এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৪১

বিভোর ভাই কে জ্বলানোর জন্য রিয়া যে এমন করছে সেটা আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমি তো ভাবতাম ওরা ফান ই করে কিন্তু বিভোর ভাই এর হাব ভাবে এটা ক্লিয়ার যে উনি রিয়ার প্রতি সিরিয়াস।রিয়ার ভাব দেখেও তাই মনে হচ্ছে।বিভোর ভাই নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললেন নিয়াজ তুমি না রহমান কাকার ছেলে।নিয়াজ মাথা নিচু করে বললো জ্বী ভাইয়া।
“তুমি যে প্রেম করছো সেটা কি তোমার বাবাকে বলবো।না মানে বললে তোমার কি হবে ভেবেছো।”
‘আমার বয়ফ্রেন্ড কে ভয় দেখাচ্ছেন কোন সাহসে শুনি।আপনি কি ওর কেয়ারটেকার নাকি।অন্যর ব্যাপারে নাক গলানো কমিয়ে দিন বলছি।’
“নিয়াজ তোমার ভাবি আমার উপর রাগ করেছে।হয়েছে কি কাজের ব্যাস্ততায় সময় দিতে পারি নি এইজন্য।ও কিন্তু আমার হবু বউ।আমাদের রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে শুধু ফুলসজ্জা বাকি আছে।”
‘বাজে কথা মোট বলবেন না।কিসের রেজিস্ট্রি।নিয়াজ ওই বাটপার মিথ্যা বলছে।আমাদের রিলেশন দেখে হিংসা হচ্ছে।’
“নিয়াজ আমি কি তোমার বাবাকে বলবো।”
“নিয়াজ বেচারা ভয় পেয়ে বললো প্লিজ ভাইয়া বাবাকে কিছু বলবেন না।ইয়ে রিয়া বিভোর ভাইয়ার সাথে ঝামেলা টা মিটিয়ে নাও প্লিজ।বিভোর ভাইয়া আমি আসলে জানতাম না রিয়া আপনার ওয়াইফ।সরি ভাইয়া।আমাকে মাফ করেদিন।”
“রিয়া বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললো নিয়াজ একটা বাচ্চা ছেলে বলে ভয় দেখাতে পারলেন। আপনার মতো আস্ত একটা বুইড়া হলে ও মোটেও ভয় পেতো না।বুইড়া কাকু বাচ্চা ছেলেদের ভয় দেখান কেনো?”
“কাকু? আমাকে কি অবেলায় এসে কাকু বলে ডাকবে।প্রেমিক কে কেউ কাকু ডাকে সুন্দরী। ”
“আপনিও তো ডাকেন।প্রেমিকাদের খালা ডাকেন।তাই আমি ডাকলে দোষ কি?”
“অহ আচ্ছা এই ব্যাপার।এই বুইড়া কাকুকে জামাই হিসাবে মেনে নাও সেটাই বেটার হবে।আজ না হোক কাল আমার ই বউ হতে হবে।”
“আপনার মতো প্লেবয় কে জীবনে বিয়ে করবো না।ভাবলেন কিভাবে এমন আকাশ কুসুম চিন্তা।আপনাকে বিয়ে করলে মান ইজ্জত কিছুই থাকবে না।চারদিক থেকে মেয়েরা ঘিরে ধরবে বলে জানিস ওই বেটা আমারেও প্রপোজ দিছিলো।আমার প্রেজটিজ বলে কিছুই থাকবে না।”
“রিয়া আমি কান ধরে উঠবস করছি আর জীবনে এমন করবো না।আসলে মজা করেই অমন করি।আমার তোমাকে ভাললাগে।বিলিভ মি রিয়া।তোমাকে ভাল লাগে বলেই তো তুমি যায় করো যায় বলো আমি কিছুই বলি না।অবুঝ বাচ্চাদের মতো কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বিভোর ভাই।”
“রিয়াকে ফিস ফিস করে বললাম আমিও জানি তুই ও উনাকে লাইক করিস।বেশী টাইট দিতে যাস না আবার প্যাচ কেটে যাবে।উনি যদি সত্যি সত্যি ভাবেন যে তুই আর পাত্তা দিবি না বাধ্য হয়ে কিছুদিন স্যাকা খাওয়া গান শুনে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করবে।”
“রিয়া বললো, থাক হইছে হইছে আর কান ধরতে হবে না।আমার হাত টা দিন তো।”
“বিভোর ভাই উনার সুন্দর মসৃণ হাত টা মেলে ধরলেন।রিয়া বিভোর ভাই এর হাতের তালুতে সুন্দর ভাবে লিখে দিলো।আই লাভ ইউ প্লেবয়।লিখে হাত মুঠো করে দিলো।আমি আর রিয়া বাসায় আসার জন্য রওনা হলাম।পেছন থেকে বিভোর ভাই ডাকলেন রিয়া,রিয়া পেছন ঘুরতেই বিভোর ভাই উনার হাতে কিস করে রিয়ার দিকে ছুড়ে মারলেন।রিয়া সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বিভোর ভাই সম্মতি জানালো।”
——————————————————— কয়েকমাস কেটে গিয়েছে….
বিহান ভাই এর মেডিকেল এর এক টানা ৫ বছর শেষের দিকে।উনার যখন প্রথম ইয়ার শেষ প্রায় বলতে গেলে উনি যখন সেকেন্ড ইয়ারে আমি তখন মাত্র এস এস সি পাশ করে কলেজে পা রেখেছি।ইন্টারে এক ইয়ার গ্যাপ যাওয়াতে তিন বছরের বেশী সময় কাল লেগেছে আমার ইন্টার পড়তে।আমি আর রিয়া ও এইস এস সি পরীক্ষা শেষ করে এডমিশন এর জন্য ভীষণ ভাবে প্রিপারেশণ নিচ্ছি।প্রায় তিন তিন মাস দেখা হয় না আমাদের।এইদিকে বিভিন্ন ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য প্রায় একটা বছর লেগে যাচ্ছে।
কাল আমাদের ঢাকা মেডিকেল এ এডমিশন এক্সাম। শুভ ভাইয়া আর বিভোর ভাইয়ার সাথে ঢাকা রওনা হলাম আমরা।ওখানে গিয়ে বিহান ভাই এর বাসাতেই উঠলাম।বিহান ভাই এখানে বাসা নিয়েই থাকেন।বিহান ভাই এর বাসায় এসে অবাক হয়ে গেলাম আমরা উনার বাসা এত সুন্দর আর পরিপাটি করে সাজানো দেখেই চোখে তাক লেগে গেলো।রুম ভরা কিসব হার্ট এর পিকচার লাগানো।বিহান ভাই আমাদের জন্য খাবার বানাচ্ছেন।এখানে আসার পর আর উনার সাথে কথা বলিনি আমি।মনে হচ্ছে কতকাল পরে উনাকে দেখলাম।উনি কি আগের থেকে শুকিয়ে গেছেন।মনে হয় প্রচুর পড়াশুনা করছেন।রাতে খাওয়া শেষে শুভ ভাইয়া রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করছেন।আমি বিহান ভাই এর রুমে টি টেবিলের এক পাশে টুলে বসে আছি আর বিহান ভাই অপজিট সাইডে বসে আছেন।
“বিহান ভাই আমাকে প্রশ্ন করলেন কি প্রিপারেশন কেমন?”
“বই খাতা খুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম খুব ই বাজে।”
“উনি কপাল কুচকে তাকিয়ে বললেন সারা বছর লাফিয়ে বেড়ালে যা হয় আর কি?উনি আমাকে লেখাপড়া নিয়ে প্রশ্ন করছেন আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আমাকে এত ইগনোর করেন কেনো লাস্ট তিন মাস।”
“উনি পানির মতো উত্তর দিলেন বিজি থাকি তাই।”
“মনের মাঝে খারাপ লেগে উঠলো খুব উত্তর টা শুনে।আবার ও প্রশ্ন করলাম আমাকে কি এখন আর ভাল লাগে না বিহান ভাই।”
“এমন টা কি বলেছি কখনো আমার ভাল লাগে না।।এসব ভাবার কারণ কি শুনি।কাল এক্সাম আর আজ এসব চিন্তা মাথায়।”
“লাস্ট তিন মাস আমাদের দেখা হয় নি।আপনাকে ফোন দিলে বলেন কল ইউ লেটার।দিনে দুই একবার ফোন দেন।অন লাইনে পাওয়া ই যায় না।কেনো ডাক্তার এত অবহেলা কেনো করেন।”
“দিয়া তুই না পুচকি ই থেকে গেলি।জানিস আমার কত চাপ।ভাল রেজাল্ট না করলে তোর বাটপার বাপ আমার হাতে তোকে তুলে দিবে না।তাই আমাকে তোর জন্যই এত পরিশ্রম করা লাগে।কবে বড় হবি আর কবে বুঝবি।”
“আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বললাম,আপনাকে আমি ভীষণ মিস করি।লেখাপড়ায় মন বসে না।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না আপনি।আপনি আমাকে ইগনোর করলে মনে হয় আপনি আমাকে ভুলে যাচ্ছেন।”
বিহান ভাই উঠে এসে আমার মাথা উনার বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন আই লাভ ইউ পিচ্চি।কবে বড় হবি তুই।আমি কি তোকে ইগনোর করতে পারি।সেই সাহস আর ক্ষমতা কোনটায় আমার নেই।খুব শিঘ্রি আমার কাছে নিয়ে আসবো।তুই না আমার বউ, তুই কি আমার প্রেমিকা যে ছেড়ে যাবো।সবাই ছেড়ে যাবার জন্য আসে না পিচ্চি।কিছু মানুষ সারাজীবন পাশে থাকার জন্য আসে।
উনার কথা শুনেই সব মন খারাপ হাওয়া হয়ে গেলো।পরের দিন এক্সাম দিতে গিয়ে প্রেয়সীর সাথে দেখা।আমাকে দেখেই বললো এক্সাম দিতে এসছো। কোনদিন চান্স পাবে না তুমি।বিহান যে ওর লেভেলের চেয়ে নিম্ন কাউকে পছন্দ করে সেটা প্রুভ হয়ে যাবে।বিহানের পাশে আমাকেই মানায় শুধু।উনার কথা শুনে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলাম।কাউকে কিছু বললাম ও না এ ব্যাপারে।এক্সাম দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।
বিহান ভাই ইদানিং ভীষণ বিজি থাকেন।উনাকে ফোনেও তেমন একটা পাওয়া যায় না।কি জানি কি করেন উনি এখন।উনাকে সন্দেহ করা ভুল হবে কেননা উনি একজন লয়াল মানুষ।উনি যে আমার জন্য ই এত কষ্ট করছেন সেটা জানি আমি।এডমিশন এর রেজাল্ট এসছে ঢাকা মেডিকেল এ চান্স হলো না এমন কি কোথাও চান্স হলো না।এমন টা হবে ভাবতেও পারিনি আমি।রিয়া এবং আমি দুজনের সেইম অবস্থা। ওই দিকে বিহান ভাই এর ফাইনাল এক্সাম শেষ উনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ টপার করেছেন।বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উনাকে দেখাচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকায় উনার ছবিতে ছড়াছড়ি।আর এইদিকে আমি কোথাও চান্স পাই নি।আমি চান্স পাই নি এ নিয়ে আমার মন খারাপ হলেও উনি যে টপ ওয়ান হয়েছেন বাংলাদেশের মধ্য এটাই আমার কাছে অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার।এমনিতেও ঢাকা মেডিকেল কলেজে উনার অনেক প্রশংসা ছড়িয়ে আছে।বিহান ভাই এর ছবির পাশে উনার সেই বান্ধবী প্রেয়সীর ছবি ও ছাপা হয়েছে।দেখে কেমন যেনো মনের মাঝে খারাপ লাগছে।অজানা ভয়ে বুক টা কেঁপে উঠলো উনি কি এখন আমায় মেনে নিবেন।উনার আর আমার মাঝে যোগ্যতায় আকাশ পাতালের ডিফারেন্স। কোথায় আমি আর কোথায় বিহান ভাই।আমাদের এলাকায় শহর জুড়ে বিহান ভাই এর নাম সবার মুখে মুখে।কিন্তু বিহান ভাই এর মাঝে কোনো আনন্দ উল্লাস কিচ্ছুই নেই।উনার ব্যবহৃত সিম টাও অফ রেখেছেন সবাই ফোন দিচ্ছেন মেসেজ দিচ্ছেন জিনিস টা উনার ভাল লাগছে না।এত বড় সাফল্য পাবার পর ও উনার এমন হলো কেনো?কি কারণে উনার মন খারাপ কেউ জানেনা।মামি আমাকে ফোন দিয়ে বললো দিয়া বিহানের কি হয়েছে জানিস।ওর মন মেজাজ সব ই খারাপ।কারো ফোন ই তুলছে না।তুই একটু ফোন দিস তো।আমার ফোন দেওয়ার ইচ্ছা নেই কারণ আমি কোথাও চান্স পাই নি কি বলবো উনাকে আমি।
আমাকে নিয়ে আমার আম্মুর ভীষণ মন খারাপ।আম্মুর স্বপ্ন আমি সত্যি করতে পারলাম না।এমনিতেই আম্মুর মন খারাপ তার মাঝে মেঝ কাকি এসে আম্মুর মেজাজ আরো খারাপ করে দিলো।
“তোমার ছেলে শুভ যে মেহুর পিছে ঘুর ঘুর করছে তুমি কি সে খেয়াল রাখো।কোথায় বোন হয় আগলে রাখবে সেখানে নিজেই ভক্ষক।মানুষ কি বলবে যে ফুফাতো বোনের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।অন্য কারো ছেলে মেয়ে হলে ভালোই বলতে পারে।”
“তুই কখনো দেখেছিস কারো ছেলে মেয়েকে বাজে কথা শোনাতে।শুভ তো তোর ও ছেলে হয় তাইনা।তাহলে এভাবে খোচা দিয়ে কথা না বলে ভাল ভাবেও তো বলতে পারতিস।আসলে কি জানিস তোদের ছেলে মেয়ে আমি নিজের মনে করি কিন্তু তোরা আমার ছেলে মেয়েকে কখনো নিজের ই ভাবিস না।”
“কোথায় খোচা দিলাম বড় আপা।যা সত্য তাই ই বলেছি।শুভ এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করতে পারলো।এত মানুষ রেখে মেহুকে বিরক্ত করছে।কোথায় নিজের ছেলেকে শাসন করবা তা নয় আমাকেই কথা শোনাচ্ছো।এইজন্য মানুষ কে ভাল কথা বলতে নেই।”
“তোর কাছে কি মেহু বা ওর মা বাবা কেউ নালিশ করেছে।নাকি তুই খারাপ কিছু দেখেছিস।”
“নালিশ করেছে ছাড়া কি?মেহুর মা আমাকে বলেছে শুভ এমন কাজ কিভাবে করতে পারলো শুনে দেখো মেঝ ভাবি।আমার ছেলে হলে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।”
“আমি রুমে সুয়ে সুয়ে মেঝ কাকির জঘন্য বাজে কথা গুলো শুনছিলাম।কাকি চলে গেলে আম্মুর মুড ভীষণ খারাপ।সন্ধ্যার পর ভাইয়া বাসায় আসলে আম্মুর ভাব সাব দেখে আমাকে বললো এই দিয়া কি হয়েছে রে।
ভাইয়াকে বললা চুপ করো আম্মুর আজ ভীষণ মুড অফ।”

(মেডিকেল সাইডে কিছুটা ভুল ত্রুটি আছে।গল্পের থিম ঠিক রাখতে গেলে এই ভুল টুকু না দিলে মেলাতে পারছি না।গল্প ভেবে মেনে নিন।এ বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থী)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।