লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ০৯

আকাশ মেঘলাকে ভালবাসে কিনা এই নিয়ে এতদিন মেঘলার মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল কিন্তু আজ এভাবে লিপস্টিক মুছার পর সব সন্দেহ উবে গেছে। ভালবাসা ছাড়া এভাবে একটা মেয়েকে টাচ করার মত ছেলে আকাশ নয় এটা ভেবে মেঘলার খুব আনন্দ হচ্ছে।

এদিকে আকাশ ও খুব খুশি। তার অনেকদিনের ইচ্ছা আজ পুরন করে ফেলেছে সে।
মেঘলা ছাদ থেকে নেমে সোজা ক্লাসে গেল সেখানে গিয়ে আরও একটা খুশির খবর শুনল। কলেজ থেকে ট্যুরে যাওয়া হবে তাও বড় ছোট সব ক্লাস একসাথে। খবরটা শুনেই মেঘলার মনে লাড্ডু ফুটছে। বাড়িতে তো আকাশের সাথে কথাই বলা যায় না ট্যুরে গিয়ে একসাথে সময় কাটানো যাবে।
খুব মজা হবে আমি তো ছোট থেকে কোথাও ঘুরতে যাই নি এবার যাব তাও মনের মানুষের সাথে ভাবতেই ভাল লাগছে। কিন্তু পর মুহুর্তেই তার মন খারাপ হয়ে গেল যখন আকাশের মার কথা মনে হল। মেঘলা আংকেল কে না হয় কোন ভাবে ম্যানেজ করা যাবে কিন্তু আন্টি কি আমায়
বাসা থেকে যেতে দিবে?
মেঘলা কলেজ থেকে ফিরে এই এক চিন্তায় বিভোর মনে মনে শুধু ফন্দি করছে আংকেলের কাছে কিভাবে ট্যুরের কথা বলা যায়? কিন্তু সাহস করে উঠতে পাড়ছে না।
রাতে সবাই খেতে বসেছে হটাৎ আকাশ বলে উঠল মেঘলা কলেজ থেকে যে ট্যুরে যাচ্ছে, দেখিস তুই যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববি না, তুই যাওয়ার চেস্টা করবি না। তুই গেলে আমি যাব না। তাই একদম বাড়াবাড়ি করবি না সাবধান।
কথাটা শুনে মেঘলার খুব রাগ হল সাথে মন খারাপও হল যার জন্য যেতে চাই সেই আমায় যেতে মানা করছে? কি কপাল আমার? ভেবেছিলাম আন্টি হয়ত বাধা দিবে অথবা ভাবি এখন ত দেখে ঘরের শত্রু বিভিষন….
দুপুরে তাহলে আমি ভুল ভেবেছিলাম উনি আমায় ভালবাসেন না। অন্যছেলেদের মতই চান্স পেয়ে মজা নিয়েছেন তাই তো? ভালবাসলে ত আমার সাথে যেতে চাইতেন। আচ্ছা আমার সাথে নাই বা যেতে চাইলেন একবারো এটা ভাবলেন না আমি কখনো ঘুরতে যাই নি ট্যুরে গেলে আমার ভাল লাগবে। আমার কি কোন ইচ্ছা নাই? আপনাদের বাড়িতে থাকি বলে আমার সাথে যা ইচ্ছা করা যায় তাই না? কথা গুলি মনে মনে ভেবে মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল মেঘলা। তখন আকাশের বাবা বলে উঠলেন তুমার যাওয়া ইচ্ছা না হলে থেকে যাও কিন্তু মেঘলা ট্যুরে যাবে।
আকাশঃ মানে কি বাবা? আমার চেয়ে তোমার কাছে মেঘলা বেশি প্রিয়?
আজাদ সাহেবঃ কে প্রিয় সেটা বিষয় না তুমি ত সারাদিন টই টই করে বেড়াও মেয়েটা কখনো কখনো কোথাও যায় নি তাই ও যাবে। তাতে যার যত সমস্যাই হোক ও যাবে।
কিন্তু আকাশ চায় না মেঘলার সাথে যেতে এটা শুনেই মেঘলার সব শখ মিটে গেছে কারন সে আকাশের জন্যই যেতে চেয়েছিল তাই মেঘলা বলল থাক না আংকেল ভাইয়া যখন চাচ্ছে না আমি বরং না যাই।
আজাদ সাহেবঃ সব কিছু কি ওর কথায় হবে নাকি? আমি যা বল্লাম তাই হবে। কাল সকালেই আমি তোর ফি জমা দিয়ে দিব।
আকাশঃ মা কি হচ্ছে এসব তুমি কিছু বলছো না কেন? ও চলে গেলে বাসার কাজ কে করবে।
মেঘলাঃ ভাইয়া তো ঠিকি বলেছে আমি চলে গেলে বাড়ি কিভাবে চলবে?
আজাদ সাহেবঃ একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নে তুই এই বাড়ির কাজের মেয়ে না যে সবার সব কথা শুনে চলতে হবে। তুই যাচ্ছিস এটাই শেষ কথা। তুই ব্যাগ প্যাক কর।
রাবেয়া বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আজাদ সাহেব বলে উঠল এ ব্যাপারে আমি কারো কোন বক্তব্য শুনতে চাই না এই বাড়িতে সেটাই হবে যেটা আমি বলব তাই সবাই কান খুলে শুনে নাও মেঘলার যাওয়া নিয়ে যে কথা বলবে তার জন্য এই বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে আর এটাই ফাইনাল।
ছেলে তো নয় একটা অপদার্থ তৈরি করেছো, মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটাও শিখে নি। শোন রাবেয়া, সারাদিন মেঘলার পিছনে না লেগে, পারলে এটাকে একটু মানুষ করার চেস্টা করো বোঝেছো?আকাশকে বকা দিতে দিতে আজাদ সাহেব চলে গেলেন
রাবেয়া বেগমঃ ঢং দেখলে বাঁচি না। কার না কার মেয়ে তার জন্য আমার ছেলেটাকে এত গুলি কথা শুনিয়ে গেল। তুই মন খারাপ করিস না বাবা তোর বাবাকে ত চিনিস মেঘলার জন্য দরদ একেবারে উতলে পড়ে সবসময়। ৩ দিনের তো ব্যাপার কষ্ট করে একটু সহ্য করে নিস আর আমি মুখ পুড়ি কে বলে দিব তোকে যেন না জ্বালায় তুই রাগ করে থাকিস না তুই ও যা।
আকাশঃ ভেবে দেখি বলে চলে গেল।
মেঘলার খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে আকাশ তার সাথে মজা নিয়েছে আসলে ভালবাসে না। রাত হয়ে গেছে তবুও মেঘলা ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আজ যদি আমার বাবা মা থাকত আমার যখন যা ইচ্ছা করতে পাড়তাম। সবাই আমাকে আদর করত কথাগুলি ভাবতে ভাবতে চোখ ২ টি ভিজে এসেছে মেঘলার।
হটাৎ মেঘলার কানের কাছে ফিসফিস করে কেউ বলে উঠল কিরে মুখ টা এমন করে রেখেছিস কেন খুশি হস নি?আরে পাগলি কাঁদছিস কেন? শোন
তুই সারাদিন বল্লেও বাবা তোকে এতদূরে যেতে দিত না। আর মা তো তুলকালাম করে ফেলত ভাবিও বাধা দিত তোকে কিছুতেই যেতে দিত না। তাই বাবাকে রাগিয়ে দিলাম যাতে রাগ করে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে পাঠায়।
তোর আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত আর তুই তা না করে মুখ টা কালো করে রেখেছিস। এই জন্যই তোকে মারতে ইচ্ছা করে। কিছু না বোঝেই নিজের মত সব ভেবে নিস। এখানে বসে ঠান্ডা না লাগিয়ে
যা গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নে। তোকে ছাড়া আমি যাব নাকি বোকা মেয়ে…. আকাশ কথা গুলি বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে চলে গেল….
মেঘলার এই মুহুর্তে ইচ্ছা করছে আকাশ কে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিতে কিন্তু সেটা সম্ভব না। আকাশ এতক্ষনে নিচে চলে গেছে মেঘলার এবার আগের চেয়েও বেশি আনন্দ হচ্ছে তার।
মেঘলাঃ ইসস কত ভালবাসে আমায়, আমার জন্য আংকেলের কাছে কতগুলি বকা শুনল আর আমি কিনা তাকেই ভুল বোঝলাম চরিত্রহীন পর্যন্ত বানিয়ে দিলাম? ছি মেঘলা তোর লজ্জা হওয়া উচিত। ধুর আমি না আসলেই একটা মাথা মোটা….
আচ্ছা এখানে অন্যরাও তো কেউ কিছু বোঝেনি এমনকি আংকেল ও বোঝে নি তারমানে আমি বোকা না আসলে আকাশ একটু বেশিই চালাক। তাই তার ভালবাসাটাও সবার চেয়ে আলাদা।
আমিও আপনাকে খুব ভালবাসব দেখবেন ট্যুরে গিয়েই বলে দিব আমি আপনাকে ভালবাসি…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।