হৃদ রোগ | পর্ব – ২৪

গভীর রাএি তখন , সবাই ঘুমের দেশে তলিয়ে। তবে ঘুম নেই কয়েক জোড়া প্রেম পাগল মানুষের। স্নেহা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে এই শীতের মধ্যে, দৃষ্টি তার আকাশের ওই চাঁদের দিকে। তার দিকেও যে কেউ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই দিকে রমনীর কোনো খেয়াল নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরে স্নেহা চাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো সামনে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে, সে তার দিকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্নেহা এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো সামনের মানুষটিকে,,,,,,,
“কী দেখছেন?
“তোমাকে । আমার ব্যক্তিগত চাঁদকে , যে ওই আকাশের চাঁদের থেকেও সুন্দর।,,,,,,,বেশ সহজ গলায় বললো মানুষটি ।
স্নেহা চিবুক নামিয়ে নিলো লজ্জায়। সামনের মানুষটা তাকে এই ভাবেই কথার মারপ্যাঁচে লজ্জায় ফেলে।
“আমরা বিয়ে কবে করবো বলো তো ? আমি যে আর ধৈর্য্য রাখতে পারছি না । তোমাকে এইরকম আবেদনময়ী রুপে দেখলে আমার কিছু ভুল করতে ইচ্ছে করে ।
স্নেহা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো, দু-হাতের মুঠোয় শাড়ির অর্ধাংশ। বেচারি লজ্জায় হাঁসফাঁস করতে লাগলো । তার কান গরম হয়ে এসেছে , বুকে ক্রমাগত ঢাক-ঢোল বাজছে।
সামনের পুরুষটি স্নেহার অবস্থা দেখে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাঁসলো। তার ভালো লাগছে সামনের রমনীর লজ্জায় রাঙা মুখটি দেখতে । মানুষটা তার প্রিয় রমনীকে লজ্জায় ফেলতে আবার বললো,,,,,,,
“এখন কী একটা ছোট্ট ভুল করতে পারি ? একটু , শুধু একটু ছুঁয়ে দেবো তোমায় ? তাহলে কী খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে ?
স্নেহা বোধ হয় আর নিতে পারলো না , আঁকরে ধরলো সামনের মানুষটিকে। মানুষটিও আগলে নিলো স্নেহার ছোট্ট নরম শরীরটাকে। স্নেহা ওই অবস্থায় ধীর কন্ঠে বললো,,,,,,
“আর কিছু দিনের অপেক্ষা গায়ক মশাই।ততো দিন তো ধৈর্য্য রাখতেই হবে।
স্নেহার কথায় প্রশান্তির হাঁসি ফুটে উঠলো অয়নের মুখে।
অয়ন আর স্নেহা একে অপরকে ভালবাসে অনেক আগে থেকেই। অয়ন যে সুদেষ্ণার পেছন পেছন ঘুরতো স্নেহার জন্যই। অথচ হিমাদ্র উলটো ভেবে বসেছিলো । তারপর তো একদিন হিমাদ্র অয়নকে ধরে ক্যামপাসে , বেচারা ভয়ে স্নেহার কথা বলে দেয় । ফলে হিমাদ্র হাফ ছেড়ে বাঁচে। আসলে অয়ন স্নেহাকে প্রচুর ভয় পেত , তাই সে সুদেষ্ণার সাহায্য নেবে ভেবেছিলো । এখন কে বলবে এই ভীতু পুরুষটা নিজের কথার মারপ্যাঁচে ওই শক্ত নারীটিকে বেকায়দায় ফেলে । স্নেহাকে মনের কথা জানাতে অয়নের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, তারপর স্নেহাও বেশ সময় নিয়ে রাজি হয়েছিলো। এখন তাদের সম্পর্কের কথা সবাই জানে এবং সবাই রাজি । তবে স্নেহার জেদ, সে আগে চাকরি করবে এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর বিয়ে করবে। স্নেহার এই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়েছে, তবে অয়ন মাঝে মধ্যে অধৈর্য হয়ে পড়ে।
————————————————————————–
ফাঁকা হল রুম , সবাই যে যার ঘরে রেস্ট নিচ্ছে । একটু আগেই হিমাদ্র আর সুদেষ্ণার বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সবাই বেশ ক্লান্ত , তাই কাউকে আর হল রুমে দেখা যাচ্ছে না। হল রুমের সোফায় বসে আছে অনু এবং তার কোলে মাথা রেখে সিলিং এর দিকে চেয়ে আছে আকাশ । অনু আকাশের মুখের দিকে চেয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে ব্যস্ত । অবশেষে অনু নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে বললো,,,,,,,,
“আমরা কবে বিয়ে করবো রে ? আমার না সু এর বাসরের কথা ভেবে প্রেম প্রেম পাচ্ছে ।,,,,,বলেই দুইহাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো।
আকাশ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো পাগল মেয়েটার দিকে। তার কোনো কান্ড-জ্ঞান থাকে না , যখন যা মাথায় আসে তাই বলে । তবে আকাশ এই পাগল মেয়েটাকেই প্রচুর ভালোবাসে । কখন যে ঝগড়া করতে করতে এই পাগল মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে আকাশ জানে না । অনুও আকাশকে ভালোবাসে । এখন শুধু দুই পরিবারের সম্মতির অপেক্ষা।
“এই একটা চুমু খা তো , আমার কিছু ভালো লাগছে না।,,,,,,, অনু মুখটা ছোটো করে বললো।
আকাশ তাকালো প্রিয় রমনীর আদুরে মুখের দিকে তারপর মাথা উঁচু করে গালে ঠোঁটে বসালো ।
অনু চোখ গরম করে তাকালো।তারপর বললো,,,,,,, “শালা নিরামিষ। তুই ঠিকঠাক চুমুও খেতে পারিস না।
বেশ, এই কথা যথেষ্ট ঝগড়া করার জন্য। আকাশ হঠাৎ উঠে বসলো ,,,,,,,,,,,,,,,,। এদের এখন সারা রাত ঝগড়া চলবে ।
———————————————————–
অন্ধকার ঘরে , ঘুমিয়ে কাদা অনিক আর মোহিত। তারা ভাই ব্যাচেলার মানুষ। না আছে কোনো বউ আর না আছে কোনো গার্লফ্রেন্ড। বিয়ে বাড়ির অনেক দায়িত্বই তাদের ওপর ছিলো , ফলে দুজনেই খুব ক্লান্ত । তাই বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে দু-জনে । অনিক আর মোহিত বেশ দুঃখিত, তাদের কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই বলে । তারপর ভাবলো , সবাই যেহেতু লাভ ম্যারেজ করছে ওরা না হয় আরেঞ্জ ম্যারেজ করবে ।
————————————————————————–
বেলকনির মেঝেতে কার্পেট পেতে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে দুজন কপোত-কপোতি , সদ্য নববিবাহিত দম্পতি । বাইরে বেশ ঠাণ্ডা , তাই দুজনের গায়েই মোটা কম্বল আছে। সুদেষ্ণা হিমাদ্রর কাঁধে মাথা দিয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে। অবশেষে সুদেষ্ণা নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েছে , এই কথা ভাবতেই সুদেষ্ণার মুখে প্রশান্তির হাঁসি ফুটে উঠলো। সে তাকালো পাশে বসে থাকা প্রিয় মানুষটার দিকে, যে কিনা এখন থেকে তার । একান্তই ব্যক্তিগত মানুষ।
হিমাদ্র দেখলো তার সহধর্মিণীকে , যে মনোযোগ সহকারে তার পানে তাকিয়ে। হিমাদ্র এক ভ্রু উঁচিয়ে ইসারায় জিজ্ঞাসা করলো,,,,,,,
“কী?
“ভালোবাসি। ,,,,,,, সুদেষ্ণা বেশ প্রফুল্ল গলায় বললো।
হিমাদ্র মুচকি হেঁসে আবার চাঁদের দিকে তাকালো। এতে সুদেষ্ণা বেশ আহত হলো , অনেকটা নীচু গলায় বললো,,,,,,,,,, “আপনিও বলুন ভালোবাসি। আপনি তো কোনো দিন বলেননি আমাকে ।
হিমাদ্র তাকালো অভিমানী রমনীর পানে । বেশ নরম ভাবে সুধালো,,,,,,,, “আমি ভালোবাসা বলায় বিশ্বাসী নয় , প্রকাশ করতে পছন্দ করি ।
“ হ্যাঁ জানি আমি । তবু আমি আপনার মুখে একবার শুনতে চাই।
“ভালোবাসি আমার পদ্মফুল। আর সারা জীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই।,,,,,,,হিমাদ্র সুদেষ্ণাকে নিজের সাথে আলতো জরিয়ে বললো ।
সুদেষ্ণা বিড়ালছানার ন্যায় হিমাদ্রর বুকে পড়ে রইলো। শুরু হলো তাদের নুতন দাম্পত্য জীবন । এই সুন্দর মূহুর্তের সাক্ষী হলো , ওই আকাশের চাঁদ আর ঘন কালো রাত।
~সমাপ্ত
————————————————————————-
(Note:অবশেষে গল্পটার সমাপ্তি ঘটলো, তবে আমি আমার মনের মতো গুচ্ছিয়ে লিখতে পারিনি। আমি ভাবছি, আবার লিখবো এই জুটিকে নিয়ে। আপনারা আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আর এই গল্পের সারপ্রাইজ পর্ব দেবো তাড়াতাড়ি, কেননা এই পর্বে অনেক কিছুই লিখতে পারিনি)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।