আনন্দে ঠোঁট কাপছে আমার,স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি, মুখে কোনো ভাষা নেই।পৃথিবীর সব আনন্দ ভর করেছে নিজের ভেতরে।সময় টা যদি ফ্রেম বন্দী করে রাখা যেতো তাহলে এর থেকে উত্তম সময় আমার জন্য আর এই পৃথিবীতে হতোই না।আয়নায় তাকিয়ে দেখছি আমার পেছেন দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন ছেলেটিকে।যার এক হাত আমার ঘাড়ে অন্য হাতের আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁট স্লাইড করছে।এক নজরে চোখে মুখে মিষ্টতা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ইস কি লজ্জা!না পারছি চোখ সরাতে না পারছি চোখ তুলতে।এই মানুষ টা এতটা নির্লজ্জ কেনো?কোথায় সেই অগ্নি চোখ, যে চোখে বরাবর রাগ ই দেখেছি,হঠাত সেই অগ্নিরূপধারণ করা চোখ দুটো শীতল হয়ে গিয়েছে,চোখ দুটো ভীষণ শান্ত হয়ে আছে।প্রবাহমান নদীর শান্ত ঢেউ উনার চোখে।এই মানুষ টাকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে।জীবনে অনেক গহনা ই পরেছি কিন্তু আজকের মতো এত সুন্দর কখনো লাগে নি আমাকে।আমি কি সত্যি এতই সুন্দর। কখনো নিজেকে এইভাবে দেখা হয় নি আমার।উনি আমাকে দেখালেন আমার সৌন্দর্য আমাকে।
–ভাবনায় বিভোর হয়েই প্রশ্ন করলাম,বিহান ভাই আমি কি সত্যি এতটাই সুন্দর। আমাকে এত সুন্দর লাগছে কেনো?
–উনি কানের সাথে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,যে নারীকে বিহান নিজে হাতে সাজিয়েছে, যে নারীর শরীরে বিহানের ছোঁয়া আছে যে নারীকে তো সুন্দর লাগতেই হবে।ওই চোখে বিহানের চোখের লেন্স লাগিয়ে দিয়েছি ভাবনার দেশে প্রবেশ করে তাইতো নিজেকে এতটা সুন্দর লাগছে।
–এই ভারী কঠিন কথার মানে কি বিহান ভাই।
–এই সহজ কথাটাও যে বোঝে না তাকে বোঝানোর মতো কঠিন এই পৃথিবীতে আর কোনো কিছু নেই।আয়নার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মহোয়ৌসী নারীটি বিহানের চোখে শ্রেষ্ঠ সুন্দর নারী।
উনাকে নিয়ে নিজের নিজস্ব ভাবনার রাজ্য প্রবেশ করে মনে হচ্ছে এই মানুষ টার মনের উপর আমি ছাড়া আর কারো রাজত্ব চলবে না।এই মানুষ টা কি সত্যি আমায় বলছে এসব।নাকি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন।উনার মুখের এই কথা গুলো শুনতে যে আমার ভীষণ ভাল লাগে।হঠাত আমার সব আনন্দ উধাও হয়ে গেলো, মনে পড়লো গতরাতের কথা।গত রাতে উনি ভীষণ কাছাকাছি এসেও বলেছিলেন উনি যা করেছেন সব ই তার প্রেমিকার জন্য।আমাকে উনার প্রেমিকা ভেবেই ওসব করেছিলেন।কেনো আমাদের সুন্দর মুহুর্তের মাঝে বার বার উনার প্রেমিকাকে টেনে আনেন।এখনি হয়তো বলবেন,সরি দিয়া আমি আমার শ্বশুরের মেয়ে ভেবে তোকে এসব বলেছি।বার বার উনার প্রেমের প্রাকটিস আমাকে দিয়েই করেন উনি।উনি কি বোঝেন না একটা মেয়েকে এত সুন্দর প্রেমের কথা বললে সেই মেয়ে তাকে ভালবাসতে বাধ্য হয়।উনি কি বোঝেন না এই কিশোরীর মনে উনার জন্য প্রেমের উথাল পাথাল ঢেউ ওঠে।
–উনাকে ধাক্কা মেরে কম্বলের মাঝে গিয়ে বললাম,আপনার প্রাক্টিস শেষ বিহান ভাই?
–ভ্রু উঁচিয়ে বললেন কিসের প্রাক্টিস দিয়া?
–গতরাতে বিশ্রি কাজ করে বলেছিলেন যে,শ্বশুরের মেয়েকে ভেবেই ওসব করেছেন এখন ও কি তাই বলবেন।
–উনি হাত চুলের মাঝে চালিয়ে দিয়ে বললেন,আমি যা করি সব শ্বশুরের মেয়ের সাথেই করি।
–হাতের রিং খুলতে খুলতে বললাম,এই নিন আপনার শ্বশুরের মেয়ের হাতের রিং।এসব আমাকে পরিয়েছেন কিজন্য।
–উনি কপালের চামড়া কয়েক টা ভাজ ফেলে বললেন,খবর দার দিয়া খুলবি না।খুললে কিন্তু মার খাবি আমার হাতে।
–অন্যর জিনিস আমার হাতে রাখবো কেনো?আপনি নেক্সট টাইম আপনার এসব প্রেম আলাপ আমার সাথে প্রাক্টিস করতে আসবেন না।
–বাবাহ!এত জেলাসি।হুয়াই দিয়া?তুই কি আমার প্রেমে পড়েছিস নাকি।
–প্রেমে পড়তে যাবো কোন দুঃখে।
–বাই এনি চান্স আবার প্রেমে পড়িস নি তো।পড়তেও পারিস।না হলে এত জেলাসি কেনো দিয়া?
–আমি কেনো জেলাস হতে যাবো বিহান ভাই? উদ্ভট কথা বললেন না এটা।
–তাহলে রিং খুলছিস কেনো?রিং টা কোথাও রাখলে হারিয়ে যেতে পারে।তাই তোর হাতেই রাখ।পরে সে আসলে না হয় দিয়ে দিস।তোর হাতে আমানত হিসাবে থাক।
–আমি কি জন্য আপনার প্রেমিকার রিং আমার হাতে রাখতে যাবো। আমাকে কি আপনার চাকর পেয়েছেন নাকি।
–রিং খুললে বুঝবো তুই জেলাস আর আমাকে ভালবাসিস।
— প্রয়োজনে এই রিং পরে থাকবো তবুও আপনাকে ভাল টাল বাসতে যাবো না শুনেছেন আপনি?
–হ্যাঁ মালা খুললেও কিন্তু ওইটায় বুঝে নিবো।
–এই মালা মারুফা খালা গেঁথে দিয়েছে তাইনা।
–এই দেখ হাতে সুচ ফুটেছে কয়েকবার এই মালা বানাতে গিয়ে।জীবনে প্রথম সুঁচের কাজ করলাম বোঝ তাহলে তাকে কত ভালবাসি।বোঝেনা সে বোঝেনা।
–আপনার তার ও কি শিউলি ফুল ভীষণ প্রিয়?
–হুম তোর কি মনে হয়।এই শিউলি ফুলের গাছ এমনি এমনি লাগিয়েছি সব ই তার জন্য।
–কেনো আপনি যে বলেছিলেন আমার জন্য।
–বলেছিলাম বুঝি।
–হ্যাঁ বলেছিলেন আমার মনে আছে।
–তুই ছোট মানুষ কেঁদে ফেলবি তাই তোকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম।
–রাগে আর কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করলো না।
আমি ঘুমিয়ে গেলাম আর উনি আমার পাশেই কম্বলের মাঝে পা দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলেন।
রাগে মনে চাচ্ছে উনাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই।কে উনার এই প্রেমিকা, আমি তাকে এইবার খুজে বের করবো।বার বার এই অসহ্যকর নাম আর নেওয়া যাচ্ছে না।ঘুরে ঘুরে এই বিরক্টিকর প্রেম আলাপ জাস্ট অসহ্য লাগছে।
_________________________________
–আসসালামু আলাইকুম বিয়াইনসাব?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।
–কেমন আছেন বিয়াইনসাব।
–ভালো।আপনি?
–বুকে বড় জ্বালা।
–হোয়াট আপনি কি নড়াইল জেলার ফেরদৌস হয়েছেন বিভোর ভাই।আমি ভাবলাম খুব আদব কায়দা শিখেছেন।সকাল সকাল সালাম দিচ্ছেন খুব ভদ্র হয়ে গিয়েছেন।
–বোনের ক্লাসমেট কাজিন,এখন আবার বিয়াইনসাব অভদ্র ছিলাম কবে শুনি।
–অভদ্র ছিলেন না এটা হয়তো ঠিক তবে একটা লেজের অভাবে সম্পূর্ণ বাদর হন নি আপনি?
–কেনো বিয়াইনসাহেবা কি করেছি আমি।
–তা আপনার বুকে কিসের এত জ্বালা বিভোর ভাই।
–শীতকালে একটা বউ না থাকার জ্বালা।বলছি রিয়া যতদিন আমার বিয়ে না হয় ততদিন আমার বউ হয়ে থাকবা।প্রমিজ করছি আমি কিছুই করবো না,শুধু একটু রাতে হালকা রোমান্স করবো।
–আপনি এত বড় অসভ্য কিজন্য বিভোর ভাই।সব সময় আমাকে এইসব ফালতু কথা বলেন।আপনার আম্মুকে যদি না বলেছি আমার নাম রিয়া নয়।
–বিভা আপু এগিয়ে গিয়ে বললো,’কি হয়েছে রিয়া?’
–বিভা আপু আর বলো না,দিয়ার শীতের কাপড় দিতে এসছি।এখন বিভোর ভাই বলছেন আপনাদের জানাতে সে নাকি বিয়ে করবে।মামা আর মামিকে গালি গালাজ করছে,ছেলে এত বড় হয়েছে বিয়ে করাচ্ছে না।তাদের কি চোখে যায় না যে তাদের ছেলে বড় হয়েছে।আমাকে কি বাবা তার মতো বয়সে বিয়ে করাবে নাকি।
–মামি পেছন থেকে এসে বললেন,বিভোর তুমি বিয়ের জন্য আমাদের গালি দিচ্ছো।রিয়া যা বলছে তা কি সত্য।
–হ্যাঁ আম্মু এই রিয়াটা মিথ্যা বলছে।রিয়া তোমার এই হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে ভীষণ লাইক করে বুঝলে আম্মু।সে তোমার বৌমা হতে চাইছে।এইজন্য তো আমাকে বিয়ে করানোর জন্য তোমাকে তাড়া দিচ্ছে তুমি কি বুঝো না আম্মু।
–বিভা আপু বললো,রিয়া তোর মতো বাদর কে বিয়ে করবে বিভোর এ আমি বিশ্বাস করিনা।
–বিলিভ মি! আপু।আমি একদম ই সত্য বলছি।ওই যে বিহান দাঁড়িয়ে ওর কাছেই শুনে দেখো।এই বিহান নিচে নেমে আয়, আমার বিরুদ্ধে বললে বিহানের আজ খবর আছে।
এতক্ষণ উপরে দাঁড়িয়ে তাদের এই প্রচুর হাসির ঝগড়া শুনছিলাম আমি আর বিহান ভাই।কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠে খেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছি। আর এরই মাঝে নিচে ওদের ঝগড়া শুরু।আমরা দুজনেই নিচে নেমে গেলাম।