৮৯
সেদিনের পর থেকে আজ তিন নাম্বার দিন।আদওয়া যে আরহামের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে এমন নয়।মাকে দিয়ে আন্টির সাথে ফোনে কথা বলিয়েছে।বাবাকে দিয়ে আঙ্কেলের সাথে কথা বলিয়েছে।তারা শুধু না-ই করলেন।তিনজন একসাথে মিলে কি থাকা যায় না?না ও ঝগড়া করবে বাকিদের সাথে?এমনও তো নয়।তিনজনের একজন মানুষ থাকলে যে নিজের বেলায় খুবই অল্প সময় থাকবে, উনার সাথে সময় কাটানোর জন্য, গল্প করার জন্য। সেটা তো ও ভেবেছে।তারপরেও কেউ কেন বুঝছে না?
এমনও তো হতে পারে,নিজের ছন্নছাড়া দ্বীনের ছোঁয়া হীন জীবনে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারলো তাঁর মাধ্যমে।নিজের ইচ্ছায়,নিজের জেদে সবসময় জিতে যাওয়া মেয়েকে মা-বাবা দ্বীন শিক্ষায় কখনো এগিয়ে নিতে পারেন নি।আট দশটা মেয়ের মতো সেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ।চলা ফেরার ক্ষেএে শালিনতা থাকলেও দ্বীনি পোষাকে অভ্যস্ত নয়।মনের ইচ্ছায় নামাজ ওর।কিন্তু আরহামকে নিয়ে ভাবার পর সে চেষ্টা করে সাধ্যমতো অন্তত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার।এমন না যে,সে আরহামের পছন্দের হওয়ার জন্য নামাজ পড়ছে।বরং উনার দ্বীনদারিতা সার্চ করতে করতে দ্বীনের প্রান্তেও এগিয়ে যাচ্ছিলো।এটুক তো ভেবেছিলো,বাকিটা উনার সাহায্যেই পারবে।
বিবাহিত কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা কি ভুল? এমন তো না যে,সে প্রস্তুত না তৃতীয় কাউকে গ্রহন করার জন্য।সে সমান সমতাকারী,ও সামর্থ্যবান পুরুষের বৈশিষ্ট্যে পড়ে।
এসব ভেবেই নিজের ওপর বিষিয়ে উঠছিলো একদম।
চোখমুখ মুছে নিজেকে আবৃত করে বাইরে বেরোলো সে।ড্রয়িংরুমে গিয়ে মাকে বলল, ‘আমার সাথে এসো।মার্কেট যাব।’
মেয়ের ফোলা ফোলা চোখ,আর মলিনতায় ছেয়ে যাওয়া মুখ দেখে আয়বীর সাহেব সায়হানকে নিয়ে(ভাই) নিজের রুমে চলে গেলেন।এমন দৃশ্য বাবার জন্য কষ্টকর।
‘কদিন আগেই না মার্কেট করলে।’
‘এখন মাস্ট যেতে হবে।বোরকা কিনবো।’
মিসেস সেমু নেএপল্লব বড় বড় করে চেয়ে রইলেন।দম নিয়ে বললেন, ‘তুমি?বস্তা কিনবে?’
আদওয়া অধৈর্য হয়ে বলল,’তখন বুঝতাম না তাই বস্তা বলতাম।এখন বুঝি।’
‘তাঁর জন্যই কি এসব পরিবর্তন?’
মনটা আবার বিষাদে ছেয়ে গেলো আবার।প্রতিটা বিষয় কেমন জানি আরহাম’ নামটায় গিয়েই থামে।বলল, ‘নাহ।পর্দা সম্পর্কে জেনেছি,তাই এখন থেকে পর্দা করার চেষ্টা করবো।’
মিসেস সেমু চুপচাপ রেডি হতে চলে গেলেন।এতকিছুর মাঝেও খুশি লাগলো উনার।অন্তত এই উছিলায় নিজেকে পরিবর্তন করছে।এটাই অনেক।
******
নামাজ শেষে করতেই ফোন আসলো আরহামের।সালাম বিনিময় শেষেই হাফসা জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি লাঞ্চ কোথায় করেন?’
‘করি।’
‘কোথায়?’
‘এতিমখানায়।’
‘কি দিয়ে করেন?’
‘ডাল ভাত।’
হাফসা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,’সত্যি?’
‘হুম।’
‘শুধু এগুলোই?’
‘মিট বা ফিশ থাকে একপিস।’
হাফসার ওপাস নীরব শুনে আরহাম জিজ্ঞেস করলেন,’কি হলো?’
‘বাচ্চাদের জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু করা যায় না?মানে আমার এ্যাকাউন্টে যে টাকাগুলো আছে….
54★
বাচ্চাদের জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু করা যায় না?মানে আমার এ্যাকাউন্টে যে টাকাগুলো আছে….
আরহাম ওপাশ থেকে নি:শব্দে হেসে বললেন, ‘চেষ্টা চলছে ভালো কিছুর।দোয়াহ করুন।
‘ইন শা আল্লাহ।’
‘লাঞ্চ করেছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ।’
‘মাইমুনা করেছেন?কোথায় উনি ফোন তুললেন না?’
‘শাওয়ারে মনে হয়।’
‘আচ্ছা,বেরোবো এখন।আল্লাহ হাফিজ।’
(সালাম)
*****
সারা বিকেলবেলা ফাইয়াজ আরহামের বাসায় ছিলো।মাইমুনার সাথে ভাব বেশি ওর।মাইমুনার সাথে গালে গাল লাগিয়ে ছবি তোলে আর বলে, ‘মামাকে জেলাস করবো।’
সন্ধ্যার পর নামাজ শেষে বাসায় ফিরে দেখলেন, ফাইয়াজ মাইমুনার কোল জড়িয়ে সোফায় শুয়ে আছে।হাফসা তাকে ফ্রুটস খাইয়ে দিচ্ছে।
আরহামের এসে ওকে টান দিয়ে সরিয়ে বললেন, ‘মনে হচ্ছে তোমার বউ।সরো দেখি।’
ফাইয়াজ গলা ফাটিয়ে কান্না শুরু করতে আরহাম আবার তাকে কোলে নিয়ে সরি বলতে লাগলেন।কান্না সামলাতে কত বাহানা করতে হলো।অবশেষে সে পুনরায় তার জায়গা দখল করে নিলে আরহাম মুচকি হেসে আম্মুর রুমের দিকে এগোলেন।
আম্মুকে একটু চিন্তিত লাগলো।আরহাম গিয়ে পাশে বসে মায়ের হাত নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বললেন, ‘আপসেট কেনো আম্মু?’
‘মেয়েটার কথা ভাবছিলাম।’
‘কার?’
‘আদওয়ার।’
‘কেন?’
‘ও তুমাকে পছন্দ করে।তুমি সরাসরি না করে দিয়েছিলে,বাসায় গিয়ে কত পাগলামি করেছে জানো?’
‘আবেগের বয়স আম্মু।সময়ের সাথে সাথে ম্যাচিয়্যুর হয়ে যাবেন।’
‘আমাকে ফোন দিয়ে খুব কান্নাকাটি করেছে বিকালে।’
তখুনি আব্বু ফোন কানে নিয়ে রুমে ডুকলেন।উনার মুখটা পাংশুটে হয়ে আছে।আরহামের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতে আরহাম ইশারা করলেন, লাউড স্পিকারে দিতে।
আয়বীর আরহামকে বুঝিয়ে বলার কথা বলছেন।বিকেলে ৪ টা ঘুমের ওষুধ খেয়েছে আদওয়া।হসপিটাল থেকে মাএ বাসায় ফিরার পথেই কথা বলছিলেন।আরহাম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
বাবার থেকে ফোন নিয়ে সালাম দিয়ে বললেন, ‘উনার কাছে দিন ফোন টা।’
কানে ফোন ধরে একেবারে চুপচাপ হয়ে রইলো আদওয়া।
আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুস্থ হয়েছেন?’
……….
‘আপনি এমন পাগলামি কেন করেছেন?কারোর জন্য নিজেকে আঘাত করা বোকামি।আর আমি আপনার যোগ্য নই।আমার দূজন স্ত্রী আছেন।।আমার আর প্রয়োজন নেই।আপনি এসব পাগলামি করে আপনার আম্মু আব্বুকে টেনশন দিচ্ছেন, আমার ফ্যামিলিকেও দূর্বল করছেন।বাট আমি তো মানতে পারবো না এগুলো।আমি নিজে অনুরোধ করছি আপনাকে,আমাদের ভালো থাকতে দিন।আপনিও ভালো থাকুন।’
কথাগুলো এক শ্বাসে বলে আরহাম ফোন রেখে দিলেন।চুপচাপ বেরিয়ে গিয়ে রুমে চলে গেলেন।
*****
রাতে আলফাজের সাথে সুরাইম আসলো।এ বাসায় আসার পর ফাইয়াজ সবসময় এখানেই লেগে থাকে।বিকেল থেকে এখানেই তার থাকা,খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। যাওয়ার কোনো টান নেই।বাসায় ফিরার কথা বললে সে বললো,’দূই আন্টিমণিকে বলো আমার সাথে আসতে।তাহলে আসবো আমি।’
সুরাইম বলল,’আচ্ছা কাল যাবে তারা।এখন বাসায় আসো তুমি।’
কোনোরকম মানিয়ে নিয়ে তাকে নিয়ে গেলেন।হাফসা রুমে গিয়ে নামাজ তিলাওয়াত শেষ হতেই আরহাম আসলেন।
আরহাম বললেন, ‘কাল সবাই আপনাদের বাড়ি যাচ্ছি।’
‘আমি জানতাম।’
‘জানতেন?’
‘হু,কাকামণি বিকেলে ফোন দিয়েছিলেন।’
‘খুব ইন্টেলিজেন্ট আপনি।বলুন তো কালকে কী?’
‘কি?’
‘আপনার টিসি।’
হাফসা অবাক হয়ে বলল,’কেন কেন?’
‘এভাবে বিন্দাস ঘুরে ফিরে সংসার করে এক্সামে কি দিবেন?’
হাফসা থতমত করলেও আত্নবিশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো, ‘পড়বো আমি।এক্সামের আগে তো পড়বো।’
‘আপনাদের ভার্সিটিতে নিকাব খুলে এক্সামে এন্ট্রি নিতে হয়।তাই আমি চাইছিনা আপনি এক্সাম দিন।’
‘আচ্ছা।’
‘মন খারাপ হয়েছে?’
‘উহু,এখন পড়াশোনা ভালো লাগে না।’
‘কি ভালো লাগে?’
হাফসা মজা করে বলল,’ফাইয়াজকে।’
‘ওকে গো।আমার কাছে থাকা লাগবে না আর।’
হাফসা হেসে নিচে নামতে নামতে বলল,’ডিনার করতে আসুন।’
*****
পরের দিন
জ্যামে আটকে আছে গাড়ি।পড়াশোনা থেকে নির্বাসন নিয়ে শেষবারের মতো ভার্সিটি থেকে ফিরছে হাফসা।আরহাম ড্রাইভ করছিলেন।আর হাফসা সেই কখন থেকে তোঁতাপাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে কথা বলেই যাচ্ছে।
‘হাতে পায়েই শুধু বড় হয়েছেন বুদ্ধিসুদ্ধি কিছু হয় নি।’
হাফসা সরু চোখে মুখ বাঁকায়।আরহাম হাসেন!
আবার সে তার গল্প শুরু করলো।আরহাম আবারো হারিয়ে গেলেন হাফসাতে।কথা বলার সময় তিরতির করে ওর কাঁপা ঠোঁট, ঠোঁটের প্রসারণ,মুভের ভঙ্গি,চোখের টান,গাল ফোলা এইসব আরহামকে খুব টানে।এই বোকা ফুলের ওপর নতুন করে প্রেমে পড়তে মন চায়।এতকথা বলার পর হাফসা যখন আরহামের দিকে তাকালো তখন উনার ঘোরলাগা ঘোলাটে দূটো চোখ ভাসমান হলো।হাফসা শুকনো ঢুক গিলে।আরহাম ওর কাছেই মুখ এগিয়ে আনছেন।স্টিয়ারিং ছেড়ে ওর কাছে আসতে চাইলেই ও পিছু সরে যায়। বলা বাহুল্য! আরহামের এমন দৃষ্টি কেমন মাদকতার।মনের গহীন থেকে অন্যরকম একটা অনুভূতি বেরিয়ে আসছে।হাফসা ঠোঁট কামড়ে নিচুমুখে রয়।ইসস সিগন্যাল ও কেন দিচ্ছে না।আরহাম কাছে চলে এসছেন।হাফসার হৃদপিণ্ড দ্রীম দ্রীম শব্দে কেঁপে উঠছে।আরহাম উনার ঠোঁট জোড়া হাফসার ঠোঁটে স্পর্শ করতে যাবেন অমনিই সিগনাল পড়ে। চারিদিকে কোলাহল শুনে আরহাম দ্রুত ওর ওপর থেকে সরে যান।ধ্যান ফিরতেই লজ্জা ঘিরে ধরে আরহামকে।কি করতে যাচ্ছিলেন!ও মাই গুডনেস!সরাসরি তাকালেন না তবে রিয়ারমিরর দিয়ে দেখলেন হাফসা লজ্জায় নতমুখ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে।
*****
বাসায় ফিরে খাওয়া শেষ হতেই আযান।নামাজ পড়ে রেডি হয়ে ঠিক বেরোবার মুহুর্ত মাএ।গেট থেকে দৌড়ে আসলো ফাইয়াজ।আরহামকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাচ্ছো মামা?’
‘আন্টির বাসায়।যাবে তুমি?’
‘হ্যাঁ।’
আলফাজ গেট থেকে হেঁটে আসতে আসতে ফাইয়াজকে বলল, ‘তারা চলে আসবেন তো।’
আরহামকে রীতিমতো জেরা শুরু করে দিয়েছে ফাইয়াজ।এরই মধ্যে আলফাজের চোখ কাঁচ পেরিয়ে গাড়িতে থাকা হুরপরীর দিকে যায়।
হাফসা কাঁচ উঠিয়ে নেয় তৎক্ষনাৎ।হঠাৎ করেই হাত পা কাঁপছে ওর।ভয়ে যেন নি:শ্বাস নিতেও বাঁধছে।
লোকটাকে প্রথম সরাসরি দেখেছে।কিন্তু এমন করে তাকায় কেন!
ফাইয়াজ এসে কোলে উঠে বসে রইলো।আম্মু-আব্বু আগেই বেরিয়েছেন।সে তাঁর মতো কিছুক্ষণ গল্প করে দূই আন্টিমণিকে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যেতেই গাড়ি স্টার্ট হলো।
হাফসা দম বন্ধকর একটা শ্বাস নিলো।আচমকা আয়নায় চোখ যেতে দেখলো,আরহাম ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন।তাহলে কি উনি কিছু আন্দাজ করলেন!
৯০
সারা জার্নি আরহামের ছেলেবেলাসহ শিক্ষা জীবনের গল্প শোনা হলো।ছাএকালে পড়ার সময় উনার প্রতিষ্ঠান থেকে বাসাটা বেশ দূরে ছিলো।তাও আরহাম মায়ের থেকে কখনো আলাদা থাকতেন না,এমনকি মিশরে যাওয়ার সময় তিনি একজন তাগড়া যুবক।তবুও যাওয়ার সময় প্রচুর কাঁদতেন।ফোনে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলতেন।তবে আইরা খুব জ্বালাতো।ইচ্ছে করেই আরহামের সব পছন্দের জিনিস কেড়ে নিতো।আরহাম শান্তশিষ্ট বলে,গাল ফুলিয়ে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে বিচার দিতেন।তবুও বোনের সাথে রাগারাগি করতেন না।আইরা যেমন বাবার কলিজার টুকরা,আরহামও তেমনি মায়ের।
*****
এখনও আধঘন্টার মতো জার্নি বাকি।উমায়েরকে চুপচাপ দেখে আরহাম জিজ্ঞেস করেছেন বেশ কয়েকবার।খারাপ লাগছে কি না?ঘুম পেয়েছে কি না?
সে বরাবরই মাথা নাড়িয়ে আশ্বস্ত করেছিলো।কিন্তু এবার পেটের ভেতর থেকে সব গুলিয়ে বেরিয়ে আসছে যেনো।গলা পর্যন্ত চলে আসতে হাফসা দ্রুত ইশারায় বুঝালো পলি দিতে।
পলি সামনে রাখতেই সেটা একদম ভাসিয়ে দেয়।আরহাম ওর পিঠে মাসাজ করতে নিলে ও বাধা দিলো।পানি খেয়ে চুপচাপ সিটে গা এলিয়ে চোখ বুজে নিলো।হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে বিট করছে,মাথা ঝিমঝিম করছে,একসময় আরহামের উষ্ণ বাহুর স্পর্শ পেতে চুপচাপ চোখ বুজে রইলো।
*****
ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন বেলা শেষ প্রায়।আম্মুকে পাশে দেখে জিজ্ঞেস করলো,বাড়ি ফিরেছে কবে।
তিনি বললেন, ঘন্টা দেড়েক হবে।আসরের সময় যাচ্ছে, নামাজ পড়ে নিতে।
ওয়াশরুমে গিয়ে অযু পড়ে বের হতে মনে পড়লো,গাড়িতে আরহামের কাঁধে মাথা রেখে শুয়েছিলো।উনি নিশ্চয়ই কোলে করেই উপরে নিয়ে আসছেন।ইসসস!না জানি কে কে দেখেছে!
নামাজ শেষে জায়নামাজ সেরে উঠতেই আরহাম হাজির।উনার হাতে খাবারের প্লেট।খিদেও লেগেছে ভীষণ।
‘এখন ঠিক আছেন? ‘
‘হু।’
খাওয়াতে খাওয়াতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আসার পর বাবা বেহুশ করে ফেলেছিলেন জিজ্ঞেস করতে করতে।কি হয়েছে আপনার কোলে করে আনলাম কেন!’
‘ডাক দিলে পারতেন।কোলে করে আনলেন কেন?’
‘ইচ্ছে হয়েছে।’
‘আমার বাড়িতে এসে উল্টো আপনিই আমার সেবা করছেন।খেয়েছেন আপনারা?আম্মু আব্বু আপু?’
‘খেয়েছেন।’
‘আপনি খেয়েছেন?’
‘এইযে পেট ভরছে।’
হাফসা সরু চোখে তাকিয়ে উনাকে খাবার খেতে দিতে দিতে বলল,’পেট ভরে গেছে আমার।আর সম্ভব না?’
‘এত অল্পতে পেট ভরে?’
‘এতটুক পেটে আর কতটুক ভাত জায়গা হবে?নিচে গেলাম।’
যেতে যেতে পেছনে তাকিয়ে দেখলো,আরহাম হাসছেন।
*****
মামুণীর সাথে রান্নায় হেল্প করতে কিচেনে গিয়েছিলো সে।পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে পেয়াজের ঝালে মুহুর্তেই চোখ লাল হয়ে যায়।পেঁয়াজের গন্ধটা নাকে কেমন উটকো লাগে।আচমকা পেট থেকে সব উগড়ে আসার উপক্রম হলে বেসীনে বমি করে ভাসিয়ে দেয়।মামণি ওকে রুমে এনে পিঠ মাসাজ করে দিলেন।
এর কিছুক্ষণ পর আরহাম ওকে নিয়ে নিচে গেলেন যেখানে সবাই গল্প করছিলো, কিন্তু হাফসার অস্বস্তি হচ্ছিল খুব।বুঝতে না দিয়ে সবার সাথে গল্প করতে লাগলো।
রাতের খাবার আগেই খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলো।সার্ভ করার সময় আরহাম জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘খিদে লেগেছিল বেশী তাই খেয়ে নিয়েছি।’
ঘুৃমানোর আগে মাইমুনার রুম গুছিয়ে বেলকনির দরজা লাগিয়ে বের হতে গেলে আরহাম সামনে পড়লে বলে, ‘এখানে ঘুমিয়ে নিন।সমস্যা হবে?’
‘উহু,আপনি?’
‘উপরে মামুনীর সাথে।’
বলে রুমে চলে আসলো সে।দূ চোখে তন্দ্রা ভর করেছে।ঘুমালে যদি চোখের ব্যাথাটা একটু কমে।মামনীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।কতদিন পর মামণীর কাছে থাকছে।মামণির কাছে থাকলে মায়ের অভাবটা একটু কম বোঝা যায়!
****
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়।বাতাসে পর্দা দূলছে,ড্রীম লাইটের আধো আলোয় রুমটা পরিষ্কার।হাফসা উঠে বসে পড়লো।অস্বস্তি লাগছে খুব।কখনো গরম লাগছে, কখনো শীত।চোখের পেছনের তীব্র ব্যাথায় এমুহূর্ত কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।মামণি একপাশে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন।উঠে কাবার্ড থেকে দূটো কাঁথা বের করে একটা মামণীর গায়ে জড়িয়ে দিলো।রুমের দরজা হালকা ফাঁক দেখতে পেয়ে লাগানোর উদ্দেশ্যেই এগিয়ে আসতে একটা অবয়ব দেখলো।টিমটিমে আলোয় বুঝা যাচ্ছে বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে।যেমনি মস্তিষ্ক তড়িৎ কিছু জানান দিলো তখনি চিৎকার দিয়ে উঠে সে।ভয়ে হাত পা অসাড় হয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই একজোড়া পুরুষালী হাত ওকে আগলে নেয়।
54★
ভয়ে হাত পা অসাড় হয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই একজোড়া পুরুষালী হাত ওকে আগলে নেয়।
শুনলো,’আমি উমায়ের আমি।ভয় পেয়েছেন আপনি?’
স্বাভাবিক হতেই বুঝলো এটা আরহাম।জিজ্ঞেস করলো,’আ্ আ আপনি ছিলেন? ‘
‘হ্যাঁ আমিই ছিলাম।আমাকে পেছন থেকে দেখে চেনা যায় না?লাইট ও তো ছিলো।’
‘সরি।এত কিছু ভাবার সুযোগ পাইনি। ‘
আরহাম ওকে ধরে বারান্দার টুলে এনে বসালেন।
‘এত রাতে এখানে কেন?’
আরহাম হেসে বললেন, ‘পাহারা দিচ্ছি আপনাকে।’
‘সিরিয়াসলি?’
‘জেগে গেলেন কীভাবে?’
‘আপনি সত্যি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছেন?এখন তো কিছু হবে না।’
‘উঁহু, পাচ্ছি না তো।’
‘তাহলে?’
‘মাথায় শুধু উলটাপালটা চিন্তা আসে।আমি কি করব?’
‘কিচ্ছু হবে না।ঘুমান গিয়ে প্লিজ।আমি দরজা লক করে নিচ্ছি।’
গালে,কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে চলে গেলেন আরহাম।হাফসার মন ভালো হয়ে গেল।চোখের ব্যাথাও তীব্র মনে হচ্ছে না।উনার স্পর্শে কি ম্যাজিক থাকে না কী!
*****
পরদিন বিশেষ কোনো কাজে আরহাম সকালেই ঢাকায় চলে গেলেন।একসাথে সকালের নাস্তা শেষে সেই যে অচেতনের মতো ঘুমিয়েছিলো,মাএ উঠে ফোন হাতে নিতে আরহামের কল, টেক্সট দেখলো।’তিনবারই আম্মুকে ফোন করে আপনার কথা জিজ্ঞেস করলাম,ঘুমে ছিলেন আপনি।উঠে নামাজ পড়ে খেয়ে নিবেন।মিস ইউ হোমাপাখি।’মেসেজ দেখে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখা দিলো,রিপ্লাই দিয়ে মায়ের উদ্দেশ্য নিচে নামলো।
*****
মাথার ওপর তখন তীব্র রোদের ঝলকানি।গাড়ি সাইড করে সপিং মলের থার্ড ফ্লোরের উদ্দেশ্যে লিফটের দিকে এগোচ্ছিলো ইমান।আশপাশের এত মানুষের ভীড়ে তাঁর চোখ আটকে যায় এক কালো বোরকা ওয়ালীর চোখে।একপলক দেখেই মনে হলো চোখটা খুব চেনা।সেকেন্ড কয়েক চোখ স্থির রাখতে মনে হলো এটা তাঁর শমপাপড়ি।হালকা হেসে উঠলো সে।সে হাসি মর্মান্তিক কষ্টের।আদওয়া আশপাশে তাকিয়ে রিকশা খুঁজছে,মুখে মাস্ক তাঁর।ইমান দেখলো,অন্যের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একটা মানুষ চোখের সামনে কতটা বদলে যায়!কতটা পরিবর্তন ওর মাঝে! অথচ আমিও ওর মতো প্রত্যাশী।ও যেমন অন্যকাউকে চায়,আমিও ওকেই চাই।এটা সে বুঝলো না।
মন চাইলো দৌড়ে গিয়ে কয়েকটা কথা বলে মনের একটু তৃষ্ণা মিটাতে।এগোতে গিয়ে পিছু ফিরে এলো ইমান।চোখ সরিয়ে গন্তব্যে বদলে নিলো তৎক্ষনাৎ।থাক না,সে সুখী থাকুক।আমার তো শমপাপড়ি আছেই,বাস্তবে না হোক,স্বপ্নে,কল্পনায়।এমনকি প্রতিটা ভাবনায়ও!
*****
আরহাম একেবারে ফিরলেন রাতে।হাফসা ইশার নামাজ শেষে মাএ উঠতেই এসে জড়িয়ে ধরলেন।কপালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘চোখ মুখ শুকনো দেখাচ্ছে কেন?খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক হয় না তাই না?’