এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৪০

ভ্যাপসা গরমে ঘেমে মুখশ্রী লাল থেকে কালো রুপ ধারণ করেছে।বেশী ঘামলে মুখ তৈলাক্ত হয়ে কালো হয়ে যায় এই সমস্যার কোনো সমাধান ই পেলাম না আজ ও।রাস্তা থেকে আইসক্রিম কিনে রিয়া আর আমি খেতে খেতে বাসায় আসলাম।বিকালে আবার কোচিং এ ক্লাস আছে।সারারাস্তা প্রতিজ্ঞা করেছি আর জীবনে কথা বলবো না উনার সাথে।রিয়া আমাকে বলছে দিয়া বিহান ভাই কে যে এত গালাগাল করে যাচ্ছিস আমার তো মনে হচ্ছে বিহান ভাই এর এমন করার পিছনে কোনো কারণ আছে।উনি তোকে শাস্তি দেন এটা সত্য তবে রাস্তা ঘাটে তো এমন করেন না কখনো।রিয়াকে একটা ধমক দিয়ে বললাম বিহান ভাই কে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি রিয়া।উনার পক্ষে সব ই সম্ভব।রিয়া ওর হাসি চেপে ধরে বললো দিয়া তোর সাহস ও আছে বলতে হয় বিহান ভাই এর সাথে প্রেম করিস ভাবা যায়।কবে ব্রেকিং নিউজ শুনবো প্রেমিক এক আছাড় দিয়ে তার প্রেমিকাকে মেরে ফেলেছে।আমি মাফ চাই উনাকে আমার ভীষণ ভয় করে,সারাজীবন কুমারী থাকলেও বিহান ভাই অসম্ভব।উনি সামনেই এলেই কি কথা বলবো খুজে পাই না।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,কিসের প্রেম ফেম আমি কোনো বিহান টিহান কে চিনি না।
বাসায় ঢুকতেই আম্মুর বকা শুরু হলো।এই মেয়ে জীবনে বড় হবে না।এইভাবে টমেটো সস লাগাইলি কিভাবে।তোর কি কোনোদিন আক্কেল হবে না।সাদা ড্রেসের এই রং কি আর উঠবে।আম্মুকে তো আর বলতে পারলাম নাহ তার গুনবান ভাতিজার কাজ এটা।বকাগুলো হজম করে নিলাম।
ড্রেস টা খুলে ওয়াশ রুমে গেলাম ধোঁয়ার জন্য।সস এর দাগের মাঝে ভিন্ন একটা দাগ দেখে চমকে গেলাম আমি।গাড় লাল রক্তের দাগ। দাগ টা ভাল ভাবে খেয়াল করে দেখলাম সত্যি রক্তের দাগ।তার মানে আমার পিরিয়ড হয়েছিলো।জামার পেছনে দাগ লাগাতে উনি ইচ্ছা করে টমেটো সস লাগিয়ে দিয়েছিলেন।উফফ উনি আমার এই সময় টা জেনে গেলেন।বার বার এত লজ্জা পেতে হয় উনার সামনে।ছিঃকি ভাবলেন উনি আমাকে।ওহ মাই গড এত বাজে সিসুয়েশন এ পড়লাম।লজ্জায় কিভাবে উনার সামনে যাবো।শুধু শুধু বিহান ভাই কে ভুল বুঝলাম।উনি আমাকে মানুষের মাঝে লজ্জায় পড়তে দিবেন না বলেই এমন করেছেন।শুধু শুধু ভুল বুঝলাম।আরেকবার ও গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
ফোন হাতে নিয়ে পায়চারী করছি উনাকে একটা ফোন দিবো ভেবে।উনি কি আমায় বকা দিবেন নাকি।নেট অন করে দেখি উনি অনলাইনেই আছেন।
বিহান ভাই কে ভিডিও কল দিলাম।উনি রিসিভ করে বললেন কি ব্যাপার মিস জরিনা ভানু কেমন আছেন।উনার কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম।কি জরিনা ভানু আর কত দিন বলবেন তার ইয়ত্তা নেই।
সরি আমি আসলে তখন বুঝতে পারি নি।
আহ কি বুঝতে পারেন নি ম্যাডাম ফুলি
কিছু না ধন্যবাদ আপনাকে
থাক ধন্যবাদ দিতে হবে না জানতাম বাড়িতে গিয়ে এমন করবেন তাই চুপ ই ছিলাম।
খেয়াল করে দেখলাম উনি আমার নিক নেইম জরিনা ভানু দিয়ে সেভ রেখেছেন।নাম টা ক্লিয়ার করে দিলাম ।উনি আসলেও পারেন ও বটে।কি বলবো খুজে না পেয়ে কল কেটে দিলাম।।এক মিনিটের মাঝে উনি আবার ভিডিও কল দিয়েছেন।রিসিভ করে বললাম কিছু বলবেন।উনি বললেন হুম একটস জিনিস দিতে চাই।কি দিতে চান।উনি ভিডিও কলের মাঝে দুই ঠোঁট একজায়গা করে উম্মম্মম্মম্মাহ বলে কিস করে দিলেন।লজ্জায় দ্রুত ফোন উল্টা করে রাখলাম।উনি এগুলাও বোঝেন ভাবা যায়।
বিকালে রিয়া আর আমি কোচিং এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম।পথে আমাদের পাড়ার দুইটা ছেলের সাথে দেখা।বিহানভাই দের বাসার পাশেই আমাদের কোচিং।বিহান ভাই এর রুম থেকে স্পষ্ট দেখা যায় কোচিং এর রুম।ছেলে দুইটা আমাকে দেখে বললো দিয়া কি কালারের হচ্ছে পিংক নাকি ব্ল্যাক।ওই ছেলেটা বুদ্ধি করে পেছনে সস লাগাই দিছিলো।ইয়ে বেশী না কম হচ্ছে।গতকাল ই দেখেছিলাম কিন্তু আমরা। লজ্জা আর অপমানে কি বলবো বুঝছিলাম না।মাথা নিচু করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।এমন সময় বিহান ভাই এসে বললেন,দিয়া মন খারাপ কেনো?আমি ছল ছল চোখ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।বিহান ভাই বললেন পায়ের জুতা খোল দিয়া বলেই শার্টের হাতা গোটানো শুরু করলেন।একটা ছেলের চোখ মুখ শুকিয়ে এসছে।আরেক টা ছেলে স্বাভাবিক।বিহান ভাই বললেন কি হলো জুতা খোল বলছি, যতক্ষণ না এলাকায় মানুষ একত্রিত হচ্ছে ততক্ষণ পেটাতে থাক।পরে গনধুলানি দিবো।আমি বললাম থাক গে ঝামেলা করার দরকার নেই।
যে ছেলেটা বাজে কথা বলছিলো সে বললো,কে ভাই আপনি? জুতা দিয়ে পিটাবে মানে।আমি কি খারাপ কিছু বলেছি।ওর সাথের ছেলেটা বললো চুপ কর ভাই। উনি হলেন বিহান ভাই।এলাকার সব ইয়াং জেনারেশন উনার কথায় উঠাবসা করে।তাছাড়া উনাকে সবাই চিনে। এই যে কি সেই বিহান ভাই।হ্যাঁ এই যে সেই বিহান ভাই।
বিহান ভাই একটা ছেলের কলার চেপে ধরে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে থাপ্পড় কষে দিলেন।ছেলেটার গালে সব গুলো আঙুল বসে গেলো।
মেয়েদের পিরিয়ড কি হাসাহাসির কোনো জিনিস।লেখাপড়া তো মনে হয় করিস না। অন্তত দুই চার ক্লাস পড়লে এতটুকু ধারণা হতো।মেয়েদের যদি আল্লাহ এই জিনিস টা না দিতো তাহলে কি তোর আমার জন্ম হতো।এটা কি প্রথম দিয়ার ই দেখলি যে এটা নিয়ে দিয়াকে ছোট করছিস।মেয়েদের মাতৃত্বের সম্মান এটা।আমার এলাকায় এত বড় ফাউল ছেলে কোথা থেকে এলো।বলেই বিহান ভাই আরো কয়েক টা থাপ্পড় মেরে দিলো।অন্য ছেলেটা বলছে ভাই আমি কিছু করিনি আমাকে মাফ করে দিন।
মামাদের পাড়ার একটা ছেলে এসে বললো,কি হয়েছে বিহান ভাইয়া।?
এই যে ছেলে গুলো আমাদের দিয়াকে বিরক্ত করছে।থানায় ফোন দিয়ে ইভটিজিং এর মামলা দিয়ে দে।
বিহান ভাই মারাত্মক আকারের রেগে গিয়েছেন।উনি রাগলে কন্ট্রোল করা যায় না।আমি বললাম বিহান ভাই সামান্য এটুকু ব্যাপারে আবার থানা পুলিশ কেনো?বিহান ভাই বললেন এটা সামান্য।ওরা গতকাল ই তোকে অনেক বাজে কথা বলেছে আমি শুনে এড়িয়ে গিয়েছি কারণ আমি চাই নি তুই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়িস।আজ আবার ওরা তোকে বিরক্ত করছে।ওদের সাহস হয় কিভাবে তোকে বিরক্ত করার।তোকে বিরক্ত করেছে নড়াইল জেলায় এমন সাহস কার আছে।উনাকে দেখে আমার নিজের ই ভয় লাগছে। আমাকে বললেন তোরা কোচিং এ যা আমি দেখছি বাকিটা।আমি আর রিয়া কোচিং এ চলে আসলাম।বিহান ভাই থানায় ফোন দিয়ে একজন এস আই কে নিয়ে এলেন।বিহান ভাই এর কথা মেয়েদের সম্মান করতে হবে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করা যাবে না।এস আই হয়তো ছেলেটাকে কয়েক টা উত্তম মাধ্যম ভাল ভাবে দিয়ে তাদের মা বাবাকে ফোন করিয়ে এনে উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়লেন।
রিয়া আমাকে বলছে দিয়া বিহান ভাই কে দেখেছিস তোকে কিছু বললে কেমন অন্য জগতে চলে যান।বিহান ভাই কিন্তু একজন লয়াল মানুষ দিয়া।অনেক অনেস্ট উনি।উনার যে যোগ্যতা তাতে উনি চাইলে হাজার হাজার রিলেশন করতে পারেন।কিন্তু উনার জীবনে মেয়ে মানুষের কোনো ছায়া ই নেই তুই ছাড়া।রিয়ার কথা গুলো শুনতে ভীষণ ভাল লাগছে।ভালবাসার মানুষের নামে ভাল কিছু শুনতে কার না ভাল লাগে।
কোচিং শেষ করতেই বিভোর ভাই এর সাথে দেখা হলো আমাদের।রিয়া বিভোর ভাই কে দেখে আমাদের ক্লাসমেট নিয়াজ কে বলা শুরু করলো নিয়াজ তুই না অনেক দিন ধরে কফি খেতে চাস আমার সাথে আজ যাবি।
নিয়াজ অনেক দিন ধরেই রিয়াকে পছন্দ করে। নিয়াজ এক লাফ দিয়ে বললো সিওর রিয়া।তুই তো রাজি হতেই চাস না।
আমি রাজি ই ছিলাম
শুধু লজ্জায় বলতে পারতাম না এটাই।
বিভোর ভাই চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন।উনার ফিলিংস কি স্যাকা স্যাকা ভাব।
আমাদের সামনে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালেন বিভোর ভাই।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।