লেখক সাবিকুন নাহার নীপা

লাজুকপাতা | পর্ব – ১

উঠোনের দক্ষিন কোনে বড় হাড়িতে রান্না চাপানো হয়েছে। এলাকার বিখ্যাত বাবুর্চি মজনু মিয়া রান্নার তদারকি করছেন। ডেকোরেটরের লোকজন বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত। ছোট বাচ্চাগুলো রঙিন কাগজের ফুল গুলো আঠা দিয়ে লাগানো হচ্ছে। বৈঠকখানা পেরিয়ে মূল দরজার উপরে কাগজ কেটে লেখা হয়েছে, ‘জরীর বিয়ে।’ আমার নাম জেরিন জাহান জরী। বয়স বিশ।

লাজুকপাতা | পর্ব – ২

রাতে আমার ঘুম হলো না। সারাদিনে আমার অতোটা ভয় লাগে নি যেটা এখন লাগছে। কেমন যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। ঠিক বোঝানো যায় না। সকাল শুরু হলো টুংটাং আওয়াজে। এই বাড়িতে আজও ভোর থাকতে থাকতে চুলায় রান্না চাপানো হয়েছে। আমাকে বিয়ে করা রাজপুত্তুর এখনো ঘুমিয়ে আছে। আমি বিছানা ছাড়লাম।

লাজুকপাতা | পর্ব – ৩

নাবিদ দের বাড়িটা পুরোনো আমলের। তিনতলা বাড়ি। একতলা আর তিন তলাটা ভাড়া দেয়া। দোতলায় নাবিদ রা থাকে। আমার শ্বশুর আরামপ্রিয় লোক। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ি আর একখানা দোকান ছাড়া নিজে কিছুই করে উঠতে পারেন নি। সেই আরামপ্রিয় স্বভাব পেয়েছেন আমার ভাসুর জামিল বাড়িতে আসার দুদিনের মধ্যেই টের পেলাম আমার শাশুড়ী রাগী মানুষ।

লাজুকপাতা | পর্ব – ৪

মাস পেরোনোর আগেই আমার রান্নাঘরে ঢোকার সৌভাগ্য হলো। আমাকে অবশ্য পরী আপা বুদ্ধি দিলো। রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “জরী শোন, শ্বশুরবাড়ি মামাবাড়ি না। খেয়েদেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমানো ভালো কথা না। শাশুড়ী এখন কিছু বলছেন না মানে সবসময় ই চুপ করে থাকবে এমন না। তুই আগ বাড়িয়ে কাজ কর।”

লাজুকপাতা | পর্ব – ৫

রান্নাঘরের দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের লিস্ট বানানোর দায়িত্বটাও আমি পেয়ে গেলাম। বাজার করেন শ্বশুর বাবা। উনি আমার সাথে কথা কম বলেন তবে আমার প্রতি তার স্নেহ, আন্তরিকতা টুকু আমি টের পাই। উনি আমাকে জরী কিংবা বউমা বলে ডাকেন না। মিষ্টি করে মা ডাকেন। এই বাড়িতে সকালের নাস্তায় এখন আর প্রতিদিন ভাত হয় না। […]

লাজুকপাতা | পর্ব – ৬

আমি ভর্তি হবার সুযোগ পেলাম তিতুমীর কলেজে। সাবজেক্ট প্রানীবিদ্যা। ইউনিভার্সিটির ভর্তি যুদ্ধে ছিটকে গেলাম প্রথম দফাতেই। শেষ ভরসা ছিলো জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি। নাবিদ সেখানে পড়াতে চাইলো না। বলল, “বাসা থেকে এতো দূরে গিয়ে ক্লাস করতে পারবে না তুমি জরী। আর ওখানে একা থাকার তো প্রশ্নই আসে না। তুমি বরং কাছের কলেজেই পড়৷”

লাজুকপাতা | পর্ব – ৭

পলাশবাড়ীতে আমার স্কুল কলেজ কেটেছে মেয়েদের সঙ্গে। গার্লস স্কুল, গার্লস কলেজ। শিকদার বাড়ির মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে পড়াশোনা করবে! ছি: ছি: মেয়েদের বিয়ের বাজারে যদি দর কমে যায়! ক্লাস এইট থেকেই আমার বোরখা পরা লাগতো। সেদিক দিয়ে নাবিদ আমাকে বেশ ছাড় দিয়েছে। কলেজের জন্য জিনিসপত্র কিনতে যেদিন নিউমার্কেট গেলাম সেদিন নাবিদ আমাকে বলল,“

লাজুকপাতা | পর্ব – ৮

মাঝরাতে ঘুম ভাঙে চেঁচামেচির শব্দে। জামিল ভাইয়ের গলা। আমি ধড়ফড় করে উঠে বসি। নাবিদও চোখ কচলে উঠে বসে। বাইরের ঘরে জিনিসপত্র ফেলে দেবার শব্দ। নাবিদ আমাকে বলে, “তুমি ঘরে থাকো জরী। বাইরে আইসো না। ” আমি তবুও যাই। জামিল ভাইয়ের চোখ দুটো লাল। বিশ্রী রকমের কড়া সিগারেটের গন্ধ।

লাজুকপাতা | পর্ব – ৯

নাজমা ভাবী এক মাস পর আমাকে একটা খাম দিলেন। দেয়ার সময় খানিকটা অপ্রস্তুত হলেন। বললেন, “কম হলে জানাবে জরী। আরেকটু বেশী দেয়া উচিত ছিলো আসলে… আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, “ধ্যাৎ! কী বলছেন ভাবী! ” “অনেক ধন্যবাদ জরী। তুমি আমার অনেক উপকার করেছ।

লাজুকপাতা | পর্ব – ১০

মনি যাবার পর খেয়াল করলাম যে আমার গোছানো আলমারিটা একটু এলোমেলো। বুঝলাম যে এই আলমারিতেও হাত দিয়েছে। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে কিছু নিতে পারে নি। আলমারিতে আমার পরার নরমাল কাপড়গুলো ছাড়া আর কিছুই নেই। ভালো শাড়ি, জামা, গয়না সবকিছু ট্রলিতে লক করা। সেটা খোলার চেষ্টাও নিশ্চয়ই চালিয়েছে বেচারি।