৯৮. স্পেশাল ফোর্স এসে প্রথমেই উদ্ধার করলো পুলিশ আর সাধারণ মানুষের দল টিকে। আর এরপর উদ্ধার করা পুলিশ দের সহায়তায় তারা রওনা দিলো নরখাদক দের আস্তানায়। পথিমধ্যে তারা মাটিতে, বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখলো অনেক গুলো জংলি পোশাক পরা নরখাদকের খন্ডিত দেহ, আর বেশ কিছু জায়গায় গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বাধা অবস্থায় পেলো জীবিত কিছু নরখাদকদের, তাদের সবাই দেশি। যারা মাটিতে খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে আছে তাদের সবাই প্রায় বাইরের দেশের।
আর এরপর স্পেশাল ফোর্স পৌছালো নরখাদক দের প্রধান আস্তানায়। আর সেখানে গিয়ে দেখলো, পায়ে তীর বিধে থাকা অবস্থায় কোকাতে থাকা নরখাদকদের লিডার কে, যার পায়ে দড়ি বেধে গাছের সাথে বেধে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, আর তার সাথে পেলো গাছের সাথে পিঠমোড়া করে বেধে রাখা আর ও বেশ কয়েকজন জীবিত নরখাদক কে।
স্পেশাল ফোর্সের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য আফতাব হোসেন কে জিজ্ঞেস করলো তাদেরকে সাহায্য করা লোকটার ব্যাপারে, কিন্তু আফতাব হোসেন কিছুই বলতে পারলো না, কোথাও সে লোকটার টিকি পাত্তাও পেলোনা ওরা। আফতাব হোসেন পুলিশ সুপার কে বলল, সে লোকটা হয়তো এই নরখাদক গুলোকে শায়েস্তা করে এইখানে এইভাবে বেধে রেখে গিয়েছে, আর আইডেন্টিটি লুকিয়ে রাখিতে জায়গা ছেড়ে চলে গেছে।
তবে আফতাব হোসেন পুলিশ সুপার কে বললেন যে, যেভাবেই হোক লোকটিকে খুজে বের করতে হবে তাদের, লোকটার চেহারা একেবারে স্পষ্ট না হলেও খানিক টা মনে আছে আফতাব হোসেনের, আর এই পুরো নরখাদক গোষ্টি টাকে ধরিয়ে দেওয়া আর তার সাথে একটা পুলিশের ফুল টিম কে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনা লোকটাকে তারা কোনো ভাবেই হারিয়ে ফেলতে চায় না। লোকটাকে তাদের খুজে বের করতেই হবে, যে কোনো মূল্যেই হোক, এই পুরো মিশনের কৃতিত্ব একমাত্র তারই৷
স্পেশাল ফোর্সের প্রধান নিজেও আফতাব হোসেনের কথায় সায় দিলেন। আর তারপর নিজেদের কাজে লেগে পড়লেন। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটিকে তারা মেডিকেল কেয়ারে পাঠিয়ে দিলো আগে ভাগে। আর এরপর সব গুলোকে ধরে তারা উঠালেন পুলিশের গাড়িতে, আর এরপর জংলি গুলো কে নিয়ে যাওয়া হলো সোজা জেল খানায়। ওইখানেই তাদের কে জামাই আদর করে সারাজীবনের মতো নরখাদকগিরী বের করে দেওয়া হবে৷
লিডার কে আলাদা ভাবে গাড়িতে তোলা হলো, বেচে থাকা বিদেশিদের ভেতরে সে একমাত্র। এছাড়া আর কোনো বিদেশিই বেচে নেই। তাকে বিশেষ ভাবে জিজ্ঞাসা বাদ করা হবে নরখাদক দের বিষয়ে।
মাটিতে পড়ে থাকা মৃত দেহ গুলোর খন্ডিত অংশ গুলো কুড়িয়ে একত্রে নিয়ে যাওয়া হলো মর্গে। সেখানেই তাদের লাশ আর বডি পার্টস শনাক্ত করে, আইডেন্টিটি শনাক্ত করে যার যার দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে শেষকৃত্যের জন্য।
.
ফজরের আজান হয়ে গেছে, খানিক পরেই ভোরের আলো ফুটতে শুরু করবে। রাস্তা সম্পুর্ন ফাকা, কোনো জনমানবের অস্তিত্ব নেই। রাস্তার দু পাশে ফাকা মাঠ, এই এরিয়ার ভেতরে আর কোনো বসতি চোখে পড়ছে না। ফিরফিরে বাতাসে চারদিক মেতে আছে, মাঠের ফসলের ওপর দিয়ে এলোমেলো হয়ে ছুটে চলেছে সে বাতাস, বাতাসেরা তালে তালে ঢেউ খেলে যাচ্ছে ফসলের ওপর দিয়ে। আর সে ফুরফুরে বাতাসের ভেতর দিয়ে, মাঠের ভেতরের রাস্তা ধরেই ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছে মিশমিশে কালো রঙা ল্যাম্বরগিনি গাড়িটি।
ড্রাইভিং সিটে বসে দক্ষতার সাথে স্টিয়ারিং ঘুরাচ্ছে সাফওয়ান, আর তার পাশে বসে জানালা দিয়ে গাড়ির বাইরে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে আছে রুমাইশা। মেরুন রঙা চুল গুলো তার খোলা। লম্বা চুল গুলো বাতাসে উড়াউড়ি করছে। অসম্ভব রকম ভালো লাগছে তার৷ দুজনের কেউই গায়ের সেফটি পোশাক এখনো খোলেনি, ওইভাবেই গাড়িতে চড়ে বসেছে৷
স্পেশাল ফোর্সের গাড়ির সাইরেন শোনার পরই নরখাদক গুলোকে ওইখানে বেধে রেখেই ওরা ফিরে আসে সেখান থেকে আর এরপর স্পেশাল ফোর্সের দল টা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে পড়লে ওরা উঠে আসে রাস্তায়, তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা রওনা দেয় বাড়ির পথে৷ নিজেকে মোটেও রিভিল করতে চায় না সাফওয়ান, এতে যদি তার রিয়েল আইডেন্টিটি বের হয়ে আসে তবে খুবই সমস্যায় পড়ে যাবে ও। তাই স্পেশাল ফোর্স পৌছানোর আগেই রিমু কে নিয়ে সে ওখান থেকে ভেগেছে৷
রুমাইশা গাড়ির জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সাফওয়ানের দিকে তাকালো, মুখ টা হাসি হাসি, চোখের ভেতর যেন খুশি ঝিলিক দিয়ে উঠছে। সাফওয়ান গাড়ি চালানো অব্যাহত রেখেই রুমাইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো একবার, তারপর আবার রাস্তার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি ব্যাপার, আমার বউ কে এত খুশি খুশি লাগছে কেন?
রুমাইশা একপ্রকার নেচে উঠে, মুখে খুশির বন্যা বওয়া হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,
— ভাল্লাগছে, অনেএএএক! মাঝে মাঝে এইরকম অ্যাডভেঞ্চারাস মিশন আসলে মন্দ হয়না! কি বলো?
সাফওয়ানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে উত্তরের আসায় সাফওয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো রুমাইশা। কিন্তু রুমাইশা যেমন আশা করেছিলো তেমন কোনো উৎসাহই দেখালো না সাফওয়ান। ফিরেও তাকালো না রুমাইশার দিকে। রুমাইশার ঝিলিক দেওয়া হাসি মুখ টা দপ করে নিভে গেলো, আর সেখানে এসে ভর করলো একটা ভ্রুকুটি করে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকা মুখ।
সাফওয়ানের দিকে ভালোকরে ঘুরে বসে রুমাইশা ওইরকম মুখ করেই জিজ্ঞেস করলো,
— কি ব্যাপার? তুমি ছা ওয়ালা মুরগির মতো মুখ করে বসে আছো কেন শুনি?
নিজেকে ছা ওয়ালা মুরগির সাথে তুলনা করায় সাফওয়ান ঘুরে তাকালো রুমাইশার দিকে, তারপর বেজার মুখে বলল,
— কারন আমার তোমার মতো অতো ‘ভাল্লাগছে’ না।
রুমাইশা কোমরে দু হাত গুজে দিয়ে আগের মতো করেই জিজ্ঞেস করলো,
— কেন? ভাল্লাগছে না কেন তোমার?
সাফওয়ান রাস্তার দিকে নজর দিতে দিতে বলল,
— কারণ আমি যা করতে এদিকে এসেছিলাম তা করতে পারিনি, তাই আমার ‘ভাল্লাগছে’ না।
ভাল্লাগছে না শব্দ টা জোর দিয়ে ঠ্যাস মেরে বলল সাফওয়ান। সাফওয়ানের বলার ভঙ্গি দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো রুমাইশা। তারপর হাসি থামিয়ে সাফওয়ানের বলার ভঙ্গি অনুসরণ করেই বলল,
— তো গাড়ি থামাও, তোমারে একটু ‘ভাল্লাগিয়ে’ দেই!
সাফওয়ান আগের থেকেও বেজার মুখে বলল,
— ফাইজলামি করিস না তো, আমি এখন মোটেও ফাইজলামির মুডে নেই। দূরে যা।
রুমাইশা নিজের সিট থেকে উঠে সাফওয়ানের কোলের ভেতর এসে বসে পড়লো, তারপর দাঁত কেলিয়ে বলল,
— ফাইজলামি করছি না, সত্যি!
সাফওয়ান ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো,
— সত্যি? ঢপ দিচ্ছো না তো?
রুমাইসা সাফওয়ানের কলার ধরে একটা ছোট খাট ঝাকি দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ঢপ দিচ্ছিনা শালা, সত্যি! একদম বিশ্বাস করে না আমাকে! বেয়াদব কোথাকার! গাড়ি থামাও, এক্ষুনি!
রিমু এ কথা বলার সাথে সাথেই পা দিয়ে গাড়ির ব্রেক কষলো সাফওয়ান।
৯৯. ভর দুপুর বেলা। সদর থানার স্পেশাল জেলখানা তে নিয়ে নরখাদকদের লিডার, আর দেশি লোক গুলোকে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে, কারণ তারা কিছুই বলছে না, আর যা বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না৷ সেই অদ্ভুত ভাষাতেই ওরা কথা বলছে। তাই বাংলা ভাষা না বলা পর্যন্ত তাদের কে পেটানোর আদেশ দিয়ে গেছে পুলিশ সুপার৷
আর এদিকে আফতাব হোসেন সহ অন্যান্য দের বিবরণ অনুযায়ী স্কেচ তৈরি করা হচ্ছে তাদের কে উদ্ধার কারী ব্যাক্তিটার। অন্যান্য সময়ে আসামীর স্কেচ তৈরি করা হয়, আর এখন তৈরি করা হচ্ছে উদ্ধারকারীর স্কেচ। কারণ সেই ব্যাক্তিটার পরিচয় উদঘাটন করে লোকটাকে খুজে বের করতেই হবে। সে আসলে কে সেটা জানা জরুরি, আর এই মিশনের সম্পুর্ন কৃতিত্ব তার পাওনা৷
আফতাব হোসেন সহ অন্যান্যরা যতদুর সম্ভব বিবরণ দিলেন, সেই বিবরণ অনুযায়ী আর্টিস্ট একটা স্কেচ তৈরি করলো, সেটা একেবারে না মিললেও কিছুটা মিললো।
থানার সহকারী পুলিশ সুপার কিছুটা ছোকরা গোছের, কবির হোসেন নাম। নতুন জয়েন দিয়েছে, এখনো বিয়ে শাদি হয়নি তার। সে তার বসের দেওয়া একটা কাজ সেরে মাত্রই থানায় আসলো। আর এখন তার কাজ হচ্ছে জংলি গুলোর মুখ থেকে তথ্য বের করা, যে তারা কবে থেকে এই কাজে জড়িত আছে, আর আজ পর্যন্ত কতজন কে তারা এইভাবে বারবিকিউ করে খেয়েছে!
সে এসেই আগে ঢুকলো যেখানে স্কেচ তৈরি হচ্ছে সেখানে, তাকে দেখেই পুলিশ সুপার বলে উঠলেন,
— কবির, দেখো স্কেচ টা। লোকটা তো ভারী সুন্দর দেখতে, হ্যা! কি বলো? নায়কের মতো চেহারা!
কবির হোসেন কিছুক্ষন দেখলো স্কেচ টা। এতক্ষণ ও দূর থেকেই দেখছিলো এবার কাছে এগিয়ে এলো কিছুটা। তারপর ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— স্যার, লোকটাকে আমার কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, কোথায় যেন দেখেছি!
এরপর আফতাব হোসেনের কাছে গিয়ে বলল,
— আপনি ওনার সম্পুর্ন ডিটেইলস বলুন তো, হাইট কেমন, বা স্বাস্থ্য কেমন!
আফতাব হোসেন খুব আগ্রহের সাথে বললেন,
— স্যার, সে আপনার থেকেও লম্বা, গায়ের রঙ শ্যামলা, মাথায় চুল অনেক, শরীর স্বাস্থ্যও বিশাল, নায়কদের মতো সত্যি সত্যিই। ওই যে সেদিন আপনি একটা মুভি দেখছিলেন না! সুপারম্যান না কি যেন নাম, ওই মুভির নায়কের মতো দেহ তার, পোশাক ও একটা পরেছিলো সেরকমই শুধু পিঠের ওপর ওড়না ছিলো না, আর পোশাক টা কালো রঙের ছিলো।
সুপারম্যান যে পিঠের ওপর ওড়না পরে সেটা জেনে কবির সেন্টি খেলো। আহত দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইলো আফতাব হোসেনের দিকে। প্রিয় অভিনেতার এমন অপমান সত্বেও কিছুই বলতে পারলো না সে৷ আফতাবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সে এবার পুলিশ সুপারের দিকে তাকালো, তারপর বলল,
— স্যার আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
পুলিশ সুপার কবির কে ইশারায় নিজের কেবিনে আসতে বললেন, তারপর নিজেও চলে গেলেন। আর কবির গেলো তার পেছন পেছন৷ কেবিনে ঢুকেই সে বলল,
— স্যার, পুরো এরিয়া টা সার্চ করে দেখেছি আমি। ওইখানে পুলিশ দের জুতার ছাপ বাদেও আর দুজনের জুতার ছাপ পাওয়া গেছে৷ একটা হচ্ছে সাইজ বারো আর অন্যটা সাইজ সাত। আমাদের পুলিশ টিমের সবার একই ডিজাইনের জুতা পরা ছিলো, তাই বাকি দুইটা জুতার ছাপ শনাক্ত করতে সুবিধা হয়েছে। আর জংলি গুলোর কারো পায়েই জুতা ছিলো না, ওরা সবাই বেয়ার ফুটেড ছিলো। সুতরাং ওইখানে কাল একজন নয় দুজন ব্যাক্তি ছিলো, আর সাইজ সাতের জুতা টার মালিক সম্ভবত কোনো মেয়ে। এবং ছাপ দুইটার ছবি আমি তুলে এনেছিলাম এবং সেগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটিও করেছি। দুইটাই হাই ব্রান্ডেড আর ফরেইন জুতা। আপনার ধারণাই সঠিক স্যার, তারা কেউই দেশি নয়, সম্ভবত। হয়তো এই ট্রাইব টাকে ট্র্যাক করতেই তারা এদেশে এসেছে!
পুলিশ সুপার এতক্ষন নিজের চেয়ারে বসে ছিলেন। কবিরের কথা শুনে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন, তারপর চিন্তিত মুখে বললেন,
— আমি ধারণা করছি যে সে বাইরের দেশের স্পেশাল ফোর্সের কেউ, হয়তো এই মিশন টা তাকে ধরে দেওয়া হয়েছে, আর সে সাকসেসফুলও৷
এবার মুখ থেকে চিন্তিত ভঙ্গি সরিয়ে পুলিশ সুপার কবিরের দিকে আগ্রহ ভরে তাকিয়ে বললেন,
— তুমি তখন কি যেন বলছিলে, যে লোকটাকে তোমার চেনা চেনা লাগছে?
কবির কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
— জানিনা ঠিক, তবে কিছুটা এইরকম দেখতে একটা লোককে আমি দেখেছিলাম। আমাদের বাড়ির পাশের একটা চায়ের দোকানে। ওইখানের কমিউনিটি সেন্টারে এসেছিলো সে সম্ভবত। আফতাব হোসেন যেমন বিবরণ দিয়েছেন তার সাথে অনেক টাই মিলে যায়। তাকে আমি বেশ ভালোভাবেই দেখেছি। কারণ ওই দোকানে একটা ঝামেলা হয়েছিলো, আমার সাথেই। কয়েক টা মাস্তান ছেলে এসে ঝামেলা করছিলো। আমাদের একালারই ছেলে। আমি পুলিশের লোক হওয়া সত্বেও তারা আমাকে মানেনি, আগেও মানতো না! বড় ঘরের ছেলে কিনা! রাতের বেলা ওরা চায়ের দোকান থেকে চাঁদা তুলতে এসেছিলো। চা ওয়ালা মামার পুরো দিনের ইনকাম টাই ওরা চেয়ে বসে, আমি বাধা দিলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, আর সেই সময়েই দুজন লোক এগিয়ে আসে ওই দোকান টাতে। ওদের এভতরের একজনই ওই স্কেচের সাথে মিলে যায়। লোকটা এসে ওই ছেলে গুলোকে চড় থাপ্পড় দিয়ে বিদায় করে দিলো, ছেলে গুলো কিছু বলারও সাহস পেলো না। লোকটা এমন যে আপনি তার অনুগত হতে বাধ্য হবেন না চাইতেও, তার হাটার ভঙ্গি, তার তাকানো, তার কথা সবকিছুই আপনাকে তার অনুগত হতে বাধ্য করবে। আর তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
পুলিশ সুপার বললেন,
— তাহলে তুমি ওই লোকটার সম্পর্কে খোজ খবর নিতে শুরু করো। দেখো আমরা যাকে খুজছে, এ সে কিনা। কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে খোজ নাও, ওইদিন কোন কোন বিয়ে হচ্ছিলো, কারা কারা গেস্ট ছিলো, তাদের সাথে যোগাযোগ করো, করে লোকটার সম্পর্কে সব তথ্য বের করো। আর ওই জংলি গুলোর মুখ থেকে কিছু বের করতে পারলে আমাকে জানাইয়ো।
কবির হোসেন ‘ওকে স্যার’ বলেই পুলিশ সুপার কে স্যালুট দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
১০০. দুপুরে খাওয়ার পর সবাই যে যার রুমে চলে এসেছে। সাফওয়ান আর রুমাইশা বাচ্চাদের কে নিয়ে চিলেকোঠার রুমে চলে এসেছে। সকালেই বাড়িতে ফিরে এসেছে ওরা। এসেই ঘরে গিয়ে গোসল দিয়ে ঘুমিয়েছে আর এরপর দুপুরের খাবারের আগে ওদের কে ডেকে তুলেছে শাফিন৷
আয়েশারা সবাই সকালেই চলে গেছে। যাওয়ার আগে রুমাইশা আর সাফওয়ান কে বলে গিয়েছে যেন ওরা অবশ্যই অবশ্যই ও বাড়িতে যায়৷ সাফওয়ান বলেছে যে ওরা কালকে গিয়েই ঘুরে আসবে, তবে রাত থাকতে পারবে না। আয়েশা এতেই রাজি।
বাচ্চাদের কে নিয়ে আবার ও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সাফওয়ান। সাদমান আর শাহমীর কে একপাশে জায়গা করে দিয়ে সাফওয়ান রাশা কে বুকে নিয়ে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো। রাশা বাবার বুকের ওপর গা এলিয়ে দিলো, গতকাল রাতে মা বাবার উপস্তিতি না পেয়ে তার ঘুমের বেশ অসুবিধা হয়েছে, থেকে থেকেই কেদে উঠেছে। তাই এখন সে বাবার বুকে আয়েশ করে ঘুমাবে। ইতোমধ্যেই কয়েকবার হাই তোলা হয়ে গেছে তার। ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু করছে।
রুমাইশা সাফওয়ান কে আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে দেখে বলল,
— অ্যাই, আর কত ঘুমাবে তুমি? সকাল থেকে ষাড়ের মতো ঘুমাচ্ছো!
সাফওয়ান রাশার পিঠে হাত দিয়ে ছোট ছোট করে চাপড় দিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বলল,
— হ্যা, আমার আম্মাজান ঘুমাবে, তাই আমিও ঘুমাবো, তোমার ভালো লাগলে তুমিও আসো। না লাগলে নিজের কাজে মন দাও, আমাদের কে ডিস্টার্ব কোরো না।
বলে সাফওয়ান চোখ বুজে বালিশে হেলান দিলো আবার।
রুমাইশা সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সাফওয়ানের বই এর ভান্ডারের দিকে এগোলো। তারপর সেখান থেকে বেছে বেছে একটা বই নিলো। এখন তার ঘুম আসবে না, তাই একটা বই পড়লে মন্দ হয় না। বই টা নিয়ে রুমাইশা গিয়ে বসলো চেয়ার টেবিলে।
.
রাতের বেলা পুলিশ সুপার থানা থেকে বের হচ্ছিলেন বাসার উদ্দ্যেশ্যে। তখনি হন্তদন্ত হয়ে কবির ছুটে এলো কোথা থেকে। কবির কে এইভাবে ছুটে আসতে দেখে পুলিশ সুপার দাঁড়িয়ে গেলেন। কবির ওনার কাছে পৌছে এসে বলল,
— স্যার, আপনাকে কল দিচ্ছি কখন থেকে, কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ পাচ্ছি।
পুলিশ সুপার বললেন,
— আর বোলো না, চার্জ শেষ হয়ে গেছে, আর আজ চার্জার টা ভুল করে বাসায় ফেলে রেখে এসেছি। কিন্তু তুমি এসময়ে এলে কেন? খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নাকি?
কবির হোসেন খানিক ক্ষন দম নিয়ে স্থীর হয়ে বলল,
— স্যার, আমি সেই লোকটার পরিচয় খুজে বের করেছি। সাদ্দাত হুসেইন নাম তার। পেশায় বিজনেস ম্যান, একটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির মালিক, আর তার এ কোম্পানি ওকলাহোমা তে। আর স্কেচ টার সাথে তার চেহারার মিল অনেক অনেক খানি৷ তবুও ফাইনালি নিশ্চিত হওয়ার আগে আফতাব হোসেন কে একবার তাকে দেখাতে হবে।
( আমি একটু ঝামেলায় আছি, তাই বড় পর্ব দিতে পারিনি, নেক্সট দিন দিবো ইন শা আল্লাহ, আপনার আবার রাগারাগি কইরেন না 🙁)