ওমনি বিড়ালটা তন্দ্রার পা ঘেঁষে ঢুলতে ঢুলতে স্বাক্ষরের পেছন পেছন তার ঘরে চলে গেল। শিউরে উঠল তন্দ্রা। চোখ মুখ কুঁচকে এলো। সেভাবেই চেয়ে রইল দুষ্টু বিড়ালটার দিকে। সাদা লম্বা সিল্কি পশম গুলোও তার চলার সাথে দুলে উঠছে। কী অবলীলায় স্বাক্ষরের সাথে চলে গেল!
শুভর কথা শুনে সবাই একত্রে হেসে উঠল। হেনা তার পিঠে চাপড় মে’রে বলল‚ “ধরা পড়লে তোর উপর গনধোলাই পড়বে এটা নিশ্চিত।”
“তারপর টিভির হেডলাইন হবে‚ গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারারাত গল্প করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল যুবক শুভ আর সেই গনধোলাইয়ে প্রাণ হারিয়েছে নিস্পাপ সেই ছেলেটি।”
তন্দ্রা বিনাবাক্যে রিকশা থেকে নেমে আসে। সে কিছু বললেও স্বাক্ষর তার কোনো কথাই শুনবে না। এমনটা আরও দুদিন হয়েছে তাই এই মুহুর্তে সে আর দ্বিমত করেনি।
স্বাক্ষরের গলার আওয়াজ পেয়ে তন্দ্রা পেছন ফিরে তাকাল। এরই মাঝে লোকটা গোসলও সেরে ফেলেছে! এতোক্ষণ তন্দ্রা ঘরটাকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। স্বাক্ষরের ঘরে তার খুব একটা আসা হয় না। একেবারেই যে আসা হয় না তা না‚ মাঝে মাঝে আসে।
“মুহিতের সাথে কাল রাতে আমার খুব ঝগড়া হয়েছে। আমি ওকে ফেসবুক‚ মেসেঞ্জার‚ ইন্সটাগ্রাম সব জায়গা থেকে ব্ল’ক করে দিয়েছি। ওর নাম্বারও ব্ল’ক করে দিয়েছি।”
“তাহলে মুখটাকে প্যাঁচার মতো করে বসে আছিস কেন?”
“এখন যদি অন্য কোনো মেয়ের পিছে ঘুরে?”
স্বাক্ষর তন্দ্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। সে গাড়ি থেকে নেমে তন্দ্রার দিকেই এগিয়ে যায়। ব্যস্ত ভঙ্গিতে তন্দ্রার হাত ধরে বলল‚
“দেখে হাঁটবি তো। ব্যথা পেয়েছিস? দেখি কোথায় লেগেছে!”
মায়ের প্রশ্নে অবাক হয়ে গেল তন্দ্রা৷ সে তো ভেবেছিল তার বাবা মা হয়তো কিনে এনেছে। আমতা আমতা করে বলল‚
“আমার ঘরের বিছানার উপর ছিল। আমি ভেবেছি তোমরা দিয়েছ।”
কিছুক্ষণ আগ মুহুর্তের ঘটনাটা বারবার মনে পরছে তার। স্বাক্ষরের এতো কাছে ছিল‚ ভাবতেই তার বুকে দ্রিমদ্রিম করতে শুরু করল। চুল থেকে বেলীফুলের তীব্র সুবাস ভেসে আসছে৷ কেমন একটা ঘোরের মাঝে বিচরণ করছে তন্দ্রা। চোখের সামনে বারবার স্বাক্ষরের অমলিন হাসি মুখটা ভেসে উঠছে৷ লজ্জায় দু’হাতের আড়ালে মুখ লুকাল তন্দ্রা।
মাঝে মাঝে মনে হয় স্বাক্ষর তাকে নিয়ে আলাদা কিছু অনুভব করে। খুব পসেসিভ তন্দ্রার বিষয়ে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় তার সব ধারণাই ভুল। স্বাক্ষরের মনে আসলে কী চলছে তা-ই বুঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তন্দ্রা। অনুভূতির এই লুকোচুরি খেলা তন্দ্রার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। ইদানীং সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে তার শুধু স্বাক্ষরের কথাই ভাবতে ইচ্ছে হয়।
এই তিনদিনে ওরা সারাক্ষণ একসাথেই কাটিয়েছে। ওদের সাথে খুব ভালোই সময় কেটেছে তন্দ্রার। তার পায়ের ব্যথাও বেশ অনেকটাই কমে এসেছে। এই তিনদিন সে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে ছিল। তন্দ্রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে স্থির চিত্তে চেয়ে রইল নীলাভ অম্বরে।