আমরা সবাই নিরবে চোখের পানি ফেলছি হসপিটালের করিডোরে বসে।ভাবতেও পারিনি যে এমন কিছু হবে আমার সাথে।শেষ পর্যন্ত আয়মানের কথাটাই সত্যি প্রমাণিত হলো।আয়মান সেদিন ঠিকই বলেছিল,আরিয়ান আমাকে ভালোবাসে।আর আমার কথাটাও সত্যি হলো।আরিয়ান সত্যিই মরতে বসেছে।
(কি রিডার্স,বুঝতে পারছেন না তো যে আমি এসব কি বলছি?তাহলে চলুন ঘুরে আসি আজ বিকাল এ কি হয়েছিল সেখান থেকে)
আজ বিকালে……
আমরা সবাই বসে বসে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম।আদিয়াত আর আরুশ ও ছিলো সেখানে।তো আমরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলছিলাম।এক পর্যায়ে আমার দিকে বোতল ঘুরে যায়।তখন আমি ডেয়ার নেই।সেই পর্যায়ে আরুশ আমাকে ডেয়ার দেয় যে আমাকে একটা গান গায়তে হবে।তো আমিও গান গায়তে রাজি হয়ে যায়।যদিও ওতো ভালো গান আমি পারিনা।আমি গান গাওয়ার এক পর্যায়ে হঠাৎই একটা আননোন নাম্বার থেকে সাদাফের ফোনে কল আসে।ওও কলটা রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে কি যেন বলে আর সাদাফ চিৎকার করে উঠে।আমরা সবাই সাদাফের এমন আকস্মিক চিৎকারে হতবাক হয়ে যায়।তখন সাদাফ আমাদের সবাইকে জানায় যে ওকে হসপিটাল থেকে কল করেছে।আর আরিয়ান আই.সি.ইউ এ অ্যাডমিট।এই কথা শুনে আমাদের সবার মাথায় যেন আচমকা একটা গাছ ভেঙ্গে পরলো।
আমরা আর কেউ এক মুহূর্ত দেরি না করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।আমাদের সাথে আদিয়াত আর আরুশ ও ছিলো।
তো ওখানে গিয়ে দেখি ইতোমধ্যে সেখানে পুলিশ এসে গেছে।আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে পারি আরিয়ান একটা বারে গিয়েছিল।আর সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করে।তারপর ওখানেই একটা ছোট কাঁচের বোতল থেকে অনেকগুলো স্লিপিং পিলস্ খায়।এক পর্যায়ে ওখানেই আরিয়ান অজ্ঞান হয়ে যায়।তখন ওখানকার লোকজন এই হসপিটালে আরিয়ানকে অ্যাডমিট করে তাদের খবর দেয়।
এইসব শুনে আমি কান্নারত অবস্থায় পুলিশকে জিজ্ঞেস করি যে আরিয়ান কেন এমনটা করেছে তার কি কোনো ক্লু পাওয়া গেছে?
তখন তারা বলে যে এখানে আয়রা নামের কেও কি আছে?আমি বললাম আমিই আয়রা।সেই সময় তারা আমার হাতে একটা চিটি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।আমি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।
প্রিয় আয়রা,
আমি তোকে আজ আমার মনের কিছু অব্যক্ত কথা জানাতে চাই।প্রথমেই বলি আজ আমি তোকে উদ্দেশ্য করে কেন এই চিঠিটা লিখছি।কারন একটাই,”আমি তোকে ভালোবাসি”।হ্যা,সত্যি তো এইটায় যে আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।আমি তোকে আজ থেকে আরো তিন বছর আগে থেকেই ভালোবাসি,যা আমি ছাড়া আর কেও যানে না।উমমমমম,কেও জানেনা বললে ভুল হবে।একজন জানে।সেইটা হলো ইভা।ওকেই আমি প্রথম আমার মনের কথা জানায়।তখন কেন জানিনা ওও কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।আমি সেদিন ওর দিকে পাত্তা দিইনি।এখন আসি আসল কথায়।
আমি যে তোকে এতোদিন ধরে ভালোবাসি তা কি তুই একটুও আচ্ করতে পারিসনি?কেন পারিসনি বলতো।তুই তো সবার মুখ দেখেই মনের কথা বোঝার এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।তাহলে আমার মনের কথাটা তুই কেন বুঝতে পারিসনি?বলতে পারিস আমায়?
আচ্ছা সেইসব বাদ দিলাম।কিন্তু আমাকে এইটা বলতো যে আদিয়াতের মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?
আমার বার্থডে তে তোদের সবাইকে যে সারপ্রাইজটা দিতে চেয়েছিলাম সেইটা হলো তোকে প্রপোজ করা।কিন্তু সেইটা তো আর সম্ভব নাহ।তাই তোকে এই চিঠির মাধ্যমেই বলে গেলাম,তোকে বড্ড ভালোবাসি।
আজ আমি আমার জীবনটা শেষ করবো।কারণ তোকে ছাড়া আমি আমার এই জীবনটা কল্পনাও করতে পারিনা।
বিদায়ের শেষ মুহূর্তে একটায় প্রার্থনা করি,যেখানেই থাকিস আর যার সাথেই থাকিস সুখে থাকিস,ভালো থাকিস।
ইতি,
তোর হয়েও না হওয়া আরশোলা।
এই চিঠিটা পড়ে আমি মাটিতে বসে পরলাম।আমি যে আর পারছিনা।এই কোন কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম আমি?আরিয়ান আমাকে এতো দিন যাবত ভালোবাসে আর আমি তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।এখন আমি কি করবো?আচ্ছা আরিয়ান তো চিঠিতে লিখেছে যে ওও আমাকে ভালোবাসে তা ইভা জানতো।তাহলে ইভা কেন আমাদের কাউকে এই কথাটা জানায়নি?এইটা ভেবেই আমি উঠে দাড়ালাম।আর ইভার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
আমি:ইভা,আরিয়ান বলেছে যে তুই জানতিস আরিয়ান আমাকে ভালোবাসে।তাহলে সেই কথাটা তুই কেন আমাদের কাউকে জানাসনি?বললল কেন জানাসনিইইইইইই(চিল্লিয়ে)
আমার চিৎকারে ইভা কেঁপে উঠল।ওর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
অন্যদিকে বাকি সবাই চুপ করে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই আরুশ আর আদিয়াত ও কেন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।আমার চিৎকারে হসপিটালের অনেকেই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এতো কিছুর মাঝেই ইভা কাঁপা কাঁপা গলায় যা বললো তা শোনার জন্য আমরা কেউ-ই মোটেও প্রস্তুত ছিলাম নাহ।আজ যেন আমরা শুধু অবাক আর অবাকই হচ্ছি।এতো এতো কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে জানলে হয়তো আমরা সবাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম।কারণ এই কথাগুলো আমাদের প্রানের চেয়ে বেশি দামি বন্ধুরাই আমাদের থেকে গোপন করে এসেছে এতোগুলো দিন,এতোগুলো মাস,এতোগুলো বছর ধরে।যা আমরা কেউ আশা করিনি ওদের থেকে!

চলবে???

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।