লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ৩০

মেঘলা নাবিলের ফোন নিয়ে চলে গেল যদিও তার আকাশের জন্য মন খারাপ লাগছে তবুও নিজের দায়িত্ব পালন করতে চলে গেল।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আবির আর নাবিল ফিরে এলো আকাশের অবস্থা এতটাই খারাপ যে আবির বা নাবিল কারোরি মেঘলার কথা মনে নেই।আকাশকে রক্ত দেয়া হল অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হল।

এদিকে মেঘলা ফোন করে সামিরার সাথে কথা বলে নিয়েছে। আর বলেছে নাবিল তাকে পাঠিয়েছে সামিরা নাবিলের কথা শুনে আগ্রহ নিয়ে মেঘলার জন্য অপেক্ষা করছে মেঘলা চলে আসলেই সে পালাবে।কিন্তু সেটা যে খুব সহজ কাজ হবে না সেটাও জানে সামিরা তাই ফন্দি আঁটছে কি করে জনি কে আর তার বাবা মাকে ফাঁকি দিয়ে পালানো যায়।

সামিরা অপেক্ষা করছে তো করছেই কিন্তু মেঘলার খোঁজ নেই।
মেঘলাও যাওয়ার জন্যে রওনা হয়েছিল কিন্তু কি এমন যে সে পৌছাতে পারছে না সেটা এখন প্রশ্ন বন্দি।

বেশ অনেক্ষন পর নাবিলের মেঘলার কথা মনে পড়ল সে মেঘলার খুঁজ নেয়ার চেস্টা করে ব্যর্থ হল।
এদিকে আকাশের অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে।

আবির আর নাবিল সারারাত ধরে আকাশের কেবিনের বাইরে বসে আছে।

আর সামিরারো এবার বিয়ের আসরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে সামিরা বারবার এদিক ওদিক মেঘলাকে খোঁজছে কিন্তু সেতো মেঘলাকে চিনে না

আর মেঘলাও এসে পোছায় নি তাই চোখের জল ফেলতে ফেলতে এগুতে লাগল তখনি একজন বলে উঠল সামিরা….
সামিরা অধির আগ্রহ নিয়ে পিছন ফিরে তাকল আর অপরিচিত হলেও মেয়েটিকে সামিরার দেবদুত বলে মনে হল সে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।
সামিরা বিয়ের আসরে যাওয়ার আগেই মেঘলা সেখানে পৌছে গেছে আর সামিরা বউ সাজে থাকায় সহজেই চিনতে অসুবিধা হয় নি।

মেঘলাঃ সামিরা….

সামিরাঃ আপু এত দেড়ি কেন করলেন…

মেঘলাঃ রাস্তায় একটু ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম যাক সেসব কথা চলো ঘরে চলো।

এরি মধ্যে সামিরার মা এসে বলল সামিরা তুমি এখানে কি করছো নিচে সবাই অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি যাও আর এই মেয়েটা কে?

সামিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘলা বলে উঠল আমি সামিরাএ ফেসবুক ফ্রেন্ড ওর বিয়ের জন্যেই ইংল্যান্ড থেকে এসেছি।কিন্তু আন্টি সামিরা যাকে চায় না তার সাথে ওকে কেন বিয়ে দিচ্ছেন?

সামিরাঃ কারন ওর পছন্দ খারাপ ও যে ছেলেকে পছন্দ করেছিল সে একটা চিটার আমাদের সবাইকে ঠকয়ে চলে গিয়েছে।এখন ওর বিয়ে না দিলে সমাজে মুখ কি করে দেখাব? আর জনি ছাড়া ত কেউ বিয়েও করবে না তাই জনির সাথেই বিয়ে দিতে হচ্ছে।

মেঘলাঃ আপনি যান আমি সামিরাকে নিয়ে আসছি বলে মেঘলা সামিরার মাকে পাটিয়ে দিয়ে সামিরার ঘরে গিয়ে জানালা দিয়ে ২ জনেই পালাল।

কিন্তু অল্প কছুক্ষনের মধ্যেই জনি সেই খবর পেয়ে গেল তাই সে তাড়াতাড়ি করে মেঘলার গাড়িকে ফলো করতে শুরু করল।

প্রথমদিকে মেঘলা ভয় না পেলেও এখন জনির সাথে গুন্ডা আছে মেঘলা আর যাই হোক মারামারি করতে পারে না তাই সে যতটা সম্ভব স্পীডে ড্রাইভ করতে শুরু করল।

সামিরাঃ আপু কি করছো আস্তে চালাও এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।

মেঘলাঃ ওরা আমাদের ধরে ফেললে আর যেতে পারব না তাই তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করছি..

মেঘলা বেশ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জনি দের কাছ থেকে নিজেদের আড়াল করল কিন্তু শেষ রক্ষা হল না মেঘলা যখন নিজেদের বিপদমুক্ত ভাবতে শুরু করল তখনি বীপরিত পাশ থেকে আসা একটা ট্রাকের সাথে তার গাড়ির ধাক্কা লাগল আর মেঘলা তাল সামলাতে না পেরে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে গেল।

এক্সিডেন্টে গাড়ি বা সামিরার তেমন ক্ষতি না হলেও মেঘলা ট্রাকের সামনে পড়ল আর ট্রাকের চাপায় গুরুতর আহত হল।

সামিরা গিয়ে মেঘলাকে টেনে তুলল মেঘলার প্রচুর ব্লিডিং হতে শুরু করল।

সামিরাঃ আপু আগেই বলেছিলাম আস্তে চালাও…কিন্তু ভয় পেয়ো না তুমার কিছু হবে না কাছেই হাসপাতাল আছে আমরা এখনী পৌছে যাব।

মেঘলা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল না সামিরা আমি কাছের কোন হাসপাতালে যেতে চাই না আমাকে আমার আকাশের কাছে নিয়ে যাও প্লিজ ওর কাছে যদি ক্ষমা না চাইতে পারি আমি যে মরেও শান্তি পাব না অকারনে অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে।

সামিরাঃ আপু সব হবে আগে তুমি সুস্থ হও

মেঘলাঃ আমার সময় প্রায় শেষ সামিরা প্রতিবার মিরাক্কেল হবে না তোমাকে ভাইয়ার কাছে তুলে দিয়ে আকাশের বুকে মাথা রেখে আমি মরতে চাই আমার শেষ ইচ্ছা টা তুমি রাখো প্লিজ।

সামিরা বাধ্য হয়ে মেঘলাকে নিয়ে মেঘলার বলা হাসপাতালের দিকে অগ্রসর হতে লাগল।

এদিকে আকাশের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।রাতের শেষ দিকে আকাশের জ্ঞান ফিরল। আকাশের জ্ঞান ফিরার সাথে সাথেই নাবিল আকাশের কাছে ছুটে গেল আবিরও গেল।

নাবিল গিয়ে আকাশের পাশে বসে আকাশের হাত ধরে বসল আকাশের হাতে তখনো ব্লাডের লাইন লাগানো।

নাবিলঃ এখন কেমন আছিস…??

আকাশ কথা বলার মত অবস্থায় নেই তবুও অসষ্ট ভাষায় বলতে লাগল…

আকাশঃ ম ম ম মেঘলা….

নাবিলঃ আছে এখানেই আছে তুই উত্তেজিত হোস না কান্নাকাটি করছিল তাই বাসায় রেখে এসেছি।

আকাশঃ ভাল করেছিস…

এরিমধ্যে বাইরে থেকে মেঘলার গলার আওয়াজ ভেসে আসল।

মেঘলাঃ আকাশ….

শেষ রাতে হাসপাতাল সম্পুর্ন নিরব থাকায় আকাশের কানে মেঘলার ডাক তীরের মত আঘাত করল।

আকাশঃ মেঘলার গলা না?

নাবিলো বুঝতে পারল কোন গন্ডগোল হয়েছে কিন্তু আকাশ অস্থির হয়ে গেছে দেখে নাবিল বলল মেঘলা তো বাসায় তুই ভুল শুনেছিস।

আকাশঃ না এই আওয়াজ ভুল হতে পারে না মেঘলার কিছু হয়েছে…

নাবিলঃ কি করছিস উঠিস না তুই থাক আমি যাচ্ছি।

আকাশ একটানে ব্লাডের লাইন হাত থেকে খুলে ফেলে দিয়ে বেড থেকে উঠে পড়ল।

আবিরঃ ভাই কি করছো তোমার অবস্থা ভাল না।

আকাশঃ আমাকে ছাড় আবির আমি কারো সাথে জোড়াজুড়ি করতে চাচ্ছি না।

আবির আর কিছু না বলে ছেড়ে দিল আকাশ দৌড়ে বাইরে গেল আর চোখের সামনে যা দেখল তাতে সে পাথর হয়ে গেল।

মেঘলার সারা শরীর রক্তে মাখা রক্তে সাদা জামা লাল বর্ন ধারন করেছে সামিরার কাঁধে মাথা রেখে একমনে আকাশকে ডাকছে মেঘলা।

আকাশ গিয়ে মেঘলাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিল।

আকাশঃ কি হয়েছে মেঘলা তোর এই অবস্থা কি করে হল?

মেঘলাকে দেখে আবির আর নাবিলের অবস্থাও খারাপ।

আকাশ আর নাবিল ২ জনেই মেঘলাকে নিয়ে ব্যাস্ত

আবির সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল আরে আপনি কে? মেঘলার এই অবস্থা হল কি করে?

আকাশঃ আবির বকবক না করে মেঘলাকে কেবিনে নেয়ার ব্যবস্থা কর।
বলেই আকাশ মেঘলাকে কোলে নিতে চাইল

নাবিলঃ কি করছিস আকাশ তুই নিজেই সুস্থ না ছাড় ওকে আমার কাছে দে।

মেঘলাঃ ভাইয়া থাম আমাকে আকাশের সাথে কথা বলতে দে।

আকাশঃ যা বলার সুস্থ হওয়ার পর বলিস।

মেঘলাঃ আমি আর বাঁচব না আকাশ আমি বুঝতে পারছি আমার সময় শেষ সবসময় তো উপড়ওয়ালা সুযোগ দিবে না তাই না?

নাবিলঃ চুপ কর মেঘলা তোকে কে বলেছিল এসব করতে তুই কেন ওখানে গিয়েছিলি?

মেঘলাঃ যে কারনে আকাশ আজ সবার কাছে ভিলেন ঠিক সে কারনেই আমিও গিয়েছিলাম।

নাবিলঃ মানে কি?

মেঘলাঃ হ্যারে ভাইয়া আমার আকাশ কখনোই ভিলেন ছিল না আমরাই ভুল ছিলাম। তুই তো আকাশের ভাইকে চিনতি এতদিন ধরে উনি বাসায় নেই তোর কখনো মনে হয় নি কেন নেই কোথায় উনি? আমিও সেটা ভাবি নি কিন্তু আজ যখন সামিরার কাছে যাচ্ছিলাম হটাৎ করেই ভাইয়ার সাথে দেখা হল ছুটতে ছুটতে আসছিল ভাইয়া আমি তাকে সেইফ করি কিছু গুন্ডা তাকে ধাওয়া করছিল। পরে যানতে পারি ভাইয়াকে এতদিন ইরার বাবা আটকে রেখেছিল। আর আকাশকে শর্ত দিয়েছিল ও যেন তোকে ইরার সামনে থেকে সরিয়ে দেয় ওরা তোকে মারতে চেয়েছিল ভাইয়া।আকাশ যাতে তোকে সাহার্য্য করতে না পারে তাই ইরা আর তার বাবা মিলে আকাশের ভাইকে আটকে রেখে আকাশকে ব্লেকমেইল করেছিল।

সেদিন আকাশ হাতজোর করে তোর প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিল আর কথা দিয়েছিল তোর পদ ইরাকে দিবে তোকে ইরার রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবে ইরার সব কথা শুনবে তবুও যেনো তোর কোন ক্ষতি না করে।তাই ও তোকে জেলে পাঠিয়েছিল যাতে কেউ তোর কোন ক্ষতি করতে কারন ও যানত বাইরে থাকলেই তোর উপড় আক্রমন হবে।

ভাবতে পারছিস ভাইয়া একদিকে নিজের ভাই আর একদিকে তুই কতটা মানুষিক প্রেসারে ছিল আকাশ তবুও ও ঠান্ডা মাথায় সবকিছু হ্যান্ডেল করে যাচ্ছিল আর আমি কিছু না বুঝেই কত অবিশ্বাস করেছি আকাশকে কতটা যন্ত্রনা দিয়েছি। আকাশের তো মন খোলে কিছু বলারো সুযোগ ছিল না কারন কিছুক্ষন আগে পর্যন্তও ওর ভাই ইরার হাতে বন্দি ছিল।

আমি তোর ভালবাসাকে বাঁচাতে আকাশকে ফেলে চলে গিয়েছিলাম আর ও নিজের ভাইকে বাঁচাতেও তোকে ফেলে যায় নি রে নিজের সাধ্যমত তোকে সেইফ করার চেস্টা করেছিল।শুনতে পাচ্ছিস ভাইয়া আমার আকাশ ভিলেন না… আমার আকাশ ভিলেন না।
তুই আমায় কথা দে ভাইয়া সারাজীবন তুই আকাশের খেয়াল রাখবি কখনো ভুল বুঝে ওকে ছেড়ে যাবি না কথা দে ভাইয়া…

নাবিলঃ চুপ কর মেঘলা….

মেঘলাঃ না আমার সময় নেই তুই আমায় ছুয়ে কথা দে

আকাশ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল তোর কিছু হবে মেঘলা আমাকে রেখে তুই কোথাও যেতে পারবি না।তুই যানিস না আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না।

মেঘলা নিজের রক্তাত্ব হাত বাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে আকাশে গাল স্পর্শ করে বলল আমাকে ক্ষমা করো আকাশ জীবনে কোনদিন তোমাকে এতটুকু সুখ দিতে পারলাম না শুধু বোকামিই করে গেলাম আর তোমাকে ভুল বোঝে গেলাম তবে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। আমি যানতাম না ভাইয়ার ভালবাসাকে আনতে গেলে তোমাকে এতটা কষ্ট দিতে হবে আমি যানি আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু কপালের লিখন যে বদলানো যায় না আমি ছায়া হতে সারাজীবন তোমার পাশে থাকব আকাশ শরীরের অস্থিত্ব হয়ত থাকবে না কিন্তু আমার আত্মা তোমার কাছেই থাকবে।

এপাড়ে তো হল না ওপারে না হয় আমরা এক হব…..বলতে বলতে মেঘলা আকাশের কোলে ঢলে পড়ল

আকাশ চিৎকার করে কেঁদে উঠল।

আকাশঃ আমাকে ছেড়ে যাস না মেঘলা উট মেঘলা উঠ আমাকে আর শাস্তি দিস না আমিও তো মানুষ মেঘলা আর কত সহ্য করব…নাবিল মেঘলা কথা বলছে না কেন ওকে উঠতে বল নাবিল তোর কথা ও শুনবে ওকে উঠতে বল…
আবির তোকে ত আমি মেঘলার দায়িত্ব দিয়েছিলাম তাহলে কেন দেখে রাখলি না আমার পাগলিটাকে ও যে বরাবরেই অবুঝ..
মেঘলা সব দোষ আমার আমি কেন তোকে সব বলে দিলাম এই দেখ আমি কান ধরছি কথা দিচ্ছি আর কখনো কাঁদাব না তোকে তবুও আমাকে ছেড়স যাস না মেঘলা….উঠ মেঘলা উঠ আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিস না।

আকাশের আহাযারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠল আকাশের কথা গুলি মেঘলার কানে পৌছাল না।

নাবিলো পাগলের মত আবল তাবল বলছে।
নাবিলঃ আ আ আমি এই ভালবাসা চাই নি মেঘলা তোর বিনিময়ে ভালবাসা আমি কখনই চাইনি….তুই এটা কি করলি।

আকাশ নিজেও অসুস্থ আস্তে আস্তে তার চোখ ও ঝাপসা হয়ে আসছে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে মাথা ভারি মনে হচ্ছে বাচ্চাদের মত কাঁদতে কাঁদতে আকাশো একসময় মেঘলার কোলে ঢলে পড়ল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।