অফিডিয়ান | পর্ব – ৭২

ঘোর বিপদ টের পেয়ে রুমাইশা ঝড়ের গতিতে গাড়ির ভেতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। ব্লুটুথ ডিভাইসের ওপাশ থেকে সাফওয়ান চাপা সুরে জিজ্ঞেস করলো,
— রিমু তুমি ঠিক আছো?

রুমাইশা গাড়ির স্টোরেজ কম্পার্টমেন্ট থেকে তড়িঘড়ি করে সেইফটি ব্যাগ টা বের করতে করতে দ্রুত স্বরে বলল,
— জঙ্গলের ভেতর থেকে কে যেন তীর ছুড়ে মেরেছে, তোমার পাঠানো লোকটার পিঠে ঢুকে বুক চিরে বেরিয়ে গেছে সেটা।

উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো সাফওয়ান। ও এখন যেখানে আছে সেখান থেকে নরখাদক গুলোর গলার আওয়াজ স্পষ্ট পাওয়া যাচ্ছে। অদ্ভুত বিশ্রী রকমের হাসছে ওরা। কেউ একজন ছুরি বা চাকু জাতীয় কিছুতে ধার দিচ্ছে হয়তো, সেটার তীক্ষ্ণ শব্দ আসছে। আটকে রাখা লোকগুলোর অসহায় চিৎকার ভেসে আসছে ওর কানে৷ ওদিকে রিমুর বিপদ। সাফওয়ান কি করবে বুঝতে পারছে না৷ উদ্বেগ পূর্ণ কণ্ঠে সাফওয়ান বলল,
— রিমু, তুমি একা পেরে দেবে? নাকি আমি আসবো?

রুমাইশা নিজের গায়ের পোশাকটা খুলে সেইফটি পোশাক টা গায়ে চড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
— প্রয়োজন নেই সাফওয়ান, এদিক টা আমি সামলে নিবো। তুমি ওদিক টা দেখো। কোনো অসুবিধা হলে আমি তোমাকে জানাবো, আর তোমার কোনো অসুবিধা হলে তুমিও জানাবে। আমি গাড়ি থেকে বের হচ্ছি৷ ওরা কি চায় আমি দেখে আসি। তুমি আমার সাথে কানেক্টেড থেকো।

কথা শেষ করেই রুমাইশা নিজের টু সাইডেড সৌর্ড টা একবার পরখ করে নিলো। এটা কিছুবছর আগেই সাফওয়ান ওকে তৈরি করে দিয়েছে। এতগুলো বছরে সৌর্ড চালানো টা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলেছে রুমাইশা, যদিও সাফওয়ানের মতো অতোটা দক্ষ হয়ে ওঠেনি ও৷ সৌর্ড টা গায়ের পোশাকের সাথে বিশেষ ভাবে আটকে রেখে পোশাকের পকেটে পুরে নিলো অনেক গুলো ক্ষুদ্রাকৃতির আয়রন বল, যেগুলো এক বিশেষ ভাবে ছুড়ে দিলে বুলেটের মতো কাজ করে এবং প্রতিপক্ষের শরীর এফোড় ওফোড় করে দেয়৷

অস্ত্রসস্ত্র গুলো ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিয়ে এবার নিজের চুল গুলো ভালোভাবে বেধে নিলো রুমাইশা৷ আর তারপর চোখ থেকে কৃত্রিম লেন্স দুটো খুলে ফেললো। শত্রুর সামনে নিজের সত্তা লুকিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। আর এরপরেই বুক ভরে দম নিয়ে এক ঝটকায় গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো রুমাইশা।
অন্ধকারের ভেতর দ্যুতি ছড়াতে লাগলো ওর সবুজাভ হলুদ রঙা চোখ জোড়া। তীক্ষ্ণ চোখে একবার ওদের দিকে ছোড়া তীরের সম্ভাব্য দিক টার দিকে তাকালো ও। নিশাচরী চোখ দুটো স্পষ্ট দেখতে পেলো জঙ্গলের বেশ খানিক টা ভেতরে উবু হয়ে বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে কয়েকজোড়া চোখ। পরণে তাদের ট্রাইবাল পিপল দের মতো পোশাক, দেখতে বিদেশি, সবারই লম্বা চুল, একজনের হাতে তীর ধনুক, রুমাইশার দিকেই তাক করে রাখা।

আর সেই মুহুর্তেই সেই তাক করে রাখা তীর ধনুকের থেকে সাৎ করে একটা তীর ছুড়ে দিলো জংলি লোক টা। সেটা এসে সোজা রুমাইশার পেট বরাবর লাগলো। কিন্তু বিশেষ ফাইবারের তৈরি পোশাক টা ভেদ করে তীরের ফলা রুমাইশার শরীর ছুতে পারলোনা, শরীর ছোয়া তো দূর রুমাইশা সামান্য ব্যাথাও পেলো না। তীর টা রুমাইশার পোশাকে বাড়ি খেয়ে নিচে আছড়ে পড়লো। রুমাইশা নিচে আছড়ে পড়া তীর টার দিকে তাকালো একবার৷ আর তারপর মাথা তুলে সোজা তাকালো তার দিকে তীর ছোড়া ব্যাক্তিটার দিকে।

লোকগুলো এতক্ষণ রুমাইশার দিকে তীর ছুড়তেই ব্যাস্ত ছিলো, রুমাইশার চেহারা টা ওরা খেয়ালই করেনি। কিন্তু এতক্ষণে খেয়াল করলো ওরা। রুমাইশার দিকে তীর ছোটা ব্যাক্তিটা ওই জ্বলজ্বলে চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো, এমন চোখ সে জীবনে কখনো দেখেনি। জ্বলজ্বলে চোখ দুটোর দৃষ্টি সরাসরি তাদের দিকে। অতদূর থেকেই যে ওই জ্বলজ্বলে চোখের অধিকারী মানবী টা তাদের দেখতে পাচ্ছে সেটা চিন্তা করেই গলা শুকিয়ে এলো লোকটার। তার পাশে থাকা বাকি দুজন ও তাকালো রুমাইশার দিকে। আর রুমাইশা ওর দিকে তীর ছোড়া লোকটার একেবারে চোখের দিকে তাকিয়েই অদ্ভুত সুন্দর এক হাসি দিলো।

৯৬. প্রায় জনা পঞ্চাশেক বা তার ও বেশি পুরুষ এবং নারী মিলে হল্লা করছে এক বিশাল আগুনের চারদিকে। সে আগুনের ভেতর দুইটা মানব দেহ কে বারবিকিউ এর মতো করে পোড়ানো হচ্ছে। পোড়া শরীর গুলোতে মাঝে মাঝে দূর থেকেই মশলা ছিটিয়ে দিচ্ছে কয়েকজন।

লোক গুলোর পরণে আদিবাসী দের ন্যায় পোশাক। প্রায় সবার হাতেই দা বা খড়গ জাতীয় অস্ত্র। অধিকাংশই আগুনের চারপাশ দিয়ে জংলি নৃত্য করছে আর মুখ থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত সুর করছে। আর বাকিরা মাটিতে বসে বসে মানুষের মাথার খুলিতে করে কিছু একটা পান করছে।

এদের ভেতর পনেরো জনের মতো দেশি মানুষজন, আর বাকি সবাই ভীনদেশী, কেউ কৃষ্ণাঙ্গ আবার কেউ শ্বেতাঙ্গ। এদের চেহারা দেখে একেবারেই মনে হচ্ছে না যে এরা জংলি। এদের অধিকাংশের চেহারাতেই শিক্ষিতের ছাপ, অনেকের চোখে চশমা।

এদের ভেতরের লিডার গোছের লোকটা এই হল্লা থেকে কিছুটা দূরে একটা উচু ঢিবির ওপর বসে আছে। তার পাশে বসে আছে দুজন অল্পবয়সী মেয়ে। আর সেই ঢিবিরই এক পাশে হাত পা বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ জন লোক কে। তাদের ভেতরের প্রায় সবারই পুলিশের পোশাক, অল্প কয়েকজন সাধারণ মানুষ। আর এদের কে পাহারা দিচ্ছে আর কয়েকজন জঙলি পুরুষ।

সাফওয়ান জংলি গুলোর থেকে বেশ খানিকটা দূরে, গাছ পালার আড়াল থেকে সবগুলোর অবস্থান দেখে নিয়ে মনে মনে ছক কষে নিলো কিভাবে কি করবে। আর তারপর কানে লাগানো ব্লুটুথ ডিভাইস টা কানেক্ট করলো রুমাইশার সাথে। রুমাইশা কে লাইনে পেয়েই সাফওয়ান চাপা সুরে জিজ্ঞেস করলো,
— রিমু, তুমি ঠিক আছো? ওদিকের সিচুয়েশন বলো।

ও পাশ থেকে উত্তর এলো,
— এইখানে তিন জন জংলি পশু ছিলো, জবাই দিয়ে দিয়েছি। টু শব্দ করার ফুরসত ও পায়নি ওরা। তুমি ওদিকের সিচুয়েশন বলো, এরা কারা আর এইখানে কি করছে?

সাফওয়ান জংলি গুলোর থেকে আর ও কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলল,
— এরা নরখাদক। এইখানে এদের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ ষাট জনের মতো। সবার হাতেই অস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, তবে আধুনিক নয়। রাস্তায় যে তিনটা পুলিশের গাড়ি দেখেছিলে সে গাড়ির পুলিশ গুলোকে এইখানেই জিম্মি করে রাখা হয়েছে, আর তাদের ভেতরের দুজন কে এখন আগুনে ঝলসে বারবিকিউ করা হচ্ছে। প্রায় ত্রিশ বা তার অধিক মানুষ কে আটকে রাখা হয়েছে, হয়তো ওরা পরে খাবে ওদের। এখন, আমার প্লান শুনো।

.

জংলি গুলোর নৃত্য থেমে গেছে। ওরা এখন খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাই মাটিতে বসে পড়েছে লাইন বেধে। লিডার তার আসন থেকে নেমেছে। সে এখন আগুনে জলসানো মাংস কেটে কেটে ভাগ করবে, তারপর সবাই কে দিবে৷ লিডার হাত দেওয়ার আগে কেউই খাবার স্পর্শ করতে পারবে না।

সাফওয়ান দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারের ভেতর, হাত পা বেধে রাখা পুলিশ আর সাধারণ মানুষদের পেছনে, কিছুটা দূরত্ব নিয়ে৷
এইসময়ে সাফওয়ান হাটু গেড়ে বসলো মাটিতে। তারপর নিজের ডান হাতের তালু মাটিতে স্পর্শ করলো। গত দশ বারো বছরে সাফওয়ান শিখেছে কেন জঙ্গলের সরিসৃপ গুলো তার প্রতি আকৃষ্ট হতো, আর কিভাবে তাদের কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখন সে চাইলেই সরিসৃপ গুলোকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে, তাদের কে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে নিতে পারে, যেটা ইচ্ছা করাতে পারে।

মাটিতে হাত রেখে সাফওয়ান ওর গলা দিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের শব্দ করলো। আর সেই সাথে নিজের ডান হাত টা এক সুনির্দিষ্ট গতিতে মাটিতে ঘষে নিলো। তার করা সে শব্দের কম্পাংক সাধারণ মানুষের কানে পৌছালোনা ঠিকই, কিন্তু যাদের কানে পৌছানোর প্রয়োজন তারা সবাই সচকিত হয়ে উঠলো এই অদ্ভুত আহবানে।

লিডার ব্যাক্তি টা তার খড়গ দিয়ে ঝলসানো দেহ গুলো টুকরো টুকরো করলো। তারপর তার সহযোগী দের দিয়ে সবার হাতে হাতে পৌছে দিলো মাংস, কিন্তু কেউ স্পর্শ করলো না। লিডার খাবার মুখে দেওয়ার আগে সাধারণ কারো খাবার মুখে দেওয়ার নিয়ম নেই৷ যে-ই নিয়ম ভঙ্গ করবে সে-ই পরেরবার অন্যদের খাবারে পরিণত হবে৷

খাবার বন্টন শেষে লিডার নিজের জন্য নির্ধারিত জায়গায় যেতে নিলো। তখনি মাটিতে সড়সড় শব্দ হতে শুরু করলো। শব্দ টা ক্রমেই বাড়তে লাগলো। প্রথমে কেউ সেদিকে খেয়াল না করলেও শব্দ যখন তীব্র হলো তখন সবার খেয়াল গেলো সেদিকে। চারদিক থেকে এক অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছে মাটি বেয়ে।

ব্যাপার টা বুঝে উঠতে উঠতেই চারদিক থেকে ঝাকে ঝাকে মাটি বেয়ে আসতে থাকলো খর্বাকৃতির কালো রঙা, চিকন শরীরের সাপ, যেগুলোর পিঠের ওপর দিয়ে সাদা রঙা তিনটা রেখে চলে গেছে মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত।

হঠাৎ এত্তগুলো সাপের উপস্থিতিতে হকচকিয়ে গেলো সবাই। সাপ গুলো একে বেকে চলে এলো জংলি গুলোর পায়ের কাছে। মাটিতে কিলবিল করতে থাকলো সেগুলো।অনেকের শরীর বেয়ে ওপরে উঠে গেলো বেশ কয়েক টা। চিৎকার জুড়ে দিলো জংলি গুলো। মাটির ওপর লাফালাফি করতে থাকলো অনেকে। নিজেদের হাতের অস্ত্র গুলো দিয়ে সাপ গুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলো অনেকে৷ কিন্তু সাপ গুলো খুবই দ্রুত গতিতে এদিক ওদিক ছুটে চলেছে৷ সহজে তাদের কে ধরাশায়ী করা যাচ্ছে না৷ পাহারা রত গার্ড গুলো নিজেদের লিডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আটকে রাখা মানুষ গুলোকে রেখে চলে আসলো লিডারের কাছে৷

অদ্ভুত ব্যাপার হলো সাপগুলো কাউকেই কামড়াচ্ছে না, শুধু এর ওর গা বেয়ে উঠে পড়ছে, আর আশপাশ দিয়ে ঘুর ঘুর করছে। কিছুক্ষণ পর সাপ গুলো হঠাৎ করেই এদিক ওদিক ছুটে পালিয়ে গেলো যেভাবে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই। জংলি গুলো যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। লিডার লোকটা অদ্ভুত এক ভাষায় জিজ্ঞেস করলো যে সাপ কাউকে কামড়েছে কিনা, কিন্তু কেউ কোনো কথা বলল না। সাপগুলো কাউকেই কামড়ায় নি।

লিডার লোকটা ভেবে পেলোনা হঠাৎ কি হলো। ব্যাপার টাকে পুরোপুরি ন্যাচারাল কোনো ফেনোমেনোন হিসেবেই ধরে নিলো সে। কিন্তু তখনি এক জন পাহারাদার চিৎকার করে সেই অদ্ভুত ভাষাতে বলে উঠলো যে তাদের আটকে রাখা লোকগুলোর একটাও আর নেই। সবাই পালিয়েছে৷

সবার তখন হুস ফিরলো, এতক্ষণ নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো তারা, সেদিকে কেউ খেয়ালই করেনি৷
কিন্তু লিডার ব্যাক্তি টার মাথায় এলো না, এত শক্ত করে বাধা বাধন কে খুলবে? সবার হাত পা-ই এক বিশেষ বন্ধনে বাধা ছিলো, যা খুলতে গেলে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ না করলে খোলা কখনোই সম্ভব নয়। আর এ বিশেষ পদ্ধতি শুধুমাত্র ট্রাইবে থাকা গুটি কয়েক মানুষই জানতো। আর যদি বেধে রাখা লোকগুলোর ভেতরের কেউ এটা করেও তবে এত গুলো মানুষের বন্ধনী খুলতে গেলে অনেক সময় লাগার কথা৷ এত অল্প সময়ে এত গুলো বন্ধনী খোলা মোটেও সাধারণ ব্যাপার নয়।

আর তার থেকেও বড় বিষয় যে তাদের ধরে রাখা লোক গুলো পালিয়েছে, যাদের অধিকাংশই পুলিশের লোক, তাদের এখনি এখান থেকে পালাতে হবে, নইলে একবার ধরা পড়ে গেলে জীবন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পালানোর আগে একবার শেষ চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিলো লিডার। সে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
— পালিয়ে যাওয়া লোকগুলো বেশিদূর যেতে পারেনি। তোমরা সবাই ছড়িয়ে পড়ো। যতগুলোকে পারো ধরে নিয়ে আসো। তাদের কে ধরে নিয়েই আমরা এখান থেকে সরে পড়বো। কয়েকটাকে না ধরলে আমরা খাদ্যাভাবে পড়বো, তখন নিজেদের ভেতর থেকেই আমাদের কে খাবার বেছে নিতে হবে৷ এখনি যাও৷

লিডারের আদেশ পাওয়া মাত্রই সবাই দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়লো, আর ছূটে চলল জঙ্গলের ভেতরে৷

৯৭. জঙ্গলের রাস্তার দিক টাতে একটা নির্জন আর অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাতে পাশাপাশি ঘাপটি মেরে বসে আছে রেস্কিউ করা পুলিশের দলটি। কেউ কোনো সাড়াশব্দ করছে না। সবার হাতেই গাছের কাচা, মাঝারি ডাল, যেগুলোর মাথা সুচালো করা। চারদিকে নজর বুলাচ্ছে তারা৷ কোনো জিংলি কে দেখলে সাথে সাথেই হাতের বর্শা টা দিয়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিবে তারা।

পুলিশদের ভেতরের একজন নিজের পকেট থেকে ফোন বের করলো, অন্যরা তাকে আড়াল করে নিলো যেন কোনো জংলি আলো দেখে এদিকে চলে না আসে৷ সবার ফোন ওই জংলি গুলোই কুক্ষিগত করে নিয়েছে, কিন্তু এই একটা ফোন ভাগ্যক্রমে তারা নিতে পারেনি। পুলিশ টা ফোন বের করে হেড অফিসে কল করলো, দুবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো কেউ। করেই সে লোকটা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,
— মিস্টার আফতাব, আপনাদের কে আমরা গত কয়েক ঘন্টা ধরে ট্রেস করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আপনাদের কে পাচ্ছিনা, ওদিকে সিচুয়েশন বলুন। কি হচ্ছে ওখানে, আপনারা এখন কোথায় আছেন? কি অবস্থায় আছেন?

আফতাব নামের লোকটি চাপা গলায় বলল,
— স্যার আমরা ভয়ানক বিপদে আছি, আপনি দ্রুতই স্পেশাল ফোর্স পাঠানোর ব্যাবস্থা করুন, উইদ আর্মস। আমরা এইখানে নরখাদকের পাল্লায় পড়েছি। ওরা সংখ্যায় অনেক। আমাদের কে ধরে ফেলেছিলো ওরা। দুজন পুলিশ কে ওরা অলরেডি ঝলছে ফেলেছে, আর এখন তাদের খাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আর অন্য আরএকজন তীরে বিধে মারা গেছে বলে জেনেছি আমরা। ওদের হাত থেকে আমরা কোনো মতে বেচে ফিরেছি। একজন নাম না জানা ব্যাক্তি আমাদের কে ওদের হাত থেকে পালাতে সাহায্য করেছে, এখন আমরা সবাই লুকিয়ে আছি জঙ্গলের ভেতরের এক কোণায়। আর সে লোকটা আবার জংলি গুলোর উদ্দেশ্যে ফিরে গেছে।

অফিসার উত্তেজিত গলায় বললেন,
— কি বলো! নরখাদক? আর যে লোকটা তোমাদের কে সাহায্য করেছে সে আবার ফিরে গিয়েছে কেন? একাই গিয়েছে?

আফতাব হোসেন উত্তর দিলো,
— জ্বী স্যার, সে একাই গিয়েছে। তবে চিন্তা করবেন না, সে সাধারণ কেউ নয়। সে খুবই দক্ষ কেউ, হয়তো সে কোনো ফোর্সের সদস্য, শরীর দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে। হয়তো সে আমাদের দেশের কেউ নয়, কারণ তার পোশাক অনেক উন্নত। সে হয়তো অন্য দেশের কেউ। নইলে কারো পক্ষেই সম্ভব নয় এত গুলো মানুষকে এত দ্রুত উদ্ধার করা। আর ও অনেক ব্যাপার আছে, ফোনে বলা সম্ভব নয়, আপনি যত দ্রুত সম্ভব স্পেশাল ফোর্স পাঠিয়ে দিন। আর আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই, আছে শুধু গাছের ডাল দিয়ে বানানো বর্শা, এগুলোও ওই লোকই বানিয়ে দিয়ে গিয়েছে। আমাদের অস্ত্র গুলো ওই নরখাদক দের আস্তানাতেই পড়ে আছে।

অফিসার বললেন,
— ফোর্স অন দ্যা ওয়ে। আপনারা চিন্তা করবেন না। ঘন্টা খানেকের ভেতরেই ফোর্স পৌছে যাবে আপনাদের কাছে। আর ওই লোকটার পরিচয় আমার চাই। তার মতো একজন দক্ষ লোক আসলেই কে সেটা জানা প্রয়োজন। আপনি চেষ্টা করবেন তার পরিচয় জানার। ন্যাও স্টেই সেইফ।

বলেই খট করে কল কেটে দিলেন অফিসার।

.

সাফওয়ান আবার চলেছে জংলিদের আস্তানার দিকে৷ রেস্কিউ করা লোকগুলোকে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে তাদের হাতে নিজের তৈরি বর্শা আর নিজের একটা ধারালো চাকু দিয়ে এসেছে৷ এখন তার একটাই কাজ বাকি আছে, জংলি গুলোকে শেষ খাওয়া টা না খাইয়েই ওপরে পাঠানো।

সাফওয়ান নিজের ব্লুটুথ ডিভাইস টা রুমাইশার সাথে কানেক্ট করলো, তারপর বলল,
— সিচুয়েশিন বলো।

রুমাইশা উত্তর দিলো,
— টেন ম্যান ডাউন।

সাফওয়ান চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে দিতে বলল,
— লিডার আর দেশি কুকুর গুলো ছাড়া সবগুলোকে মজা বুঝিয়ে দাও৷

রুমাইশা বাকা হেসে বলল,
— ওখেই বস!

কথা শেষ করেই ব্লুটুথ ডিভাইস টা আবার ডিসকানেকটেড করে দিলো সাফওয়ান৷

.

লিডার বসে আছে চিন্তিত মুখে৷ তার আশেপাশে দশ জনের মতো লোক গার্ড দিচ্ছে৷ আর তার পাশে বসে আছে সেই অল্পবয়সী মেয়ে দুইটা। তার পাঠানো লোক গুলো এখনো ফিরে আসছে না৷ চিন্তা হচ্ছে তার। তাকে এখন কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
তার ফলোয়ার্স গুলোকে এখানে রেখেই তাকে চলে যেতে হবে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দ্যেশ্যে। নইলে সে নিজেও বিপদে পড়ে যাবে৷ আর সে বিপদে পড়লে পুরো ট্রাইব টাই নষ্ট হয়ে যাবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না৷ তার উত্তরসূরী আসতে চলেছে তার পাশে বসা মেয়েদুটোর একটার মাধম্যে। এখন কোনো ভাবে ধরা পড়লে সে তার রাজ্য আর নিজের উত্তরসূরী, সবই হারাবে। এই সর্বনাশ হওয়ার আগেই নিজেকে সেইফ জায়গায় নিতে হবে।

এমন সময়ে জঙ্গলে যাওয়া দল গুলোর একটা ফিরে এলো উর্ধশ্বাসে ছুটতে ছূটতে। এসেই লিডারের সামনে দাড়ালো তারা। লিডার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ওদের দিকে। ওদের ভেতরের একজন কিছুক্ষণ দম নিয়ে হাফ ছেড়ে সেই অদ্ভুত ভাষাতে বলল,
— এইখানে আমরা ছাড়াও আর কেউ আছে বস, আমাদের দলের অনেক কে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি দ্বিখন্ডিত অবস্থায়। কেউ এখানে এসেছিলো, আর আমাদের ধরে রাখা লোক গুলোকে পালাতেও সে-ই সাহায্য করেছে৷ আমাদের কে এখনি এখান থেকে পালাতে হবে।

লিডার ব্যাক্তি টা উঠে দাড়ালো। গার্ড গুলোকে ইশারা দিলো সব কিছু গুছিয়ে নিতে, এখনি প্রস্থান করবে তারা। আক্রমণ কারী যে কোনো সময় যে কোনো মুহুর্তে চলে আসতে পারে৷ আদেশ দিয়ে সে লোক গুলোকে জিজ্ঞেস করলো,
— ওরা সংখ্যায় কত জন? ওদের কাছে অস্ত্রসস্ত্রের পরিমাণ কেমন?

আগের লোকটাই আবার ও বলল,
— ওরা সংখ্যায় কত জন তা আমরা জানিনা, ওদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। আমাদের যাদের কে আটকে রেখেছিলাম সে লোক গুলোর টিকি পাত্তা নেই, তারা কোথায় লুকিয়েছে সেটাও বুঝতে পারছিনা৷ আর আমাদের ওপর যারা আক্রমণ করছে তারা খুবই চতুর৷ কখন কাকে কোন পাশ দিয়ে আক্রমণ করছে সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই!

লিডার লোকটা এবার একটু ভয় পেলো যেন। সে গার্ড গুলোকে দ্রুত হাত চালাতে বলল, আর ফিরে আসা দল টাকেও বলল নিজেদের জিনিসপত্র আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখনি গুছিয়ে নিতে। তারা এই মুহুর্তে এখান থেকে বিদায় নেবে৷

ঠিক এমন সময়ে একটা কাটা মাথা কোন একদিক থেকে উড়ে এসে পড়লো লিডারের একেবারে পায়ের কাছে৷ চমকে গেলো সে৷ মাথা টাকে ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখলো তাদের দলেরই একজনের মাথা এটা। আঁতকে উঠলো সে। গার্ড গুলো সচকিত হয়ে নিজেদের ধারালো অস্ত্র গুলো হাতে তুলে ধরে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলাতে লাগলো। লিডারের পাশে বসা মেয়ে দুটো ভয়ে একে অপরকে জড়িয়ে বসে রইলো।

এমন সময়ে জঙ্গলের ভেতরের ঘন, মিশমিশে অন্ধকার থেকে কারো শীষ বাজানোর শব্দ কানে এলো ওদের৷ অদ্ভুত সুন্দর সুরে কেউ শীষ বাজাচ্ছে। শব্দটা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। গার্ড গুলো অস্ত্র হাতে এগিয়ে গেলো সেদিকে। আর লিডার কে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইলো অন্যরা।

অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না সামনে। কিন্তু সেই মুহুর্তেই অন্ধকারের ভেতরে জ্বলজ্বল করে উঠলো এক জোড়া চোখ। ওরা সবাই দেখতে পেলো সে জ্বলজ্বলে চোখ জোড়া। ধুসর সবুজ রঙা সে চোখ দুইটা আলো ছড়াচ্ছে শিকারী জন্তুর মতো। আর শীষের শব্দটাও সেদিক থেকেই আসছে। ধীরে ধীরে শীষের শব্দ টা আর ও গাঢ় হলো, আর সেই সাথে দৃশ্যমান হলো ওই অদ্ভুত দর্শন চোখ জোড়ার মালিক।

সে এখনো শীষ বাজিয়ে চলেছে। অস্ত্রধারী গার্ড গুলোর একদম কাছে চলে এলো সে৷ কিন্তু গার্ড গুলো কোন এক অজানা ভয়ে অসাড় হয়ে গেছে যেন। হাতে ধরে রাখা অস্ত্রগুলো নামছে না, আঘাত করার শক্তি পাচ্ছে না ওরা।

লোকটা শীষ বাজানো থামালো। লিডার ব্যাক্তিটা সেই অদ্ভুত ভাষায় গার্ড গুলোর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
— তোমরা থেমে গেলে কেন? ও তোমাদের কাছেই আছে, মেরে ফেলো ওকে! এখনি! কি হচ্ছে তোমাদের?

কিন্তু গার্ড গুলো যেন সে কথা শুনতে পেলো না। ওদের দৃষ্টি সম্পুর্ন তাদের সামনে দাঁড়ানো লোকটার দিকে, যার চোয়াল দ্বয় শক্ত হয়ে আছে এই মুহুর্তে। দাঁতে দাঁত পিষছে যেন। চোখ জোড়া দিয়ে যেন ঝলসে দিচ্ছে তাদের কে৷ ওই শক্ত হাতের বিশাল থাবা যেন সতর্ক করে দিচ্ছে প্রতিটা পদক্ষেপ একশো বার ভেবে নেওয়ার জন্য।

সাফওয়ান গার্ড গুলোর দিকে আর একবার শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওদের সামনে থেকে সরে এগেলো লিডারের দিকে। লিডারের আশেপাশে থাকা অন্য লোক গুলো অস্ত্র হাতে প্রস্তুত। তাদের দিকে এগিয়ে আসা লোকটা এদিক ওদিক কিছু করলেই হাতের অস্ত্র গুলো একদম গলা বরাবর বসিয়ে দেওয়ার প্লান করে আছে তারা৷ লিডার নিজেও পাশ থেকে একটা খড়গ হাতে তুলে নিলো।

সাফওয়ান লিডারের দিকে এগোতে এগোতে বাকা হাসলো, তারপর শান্ত কন্ঠে ওদের সেই অদ্ভুত ভাষাতেই বলল,
— চিৎকার করে কোনো লাভ হবে না। এখন এখানে আমি যা করবো তাই হবে!

লিডার ব্যাক্তি টা হকচকিয়ে গেলো। ভড়কে গেলো তার পাশে দাড়ানো লোক গুলোও৷ গার্ড গুলোও অবাক হয়ে ফিরে তাকালো সাফওয়ানের দিকে। লিডার ব্যাক্তি টা উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি আমাদের এ ভাষা কিভাবে জানলে? কে তুমি? কোথা থেকে এসেছো?

সাফওয়ান উত্তরে কিছুই বলল না। এগোতে এগোতে একেবারে লিডারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আর তারপর হঠাৎ করে দাঁত মেলে হিংস্র ভঙ্গিতে হেসে উঠলো ও, আর সাথে সাথেই দৃশ্যমান হলো ওর ঝকঝকা ক্যানাইন দাঁত জোড়া৷

লিডার ব্যাক্তি টার চোখে মুখে ভীতি দেখা গেলো। যেন এই হাসির অর্থ তার জানা। কইসের সাথে যেন সে মিল পাচ্ছে একটা, এই চোখ, এই দাঁত, এই শরীর, এই হাসির কথা সে শুনেছে কোথাও। হ্যা, তার মনে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে, সে যখন আমাজনে কোনো এক নরখাদক ট্রাইবের সাথে ছিলো, সেখানেই এই বিবরণ সে শুনেছে। আর জেনেছে এই বিবরণ ধারী লোকটার সম্পর্কে।

ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো সে। তারপর এক পা এক পা করে পেছাতে লাগলো নিজের পেছন দিকে। এরপর চাপা সুরে মুখে উচ্চারণ করলো,
— সাফওয়ান আহমেদ, আমাজনে থাকা হাইব্রিড সাফওয়ান আহমেদ। অতি বিষাক্ত সাফওয়ান আহমেদ। তোমাকে আমি চিনি, তুমি কি কি করতে পারো সেটাও জানি আমি, সেটাও জানি!

বলেই লিডার ব্যাক্তি টা আর কারও অপেক্ষা করলো না। নিজের ফলোয়ার্স দের কে রেখে, নিজের অনাগত সন্তান কে রেখেই সে পেছন দিকে ছুট লাগালো। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না। তার আগেই সপাং করে একটা তীরের ফলা এসে বিধলো লিডারের পায়ে৷ হোচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো সে মাটির ওপর৷

লিডারের গার্ড গুলো আর অন্যান্য লোক গুলো কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলো না। তাদের কাছে এই রহস্য মানব এখনো ধোয়াসা, আর তার ওপর নিজেদের লিডারের তাদের কে ফেলে রেখে এইভাবে ছুটে পালানোর চেষ্টা, সবকিছুই তাদের কে দ্বিধায় ফেলে দিলো। তবুও তারা অস্ত্র তাক করে রইলো সাফওয়ানের দিকে, আর অন্য কয়েকজন তীরের উৎসের খোজে আশেপাশে নজর বুলাতে লাগলো সতর্ক দৃষ্টি তে।

লিডার ব্যাক্তি টা মাটিতে পড়ে কোকাতে লাগলো। পা থেকে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছে। মাটিতে পড়া অবস্থাতেই সে গার্ড গুলোর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
— ওকে মেরে ফেলো তোমরা, কেউ ওর কাছে যেও না, ওকে দূর থেকেই মেরে ফেলো, অস্ত্র ছুড়ে মারো ওর গায়ে। কেউ ভুলেও ওর কাছে যেও না।

সাফওয়ান এখনো তাকিয়ে আছে অন্ধকারের ভেতর মাটিতে পড়ে থাকা লিডার ব্যাক্তি টার দিকে। সাফওয়ানের ভেতরে কোনো বিকার নেই। সে নিশ্চিন্তায় আছে। লিডার ব্যাক্তি টা গার্ড গুলোকে আদেশ দিয়েই নিজেকে মাটির সাথে ঘষতে ঘষতে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো সামনের দিকে। আর গার্ড গুলো তাদের লিডারের কথা মতো সাফওয়ানের দিকে অস্ত্র ছুড়ে মারার জন্য প্রস্ততি নিলো,

সাফওয়ানের একেবারে কাছে থাকা লোক গুলো নিজেদের অস্ত্র উচু করে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে সাফওয়ানের ওপর আঘাত করতে গেলো, কিন্তু তার আগেই সাফওয়ান ঝড়ের গতিতে নিজের টু সাইডেড সৌর্ড টা বের করে তার মাঝ বরাবর চাপ দিলো, আর তারপরেই তড়িৎ গতিতে সৌর্ড টা চালিয়ে দিলো ওর আশে পাশে থাকা লোক গুলোর ওপর। চোখের পলকে তাদের দেহগুলো খন্ড খন্ড হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পিড়লো। হাতের মুঠি শিথিল হয়ে হাতে ধরে রাখা অস্ত্র গুলো মাটিতে পড়ে ভোতা শব্দ করে উঠলো।

সাফওয়ানের পেছনে থাকা গার্ড গুলো এ দৃশ্য দেখে অসাড় হয়ে গেলো। এবার যে মৃত্যুর পালা তাদের সেটা বুঝতে আর কারো বাকি রইলো না। হাতের অস্ত্র গুলো ফেলে রেখে নিজেদের পেছন দিকে ছুটে পালাতে গেলো ওরা, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

কয়েক কদম সামনে এগোনোর পরই জঙ্গলের ঘন কালো অন্ধকারের ভেতর থেকে তীব্র গতিতে ক্ষুদ্রাকৃতির কয়েকটি ধাতব বল একটা এসে লাগলো ওদের কয়েকজনের মাথা বরাবর, আর সেটা কপাল ভেদ করে মাথার পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়লো শব্দ করে।
বাকি যে কয়েক জন বেচে রইলো তারা নিজেদের সাথীদের এমন অবস্থা দেখে বুঝে ফেললো যে এখন তাদের বেচে ফেরার সব চেষ্টাই বৃথা! এখন আর ছোটাছুটি করে কোনো লাভ হবে না।

ওরা কয়েক জন স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। সাফওয়ানের দিকে ওদের অসহায় দৃষ্টি। আর সেই মুহুর্তেই ঘন অন্ধকারের ভেতর থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো রুমাইশা। গার্ড গুলো শব্দ পেয়ে ফিরে তাকালো সেদিকে। আর তারা দেখতে পেলো অসাধারণ শরীরী সৌন্দর্যের অধিকারী এক মানবী কে। হাতে তার তীর ধনুক। চোখে শিকারী দৃষ্টি।
ভারী পায়ে সোজা হেটে এসে রুমাইশা দাড়ালো গার্ড গুলোর পাশে। আর তারপর তাদের উদ্দ্যেশ্যে বজ্রকন্ঠে বলে উঠলো,
— নীইল ডাউন! ন্যাও!

গার্ড গুলো এবার রুমাইশার চোখের দিকে তাকালো। ওই জ্বলজ্বলে সবুজাভ হলুদ রঙা চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে ওরা যেন সম্মোহিত হয়ে গেলো। কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই চুপচাপ মাটিতে বসে নীল ডাউন হয়ে রইলো ওরা।

আর সাফওয়ান ওর সামনে বসে থাকা মেয়ে দুটোকে পাশ কাটিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা লিডারের দিকে এগোলো। লিডার ব্যাক্তি টা তখনও নিজেকে মাটিতে ঘষতে ঘষতে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সাফওয়ান পৌছে গেলো ওর কাছে আর এরপর লিডারের যে পায়ে তীরের আঘাত লেগেছে সে পা টা ধরে উচু করলো। আর তারপর মাংসে গেথে থাকা তীরের ফলা টা ধরে মাংসের ভেতরেই মুচড়ে দিলো।

আকাশ বাতাস কাপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো লিডার ব্যাক্তি টা। কিন্তু সে চিৎকার সাফওয়ানের কানে গেলো না। সে লিডারের পায়ের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটা তীরের ফলা সুদ্ধ চাপ দিয়ে ধরেই টানতে টানতে নিয়ে এলো নীল ডাউন হয়ে থাকা গার্ড গুলোর কাছে। আর এরপর রুমাইশা গিয়ে ঢিবির পাশে বসে থাকা মেয়ে দুটোকে টেনে এনে বসিয়ে রাখলো ওদের সাথে।

আর সেই মুহুর্তেই রুমাইশার কানে এলো স্পেশাল ফোর্সের গাড়ির সাইরেনের শব্দ। সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে সে স্মিত হেসে বলে উঠলো,
— আমাদের ডিউটি শেষ, স্পেশাল ফোর্স চলে এসেছে!

( আপনারা একটু কমেন্ট কইরেন বেশি বেশি, নইলে ভাল্লাগে না কিন্তু 😪।
বিভিন্ন ব্যাস্ততার কারণে প্রত্যেকদিন গল্প দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না! আপনারা রাগারাগি কইরেন না। 🙁)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।