সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।সময় বহমান খরস্রোতার মতো।দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে একমাস।এই এক মাসে ইভা আর আরিয়ানের সম্পর্কের বেশ ভালোই উন্নতি হয়েছে।কারণ আমরা সবাই আরিয়ানকে অনেক বুঝিয়েছি যে ওও ইভার সাথেই ভালো থাকবে।তবে দিন শেষে আরিয়ান আমার জন্য একটু হলেও কষ্ট পায়।যতই হোক আমি ওর প্রথম ভালোবাসা বলে কথা।তবে ইভা আর আরিয়ানের সম্পর্ক এখন বেশ ডিপ হয়ে গেছে,যা দেখে আমরা সবাই খুব খুশি।আরিয়ানও আগের মতো মজা করে,হাসে।
আজ আমার আর আদিয়াতের এনগেজমেন্ট পার্টি।আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে আমার আপিরা।(বলে রাখি আজ আমার জীবনের বেশ স্পেশাল মানুষদের সাথে আপনাদের পরিচয় করাবো)
আমার চারজন আপি আমার জানের জান।ওরা আমার মামাতো বোন।আমার এনগেজমেন্ট পার্টির জন্যই ওরা এসেছে আমেরিকা থেকে।ওরা মূলত ওখানে স্টাডি করতেই গিয়েছিল।আমাকেও বলেছিল ওদের সাথে যেতে।কিন্তু আমি আমার মাতৃভূমি ছেড়ে কোথাও যেতে চাইনি।যাইহোক,আমার আপিরা হলো নোশিন,জারিন,বিন্দিয়া আর সাদিয়া।চারজনেই আমার জান।আজ আমাকে সবগুলো মিলিয়ে সাজিয়ে সাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলবে মনে হয়।
বিন্দিয়া:যাক বাবাহ,,,অবশেষে সাজানো শেষ হলো।
সাদিয়া:বারেহ,আমাদের বোনকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
নোশিন:হায়,,কারো নজর না লাগে আমার বোনুকে।
জারিন:ইশশশশ,এইদিকে আয় তো একটু কাজল দিয়ে দেই যাতে কারো নজর না লাগে।
আমি:উফফফফ,তোমরা থামো তো।(লজ্জা পেয়ে)
সাদিয়া:ওলে বাবালে,,আমাদের বোনুটা লজ্জা পাচ্ছে গো।
নিলয়:কে লজ্জা পাচ্ছে হ্যা?
আমরা সবাই একটা ছেলে কন্ঠস্বর পেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি নিলু ভাইয়ু আসছে।এইটা দেখেই আমি এক দৌড় দিয়ে গিয়ে ভাইয়ুকে জড়িয়ে ধরি।
আমি:ভাইয়ু ভাইয়ু ভাইয়ু,,,,,আই মিস ইউ আ লট।তুমি দেড়ি করে কেন আসলে বলো তো(কাঁদো কাঁদো ফেস করে)
নিলয়:আহারে বোনু আমার,মন খারাপ করো না সোনা।আসলে আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিল,যার জন্য আমাকে ইমিডিয়েটলি বাইরে যেতে হয়েছিল।স্যরি,,,(কান ধরে কিউট ফেস করে)
আমি:হুহহহ,,,আমি অনেক দয়ালু।তাই এবারের মতো মাফ করে দিলাম।
নিলয়:আচ্ছা বাবা,,,আর এমন ভুল হবে নাহ।
(নিলয়।আমার জানু।আমার একমাত্র পেয়ারের বড় ভাই।সম্পর্কে আমার খালাতো ভাই।তবে আমাদের সম্পর্কটা একদম বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো।আমরা সব সময় একসাথে থাকতাম আগে।এখন কর্ম ব্যস্তততার জন্য সব সময় দেখা না হলেও রেগুলার ফোনে কথা হয়।আমি ভাইয়ুকে নিলু বলে ডাকি।আমাদের সব বোনের সাথেই ভাইয়ুর খুব ভালো সম্পর্ক হলেও ভাইয়ুর কাছে আমিই ফাস্ট প্রায়োরিটি।)
আমাদের কথা বলা শেষে আমরা সবাই বেরিয়ে পরলাম আদিয়াতদের বাসার উদ্দেশ্যে।আমরা সবাই সেখানে পৌছে অবাক হয়ে গেলাম।কারণ খুব সুন্দর করে সব কিছু ডেকোরেট করা।একদম চোখ ধাঁধানো।আমার তো এই ডেকোরেশনটা খুব খুব ভালো লেগেছে।বলে রাখি আদিয়াতদের বাসা ডুপ্লেক্স।আমি এর আগে একবার এসেছিলাম,তখনই দেখেছি।আদিয়াতের বাবা এসে আমাদের সবাইকে ভেতরে নিয়ে গেলো।এক পর্যায়ে জানতে পারলাম এইসব কিছুর ডেকোরেট করেছে আরুশ।আমি ভাবছি আরুশ এতো কিছু জানে,বোঝে।বাট ওর মধ্যে কেমন একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।আমার চিন্তার মধ্যে এক ড্রাম পানি ঢেলে দিয়ে হাজির হলো আমার বন্ধুমহল।ওরা সবাই এসেই লেগে গেছে আমাকে পচাতে।এর মধ্যে আরিয়ানের একটু মন খারাপ হলেও ওও আমাকে আচ্ছা মতো পচাচ্ছে।সবগুলোই শয়তান।হুহহহহহহহ
আহিয়া:এই দেখ দেখ,,,ওইদিকে তাকা সবাই
আহিয়ার কথায় আমরা সবাই সিড়ির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।কারণ আদিয়াত আর আরুশ নামছে একসাথে।দুইটাকেই খুব সুন্দর লাগছে।কিন্তু কথা হলো,আমার ড্রেসের সাথে আরুশের ড্রেস একদম পার্ফেক্টভাবে ম্যাচ করেছে।যদিও আমার ড্রেস আদিয়াতদের বাসা থেকেই পাঠানো হয়েছে।
আরুশকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।আচ্ছা,ওকে এতো সুন্দর হতে কে বলেছে হ্যা।সব কয়টা ফাজিল মেয়ে আরুশের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।বট আদিয়াত,ওর দিকেও সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।লুচ্চি মেয়েগুলো এই দুইটাকে একদম চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে।
আজ আরুশ পরেছে ওয়াইট শার্ট।তার উপরে ব্ল্যাক কোর্ট।চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে রাখার পরেও কিছু অবাদ্ধ চুল উড়ে এসে কপালে পড়েছে।আর ওও সেগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ।পায়ে ব্ল্যাক সু।আজ আমি ভালো করে খেয়াল করলাম আরুশ দেখতে খুব সুন্দর।চোখগুলো ছোট ছোট,জোড়া ভ্রু জুগল।গোলাপি ঠোঁটে যেন কেউ লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছে।ফর্সা গায়ের রং।হাইট ৫ ফুট “১০” হবেই।সব মিলিয়ে একদম চকোলেট বয়।
অন্যদিকে আদিয়াতও বেশ ফর্সা।তবে আরুশের চেয়ে কম।আদিয়াতের চোখগুলো একটু বড় বড়।চুলগুলো সিল্কি।হাইট আরুশের মতোই হবে।
আজ আদিয়াত ব্লু জিন্স,ব্লু শার্ট,ব্ল্যাক কোর্ট পড়েছে।হাতে ওয়াইট কালার ওয়াচ।সব মিলিয়ে আরুশ আর আদিয়াত দুজনকেই সুন্দর লাগছে।
আদিয়াত:আমি আয়রাকে দেখে ওর দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারছিনা।কারণ আয়রাকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।আয়রা আজ একটা ব্ল্যাক কালার বারবি গাউন পরেছে।এক হাতে ব্ল্যাক কালার ওয়াচ।আরেক হাতে ওয়াইট কালার বেসলেট।মাথায় ব্ল্যাক কালার হিজাব খুব সুন্দর করে পড়া।চোখে আইলাইনারের সাথে কাজল পরা।আর ঠোঁটে পিংক কালার লিপস্টিক।একদম ব্ল্যাক কুইন লাগছে।
আমি আদিয়াতের দিকে তাকাতেই আমাদের দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।আমি লাজুক হেঁসে চোখ নামিয়ে নিলাম।আমি শিওর,আদিয়াতও হাসছে।আমার কেন জানি আজ কেমন লজ্জা লজ্জা ফিলিং হচ্ছে।ইশশশশশশশ,,,আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে আজ আমার আর আদিয়াতের এনগেজমেন্ট হবে।এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু হবে তা আমি কখনোই ভাবিনি।আমি ভাবতে ভাবতেই আদিয়াত আর আরুশ নিচে নেমে আসলো।তখন আদিয়াতের সাথে আমি কথা বলতে শুরু করলাম।
আমাদের সবার কথা বলার মাঝেই আবরার আংকেল মাইকে অ্যানাউনসমেন্ট করে বলল এখন আমার আর আদিয়াতের এনগেজমেন্ট হবে।এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই জোরে করতালি দিল।আমি আর আদিয়াত স্টেজে উঠে দারালাম।একটু পরেই আম্মু আর আদিয়াতের আম্মু এসে আমার আর আদিয়াতের হাতে আংটি দিয়ে দিল।আদিয়াত যেই না আমার হাতে আংটি পরাতে যাবে অমনি সব লাইট অফ হয়ে গেল।আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম।কারন,এখানে তো কারেন্ট যাওয়ার কথা না।আমার এতসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করেই কেউ আমার হাতে আংটি পরিয়ে দিল।আর আমার হাত ধরে নিজের হাতেও আংটিটা পরে নিল।তখনি সব আলো জ্বলে উঠল।আর আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারন,আমার সামনে আদিয়াত নয় বরং আরুশ দারিয়ে আছে।আর আদিয়াত তার পাশেই দারিয়ে তবে ওকে কয়েকজন ধরে আছে।এরা খুব সম্ভবত আরুশের বন্ধু।
আমরা সবাই অবাক হয়ে আরুশ আর আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি।কি হচ্ছে এইসব?আদিয়াতের জায়গাতে আরুশ কেন?
আমি:কি হচ্ছে এইসব?আরুশ আপনি এখানে কেন?আর আদিয়াত তুমি ই বা ওখানে কেন?তোমাকে সবাই এভাবে ধরে আছে কেন?আমাকে আংটি টা কে পরিয়েছে।জবাব দাও(চিল্লিয়ে)
আরুশ:এক মিনিট।আমি বলছি পুরো ঘটনা।
এই বলে আরুশ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো…..
আরুশ:আচ্ছা আয়রা তোমার মনে আছে,আজ থেকে আট বছর আগে তোমার একটা ফ্রেন্ড তিয়াশার বাসায় ওর বার্থডে তে গেছিলে?
আমি:তিয়াশা?আমাদের সেই ফ্রেন্ড তিয়াশা যে অনেক বছর আগে ওর বাবা-মায়ের সাথে চট্টগ্রামে চলে গিয়েছিলো?
তিয়াশা:হুম।আমিই সেই তিয়াশা আয়ু।
আমরা সবাই কারো একজনের গলার আওয়াজ পেয়ে সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।কোলে একটা দুই/তিন মাস বয়সের বাচ্চা।
আমি:তিয়াশা?তুই?তুই এখানে কি করে?আর তোর কোলে এই বাচ্চাটা কে?তুই বিয়ে করেছিস?
তিয়াশা:ওরে বোন আমার।এতোগুলো প্রশ্ন কেউ একসাথে করে?
আমি:আমি করি।এখন উত্তর দে।
তিয়াশা:হুম আমিই সেই তিয়াশা।আর আমি এখানে কারণ আরুশ আমার মামাতো ভাই।আর এই বাচ্চাটা আমার।
মি.আবরার:কি বলছিস তুই এইসব তিয়াশা?তোর বাচ্চা মানে?তোর তো বিয়েই হয়নি।
আরুশ:এক মিনিট ড্যাড।বাকিটা আমি বলছি।
এরপর আরুশ যা বললো তা শুনে আমরা সবাই হতবাক হয়ে গেলাম।

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।