১৬ পৃষ্ঠায় | পর্ব – ৩

সিনান কল করতেই জানতে পারে এনোন অনেক সকালেই অফিসে চলে গিয়েছে। সর্ণালি কিছুটা স্বস্তিত্ব আনুভব করলেন বাকি মহিলারাও নিনির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। যেমন কি সে বের করে দিয়েছে তার বর কে। সিনান মোবাইল রেখে বলে,, নাস্তা করে নেন সবাই।” বলে সবাই কে বসতে ইঙ্গিত করে। সবাই বসে খেয়ে গেলেও নিনি খেল না সবার মুখশ্রী দেখেই তার পেট ভরে গেছে। নিনি সিনানের রুমে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পরেই সিনান এসে বলল,, কি হয়েছে তোমার?” নিনি মুখ তুলে তাকালো তারপর না সূচক মাথা নাড়ল। সিনান তার পাশে বসে বলে,, তোমাকে কি বলে ডাকব?” গালে এক হাত রেখে প্রশ্ন করল। নিনি মুচকি হেসে বলল,, নিনি বলে ডাকতে পারবেন।” সিনান ভ্রু কুঁচকে বলে,, আপনি করে বলতে হবে না, উমম্ তোমাকে সুইট ভাবী বলে ডাকব।” কিছুটা হেঁসে বলল সিনান। নিনি ও হেঁসে মাথা নাড়ল। পিছন থেকে মাসি এসে নিনির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলেন,, এই তুই বসে আছিস কেন? যাহ্ রান্নাঘরে গিয়ে কাজ কর আজকে অনেক মেহমান আসবে যাহহ্।” নিনি মুখশ্রী বিষাদে রূপ নেয় সিনান তা খেয়াল করল সে দাঁড়িয়ে মাসি কে বলে,, ও কেন কাজ করবে, কাজ করার জন্য লোক রাখা হয়েছে তো ওর থেকে কোন কাজ করতে হবে না, বুঝলেন?” নিনি দাঁড়িয়ে সিনানের হাত আলতো করে চেপে ধরে চুপ করায় তারপর মাসির দিকে তাকিয়ে বলে,, যাচ্ছি।” সিনান অবাক হয়ে বলে,, সুইট ভাবী?” নিনি চোখ দিয়ে ইশারা করলো চুপ করতে সিনান চুপ হতেই মাসি চলে যায়। সিনান দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এসে বলে,, কাজ করবা বললা কেন?” নিনি আমতা আমতা করে নিচে তাকিয়ে বলে,, বাবা বলেছিল শ্বশুড়বাড়ি লোক যদি কিছু করতে বলে তাহলে করে নিতে আর কিছু বললে তার উল্টো জবাব না দিতে, তাই।” সিনানের মুখমন্ডল বদলে গেল বিরক্ত লাগল তার। নিনি পাশ কেটে চলে যায়।
_________________
পাক্কা ছয় ঘন্টা যাবত রান্নাঘরে কাজ করে হাঁপিয়ে উঠলো নিনি। মাসি সর্ণালি থেকে জিজ্ঞেস করে কাজের লোকগুলো কে ছুটি দিয়ে দিয়েছে আজকের দিনে। তাই পুরো সব কাজ একা করতে হলো তার, ইতিমধ্যে সিনান বারবার এসে তাকে বারণ করলো এতো কাজ করতে। কারণ এতো কাজ করা গাধার সমতুল্য। সব খাবার রান্না করে গোসল করতে চলে গেল নিনি। দুপুর হতেই দরজার বেল বেজে উঠল সিনান গিয়ে দরজা খুলল তার সমস্ত কাজিনরা সহ এনোন এসেছে। সিনান এনোন কে দেখে মুচকি হাসলো। সবাই ভেতরে আসলো সর্ণালি ও অর্সা তাদের সাথে কথা বলতে লাগল। এনোন কথা বলছে না সে গম্ভীর হয়ে মোবাইলে কাজ করছে। নিনি গোসল সেরে পরিপাটি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে এতো মেহমান দেখে সে ঘাবড়ে যায়। মাসি এসে বলে,, গিয়ে খাবার টেবিলে সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে রাখ।” নিনি মাথা নিচু করে রান্নাঘরে চলে যায়। দুই মিনিট পর সিনান রান্নাঘরে আসে নিনির সাহায্য করে খাবার গুলো সাজিয়ে রাখতে। টেবিল সব খাবার রাখতেই সিনান গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে। সবাই এসে বসে পড়ে নিনি সবার দিকে ভালোভাবে তাকাচ্ছে কিন্তু সে চিনতে পারছে না, এনোন কে?
কারণ কাজিন দের মধ্যে অনেক ছেলেও আছে আর এদের দেখতে সিনানের বয়সী বা সিনানের বড় মনে হচ্ছে। সর্ণালি এনোনের খাবার প্লেট নিনির দিকে ঠেলে বলেন,, ওকে খাবার বেড়ে দাও।” নিনি মেকি হাসলো এনোন আসার পর থেকে কারোর দিকে তাকাচ্ছেও না কথাও বলছে না। নিনি প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,, নেন ভাইয়া।” সাথে সাথে সবাই বড়বড় করে তার দিকে তাকায়। মাসি কেঁশে উঠে সর্ণালির খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আশেপাশে সব কাজিন গুলো প্রথমে অবাক হলেও পরে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে সিনানের মুখ হা হয়ে যায়। এনোন সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিনির দিকে তাকায়। সে রিয়েক্ট করিনি যে সে তাকে ‘ভাইয়া’ বলে ডেকেছে। কারণ সে জানতোই না যে নিনি তার বউ। বিয়ের আগেও তারা একে অপরকে দেখে নি বিয়ের সময়েও দেখে নি। এ মাত্র দেখেছে তারা। এনোন কোন রিয়েক্ট করলো খাবারের মাঝখান থেকে উঠে চলে যায়। সর্ণালি দাঁড়িয়ে বলে,, তোমরা খাও।” বলে তিনি এসে নিনির এক বাহু চেপে ধরে অন্য রুমে নিয়ে যায় সাথে সাথে সিনান দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি এখানে চলে যায়। রুমে এনে নিনি কে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,, মাথায় একটুও আক্কেল নেই বর কে ভাইয়া বলছিস।” মাসি রুমে আসতেই সর্ণালি মাসি কে রেগে বলেন,, এই বোকা মেয়েটা কে আমার ঘরের বউ করে আনলা, আমার মান সম্মান ডুবিয়ে ছাড়বে এই কুফা মেয়েটি।” মাসি এসে তার এক বাহু শক্ত করে চেপে ধরে টেনে কিছু বলার আগেই সিনান রুমে এসে বলে,, হাত ছাড়েন তার।” উপস্থিত সেখানে সর্ণালি মাসি ও নিনি তার দিকে তাকায়। সিনান এসে হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলে,, ওকে বকছেন কোন অধিকারে?হ্যা? দোষ তো আপনাদের।” সর্ণালি ধমকে বলেন,, সিনান।” সিনান শুনলো না আরো বলল,, হ্যা সব দোষ অর্সা মাসির তিনি হুট করেই বিয়েটা করিয়ে দিয়েছেন তাদের, একে অপরকে দেখার সুযোগ পর্যন্ত দিলেন না, তো নিনি ভাবী নিজের বরকে ভাইয়া বলবেই স্বাভাবিক।” সর্ণালি রেগে বলেন,, তো বিয়ের রাতে কি তারা একে অপরকে দেখেনি? নাকি চোখ বন্ধ করে ছিল।” সিনান কিছু বলতে গিয়ে থামলো ঠিক তো নিনি বলেছিল তাদের মধ্যে সবকিছু হয়েছে তো আবার নিজের বরকে না চিনার কারণ কি? সবাই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকালো নিনির দিকে। নিনি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে আমতা আমতা করে বলে,, আমি ওনাকে বিয়ে রাতে দেখেনি।” সাথে সাথে সবাই টাশকি খেল। সিনান তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,, তো তুমি বললা কেন তোমাদের মধ্যে সব হয়েছে?”
নিনি বুঝলো ব্যাপারটি সিনান কিসের কথা বুঝাতে চেয়েছে সে না বুঝে বলল,, কি হয়েছে? কিছু হয়নি আমাদের মধ্যে।” সাথে সাথে সর্ণালি কপালে হাত রাখল বলল,, পুরোপুরি একদিন ও হয়নি মেয়েটি আমাকে পাগল বানাচ্ছে, অর্সা তুমি ওকে গ্ৰামে পাঠিয়ে দাও।” অর্সা কিছু বলল না সিনান ও কিছু বলতে চেয়েও কিছু বলল না কি বলবে সে? বলার মতো কিছুই তো রাখে নি নিনি। সর্ণালি বেরিয়ে যায় রুম থেকে সবাইকে খাবিয়ে বিদায় করে দেয়।
রাতে,,,,,,
নিনি বুঝছে সে ঘুমাবে কোথায় গতবার সোফায় ঘুমিয়ে ঘাড় ব্যথা করে ফেলল এখন আবার ঘুমালে ঘাড় নির্ঘাত ভেঙে পড়ে যাবে। সে সিনানের রুমে এসে দরজায় টোকা দেয় সিনান তাকিয়ে বলল,, কি হয়েছে?” নিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,, তোমার সাথে ঘুমাবো।” সিনান অবাক হয় বলে,, কেন?”
নিনি মেকি হেঁসে বলে,, এমনে, গল্প করবো আমরা দুজনে মিলে।” সিনান হাবভাব দেখে বুঝতে পারলো সে এনোনের রুমে যেতে চাচ্ছে না। সিনান ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল,, সরি সুইট ভাবী, কালকে আমার কোচিং এ পরীক্ষা আছে তো আমার ডিপ রেস্ট দরকার, তুমি গিয়ে ভাইয়ার সাথে ঘুমাও কেমন?”
নিনির হাঁসি উধাও হয়ে যায় বলে,, আমি পারবো না।” সিনান ভ্রু কুঁচকে বলে,, কি পারবে না?”
নিনি এবার সব কথা বলে দেয় গতরাতের কথা যা শুনে সিনান চরম অবাক হয়। বলে,, দাঁড়াও আমি কি করি দেখ ভাইয়ার সাথে।” বলে নিনির হাত ধরে নিয়ে যায় নিনি অবাক হয়ে যায় কি করবে এখন কে জানে। সিনান দরজায় টোকা দেয় এনোন এসে দরজা খুলে নিনি ও সিনান কে এ মুহূর্তে দেখে বলে,, কি?” সিনান হেঁসে বলে,, ও নাকি তোমার সাথে ঘুমাবে।” ফট করে তাকায় নিনি সে আশা করি নি সিনান এসে এসব বলবে নিনি হাত ঝাঁকি দিয়ে ইশারা করতে লাগল সিনান তাকাচ্ছে না। এনোন বলল,, পারবো না আমি, একে তোর সাথে রাখ।” বলে দরজা বন্ধ করতেই সিনান নিনি কে নিয়ে রুমে ঢুকে পরলো বলল,, আরে রাখতে পারবা না কেন? জানো ও কিভাবে জেদ করছে বলছে এ নাকি তোমার সাথেই থাকবে, তো ওকে তোমার সাথেই রাখো।” বলে নিনির হাত ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরে লক করে দেয়। এনোন তার দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলে,, এ কেমন মেয়ে গতবার এতো অপমান করার পরেও আমার সাথে থাকতে চাচ্ছে।” নিনির দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে আসলো সে বুঝছে না এ মুহূর্তে সে কি করবে সিনান তাকে ভালোভাবে ফেঁসে দিয়ে গেল। এনোন দরজার দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো,, Get out!!”
নিনি তাকালো তার দিকে চোখে মুখে রাগের ছাপ নিনি গিয়ে দরজায় হাত দিতে দেখলো দরজা খুলছে না সর্বশক্তি দিয়ে খুলার চেষ্টা করলো কিন্তু খুলছে না। নিনির কান্না কান্না ভাব চলে আসলো সে ফিরে বলল,, দরজা খুলছে না।” এনোন এসে দরজা খুলার চেষ্টা করলো কিন্তু খুললো না। এনোন বুঝতে পেরে বলল,, সিনানের বাইচ্ছে টা দরজা বাহির থেকে লক করে দিছে ধ্যাত।” নিনি বলল,, তো এখন?” এনোন তার দিকে তাকিয়ে বলল,, তোমার সাথে আমার বেড শেয়ার করতে পারবো না, ঘুমাতে ইচ্ছে করলে সোফায় ঘুমাও নাহলে বারান্দায় যাও।” নিনি এবার তেজি করে বলল,, আমি সোফায় ও ঘুমাবো না বারান্দায় ও যাবো না।” এনোন পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে বলল,, তাহলে বাথরুমে যাও।” নিনি অবাক হয়ে কিছুটা রেগে বলল,, আমি কেন বাথরুম যাবো? আপনার ইচ্ছা করলে আপনি যান আর সেখানে ঘুমান।” শেষ কথাটি অনেকটা রেগে বলে সে। এনোনের মুখ শক্তপোক্ত হয়ে যায় পকেট থেকে হাত সরিয়ে নিনির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,, সাহস তো তোমার অনেক বেশি দেখি, দাঁড়াও কি করি তোমার সাথে দেখ।” নিনি চমকে উঠে তাকে এগিয়ে আসতে দেখে বুঝতে পারলো সে অতিরিক্তই বলে ফেলেছে।

চলবে…

[ আপনাদের মতামত পেলে পরের পর্ব দিব। ]

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।