এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৩

–মেহেদী এর পেষ্ট উনার পাঞ্জাবী তে মুছে উনাকে ধাক্কা মেরে নিচে চলে এলাম।উনার পাঞ্জাবীতে মেহেদী লাগিয়ে দেওয়ার দুঃসাহসে ভড়কে গেলেন উনি।চোখে মুখে বিস্ময়কর চিহ্ন উনার। বিভা আপু বললো, বিহান এইভাবে দিয়াকে রাগিয়ে দিলি কেনো তুই?সারাক্ষণ তুই দিয়ার পিছু লেগেই থাকিস।মেয়েটা তোর ভয়ে আমাদের বাড়ি যেতেই চায় না।আর তুই ঘুরে ফিরে ওর পিছেই লেগে থাকিস।এখানে যে এত গুলা মেয়ে আছে তারা তোর সঙ্গ চাইছে আর তুই কিনা তাদের রেখে আমাদের দিয়ার পিছেই লাগতে গেলি।উনার এক হাত প্যান্টের পকেটে অন্য হাতে ফোন স্ক্রল করছেন আর কপাল কুচকএ বিভা আপুর কথা শুনছেন।বিভোর ভাই বললেন,বিহান আজকের দিনেও আমাদের দিয়াকে না রাগালে হচ্ছিলো না তোর।এখন তো দিয়া আর আসবেই না এখানে।

–উনি কারো কথার ই তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বললেন,বাচ্চা মানুষ এসব অনুষ্টানে থেকে কি করবে।?ও বরং ঘুমিয়ে যাক নিজের রুমে গিয়ে সেটাই ভাল হবে।

–মেহু আপু বললো,বিহান ভাই এইটা কোনো কথা দিয়া ছাড়া কি অনুষ্টানে কোনো আনন্দ পাবো।আপনি যান দিয়া কে ডেকে দিন প্লিজ।

–উনি একটা বড় নিঃশ্বাস টেনে বললেন,আমি বললে কি আর দিয়া আসবে?আমার উপর ক্ষেপে গিয়ে দেখলে না আম্মুর দেওয়া নতুন পাঞ্জাবী টার কি হাল করেছে।আমি গেলে আরো কয়েক’শ গুন রেগে যাবে।এই মুহুর্তে সে ক্ষেপিদের রাণী হয়ে বসে আছে।আমি গেলে এই বিয়ে বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হবে নিশ্চিত।

–রিয়া বললো,বিহান ভাই একমাত্র আপনি পারবেন। অন্তত আপনার হুমকি ধামকি শুনে ভয়ে হলেও দিয়া আসবে।আপনি ছাড়া তো আর কাউকে দিয়া ভয় পায় না বিহান ভাই।আর আপনি শুধু আপনার জিএফ কে বড় করতে গিয়ে আমাদের দিয়াকে ছোট করেন কেনো?আমাদের দিয়া ও কম না কোনো কিছুতে।

–উনি ফোন টা পকেটে রেখে বললেন,আচ্ছা আমি নিচে গিয়ে দেখি তোমাদের দিয়া ম্যাডাম এখানে আসেন কিনা?একবার বলবো আসতে, রাজি না হলে নিচ থেকে উপরে ছুড়ে মারবো।

রাগে মনে চাচ্ছে সব কিছু ভেঙে ফেলি।মানুষ এতটা অসহ্য হবে কেনো?কেনো এতটা জঘন্য হবে। কি ক্ষতি করেছি উনার আমি।কোন কু ওক্ষনে উনার মতো মামাতো ভাই কপালে জুটেছিলো।যতবার ই ভাবি উনি যেনো আমার সামনে না আসেন ততবার ই আসবেন।আসবেন আর যত প্রকার অপমান জনক কথা আছে সব উনি বলবেন।রাগ সামলাতে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছি।মনে মনে ভাবছি কেউ যদি আমার জীবনে আসতো আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতো তাহলে তার সাথে পালিয়ে যেতাম, শুধু মাত্র উনার অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য।বাড়িতে প্রচুর মানুষ জন।এর ই মাঝে আম্মুর সাথে দেখা।আম্মু আমাকে বললো,দিয়া মেহেদী পরানো শেষ।একটু ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম না আম্মু খুব মাজা ব্যাথা করছে তাই উঠে এলাম।রুশা আপুর এক মামি বললেন,কি ব্যাপার দিয়া এই বয়সেই মাজা ব্যাথা।বিয়ে শাদী হলো না,বাচ্চা কাচ্চা হলো না এক্ষুণি মাজা ব্যাথা কেনো?আচ্ছা বাচ্চার সাথে মাজা ব্যাথার কি রিলেশন বুঝলাম না মনে মনে ক্ষীপ্ত হলাম।সাইড থেকে আরেক জন বলে উঠলো,আমার মতো এগারো টা বাচ্চা হলে কি করতে।এখনের যুগের মতো সিজার না সব নরমাল ডেলভারী হয়েছে।সকালে বাচ্চা হয়েছে বিকালে ভাতের হাড়ি নামিয়েছি।আরেক জন দাদী মজা করে বললো,কি ব্যাপার দিয়া আমার তো মনে হচ্ছে অন্য কোনো ব্যাপার।উনাদের এসব কথা বার্তা যেনো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।উনারা সবাই গ্রামের, তাছাড়া সেকেলে উনারা।উনারা যে কথা গুলো অন্য ভাবে বা অন্য মাইন্ডে নিচ্ছে সেটা আমি না বুঝলেও আম্মুর বুঝতে বাকি নেই একটুও।আম্মু ও তার ভাতিজার মতোই প্রচন্ড রাগি।আম্মু রাগ সামলে বললো ওর কোনো কোমরে পেইন নেই।ওর ক্ষুদা লেগেছে তো তাই অজুহাত দিয়ে চলে এসেছে।

বিহান ভাই কখন এসে দাঁড়িয়েছিলেন জানিনা,উনি খুব বিরক্তি নিয়ে বললেন,মানুষের শরীর কোনো রোবট নয় যে ক্লান্তি আসবে না। আর অসুখের ক্ষেত্রে কোনো বয়স আছে নাকি।
বিহান ভাই মনে হয় উনাদের কথায় ভীষণ রেগে গিয়েছেন।এটুকু বলেই উনি পকেট থেকে ফোন বের করে কোথাও একটা কল দিলেন।আমি কোনো কথা না বলে রুমে চলে এলাম।মহিলা গুলো মনে হয় বিহান ভাই এর কথায় বুঝতে পেরেছেন যে বিহান ভাই একটু রেগে গিয়েছেন।তারা বলাবলি করছে এটা দিয়ার মামাতো ভাই ডাক্তারি পড়ে, ছেলেটা দেখতে যেমন গুন ও তেমন।

–আমি রুমে আসতেই আম্মু রণচন্ডী মুডে আমার দিকে তাকালো।বাইরে একটু উঁকি মেরে দেখে নিলো কেউ আসছে কিনা?কাউকে না দেখতে পেয়ে আম্মু বললো,তোর কি বুদ্ধি কোনদিন ই হবে না দিয়া।আর কতবার বোঝাবো যে এইসব কোমরে ব্যাথার কথা কারো সামনে উচ্চারণ করবি না তুই।একটা কথা একশবার বললেও কানে যায় না।এই মেয়ে বিয়ে দিবো কিভাবে?

“এমনিতেই মেজাজ খারাপ উনার ভাতিজার জন্য।তার উপর আম্মু আবার এসে যা মন চাইছে তাই বলছে।আম্মুকে বললাম প্লিজ আম্মু আর কত?আর কত মানুষের কথায় কান দিবা বলোতো।আমার বিয়ে না হয় না হোক।”

“এইসব মহিলারা এইসব কথার কত বাজে মানে খুজবে জানিস।পাড়ায়,পাড়ায় রটিয়ে বেড়াবে। ”

“যা ইচ্ছা ভাবুক আমি কেয়ার করি না আম্মু।”

মেজাজ ঠিক না হতে হতেই মেজাজ খারাপের মহারাজা বিহান ভাই হাজির।

ফুপ্পি তোমাকে রুশা আপুর আম্মু খুজছে।

বিহান রাতে খেয়েছিস বাবা।

না ফুপ্পি,অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার, এটা খেলে আমার ঘুম হবে না।

বিভোর, বিভা,তুই খেয়ে নে।আমি আমার ভাইজি,ভাতিজাদের জন্য রান্না করেছি আলাদা।তুই তো সবার মতো গড়ান খাবার খেতে পারিস না তাই আমি আলাদা রান্না করে রেখেছি।

ফুপ্পি তুমি আবার এত কষ্ট করতে গেলে কেনো।

এটা কোনো কষ্ট না বাবা।দিয়া ওদের খেতে দে তুই।আমি গেলাম।

ড্রেসিন টেবিলের উপর রাখা একটা হলুদ চিরকুট।চিরকুট টা দেখে বেশ অবাক লাগলো আমার। আমি পেছনে ঘুরে চিরকুট টা খুলেই আরো অবাক।

!তোমায় বহু বার ছুঁতে গিয়ে ছোঁয়া হয়নি,
তোমায় বহু বার বলতে গিয়ে বলা হয়নি,
তোমায় বহু বার ডাকতে চেয়েছি ;
কেনো যেনো ডাকা হয়নি।
আমি তো প্রায় স্বপ্নে তোমার সাথে বহু দূর হারায়!
সেটা কখনো তোমায় বলা হয়নি।
আমি তোমাকে আমার প্রিয় ভাবি সেটাও তুমি কখনো জানোনি,
আচ্ছা তুমি তো আমার আশেপাশে থাকো,
তাহলে আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা এ অনুভূতি গুলো বুঝো না কেন?
তুমি বুঝো কেন আমার আমি শুধু তোমাকে চাই,
একান্ত করেই আমার আমি শুধু তোমাকে চাই।
দিন শেষ আমিও বলতে চাই সেও আমায় বুঝেছে-
তাই সে আমার হয়েছে।

ইতি–
তোমার অপ্রিয় কেউ।
আসাদ ~(কপি)”

এমন সুন্দর ভাবে কেউ চিরকুট লিখতে পারে।কিন্তু কে সেই মানুষ টা। এই সুন্দর চিরকুটের মালিক কে।এমন সময়ে পেছন থেকে বলে উঠলেন বিহান ভাই,

“জানিস দিয়া আমার শ্বশুরের মেয়ে শাড়ি পরলে আমার সর্বনাশ হয়ে যায়।মন আর চোখ দুটোই অন্য দিকে সরতেই চায় না।আচ্ছা বলতে পারিস সে এতটা সুন্দর কেনো?”

“মানুষ কতটা নির্লজ্জ হলে সারাক্ষণ নিজের বউ এর প্রশংসা করতে পারে সেটা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না মিষ্টার বিহান।”

“ড্রেসিন টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে রাগে ফুঁশছি আমি।সারাদুনিয়ার মানুষ যেখানে আমার হাতের মেহেদীর ডিজাইনে মুগ্ধ সেখানে উনি কিনা অত গুলো মানুষের সামনে আমাকে বিশ্রি ভাবে অপমান করলেন।”

“আমার কথা শুনে উনি অবাক হয়ে গেলেন,চোখ বড় বড় করে তাকালেন আমার দিকে।উনার পাঞ্জাবীতে মুছে দেওয়া মেহেদী টা মনে হয় রং ধরেছে এত সময়।একদম বুকের বাম সাইডে কালো মতো লেপ্টে আছে হেনা পেষ্ট।এক পা থেকে আরেক পায়ের দূরত্ব বেশ খানিক টা ফাঁকা উনার।ভ্রু কুচকে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।হাত পেছনে বাঁধা উনার।এক’পা, দু’পা করে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে।আমার কাছাকাছি এসে ড্রেসিন টেবিলে এক হাত বাঁধিয়ে খানিক টা ঝুঁকে ডান ভ্রু কুচকে বললেন,আমার বউ এর প্রশংসা করলে তোর এত জ্বলে কেনো দিয়া?তুই কি জেলাস।বাট কেনো কি সমস্যা তোর?তোর জেলাস হওয়ার মতো তো কিছুই নেই।”

“আপনি নিজেকে কি ভাবেন কি রোমিও।ওইসব মেয়েরা আপনাকে ডেইরি মিল্ক ভাবতে পারে,মারাত্মক ক্রাশ খেতে পারে কিন্ত এই দিয়া না বুঝেছেন।আপনার বউ এর প্রশংসায় আমি একটুও জেলাস নই বরং অসহ্য লাগে আমার এত আদিক্ষেতা দেখলে।দুনিয়ায় কি মানুষের আর বউ নেই।তারা কি আপনার মতো সারাক্ষণ আমার বউ, আমার বউ করে।এমন ভাবে সারাক্ষণ নিজের বউ এর প্রশংসা করেন যেনো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নারী আপনি বিয়ে করেছেন।”

“উনি আরো খানিক টা ঝুকে একদম ই আমার নিঃশ্বাসের কাছাকাছি চলে এলেন।উনার উষ্ণ নিঃশ্বাস নাকে মুখে এসে পড়ছে আমার।কিন্তু একটুও টাচ করেন নি আমায়।আবার বললেন,তাহলে সমস্যা টা কোথায়?”

“সমস্যা টমস্যা কিচ্ছুই না।আমার সামনে কখনো আদিক্ষেতা করবেন না।আমার একদম ই ভাল লাগে না। ”

“তাহলে কি ভাল লাগে মিসেস বিহান?”

“মিসেস বিহান?অবাক হয়েই বললাম”

“ওপস সো সরি দিয়া!দিহান হবে।আই মিন মিসেস দিহান।
কেনো যে তোর নাম টা দিহান রাখতে গেছিলাম।এই যে দেখ মিস্টেক হয়ে গেলো।আর তুই ভুল বুঝলি।”

“বিহান আর দিহানের মাঝে অনেক পার্থক্য বুঝেছেন।”

“ওহ নো!আমি মিসেস দিহান বলেছি সেটাকে জোর করে মিসেস বিহান প্রুভ করতে চাইছিস।মিসেস বিহান হওয়ার খুব শখ তাইনা?(ভ্রু কুচকে বললেন)”

“উনার বুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললাম, এমন ভয়ংকর শখ কোনো মানুষের হবে না জীবনেও।আমার তো কোনদিন ই হবে না।নিজেকে যে কি ভাবেন।”

“মিসেস বিহান,সরি দিহান কোমরে পেইন কি কম হয়েছে?”

“আমি হঠাত খেয়াল করলাম আমার কোমরে পেইন কমে গিয়েছে।এখন মনে চাইছে উনাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দেই।কেননা উনি তখন হাবিজাবি না বললে রেগে মেগে আসতে পারতাম না।এখনো প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে হতো।”

“উনি কপাল কুচকে আবার ও বললেন, তো যা মেহেদী দিতে।মেহেদী দিতে না পেরে আমার তো গুষ্টি সহ উদ্ধার করা হচ্ছে।কথায় আছে না যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।রাজাকারের বংশধর একটা।”

“আমার চোখে মুখে বিনয়ী একটা ভাব চলে এসছে।উনাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে।”

“উনি আমার মুখের অদল দেখেই কিছু একটা অনুমান করতে পারলেন।আমি কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন,থাক তোর ওই সস্তা ধন্যবাদ নিয়ে নিজেকে ধন্য করতে চাইছি না এই মুহুর্তে। আমি আবার সবার ধন্যবাদ নেই না।”

“আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার একবিন্দু ইচ্ছা আমার নেই।আমার ধন্যবাদ নেওয়ার যোগ্যতাও সবার নেই বুঝেছেন।”

“উনি আমার দিকে খানিক সময় তাকিয়ে বললেন দিন দিন অনেক বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তুই।কিছুক্ষণ আগে আমার নাম ধরে জাস্ট মিস্টার বিহান বলেছিস।দিন দিন আদব কায়দা কি সিকেতে তুলছিস তুই।আমি না তোর বড়ো।তাও এক দুই দিন না কয়েক বছরের বলেই আবার আমার দিকেই এগোচ্ছেন উনি।”

“আপনি আবার এগিয়ে আসছেন কেনো?আপনি বেরোন আমার রুম থেকে।”

“আমার হাত থেকে চিঠি টা কেড়ে নিয়ে চিঠির দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে আমার দিকে অগ্নিচোখে তাকালেন।”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।