লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ২০

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। অনেক্ষন কাঁদার পর সে নিচে আসল।

সবাই খুব মজা করছে কেউ মেহেদি পড়তে ব্যস্ত অনেকেই আবার নাচ প্র‍্যাকটিস করছে। সুমি বারবার মেঘলাকে বলল মেহেদি পরতে কিন্তু মেঘলার এসব ভাল লাগছে না।
সে ঘরের এক কোণে বসে আছে কিন্তু ইরার সেটাও সহ্য হল না। 
ইরাঃ এখানে বসে কি করছো?
মেঘলাঃ সবাইকে দেখছিলাম…আর কিছুনা।
ইরাঃ মানুষকে দেখার জন্য তোমাকে এ বাড়িতে রাখা হয়েছে? কাজগুলি কে করবে?
মেঘলাঃ অনুষ্টানের কাজের জন্য তো ইভেন্ট ম্যানিজমেন্টের লোক আনা হয়েছে।
ইরাঃ আমি সেসব কাজের কথা বলি নি এসো আমার সাথে।
মেঘলা ইরার সাথে গেল। 
ইরা নিজের এক গাঁদা কাপড় বের করে দিয়ে বলল সেগুলি ধুয়ে দিতে।
মেঘলা মুখ ফসকে বলে ফেলল আমি এসব করলে আকাশ ভাইয়া রাগ করবেন…এর আগে মেঘলা কাজ করলে আকাশ সবসময় রাগ করত তাই মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলল।
ইরা হেসে বলল শোনো মেঘলা তুমি এখনো কল্পনার জগতে আছো সেখান থেকে বেরিয়ে এসো। এতদিন আমি এখানে ছিলাম না তাই আকাশ এমন করেছে কিন্তু এখন আমি চলে এসেছি আর তুমি আকাশের বউ এর কাজ করে দিচ্ছো আকাশ রাগ তো দূর বরং খুশি হবে। এতদিন যা হয়েছে ভুলে যাও এবার থেকে আকাশ শুধু ইরার কথা ভাব্বে।
কাপড় গুলি তাড়াতাড়ি কেচে শুকাতে দাও আর একটা কথা এরপর আমার মুখের উপড় কথা বললে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিব।
কথাগুলি বলে ইরা বাইরে চলে গেল
মেঘলা ভাবছে এই ভর সন্ধ্যা বেলা কাপড় ধোয়ার কি দরকার ছিল কিন্তু মালিক পক্ষ যখন বলেছে করতে তো হবেই। মেঘলা কাপড় কাচতে লাগল কাপড় ধুতে ধুতে রাত হয়ে গেছে।
মেঘলা যখন নিচে নামল সবাই খেতে বসেছে। সুমি মেঘলাকে খেতে ডাকল মেঘলার মন খারাপ তাই খেল না।
রাত ৯ বাজে আকাশ আর কয়েকটা ছেলে অনেকগুলি শাড়ি আর অর্নামেন্টস নিয়ে আসল। সব কাজিনরা খুশিতে গিয়ে যে যার  মত জিনিস নিচ্ছে। হলুদে সবাই সেম রং এর শাড়ি পড়বে তাই এ ব্যবস্থা।
আকাশ পাশে বসে ফোন টিপছে। 
মেঘলা মন খারাপ করে একটু দাঁড়িয়ে আছে ইচ্ছে করছে আকাশ কে ইচ্ছামত মারতে। কিন্তু এখানে তো সবাই আছে। তাই মারা তো দূর বকা দেওয়াও সম্ভব না।
আকাশ একবারো মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে না.. ফোনে গেম খেলছে।
মেঘলাঃ ইরা আপু তো সত্যিই বলেছে আকাশ তো সবাইকে সব কিনে দিল কই আমাকে তো একবারো বলল না শাড়ি নিতে( মনে মনে) 
হটাৎ সুমির চোখ পড়ল মেঘলার দিকে।
সুমিঃ আরে মেঘলা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন এসো শাড়ি নাও পড়ে তো আর পাবে না।
মেঘলার ইচ্ছে নেই শাড়ি নেওয়ার কিন্তু যার বিয়ে সে সবার সামনে বলছে না নিলে খারাপ দেখায় তাই মেঘলা এগিয়ে গেল সুমির হাত থেকে শাড়ি নেওয়ার জন্য মেঘলা হাত বাড়াতেই পাশ থেকে আকাশ বলল ওকে শাড়ি দিচ্ছিস কেন ওর জন্য তো শাড়ি আনি নি।
কথাটা শুনে যতটা কষ্ট পাওয়া যায় ততটাই পেল মেঘলা। কিন্তু কষ্টের চেয়েও লজ্জা পেল বেশি কারন আকাশের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করল।
মেঘলা শাড়িটা ছেড়ে দিল।
ইরাঃ সুমি আপু তুমিও না… কখনো শুনেছো কাজের মেয়ে আর বাড়ির মেয়েরা সেইম কাপড় পড়ে? তোমরা কেন যে ওকে এত মাথায় তুলো বুঝি না। কেন ভুলে যাও মেঘলা এই বাড়ির কাজের মেয়ে। আকাশ একদম ঠিক কাজ করেছে ওর জন্য সেম কাপড় আনলে আমাদের অপমান করা হত।
আর মেঘলা তুমিও সুমি আপু বলার সাথে সাথেই নির্লজ্জের মত এসে শাড়ি নেওয়া শুরু করে দিয়েছো। লজ্জা বলতে নেই তাই না?
যাই হোক শাড়িটা তুমি ধরেছো এটা আর কে পড়বে? আকাশ থাক অনেক শাড়ি আছে তো একটা দিয়ে দেই।
লজ্জায় মেঘলার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
আকাশ এবার ফোন টা পকেটে রেখে উঠে দাঁড়াল। 
আকাশঃ ইরা কোন শো তে কখনো দেখেছো শোজ টপার, ভায়া মডেলের মত একই রকম কাপড় পড়ে।
ইরাঃ মানে কি?
আকাশঃ মানে টা হল মেইন মডেল কখনো পিছনের সাড়ির মডেলদের মত ড্রেস  পড়ে না।  কোন মুভির সং বা গ্রুপ পারফপারফরম্যান্স এ লক্ষ্য করে দেখো মেইন মডেল সবার চেয়ে এক্সক্লুসিভ ড্রেসটাই পড়ে এক্ষেত্রেও তাই মেঘলার বয়ফ্রেন্ড চায় না মেঘলা অন্যদের মত কোন অর্ডিনারি ড্রেস পড়ুক। আর শাড়ি তো অবশ্যই না। কারন ও শাড়ি সামলে রাখতে পারে পেট দেখা যায় তাই ও শাড়ি শুধু তার হজবেন্ডের সামনেই পড়বে আর কারো সামনে না।
আর অই যে দেখছো সুমির জন্য করা শপিং ওখানে মেঘলার জন্য ৩ টা এক্সক্লুসিভ লেহেংগা আছে যেগুলি ডিজাইনার দিয়ে শুধুমাত্র মেঘলার জন্যই তৈরি করা হয়েছে মার্কেটে তার ২য় পিস পাওয়া যাবে না। ১ টা হলুদের জন্য ১ টা বিয়ের ১ টা রিসিপশনের। আশা করছি বোঝতে পেড়েছি মেঘলা তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে কতটা স্পেশাল  তাই এর পর থেজে ওকে কথা বলার আগে ১বার নয় ২ বার নয় ১০ বার ভেবে নিও।
মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের কথা শুনছে।
লজ্জায় ইরার মাথা নিচু হয়ে গেল….সে ভাবতেও পাড়েনি আকাশ এভাবে রিয়েক্ট করবে।
আকাশ চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবার পিছন ঘুরে বলল ওহ সুমি আপু তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম তুমি আজ আমার ঘরে ঘুমিও।
সুমিঃ কি বলছিস আকাশ তর ঘরে তো পারমিশন ছাড়া কারোর ঢুকাই নিষেধ আংকেল আন্টি পর্যন্ত ঢুকার আগে পারমিশন নেয় আর তুই বলছিস সেই ঘরে ঘুমাতে কিভাবে সম্ভব এটা?
আকাশঃ হুম আমিই বলছি তখন শুনলে না বল্লাম মেঘলার ঘরে ইরা ঘুমাবে। আসলে আজ যদি মেঘলা নিজের ঘরে ঘুমায় তাহলে ওর কারো না কারো সাথে রুম শেয়ার করে ঘুমাতে হবে। আর মাঝরাতে সেই অন্যজনের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে সে দরজা খোলে বাইরে যেতেই পারে আর ঘুমের মধ্যে মেঘলার পড়নের কাপড় এলোমেলো হয়ে থাকতে পারে তখন  যদি সেদিক দিয়ে কোন ছেলে যায় মেঘলাকে এই অবস্থায় দেখতেই পারে এমন ঘটবেই বলছি না তবুও ঘটতেও তো পাড়ে তাই এই ইন্সিকিউরিটি টা মেঘলার বয়ফ্রেন্ড নিতে চায় না।
তাই মেঘলা আমার ঘরে ঘুমাবে আর আমারো থাকার কোন জায়গা নেই তাই আমিও অই ঘরেই সোফায় ঘুমাব কিন্তু একটা ছেলে একটা মেয়ে তো এক ঘরে থাকতে পারে না  তাইনা? লোকে খারাপ বলবে তাই তুমি ওর সাথে ঘুমাবে।
সুমিঃ বাহ বাহ আমাদের মেঘলার কপাল তো দেখি একদম সোনায় সোহাগা ওর বয়ফ্রেন্ড কত ভাবে ওর জন্য। সুমি ইরার দিকে তাকিয়ে ইরাকে ইংগিত করে বলল মেঘলা শোনো এই বিএফকে সামলে রেখো দেখো যেন কারোর যেন নজর না পড়ে।
মেঘলা আকাশের কথায় খুব অবাক হয়ে গেল।
উনি আমার কথা এত ভাবেন….!! কিন্তু আকাশ ইরার বিয়ের কথা পরক্ষনেই মনে পড়ে গেল। আবার রাগ উঠে গেল।
তাই মেঘলা অভিমানি সুরে বলতে লাগল দরকার নেই আমার এমন বয়ফ্রেন্ডের… আর আপনি উনাকে বলে দিবেন আমি এসব ড্রেস পড়ব না আর আপনার ঘরেও ঘুমাব না। তার সব কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।
আকাশঃ তুই ড্রেস পড়বি নাকি ফেলে দিবি সেটা তর আর তোর বিএফের ব্যাপার,বতোরা বোঝে নিস এর মধ্যে আমি নেই কিন্তু যেখানে সেখানে ঘুমাতে তুই পারবি না আমার ঘরেই ঘুমাতে হবে তোকে।
মেঘলাঃ বলছি না পারব না….
আকাশঃ দরকার হলে হাতপা বেঁধে ফেলে ঘরে বন্দি করে রাখব তাও মাঝ রাতে এত ছেলেদের মাঝে ঘুরাঘুরি করা চলবে না। যাই হোক তোর বর তোকে  অনেক্ষন থেকে ফোন করছে তুই নাকি ফোন তুলিস নি। আবার এখন নাকি ফোন বন্ধ করেও রেখেছিস?
মেঘলাঃ আমার ফোন আমি বন্ধ রাখব নাকি খোলা রাখব সেটা কি আপনাদের বলতে হবে? আর এতক্ষন তো হতচ্ছাড়া বয়ফ্রেন্ড ছিল এখন বর হল কি করে? শুনোন আমি মরে গেলেও অই উগান্ডাকে বিয়ে করব না।
আকাশঃ যা বোন ঘরে যা, ঘরে গিয়ে ২ টা প্যারাসিটামল খেয়ে নে। মনে হয় মাথায় সমস্যা হয়েছে খুব বেশি উল্টা পালটা বকছিস।
মেঘলাঃ বিষ খাব বিষ বোঝেছেন….সবাইকে মুক্তি দিয়ে দিব।
আকাশ প্রচন্ড রেগে বলল কথাগুলি বলতে কলিজা কাঁপছে না? সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়? ওহ বোঝেছি অনেকদিন হয় থাপ্পড় খাস না তাই না?
মেঘলা আর কিছু বলার সাহস পেল না কারন সে জানে এবার কথা বল্লে থাপ্পড় খেতে হবে।
আকাশঃ রান্না ঘরে গিয়ে চুপচাপ খাবার নিয়ে আমার ঘরে আয় ক্ষুদা পেয়েছে… আর একটু উল্টা পালটা করবি তাহলে…. বাকিটা সবার সামনে আর না বলি কি যে হবে তুই নিশ্চুই সেটা জানিস।
মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে….
আকাশঃ কথা কানে যায় নি? বল্লাম না ক্ষুদা পেয়েছে তাড়াতাড়ি যা খুব বাড়াবাড়ি শিখেছিস দেখছি(ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ উনি যা ইচ্ছা তাই করতে পাড়বে আমি করলেই মার খেতে হবে আজব নিয়ম,বকেন আমি কি মানুষ নই (মনে মনে)
আকাশঃ যেদিন আমার মত বুদ্ধি হবে সেদিন তুই ও যা খুশি করিস।
মেঘলা অবাক এর সাথে ভয় মিশিয়ে আমতা আমতা করে  বলল আ আ আ আমি কিছু বলি নি…
আকাশঃ আমি স্পষ্টই শুনেছি কি বলেছিস এবার যদি না যাস আর খাবই না।
মেঘলা কি সর্বনাশ মনের কথাও শুনে ফেলে মেঘলা পালা এখান থেকে এক্ষুনি পালা (মনে মনে)
আকাশঃ আবার বকবক করছিস….
মেঘলা পিছন ঘুরে দৌড়। 
আকাশ ইরাদের দিকে তাকিয়ে বলল 
সুমি আপু কি বুঝলে….???
সুমি হেসে বলল জেরি আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র। তোর চোখ আছে মানতে হবে একদম পার্ফেক্ট আছে….
ইরাঃ কি পার্ফেক্ট….???
সুমিঃ তুমি বোঝবে না। ভাই তুই এগিয়ে যা আমি তোর পাশে আছি। 
আকাশঃ সময়মত ঘুমাতে চলে এসো…. বলেই উপড়ে চলে গেল।
রাগে ইরার গাঁ জ্বলছে….এই অপমানের শোধ আমি তুলব মেঘলা….

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।