পরও উনি কিভাবে বুঝলেন।মিথ্যে তো বলা যাবে না,সত্য বললে তিনি দুশ্চিন্তা করবেন।
হাফসাকে দূ হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে নিয়ে বললেন, ‘আপনার সংলগ্নে থাকলে মন খারাপ করে থাকা যায়?’
‘কিন্তু আগে তো…’
‘বাবাটা ভালো আছে?’
‘হুম আলহামদুলিল্লাহ।’
‘বাবাটার মা ভালো আছেন?’
‘ইট ডিপেন্ডস অন ‘বাবাটার বাবার’ ওপর।’
আরহাম অপলক চেয়ে থেকে তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
*******
ডিনার সেরে রুমে ফিরতে দেখলেন আদওয়া বিছানায় পা তুলে খুব মনোযোগ সহকারে আঙ্গুলে নীল পলিশ লাগাচ্ছে।আরহাম ভ্রু কুঁচকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন অতপর টান মেরে বক্সটা নিয়ে নিতেই আদওয়া ধড়ফড়িয়ে উঠলো।আরহামকে তো দেখেই নি সে।
‘এগুলো হারাম।এগুলো দেওয়া যাবে না, কক্ষনো না।এখুনি ধুয়ে আসুন।’
আদওয়া বুঝতে পারলো না,সামান্য কালারে হারামের কি।গাল ফুলিয়ে বেশ সময় নিয়ে আঙ্গুলগুলো ধুয়ে ফিরলো।দেখলো আরহাম জানালার গ্লাস খুলে সেটা ময়লাস্তূপে ফেলে দিলেন।দেখে প্রায় কান্না চলে আসছিলো আদওয়ার।গিফটটা ওর বেস্টফ্রেন্ডের থেকে পাওয়া খুব পছন্দের নীলপলিশ।দিতে তো দিলেন না,বরং ফেলে দিলেন? একরাশ রাগ আসলো মনের মধ্যে।
রাগ চেপে গম্ভীর গলায় শুধু জিজ্ঞেস করলো, ‘আজকে আপুর সাথে ঘুমাবেন না?’
‘উহু।’
আর কোনো কথা বললো না।চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লো।আরহাম বোধহয় বুঝে ফেললেন ওর মনের কথা।লাইট নিভিয়ে পাশে এসে তাকে হারামের শাস্তি সম্পর্কে বোঝাতে লাগলেন। কোন আইটেমগুলো বৈধ প্রসাধনী সেটাও বুঝিয়ে বললেন।বিকল্প হিসেবে বললেন, নেইলপালিশের বিপরীতে মেহেদী পড়তে।এতে আরো বেশি মায়া লাগবে।
চুপচাপ সব শুনে আদওয়া বুঝলো,রাগ কমলো।কোথাও সে পড়েছিলো,নেইলপালিশ ইউজ হারাম।কিন্তু ছোটো বিষয় ভেবে পাত্তা দেয় নি।কিন্তু যার বাহুতে আটকেছে, উনি যে হারামে একবিন্দুও ছাড় দিবেন না, এটা বোঝা হয়ে গেছে ওর।
*****
সাঁই সাঁই বেগে দিনগুলো পার হয়ে যাচ্ছে।হাফসার শরীরে মিশে থাকা অস্তিত্ব টা বড় হচ্ছে।তাঁর একটু আধটু মুভমেন্টে খুশিতে পুলকিত হয় হাফসা।এক দেয়াল ভেদ করে এক অদৃশ্য মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে মন।কিন্তু হরমোন চেইন্জেস এর জ্বালায় কখন কি রকম আবদার করে বসে নিজেও বুঝতে পারে না।তবুও যথাসম্ভব নীরব থাকে।সারাদিনের ক্লান্তিমাখানো প্রিয়তমের মুখদর্শনে ইচ্ছেগুলো মাটিচাপা দিয়ে দেয়।কিন্তু আরহাম তাঁর যত্নে কার্পণ্য করেন না।দিন নেই রাত নেই,ওর হঠাৎ চাওয়া যেকোনো আবদার গুলো পূরণ করেন।সবার অপরিমেয় যত্নে তাঁর চোখটা অশ্রুতে ভেসে উঠে বারবার।
*****
দিনের শেষাংশ।আসরের নামাজ পড়ে তিনজনে বাইরে বেরিয়েছিলো বাগানে কিছু সময় কাটানোর উদেশ্যে।হাসি আড্ডা মিশ্রিত কিছু সময় পার করার গেট খুলে দৌড়ে আসলো ফাইয়াজ।এরই ফাঁক দিয়ে হঠাৎ ফুচকার ভ্যান যেতে দেখেই তিনজনের মাথা হ্যাক।বাড়িটা রোডের থেকে দূরে।ফুচকাওয়ালার বাসা এ মোড়ের দিকে বলে এ পথেই যেতে হয়।
গরমে অস্থির লাগছে আরহামের।জুব্বা ভিজে চিপকে আছে বুকে।বাড়ির রাস্তার সামনে এসে এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে অবাক লাগলেও প্রচন্ড রেগে গেলেন।
তিনজনে হা হু ঝাল মেখে ফুচকা খাচ্ছে।আদওয়া নাদুস নুদুস করে ফুঁচকা খেতে খেতে বলল,’ ফুচকাওয়ালাকে বিয়ে করলে কত ভালো হতো।কতো ফুচকা খেতে পারতাম।’
অন্য কোনো দিকে তাদের ধ্যান ধারণা নেই।এমন অমৃত যেনো এই প্রথম খাচ্ছে।গাড়ি সাইড করে নামলেন আরহাম।আচমকা সামনে আরহামকে দেখে তিনজনের জান যায় যায় যোগাড়।এখন নিশ্চয়ই রাগারাগি করবেন।ভয়ের চোটে অর্ধেক অর্ধেক প্লেটই তিনজনে ফেরত দিয়ে দিলো।লোকটি টাকা চাইলে তিনজন একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে।খাওয়ার আগে তো টাকার কথা মনেই ছিলো না।হাফসা ভয় পাচ্ছে বেশি।আরহামের রাগ সম্পর্কে অন্য দূজনের চেয়ে ওর ভালো ধারণা আছে।
আরহাম বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন।লোকটি টাকা চাইতে জোর দেওয়ায় আদওয়া আরহাম কে ইশারা করে কোনোমতে বলল,’ই ইনি দিবেন।’
বলেই তিনজনে দ্রুত ভিতরে চলে গেলো।
আরহাম যতক্ষনে ভেতরে আসলেন তখন তিনজনে একেবারে ইনোসেন্ট সেজে ড্রয়িং রুমে বসে আছেন।সবাই ভেবেছিলো আরহাম কিছু বলবেন, ঝাড়ি টাড়ি দিবেন।তারপর ব্যাপারটা মিটে যাবে।কিন্তু তিনি কিছুই করলেন না।একটা ধমক পর্যন্তও দিলেন না।চুপচাপ এসে রুমে চলে গেলেন।তিনজনে একে অপরের দিকে অসহায় চাহনি দিলো।খবর আছে!আরহাম রেগে আছেন!
অরেন্জ এর গ্লাস হাতে ভয়ে ভয়ে আরহামের রুমে ডুকতে দেখলো তিনি ঘড়িতে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখছেন।ঘুরে ফিরতেই হাফসা ভয় পেয়ে যায়।আরহাম অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলেন হাতে থাকা অরেন্জ এর গ্লাস তিরতির করে কাঁপছে।কিছুক্ষণের মধ্যে না ধরলে নিশ্চিত পড়ে যাবে।
আরহাম হাত বাড়িয়ে গ্লাস এগিয়ে নিতে হাফসা চলে আসলো।ও নিচে আসার পর দূজনে ঝেকে বসলো, ‘কি হলো কি হলো?উনি কথা বলেছেন? কিছু বললেন? রেগে আছেন?’
হাফসা নিরসমুখে বলল, ‘না।রেগে আছেন।কেনো যে ফুচকা খেতে বেরোলাম।’
‘সব দোষ তুমার আদওয়া।তুমি ফুচকা না দেখালে আমরাও খেতাম না,বাইরেও যেতাম না।শাহ ও রাগ করতেন না।’
মাইমুনার এহেন কথায় আদওয়া মলিনমুখে বলল, ‘এখন কি আমাকে একা ফাসাবে?’
হাফসা বলল,’মোটেই না।দোষ তিনজনেরই।’
******
মাগরিবের পর নামাজ পড়ে বাসায় আসলেন।তিনজন তখন ড্রয়িং রুমে আরহামের অপেক্ষায়।আরহাম আসতেই তিনজনে একসাথে মুখ কাচুমাচু করে বলে
‘আফওয়ান।’
আরহাম সোফায় বসে পড়লেন।ওদের ‘সরি’ কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘কানে ধরুন তিনজনে।ফাইভ মিনিটস।’
তিনজনে চরম পর্যায়ের বিস্ময়ে তখন।যেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না,আরহাম এমন শর্ত দিয়েছেন।
বাধ্যের মতো কানে ধরে রইলো তিনজন।আরহাম সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে তিনজনের রিয়েকশন দেখছেন।
বলতে লাগলেন, ‘মাইমুনা হাফসা আপনারা জানেন ভালো করেই নন-মাহরাম কারা।তাও ফুচকা দেখে আর ভাবাভাবি নেই।’
মাইমুনা ধীরসুরে বলল,’লোকটা বৃদ্ধ ছিলো আমা..
‘তো?বৃদ্ধ বলে মাহরাম হয়ে গেলেন?’
আমাকে বললে আমি এনে দিতাম না?’
‘আপনি তো আনহাইজেনিক কিছু খেতে দেন না তাই…
এবারে দমে গেলেন আরহাম।এমন সময় বাবার আগমন।বাবা চশমা খুলে তিনজনকে ভালোমতো দেখে অবাক হয়ে বললেন, ‘কি করেছে ওরা?’
‘গেটের বাইরে গিয়ে ফুচকা খেয়েছেন।লোকটার সামনে।’
‘সেটা নাহয় ওদের ভুল তাই বলে এভাবে শাস্তি দিবে?স্ত্রীরা কত মর্যাদাবান।হাত নামাও।’
বাবাকে পেয়ে তিনজনের চোখেমুখ খুশিতে ঝলমল।আরহাম বাবার সামনে মাথা নিচু করে আছেন।
বাবা বললেন, ‘তুমি আমার মেয়েদের মান অক্ষুণ্ন করেছো, এখন তুমার শাস্তি পাওয়া উচিত।’
‘আব্বু আমি??’
‘হ্যাঁ আমার রুমে আসো।ওদের সামনে তুমাকে লজ্জা দিচ্ছি না।’
আরহাম কোনোরূপ প্রত্যুত্তর করার সুযোগই পেলেন না।আড়চোখে চেয়ে দেখলেন,আদওয়া আর মাইমুনা পারলে হেসে লুটিপুটি খায়।হাফসা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
*****
একহাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আরহাম।আব্বু সোফায় আরাম করে বসতেই হাফসা চা নিয়ে এলো।হাফসাকে দেখে আরহাম লজ্জায় ঘুরে গেলেন।
74★
(১১৪)
একহাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আরহাম।আব্বু সোফায় আরাম করে বসতেই হাফসা চা নিয়ে এলো।হাফসাকে দেখে আরহাম লজ্জায় ঘুরে গেলেন।হাফসাও দ্বিতীয়বার তাকালো না।চোখের ইশারায় আব্বু কে অনুনয় করে বলল, ‘এবারের মতো উনাকে ক্ষমা করে দিতে।’
বাবা হেসে বললেন, ‘জোরে বলো যা বলার?’
হাফসা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো।তখুনি ঘরের বাইরে আম্মুর গলা শুনতেই আহনাফ তাজওয়ার আতকে উঠলেন।হূলস্থুল করে আরহামকে বললেন, ‘আরহাম কান ছাড়ো।হাত নামাও হাত নামাও।’
আরহাম আম্মুকে আসতে দেখে অন্যহাত দিয়েও কান ধরে রইলেন।আব্বু বলেই যাচ্ছেন হাত নামাতে।আরহাম শুধু মুচকি হাসছেন কিন্তু কান ছাড়লেন না।
আব্বু অসহায় গলায় বললেন, ‘তুমি কি তুমার শাস্তি আমাকে এক্সচেন্জ করাতে চাও।হাতটা নামিয়ে আমাকে বাঁচাও।’
ততক্ষণে আম্মুর নজরে পড়ে গেছে আরহামের শাস্তি।ভ্রু কুঁচকে একবার আহনাফ তাজওয়ারের দিকে তো একবার আরহামের দিকে তাকাচ্ছেন।
আম্মু অদ্ভুত দৃষ্টিতে আহনাফ তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হাউ ডেয়ার ইউ!এত বড় ছেলেকে এমন শাস্তি দিচ্ছেন?করেছে কি আমার ছেলে?হাত নামাও আরহাম।’
ভদ্রলোক বললেন, ‘ছেলে তো মা’র বাবু।তাঁর কোনো দোষই আপনার চোখে লাগে না।’
আরহাম সুযোগে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন আম্মুকে ক্ষেপিয়ে।এখন আব্বুর একটা শাস্তি পাওনা হবে।
*****
আচারের বৈয়াম নিয়ে ঝাল ঝাল করে আচার খাচ্ছিলো আদওয়া।কিচেনের তাকে দেখে আর লোভ সামলাতে না পারায় কৌশলে বৈয়ামটা রুমে নিয়েই আসতে হয়েছে।টপাটপ একের পর এক পিকলেস গিলতে গিলতে হঠাৎ নাকেমুখে বিষম উঠে যায়।বৈয়াম রেখে দ্রুত বেসিনে যেতেই তালু জলে কাশি উঠে যায়।কাশতে কাশতে যখন একটু স্থির হলো,তখন বুঝলো নাক দিয়ে কোনো তরল পদার্থ ঝরছে।মুখে নোনতা কোনো অনুভূতি বুঝতেই থু নিক্ষেপ করে চমকে যায় আদওয়া।তড়িৎ মিররে তাকিয়ে দেখে নাকের নিচে ব্লাড!ভয়ে সারা শরীর শিউরে উঠলো ওর।আতঙ্কে দ্রুত কল ছেড়ে পুরো মুখ ধুয়ে আয়নার দিকে ক্ষনকাল তাকিয়ে থাকে।পুরনো সমস্যা টা আবার হানা দিলো কবে থেকে!তাও সামান্য একটু কাশিতে?
রুমে এসে স্বাভাবিক হয়ে বৈয়াম টা জায়গামতো রেখে ফোনে নিজের পুরনো আইডিতে সেন্ড করা একটা প্রেসক্রিপশন চেক করে একটা ওষুধের নাম খাতায় লিখে নেয় চটপট।বের হওয়ার সময় দেখলো, ইমানের অসংখ্য মেসেজ।বের হয়েও পুনরায় ঢুকলো।আরহাম যেদিন বলেছিলেন,সেদিন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া সে ইউজ করা ছেড়ে দিয়েছে।আজকে ঢুকতে দেখলো,ইমান অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে সামনের উইকে।খুব জোড় অনুরোধ করছে,শেষ একবার দেখা করার জন্য।কাঁদতে কাঁদতে ভয়েস দিয়েছে,শেষ একবার দেখা করে নিলে,আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবে না বললেও আদওয়া ‘না’ শব্দটা বলেই বেরিয়ে এলো।ইমানের সাথে আর কোনোদিন হয়তো দেখা হবে না,কিন্তু আদওয়া নিজেই নিজেকে অপরাধী মনে করে।কারন সেই ইমানকে বাধ্য করেছিলো ওর মায়ায় জড়াতে।পুরনো অনেক স্মৃতি চোখে ভেসে উঠতেই আরেক মন বলল সে এখন বিবাহিত।আরহামের আমানত!
নিজেকে ব্যস্ত রাখতে আম্মুর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো সে।উনার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলে মনটা ভালো হবে সাথে এসব বিষয়ও ভাবনা থেকে দূরে থাকবে।
*****
দীর্ঘ ঘুম শেষে দেখলেন ১১ টার কাটা পেরিয়েছে।চোখমুখে পানির ছিটা দিয়ে নিচে নামতে দেখলেন অবাক কান্ড।টেবিলে তিনজনে বসে ফুচকা খাচ্ছে, স্বয়ং আব্বু তিনজনকে খুশিখুজি করে খাইয়ে দিচ্ছেন।আরহাম এসে অবাক চোখে তিনজনের খাওয়া দেখলেই। মনে হচ্ছে, ‘দীর্ঘদিনের অনশন ভেঙে খানা পেয়েছে তারা।
‘এসব কি আব্বু?’
‘ফুচকা!খাবে তুমি?বসতে পারো।’
‘আনহাইজেনিক খাবার।কিভাবে গিলছে এনারা?’
‘গলা দিয়ে।’
‘কে দিয়েছে?’
‘আমি।’
আব্বুর এহেন উত্তরে আরহাম দমে গেলেন।তিনজনের থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সরিয়ে ভাত বেড়ে খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ডিনার করেছেন সবাই?’
‘হুমম।’
‘আম্মু?’
‘সবাই শেষ।’
আরহাম ভাত নাড়ছেন আর তাদের রিয়েকশন দেখছেন।হাফসাকে চোখ দিয়ে শাসাচ্ছেন তিনি।টক দিয়ে ঝাল ঝাল করে কিভাবে একের পর এক ফুচকা খাচ্ছেন।ডাক্তার বলেছে হিমোগ্লোবিন কম,পুষ্টিকর খাবার খেতে,আর ইনি আনহাইজেনিক খাবার গিলছে।
‘খাচ্ছেন খান।ফুড পয়জনিং হোউক,তাহলে….
আরহামের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আদওয়া আর মাইমুনা বলে উঠলো, ‘হবে না হবে না।ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
‘অভ্যেস আছে।'(আদওয়া)
আরহাম বললেন, ‘আচ্ছা।’
অর্ধেকটা তখনো বাকি।ঝালে চোখমুখ লাল হয়ে আছে হাফসার।ঠোঁট চেপে কোনোমতে উঠে গেলো সে।ঝালের চোটে কান দিয়ে যেনো গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে।আর তাতে মাথাব্যথা ক্রমশ বাড়ছে।
রুমে এসে বিছানায় বসে একঢোকে পানি খেতে না খেতে আরহাম হাজির।ফ্রীজ থেকে আইসক্রিমের বক্স এনে দিতে চুপচাপ খেতে শুরু করলো সে।একটু যদি ঝাল কমে!
আরহাম বুকে হাত রেখে দূরে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, ‘ফুচকা উইথ স্পাইসি!ভেরী টেস্টস!’
হাফসা কিছুই বললো না।আরহাম রুম থেকে গেলে চোখ বুজে একটু ঘুমাবে সে।মাথার অসম্ভব যন্ত্রণা টা ক্রমশ বাড়ছেই।কথার সমাপ্তি টানতে সে বলল, ‘খেয়াল ছিলো না ঝাল বেশী হয়ে গিয়েছিলো।’
‘এখন তো আপনিই কষ্ট পাচ্ছেন। এজন্য না করি।এই সময়ে এসব খাওয়া খুব দরকার?’
‘সরি।’
আরহাম বেরিয়ে গেলে মাথাব্যাথার একটা ওষুধ খেয়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে সে।যন্ত্রণা নিবারনের একমাএ উপায় হলো ঘুম!
******
আধঘন্টা থেকে ছটফট করছে হাফসা।ব্যাথাটাও কমছে না,ঘুমও লাগছে না।হঠাৎ অনুভব করলো,আরহামের পারফিউমের স্মেল।আরহাম ওর মাথাটা তুলে উনার উরুর ওপর রাখলেন।বিকস লাগানো হাতে মাথার দুপাশে মাসাজ করে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বেশী পেইন করছে মাথায়?’
চোখ বুজেই উত্তর দিলো, ‘কখন আসলেন আপনি?’
‘এইমাত্র।’
‘কেন আসলেন?’
‘আপনি সারারাত ছটফট করবেন?আমি শান্তিতে ঘুমাবো?’
‘বুঝলেন কি করে?’
‘চোখমুখ যেভাবে কুচকে রেখে ছিলেন, বুঝছিলাম।’
হাফসা আর উত্তর দেয় না।বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর বলে, ‘কষ্ট না পেলে একটা কথা বলি?’
‘হুমম।’
‘আপনার শার্টটা চেন্জ করে আসুন প্লিজ।’
‘কেন?শার্টে কি হয়েছে?’
‘স্মেলটা খুব তীব্র।অসহ্য লাগছে।’
আরহাম বিনাবাক্যে শার্ট চেন্জ করে এসে বললেন, ‘স্মেলটা অস্বস্তিকর?’
‘হু।’
‘ওটা আপনার ফেভারিট আঁতর ছিলো।আপনিই তো প্রায় সময় নিজেই লাগিয়ে দিতেন আমাকে।’
‘আমি?এটা?’
‘হ্যাঁ।’
‘এটা নতুন লাগলো।যাই হোক, মনে নেই।’
*****
ফযরের আযান পড়েছে বেশ আগেই। রাতের আঁধার বিলীন হয়েছে ভোরের ফকফকে ও পবিত্র আলোতে। সূর্য নববধূর মতো উঁকি মারছে পূর্বাকাশে।আরহাম মসজিদ থেকে ফিরে দেখলেন আব্বু কিচেনের দিকে যাচ্ছেন।আরহাম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি করবেন?’
‘চা খাবো।’
‘আম্মু….
‘উনি অসুস্থ।ডেকো না।’
‘আচ্ছা আমি বানাচ্ছি আপনি যান।’
আব্বু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন, ‘পারবে তুমি?’
আরহাম হেসে ফেললেন।’পারবো আব্বু।এতটাও অকর্মা না আমি!’
আব্বুকে চা বানিয়ে রুমে এসে দেখলেন হাফসা বেলকনি থেকে ফিরছে।সালাম বিনিময় শেষে বললেন, ‘কি খাবেন চা কফি অথবা অন্যকিছু?’
হাফসা ভাবুক হয়ে কিছু ভেবে বলল, ‘লেমনের সাথে ঝাল মিক্স করে খাবো।’
‘লেমনের সাথে ঝাল মিক্স করে খাবো!’আরহাম কথাটি ভেংচে রিপিট করে বললেন, ‘কাল রাতের কথা মনে আছে?’
‘মাথাব্যথা আমার এমনিই করে।’
‘দূধ আনছি।সাথে কী খাবেন বলুন?’
নাম শুনেই পেটের ভেতর গুলানো শুরু হয়ে গেছে হাফসার।বিছানায় শুয়ে গায়ে কমল জড়িয়ে নিতে নিতে বলল, ‘আপনি সোনামণির আব্বু না?আপনি দূধ খান।ডিম খান,নিউট্রিসাস ফুডস খান।দিস উইল বি হেল্পফুল ফর সোনামনি’স হেলথ্।’
আরহাম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।হাফসা কমল দিয়ে মুখ ঢেকে হাসতে থাকলো।