সকাল থেকেই কামিনী চৌধুরী কে খুব খুশি খুশি লাগছে।নূর তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু অবলোকন করেছে।মায়া বেগম নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। বিয়ের পর থেকে কিচেন সে সামলায়।এখন আর সেফের রান্না না খেয়ে সবাই তার হাতের রান্না ই খায়।তবে কামিনী চৌধুরীর খাবার সেফ রান্না করে।
কনফারেন্স রুমে মুখোমুখি বসে আছে আশমিন আর নূর।তার পাশেই আমজাদ চৌধুরী অমি আর সানভি বসে আছে। সবার মুখে চিন্তার ছাপ থাকলেও নূর স্বাভাবিক ভাবে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে।আজ সকাল থেকেই শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ারের রেট কমছে।এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানি অনেক বড় লসের মুখে পড়বে।
(১৮+ সতর্কতা) উত্তরায় বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আশমিন সেখানে চিফ গেস্ট। সিটি করপোরেশনের মেয়র সহ কয়েকজন এমপি ও সেখানে উপস্থিত আছে। আশমিনের গাড়ি বহর ঢুকতেই সাংবাদিকরা হামলে পরলো। সানভি ড্রাইভারের পাশের সিটে মুখ কুচকে বসে আছে। মেয়ে হলে এতক্ষণে সে কেদে ভাসিয়ে দিত। আশমিনের সেদিকে ধ্যান নেই।
সারে দশটায় ঘুম ভাঙ্গলো নূরের।মাথা ব্যথাটা এখন একটু কম।তবে চোখ জ্বালা করছে। বিছানা থেকে উঠে চারিদিকে চোখ বুলালো নূর।আশমিন রুমে নেই। বাকা হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আজ মন্ত্রী সাহেব কে একটু জ্বালানো যাক। গোসল সেরে একবারে রেডি হয়ে বের হলো নূর।একটু অফিসে যেতে হবে।
সানজিদা বিনতে সফি রাতের আকাশ দেখায় মগ্ন নূর।আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে সে।আশমিন এখনো বাসায় আসে নি।তার জন্যই অপেক্ষা করছে নূর।মুখে স্বীকার না করলেও সে আশমিন কে অসম্ভব ভালবাসে। আশমিন তার রক্তে মিশে আছে। এক মুহুর্ত চোখের আড়াল হলেই ভুকের ভিতর আনচান শুরু হয়ে যায়।
স্টাডি রুমে বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে নূর। অনুভূতিহীন চোখে এক মনে তাকিয়ে আছে আশমিনের ডায়েরির দিকে।একটি মাত্র ডায়েরি জীবনের অনেক অসমাপ্ত গল্পের সমাপ্তি টেনে দিয়েছে।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোর খামচে ধরে বসে আছে নূর। কান্না আটকানোর জন্য ঠোঁট কামড়ে ধরায় ঠোঁট কেটে র*ক্ত বেরিয়ে গেছে।
রাতের আকাশে অজস্র তারার মেলা বসেছে।চারিদিকের ভ্যাপসা গরমের কারনে সবার জীবন ওষ্ঠাগত। ছাদের দোলনায় বসে গরমের তীব্রতা আন্দাজ করতে পারছে নূর। সারাদিন এসির ভেতর থেকে গরমের তীব্রতা উপভোগ করার সুযোগ হয় না।পূর্বপুরুষদের অর্জনের জন্য এই বিলাসবহুল জীবন তার।কি হতো যদি এতো বিলাসিতা না থাকতো?
চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির বিলাসবহুল কেবিনে বসে আছে আশমিন। শান্ত মুখে পরাজয়ের ছাপ স্পষ্ট। তার সামনেই আমজাদ চৌধুরী বসে ছেলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। — সব কিছু জেনেও এভাবে হাতে হাত রেখে বসে আছো কেন? ও তোমাকে আঘাত করবে আশমিন।বাবা হতে চলেছো তুমি।নিজেদের মধ্যে সবকিছু মিটিয়ে নাও।
শুভ্র পাঞ্জাবি ছেড়ে সাদা টি-শার্ট পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে আশমিন।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। শরীরের থেকে তার মনের ক্লান্তি বেশি।নূর গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।আধঘন্টা আগে স্যালাইন শেষ হয়েছে।এতক্ষণ সে নূরের হাত ধরেই বসে ছিল।
মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর স্ত্রী কে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আজ সকালে অফিসে আসার সময় তার গাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর স্ত্রী সনামধন্য সিঙ্গার তেহজিব নূর কে জোর করে কিছু লোক গাড়ি থেকে বের করে তাদের গাড়ি তে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।