ভালোবাসি তোমায় | পর্ব – ২

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে হুর। মিসেস হেনা হুরকে খাবার সার্ভ করছেন। হুরের একটুও খাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু এখন না খেলে মিসেস হেনা উ’ল্টা’পা’ল্টা চিন্তা শুরু করবেন। এমনিতেই তাকে অনেক ক’ষ্টে বুঝিয়েছে হুর যে সে ঠিক আছে এখন।হুর জো’ড় করে খাওয়া শুরু করলো। যতো না খাচ্ছে তারচেয়ে বেশি নাড়ছে।
এমন সময় হুরের ভাই হৃদ এসে হাজির। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে গোসল করে এসেছে। সে এসেই তার বোনের পাশে বসে পড়লো। এক ঢোকে এক গ্লাস পানি শেষ করে তারপর হুরের দিকে তাকালো। হুরকে খাবার নাড়াচাড়া করতে দেখে হুরের চুল ধরে দিলো এক টান আর বলে উঠলো,
-“কিরে পাটকাঠি, তুই যেভাবে খাচ্ছিস সেভাবে খেলে তো এক বছরেও খাবার শেষ হবে না। তোর যা অবস্থা দেখছি আর দুইদিন পর তো তোকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। হালকা বাতাস হলেই উড়ে যাবি। তখন আমি জ্বা’লা’বো কাকে?”
এতকথা বলার পরও হৃদ দেখলো হুরের কোনো হেলদোল নেই। সে খাবার নেড়ে যাচ্ছে। হৃদ বুঝতে পারলো নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে। নাহলে অন্য দিন হলে হুর এতক্ষনে তার পিঠে দুই-চার ঘা’ লাগিয়ে দিতো।হুরের তো এইদিকে কোনো খেয়াল নেই। তার সকল ধ্যান যে ফারানের কাছে পড়ে আছে। হৃদ কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলো তার পূর্বেই মিসেস হেনা চি’ল্লি’য়ে উঠলেন,
-“সময় হয়েছে তাহলে তোর আসার। কতদিন বলেছি এতক্ষন খেলবি না। কিন্তু মহারাজ আমার কথা শুনলে তো। একবার ক্রিকেট খেলতে গেলে তো তার কোনো হুশ থাকে না। এখন আবার এইভাবে বসে আছে।৫ মিনিটের মধ্যে যদি তোকে ফ্রেস হতে না দেখি তাহলে আজকে একটা মা’র ও মাটিতে পড়বে না।”
হুরের দিকে নজর যেতেই বলে উঠলেন,
-“প্লেটে যেনো এক দানা খাবারও অবশিষ্ট না থাকে। এই মেয়েকে নিয়ে আমি পারিনা। খাওয়ার সময় যতো তাল’বাহানা। দুই ভাইবোন আমাকে জ্বা’লি’য়ে খেলো।”
মায়ের থ্রে’ট খেয়ে হৃদ তাড়াতাড়ি টেবিল থেকে উঠে পড়লো আর রুমে যেতে যেতে বিড়বিড় করতে লাগলো,
-“আম্মু মাঝে মাঝে হিন্দি সিরিয়ালের ভি’লে’ন দের মতো আচরণ করে কেনো বুঝি না।”
হুর মায়ের ব’কা খেয়ে কোনোরকম জলদি খাবার গিলে ফেলতে লাগলো। কোনোরকমে পুরোটা শেষ করে সে তার রুমে চলে গেলো।
————————————————————————-
ফারান একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে।তাকে নিজের খাবার নিজেই রান্না করে খেতে হয়। আজকে তার ভীষণ tired লাগছে। কিছু করতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু ক্ষুধাও যে লেগেছে। কিছুক্ষন শুয়ে থেকে ফারান উঠে বসলো। এখন তাকে কিছু একটা রান্না করে খেতে হবে। হুট করে তার মনে হলো আজ যদি তার মা থাকতো তাহলে তাকে এভাবে ক’ষ্ট করতে হতো না। অন্যান্য মায়েদের মতো তিনিও হয়তো ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করে নিজ হাতে খাইয়ে দিতো। এইসব কথা চিন্তা করে ফারানের চোঁখে জল চিকচিক করে উঠলো। কিন্তু পরোমুহূর্তে তা অ’গ্নি’রূ’প ধারণ করলো। ক্রো’ধ সংবরণ করতে করতে বলে উঠলো,
-“তাদের সবাইকে শা’স্তি পেতে হবে।ভয়া’নক শাস্তি।”
কথাটা বলে বাঁ’কা হাসি দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো ফারান। তাকে এখন জলদি কিছু রান্না করে খেয়ে একটা ঘুম দিতে হবে। রাতে তার একটা জরুরী কাজ আছে। তাই রাতে ঘুমাতে পারবেনা।
———————————————————————–
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো হৃদ তার বোনকে দেখে না। মনটা তার আকু’পাকু করছে বোনের কি হলো জানার জন্য। তাই পড়া শেষ করে আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না হৃদ। সোজা নিজের বোনের রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো বোন রুমে নেই। বুঝতে পারলো হুর বেলকনিতে। হুরকে রা’গানোর জন্য তার কাটা, ক্লিপ, চুরি এগুলো নিয়ে বেলকনিতে গেলো। গিয়ে দেখলো হুর মনম’রা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদ দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চুরি দিয়ে শব্দ করতে লাগলো। কিন্তু হুরের কোনো হেলদোল নেই। অথচ হৃদ হুরের জিনিস ধরলেই হুর পুরো বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলে।হৃদ সব রুমে রেখে পুনরায় বেলকনিতে আসলো। পিছন থেকে বোনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
-“কি হয়েছে তোর বলতো আপাই। সেই আসার পর থেকে দেখছি তুই উদাস হয়ে আছিস। একবার বল কার জন্য তোর মন খা’রাপ। আমি হৃদ ব্যাট দিয়ে তার মাথা ফা’টি’য়ে ফেলবো। আমার বোনকে ক’ষ্ট দেয়া।”
হুট করে জড়িয়ে ধরায় ভ’য় পেয়ে যায় হুর। কিন্তু পরোক্ষণে বুঝতে পারে হৃদ তাকে জড়িয়ে ধরেছে। হৃদের কথা শুনে ক’ষ্টের মাঝেও হেসে উঠে হুর। এই ছেলেটা তাকে সারাদিন জ্বা’লা’য়। কিন্তু যখনই দেখে তার বোনের মন খারাপ তখনই অ’স্থি’র হয়ে যায়। সারাক্ষণ বির’ক্ত করলেও হৃদ যে তাকে মারা’ত্মক ভালোবাসে এটা হুর জানে। তার বোন কে কেউ ক’ষ্ট দিলে সে স’হ্য করতে পারেনা।
প্রায় দুই বছর আগের ঘটনা।একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো হুরের পরিবার। হুর সুন্দরী হওয়ায় প্রায় সকলের নজর হুরের উপর থাকতো। সেই অনুষ্ঠানে হুরের কাজিন শিলা উপস্থিত ছিলো। সে হুরকে অনেক হিং’সা করতো। সেই অনুষ্ঠানে শিলা হুরকে অপ’মান করার জন্য লা’ত্থি দিয়ে ফেলে দিতে চায়। কিন্তু হৃদ দেখে নেওয়ায় সঠিক সময়ে হুরকে সরিয়ে নেয় এবং পরে কৌশলে শিলা কেই ফেলে দেয়। বেচারি ভিড়ের মাঝে বুঝতেও পারে নি কে তার লেহেঙ্গা পাড়া দিয়েছে।
পুরনো কথা মনে করে হেসে ফেললো হুর। ভাইটা তার একেবারে পা’গ’ল। হৃদ হুর কে ঝা’কা দিয়ে বললো,
-“কি হলো বল কি হয়েছে?”
হুর হৃদের দিকে ফিরে বলে উঠলো,
-“তেমন কিছুই না। দুইদিন বাবাই কে দেখি না তো তাই মন খারা’প। আর কিছুই না।”
হৃদ বলে উঠলো,
-“সত্যি তো?অন্য কোনো সমস্যা নেই তো?”
হুর মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলে উঠলো,
-“আরে নাহ পা’গ’ল। কোনো সমস্যা নেই। তুই এখনো জেগে কি করছিস, যা ঘুমাতে। সকালে আবার স্কুলেও তো যেতে হবে। জলদি ঘুমিয়ে পর।”
হৃদ বোনের গালে চুমু খেয়ে বললো,
-“মন খা’রাপ করিস না। বাবাই দুইদিন পরই চলে আসবে।”
আসলে হুরের বাবা বিজনেস এর কাজে ঢাকার বাইরে আছেন। তাই হুর বাবাই এর কথা বলে চালিয়ে দিলো। যদিও সে সত্যি তার বাবাই কে অনেক মিস করছে।হৃদ চলে গেলো ঘুমাতে। হুর অন্ধকার আকাশের দিকে পুনরায় তাকিয়ে রইলো। সে বারবার চিন্তা করছে ফারানের কথা চিন্তা করবেনা। কিন্তু সে যে ভুলতে পারছেনা।জীবনের প্রথম অনুভূতি তাকে প্র’চ’ন্ড পী’ড়া দিচ্ছে।
———————————————————————–
বদ্ধ রুমের দরজা খুলে কেউ একজন ভিতরে প্রবেশ করলো। মুহিব মাটিতে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। তার অবস্থা ভালো না। প্রচন্ড ট’র্চা’র করা হয়েছে তাকে। অচেনা লোকটা মুহিবের অবস্থা দেখে বাঁকা হাসি দিলো। মুহিবের সঙ্গী সাথীদের সে আগেই শু’ট করে মে’রে ফেলেছে। কিন্তু মুহিব কে তো সে যন্ত্র’ণাদায়ক মৃ’ত্যু উপহার দিবে।
মুহিবের সারা শরীরে পো’ড়া দাগ জ্বলজ্বল করছে। অচেনা ব্যক্তি টা তার শরীরের বিভিন্ন অংশ নৃ’শংস ভাবে গ’র’ম লোহা দিয়ে জ্বা’লিয়েছে।তার হাতে সবচেয়ে বেশি গ’রম লোহা লাগিয়েছে। তার জিহবা পুড়িয়ে দিয়েছে। গলাকা’টা মুরগির মতো কাত’রাতে কাত’রাতে বেহুঁশ হয়ে যায় মুহিব।
হুট করে শরীরে গ’রম পানি পড়ায় সমস্ত শরীর জ্ব’লে উঠলো মুহিবের।ব্যা’থায় গু’ঙি’য়ে উঠলো সে। নিভুনিভু চোঁখে সামনে তাকিয়ে বিকালের সেই ব্যক্তিকে দেখে অন্তরাত্মা কেঁ’পে উঠলো তার। লোকটা খুবই হিং’স্র। তার চোঁখের সামনে তার দলের সবাইকে মেরেছে এই সাই’কো টা। তাকে অনেক অত্যা’চার করেছে।ভ’য়ে শরীর কাঁ’পছে মুহিবের। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তারপরও মনে সাহস জুগিয়ে কোনোরকমে বলে উঠলো,
-“কে তুই? কেনো আমার সাথে এমন করছিস?চেহারা দেখা তোর।আমার বাপ যদি জানতে পারে যে তুই আমার সাথে এমন করেছিস তোকে জী’বিত ক’বর দিবে।”
জিহবা পু’ড়ে যাওয়ার কারণে কথাগুলো স্পষ্ট না হলেও অচেনা ব্যক্তি বুঝতে পারলো মুহিব কি বলছে। সে বাঁকা হাসি দিয়ে লোহাটা পুনরায় গ’রম করে আনলো। মুহিবের প্রাণপাখি যেনো যায় যায়।সে কিছু বলার পূর্বেই হুট করে লোকটা তার চোঁখে গর’ম লোহা ঢুকিয়ে দিলো।
মুহিব পা’গলের মতো ছট’ফট করতে করতে একসময় তার শরীর নি’স্তেজ প্রায় হয়ে আসলো।লোকটা হঠাৎ তার মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো,
-“মরা’র আগে তোকে মা’রার কারণ টা তো শুনে যা। যেই হাত দিয়ে তুই আমার হুরপরীকে ছুঁয়েছিস সেই হাত আমি ক্ষ’ত-বিক্ষ’ত করে দিয়েছি। যেই জিহবা দিয়ে বা’জে কথা বলেছিস সেই জিহবা জ্বা’লিয়ে দিলাম। যেই চোঁখ দিয়ে তার দিকে বা’জে নজরে তাকিয়েছিলি সেই চোঁখ গে’লে দিলাম। এবার তোর ম’রার পালা। তোকে এতো ক’ষ্টদায়ক মৃ’ত্যু দিতাম না। কিন্তু এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। আমার হুরপরীর ক্ষ’তি করার প্ল্যান করেছিলি তুই। আর দ্বিতীয় কারণ…”
কথাটা বলে মুহিবের কানে কিছু একটা ফিশফিশ করে বললো। মুহিবের চোঁখ বড় বড় হয়ে গেলো কথাগুলো শুনে। হঠাৎ মুহিবকে শু’ট করে দিলো লোকটা। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো মুহিব। লোকটা মুহিবের লা’শের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সময় এসে গেছে। সব পা’পীকে কঠিন শা’স্তি ভো’গ করতে হবে।”
লোকটার হিংস্র’তা দেখে তার লোকগুলো ভ’য়ে কাঁ’পতে লাগলো।
লোকটা তার লোকেদের লা’শটা ঠিক জায়গা মতো ফেলে দিয়ে আসতে বলে বেরিয়ে পড়লো। তার এখন আরেকটা জায়গায় যেতে হবে। সেখানে গেলে যদি সে একটু শান্তি খুঁজে পায়।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।