আকাশ কি করে এত বদলে গেল সেটা বুঝার ক্ষমতা মেঘলার হয় নি।সেই হিসাব মিলানোর চেস্টাও মেঘলা করছে না।
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
মেঘলাঃ আমাকে জানতে হবে আকাশ এমন কেন করল?যে করেই হোক ভাইয়াকে ছাড়াতে হবে। কিন্তু আমি তো কাউকেই চিনি না বাসায় গিয়ে বাবাকে সব বলতে হবে এটা ভেবেই মেঘলা তাড়াহুড়ো করে বাসায় ফিরে তার বাবাকে মাকে সব খুলে বলল।
মেঘলার বাবা মা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারল না আকাশ এমন করেছে। মেঘলা সব খুলে বলার পর মেঘলার বাবা মা আর মেঘলা জেলে গেল।
নাবিলকে অনেক মারা হয়েছে কিন্তু নাবিল তার বাবা মাকে শান্তনা দিতে কিছু বলল না।বরং তাদের সাহস দিল কিন্তু মেঘলা কিছুই শুনতে রাজি না সে কেঁদেই চলেছে।
মেঘলাঃ ভাইয়া এমন কেন হল?
নাবিলঃ ধুর বোকা কিছুই হয় নি এভাবে কাঁদছিস কেন বোকা আমার কিছুই হয়নি।আর এমন কোন জেল নেই যেখানে নাবিলকে আটকে রাখা যায় আমি খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হব।তোরা চিন্তা করিস না।
বাসায় যা মেঘলা, সাবধানে থাকিস আর বাবা মার দিকে খেয়াল রাখিস বলে নাবিল ভিতরের সেলে চলে গেল।
জেল থেকে বেরিয়ে নাবিলের বাবা মা মেঘলা সবাই মিলে উকিলের কাছে গেল। সাময়িক জামিনের আবেদন করার জন্য।
উকিল সব কাগজ রেডি করে ফেলেছে ঠিক তখনি
কিছু গুন্ডা টাইপের লোক এসে উকিলকে বলল জানের ভয় নাকি? আকাশ ভাইয়ের নিষেধ আছে শহরের কোন উকিল এই কেস নিবে না আপনি কোন সাহসে কেস নিচ্ছেন। আকাশ ভাইয়ের হুকুম এই জামিন হবে না।
উকিল অবাক হল সাথে মেঘলারাও…
আকাশের বাবাঃ পুলিশে দিয়েছে তো দিয়েছে আবার জামিন হতেও দিবে না? আকাশ এমন কেন করছে?
গুন্ডা গুলি ফোনে আকাশের সাথে উকিলের কথা বলিয়ে দিল।আকাশ হুমকি দেওয়ায় উকিল ভয়ে কেস টা নিল না।
মেঘলার বাবাঃ আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না আকাশ এমন করছে… মেঘলা তুই তোর মাকে নিয়ে বাসায় যা আমি আকাশের সাথে দেখা করতে যাব।
মেঘলাঃ আমিও যাব।
মেঘলারা সবাই মিলে আকাশের অফিসে গেল।
আকাশ ওদের দেখে রেগে গেল
আকাশঃ আপনারা এখানে?কি চাই?
মেঘলার বাবাঃ এমন কেন করছিস আকাশ? নাবিল কি করেছে?
আকাশঃ খুন করেছে..
মেঘলাঃ মিথ্যা কথা আমি দেখেছি তুমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে গিয়েছো। এমন কেন করছো আমাদের সাথে?
আকাশঃ আংকেল আমাকে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করবেন না বাসায় যান এই ব্যাপারে আমি কারো সাথে কোন কথা বলতে চাই না।
মেঘলা আকাশের কলার টেনে বলল সমস্যা কি তোমার?আমাদেরকে কি পাগল মনে হচ্ছে তোমার?ভাইয়া তোমার জন্য কি কি করেছে সব ভুলে গেছো?
আকাশ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল ভাল কথা ভাল লাগে না তাই না? এই কে আছিস আংকেল আন্টিকে নিয়ে যা এরা যতক্ষন বাইরে থাকবে ততক্ষন ঝামেলা করবে।
কয়েকটা ছেলে এসে বলল ম্যাডামকেও নিয়ে যাব?
আকাশ রাগি চোখে তাকিয়ে বলল ওর গায়ে কোন ছেলে টাচ করবে না যতটুকু বললাম ততটুকুই কর আংকেল আন্টিকে নিয়ে যা।
মেঘলাঃ এসব কি হচ্ছে? বাবা মাকে ছাড়ো ছাড়ো বলছি আকাশ তুমি এত খারাপ কি করে হলে বলতে বলতে মেঘলা গিয়ে ছেলেগুলিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল।
আকাশ মেঘলার হাত ধরে বলল কি বল্লাম? কথা কানে যায় নি? কোন ছেলে তোকে টাচ করবে না তুই কাওকে টাচ করবি না বুঝেছিস?
এই যা তোরা…
মেঘলার বাবা আকাশের ব্যবহার দেখে হতবাক হয়ে গেল।
মেঘলার বাবা মাকে ছেলেগুলি নিয়ে গেল।
মেঘলা ছটফট করছে। তাতে আকাশের কিছু যায় আসল না?সে মেঘলাকে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে গেল।তারপর নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করল।
।
।
।
।
।
।
আকাশ মেঘলাকে নিয়ে বাসায় গেল…
আকাশঃ খুব বার বেড়েছিস তাই না? যখন যেখানে ইচ্ছা চলে যাচ্ছিস আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করিস না?আমার কলার ধরার আগে বুক কাঁপে না?পড়াশুনা আছে ভুলেই গেছিস তাই না?
মেঘলা হতবাক হয়ে আকাশের কথা শুনছে একদিনের মধ্যে মানুষ এত বদলে যায় কি করে?
আকাশঃঘরে গিয়ে চুপচাপ পড়তে বসবি…
চেঁচামেচি শুনে আকাশের বাবা বাইরে এসে বলল এসব কি করছিস আকাশ? তুই নাকি নাবিল কে পুলিশে দিয়েছিস?নাবিলের মা বাবাকে আটকে রেখেছিস এখন আবার মেঘলাকে ধরে এনে বলছিস পড়তে বসতে তোর মাথা আদো ঠিক আছে তো?
আকাশঃ অবশ্যই ঠিক আছে, নাবিল দিন দিন আমার প্রতিদ্বন্দি হয়ে উঠছে তাই ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলাম।আংকেল ঝামেলা করছিল তাই উনাকে থামিয়ে দিলাম আর এটা তো সারাজীবন আমার কাছেই ছিল এখনো আমার কাছেই থাকবে…পরিক্ষা আছে তাই পড়তে বসবে…!!
কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কোন সাহসে? বল্লাম না পড়তে বসতে যা বলছি ধমক দিয়ে বলল আকাশ।
মেঘলা কাঁদছে….
আকাশের বাবাঃ এই অবস্থায় কেউ পড়তে পারে?
আকাশঃ কেন পারবে না? আর এত কান্নার কি আছে? ওরা তো মেঘলার জীবনে ছিলই না এখনো নেই এটা নিয়ে এত ভাবার কি আছে? এই কদিন যা হয়েছে সব মাথা থেকে বের করে দিলেই হয়।শোন মেঘলা তোর কোনোদিন কেউ ছিল না,এখনো নেই আর থাকবেও না বুঝেছিস?
যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস মা বাবার মরা মুখ দেখতে হবে। পারবি তো সেটা সহ্য করতে? যদি পারিস তাহলে যা মন চায় তাই কর আর যদি না পারিস তাহলে আমি যা বলব তাই করবি।আমার কথার বাইরে একচুল উনিশ বিশ হলে কি হবে বুঝতেই পারছিস।
মেঘলাঃ আকাশ…
আকাশঃ এখুনো কথা বলছিস দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি বলে মেঘলাকে টানতে শুরু করল।
আকাশের বাবাঃ আরে জানুয়ার কি করছিস? মেয়েটাকে ছাড়।
আকাশঃ বাবা আমার কথার বাইরে একটা শব্দও আমি শুনতে চাই না বুঝেছো। নিজে নিজের বিপদ ডেকে এনো না।
আকাশের বাবাঃ ক্ষমতা তোকে নষ্ট করে দিয়েছে আকাশ আমি ভাবতেও পারছি না তুই এত নিচে নেমে গেছিস। ছি ছি ছি….
আকাশ তার বাবার কথার গুরত্ব না দিয়ে উপড়ে চলে গেল আর মেঘলাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেল দিল।
আকাশঃ ফ্রেশ হয়ে এসে যেন দেখি পড়তে বসেছিস তা না হলে কি যে করব নিজেই যানি না…. বলে আকাশ ওয়াশরুমে চলে গেল।
মেঘলাঃ আমাকে পেয়েছে টা কি? আমি এখনি চলে যাব এখান থেকে বলে মেঘলা বেরিয়ে পরল।
আকাশ ফিরে এসে দেখল মেঘলা পড়তে বসা তো দুর ঘরের কোথাও সে নেই।আকাশ বুঝল মেঘলা চলে গেছে। মেঘলাকে দেখতে না পেয়ে আকাশ রেগে গেল. জেদ… আমাকে জেদ দেখাস? আজ তোর কি অবস্থা হবে তুই জানিস না।
আকাশ তাড়াতাড়ি এসে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আর কিছু দুর যাওয়ার পরেও মেঘলাকে দেখতে পেল।
মেঘলা আকাশ কে আগে ভয় পেলেও এখন আর ভয় পায় না তাই মেঘলা স্বাভাবিক ভাবেই বলল আপনি আবার চলে এসেছেন?
আকাশ কোন কথা না বলে গিয়ে মেঘলাকে ঠাস করে থাপ্পড় মারল মেঘলা ছিটকে পড়ে গেল।
মেঘলা আকাশের এই রুপ আগে কখনো দেখে নি আকাশ মারলেও তাতে একটা মায়া থাকত কিন্তু আজ আকাশকে ভয়ানক লাগছে।আকাশকে দেখতে হিংস্র মনে হচ্ছে।
থাপ্পড় টা খাওয়ার পর মেঘলা আকাশকে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে।
আকাশ মেঘলার চুলের মুটি ধরে টেনে বলল পালানোর সাহস হল কি করে?
মেঘলাঃ আহ আহ আ আকাশ আমার লাগছে…
আকাশ আরো জোরে টেনে বলল সেটা পালানোর আগে বুঝা উচিত ছিল না? শোন মেঘলা ভালই ভালই বলছি আমার কথার বাইরে কিছু করবি না আমাকে আর রাগাস না।
আকাশ মেঘলাকে নিয়ে ফিরে আসল।
মেঘলাকে ঘরে নিয়ে হাতে বই দিয়ে বিছানায় পড়তে বসতে বলল আকাশ।আর নিজেও বিছানার একপাশে বসে ফোন টিপছে।
আকাশঃ কিরে পড়ছিস না কেন?
মেঘলার চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
মেঘলাঃ আ আ আ…
আকাশঃ আজকাল বইয়ে আহ ইহ উহ এগুলা লিখা থাকে বুঝি?দাঁড়া বেত টা নিয়ে আসি।
বলে আকাশ উঠে গেল আর আকাশ একটা বেত এনে মেঘলার হাত টেনে ঠাস ঠাস করে ২ বার আঘাত করল। আঘাতের তীব্রতায় মেঘলা কেঁপে উঠল।
মেঘলা হতবাক হয়ে গেল আকাশের এমন ব্যবহারের কারন সে বুঝতে পারছে না কিন্তু এইটুকু বুঝে গেছে এই আকাশ আর আগের আকাশ নেই পুরোপুরি ভিলেন হয়ে গিয়েছে তাই ভয়ে পড়তে শুরু করল।
আকাশ বসে বসে মোবাইল টিপছে আর মেঘলা পড়ছে।
মেঘলা বারবার আড় চোখে আকাশ কে দেখছে।
আকাশঃ ফোনের দিকে মুখ রেখেই বলল আমি সিনেমার হিরো নই আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই।পড়ায় মন দে নাহলে মেরে পিঠের চামড়া তুলে নিব।
।
।
।
।
।
এদিকে নাবিলের দলের একজন ফোন করে থানায় একজন সিপাহিকে খবর দিল।
সিপাহির সাথে নাবিলের অনেক আগে থেকেই ভাল সম্পর্ক ছিল।তাই সিপাহি গিয়ে নাবিলকে বলল আকাশ তার বাবা মাকে আটকে রেখেছে আর মেঘলাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।
কথাটা শুনামাত্র নাবিলের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল।
নাবিলঃ কি ভাবছিস আকাশ? নাবিল কে আটকে রাখার ক্ষমতা এই জেলের আছে?
তুই কি ভুলে গেছিস নাবিল কি? এত সাহস হয় কি করে তোর? আকাশ সব সীমা পেরিয়ে গেছিস তুই…আর সহ্য হচ্ছে না
প্রস্তুত হ আকাশ, নাবিল আসছে সবকিছুর হিসাব মিলাতে নাবিল আসছে…
….
…….
☞চলবে….
☞গল্প – লাভার নাকি ভিলেন? (সিজন ২)
☞পর্ব – ১৭
☞লেখিকা – স্নিগ্ধা হোসাইন মনা
যা যা ঘটে গেছে তারপরে পড়ায় মন বসা অসম্ভব কিন্তু আমাকে পড়তে হচ্ছে কারন রাক্ষস টা আমার সামনে বসে আছে…
আজব ব্যাপার পড়ছি তো পড়ছিই এই পড়া কি আজ শেষ হবে না? রাত ১১ টা বাজে তবুও পড়া শেষ করার নাম নেই। খুব রাগ হচ্ছে রেগে গিয়ে বল্লাম আপনার কাজ নেই?এখানে বসে আছেন কেন?
আকাশঃ না নেই কোনদিন থাকবেও না। আজ থেকে প্রতিদিন রাতে আমি তোকে পড়াব…
মেঘলাঃ কি..??
আকাশঃ অবাক হওয়ার কি আছে? এতদিন তো বলতি আকাশ সময় দেয় না এখন দিতে চাইছি এখন অসহ্য লাগছে কেন?
মেঘলাঃ আমি পরিক্ষা দিব না..
আকাশঃ তুই দিবি তোর ঘাড় দিবে বলে আকাশ উঠে চলে গেল।
মেঘলাঃ যাক বাবা বাঁচলাম…বই টা কেবল বন্ধ করতে যাব তখনি বাইরে থেকে আওয়াজ আসল কিরে পড়া বন্ধ হল কেন? জোরে জোরে পড় যেন এখান থেকে শুনা যায়…আমি এখুনি আসছি.
কেন যানি না আকাশের গলা শুনে ভয় পেলাম তাই আবার পড়তে শুরু করলাম কিছুক্ষন পর আকাশ এসে ১ গ্লাস দুধ মেঘলার হাতে দিয়ে বলল খা…
মেঘলার খুব রাগ হচ্ছে। আকাশ এমন ব্যবহার করছে যেন কিছুই হয় নি। এই অবস্থায় খাওয়া বা পড়ার কথা কেউ ভাবতে পারে বলেও মনে হয় না। মেঘলা রাগে দুধটা ছুড়ে ফেলে দিল আর সাথে সাথে মেঘলার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল কারন আকাশ মেঘলাকে এত জোরেই থাপ্পড় মেরেছে যে মেঘলার মনে হচ্ছে যেন তার হার্টবিট থেমে গেছে ।সাথে সাথে ব্যাথা অনুভব না করলেও
কয়েক সেকেন্ড পর ব্যাথা অনুভব করল বুঝল অসহ্যকর যন্ত্রনা হচ্ছে। এতই ব্যাথা করছে যে কাঁদতে ভুলে গেছে মেঘলা।
আকাশঃ এত সাহস হল কি করে নিজের হাতে দুধ গরম করে আনলাম আর তুই সেটা ফেলে দিলি..?? লায় দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলেছি তাই না? তুই কি বুঝতে পারছিস না আমার সাথে জেদ দেখানো যাবে না।
মেঘলা ভয়ে কুঁকড়ে গেল।মেঘলা একহাতে নিজের গালে ধরে আছে আর অন্য হাত ধরে আকাশ মেঘলাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
রান্নাঘরে গিয়ে,
আকাশঃ দুধ গরম কর,করে আমার চোখের সামনে খাবি। জেদ দেখিয়েছিস তাই এখন ২ গ্লাস খাবি।
মেঘলাঃ খাব না আমি কি করবেন?
আকাশঃ দেখতে চাস আমি কি করতে পারি? আচ্ছা তবে দেখ বলে আকাশ এসে আবারও থাপ্পড় মারল।
এবার মেঘলা কেঁদে দিয়েছে আ আ আ
মেঘলাঃ এভাবে মারছেন কেন কি ক্ষতি করেছি আপনার?
আকাশঃ আকাশ কি সেটা তো তুই জানিস না?তাহলে আমার সাথে বাড়াবাড়ি কেন করছিস? যা বলছি ভালভাবে করলেই তো মার খেতে হয় না।
মেঘলাঃ আমি খাব নাকি খাব না সেটা আপনার জানার কি দরকার?
আকাশঃ ৩ গ্লাস….আবার বল খাবি না…??যতবার কথা বলবি ১ গ্লাস করে বাড়বে।
মেঘলার আর সাহস হল না তাই চোখের জল ফেলতে ফেলতে ২ গ্লাস খেল।
মেঘলাঃ বমি পাচ্ছে।
আকাশঃ পাচ্ছে তো কর মানা করেছে কে? বাকি ১ গ্লাস খেয়ে যা মন চায় কর।যত ইচ্ছা বমি কর।
মেঘলাঃ খেতেই হবে?
আকাশ ভিলিনি হাসি দিয়ে মুখের সামনে দুধ টা ধরে বলল না খেলে বেশি কিছু হবে না শুধু ২,৪ টা থাপ্পড় খেতে হবে এই আর কি।
মেঘলা আর থাপ্পড় খেতে চায় না তাই বেশ কষ্ট করে দুধ টা খেল।
আকাশঃ এবার ঘরে গিয়ে চুপচাপ ঘুমাবি।আর যদি কান্না কাটি করিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।যদি ভুলেও কাঁদিস তাহলে বিয়ের আগেই আমার সাথে এক ঘরে এক বিছানায় রাত কাটাতে হবে কথাটা মাথায় রাখিস বলে আকাশ নিজের ঘরে চলে গেল।
মেঘলা ঘরে বসে বসে ভাবছে কি হচ্ছে এসব।কেন হচ্ছে? আকাশ নিজের ঘর থেকে বলে উঠল লাইট জ্বলছে কেন? আসতে হবে নাকি…
তাড়াতাড়ি লাইট অফ করে মেঘলা শুয়ে পড়ল।
মেঘলা সকালে উঠে দেখল আকাশ চলে গেছে আজ নাকি তার মিটিং আছে। মেঘলা এসে টিভি অন করে ব্রেকফাস্ট করতে বসল
কিন্তু টিভিতে চোখ রেখে খাওয়ার ইচ্ছা মরে গেল কারন আকাশ নাবিলের পদ টা ইরাকে দিয়েছে।
আকাশ আর ইরা ২ জনের মুখেই হাসি।
আকাশ নিজের হাতে ইরাকে মালা পড়িয়ে বরণ করছে।
এই নিউজটা তাও মেনে নেওয়ার মত ছিল কিন্তু তারচেয়েও বড় ধাক্কা খেল যখন শুনল নাবিল জেল থেকে পালানোর চেস্টা করেছিল আর তাকে শুট করা হয়েছে। নিউজ টা শুনার সাথে সাথে মেঘলা সেন্সলেস হয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর যখন জ্ঞান ফিরল মেঘলা ছুটে গেল।
আকাশ নতুন কমিটি নিয়ে ব্যস্ত তাই এখনো নাবিলের নিউজ টা পায় নি।
পার্টি অফিসে সাজ সাজ রব হাজার মানুষের ভীর।
সবার মধ্যমনি আকাশ আর ইরা।২ জনের খুশি যেন আর ধরছে না।
হঠাৎ করেই কাঁচ ভাংগার শব্দে সবাই থমকে গেল।
কারন এটা স্বাভাবিক কোন ভাংচুর না এখানে একটা কাঁচের বোতল ভেংগেছে,আর বোতলটা ভাংগা হয়েছে আকাশের মাথায় সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কাজটা করেছে মেঘলা।
আকাশঃ কি করব বা কি বলব বুঝতে পারছি না।মুখ ফোটে বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি।অন্য কোথাও আঘাত করলে হয়ত এতটা আঘাত লাগত না কিন্তু মাথায় আঘাত পেয়েছি জায়গায় জায়গায় কাঁচ ঢুকে গিয়েছে।অনবরত রক্ত ঝরছে শরীর ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু আমায় মাথায় এখন শুধু একটা কথাই ঘুরছে আর সেটা হল মেঘলাকে রক্ষা করতে হবে কারন পার্টি অফিসে পার্টির কোন সদস্যের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস দেখানোটাও বিপজ্জনক তার মধ্যে মেঘলা তো আমাকে আঘাত করেছে এখুনি হয়ত সবাই ওকে ছিড়ে খাবে। এখানে ইরা ছাড়া মেঘলাকে কেউ চিনে না। আর ইরা মেঘলাকে রক্ষা করা তো দুর দরকার হলে সবার আগে ওই মেঘলাকে মারবে। মেঘলাকে রক্ষা করার ক্ষমতাও আমার নেই।কি করব আমি খোদা আমাকে শক্তি দাও আমি যেন মেঘলাকে নিরাপদ কোথাও রেখে যেতে পারি।
তুই এটা কি করলি মেঘলা করার হলে বাসায় করতি এখানে কেন? আজ তোকে কে রক্ষা করবে?
নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মেঘলাকে আখরে ধরে কথা গুলি ভাবছিল আকাশ।
আমি মেঘলাকে আগলে রেখেছি কিন্তু কতক্ষন রাখতে পারব? আমার যে চোখ ক্রমশো বন্ধ হয়ে আসছে। বুঝতে পারছি আমি জ্ঞান হারাচ্ছি আমাকে নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই। কারন এখানে আমাকে হাসপাতালে নেয়ার মত পাবলিকের অভাব নেই কিন্তু মেঘলাকে রক্ষা করার মত কেউ নেই। আজ গনধোলাই এ মেঘলার অনেক বড় ক্ষতি হবে হয়ত মারাও যেতে পারে।চারদিকে সবাই ক্ষেপে গেছে সবাইকে বুঝানোর খুব চেস্টা করছি ওর কোন দোষ নেই কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে।ব্লিডিং হচ্ছে।তবুও আমার চিন্তা শক্তি এখনো বিলীন হয়নি এটাই হয়ত ভালবাসা।ভালবাসার মানুষের জন্য মৃত্যুর এক মুহুর্ত আগে পর্যন্তো যুদ্ধ করা যায় যা আমি করে চলেছি।
আজ কি তবে আমাদের ভালবাসার অবশান হবে নিয়তির খেলায় ২ টি আত্মার বন্ধন ছিড়ে যাবে?আমি যখন মেঘলাকে সামলাতে ব্যাস্ত তখনি
আমার হাতে টান পড়ল। চোখ মেলে দেখলাম মেঘলাকে সবাই মিলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
না ওরা কোন মেঘলাকে কে নিয়ে যাচ্ছে না বিশ্বাস করুন আমার কাছ থেকে আমার আত্মাটাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে,
মেঘলা আমার দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত কান্না করছে।মেঘলার অসহায় চাহনি আমার ভিতরটাকে ধুমরে মোচরে দিচ্ছে। কি করে বুঝাব আমার ভিতরে যে রক্তক্ষরন হচ্ছে তা বাইরের আঘাতের চেয়ে অনেক ভয়াবজ। যানি মেঘলা আমার জন্যই কাঁদছে কিন্তু সেটা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না। প্রকৃতির খেলায় আজ আমি এক অসহায় পথিক যে কিনা নিজের চোখে নিজের আত্মার বিসর্জন দেখছে।ভিতরে আত্মাটা ছটফট করলেও শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নেই মুখ ফোটে বলতে পারছি না আমার জানকে ছেড়ে দাও।
আমার আত্মার আর্তনাত কেউ শুনতে পাচ্ছে না।যানেন এই মুহুর্তে আমার কার কথা মনে পড়ছে? হ্যা আমার এখন নাবিলের কথা খুব মনে পড়ছে পৃথিবীতে এই একটাই মানুষ ছিল যে কিনা আমার না বলা কথা বুঝতে পারত। কিন্তু আমি নিজের স্বার্থে ওকে নরকে ঠেলে দিয়েছি।আজ ও যদি থাকত আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারতাম আমার আঘাত টা নেহাৎ কম নয় কিন্তু মেঘলাকে এই অবস্থায় রেখে আমি যে মরেও শান্তি পাব না।
কথা গুলি ভাবতে ভাবতেই আকাশ জ্ঞান হারাল।
আকাশকে হাসপাতালে পাটিয়ে দেয়া হল কিন্তু এদিকে মেঘলার করুন অবস্থা।
মেঘলা মেয়ে বলে সবাই বলেছিল ওর গাঁয়ে হাত না তুলে পুলিশে দিতে কিন্তু ইরা তাতে সায় দেয় নি।ইরা এই সুযোগটাকে মিস করতে চায় নি তাই সে বলেছে মারের বিচার মার দিয়েই হবে।
মেঘলা অসহায়ের মত এদিক ওদিক দেখছে সবাই তাকে মারার প্লেন করছে সেটা এখনো তার মাথায় ঢুকে নি সে তো আকাশের চিন্তায় চিন্তিত রাগের মাথায় কাজটা করে ফেল্লেও আকাশের রক্ত দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে মনে মনে হাজারবার প্রার্থনা করছে আকাশের যেন কিছু না হয়। কারন সেও যে আকাশ কে প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসে।
মেঘলাঃ আকাশ সত্যিই বলত আমি আসলেই বোকা কি থেকে কি করে ফেল্লাম? যানি পাপ করেছি আমি পাপি তবুও তোমার কাছে ২ হাত তুলে ভিক্ষা চাইছি খোদা তুমি আকাশ কে সুস্থ করে দাও তোমার কাছে আর কখনো কিছু চাইব না তুমি শুধু আমার আকাশ কে ঠিক করে দাও।কেউ না যানুক তুমি তো যানো আকাশকে আমি কতটা ভালবাসি। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আকাশকে সুস্থ করে দাও।
ইরার মুখে বিজয়ের হাসি মেঘলাকে প্রথম আঘাতটা ইরাই করল….!!
মেঘলা আকাশের হাতে মার খেলেও এমন মারের সাথে পরিচিত না এক একটা আঘাতে মেঘলা মৃত্যু যন্ত্রনা অনুভব করছে।