প্রাচীন জঙ্গল। এখান থেকেই প্রাসকোভিয়ার শুরু। জঙ্গলের দানবাকৃতির গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে রাজার ভঙ্গিমায়। চেনা-অচেনা অসংখ্য পাখি আকাশ পথে উড়তে উড়তে রাতের অন্ধকারে আশ্রয় হিসেবে এই প্রাচীন জঙ্গলের গাছের ডালে ঠাঁই খুঁজে পায়। রাস্তার দু’ধারে কাঁটাগাছ আর ঘন ঝোপঝাড়।
কয়েকটা গাছের বড় বড় ডাল নেমে এসেছে রাস্তায়। চারপাশটা অসম্ভব নিস্তব্ধ। যেন কুয়াশার চাদরের মতো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে ভয়। বক্ষস্থলে থাকা হৃদপিণ্ডটা ক্রমাগত কাঁপতে শুরু করে। নিজের নেওয়া নিঃশ্বাসের শব্দটাও মনের কোনো ভয়াবহ ভীতি জাগিয়ে তুলে। সামনে কয়েকজন অজানা শত্রু।
প্রত্যেকেই সতর্ক দৃষ্টি রেখে একটু একটু করে পিছিয়ে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো কুচকুচে পোশাক পরিধেয় শ’য়তানগুলো একপা দু’পা করে এগিয়ে আসে তাদের দিকে। শুকনো পাতায় পা পড়তেই মরমর শব্দ সৃষ্টি হয়। চারদিকে ভয়ংকর বিপদের আতংক। হাতগুলো শূন্য। আত্মরক্ষার স্বার্থে সাথে হাতিয়ার নেই কারো। অথচ ওদের দিকেই হিংস্র হায়েনার মতো এগিয়ে আসা তিনজন পুরুষের হাতে ধারালো অস্ত্র। এরা কি সাধারণ মানুষ নাকি র’ক্তপিপাসু? ধীরে ধীরে চারদিক থেকে সিয়াদের ঘিরে ধরে লোকগুলো।
ফিটন ছাড়তে দেরি হওয়ায় আর্নিকে ডেকে তুলেন স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। ঘুম থেকে জেগে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর্নি। ওকে আসনে বসিয়ে রেখে দুর্বল শরীরে ফিটন থেকে নেমে দাঁড়ান স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। সামনের দিকে তাকাতেই বিস্ফোরিত হয়ে যায় তার দু’চোখের দৃষ্টি। মৃদু মৃদু শরীর কাঁপতে শুরু করে। বিপদ বুঝে সুযোগ পেয়ে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পালায় বাকি কোচওয়ান দু’জনে। আর্নি কিছুই বুঝতে পারে না। ভীত ভীত দৃষ্টিতে ওর বাবাকে কোনোদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাস্তায় নেমে দাঁড়ায়। সহসা আর্ত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে উঠে,
– মাস্টার!
লোকগুলো চিৎকার শুনে আর্নি আর স্ট্রিকল্যান্ডের দিকে তাকায়। আর্নিকে একহাতে নিজের কাছে জড়িয়ে নেন স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন। সামনে এগোনোর সাহস পান না তিনি।
– তোমরা কারা? রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কি চাও আমাদের কাছে?___ভীত ভীতস্বরে প্রশ্ন করে কোচওয়ান।
কালো পোশাক পরিধেয় দু’জন পুরুষ অকস্মাৎ শব্দ করে হাসে। কোচওয়ানকে বেশ নির্বোধ বলে মনে হয় ওদের কাছে। গহীন জঙ্গলে এই রাতের অন্ধকারে রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো কি চাইতে পারে, এতটুকুও কি বোধবুদ্ধি নেই তার? নাকি আতংকে জ্ঞানশক্তি লোপ পেয়েছে একবারে? হাসতে থাকা লোক দু’টোকে চাপাস্বরে ধমকে উঠে একজন গম্ভীর প্রকৃতির লোক। অতঃপর সে তার হাতের ক্রসবোটা অন্যজনের হাতে দিয়ে সামনের দিকে তাকায়। সবাইকে উদ্দেশ্য করে লোমহর্ষক কন্ঠে বলে,
– প্রত্যেকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে। অন্যথা বেঘোরে প্রাণ হারাবে।
– আমরা শুধু তোমাদের সাথে থাকা জিনিসপত্র, অর্থ আর মেয়েগুলোকে নিয়ে যেতে চাই। যদি ঝামেলা না করে ওগুলো আমাদের হাতে তুলে দাও, তাহলে বাকিরা জীবিত ফিরে যেতে পারবে।___স্পষ্ট রুশ ভাষায় কথাটা বলে অন্য আরেকজন।
ক্রিস্তিয়ান বিস্ময়ে হতবাক। ক্রিসক্রিংগলের মুখাবয়ব গম্ভীর। মাথার ভেতর গনগনে আগুন জ্বলে উঠে তার। সিয়া পাথুরে দৃষ্টিতে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। কিন্তু ইনায়া ভীষণ রেগে যায়। লোকটার এমন জঘন্য প্রস্তাব শুনে ওর পক্ষে নিজেকে সংযত করে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ইনায়ার একহাত শক্ত করে চেপে ধরে সিয়া। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ইশারায় স্থির থাকতে বলে ওকে।
এদের বেশভূষা, ব্যবহৃত অস্ত্র, চাল চলন আর কথার ধরনে স্পষ্ট বোঝা যায় এরা ডাকু। ফিটনের গায়ে ঝুলে থাকা লন্ঠনের মৃদু আলোয় দেখা যাচ্ছে ওদের অস্পষ্ট কালো মূর্তি। গম্ভীর লোকটা বোধহয় বাকি দু’জনের নেতা। এরা হত্যাকারী না, লুন্ঠনকারী। তবে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে মানুষ খু’ন করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। ক্রিসক্রিংগল একপা সামনে এগিয়ে যান। লোকগুলো তাকে সাবধানে করে। শাসানোর স্বরে বলে,
– চালাকি করার চেষ্টা করবে না। দামী জিনিসপত্র, অর্থ আর মেয়েগুলোকে তুলে দাও আমাদের হাতে।
– যদি না দিই?___ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন ক্রিসক্রিংগল।
– ম’রবে। সবাই ম’রবে।__গম্ভীর প্রকৃতির লোকটা দৃঢ় কন্ঠে বলে।
ক্রিস্তিয়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়। বেশ ভালো যোদ্ধা সে। কিন্তু নিজের মাস্টারের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করতে পারে না। যেখানে ক্রিসক্রিংগল নিজেই এখন পর্যন্ত শান্ত হয়ে আছেন সেখানে সে কিভাবে আগ বাড়িয়ে আক্রমন করতে যাবে?
– তোমাদের শায়েস্তা করতে আমার মেয়েরাই যথেষ্ট।___আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে ক্রিসক্রিংগল কথাটা বলেন।
ক্রিসক্রিংগলের কথা শুনে সিয়া আর ইনায়াকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয় লোকগুলো। অতঃপর পুনরায় শব্দ করে হাসতে শুরু করে। এবার গম্ভীর প্রকৃতির লোকটাও উচ্চস্বরে হাসে। যেন বেশ মজা পেয়েছে সে। তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে বলে,
– এরাই তোমার মেয়ে? এই মেয়ে দু’জন? ওরা কিভাবে অস্ত্রবিহীন লড়াই করবে আমাদের সাথে?
– সিয়া, ইনায়া। মনে করো এটা তোমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রথম ধাপ। এই সামান্য যুদ্ধে যদি জিততে না পারো তাহলে বেঁচে থেকে কি লাভ? তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা জিতবে। আমার বিশ্বাস অক্ষুন্ন রেখো।
ক্রিসক্রিংগলের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে ইনায়ার চোখ দু’টো উজ্জ্বল হয়ে উঠে। মনের মাঝে যেন অসামান্য ক্রোধের তীব্র দামামা বাজে। সিয়া তখনো পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ওর মধ্যে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
ক্রিসক্রিংগলের কথা শুনে ডাকুদের দলনেতা ক্রোধিত হয়। শুরুতেই আক্রমণ করে সবগুলোকে মে’রে ফেলা উচিত ছিলো। অহেতুক সময় নষ্ট হলো। লোকটা তার হাতের লংসোওয়ার্ড উচিয়ে ক্রিসক্রিংগলকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। কিন্তু আঘাত করার পূর্বেই অকস্মাৎ ছিটকে কাঁটাযুক্ত ঝোপগুলোর উপরে গিয়ে পড়ে। তার বুকে সজোরে লাথি মে’রেছেন ক্রিসক্রিংগল। লোকটা করুন আর্তনাদ করে উঠে। বাকি দু’জন ক্রুদ্ধ হয়ে তলোয়ারসমতে আক্রমণ করতে ছুটে যায়। প্রথমজনের হাতে ব্রোডসোওয়ার্ড দ্বিতীয়জনের হাতে হালবার্ড। দু’জনেই হিড়িক দিয়ে তেড়ে যায় ক্রিসক্রিংগলের দিকে।
– প্রথমে আমার মেয়েদের সাথে লড়ো।
ক্রিসক্রিংগলের কথা শুনে লোক দু’টো থেমে যায়। যেন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।
– দাঁড়িয়ে দেখছো কি? মা’রো।___সিয়া আর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আদেশ দিয়ে বলেন ক্রিসক্রিংগল।
দাউদাউ করে জ্বলছে সিয়ার হৃদপিণ্ড। অথচ ওর মুখখানা অদ্ভুত রকম গম্ভীর। শান্ত চাহনি। হিংস্র সিংহীর মতো আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর উপর। সিয়ার সাথে যোগ দেয় ইনায়া। লোক দু’টোর হাতে ধারালো তলোয়ার। সাবধানে লড়তে হবে। নতুবা গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হতে হবে। প্রাণ সংশয়ও আছে।
ইনায়া প্রথমেই দৌড়ে গিয়ে একজনের বুকে লাথি মা’রে। লোকটা হালবার্ড হাতে কিছুটা পিছিয়ে যায়। সিয়া নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি মুঠোর মধ্যে জমা করে একহাতের শক্তপোক্ত ঘুষি মারে অন্যজনের চিবুকে। অন্যহাতে লোকটার হাতের কব্জিতে আঘাত করে ব্রোডসোওয়ার্ড’টা মাটিতে ফেলে দেয়।
প্রতিধ্বনিত হয় তলোয়ার পড়ে যাওয়ার শব্দ। ক্রিসক্রিংগল গাছের গুড়িটার উপর পরম নিশ্চিন্তে আরাম করে বসেন। ততক্ষণে দলনেতা রাস্তায় উঠে আসে। লংসোওয়ার্ড হাতে দৌড়ে যায় ক্রিসক্রিংগলের দিকে। দূরে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেন ট্রিকল্যান্ড কুরী আর আর্নি। মানুষটা শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল। আর মেয়েটা আতংকে জর্জরিত। ভয়ের আধিক্যে ওর প্রচন্ড গলা শুকিয়ে আসে। যদিও মাস্টার আর ক্রিস্তিয়ান থাকতে দুশ্চিন্তার কোনো কারন নেই। তবুও ভয় হয়। প্রিয়জন হারানোর ভয়।
হাতে তলোয়ার নেই। নেই কোনো অস্ত্র। মার্শাল আর্টের অস্ত্রবিহীন কিছু রণকৌশল প্রয়োগ করে ওরা। হাত আর পায়ের মোক্ষম আঘাতে লড়াই জমজমাট হয়ে উঠে। মেয়ে দু’টো হঠাৎই যেন বেপরোয়া হয়ে গেছে। ওদের চোখে বিন্দুমাত্র আতংক দেখতে পান না ক্রিসক্রিংগল। ইতোমধ্যে দলনেতা ক্রিসক্রিংগলের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
– আমি বসে থেকে তোমাদের যুদ্ধ উপভোগ করছি। মনের মধ্যে যত রাগ আর যন্ত্রণা আছে সব উগরে দাও এদের উপর। কিন্তু দেখো, ম’রে যায় না যেন। অর্ধমৃত করে ছেড়ে দিও। সময় স্বল্প। দ্রুত নিজেদের কাজ সম্পন্ন করো।
দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলছে দু’জন মেয়ে আর দু’জন ডাকু সদস্যদের মাঝে। ক্রিস্তিয়ান, আর্নি, কোচওয়ান আর স্ট্রিকল্যান্ড কুরী যেন নীরব দর্শক। বিচারক ক্রিসক্রিংগল। মেয়েদের বীরদর্পে লড়তে দেখে উচ্ছ্বসিত আনন্দের আবেগে ফুলে উঠে তার হৃদপিণ্ড। বসা থেকে ত্বরিত উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করেন। তার দিকেই আক্রমনাত্মক হয়ে লংসোওয়ার্ড হাতে দৌড়ে আসা লোকটার বাহুতে সজোরে আঘাত করেন। লোকটার হাতে থাকা সোওয়ার্ড অনেকটা উঁচুতে উঠে নিচের দিকে পড়তে শুরু করে। ক্রিসক্রিংগল সেটা ধরে ফেলেন ডান হাতে।
সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ডাকু নেতা। বলশালী দেহের একহাতের কনুই দিয়ে ক্রিসক্রিংগলের ঘাড়ে শক্ত আঘাত করে। বেশ কিছুটা পিছিয়ে যান ক্রিসক্রিংগল। মুহূর্তেই লংসোওয়ার্ড টাকে শক্ত করে ধরে লোকটার বুকে লম্বা চিকন ক্ষত এঁকে দেন। লোকটার বুক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। করুণ আর্তনাদ করে উঠে। আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
কয়েক পল সময় গড়ায়। ক্রিসক্রিংগলের এই পুলকিত অনুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। পেছন থেকে ব্রোডসোওয়ার্ড দিয়ে একজন ইনায়ার কাঁধ বরাবর আঘাত করতে উদ্যত হয়।
হঠাৎই যেন ক্রিসক্রিংগলের সর্বাঙ্গে ভয়ের শীতল স্রোত গড়িয়ে যায়। যন্ত্রনায় আকুলিবিকুলি করে উঠে মন। ইনায়াকে উদ্দ্যেশ করে আঘাত করতে চাওয়া ব্রোডসোওয়ার্ড’টার ঝকঝকে ধারালো অংশটুকু দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে আছে সিয়া। হাত কেটে ঝরঝর করে রক্ত ঝড়ে পড়ছে। ওদের শত্রুপক্ষ এখানেই থেমে থাকে না। অন্যজন আক্রমন করে বসে। হালবার্ড দিয়ে সজোরে কোপ বসায় সিয়ার কাঁধে। কিন্তু লোকটা ব্যর্থ হয়। তার দু’হাত আঁকড়ে ধরে আঘাতটা প্রতিহত করে ক্রিস্তিয়ান। শরীরের সব শক্তি দিয়ে আঁটকে রাখে হালবার্ডটাকে। এদিকে সিয়ার হাত থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে। এতক্ষণ যুদ্ধটা বেশ ভালোই জমেছিলো। কিন্তু আচম্বিতে এ কেমন দুর্ঘটনা ঘটে গেলো! স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইনায়া। চিৎকার দিয়ে ডেকে উঠে আর্নি,
– সিয়া।
দৌড়ে গিয়ে সিয়ার কাছে দাঁড়ায়। ওর চোখ থেকে বিরামহীন অশ্রুকনা গড়ায়। স্ট্রিকল্যান্ড কুরীর মুখখানা ভয়াবহ শুকিয়ে যায়। বুকের মধ্যে জেঁকে বসে পুনরায় প্রিয়জন হারানোর ভয়।
প্রকৃতি যেন নিশ্চল, অসাড়। সিয়ার দু’চোখের সামনে ঝাপসা ঠেকে সবকিছু। শরীর থেকে অনেকটা র’ক্ত বেরিয়ে গেছে। হয়তো ও মা’রা যেতো। যদি না ওর দিকেই ঘনিয়ে আসা আঘাতটা প্রতিহত করতো ক্রিস্তিয়ান। ক্রোধের আধ্যিকে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে ক্রিস্তিয়ানের সর্বাঙ্গ। হালবার্ডটা কেড়ে নিয়ে এক কোপে ফালাফালা করে দেয় লোকটার কাঁধের অংশ। লোকটা বীভৎস চিৎকার দিয়ে উঠে। গুরুতর আহত হয়েছে সে। অন্যজন তাদের দলনেতাকে মাটি থেকে তুলে নিয়ে কোনো রকমে দৌড়াতে শুরু করে। গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত লোকটা অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় বাকি দু’জন।
মায়ের জন্য সঞ্চিত বুক ভরা বিরহ-বেদনা আর হারানোর যন্ত্রনা হৃদয় কোণে মুখর হয়ে উঠে সিয়ার। একটুখানি মায়ের আদর মেশানো স্পর্শ পেতে চায় মন। অথচ ওর মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হয় না। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয় ক্ষতস্থানের যন্ত্রণাটুকু। শরীর ছেড়ে দেয়। অত্যধিক হালকা মনে হয় দেহের ওজন। সিয়ার দুর্বল শরীরটাকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরতে চায় ক্রিস্তিয়ান। কিন্তু তার পূর্বেই ওকে কোলে তুলে নেন ক্রিসক্রিংগল। শঙ্কিত কন্ঠে ডাকেন,
– সিয়া? মা!
ইনায়া সিয়ার দু’গালে চাপড় দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে ডাকে,
– সিয়া। সিয়া কথা বলো।
সিয়াকে কোলে নিয়ে ফিটনের দিকে দৌড়াতে শুরু করেন ক্রিসক্রিংগল। হাতের রক্ত পড়া বন্ধ করা প্রয়োজন। নতুবা রক্তশূণ্য হয়েই মা’রা যাবে সিয়া। ক্রিসক্রিংগলের পেছন পেছন দৌড়ে যায় বাকিরা।
– পরিষ্কার কাপড় আর রক্ত বন্ধ হওয়ার ঔষধ বের করো জলদি।___ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেন ক্রিসক্রিংগল।
সিয়াকে ফিটনের সিটে বসিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসেন তিনি। ইনায়া ব্যতিব্যস্ত হয়ে পেছনের ফিটন থেকে ঔষধ আর পরিষ্কার কাপড় বের করে আনে। ক্রিসক্রিংগল সিয়ার হাত দু’টো পরিষ্কার করে তরল জাতীয় ঔষধ লাগিয়ে দেন। কয়েক সেকেন্ড সময় গড়ায়। হাতের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় সিয়ার। ওর হাত দু’টো পরিষ্কার সাদা রঙের নরম কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয় ইনায়া।
– তোমরা দুশ্চিন্তা করো না। সিয়ার কিছুই হবেনা। ও ঘুমিয়ে নিক একটুখানি। ইম্যুভিল পৌঁছাতে এখনো অনেকটা রাস্তা বাকি। এখনই যাত্রা শুরু করতে হবে।
– কিন্তু কিভাবে যাত্রা শুরু করবেন মাস্টার? পালিয়ে গেছে দু’জন কোচওয়ান।____বিষণ্ণ বদনে ম্লান কন্ঠে কথাটা বলে আর্নি।
দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ক্রিসক্রিংগল। ভয় মানুষকে নির্বোধ করে দেয়। গহীন জঙ্গলে কোথায় আশ্রয় নিবে কোচওয়ান দু’জন? নিজেদের বাড়িতেই বা ফিরে যাবে কিভাবে? শুধু লুন্ঠনকারীই নয়, এই প্রাচীন জঙ্গলে পদে পদে বিপদ আর ভয়। পালানোর সময় এসব কি কিছুই ভাবেনি ওরা?
– মাস্টার, একটা ফিটন নাহয় আমি চালিয়ে নিয়ে গেলাম। কিন্তু অন্যটা?____জিজ্ঞেস করে ক্রিস্তিয়ান।
– তিনটা ফিটন নিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা। একটা এখানেই রেখে যেতে হবে। যদি কোচওয়ান দু’জন এখানে আসে, তাহলে একটা ফিটনে করে নিজেদের বাড়ি বা গন্তব্যে ফিরে যেতে পারবে। আর্নি আমাদের ফিটনে বসুক। তুমি আর স্ট্রিকল্যান্ড জিনিসপত্র রাখা ফিটন’টা নিয়ে এসো। কোচওয়ানের আসনে তোমরা দু’জন অনায়াসেই বসে যেতে পারবে। অন্য ফিটন থেকে ঘোড়া দু’টোকে খুলে গাছের সাথে বেঁধে রাখো।
– জ্বি মাস্টার।
ক্রিস্তিয়ান বিলম্ব করে না। দ্রুত নিজেদের ফিটন খালি করে টুকিটাকি জিনিসপত্রগুলো সিয়াদের ফিটনে রাখে। ওদের সাথে থাকা কোচওয়ান তখনো মৃদু মৃদু কাঁপে। চোখের সামনে কিসব ঘটে গেল! ভাগ্যিস এখনো জীবিত আছে। বাকি দু’জনের মতো পালিয়ে যায়নি ভেবে নিজেকে নিয়ে বেশ গর্ববোধ করে।
– আপনি ঠিক আছেন? আমাদের সাথে ইম্যুভিলে যেতে পারবেন?
কোচওয়ানকে জিজ্ঞেস করেন ক্রিসক্রিংগল। কোচওয়ান আশ্বস্ত করে বলে,
– হ্যাঁ। পারবো।
– আচ্ছা। এখনই যাত্রা শুরু করুন।
ক্রিসক্রিংগল কিছুটা ভয় পান। তখন ওরা সংখ্যায় মাত্র তিনজন ছিলো। এখন যদি আরও বেশ কয়েকজন সাথে নিয়ে আবারও আক্রমন করে? ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। শীঘ্রই এই অঞ্চল পেরিয়ে যেতে হবে। তার ভাবনার মাঝখানেই তাদের ফিটন চলতে শুরু করে। কোচওয়ান দু’জন যদি ফিরে আসে তাহলে রেখে যাওয়া ফিটনটা তাদের কাজে লাগবে। নতুবা ফিটনের ঘোড়া দু’টো হিংস্র জন্তু জানোয়ারের শিকারে পরিণত হবে। এ বিষয়ে আর মাথা ঘামান না ক্রিসক্রিংগল। সিয়ার অচেতন মুখখানার দিকে কাতর দৃষ্টিতে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে মনে মনে বলেন,
– তুমি এখনো দুর্বল সিয়া। তোমাকে অনেক কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে। তোমার জীবনে ভয়ংকর সব বিপদ নেমে আসবে। এ কেবল সূচনা। তোমার এই যাত্রা তোমাকে ক্রমশ মৃ’ত্যুর দিকে ঠেলে দিবে। অথচ আমি বাবা হয়েও কিছু করতে পারবো না। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাকে ক্ষমা করো। আমি নিরুপায়। তবে ভরসা রেখো, যতদিন বাঁচবো তোমাকে রক্ষা করবো। তোমাকে রক্ষা করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
ক্রমে ক্রমে সময় গড়ায়। জঙ্গলের সব দানবীয় গাছগুলোর সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে ভোরের আলো প্রবেশ করে। ভোর হওয়ার সাথে সাথে আতংকিত ভাবটাও কেটে যায় অনেকটা। স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন ক্রিসক্রিংগল। ইনায়ার কাঁধে মাথা রেখে ভারী ভারী নিঃশ্বাস ফেলে সিয়া। ইনায়া নিঃশব্দে চোখের অশ্রু ঝরায়। ওকে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া থেকে বাঁচাতেই সিয়ার এই অবস্থা। নিজেকে দোষারোপ করে। বোনের অচেতন মুখখানার দিকে ব্যথাতুর দৃষ্টিতে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। সিয়ার একহাত আলতোভাবে ধরে উল্টো পাশে চুমু খায়। সিয়া চোখ পিটপিট করে তাকায়। হাতের তালুতে ব্যথা অনুভব করে। ক্ষীণস্বরে জানতে চায়,
– বাবা, আর কতক্ষণ সময় লাগবে পৌঁছাতে?
ক্রিসক্রিংগলের চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠে। দু’চোখের দৃষ্টিতে আনন্দ উপচে পড়ে। তিনি উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেন,
– এইতো পৌঁছে গেছি প্রায়।
ক্রিসক্রিংগল আদর মাখানো স্পর্শে চুমু খান সিয়ার মাথায়। আর্নির চোখ দু’টো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। কপোল গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণাগুলো শুকিয়ে গেছে। সিয়া উঠে বসার চেষ্টা করে। ইনায়া ওর মাথাটা পুনরায় নিজের কাঁধে রেখে বলে,
– এভাবেই বসে থাকো শান্ত হয়ে। তোমার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। কথা না শুনলে অনেক বকা খেতে হবে।
সিয়া নিশ্চুপ হয়ে আদুরে বিড়ালের মতো ইনায়ার গা ঘেঁষে থাকে। ইনায়ার শরীর থেকে প্রশান্তিময় এক ধরনের সুগন্ধি উপলব্ধি করে। অদ্ভুত এক ধরনের টান। অসম্ভব ভালবাসা। যেমনটা ওদের মাকে জড়িয়ে ধরলে অনুভব করতো সিয়া।
_______★★______
কিয়েভ, স্যাভেরিন ক্যাসল।
ভোর হতে না হতেই কাল কুঠুরিতে প্রবেশ করেন পিদর্কা স্যাভেরিন। ভয়ংকর রাগের বশবর্তী হয়ে উইজার্ভ ডিয়েটসের সেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ক্রোধিত কন্ঠে উচ্চস্বরে ডাকেন,
– ডিয়েটস!
ডিয়েটস চোখ মেলে তাকালেন। পিদর্কা স্যাভেরিনকে দেখে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় হাসলেন। তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
– খুঁজে পাওনি? পালিয়ে গেছে?
– তুমি কিভাবে জানলে?____বিস্মিত কন্ঠে জানতে চাইলেন পিদর্কা স্যাভেরিন।
ডিয়েটস অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন। পিদর্কা স্যাভেরিন কপাল কুঁচকে নিলেন। উইজার্ড ডিয়েটস ঠোঁটের মাঝে হাসিটুকু বজায় রেখে বলেন,
– আমিই তো বলে এসেছিলাম বিপদ বুঝে পালিয়ে যেতে। তুমি আমার বাড়িতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালালে, এরপরও ওরা বাড়িতে বসে থাকবে? পুরো একদিন সময়, যা কাস্ত্রোরুজ ছাড়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। আমি শুধু তোমার এই পরাজিত মুখখানা দেখতে চেয়েছিলাম। সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলাম ওরা পালিয়ে গেছে। এখন বলো, ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে তোমার কেমন লাগছে?
ডিয়েটসের কথাগুলো শুনে অসামান্য ক্রোধে কাঁপছিলেন পিদর্কা স্যাভেরিন। ক্রুদ্ধ কন্ঠে দ্বাররক্ষীদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
– দরজা খোলো।
দ্বাররক্ষীরা দরজা খুলে দিলো। পিদর্কা স্যাভেরিন সেলের ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু একপা সামনে এগুতেই দূরে ছিটকে পড়লেন। দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পেলেন। শোনা গেলো তার কাতর আর্তনাদ। ডিয়েটস উচ্চস্বরে হাসলেন। ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বললেন,
– হাত পা অসাড় হয়ে গেলেও আমার মুখ এখনো সচল। এতো সহজে আমার কাছে আসবে? মুর্খ পি’শাচিনী।
– আমি তোমাকে ছাড়বো না ডিয়েটস। ম’রতে না চাইলে বলো, ওগুলো নিয়ে ওরা কোথায় পালিয়ে গেছে?
– আমি জানিনা।
– এর ফল ভালো হবে না। পস্তাবে তুমি। আমি ওদের খুঁজে বের করবো। তারপর তোমার চোখের সামনে ওদের নির্মম মৃত্যু উপহার দিবো।
– অপেক্ষা করো। অতি শীঘ্রই তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে তোমার মৃত্যুদূত।
– এই কালকুঠুরীতে থেকে তুমি বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছো। ভুলে গেছো আমি অমর। আমার মৃত্যু নেই। একবার তোমার পরিবারের বাকি সদস্যদের খুঁজে পাই। তারপর সবগুলোকে একসাথে স্বর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। তোমার সহধর্মিণী আর পুত্রবধুর কাছে। উপরে বসে সবাই মিলে আমার মৃত্যু কামনা করো।
পিদর্কা স্যাভেরিন নিজের কথা শেষ করে কালকুঠুরি থেকে বেরিয়ে গেলেন। হাসতে থাকা ডিয়েটস এবার কাঁদতে শুরু করেন। স্ত্রী আর পুত্রবধূ হারানোর শোক। পরিবারের বাকিদের অনিশ্চিত জীবন। বক্ষস্থলে অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করেন। তিনিতো জানতেন, এরকমই হবে। একে একে নিজের সব প্রিয়জন হারাবেন। তবুও এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে তার?
________★★_______
ওডেসা, দুভিল কোট।
প্রখর রোদ। অসহনীয় গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠে প্রকৃতি। ঘড়িতে দুপুর বারোটা বাজে তখন। দুর্গের বেসমেন্টের একটি গুপ্ত কামরায় কফিনে শুয়ে আছে আব্রাহাম। পাশেই হ্যারিয়েটের কফিন। অর্ধমৃত অর্ধ জীবিত অবস্থায়। বিন্দুমাত্র শরীর নাড়ানোর ক্ষমতা নেই। সূর্যের তেজ যত বৃদ্ধি পায়, ওদের শরীরের শক্তি তত ক্ষীণ হয়ে আসে।
সময়টা বর্ষাকাল। কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। তবে আজ রোদের তাপমাত্রা খুব বেশি। যদিও একটা পোশন আছে যা পান করলে রক্তপিপাসুগুলো সূর্যের আলোতেও বাইরে বেরুতে পারে। কিন্তু প্রখর রোদে সেই পোশনের কার্যকারিতা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
আব্রাহামের সবগুলো ইন্দ্রিয় সজাগ। অথচ নড়চড় করার শক্তি নেই। সে অপেক্ষায় থাকে সূর্যের তেজ কমে আসার। আজকের দিনে এরকম প্রখর রোদ থাকবে একদমই ভাবেনি সে। তার অবচেতন মন পড়ে আছে কাস্ত্রোরুজ থর্পে। ইনায়ার র’ক্ত খেতে হবে। আব্রাহামের ধারণা, ওর রক্তের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে সে। কেমন অদ্ভুত একধরনের অনুভূতি। ভাবতেই চিত্ত পুলকিত হয়ে উঠে।
বেশকিছুক্ষণ সময় গড়ায়। অকস্মাৎ সূর্যটা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায়। হাত পায়ে শক্তি ফিরে পায় আব্রাহাম। ধীরে ধীরে অচল দেহখানা পরিপূর্ণ সচল হয়ে উঠে। সে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। কফিনের পাটা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। চোখের সামনে ভ্রু কুঁচকে হ্যারিয়েট দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম বিরক্ত হয়। হ্যারিয়েটকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
– ওয়াভেল কোট থেকে স্যামুয়েল এসেছে তোমাকে নিতে।
– কেনো?____বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে আব্রাহাম।
– ইজাবেল তোমাকে দেখতে চায়।
আব্রাহামের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসির মৃদু ঝলকানি খেলে যায়। কাস্ত্রোরুজ থর্পে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলে ওয়াভেল কোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু পেছন থেকে পুনরায় কথা বলে হ্যারিয়েট,
– প্রথমে ইম্যুভিলে যেতে হবে। অনারেবল ওভারলর্ড তোমাকে একটা অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ন করতে বলেছেন।
– কি কাজ সম্পূর্ন করতে হবে? কেনো করবো আমি? আমাকে কি নিজের দাস মনে করেন তিনি?
– মুখ বন্ধ রাখো। তুমি, আমি, আমরা সবাই তার আদেশ পালন করতে বাধ্য। কথা না বাড়িয়ে ইম্যুভিলে যাও।
আব্রাহামের রাগ হয়। ওভারলর্ডের কি সেবকের অভাব আছে? আব্রাহামকে দিয়ে কেনো কাজ করাতে হবে? যতই সে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চায়, ততই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ে দায়িত্বের বেড়াজালে। কে জানে কি এমন কাজ আছে ইম্যুভিলে!