আকাশঃ মেঘলা….অনেক দিন থেকে মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন জমিয়ে রেখেছি, আজ জিজ্ঞাস করব উত্তর দিবি?
লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ০৮
মেঘলাঃ হুম…. কেন দিব না? কি প্রশ্ন বলুন…..
আকাশঃ আমার সাথে কেন এমন করেছিলি মেঘলা…..??? আমার কি দোষ ছিল?
জানিস সেদিনের পর ১৫ দিন হাসপাতালে ছিলাম।
মেঘলা অবাক হয়ে বলল কি হয়েছিল আপনার? আর আমিই বা কি করেছিলাম?
আকাশ কেমন যেন অন্যমনষ্ক হয়ে বলল না কিছু না। যা নিচে যা কফি টা নিয়ে যা।
মেঘলাঃ খাবেন না?
আকাশঃ না খাব না….
মেঘলাঃ বলুন না কি হয়েছিল আমি কবে কি করেছিলাম?
আকাশ ধমক দিয়ে বলল তোকে নিচে যেতে বল্লাম না….
মেঘলার প্রশ্নের উত্তরগুলি জানতে ইচ্ছা করছে কিন্তু আকাশ উত্তর দিবে না বোঝতে পেরে ঘর থেকে চলে গেল।
।
।
।
রাতে সব কাজ শেষ করে মেঘলা নিজের ঘরে গিয়ে আকাশের খুলে দেওয়া আইডির টাইমলাইনে নিজের বলতে না পাড়া সব মনের কথা লিখল কিন্তু সবকিছুই অনলি মি করে রেখেছে যাতে কেউ না দেখতে পারে। কিন্তু আকাশ যে আইডির পাসওয়ার্ড জানে মেঘলা সেটা ভুলেই গিয়েছে।
মেঘলা সকাল বেলা উঠেই সবাই জাগার আগে সব কাজ শেষ করে ফেলেছে যাতে ফোনের সাথে সময় কাটাতে পাড়ে।
মেঘলা যে ভোরে উঠে কাজ করেছে সেটা রাবেয়া বেগম দেখেছে তাই এখন আর কিছু বলছেন না। সবাই টেবিলে নাস্তা করছে আর মেঘলা নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত।
কিন্তু,হটাৎ আকাশের চিৎকারে সবাই চমকে উঠল। আকাশ তার মাকে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এল। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে।
আকাশ চিৎকার করে জিজ্ঞাস করল মা সকালে আমার ঘরে কে ঢুকেছিলে?
রাবেয়া বেগমঃ আমরা কেউ ত যাইনি। সবাই তো কেবল উঠলাম।
আকাশঃ কেউ তো অবশ্যই গিয়েছিল।
রাবেয়া বেগমঃ হ্যা মেঘলা গিয়েছিল ঘর পরিষ্কার করতে।
আকাশঃ যা ভেবেছিলাম তাই….আকাশ মেঘলার কাছে গিয়ে বলল কানের দুল টা দে মেঘলা।
মেঘলা অবাক হয়ে বলল আপনার কানের দুল তো কানেই আছে আমি কোথা থেকে দিব?
আকাশঃ তোর কি মনে হয় আমি ফাযলামি করছি? মার খাওয়ার আগে দুল টা দে। ওটা আমার কাছে অনেক মুল্যবান।
মেঘলাঃ আমি সত্যিই জানি না দুলটা কোথায় আমি নেই নি ভাইয়া।
আকাশ মেঘলার গালে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলল রাতে ঘুমানোর সময় ইয়ার রিংটা আমার হাতে ছিল। সকালে অন্য কেউ আমার রুমে যায় নি তাহলে কোথায় যাবে দুলটা?
মেঘলা এতই ব্যাথা পেয়েছে যে সাথে সাথে কেঁদে দিয়েছে। আপনিও আমাকে চোর বলছেন? আপনি কি ২ কানে দুল পড়েন? একটা দুল দিয়ে আমি কি করব?
আকাশঃ আমি কি বলেছি তুই চুরি করেছিস? দুল টা আমার খুব দরকার মেঘলা ফাযলামি করিস না প্লিজ দিয়ে দে।
মেঘলাঃ আমি নিই নি….
আকাশঃ ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় পাস নি?
মেঘলাঃ না….
আকাশঃ ময়লা কোথায় ফেলেছিস?
মেঘলাঃ ময়লা তো সেই সকালেই ময়লা ওয়ালা এসে নিয়ে গেছে….
আকাশঃ কি….??? ভিষন রেগে গিয়ে মেঘলা বলল শোন মেঘলা আজ যদি আমি দুলটা না পাই তাহলে তোর যে কি অবস্থা হবে তুই ভাবতেও পাড়ছিস না। বলে আকাশ বাইরে চলে গেল।
মেঘলার মাথা কাজ করছে না। সে কোন দুল নেয় নি। মেঘলার ভয় লাগছে আকাশ যে রগচটা আজ তার কপালে দুঃখ আছে।
প্রায় ১ ঘন্টা পর আকাশ বাসায় ফিড়ে সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খোজেও দুলটা পেল না তাই আকাশের মন খুব খারাপ। মা আকাশকে খেতে দিয়েছিল সে খায় নি। দেখেই বোঝা আকাশ মেঘলার উপড় ক্ষেপে আছে।
মাঃ এত মন খারাপের কি আছে আবার নতুন একটা কিনে নিও।
আকাশঃ তুমি বোঝবে না মা, বলে আকাশ ঘরে চলে গেল।
আকাশের মন খারাপ দেখে মেঘলা একটা বক্স হাতে নিয়ে আকাশের ঘরে গেল।
মেঘলাঃ ভাইয়া এগুলো সব আমার দুল আপনার যেগুলো ভাল লাগে নিয়ে নিন তবুও রাগ করে থাকবেন না প্লিজ।
আকাশঃ তাই নাকি দেখি আকাশ বক্সটা হাতে নিয়ে সবগুলি দুল দেখে বলল বাহ বেশ ভাল আমার এগুলো সব গুলুই লাগবে দিয়ে যা। কিন্তু আমার ওই দুলটাও চাই।
মেঘলাঃ আপনি এত বড় বড় দুল দিয়ে কি করবেন? ছোটগুলি রাখুন।বাকি গুলি আমায় দিয়ে দিন।বিশ্বাস করুন আমি আপনার দুলটা নেই নি।
আকাশঃ তুই নিয়েছিস আমি সিওর কারন দুলের ত হাত পা নেই যে উড়ে যাবে রাতেও আমার কাছে ছিল।বিশ্বাস কর মেঘলা ওটা যদি না পাই তোকে আমি বাড়ি ছাড়া করব।
মেঘলাঃ আমি নেই নি বলছি না🤬
আকাশঃ তুই নিয়েছিস….
মেঘলাঃ তাহলে নিশ্চুই এখানেই আছে আপনি আপনার দুলের একটা ছবি দেখান আমি খোঁজে দিচ্ছি।
আকাশঃ ছবি দেখাতে পাড়ব না।
মেঘলাঃ তাহলে খোঁজবও না।
আকাশঃ আমিও তোকে বের করে দিব বাসা থেকে।
মেঘলঃ দেখান না প্লিজ।
আকাশঃ আচ্ছা দেখাব কিন্তু তোর কথা দিতে হবে দুলটা দেখার পর আগামি ৩ দিন তুই আমার সাথে কথা বলতে পারবি না। যাই ঘটে যাক কথা বলতে পাড়বি না। আর দুলের ব্যাপারে কোনদিনো কিছু বলতে পারবি না।
মেঘলাঃ এটা কেমন নিয়ম দুল না দেখালে খুজে পাবো কি করে?তার সাথে কথা না বলার কি সম্পর্ক?
আকাশঃ আচ্ছা তাহলে দেখাব না কিন্তু খোঁজে না পেলে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিব।
মেঘলাঃ আচ্ছা আমি রাজি দুলের ব্যাপারে কিছু বলব না আর ৩ দিন কথাও বলব না আপনার সাথে।
আকাশঃ গুড গার্ল তাহলে যা গিয়ে দেখ, বালিশের নিচে একটা দুল আছে ওটার জোড়া টা হারিয়েছে।
মেঘলা গিয়ে দুল টা দেখেই চমকে উঠল, আরে এটাত আমার দুল এই কানের দুলটা পড়েই তো সেদিন কলেজে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাস্তার মাঝখানে আকাশ খুলে ফেলে দিয়েছিল।
মেঘলাঃ আরে এটা তো আ……
আকাশ মেঘলার মুখ ধরে বলল বলেছিলাম না এ ব্যাপারে কোন কথা বলা যাবে না। যা এবার খোঁজ যদি না পাস কাল তোকে বাসা থেকে বের করে দিব।
মেঘলাঃ এই দুল দিয়ে উনি কি করবেন? আর কুড়িয়েই বা এনেছেন কেন? মনে মনে আকাশকে বকে ১৪ গোস্টি উদ্ধার করতে করতে দুলটা খোজছে সে।
৫০ টাকার একটা দুলের জন্য আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে পাগল কোথাকার।
পিছন থেকে আকাশ বলল কিছু বলছিস মনে হয়?
মেঘলাঃ কই না তো😁😁
অনেক খোজার পর খাটের নিচ থেকে দুলটা পাওয়া গেল।
মেঘলাঃ এই নিন আপনার যক্ষের ধন।
আকাশঃ কথা বলছিস যে…..
মেঘলাঃ পেয়ে গেছি, এখন তো বলবই….ব্যাপার কি হুম? আপনি এত কিপ্টা কেন আমার দুল জিএফ কে গিফট করবেন? ছি ছি ছি মেয়ে ত জীবনেও রাজি হবে না বলবে এই গরিবের সাথে প্রেম করা যাবে না।
আকাশঃ থাপ্পড় খাওয়ার আগে বিদায় হ…….
মেঘলাঃ দৌড়
আকাশঃ দুলটা হাতে নিয়ে দুলটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল তুই কি সত্যিই বোঝিস না মেঘলা? আমি কেন তোর দুলটা কুড়িয়ে আনলাম আর কেন এত যত্নে দুলটা রেখেছি আর কেনই বা প্রতিদিন সাথে নিয়ে ঘুমাই তুই কি বোঝিস না?
।
।
।
মেঘলাঃ যাক বাবা পাওয়া গেছে না হলে রাক্ষসটা সত্যি সত্যিই আমাকে বাড়ি ছাড়া করত।
মেঘলা এসে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিল। বরাবরের মত সে লিপস্টিক আর কাজল পড়েছে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে বের হওয়ার সময় আকাশের সাথে মেঘলার দেখা হল। আকাশ মেঘলার দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেল।
মেঘলাও বাসে করে কলেজে চলে গেল।
কলেজে ঢুকার সাথে সাথেই নাবিল এসে বলল
কি গন্ডগোল করেছো বলোত?
মেঘলাঃ মানে কি?
নাবিলঃ ভাংগা বিল্ডিং এর ছাদে আজ তোমার ডাক পড়েছে। তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম অই বিল্ডিংএ আজ পর্যন্ত যার যার ডাক পড়েছে সবার করুন অবস্থা হয়েছে তোমার কপালে আজ কি আছে কে জানে? আকাশ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে যাও।
মেঘলাঃ আমি কিছু করিনি আর ডাকলেই যেতে হবে নাকি? আমি যাব না।
নাবিলঃ না গেলে আকাশ এসে তুলে নিয়ে যাবে সেটা কি ভাল হবে?
মেঘলা আর কোন উপায় না পেয়ে ভিতু পায়ে এগিয়ে গেল। ছাদের দরজা পর্যন্ত যেতেই দেখল
আকাশ সেখানে একটা স্টিক নিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশের হাতে স্টিক দেখেই মেঘলার গলা শুকিয়ে গেল। বাঁচতে চাইলে এখান থেকে পালা মেঘলা মনে মনে বলতে বলতে সে আস্তে করে ঘুড়ে চলে আসতে চাইলো
তখনি পিছন থেকে আকাশ বলে উঠল, পালানোর চেস্টা করে লাভ নেই যেখানেই যাবি ধরে আনব।
মেঘলাঃ আমি তো আপনার কাছেই যাচ্ছি পালাব কেন😇
কিন্তু আপনি ওদিকে তাকিয়ে আমাকে দেখলেন কি করে?
আকাশঃ সেটা তোর না জানলেও হবে এদিকে আয়।
মেঘলাঃ দেখুন আমি কিছু করি নি….
আকাশঃ তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন? কাছে আয়।
মেঘলা বেশ সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,
যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন আমার এত সময় নে…….
কথা শেষ করার আগেই আকাশ মেঘলাকে টেনে মেঘলার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল।
মেঘলা অবাক হয়ে গেল।মেঘলার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে কিন্তু আকাশকে বাঁধা দিতে পাচ্ছে না।
মেঘলার মনে হচ্ছে এতদিন যেন এই মুহুর্তের জন্যই সে অপেক্ষা করে আছে। আকাশ আলতো করে আদেরের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘলা চোখ বন্ধ করে পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে আকাশ এতক্ষনে নিজের স্বপ্নের জগতে ডুব দিয়েছে। মেঘলাও তাই, কিছুক্ষন পর মেঘলা বাস্তবে ফিড়ে এসে জোরা ধাক্কা দিয়ে আকাশকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি? কি করছেন এসব? আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি?
আকাশঃ না তো…বউ কেন হবি? তুই ত আমার ছোট বোন হোস তাই না….তাই আমি চাই না তুই লিপস্টিক পর আর ছেলেরা তোর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকুক। সেজন্য মুছে দিলাম।
মেঘলাঃ এভাবে কেউ লিপস্টিল মুছে🙄
আকাশঃ হ্যা মুছে.. দেখ একটুও লিপস্টিক নেই তোর ঠোঁটে।
মেঘলাঃ থাকবে কি করে আপনি তো সব খেয়ে ফেলেছেন….
আকাশঃ সেদিন ভালভাবে মুছতে বলেছিলাম শুনলি না। এবার থেকে যতবার লিপস্টিক পড়বি তোর সাথে এমনটাই হবে মনে রাখিস। বলে আকাশ চলে গেল।
মেঘলা বাইরে এসে মনে মনে ভাবছে, কেন মুখ ফুটে বলেন না আপনি আমায় ভালবাসেন?এই জন্যই তো ভাইয়া বলে ক্ষেপাই আমি তো আপনার সব আচারনেই বোঝি। কেন আমার কানের দুল আপনার প্রিয় কেনই বা আমাকে কেউ কিছু বল্লে আপনি সহ্য করতে পারেন না আমি ত সবি বোঝি কিন্তু এত লুকুচুরি কিসের? বলেন না বলেই তো আমি আপনাকে রাগাই একটা বার বলে দিলেই তো হয়? আপনি কি বোঝেন না আমিও আপনাকে ভালবাসি…