আরুশ:প্রথমেই বলি আমি আয়রাকে আজ থেকে আারো আট বছর আগে থেকে চিনি।ওকে প্রথমবার আমি তিয়াশাদের বাসায় তিয়াশার জন্মদিনের পার্টিতে দেখি।তখন আমি নাইনে পড়ি।আর আয়রা পড়ে ফোরে।ওকে দেখে আমি প্রথম কোনো মেয়ের ওপর ক্রাশ খাই।আয়রাকে সেদিন একটা রেড ডল লাগছিলো।রেড কালার ফ্রক,মাথায় খুব সুন্দর করে একটা পনিটেইল করা।ঠোঁটে রেড লিপস্টিক।পায়ে পাম্পসু।আর হাতে একটা ফুলের তোরা।আমি যেন ওকে দেখে একটা ঘোরে চলে যায়।যেখানে স্কুল,কোচিং,প্রাইভেট,সব জায়গায় আমি ক্রাশ বয় নামে পরিচিত সেখানে আমি একটা পিচ্চি মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়।এইটা ভেবেই আমি মনে মনে হাসলাম।আমি আয়রাকে দেখার পরপরই ওর সাথে ভাব জমাতে যাই।কিন্তু ওকে ঘিরে ওর সব বন্ধুরা ছিল।যার জন্য ওকে একা পাওয়া মুশকিল ছিল।তবুও এক সময় ওকে আমি একা পাই।তখনি ওর সাথে আমি প্রথমবার কথা বলি।ওর সাথে কথা বলার সময় আমি আবারো ক্রাশ খায় ওর ভয়েসের উপরে।এতো মিষ্টি কন্ঠ কি করে একটা মেয়ের হতে পারে আমি তখন সেইটায় ভাবছিলাম।তবে আয়রা বেশ মিশুকে একটা মেয়ে হওয়ায় ওর সাথে আমি সেদিনই বন্ধুত্ব করে নেই।ওর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে আমি ওদের বাসার নাম্বার নেই যাতে ওর সাথে পরবর্তীতে কথা বলতে পারি।এরপর আস্তে আস্তে এভাবেই আমাদের কথা চলতে থাকে।একটা সময় আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠি।আয়রা সব সময় ওর বন্ধুদের কথা আমাকে বলতো।ওর সব কথা আমার সাথে শেয়ার করতো।একদিন ওকে আমি বলি যে ওকে আমি “রোজ কুইন” বলে ডাকবো।ওও তখন বলে,কেন?এই নামে ডাকবে কেন?
তখন আমি বলি,কারণ তুমি গোলাপের মতোই সুন্দর।আর তুমি আমার মনের রাণী।তাই তোমার নাম “রোজ কুইন”
এইটা শুনে ওও বুঝতে পারেনি যে আমার রাণী বলতে আমি কি বুঝিয়েছি।তাই ওও আমাকে বলে যে,আমিও তাহলে তোমাকে “মি.পারফেক্ট” বলে ডাকবো।কারণ তুমি আমার কাছে একদম পার্ফেক্ট একজন মানুষ।
এই থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাড় হয়।কিন্তু হঠাৎই তিয়াশারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শিফ্ট হয় যার কারণে আমার আর আয়রার দেখা হওয়াটা কমে যায়।আয়রা আমাকে ওর খুব ভালো বন্ধু মনে করতো।কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম ততদিনে।এই কথাটা শুধুমাত্র তিয়াশা জানতো।এক সময় আমি যখন এসএসসি এক্সাম দেয় তখন ড্যাড আমাকে হায়ার স্টাডি করার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।সেই সময় আয়রা সিক্সে পড়ে।যখন আমি ওকে বলি যে আমাকে কয়েক বছরের জন্য বিদেশে যেতে হবে সেদিন আয়রা আমাকে প্রথমবারের মতো জড়িয়ে ধরে প্রচুর কাঁদে।ওর কান্না দেখে আমিও যেতে চাইছিলাম নাহ ওকে ছেড়ে কিন্তু আমাকে যেতেই হলো।তখন আমি আদিয়াতকে জানায় আয়রার ব্যাপারে।আর ওর উপরেই আয়রাকে দেখে রাখার দায়িত্ব দিয়ে পাড়ি জমায় সুদুর লন্ডনে।
কিন্তু আদিয়াত আমার নিজের ভাই হয়েই আমার সাথে সব থেকে বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করে।আদিয়াত সব সময় আমাকে হিংসা করতো।কারণ আমি সব সময় ওর থেকে এগিয়ে থাকতাম হোক সেটা লেখা-পড়া বা সৌন্দর্যের দিক থেকে।মা-বাবা আমাদের সমান সমান ভালোবাসলেও আদিয়াত ভাবতো মা-বাবা আমাকেই বেশি ভালোবাসে।কারণ আমাকে ওনারা বিদেশে পাঠিয়েছে হায়ার স্টাডির জন্য।কিন্তু ওকে পাঠায়নি।আসলে মম আর ড্যাড দুই সন্তানকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা বিধায় শুধু আমাকে পাঠায় বিদেশে।কিন্তু এতেও আদিয়াতের হিংসা হয়েছিল।
তাই ওর নজর ছিল আয়রার উপরে।তবে সেই সময় যখন তিয়াশা নাইনে পড়ে তখন আদিয়াত আর তিয়াশা রিলেশনে জড়ায়।আমাকে আদিয়াত এইটা বলেনি।তবে তিয়াশা আর আমি ভাই বোনের আগে বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ায় তিয়াশা আমাকে সবকিছুই জানাতো।এক পর্যায়ে আদিয়াত আর তিয়াশা পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে নেয়।এই কথা শুনে আমি খুব রেগে যায় ওদের উপরে।কিন্তু পরে তিয়াশা আমাকে জানায় যে ওর বিয়ে ফুপা ওনার বিজনেস পার্টনারের ছেলের সাথে তিয়াশার বিয়ে দিতে চেয়েছিল তাই ওরা এমন একটা কাজ করেছে।এইসব শুনেও আমার রাগ কমেনি।তার পরেও আমি কাউকে কিছু জানায়নি।আর আদিয়াতও এই ব্যাপারটা আমার কাছে গোপন করে।ওও জানতোনা যে তিয়াশা আমাকে আগেই সবকিছু জানিয়েছে।তাই ওও নিশ্চিন্ত মনে আয়রাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করে।যেহেতু আমি লন্ডনে যাওয়ার পরে আর আয়রার সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি কারণ আমি এমনিতেই ওর প্রতি দুর্বল ছিলাম।তার উপরে আবার আমি যদি ওর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতাম তাহলে আমার পক্ষে লন্ডনে থাকা সম্ভব হতো না।তাই তো আমি আয়রার দায়িত্ব আদিাতের উপরে দিয়েছিলাম।
আমি আদিয়াতের এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।কিন্তু হঠাৎই একদিন আমি জানতে পারি যে আয়রাকে আদিয়াত বিয়ে করার যড়যন্ত্র করছে।এদিকে তিয়াশা আমাকে জানায় যে ওও প্রেগন্যান্ট।ওও খুব ভয় পাচ্ছে কারণ,ওদের বিয়ের ব্যাপারে এখনো কেউ কিছুই জানেনা।তখন আমি ওকে বলি টেনশন না করতে।এই ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করবো।এরপরেই আমি বিডিতে ফিরে আসি।আর ফুপিকে বলে তিয়াশাকে দূরের একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেয়।আর ওখানেই ওকে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে ওর দেখাশোনা করার জন্য একজন মেইড রেখে দেই।তখনো আদিয়াত জানেনা যে আমি ওর আর তিয়াশার ব্যাপারে সবকিছুই জানি।আমি তিয়াশাকে আগে থেকেই মানা করেছিলাম যাতে আদিয়াতকে কোনোকিছু না জানায়।এভাবেই দিনগুলো কাটতে থাকে।
আর আমি আয়রাকে ফুল গাইড দিয়ে রাখতাম।আয়রাকে কেউ প্রপোজ করলেই তার অবস্থা আমি বারোটা বাজিয়ে দিতাম।কিন্তু আয়রা কখনো জানতোই না যে আমি ওকে আড়াল থেকে ফলো করি।
এর মধ্যেই একদিন একটা ঘড়ির শো-রুমে ওর সাথে আমার দেখা হয়ে যায়।সেদিন অনেক কষ্টে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করি আয়রার সাথে কথা না বলার জন্য।এর পরেই ওকে আরো নজরে রাখার জন্য আংকেলকে বলে ওদের ভার্সিটিতে প্রফেসর হয়ে প্রবেশ করি।ততদিনে আদিয়াত আয়রাকে প্রপোজ করে।
আর এদিকে তিয়াশার ও ডেলিভারি হয়।ওই সময়ে আদিয়াত তিয়াশার সাথেই ছিলো।তাই আমি দূর থেকেই তিয়াশার খেয়াল রাখতাম।কিন্তু তিয়াশা তখনো জানত না যে তার বর কত বড় ষড়যন্ত্র করছে।এরপর আমিই ওকে সবটা জানায়।তখন ওও খুব ভেংগে পরেছিল।তাই আমি ওকে আমার প্ল্যানে সামিল করি।
আর আজ এজন্যই আয়রার সাথে আদিয়াতের নয় বরং আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে।
এই বলে আরুশ থামলো।তখনই বিকট আওয়াজে উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠলো।কারণ,,,,,,,

চলবে???

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।