বেলা গড়িয়ে ঘড়িতে তিনটে বাজে তখন , মেইন ক্যামপাস একদম শান্ত হয়ে আছে । শুধুমাত্র গানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ক্যামপাসে উপস্থিত সবাই , এমনকি হিমাদ্রও হা’ করে স্টেজের দিকে চেয়ে আছে । স্টেজে তখন এক কেশবতী “ ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় ” গানে নাচতে ব্যস্ত । সে কারোর দিকে তাকাচ্ছে না , মনে হয় তাকালেই মস্ত বড়ো অন্যায় করে ফেলবে । পড়নে তার সাদা রঙের শাড়ি, তাতে লাল সুতো দিয়ে কাজ করা । কোমোর সমান বড়ো চুল গুলো বেণী করা , যা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুলছে। তার চঞ্চল হরিণী চোখ দুটো যেনো হাসছে , মুখে তার একটা আলাদা লাবন্য বর্তমান।
এখনকার যুগে সবাই বলিউড, টলিউড গানে নৃত্য করতে পছন্দ করে । বেশিরভাগ মানুষই ভেবে থাকে রবীন্দ্র সংগীত গান গুলো বোরিং। ক্যামপাসে উপস্থিত কেউ ভাবিনি যে সুদেষ্ণা এত সুন্দর নৃত্য প্রদর্শন করবে। প্রথমে যখন গানটা শুরু হলো তখন অতটা কেউ গ্ৰাহ্য করেনি । কিন্তু পরে সুদেষ্ণার নাচ দেখে সবাই মুগ্ধ না হয়ে পারলো না ।
সুদেষ্ণার নাচ শেষ হলো,,,,,,,, করতালিতে মুখরিত হলো পুরো ক্যাম্পাস। সুদেষ্ণা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, তারপর একটা মিষ্টি হাঁসি দিয়ে নমস্কার করে নেমে গেলো স্টেজ থেকে। সুদেষ্ণা এগিয়ে গেলো নিজের দলের কাছে যেখানে তার বন্ধুরা বসেছিলো,,,,,,,,,,,
একপ্রকার সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো সুদেষ্ণার ওপর । চারিদিক থেকে ঘিরে ধরলো সুদেষ্ণাকে, তারপর অনেক প্রশংসা করলো সবাই।
ভাই পুরো ফাটিয়ে দিয়েছিস, সবার মুখ দেখার মতো ছিলো। এমন হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছিলো মুখে মাছি ঢুকে যাবে,,,,,,,,, স্নেহা দাঁত কেলিয়ে বললো।
জানিস আমার কী মনে হয়?,,,,,, হিমাদ্র ভাই পটে গেছে। সুদেষ্ণা চোখ ছোটো করে অনুর দিকে চাইলো ।
এ মা,,,,, তোর মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি ? শোন আমি নিজের চোখ দিয়ে দেখেছি হিমাদ্র ভাইকে তোর দিকে হাঁ করে তাকাতে । এবার তোর যদি বিশ্বাস না হলে আমার কিছু করার নেই।
অনুর কথায় আকাশ দাঁত কটমট করে বললো,,,,,,, বালের মতো কথা বলিস কেনো? সবাই সু এর নাচ দেখবে আর সে চোখ বন্ধ করে থাকবে ??,,,,,, আরে ভাই সু নাচ দেখার জন্যই তো করেছে ,,,,,, তো মানুষ দেখবে না ?
অনু ফুঁসে উঠলো , একটা আঙ্গুল তাক করলো আকাশের দিকে ,,,,,,, কিছু বলবে তার আগেই অনিক বলে উঠলো,,,,,,,,
বকা না খেতে চাইলে তোরা চুপ কর , আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার এইদিকেই আসছে । এ . আর স্যার সুদেষ্ণাদের পাশ কাটিয়ে সোজা চলে গেলেন। সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর কেউ আর ঝগড়া করেনি । শুধু একবার অনু আর আকাশের চোখাচোখি হয়েছিলো,,,,,, অনু আকাশকে ভেঙচি কেটে সুদেষ্ণার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর সবাই চুপচাপ অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
অনুষ্ঠান শেষ হলো বিকেল ৫ টা নাগাদ। সুদেষ্ণা নিজের দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ক্যামপাস থেকে। সবাই কম বেশি ক্লান্ত , বাড়ি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে সবাই ঘুমাবে এইসব আলোচনার মধ্যেই একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো সুদেষ্ণাদের সামনে,,,,,,,
আপনি কিন্তু ভীষন সুন্দর নাচ করেন । আপনি জানেন আপনার নাচ দেখে আমার হার্টবিট থেমে গিয়েছিলো,,,, মিষ্টি হেঁসে বললো ছেলেটি ।
সুদেষ্ণা প্রথমে ভরকালো তারপর ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করলো,,,,,, ছেলেটি মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পড়ে আছে। ৬ ফুট এর একটু কম হবে হাইট। ফর্সা , গালে চাপদাড়ি আছে । হাঁসলে ডান দিকে ওপরের দিকে গজ দাঁত দেখা যায় । তার জন্য ছেলেটির সৌন্দর্য দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে । বলতে গেলে ছেলেটি অনেক সুন্দর। সুদেষ্ণা নিজেকে সংযত করে উওর দিলো,,,,,,, ধন্যবাদ।
তা আপনার নাম জানতে পারি ??
কেনো স্টেজে যখন ডাকলো তখন শোনেনি??,,,, অনু মাঝখান থেকে ফোড়ন কেটে বললো।
না ,,,,, আমি তো উনাকে দেখতে ব্যস্ত ছিলাম। ছেলেটি সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললো ।
সুদেষ্ণার ছেলেটিকে খুব একটা ভালো লাগলো না । তাও ভদ্রতার জন্য নিজের নাম বললো,,,,,,,,,
“সুদেষ্ণা”,,,,,,,,
ওহ,,,,, খুব সুন্দর নামটা । আমি অয়ন ,,,,,, এই বলে ছেলেটি মুচকি হাঁসলো।
ওহ,,,,,,, আচ্ছা আমরা আসছি , আমাদের দেরি হচ্ছে ।
আচ্ছা,,,,,,, আমাদের আবার দেখা হচ্ছে । এই বলে ছেলেটি চলে গেলো সেখান থেকে। সুদেষ্ণা তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে।
নির্ঘাত ব্যাটা তোর প্রেমে পড়েছে,,,,,, অনু প্রফুল্ল গলায় বললো।
আমারো তাই মনে হয় ,,,,,,,, সবাই এক সাথে বললো তারপর একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে আবার সুদেষ্ণার দিকে তাকালো।
এই সব এখন থাক , এখন আমাদের বাড়ি যাওয়া উচিৎ । আমি ভীষন ক্লান্ত ,,,,,,,,,,, সুদেষ্ণা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো।
হ্যাঁ চল,,,,, এই বলে সবাই বাড়ির জন্য বেরিয়ে পড়লো। সুদেষ্ণা, অনু আর স্নেহার বাড়ির রাস্তা এক দিকে পড়ে , বাকিদের কলেজের উল্টো দিক দিয়ে যেতে হয় । ওরা সবাই বিদায় জানিয়ে চলে গেলো । সুদেষ্ণা পেছন দিকে সেই ঘুড়েছে ওমনি তার নজর গেলো স্ট্যান্ডের ওপর দাঁড়ানো হিমাদ্রর ওপর । তার দৃষ্টি সুদেষ্ণাতে নিবদ্ধ , ফলে দুজনের চোখাচোখি হলো । হঠাৎ ধক,,,,, করে উঠলো সুদেষ্ণার বুক । হিমাদ্রর দৃষ্টি নড়ছে না দেখে সুদেষ্ণা চোখ নামিয়ে নিলো । হিমাদ্রর দৃষ্টি বরাবরের মতোই শান্ত , তাকে দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই । আর সেই দৃষ্টি বোঝার ক্ষমতা সুদেষ্ণার নেই । এতক্ষণ সব কিছুই হয়তো হিমাদ্র দেখেছে ,,,,,,,, তাহলে কী সে জেলাস ?? না,,,,,, সে কেনো জেলাস হতে যাবে সে তো আর সুদেষ্ণাকে ভালোবাসে না । থাক যার যেটা ভালো লাগছে সে তাই করুক, আপাতত সুদেষ্ণা এখন অনেক ক্লান্ত । সুদেষ্ণা হিমাদ্রকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলো অনু আর স্নেহার সাথে তাল মিলিয়ে। সুদেষ্ণা জানলোই না তার পাষান পুরুষ এখনো তার দিকেই চেয়ে আছে,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,