বাড়িতে কেউই পাশা মিয়ার সঙ্গে মনির সম্পর্ক মানতে রাজি নয়। বাবা নরম গলায় মেয়েকে যথেষ্ট বুঝালেন। কিন্তু তার বে*য়াদব মেয়ে কিছুতেই কিছু বুঝতে রাজি না। উল্টো বাবা, মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। মামাশ্বশুর আবারও আসলেন। এবার সঙ্গে মামীও। উল্লেখ্য, মামী আম্মাকে তেমন একটা পছন্দ করেন না।
মনির জেদ কে হার মানতে হলো থানা পুলিশের কাছেও। সে কিছুতেই থাকবে না। উল্টো মায়ের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলো। মারের চিহ্ন গুলোও দেখালো। শেষ অবধি পুলিশও হার মানলো। মনির বয়স জন্ম নিবন্ধন পত্রে উনিশ বছর। সেই হিসেবে এখন আর ও নাবালিকা নয়। বাবা, মা চাইলেই ঘরে আটকে রেখে মারতে পারে না।
পরী আপাদের ওখান থেকে আসার পর দেখলাম আম্মার আচরণ খানিকটা ঠান্ডা ধরনের। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন কম। ভাবলাম হয়তো মনির জন্য তার মন খারাপ। একটা দিন এমনই গেল। আমিও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। নাবিদ অবশ্য আমার বেশী থাকা নিয়ে রাগ করলো না। স্বাভাবিক ই রইলো। কিন্তু আম্মার রাগের কারণ ধরতে পারলাম।
আম, কাঁঠালের দিন শেষ হবার আগেই বাবা আসেন। সঙ্গে অরু আর আমার চাচাতো ভাই হাসান। বাবা ঝুড়ি ভর্তি করে আম, লিচু নিয়ে আসেন। আম্মা ভীষণ খুশি হন। অনেক দিন পর আমাকে দেখে অরু কেঁদে ফেলে। বলে, “এমন নিষ্ঠুর কেন তুমি মেজপা, সেই যে বিয়ের পর একবার গেলে আর তো গেলে না। ”
পরী আপাও দুই তিন দিনের ছুটি নিয়ে পলাশবাড়ী চলে এলো। মা খুব খুশি হলেন। আপার কারণে আমার আরও কয়েকদিন থাকা হলো। নাবিদ অবশ্য রেগে যায় তাতে। ও দুদিনের ছুটি নিয়ে আমাদের নিতে আসতে চায়। আমি আজ না কাল, কাল না পরশু করে আরও পাঁচ দিন বেশী থাকি।
আমার দিনগুলো কাটে ছন্দহীন। ছেলেমেয়েদের সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা শেষ হলো রোজার আগেই। বিকেলে খানিকটা সময় পাওয়া গেল। ওরা কিছুদিন ছুটি নিলো। কলেজে যাওয়া হয়। সুবর্না একগাদা খাতা দিয়ে দেয়। লিখতে লিখতে হাপিয়ে যাই। মাঝেমধ্যে মনে হয় নিজেকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি। আমারও একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। নিজের সুবিধার জন্যই বাড়িতে কাজের লোক পাল্টালাম।
ঈদের পর একসঙ্গে অনেক গুলো ঘটনা ঘটলো। মনির সম্পত্তির ভাগ চাওয়া নিয়ে একদিন ঝামেলা হলো। পাশা মিয়া তার ফ্যামিলি সহ এসেছিল। সঙ্গে মনিও, এবারও ব্যাগ ভর্তি জিনিসপত্র। সঙ্গে কয়েক রকম মাছও। মনি সম্পত্তির ভাগ চায়। সে সবকিছু বুঝে পেলে আর এদিকে আসবে না। তবে এবার ওরা ঝামেলা করতে পারলো না। এসেছিল ঝামেলা করতে।
কক্সবাজারে চার দিন ভালোই কাটলো। বাড়ি থেকে একাধারে সবার ফোন, ম্যাসেজ এসেছে। আমরা কেউই সেগুলোর জবাব দেই নি। শুধু পরী আপাকে ফোন করে সমস্ত কাহিনী বললাম। চারদিন পর ঢাকায় ফিরে দেখি সবকিছু থেমে আছে। শাশুড়ী মা একা একা কাজ সামলাতে গিয়ে কোমড় ব্যথা নিয়ে বিছানায় চিতপটাং।
টুম্পা ভাবী আর জামিল ভাইয়ের ডিভোর্স হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত । ভাবী মেয়েদের নিতে চায় না। সে জানায় মেয়েরা আপাতত বাবার কাছে থাকুক। সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তারপর মেয়েদের দায়িত্ব নিবে। জামিল ভাই ভাবীর উকিল কে জানান মেয়েদের দায়িত্ব নেয়া তো দূরে থাক,
বাচ্চাগুলোর পরীক্ষা শেষ, নতুন বছর শুরু হতে চলল। মা ফোন করে বাড়ি যেতে বলছেন বারবার। শীত মানে পলাশবাড়ীতে হৈচৈ আনন্দ। পিঠে বানানোর প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এদিকে পরী আপাও আমাকে লোভ দেখায়। জরী তুই গেলে আমিও যাব। আমি নাবিদ কে বলতে সাহস পাই না। টানা উনত্রিশ টা দিন আমাকে ছেড়ে দূরে থেকে বেচারা