লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ২০

আবির বাইরে বসে পাহাড়া দিচ্ছে তখনি ইরা আর আকাশের বাবা মেডিসিন নিয়ে ফিরে এল। আসার সাথে সাথে আকাশের মা সব বলতে শুরু করল আর সব শুনে ইরা ক্ষেপে গেল।

ইরাঃ এই মেয়েটা চায় কি?আকাশের এতবড় ক্ষতি করেও ওর স্বাদ মিটে নি? দাঁড়াও আন্টি আমি এক্ষনি গিয়ে ওকে বের করে আনছি…

বলে ইরা কেবিনে ঢুকতে গেল তখনি আবির এসে সামনে দাঁড়াল।

ইরাঃ কি করছো? সামনে থেকে সর ভিতরে যাব।

আবিরঃ সম্ভব না।

ইরাঃ মানে কি?

আবিরঃ আপনি ভিতরে যেতে পারবেন না

ইরাঃ আবির বেশি বেশি করছো…

আবিরঃ আমি না আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।

ইরা আবির কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে চলে গেল।

ভিতরে আকাশ ঘুমাচ্ছে মেঘলাও ঘুমে আছন্ন।

মেঘলা আর আকাশকে এই অবস্থায় দেখে ইরার খুব রাগ হল। তাই রেগে মেঘলাকে জাগানোর জন্য যেই মেঘলার গায়ে হাত দিতে যাবে তখনি আকাশ ইরার হাত ধরে ফেলল।

আকাশঃ সব জায়গায় তো হাত দেওয়া যাবে না। আকাশের বুকে থাকতে মেঘলার দিকে হাত বাড়াতে হাত কাঁপল না?পৃথবীর যে জায়গায় থাকলে মেঘলা সবচেয়ে নিরাপদ থাকে ও এখন সেখানেই আছে তাই এখন ওর গায়ে হাত দেওয়া তো দুর ঘুম টাও ভাংগতে দিব না বুঝেছো?

আকাশের ধমক শুনে মেঘলার ঘুম ভেংগে গেল।
মেঘলা উঠতে চাইলে আকাশ মেঘলাকে ধরে বলল কি হল উঠছিস কেন আমি তোকে উঠতে বলেছি?

মেঘলাঃ আ আমি তো ওখানে বসেছিলাম এখানে আসলাম কি করে…..??

আকাশঃ কোন সমস্যা হয়েছে?

মেঘলা আর কিছু বলল না।

ইরা তাই নাকি এতই ভালবাসা…???তাহলে তোমাকে একটা নিউজ দেখাই বলে ইরা আকাশের হাতে ফোন দিল আর নাবিলের নিউজ টা দেখে আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।সে ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল এটা হতে পারে না।

ইরাঃ সব হতে পারে সবি সম্ভব…নাবিল পালিয়েছে আর মেঘলাকে শিখিয়েছে তোমাকে মারতে।আর তুমিও ওকে বিশ্বাস করছো….

আকাশ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল এখনী বিদায় হ আমার সামনে থেকে…

মেঘলা খুব অবাক হল।

আকাশঃ কি ভেবেছিস ভাই বোন মিলে আমার বিরুদ্ধে লাগবি…?? আমাকে মেরে শান্তি হয় নি সেই জন্যই প্লেন করে আমার কাছে ন্যাকামি করতে এসেছিলি যাতে আবার আমার ক্ষতি করা যায়?

মেঘলাঃতুমি এসব কি বলছো আকাশ ভাইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুমি বলছো আমরা প্লেন করেছি….

আকাশঃ তা নয়ত কি…?? তুই আমাকে মারলি আর নাবিল পালাল এগুলা কি এমনি এমনি?আমাকে মারার মত সাহস তোর নেই সেটা কি আমি জানি না?নাবিল বলেছে জন্যেই তুই এমন করেছিস।ভালই ভালই বল নাবিল কোথায়…না বললে তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।তারপর আকাশ বলে উঠল এই কে আছিস ভিতরে আয়।

গার্ডসরা ভিতরে আসতেই আকাশ বলল নাবিল যেখানেই থাক ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার সামনে দেখতে চাই।যেখান থেকে পারিস খুঁজে আন খুব বার বেড়েছে ও।

আকাশের কথা শুনে মেঘলার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। কারন নাবিলের এই অবস্থার কথা শুনেও আকাশের মন খারাপ হয় নি।

মেঘলা রেগে গেল।

মেঘলাঃ আপনি কি মানুষ?ভাইয়া আপনার জন্য কি না করেছে আর তার প্রতিদান এভাবে দিচ্ছেন? আমার এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে আমি আপনাকে ভুল যেনেছিলাম। আচ্ছা ভাইয়া আপনার ফ্রেন্ড সেটা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু ও তো আমার ভাই অন্তত আমার কথা ভাবতেন আপনি যাকে ভালবাসেন তার পরিবারের সাথে এমন করতে বুকে বাঁধল না?

আকাশঃ ভালবাসা…?? কে কাকে ভালবাসে?আমি তোকে ভালবাসতাম এখন আর বাসি না।আমি কাউকে ভালবাসি না আমি শুধু নিজেকে ভালবাসি।আমাকে অনেক উপড়ে উঠতে হবে আর আমার উপড়ে উঠার মধ্যে যদি কেউ বাধাঁ হয়ে দাঁড়ায় আমি তাকে সরিয়ে দিব হোক সেটা মেঘলা বা নাবিল।

মেঘলাঃ তাহলে আমাকে নিয়ে আসলেন কেন?

আকাশঃ এটাও রাজনীতির একটা চাল তুই আমায় মারলি তাও আমি তোর কোন ক্ষতি করিনি এটা যখন মিডয়ায় ছড়িয়ে যাবে আমার জন্য সবার একটা দয়া কাজ করবে সবাই আমাকে বাহবা দিবে আমাকে সমর্থন করবে তাই নিয়ে এসেছি তানাহলে তোকে আমি কেন আনব দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব যে তোর মত মেয়েকে ভালবাসতে হবে।আমার পিছনে কত মেয়ে ঘুরে তুই জানিস? ভুলে যাস না আগের আকাশ আর এখনের আকাশের মাঝে বিশাল তফাত।

আমি শুধু দরকার ছিল লোক দেখানো আর সেটা আমার গেছে এবার এক্ষুনি বেরিয়ে যা এখান থেকে।

মেঘলাঃ তুমি এসব কি বলছো আকাশ?

আকাশঃ ইরা এটাকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়া যাও।আর তোকে বলছি নাবিলকে বলিস তোরা আমার একটা চুল ও ছিড়তে পারবি না।পুলিশের হাত থেকে বাঁচলেও আকাশের হাত থেকে ও বাঁচতে পারবে না।

ইরা মেঘলাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।

মেঘলাঃ ছাড়ো আমাকে আকাশ তুমি আমাদের সাথে এমন করতে পারো না।

পিছন থেকে আকাশঃ ইরা শোনো ওর গাঁয়ে যেন কেউ হাত না তুলে আমি চাইনা কেউ আমার দিকে আংগুল তুলার সুযোগ পাক।

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছে আর ইরা মেঘলাকে বাইরে টেনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।

আবির খুব অবাক হল এটা দেখে।

আবিরঃ কি করছেন আপনি ওকে এভাবে ফেলে দিলেন কেন?

ইরাঃ নাবিলের চামচামি ছাড়ো তানাহলে তোমাকে পার্টি থেকে বের করে দিতে বেশি সময় লাগবে না।

আবিরঃ এক্সিউজমি ম্যাডাম আমাকে কেউ দয়া করে পার্টিতে জায়গা দেয় নি নিজের যোগ্যতায় এসেছি আর নাবিল ভাইকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি তাই তার বোনকে রক্ষা করাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে বলেই আবির গিয়ে মেঘলাকে তুলে নিয়ে চলে গেল।

কেটেছে কিছুদিন আকাশ সুস্থ হয়ে গিয়েছে।তবে ওদিকে নাবিল এখুনো সুস্থ হয় নি।সামিরার মা নাবিলের খেয়াল রাখছে।
এর মধ্যে আকাশ একবারের জন্যও মেঘলার খোঁজ নেয় নি।কোথায় আছে বা কি করছে খোঁজ নেয় নি আকাশ।

মেঘলা নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে বাবা মা আর নাবিলকে খোঁজার চেষ্টা করছে।কিন্তু কাউকেই পায় নি।আবির মেঘলাকে নিজের বাড়িতে থাকতে আশ্র‍য় দিয়েছে।মেঘলার মনে আকাশের জন্য দিন দিন ক্ষোভ জন্মাচ্ছে।

এদিকে ইরা নাবিলের পদ পেয়ে পুরো শহরকে নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে আকাশের নাম করে সে বাজার থেকে চাঁদা তুলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খারাপ খারাপ কাজ করে বেরাচ্ছে।

আকাশ নিজেও তাতে সায় দেয়। আবির মাঝে মাঝে বিরোধিতা করলেও আকাশ আর ইরার সাথে পেরে ওঠে না।

প্রতিবারের মত আজকেও আকাশ ইরা সহ আরও কিছু গুন্ডা টাইপের লোক মিলে বাজারে গেল সাপ্তাহিক চাঁদা তুলতে।

ইরাঃ এই সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিয়ে আয়।
তাদের পোষা গুন্ডারা চলে গেল। আর আকাশ ইরা বসে বসে অর্ডার করছে।আবির যেহেতু আকাশের এসিস্ট্যান্ট তাই সে বাধ্য হয়েই আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

একটা গার্ড একটা মাছওয়ালার কাছে চাঁদা চাইতেই মাছওয়ালা ভয়ে তাড়াতাড়ি টাকা দিয়ে দিতে চাইল তখনি টাকা গুলি অন্য একজন এসে নিয়ে নিল।

গার্ডঃ এই কে তুই তোর এত সাহস আমাদের কাজে বাঁধা দিস?

_হ্যা দিচ্ছি এরা কেউ একটা পয়সাও চাঁদা দিবে না।
কথাটা শুনে সবাই তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।কারন যে বাঁধা দিচ্ছে সে কোন গুন্ডা বা রজনৈতিক ব্যাক্তি নয় একজন সাধারন পথচারী তাও ছেলে নয় এক মানবি যার এক হাতে বাজারের ব্যাগ সে হয়ত বাজার করতে এসেছিল।

মাছওয়ালাঃ আপা কি করছেন টাকা গুলি দিয়ে দিন ওরা আকাশ ভাইয়ের লোক ওদের কথার উপড়ে কথা বলা যায় না বাঁচতে চাইলে এখান থেকে চলে যান।

ইরা পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠল কিরে তোদের এতক্ষন লাগে এইটুকু কাজ করতে?

গার্ডঃ আরে ম্যাডাম দেখুন না এই পাগলিটা টাকা নিতে দিচ্ছেনা।

ইরাঃ এটাকে মেরে পুঁতে দে।

মাছওয়ালাঃ ভাই ভাই আপাকে কিছু করবেন না দয়া করে। আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।

_থামুন ভাই টাকা দিতে হবে না।

কথাটা বলার সাথে সাথে গার্ড এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার গায়ে হাত তুলতে নিল।

এবার মেয়েটা ওড়নার আড়াল থেকে নিজের মুখ বের করে নিল আর গার্ডকে আটকে দিল।

গার্ডঃ ম্যাডাম আপনি?

মেঘলাঃ হুম আমি…

ইরাঃ কি হল মার…

গার্ডঃ কিন্তু ভাই যে বলেছিল ম্যডামের গায়ে কোন ছেলে হাত দিবে না।

আবিরঃ মেঘলা কি করছো এসব চলে এসো এখান থেকে এসবের মধ্যে তুমি কেন ঢুকছে?

মেঘলাঃ এই নিরহ মানুষ গুলির উপর এমন অত্যাচার কেন করছো তোমরা?

আবিরঃ এটাই নিয়ম

মেঘলাঃ যতক্ষন আমি জীবিত আছি ততক্ষন এসব নিয়ম আর চলবে না।

আকাশঃ তাহলে মরে যা… তোর এত সাহস আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারেই কাজে বাঁধা দিস? এই মার ওকে।

গার্ড যখন মারতে আসল মেঘলা তার হাত ধরে বলল আমি কোন বড়লোক বাবার আদুরে মেয়ে নই গ্রামে এর তার মার খেয়েই বড় হয়েছি স্যার আর মার খেতে খেতে শিখেও গিয়েছি।তাই আমাকে মারাটা এতটা সহজ হবে না।

আকাশঃ তাই নাকি তাহলে তো দেখতেই হয় কেমন পারিস।

আবিরঃ মেঘলা তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো।নিজের বিপদ নিজে কেন ডেকে আনছো? এতগুলি ছেলের সাথে তুমি একা পারবে?

মেঘলাঃ হা হা হা আমি একা কে বলল এরা যদি সারাদিন ধরে মাছ কাটতে পারে এখন কয়েক টা গলা কাটতে পারবে না?

মেঘলার কথা টা শুনামাত্রই সব মাছওয়ালা হাতে বটি তুলে নিল।আর সবাই এক সাথে বলে উঠল ঠিকি তো হ্যা আপা আমরা পারব প্রতিদিন তিল তিল করে মরার চেয়ে একবারেই মরে যাব অথবা মারব দেখি কার কত দম আপার গায়ে ছুঁয়ে দেখা।

মেঘলার কান্ড দেখে সবাই তো অবাক হলই আকাশো অবাক হয়ে গেল ইরা বুঝতে পারল সবাই ক্ষেপে গেছে তাই তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যেতে চাইল।

ইরাঃ তুমি কাজটা ঠিক করলে না মেঘলা এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে তোমার এত সাহস কি করে হল?

মেঘলাঃ সাপের লেজে পা দিলে ছোবল দিতে পাড়ুক না পারুক ফোঁস করে তো উঠবেই আমার দেয়ালে পিঠ লেগে গেছে আপু তাই যতক্ষন বাঁচব লড়াই করেই যাব।

আকাশঃ তাই নাকি? আজ না হয় এদের পাওয়ার দেখাচ্ছিস এখান থেকে যাওয়ার পর তোর কি হবে?

মেঘলাঃআমি আর কিছু ভয় পাইনা মরে গেলে মরে যাব কিন্তু আমি ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নিয়ে ছাড়ব।আর মিষ্টার আকাশ শুনে রাখুন যদি বেঁচে থাকি তাহলস যে রাজনীতির জন্য আপনি আমাকে ঠকালেন ভাইয়ার সাথে বেইমানি করলেন সেই রাজনীতিকে আমি ধুলোয় মিশিয়ে ছাড়ব। খুব তাড়াতাড়ি পার্টি অফিসে আসছি অপেক্ষা করুন… আপনি হয়ত ভুলে গেছেন আপনার পদ টা পাওয়ার পিছনে আমারে অবদানই সবচেয়ে বেশি ছিল। আপনার জন্য পদ ম্যানেজ করতে পারলে নিজের জন্য পারব না?পারব অবশ্যই পারব।পার্টি অফিসে দেখা হবে আসতে পারেন।

বাজারের সবাই আকাশদের তাড়া করতে আসছিল দেখে আবির ইরা আকাশ কে টেনি নিয়ে চলে গেল।

আবির ড্রাইভ করছে…আকাশ পাশে বসেছে।

আকাশঃ আচ্ছা আবির মেঘলা এসব কি বলল নাবিলের হত্যা মানে? নাবিল তো পালিয়েছিল তাহলে মারা যাবে কেন।

আবিরঃ সেদিন আপনি যে নিউজ দেখেছিলেন তাতে কিছু জিনিস আড়াল করা হয়েছিল।সেদিন পালানোর সময় নাবিলকে ভাই কে গুলি করা হয়েছিল আর সেটা নিউজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রথমে নিউজে শুটের কথা বলা হলেও পরে সেটা আড়াল করা হয়েছিল কারন এটা বললে পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে।

আবিরের কথাগুলি শুনে আকাশ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল….

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।